ভালোবাসার রাত ২ পর্ব ৯+১০

#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (৯+১০)

ঘড়ির কাটা তিনটেতে পৌছুতেই আননোন নাম্বার থেকে কল। ঘুম আসবেনা দেখে দুটো ঘুমের ঔষধ খেয়ে সবেই শুয়েছিলো রাত। ফোনের উচ্চশব্দের সাথে তীব্র ভো ভো কাপুনিতে রাতের চোখের বন্ধ পাতা নরম হয়ে এসেছে। ঘুমের ঘোরেই কলটা রিসিভ করে কানে ধরে আছে,,অপর পাশ থেকে কিছুক্ষণ ফুপানির শব্দ। রাত কিছু বুঝে উঠার আগেই শব্দ করে কান্না করে দিলো সন্ধ্যা।

“” রাত ভাইয়া,তুমি কোথায়? আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে,তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে,তোমার হাতে খেতে ইচ্ছে করছে!””

~~

রাতের আচ্ছন্নে ঢাকা কালো ছায়া এখনো মিলে যায়নি। পাশের মসজিদ থেকে মধুরের কোমল সুরে আযানের ধ্বনি বাজছে সন্ধ্যার কানে। দিয়া সন্ধ্যার গায়ে পাতলা চাদরটা জড়িয়ে দিয়ে নিজেও চাদরটার ভেতরে ঢুকে পড়লো। চোখটা বন্ধ করেছে ঠিক তখনি দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দিয়া চট করে চোখ মেলে ফেললো। এতো ভোরে কে এসেছে?? ভুত-টুত নয় তো?? ওরা বাদে বাকি সবার এক রুমে চারজন করে থাকছে। একমাত্র ওদের দুজনকেই এই রুমটা স্পেশালভাবে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই ভীতু টাইপের মেয়ে দিয়া। কিন্তু সন্ধ্যার জন্য তাকে এখানে থেকে যেতে হলো। নাহলে সেও তো চারজনের মাঝখানে থাকার পরিকল্পনায় ছিলো। দিয়া দরজার দিকে কড়া নজর দিতেই পরপর দুবার নকের শব্দ। নাহ! তিনবার যেহেতু পড়েছে তারমানে ভুত নয়। ছোটবেলা নানির কাছে শুনেছে,দরজায় তিনবার নক নাহলে দরজা খুলতে না হয়। দিয়া চাদর ছেড়ে উঠতে উঠতে,তিনবারের জায়গায় মনে হয় তিনশ বার নক পড়ার শব্দ হচ্ছে। দিয়ার মনে হলো তাদের দরজাটাকে কেউ ঢোল ভেবে তাল বাজিয়ে যাচ্ছে। দৌড়ে দরজা খুলে হা করে তাকিয়ে রইলো সামনের মানুষটির দিকে। মুখ দিয়ে রা শব্দটাও নেই।

“” রাত ভাইয়া,তুমি?””

সন্ধ্যার কন্ঠে দিয়া এবার ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা,কার দিকে কতটা বেশি করে হা করে তাকালে তার অবাকটা গুছিয়ে উঠতে পারবে।

সন্ধ্যা রাতের কাছে,একটু বেশি কাছে এসে দাড়িয়েই বললো,,

“” তোমাকে এমন পাগল পাগল দেখাচ্ছে কেন? ওমাগো চোখগুলো তো লালে লিলা খেলা!””

রাত সন্ধ্যার দিকে পলকহীনভাবে চেয়ে আছে। উফ! এবার শান্তি লাগছে। সন্ধ্যার গালছুয়ে বললো,,

“” এভাবে কেউ কাঁদে? তোর আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে বললে আমি এমনিই চলে আসতাম। তারজন্য কান্না করার কি আছে?””
“” আমি আবার কখন কাঁদলাম?””
“” ফোনে! মাঝরাতেই তো কল দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কিসব বলছিলি।””

সন্ধ্যা দিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,,

“” আমি কল দিয়েছিলাম?””
“” হুম,তুই তো কল দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে আসতে বললি। এজন্যইতো এলাম।””

সন্ধ্যা রাতের কাছ থেকে সরে এলো। বিছানায় বসে চাদরটা মেলে নিতে নিতে বললো,,

“” আমি তোমাকে কোনো কল দেইনি,আর কান্নাও করিনি। আমি কেন কান্না করবো? আমি তো পিকনিকে এসেছি। আর শাকিল,সিয়াম,দিহাম,ফরহাদ সবাই তো আমাকে একেরপর এক সারপ্রাইজ দিয়ে যাচ্ছে,এখানে ওখানে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে,এটা ওটা কিনে দিচ্ছে। আমি তো পানিতে নামতে ভয় পাচ্ছিলাম,শাকিল আমাকে হাত ধরে নামালো।””

রাত এতক্ষণ রুমের বাহিরে থাকলেও এবার ভেতরে ঢুকে পড়লো। সন্ধ্যার কথাতে ওর কান পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে সেই পুড়ে যাওয়ার ধোয়াটা দেখা যাবে কি? নাকি নতুন করে ধোয়াবিক্ষণ যন্ত্রটা আবিষ্কার করতে হবে?

“” তুই আমাকে কল দিস নি?””

সন্ধ্যা ভাবনাহীন উত্তর দিলো,,

“” না।””
“” কান্না করিসনি?””
“” না।””
“” আমাকে আসতে বলিসনি?””
“” বললাম তো না।””
“” তাহলে কে কল দিলো?””

সন্ধ্যা প্রায় শুয়েই পড়েছিলো। এবার উঠে বসলো। রাতের চোখের পাতাটা হাত দিয়ে টেনে টুনে চেক করে বললো,,

“” তোমার চোখের সমস্যা হয়েছে,আমার মনে হয় তোমার চেখের ডাক্তার দেখানো উচিত,সাথে কানের ডাক্তারও! কি সব আবিজাবি দেখছো আর শুনছো।””
“” তুই বলতে চাচ্ছিস,আমি স্বপ্ন দেখেছি?””
“” তা নয় তো কি? আমি তোমাকে কল কেন দিবো? আমি তো এখানে নিজ থেকে এসেছি,আর অনেক মজাতে আছি,তাইনা রে দিয়া?””

সন্ধ্যার প্রশ্নে দিয়া কি উত্তর দিবে বুঝতে পারলোনা। সন্ধ্যা কড়া চোখে তাকাতেই ও ছোট্ট করে বললো,,

“” হু!””

সন্ধ্যা বিছানা ছেড়ে পাশের ছোট্ট চারকুনো টেবিলটা থেকে একটা ঝিনুকের মালা নিয়ে বললো,,

“” রাত ভাইয়া,দেখ এটা কত সুন্দর,জানো এটা কে দিয়েছে? শাকিল! ও তো আমাকে এটা পড়িয়েও দিয়েছিলো। আমি তো ভেবেছি এখন থেকে এটা আমি সবসময় পড়বো।””

সন্ধ্যা মালাটা নিয়ে রাতের সামনে ধরলো। মালার ভেতর থেকে রাতের মুখটা দেখার চেষ্টা করছে। রাত চোখটা বন্ধ করে বললো,,

“” আমাকে একটু ঘুমানোর জায়গা দিবি প্লিজ!””

সন্ধ্যা আর কিছু বলার সুযোগ পেলোনা। রাত বসা থেকে ধপ করে শুয়ে পড়লো। ইচ্ছে করে নাকি অনিচ্ছাতে??

~~

সন্ধ্যার ভারকান্নার শব্দে রাতের ঘুম হালকা হয়ে এসেছে। চোখটা আধখোলে ওর দিকে তাকালো। ওর ঠিক পাশেই দুপা তুলে বসে আছে বিছানায়। হাটুতে থুতনি রাখা,দুহাতে মুখ ঢেকে চিকনসুরে কান্না করে যাচ্ছে। রাত ধরফরিয়ে উঠলো। সন্ধ্যার হাত মুখ থেকে সরিয়ে বললো,,

“” কি হয়েছে,এভাবে কাঁদছিস কেন?””

সন্ধ্যা কান্নার গতি বাড়িয়ে দিলো। রাত ওকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,,

“” এভাবে কাদিসনা,আমি মরে যাবো।””
“” তুমি এখানে কেন এসেছো? আমার সব আনন্দ মাটি করে দিতে তাইনা?””

সন্ধ্যা রাতের বুক থেকে সরে গেলো। অন্যদিকে মুখ করে আবার অভিযোগ,,

“” তোমার জন্য আমি ঘুরতে পারলামনা। সবাই আমাকে রেখে চলে গিয়েছে, দিহামও। আজ ও আমাকে স্পেশাল সারপ্রাইজ দিবে বলেছিলো। তোমার জন্য সব শেষ হয়ে গেলো।””

রাত কি এমন করেছে বুঝে উঠতে পারছেনা।

“” আমি কি ঘুরতে মানা করেছি? তোর কথা রাখতেই তো তোকে এতদুর পাঠালাম।””

সন্ধ্যা রাতের দিকে তেড়ে এসে বললো,,

“” কি করে ঘুরবো আমি? তুমি তো আমাকে পাহারাদার বানিয়ে দিলে। আমাকে পাহারাদার বানিয়ে নিজে আরাম করে ঘুমালে।””
“” তুই আমাকে পাহারা দিচ্ছিলি?””
“” তো কি করবো?? তোমাকে অমন ঘুমে রেখে চলে গেলে তো পরে কথা শুনিয়ে বলতে,তোকে আমি এত কষ্ট করে পিকনিকে যাওয়ার অনুমতি এনে দিলাম। আর তুই আমার সামান্য ঘুমের পাহারা দিতে পারলিনা? আমাকে এভাবে বেঘুমে রেখে চলে যেতে পারলি?””
“” আমি এগুলো বলতাম?””
“” হুম।””
“” তুই কি করে বুঝলি?””
“” আমি সব বুঝি।””
“” ছাই বুঝিস!””
“” কি আমি ছাই বুঝি?””

সন্ধ্যাকে এমন রেগে যেতে দেখে রাতের বেশ মজা লাগছে। ইচ্ছে করছে আরেকটু রাগিয়ে দিতে। রাতের ভাবতেই মনটায় উষ্ণ শিহরণের ঢেউ বয়ে গেলো,এই রাগী মেয়েটা তার রাগীবউ হবে। হ্যা,আমার রাগীবউ। যে কথায় কথায় রেগে যাবে,আর আমিও কথায় কথায় চুমু খাবো। রাত মুচকি হেঁসে উঠতেই সন্ধ্যা চেচিয়ে উঠলো,,

“” আমার সবকিছু মাটি করে দিয়ে তুমি হাঁসছো?? তুমি এতো পচা রাত ভাইয়া?””
“”আসলেই কি সবাই তোকে রেখে চলে গিয়েছে?””
“” তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি?””
“” কিন্তু আমার ঘুমের সাথে তাদের চলে যাওয়ার কারণটা কিভাবে ঘটলো?””

সন্ধ্যা হাতঘড়িটা রাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,

“” তুমি ২৩ ঘন্টা,৪২ মিনিট ধরে ঘুমিয়েছো,আর আমি তোমাকে এতক্ষণ যাবত পাহারা দিয়ে কোমড় ব্যথা করে ফেলেছি। এখন তোমার কি মনে হয়,আমার জন্য ওরাও তোমাকে পাহারা দিবে? ওরা পিকনিকে এসেছে তোমাকে পাহারা দেওয়ার জন্য?””

রাতের চোখ বড় হয়ে এলো। নিজের ফোনটার দিকে তাকিয়ে রইলো,মায়ের নাম্বার থেকে ১০৫ টা মিস কল উঠে রয়েছে। রাত অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,,

“” ও মাই গড! আমি এক ঘুমে একদিন একরাত পার করে ফেলেছি??””

রাতের এবার মাথা খুলছে। মাথার ব্রেইনেও কাজ করা শুরু করেছে। আশেপাশে চোখ বুলাতেই কাল কি হয়েছিলো সব মনে পড়ে গেলো। সাথে এটাও মনে পড়লো যে সে দুটো ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলো। এমন হাইপাওয়ারের ঔষধ খেয়েও সে না ঘুমিয়ে সারারাত গাড়ী চালিয়েছে। চার ঘন্টার রাস্তা আড়াইঘন্টায় পার করে এসেছে। ঘুমে চোখ জ্বালা করে,মাথাটাও যন্ত্রণায় ফেটে যাওয়া অবস্থা ছিলো,কিন্তু যার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মনটা অতৃপ্ততায় অপুর্ণ হয়ে ছটফট রোগে ভুগছিলো তার ডাকে কি সে সারা না দিয়ে পারে? তাও এমন আদুরীমাখা আহ্বানে??

সন্ধ্যা তাচ্ছিল্যসুরে বললো,,

“”না,এখনো কিছু মিনিট বাকি আছে,সুর্যটাও তো এখনো উঠেনি,আরেকটু ঘুমোও,আমি নাহয় আরেকটু পাহারা দিবো। আমিতো পাহারাদারদের সর্দারনী!””
“” এমন করে বলছিস কেন? তুই ঘুরবি তো? কোথায় ঘুরবি বল,আমি তোকে ঘুরাবো।””
“” আমি তোমার সাথে কেন ঘুরবো? আমি কি তোমার সাথে ঘুরার জন্য এখানে এসেছিলাম?? তুমি ইচ্ছে করেই এমন করেছো না?””
“” সন্ধ্যা শোননা,আমি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিলাম তো তাই,হুশ ছিলোনা। সরি!””
“” তোমার জন্য আমার সারপ্রাইজটা পাওয়া হলোনা। তোমার সাথে আমার কোনো কথা নাই-নাই-কখনোই নাই!””

সন্ধ্যা আবার মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। রাত ওর দিকে চেয়ে আছে। তোর সারপ্রাইজ চাইতো? আমি দিবো,সব থেকে বিশেষ সারপ্রাইজটা দিবো। আমার ভেতরে জমে পড়ে থাকা কথাটা আজ বলবো। আমি আর অপেক্ষা করতে পারবোনা। অপেক্ষার প্রহরগুলো আমাকে তিলে তিলে শেষ করে ফেলছে। আমি আর শেষ হতে চাইনা। এখন আমার গড়ার পালা। এতে তোর মত থাকুক বা না থাকুক। আমি গড়বোই,আমার ভালোবাসা দিয়ে গড়বো। ভালোবাসার সমুদ্র বানাবো। যেখানে তোকে নিয়ে আমি অনুভূতির পানিতে সাতার কেটে বেড়াবো।

“” তুই একটু বোস! আমি এখনি আসছি!””
“” কোথায় যাচ্ছো?””

সন্ধ্যার প্রশ্নে রাত রহস্যময়ী মিস্টি হাঁসি উপহার দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। আজ সে সন্ধ্যাকে এমন সারপ্রাইজ দিবে,যা ওকে ক্ষনিকের জন্য হলেও পৃথিবীর থেকে হারিয়ে যেতে হবে। মুগ্ধতায় চোখের মনিগুলো চিকচিক করতে হবে। আনন্দে হাত-পা কেঁপেকেঁপে উঠবে,কন্ঠে বাজবে খুশির ঝিনঝিন শব্দ!

~~
প্রায় দেড়ঘন্টাবাদে ক্লান্তমিশ্রিত খুশি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো রাত। চোখে,ঠোঁটে,মুখে ক্লান্তিরছাপ,কিন্তু তাকেও হার মানিয়েছে,কিছু পাওয়ার,কিছু না বলা কথা প্রকাশ আর কাউকে নিজের করে নেওয়ার অধিকারের পদক্ষেপ!

ভেতরে ঢুকে রাত নীরব। ছোট্ট রুমটার কোথাও সন্ধ্যা নেই। গেলোটা কোথায়? রাত কয়েকবার ওর নাম ধরে ডাকলো। কোথাও সাড়া না পেয়ে ওয়াশরুমটাও চেক করেছে, সেখানটাও শুন্য। শুন্যতাটা হঠাৎ করেই রাতের বুকের মধ্যেও বাষ্পহীন বিশাল বৃত্তের সৃষ্টি করছে। আর সেটাকেই পরিপুর্ন করতেই ছোট্ট টেবিলটাতে একটা কাগজ দেখতে পেলো। সন্ধ্যার সেই ঝিনুকের মালা ওটার উপরে বিছিয়ে আছে। রাত মালাটা সরিয়ে কাগজটা মেলে ধরলো,,

**উফ! কই গেলে বলোতো? তুমি যাওয়ার পাঁচ মিনিট বাদেই দিহাম এসে হাজির। ও আর আমি তোমার জন্য অনেক্ষণ অপেক্ষা করলাম। আর করতে পারছিনা। আমার ওর সারপ্রাইজটা দেখার জন্য মনটা আকুপুকু করছে। ওর ও হয়তো সারপ্রাইজটা দিতে ওর মনটাও উশখুশ করছে। বেচারা আর অপেক্ষা করতে পারছেনা,আমাকে বারবার তাড়া করছে। তাই আমি চললাম! তুমি যদি আমার সারপ্রাইজটা ঘেটে দেওয়ার জন্য মিথ্যে স্বপ্নের বাহানা দাও,তাহলে আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করবোনা।

সন্ধ্যা

রাতের ফোনটা বেজে উঠেছে। পকেটের ভারী কাপড়টা ভেদ করেও লাইটটা কেমন জ্বলজ্বল করছে। শব্দটা কি রাতের কানে পৌছুচ্ছেনা??

রাতের হাতে থাকা কালো গোলাপটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে কানে ধরলো,,

“” স্যার,আপনি যেমনটা বলেছিলেন তেমনভাবেই সব করা হয়েছে। আপনারা কখন…””

ফোনের অপরপাশের গলাটা রাত আর সহ্য করতে পারছেনা। ছুড়ে মারলো নিজের ফোনটা।

~~

ভোরের দীপ্ত আলো ফুটেছে,সাথে হিমেল হাওয়া। জানালার পাশে বসে থাকা আনমনে হারিয়ে যাওয়া সন্ধ্যার মুখে বাতাসের স্পর্শ। অনেকটা শীতশীত জাগরন। বেশ লাগছে সন্ধ্যার। চোখটা বন্ধ করে নিবে ঠিক তখনি পিয়াস স্যারের আদেশি গলা। সন্ধ্যা কিছুটা চমকে গিয়ে সোজা হয়ে বসলো। পাশ ফিরে দিয়ার দিকে তাকাতেই সন্ধ্যা সন্দিহান কন্ঠে বললো,,

“” তোর সমস্যা কি বলতো? কাল থেকে দেখছি,তুই শুধু আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছিস!””
“” বুঝার চেষ্টা করছি,তুই আসলে কে?””
“” কে মানে?””
“” তুই কি আসলেই আমার বান্ধুবী সন্ধ্যা নাকি মিথ্যের ঝুড়ি খুলে বসা কোনো মিথ্যেবুড়ি।””
“” ওহ!””

দিয়া সন্ধ্যার দিকে ঘুরে বসলো। ওর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,,

“” তুই যে এতো মিথ্যে কথা বলতে পারিস,এটাতো আমার জানা ছিলোনা। ও মাই গড,কাল থেকে তুই যে হারে মিথ্যে বলে যাচ্ছিস,আমার তো ইচ্ছে করছে নিজেই একটা অ্যাওয়ার্ড হয়ে তোর হাতে বসে পড়ি।””

সন্ধ্যার দিক থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে দিয়া আবার বলতে শুরু করলো,,

“” কিন্তু এতো মিথ্যের কারন কি? তুই তো গাড়ীতে উঠার পর থেকে কেঁদে হিচকি তুলে ফেলেছিলি,সারারাত আমাকে ঘুমোতে দিলিনা,তোকে সামলাতে গিয়ে আমি নাস্তানাবুদ! তারপর তো নিজের ফোন রেখে আমার ফোন দিয়ে কল দিয়ে কেঁদেকেটে একসের!””
“” একসের? তুই কি আমার কান্নার পরিমাপও করে ফেলেছিস?””
“” করবো নাতো কি করবো? কিন্তু তুই এমন মিথ্যে বলে যাচ্ছিস কেন সেটা এখনো পরিমাপ করতে পারিনি। কেন করছিস বলতো?””
“” আমি যা চাই উনি আমাকে তা দেয়না তাই।””
“” কি চাস?””

সন্ধ্যা জানালার দিকে মুখ করে বাইরে একটা হাত মেলে দিয়ে বললো,,

“” সেটা তোর জেনে কাজ কি? যার কাছে চাই সে জানলেই হলো!””

দিয়া মুখ ঘোমড়া করে সিটে হেলান দিয়ে রইলো। আবার হুট করেই সোজা হয়ে গড়গড় করে বলতে শুরু করেছে,,

“” কিন্তু তোর রাত ভাইয়াটা তো দেখতে হেব্বি! আমি তো প্রথম পলকেই ক্রাশ খেলাম। এ্যাশ কালারের শার্টের সাথে অগোছালো মুখটা,উফ কি যে লাগছিলোনা। আমার তো শুধু দেখে যেতেই ইচ্ছে হলো। কি সুন্দর ভারী কপাল,ঘন ভ্রু,আর চোখটা,উফ! দুষ্টু দুষ্টু ভাব,নাকটাতেও দুষ্টুমি আর ঠোঁটটট,আহ! কি করছিস,আমার আঙুলটা খেয়ে ফেলবি নাকি? ছাড়! ছাড় না সন্ধ্যা!””

একটু আগেও দিয়ার চোখে মুগ্ধতার নব্য উত্তেজনা কাজ করছিলো তা নিমিষেই পানিতে ভরপুর হয়ে গেলো। সন্ধ্যা দিয়ার হাতটা দাঁতের পাটি থেকে সরাতেই ওর চোখ বেয়ে টপটপ পানি পড়ছে। সন্ধ্যার দিকে করুণ চোখে তাকাতেই ও বলে উঠলো,,

“” তুই জানিস না,লাল রঙ আমার অপছন্দ তাও এই রঙের জামা পড়েছিস কেন?? বিশ্রি মেয়ে একটা যা আমার কাছ থেকে সর নাহলে তোর পুরো শরীরে আমার দাঁতের দাগ বসে যাবে!””

~~

কিছুক্ষণ আগেই ফুপি আর সন্ধ্যার কন্ঠ ভেসে এসেছে রাতের কানে। চলছে দুজনের ভালোমন্দের কথোপকথন! তাতে কি? রাত যাবেনা ওকে দেখতে,কথা বলতেও যাবেনা। কেমন ছিলো তার দিহামের সারপ্রাইজ তাও জানতে যাবেনা। সে এখন অসুখে ভুগছে,গভীর অনুরাগের অসুখ!

~~
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো সন্ধ্যার। নিজের বিছানা ছেড়ে ছুটে গেলো রাতের রুমে। গভীর নিদ্রায় রাত। সন্ধ্যা ধপ করে রাতের পেটের উপর চেপে বসেছে। শরীরের পাতলা সাদা টি-শার্টটা তুলে নিয়ে দু-হাতের দশ আঙুলের আচর বসিয়ে দিচ্ছে রাতের বুকে। প্রচন্ড জ্বলনিতে রাতের ঘুম ভেঙে যায়। রুমের সবুজ আলোতে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে আহতকন্ঠে বললো,,

“” সন্ধ্যা কি করছিস,লাগছে আমার!””

রাতের কথা কানে না নিয়েই আচরের গতি প্রখর করে বললো,

“” তুই ঐ মেয়েকে চুমু খেলি কেন??””

অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে সন্ধ্যার হাত দুটো আটকে নিয়ে আছে রাত! জবাবদিহিতাই বললো,,

“” আমি আবার কখন,কাকে চুমু খেলাম?? তুই আমাকে তুই তুই করে বলছিস??””

সন্ধ্যা নিজের হাত ছুটানোর চেষ্টায় কটাক্ষভাবে বললো,,

“” ১০০ বার বলবো হাজারবার বলবো,তোর কি? নাম ধরেও বলবো!””
“” এসব কি বলছিস? আমি তোর থেকে ছ’বছরের….আহ!””

রাতকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ওর বুকের বা’পাশটাতে নিজের চকচকে,ঝকঝকে সাদা দাঁতগুলো বসিয়ে দিলো সন্ধ্যা!

চলবে

#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (১০)

শরীরের পাতলা সাদা টি-শার্টটা তুলে নিয়ে দু-হাতের দশ আঙুলের আচর বসিয়ে দিচ্ছে রাতের বুকে। প্রচন্ড জ্বলনিতে রাতের ঘুম ভেঙে যায়। রুমের সবুজ আলোতে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে আহতকন্ঠে বললো,,

“” সন্ধ্যা কি করছিস,লাগছে আমার!””

রাতের কথা কানে না নিয়েই আচরের গতি প্রখর করে বললো,

“” তুই ঐ মেয়েকে চুমু খেলি কেন??””

অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে সন্ধ্যার হাত দুটো আটকে নিয়ে আছে রাত! জবাবদিহিতাই বললো,,

“” আমি আবার কখন,কাকে চুমু খেলাম?? তুই আমাকে তুই তুই করে বলছিস??””

সন্ধ্যা নিজের হাত ছুটানোর চেষ্টায় কটাক্ষভাবে বললো,,

“” ১০০ বার বলবো হাজারবার বলবো,তোর কি? নাম ধরেও বলবো!””
“” এসব কি বলছিস? আমি তোর থেকে ছ’বছরের….আহ!””

রাতকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ওর বুকের বা’পাশটাতে নিজের চকচকে,ঝকঝকে সাদা দাঁতগুলো বসিয়ে দিলো সন্ধ্যা!

রাত ব্যথার যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত চেপে আছে। এমন ঝিনঝিনে ব্যথার সাথে আগেও পরিচিত হয়েছে,কিন্তু আজকেরটা খুব বেশি লাগছে, সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে রাত। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলোনা। সন্ধ্যার দু বাহু শক্ত করে চেপে ধরে ছাড়িয়ে সোজা করে বসালো,নিজেও বসে আছে। এখন সন্ধ্যা রাতের পেট ছেড়ে কোলে বসে আছে,চোখে কটরমটর রাগ,মনে হচ্ছে এখনি রাতকে খেয়ে নিবে!

রাতের চোখে পানি জমে গেছে,তবে তা বাধ ভেঙে বের হতে পারছেনা। মেয়ে হলে এতক্ষণে ঠিক দুনিয়া ভুলে কান্নায় ভেঙে পড়তো! রাত ব্যথাতুর কন্ঠে বললো,,

“” এটা কি ছিলো,সন্ধ্যা? পিকনিক থেকে কি তুই রাক্ষস হয়ে ফিরেছিস?””

রাতের প্রশ্নের উত্তরে সন্ধ্যা পরপর দুটো নিশ্বাস ছাড়লো,রাগ মিশ্রিত নিশ্বাস!

“” চুপ করে আছিস কেন? কি হয়েছে? আমার বুকটা তো জ্বলে যাচ্ছে।””
“” যাক,শুধু বুক কেন,তোর সবকিছু জ্বলে যাক।””
“” এটা কেমন ব্যবহার? তুই তুই করে কথা বলছিস কেন?””

সন্ধ্যা রাতের কোল থেকে উঠে পড়লো। ওর দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললো,,

“” আমার যা খুশি তাই করবো,বলবো। দরকার হলে তুই,তুমি,আপনি বাদে যদি আরো কিছু থাকে সেটাও বলবো।””

সন্ধ্যার কর্মে অবাক হবে,নাকি বচনে সেটাও বুঝে উঠতে পারছেনা রাত। তবে সে চমকিত,এমন কি আশ্চর্যজনিত্ব! এটা কি আসলেই তার স্বপ্নে দেখা সেই বধুটি??

“” তুমি চুমু খেলে কেন? কেন খেলে? তাও ঠোঁট কামড়ানো!””

রাতের চোখ বড় হয়ে আসছে,সেটা ও বুঝতে পারুক আর নাই পারুক,তবে এইটুকু বুঝতে পারছে,এবার পলক না পড়লে তার মনিদুটো ব্যঙের মতো লাফ দিয়ে বেড়িয়ে পড়বে।

“” কাকে চুমু খেলাম? এসব কি বলছিস?””
“” কাকে আবার দিয়াকে। তুমি দিয়াকে চুমু খেয়েছো,কেন খেয়েছো? ঐ ঢংগিটাকে কেন খেলে? বলো কেন খেলে?””

সন্ধ্যার প্রশ্নবোধক কথা ছুড়ে দেওয়ার সাথে সাথে রাতের দিকে ঝুকে এসেছে,রাত কিছুটা পিছনে ঝুকে পড়লো। বাম হাতটা দিয়ে বিছানাতে ভর রেখে বাকা হয়ে আছে। সন্ধ্যা ঝাড়ি দেওয়ার তোড়ে চোখগুলোও বড়বড় করে রেখেছে,ঠোঁটদুটো কিছুটা বুঝানো,ভ্র দুটোসহ কপালটা উপরে উঠে গেছে।

“” দিয়াটা কে? আমি কি ওকে চিনি? কোথায় দেখা হয়েছে? কখন চুমু খেয়েছি,দিনে নাকি রাতে?””
“” আমার স্বপ্নে!””

রাতের এবার হাঁসি পেলো। ভয়ংকর হাঁসি, যে হাঁসিতে ঘরকে মুখরিত করে তুলতে পারে,সাথে সন্ধ্যাকে আরেকটু রাগিয়ে দিতে পারে,যেটাকে বলে,গরম তেলে ঘি ঢেলে দেওয়া। কিন্তু রাত সেগুলোর কিছু করলোনা। সন্ধ্যার ভাসা ভাসা চোখের মোহনায় হারিয়ে যেতে যেতে বললো,,

“” দিয়াকে খেলাম বলে,আমার বুকটা ছিড়ে ফেললি,তোকে খেলে কি করতি,বলতো? একটা খাবো কি?””

রাতের কথাতে সন্ধ্যা নড়েচড়ে উঠলো,সোজা হয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো,,

“” আমাকে কেন খাবে? তুমি গিয়ে দিয়াকেই খাও।””

রাত ও ঠিক হয়ে বসলো,সন্ধ্যাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিলো। কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,

“” হ্যা বললি নাকি না?””

সন্ধ্যা টুক করে উঠে দাড়ালো। রাতের দিকে না ফিরেই বললো,,

“” তোমার জন্য দিয়াই ঠিক আছে,রাত ভাইয়া। আমাকে চুমু খাওয়ার মানুষের অভাব নাই। আজ হ্যা বললে কালই চুমু পাবো। শুধু ঠোঁটে কেন,আরো অনেক জায়গাতেই। আমাকে তো আজকেও রাশেদ একটা লাভ লেটার দিয়েছে,ইশ! কি সব দুষ্টু দুষ্টু কথা।””

সন্ধ্যা লজ্জা লজ্জা মুখ করে রাতের রুম থেকে বেড়িয়ে এলো। পেছন থেকে কারো হৃদদহনের গন্ধটা কি ওর নাকে বাড়ি খায়নি??

~~

দুপুরের ফ্রেশ সাওয়ার নিয়ে ড্রেসিং টেবিলটার সামনে দাড়িয়ে আছে রাত। শার্টের বোতামটা লাগাতে গিয়েও থমকে গেলো। লোমহীন ফর্সাবুকের বা’দিকটাতে লাল ছোপগুলো স্পষ্ট। ওখানটাই হাত বুলাতেই ঝিনঝিন ব্যথাটা নড়ে উঠেছে। অনুরাগটা তুই করতে দিচ্ছিস না,আর রাগটা আমি করতে চাচ্ছিনা। এ কেমন অনুভূতিতে ডুবিয়ে রেখেছিস বলতো। আমি কি করতে চাচ্ছি তা তো আমি বুঝছিই না আর তুই করতে চাচ্ছিস সেটাও মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। যখনি মনে হচ্ছে তুই আমার মনের গহীনে ঢুকতে চাচ্ছিস ঠিক তখনি তুই আমাকে ঠেলে দুরে সরিয়ে দিচ্ছিস। কেন এমন করছিস,স্বপ্নবধু? হয় তুই আমাকে বুঝে নে,নাহয় আমায় তোকে বুঝতে দে! এভাবে আর কত?

~~

সন্ধ্যার রুমে প্রবেশ করতেই ওকে মেঝেতে উপুত হয়ে শুয়ে থাকতে দেখলো রাত। খাটের নিচে কিছু একটা খুজছে হয়তো। হাতে ঝাড়ুও আছে,ও কি এখন ঝাড়ুওলি সেজেছে নাকি?? এ বাসায় ঝাড়ু দেওয়ার লোকের কি অভাব পড়েছে??

“” তুই রুম ঝাড়ু দিচ্ছিস যে,রিনা কোথায়? ও আজ কাজে আসেনি?””

সন্ধ্যা খাটের নিচে এতটাই মনোযোগি ছিলো যে রাতের আচমকা কন্ঠে ও নড়ে উঠেছে। যার ফলে মাথাটা গিয়ে খাটের তলায় বাড়ি খেলো।

রাত দৌড়ে ওর কাছে এসে বললো,,

“” লাগলো নাকি?””

সন্ধ্যা কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। রাত ওর কপালে হাত দিতে গেলেই সন্ধ্যা চট করে উঠে দাড়ালো।

“” তুমি আমার কাজে বাধা দিলে কেন? আমি কত মনোযেগি ছিলাম।””
“”এতো মনোযোগ দিয়ে কি করছিলি?””

সন্ধ্যা মলিন মুখ করে বললো,,

“” মালা খুজছিলাম,আমার ঝিনুকমালা,ওটা আমার কত পছন্দের ছিলো। তোমাকে দেখিয়েছিলাম তো।””

মালার কথা উঠতেই রাতের ডানহাতটা নিজের পকেটে গিয়ে চাপ পড়লো। সেদিন ঐ হোটেলের ছোট্ট রুমটা তছনছ হওয়ার ফলে তাকে জরিমানা করতে হয়েছিলো। কিন্তু এতোকিছুর মাঝেও মালাটা সে পকেটে ঢুকিয়েছিলো। সঙ্গে করে নিয়েও এসেছে,কেন এনেছিলো জানেনা,কিন্তু ওটা ছুলেই কেমনজানি এক শিহরণ বয়ে যায় পুরো শরীরে!

রাত কিছুটা সন্দিহান চোখে তাকালো সন্ধ্যার দিকে।

“” ওহ! ঐ মালাটা? ওটাতো আমি হোটেলেই ছেড়ে এসেছি,তুই তো চিঠির উপর রেখে এলি। আমি ভাবলাম হয়তো ওটা তোর পছন্দ না তাই সাথে করে নিসনি! কে জানি দিয়েছিলো?””

রাতের প্রশ্নে সন্ধ্যা ইতস্ততবোধ করছে। সেদিন কার নামটা নিয়েছিলো কিছুতেই মনে পড়ছেনা।

“” কি হলো,ভুলে গেলি নাকি?””

সন্ধ্যা মুখ বাকিয়ে বললো,,

“” ভুলবো কেন? আমার স্পেশাল কেউ দিয়েছিলো। স্পেশালটা তোমাকে এখন বলা যাবেনা। ঐদিন তো আবেগে বলে ফেলেছিলাম।””

রাত কপাল উচিয়ে ওর দিকে তাকাতেই ও কেটে পড়ার ধান্দায় বললো,,

“” বেলা অনেক হয়েছে,শরীরে ময়লাও লেগেছে। যাই গোসল করে আসি। উফ! চুলকুনি শুরু হয়ে গেছে।””

সন্ধ্যা পা বাকালো,উচুও করলো কিন্তু মাটিতে পড়ার আগেই রাতের প্রতিত্তোর,,,

“” আসলেই কি তাই? নাকি তোর নিত্যদিনের নতুন নামগুলোর মতো তারাও নতুন,আসলেই কি তোর সাথে তাদের আলাপচারিতা হয়েছে?””

সন্ধ্যা থমথমভাবে এক পা উচু করেই দাড়িয়ে রইলো। মুখ দিয়ে কোনো কথা আসছেনা,মাথায়ও কোনো ভাবনা আসছেনা। কিন্তু ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়। দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। ওর শব্দ করে লাগানো দরজাটার দিয়ে চেয়ে আছে রাত। আর সাথে সাথেই দরজা খুলে গেলো। মাথাটা কিছুটা বের করে বললো,,

“” আমি জানতাম,তোমরা আমার খুশি দেখতে পারোনা। তোমাদের কি মনে হয়,আমি কিছু বুঝিনা? অমন বন্দী পাখিকে আকাশে উড়তে দিবে আর সাথে পাকবাহিনি লাগাবেনা? আমি সব জানি,আমি এখন আর ছোটটি নই বুঝলে? সেজন্যই তো বুদ্ধী করে আসল নামটা লুকালাম। নাহলে তুমি তো আব্বুকে সব বলে দিতে!””

সন্ধ্যার কথাতে রাত গুপ্ত আশংকার ছোয়া পেলেও তা ভুলে গেলো। বেশ উৎসাহী হয়ে বললো,,

“” তুই বড় হয়ে গিয়েছিস,সন্ধ্যা?””

সন্ধ্যা ফ্যালফ্যাল নয়নে রাতের দিকে তাকালো। ঠোঁটের ভেতরে জিহ্বাটা দাঁতে কামড়েও নিয়েছে।

“” জানিনা!””

সন্ধ্যা এবার আগের তুলনায় অধিক শব্দে দরজা লাগালো।

~~

এইচএসএসি শুরু হয়ে গিয়েছে সন্ধ্যার। কলেজ থেকে সকলের যাত্রাসুবিধার জন্য নিজস্ব গাড়ী দেওয়া হলেও সন্ধ্যাকে সেখান থেকে আলাদা করে নিয়েছে রাত। নিজ দায়িত্বে টাইম টু টাইম নিয়ে আসা-যাওয়ার দায়িত্বটাও সেই বহন করবে। তবে সন্ধ্যা দ্বিমত পোষণ করলেও বাবার জোরাজুরিকে অমান্য করতে পারলোনা। আসলেই কি তাই? নাকি সবটায় সন্ধ্যার অভিনয় ছিলো,ভেতরটা কি চায়ছিলো না রাতের সান্নিধ্যটাকে খুব করে উপভোগ করতে???

প্রথম পরীক্ষাটা শেষ করেই রাতের পাশে বসে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে সন্ধ্যা। আকাশের অবস্থা ভালোনা,তারমধ্যে এতো বেশি ভিড়ে গাড়ীটাকে নিয়ে বড়রোডটাতে উঠতেই হিমশিম খাচ্ছে রাত। সন্ধ্যাও তিরিক্ষে মেজাজ নিয়ে বললো,,

“” তুমি তো এখনো গাড়ী চালাতেই শিখলেনা। ২ মিনিটের রাস্তা পার করতে দুঘন্টা লাগিয়ে দিচ্ছো। আর সাজ্জাদ ভাইয়া প্লেন চালানো শিখে গিয়েছে। আমাকে নিয়ে উড়বে বলেছে।””

রাত হর্নটা চেপে ধরে বললো,,

“” স্কুলে বসে প্লেন চালানো?””

সন্ধ্যা হাতদিয়ে কানদুটো চেপে ধরে চিৎকার করে বললো,,

“” উনি,স্কুলে পড়বেন কেন? উনি তো প্লেন চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। শেষ হলেই আমার সাথে দেখা করতে আসবেন। “”

রাত বড় রোডটাতে উঠে গিয়ে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে রইলো। সন্ধ্যা আবার চিৎকার করে বললো,,

“” আমাকে মেরে ফেলার ফন্দি এঁটেছো তাইনা? সামনে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? আমার বুঝি আর প্লেনে চড়া হলোনা।””

রাত গাড়ীর স্পিড বাড়িয়ে দিলো। তাকাবেনা সে এই মেয়েটার দিকে। মুখে কথা ফুটলেই পরপুরুষের নাম ঝরে পড়ে। আল্লাহ কি এই পৃথিবীর সব ছেলেগুলোকে ওর পেটেই ভরে রেখেছে??

আকাশ তার নীলশাড়ী ছেড়ে ধুসর রঙে সেজে উঠেছে,গয়না হিসেবে রুপোর আলোর ঝলকানিকে ব্যবহার করছে,একটু পরেই হয়তো ভয়ংকর হাঁসি দিয়ে ঝড় তুলে দিবে আর নাহয় মুক্তো হাঁসি দিয়ে বৃষ্টি। বিকেলের কড়কড়া রোদটা মিশে গিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসার উপক্রম। চারপাশটায় কালোয়কালোয় সন্ধ্যা,সাথে বাতাসের তীব্র বাড়ি। এমন অবস্থায় গাড়ী চালিয়ে যাওয়াকে বেশ বিপদ্দজনক মনে করলো রাত। সে চায়না ছোট্ট একটা ভুল কর্মের জন্য সন্ধ্যাহীন তার জীবন অথবা রাতহীন সন্ধ্যার জীবন বয়ে চলুক। প্রত্যেকটা দিন যেমন সন্ধ্যা রাতের মাঝে হারিয়ে শেষ হয়,ভোরের তৃপ্ততায়! তেমনি তাদের জীবনটাও হবে সন্ধ্যা আর রাতের একত্রময়!

রাত রাস্তার পাশেই খোলা জায়গাতে গাড়ীটা সাইড করে রেখেছে। ততক্ষণে ঝড়ের সাথে বৃষ্টির টুকরো গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। নিজের পাশের কাঁচটা লাগিয়ে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকালো। এতো ঘুম! এইজন্যইতো বলি,সবকিছু এতো নিশ্চুপ কেন? সন্ধ্যার মাথাটা খোলা কাঁচের জানালায় হেলানো। হাতের উপর ভর দেওয়া। বৃষ্টিতে মুখটা ভিজে গিয়ে চুলগুলোও আংশিক ভিজে গিয়েছে। রাত ওর কাছে এসে মাথাটা আলতো করে সিটে রাখলো। জানালার কাঁচটা উঠিয়ে দিয়েছে।

সন্ধ্যার মুখের বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির পানি গড়িয়ে গলায় গিয়ে পড়ছে। রাত মুগ্ধনয়নে চেয়ে আছে,মনের ভেতরের সাথে সাথে শরীরের ভেতরের শিরাউপশিরাগুলো জেগে উঠছে,রক্তরা কি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে ওর পানে চেয়ে আছে কিছু পাওয়ার আশায়??

আজ অনেকদিনবাদে সন্ধ্যার ঠোঁটের কোণের তিলটাতে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে রাত। সন্ধ্যা আর ওর দুরত্বটা খুব একটা বেশি নাহলেও আগের মতো ওদের মধ্যে সেরকম খুনশুটি হয়না। তেমনভাবে কি দেখা সাক্ষাতটাও হয়??

রাত না চাইলেও তার অতৃপ্ত মনটা চাচ্ছে কিছু একটা হোক! সন্ধ্যার গালটা ছুয়ে নিজের হাত দিয়ে,চোখটা বন্ধ করে ভারী নিশ্বাসে রাত বিড়বিড় করছে, তোর অজান্তে আমি তোকে কখনোও খারাপ নজরে তো দুর নিজের ভালোবাসার অধিকারেও তোকে ছুইনি। সুযোগ ছিলোনা বললে ভুল হবে,ছিলো অসংখ্যবার! তবুও নিজেকে সবসময় দমিয়ে রেখেছি,মনটাকে সবসময় বুঝিয়ে এসেছি,যখন তোকে একদম সম্পুর্নভাবে নিজের করে পাবো,সেদিনই ভালোবাসার স্পর্শে তোকে রাঙাবো। কিন্তু আজ! আজ আমি নিজের অবুঝ মনটাকে কিছুতেই বুঝিয়ে উঠতে পারছিনা। তোর ঘুমের সুযোগ নিয়ে তোকে একটু ছুয়ে দিলে কি তুই আমার উপর রাগ করবি? খুব গভীর করে ছুবোনা,প্রমিস!

রাত চোখ বন্ধ করেই সেই ছোট্টকালে হারিয়ে যাচ্ছে। তখন সে সবে কিশোর বয়সে পা দিয়েছিলো। বন্ধুদের কাছে নানা নিষিদ্ধ কথা শুনে শুনে শরীরটা যখন মচমচে হয়ে উঠেছিলো,তখন সন্ধ্যা সাত বছরের দুষ্টুমিষ্টি একটা বাচ্চা। যে কথায় কথায় রাতকে চুমু খায়। তেমনি এক সময় রাতের কোলে বসে অংক করছিলো,আর একটু পরপর রাতকে চুমু খাচ্ছিলো। এতে সন্ধ্যা হেঁসে কুটুকুটি হলেও রাতের ভেতরে চলছিলো নিষিদ্ধ কিছু করার প্রবল ইচ্ছে।

বাচ্চা সন্ধ্যাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর দুগাল শক্ত করে চেপে ধরে বললো,,

“” যদি কখনো জানতে পারিস,তোর অজান্তে আমি তোকে ভুল করে ছুয়ে ফেলেছি তখন তুই কি করবি? আমাকে ক্ষমা করবি? নাকি আমার থেকে আড়ালে চলে যাবি?””

সন্ধ্যা রাতের দিকে জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো। তারপর বললো,,

“” ভুল ছোয়াটা কি,রাত ভাইয়া?””
“” ভুল কাজ।””

সন্ধ্যার জ্ঞানীভাবটা কেটে গিয়ে গাম্ভীর্যের রুপ নিলো। বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে রাতের গলা জড়িয়ে ধরলো। খই ফোটার মতো ঝরঝর কন্ঠে বললো,,

“” আমার রাত ভাইয়া ভুল কাজ করতেই পারেনা। আমি করতে দিবোনা!””

রাত ভাবনায় হারিয়ে যেতে যেতে সন্ধ্যার মুখের কাছে অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। সন্ধ্যার ঠোঁট ছুইছুই হতেই বজ্রপাতের শব্দ। সন্ধ্যা লাফ দিয়ে উঠলো,আর সাথে সাথে রাতের মাথার সাথে টাক খেলো।

দুজনেই দুজনের কপালে হাত দিয়ে মালিশ করছে। রাত সন্ধ্যার পানে চেয়ে বেশ বড়সড় হাঁসিতে ফেটে পড়লো। সন্ধ্যা কপাল কুঁচকে বললো,,

“” আমি ব্যথা পেলেই তোমার হাঁসতে হয়?””

সন্ধ্যার কথার উত্তরে রাত দার্ঘহাঁসি হেঁসে মনে মনে বললো,তুই সত্যিই আমাকে ভুল কাজ থেকে বাচিয়ে নিলি!””

~~

সন্ধ্যার আঠারো বছর পুর্ন হলো আজ। সে উপলক্ষে বাড়িতে বিরাট আয়োজন। সন্ধ্যার বাবা সিকান্দার সাহেব যখন তখন যার তার উপর হাঁকিয়ে উঠছেন। আতিথ্যেয়তায় কমতি রাখতে চাননা কোনো কিছুতেই। অনেক বছর বাদে এ বাড়িতে এতো বড় আয়োজন হচ্ছে।

“” আজকের দিনেও এমন শুকনো রঙের কাপড় পড়ে আছিস তিল? তুই এমন কেন বলতো? অন্যের ঝাড়ি না খেলে তোর পেটের ভাত হজম হয়না?””

সন্ধ্যার মা রিমার কথায় মুচকি হেঁসে উঠলো তিয়ামতী।

তিয়ামতীকে ড্রেসিং টেবিলটার সামনে দাড় করিয়ে ওর পাশে এসে নিজেও দাড়িয়েছে।

“” দেখতো,তোকে আর আমাকে দেখলে কেউ বলবে,তুই আর আমি একসময় এক ক্লাসে পড়তাম?””

তিয়ামতী না বুঝার ভান করতেই রিমা আবার বললো,,

“” দেখ,আমার পেটটা ফুলে মিস্টিকুমড়া হয়ে গিয়েছে,আর গালের চামড়াটাও কেমন নিচে ঝুলে পড়েছে। হাতটা দেখ,কেমন চামড়ায় ভাজ পড়ে গিয়েছে,আর তোর? তোকে এখনো পুর্ণ যুবতী মেয়ে লাগে।””

রিমার কথাতে তাচ্ছিল্য,ভালোবাসা,অভিযোগ নাকি আফসোস ফুটে উঠেছে, বুঝতে পারলোনা তিয়ামতী। আগের মতোই চুপ করে রইলো।

“” মুটিয়ে যাওয়াটাকে আমরা বিয়ের দোষ বা বাচ্চার দোষ দিলেও কিন্তু এর পেছনে আরেকটা দোষ সুপ্ত থাকে। সেটা কি বলতো?””
“” কি?””
“” স্বামীর ভালোবাসা!””

রিমার উত্তরে তিয়ামতীর মুখটা মলিন হয়ে এলো। মাটিতে চোখের দৃষ্টি স্থির করতেই রিমা আবার বললো,,

“” সব সুন্দর মুহুর্তগুলো এভাবে কেন দুরে ঠেলে দিলি? আমাদের সবার কথার বিপক্ষে না গেলেই কি হতোনা?? একা একটা মেয়ে স্বামীর ছোয়া ছাড়া কিভাবে থাকতে পারে?? দাঁত কিড়মিড়িয়ে দিনগুলো নাহয় কাটিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু রাতটা? আচ্ছা শরীরের চাহিদাটা ছেড়ে দিলাম,কিন্তু সারাদিনের ব্যস্ত সময় শেষে কি একবারের জন্যও ইচ্ছে হয়না,একা নিরালায় নির্জনে একটা মানুষের পাশে,নিশ্বাসের ছোয়ায়,দু/একটা সুখদুঃখেরর গল্প করতে? ইচ্ছে হয়না,সবার চোখের আড়ালে চোখের পানিতে কারো বুক ভিজিয়ে নিতে?””

তিয়ামতী রিমার কাছ থেকে সরে এসে বললো,,

“” করে,তবে সেটা শুধু রিদ ভাইয়ার জন্য। আমি কখনোই চাইনি অন্য কারো ছোয়াতে,আমার রিদ ভাইয়ার ছোয়াটা ঢাকা পড়ুক!””
“” কিন্তু তিল…””
“” তুই কি এগুলো বলতে এখানে এসেছিস?””

তিয়ামতীর কথার উত্তরে রিমা কিছু বললোনা। একটা ঝলমলে হাফ সিল্কের লালশাড়ী এগিয়ে দিয়ে বললো,,

“” আজ এটা পড়ে তুই আমার মেয়েকে দোয়া করবি।””
“” এমন গাঢ় রঙ পড়বো? চল্লিশের কৌঠাতে?””

রিমা মুখে কিছু না বলে তিয়ামতীর শরীরের কাপড়ে হাত দিতেই তিয়ামতী চিৎকার করে উঠলো,,

“”আচ্ছা পড়বো!””

~~
জন্মদিনের অনুষ্ঠানের অন্যান্য কাজের সাথে রান্নার কাজটাও পড়েছে রাতের। যদিও সে নিজেই এক হাতে সবটা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে,তবুও শরীরটা ঘেমে নেয়ে বাজে অবস্থা। বাবুর্চির পাশে থাকতে থাকতে অতিরিক্ত গরমে মাথাটা ধরে এসেছে। কিছু সময়ের জন্য ঠান্ডা বাতাসে না গেলে মাথা ঘুরে পড়েও যেতে পারে। রাত সকলের চোখের আড়ালে নিজের রুমে আসলো। ফ্যানটা ফুল স্পিডে ছেড়ে দিয়েছে। বিছানাতে বসে গায়ের হলুদ টি-শার্টের গলাটা টেনে ধরে হাওয়া ঢুকাচ্ছে। ঠিক তখনি সন্ধ্যার আগমন। ওর কোলের উপর একটা শাড়ি রেখে বললো,,

“” রাত ভাইয়া,শাড়ীটা পড়িয়ে দাওতো!””

রাত টি-শার্টের গলাটা ওভাবে ধরে রাখা অবস্থাতেই আছে,শুধু চোখটা বড় হয়ে মুখটা হা হয়ে গেলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here