ভালোবাসার রাত ২ পর্ব ১১+১২

#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (১১+১২)

ওর কোলের উপর একটা শাড়ি রেখে বললো,,

“” রাত ভাইয়া,শাড়ীটা পড়িয়ে দাওতো!””

রাত টি-শার্টের গলাটা ওভাবে ধরে রাখা অবস্থাতেই আছে,শুধু চোখটা বড় হয়ে মুখটা হা হয়ে গেলো।

**ওহে নারী,ওহে শাড়ী
দাপিয়ে দাবানলের আগুন,,
যেখানে-সেখানে,যখন-তখন
যে কাউকে করতে পারো খুন!**

সন্ধ্যা রাতের ঠিক কাছটাতে দাড়িয়ে বললো,,

“” অমন গাছছাড়া বানরের মতো হা করে ঝুলছো কেন? কি বিড়বিড় করছো বলোতো?? মানুষ তো ঠোঁট নাড়িয়ে বিড়বিড় করে,কিন্তু তুমি কি নাড়িয়ে বিড়বিড় করছো??””

রাত নিজের ঠোঁটদুটো বন্ধ করে নিলো। নিজের কোলের শাড়ীটা নিয়ে দ্রুতগামীতে সন্ধ্যাকে ঢেকে দিয়ে বললো,,

“” এভাবে ব্লাউজ ছায়া পড়ে দাড়িয়ে আছিস কেন?””
“” তাহলে কি বসে পড়বো?””
“” আবার বসবি কেন?””
“” তাহলে কি করবো? শুয়ে পড়বো?””
“” না,কিছু করবিনা। আমার রুম থেকে যা।””
“” কেন?””

রাত সন্ধ্যার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে বললো,,

“” জানিনা!””

সন্ধ্যা রাতের সামনের দিকে এসে ওর হাতে শাড়ী ধরিয়ে বললো,,

“” শাড়ী না পরে চলে যাবো? তুমি জানো বাহিরে কত ছেলেপুলে? ওদের সামনে আমি ব্লাউজ-ছায়া পড়ে থাকবো?? ওরা তো তোমার থেকেও বড় হা করে ঝুলবে। তখন তো আমার জন্মদিনের পার্টি,বানরের পার্টি হয়ে যাবে!
“” তাহলে পড়ে নে। কে বলেছে অর্ধঢাকা হয়ে থাকতে??
“” আমিও তো সেটাই বলছি পড়িয়ে দাও।””

রাত সন্ধ্যার দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়েটা আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছে নাকি?? স্বপ্নে তো আমাকে ভালোবাসতে এসেছিলো,আর এখন? এখন মারতে?? সারাক্ষন মাথায় বুদ্ধী আঁটতে থাকে,আমাকে কিভাবে,কতটা হয়রানী করে মারবে।

সন্ধ্যা রাতের দিকে কোমড়টা বাকিয়ে ধরে বললো,,

“” কি হলো পড়িয়ে দাও!””
“” আমি শাড়ী পড়াতে পারিনা। যা,ফুপিকে বল নাহলে আম্মু..””
“” তুমি আবার মিথ্যে বলছো!””
“” আমি মিথ্যে বলছি? আমি কি মেয়ে যে শাড়ী পড়তে জানবো?””
“” শাড়ী পড়া শিখতে হলে মেয়ে হতে হয় নাকি?? সব ছেলেরাই পারে। আমি টিভিতে দেখেছি,আজকাল তো ফেসবুকেও..””
“” বলছি তো আমি পারিনা!””

সন্ধ্যা চোখদুটো বড়বড় করে শাসিয়ে বললো,,

“” তুমি পড়িয়ে দিবে নাতো?””
“” না।””
“” দিবেনা?””
“” না?””
“” ওকে,তাহলে আমি অমিতের কাছে পড়বো।””

রাতের চোখটাও বড় হয়ে এসেছে,চট করে প্রশ্ন করে উঠলো,,

“” আবার এই অমিতটা কে?””
“” আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড! আমার জন্মদিনে আসছে। এই বুঝি এসে পৌছুলো। আমি বরং আমার রুমে গিয়ে ওয়েট করি। ওকেও ফোন করে বলে দেই,সরাসরি যেন আমার রুমে আসে। জানো তো ও খুব ভালো শাড়ী….””

এই মুহুর্তে সন্ধ্যার কথা শুনে মাথা নষ্ট করতে চায়না রাত। তাই ওর কথা বাধা দিয়ে বললো,,

“” ঠিক করে দাড়া!””

রাত টুপ করে মেঝেতে বসে পড়েছে। চোখে,মুখে বিরক্তের ছাপ। বিড়বিড় করতে করতে সন্ধ্যার কোমড়ে শাড়ীর কোনটা গুজে দিতেই সন্ধ্যা বলে উঠলো,,

“” আমাকে কি তোমার গরু মনে হচ্ছে? যেভাবে পেটিকোটের ফিতে টেনে শাড়ী গুজছো মনে তো হচ্ছে,আমাকে টেনে ধরে গোয়ালঘরে বেধে দিচ্ছো! সুন্দর করে পড়াও। ব্যথা পাচ্ছিতো,রাত ভাইয়া!””

সন্ধ্যার কথা কানে নিলোনা রাত। চোখ,মুখ বন্ধ করে,নিশ্বাসটা আটকে নিয়ে শাড়ী পড়ানো শেষ করেছে। সন্ধ্যা আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো। তারপর রাতের দিকে চেয়ে আছে। রাতের চোখ তখন মেঝেতে স্থির।

সন্ধ্যা ওর দিকে তাকিয়ে থেকেই নিজের শাড়ীটা খুলতে শুরু করে দিয়েছে। শাড়ীর শেষাংশটা টেনে খুলে রাতের সামনে ঢিল মেরে বললো,,

“” হয়নি,আবার পড়াও!””

রাত ওর কান্ডে হতবাক। যাহা ঢাকিতে সে ব্যাকুল হয়ে অতি দ্রুত শাড়ি পেচিয়ে দিলো তাহাই আবার তার সামনে ঢাকনাখোলা ।

রাত এবার কিছুটা কঠিন সুরেই বললো,,

“” আমি বলেছিলাম তো আমি পারিনা। তবুও জোর করলি। তুই থাক আমি ফুপিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।””

রাত দ্রুত কথা পেড়ে বের হতে চাইলে সন্ধ্যা ওর হাত টেনে ধরলো,,

“” আমি হয় তোমার কাছে পড়বো নাহয় অমিতের কাছে।””
“” সবকিছুতেই তোর জেদ দেখাতে হবে?””
“” হুম। আমার জেদ আমি দেখাবোনাতো তুমি দেখাবে?””
“” শুধু জেদ দেখাতে এসেছিস নাকি অন্যকিছু?””
“” মানে?””

সন্ধ্যার কথার উত্তর না দিয়ে ফ্লোরে পড়ে থাকা শাড়ীটা আবার হাতে নিলো রাত। ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শাড়ী গুজতে গেলে সন্ধ্যা মুচকি হেঁসে বললো,,

“” আমি সাবান দিয়ে গোসল করেছি।””

রাত শাড়ী হাতে কুচির শেইপ নিতে নিতে বললো,,

“” তো আমি কি করবো?””
“” তুমি যেভাবে আমাকে না ছুয়েই শাড়ী পড়াচ্ছো আমার মনে হলো তুমি হয়তো ভাবছো আমি গোসল করিনি,পচা গন্ধ করছে কি?””

রাত কুঁচিটা ঠিক করতে গিয়ে থমকে গেলো। সন্ধ্যার মুখের পানে চেয়ে ভাবছে,কেন স্পর্শ করছিনা সেটা কি তুই আসলেই বুঝতে পারছিসনা?? আঠারো তে পা দিয়েও কি তুই এখনো অবুঝ রয়ে গিয়েছিস?? এমনটাও কি সম্ভব? নাকি ইচ্ছে করেই আমাকে বিষাক্ত দংশন করতে চাচ্ছিস?? যে দংশনের বিষটা আমার পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়বে আর আমাকে তিলে তিলে খুন করবে। কিন্তু দংশনের কারনটা কি??

“” কি হলো থেমে গেলে কেন?? আমার এখনো কত কি বাকি,আমি সাজবো কখন? গয়না পড়বো কখন??””

রাত দ্বিতীয়বারের মতো শাড়ী পড়ানো শেষ করে সোজা হয়ে দাড়ালো। তৃপ্তি হাঁসি দিয়ে বললো,,

“” এবার ঠিকঠাক পড়িয়েছি!””

সন্ধ্যা মুখটাকে কাচুমুচু করে আবার শাড়ীটা খুলে ফেললো।

“” এবার কি সমস্যা হয়েছে? ঠিক করেই তো পড়ালাম।””
“” না,ঠিক হয়নি,আবার পড়াও।””

রাত একবার সন্ধ্যার দিকে তাকাচ্ছেতো আরেকবার শাড়ীর দিকে। এই দুটো জিনিস তার কাছে চাইছেটা কি??

রাত তৃতীয়বারের মতো হাটু ঘেরে বসে সন্ধ্যার মুখের দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বললো,,

“” কিভাবে পড়াবো,বলে দে! আমি নাহয় সেভাবেই পড়াবো। তাও এভাবে শাড়ী খুলিশনা। আমার হৃদকম্পন থেমে যায়!””
“” ওকে।””

সন্ধ্যাকে শাড়ী পড়াতে গিয়ে রাতের নাজেহাল অবস্থা। যে গরম থেকে বাঁচার জন্য ঠান্ডা হাওয়া খেতে এসেছিলো তার থেকেও হাজারগুন বেশি গরমের সমুদ্র তার সামনে এসে হাজির। যে সমুদ্রের ঢেউ খানিকবাদে বাদে ভেঙে পড়ছে রাতের শরীরে। আর ভিজিয়ে দিচ্ছে গরমের উত্তাপে।

১৬ বারের মতো শাড়ী পড়িয়ে দিয়ে রাত আকুতিভরে বললো,,

“” আর খুলিশনা। আমি এবার ক্লান্ত! আমাকে একটু একা ছেড়ে দে!!””

ততক্ষণে সন্ধ্যার হাত শাড়ীর আঁচলে চলে গিয়েছিলো। রাতের অনুরোধে হাতটা সরিয়ে নিলো। চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে পড়তেই রাত ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়েছে।

~~
হাফ সিল্কের লাল শাড়ীর আঁচলটা বুকে জড়িয়ে নিলো তিয়ামতী। আয়নাতে তাকিয়ে নিজেকে দেখছে আর রিমার কথা ভাবছে। খালি কানটাতে কানের দুলটা পড়ে গলায় সোনার চেইনটা ঠিকঠাক করে নিয়েছে। চুলটা খোপা করে বেড়িয়ে যাবে ভাবতেই আবার আয়নার সামনে দাড়ালো। পেটের দিকটা থেকে শাড়ীটা সরিয়ে ঢেকে থাকা নাভীটা বের করে নিচ্ছে। নাভীর একটু ডানের দিকটায় এখনো কালসেটে নরম দাগ! এমনি এক বর্ণাঢ্য আয়োজনে আপনার পা পড়েছিলো এ বাড়িতে। আর এই পেট বের করে শাড়ী পড়ার শাস্তি দিতেই তো আপনার প্রথম ছোয়া পেয়েছিলাম রিদ ভাইয়া। আজ আমি আবার এভাবেই শাড়ী পড়েছি দেখুন,আপনি আসবেন তো আমাকে শাস্তি দিতে?? সে শাস্তি যত ভয়ংকরই হোকনা কেন আমি তা ভালোবাসা ভেবেই গ্রহণ করবো, আসবেনতো??

তিয়ামতীর ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে নেওয়া শাড়ীটাতে টান পড়তে শাড়ীর কুচিটা আলগা হয়ে এসেছে। দু/একটা কুচি সরে গিয়ে নষ্টও হয়ে গিয়েছে। আবার ঠিক করার জন্য উপুত হতেই কুচিতে রাতের হাত পড়লো। মেঝেতে দুপা ভাজ করে আরামআসনে বসে, মায়ের কুচির নিচের দিকটা ঠিক করছে মনোযোগিতে।

তিয়ামতী নিজের ছেলের দিকে মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে আছে। স্নেহের হাতটা মাথায় রেখে আদরে মেখে দিলো। রাত কুচিগুলো ঠিকঠাক করে তিয়ামতীর হাতে ধরিয়ে বললো,,

“” আম্মু,তোমার শাড়ী পড়াটা সুন্দর হয়নি,আমি ফুপিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি,ঠিক করে পড়িয়ে দিবে।””

রাত উঠে চলে যাচ্ছে। তার চলে যাওয়ার পানে তিয়ামতীর লজ্জামাখা দৃষ্টি। কোমড়ের শাড়ীটা উপরে তুলতে তুলতে জিভ কেটে নিয়ে নিজেকেই নিজে বকা দিচ্ছে, ছি! ছি!! ছি!!! আমি এটা ভুলে গেলাম কিভাবে এ বাড়িতে সে না থাকলেও তার দেওয়া তার সুপুত্র আছে,যে কিনা কোনোভাবেই চায়বেনা তার মায়ের অসম্মান হোক! নিজের ভুলের জন্য আজ ছেলের কাছে এমন লজ্জা পেতে হলো।

~~

বাড়িভর্তি অতিথীদের আনাগোনা। বাচ্চাকাচ্চার শোরগোল,গানবাজনা ও চারপাশের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে পরিবেশ বেশ চাঙ্গা করে ফেলেছে। জন্মদিনের অনুষ্ঠানটা অনেকটা বিয়েবাড়ি মনে হচ্ছে। সন্ধ্যের অন্ধকার কাটাতে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাত ৯ টায় কেক কাটা হবে বলে ঠিক করা হয়েছে।

রাত নিজের টুকটাক কাজ শেষ করে ঘামে ভেজা শরীরটা ধুয়ে নিয়েছে ঠান্ডা পানিতে। সন্ধ্যার পছন্দের কালো শার্ট পড়েছে সে। মেয়েটার তো একমাত্র সে বাদে পৃথিবীর সব ছেলের উপরি নজর। আজকে কি তার এই ভালোবাসায় অনাহারী মানুষটার দিকে একটু তাকাবে? মুগ্ধদৃষ্টিতে মন হারাবে??

রাত গন্ধবাসী পারফিউম মেখে অনেকটা সতেজ মন নিয়ে রুম থেকে বের হয়েছে। সেই যে শাড়ী পড়ার বায়না নিয়ে এসেছিলো তারপর আর একবারও চোখে পড়ে নি মেয়েটা। গেলোটা কই?? রাত এদিন ওদিক,সেদিক,নানাদিক খুজে খুজেও সন্ধ্যাকে পাচ্ছেনা। পুরো বাড়ি ঘুরতে ঘুরতে দাদীর রুমে হাজির।

“” এই বুড়ি,তুমি আবার ঐ ছবি দেখে কাঁদছো?? ছেলের জন্য এতো ভালোবাসা দেখেই তো আমার নরম মনের দাদাটা ওপারে পাড়ি দিয়েছে। তুমি জানোনা তার হিংসে হয়?””
“” হলে হবে,তাতে কি?? আমার সারাজীবনটা তো তার সেবায় কাটালাম,ছেলেটাকে ভালোবাসার সময় কই পেলাম??””

রাত নিজের দাদীর হাত থেকে ছবির ফ্রেমটা কেড়ে নিলো। এক পলকে নিজের বাবার হাঁসিমাখা মুখটা দেখে সাথে সাথে বিছানায় ফেলে দিলো।

“” তুমি রেডি হওনি যে? তোমার সতীনের জন্মদিনের কেক খাবেনা?””
“” ওসব আমার ভালো লাগেনা। আমার এই অন্ধকার ছোটকুটিরটাই বেশ আছি। তোরা আনন্দ কর। এখনি তো এসবের বয়েস!””
“” আমার আর বয়স!””
“” আবার কি হয়েছে?””

রাত দাদীর কাছে বসে গলা জড়িয়ে বললো,,

“”তোমার নানতিটা খুব দুষ্টু গো। আমাকে খাটিয়ে খাটিয়ে মারছে। নাকে দড়ি দিয়ে আখখেত,ধানখেত,আলুখেত,মুলোখেত সহ সব খেত চষিয়ে বেড়াচ্ছে!””
“” সন্ধ্যার কথা বলছিস? কোথায় ও? আজ তো দেখাই পেলামনা।””

রাত গলা ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে বললো,,

“” পাবে কি করে?? নিশ্চয় পেটের ভেতর ছেলেমানুষ ঢুকাচ্ছে। আমার সামনে আসলেই তো গড়গড় করে বের করতে হবে।””
“” এসব কি বলছিস? ছেলেমানুষ পেটে?””
“” হুম! তোমার নাতনি হলো ছেলেখোর। যেখান সেখান থেকে,ছেলে পেলেই গিলে ফেলে! ওর ছেলেমানুষি বলে আমি সব সহ্য করে যাচ্ছি বুঝলে? কিন্তু যদি এমন হয় ও ইচ্ছে করে এসব করছে তাহলে কিন্তু আমি তান্ডব বাধিয়ে দিবো। তবে সেটা শুধু তোমার নাতনির শরীর দিয়ে যাবে!””

রাত তার দাদীর কাছে হাজারটা নালিশ দিয়ে মনটা হালকা করলো। তারপর আবার ছুটলো তার স্বপ্নবধুর খোঁজে।

~~

সন্ধ্যা ভারীকাজের সবুজ লেহেঙ্গা পড়ে হেলেদুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন ভারী কাজের লেহেঙ্গা পড়ে হাঁটছে বেগতিকে। দুহাতে নিচের পার্টের দু কিনার কিছুটা উচু করে হাঁটছিলো। গন্তব্য নিজের রুম। চুলের সেটটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে,ঠিক করতে হবে তাই। নিজের রুমের কাছে আসতেই আচমকা টান খেলো হাতে।

ভয়ে শিউরে উঠলেও সামনে রাতকে দেখে যেন ভয়টা উধাও। বুকে থুতু ছিটিয়ে বললো,,

“” আল্লাহ! এমন কেউ করে? আমি তো এখনি হার্টঅ্যাটাকে অক্কা পেতাম। দেখো দেখো আমার হার্টবিট কত জোরে জোরে বাজছে!””

সন্ধ্যা রাতের হাতটা নিজের বুকে কাছে নিতে যাবে কিন্তু পারছেনা। মনে হচ্ছে রাতের হাতটা হাত নয়,কোনো শক্ত পাথরের পিলা। যেটা নড়ানো তার দ্বারা অসম্ভব!

“” এটা তুই কি পড়েছিস?””

সন্ধ্যা নিরাশ হওয়ার মতো মুখটা বাকিয়ে বললো,,

“” তুমি এখনো জামাকাপড় চিনলেনা?? এটাকে লেহেঙ্গা বলে। তুমি স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার মুভিটা দেখোনি?? ওখানে যে রাধা গানটা ছিলো? ওটাতে তো আলেয়া ভাট এই রকম লেহেঙ্গা পড়েছিলো। কিন্তু ওরটা পিংক আর আমারটা গ্রিন। তবে ওর মতো আমারটা ওতো ছোটনা। দেখনা,আমার পেটের দিকে তো অনলি ২ ইঞ্চি বেড়িয়েছে আর ওরটা তো ফুল…””
“” আমি না তোকে শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছিলাম? ওটার কি হলো? খুলেছিস কেন?””
“” খুলবোনা তো কি করবো? ওটা শাড়ী পড়ানো হলো? একটুও শুড়শুড়ি লাগেনি। আমি তো শুড়শুড়ি শাড়ী পড়তে চেয়েছিলাম।””
“” শুড়শুড়ি শাড়ী?””
“” হুম। তুমি দেখোনা,মুভিতে নায়িকাকে যখন নায়ক শাড়ী পড়িয়ে দেয়,তখন নায়িকা শুড়শুড়িতে কেমন কেঁপে কেঁপে উঠে,চোখদুটো বন্ধ করে নায়কের হাত চেপে ধরে। টেনে টেনে নিশ্বাস নেয়,অনেকটা শ্বাসকষ্ট রোগিদের মতো। আর আমি? আমি কাঁপা তো দুর একটু শুড়শুড়িও খেলাম না,তাই খুলে ফেলেছি। আমারি ভুল হয়েছে, তুমি যে শুড়শুড়ি দিতে পারোনা ওটা আমার আগে জানা উচিত ছিলো। আমি বরং রনির কাছেই পড়বো৷ ও বলেছে ও নাকি শুড়শুড়ি শাড়ী পড়াতে পারে।””

সন্ধ্যা কথার ফাঁকে ফাঁকে নানা অঙ্গিভঙ্গি করছে। হাতটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে বিধায় মাঝে মাঝে পেটের দু ইঞ্চি খালি জায়গাটা তিন ইঞ্চিতে রুপান্তর হচ্ছে। রাতের মাথা গরম হয়ে সব টালমাটাল অবস্থা। রাগে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। ইচ্ছে হচ্ছে সন্ধ্যার গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিতে নাহয়,পেটে গরম ছ্যাকা লাগিয়ে দিতে। রাত আর পারছেনা সহ্য করতে এবার কি তবে ওর ভেতরের রাগটা বেড়িয়ে আসতে চাইছে?? সব বাধ ভেঙে গিয়ে রাতের ভয়ংকর রুপটা সন্ধ্যা দেখতে চলেছে??

রাতের চোখে অগ্নিনালা বয়ছে। হাতদুটো মুঠো করে নিজের রাগকে দমিয়ে রাখতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে কই? বরংচ রাগটা আরো বেশি তীব্র হয়ে আসছে।

চলবে

#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (১২)

সন্ধ্যা কথার ফাঁকে ফাঁকে নানা অঙ্গিভঙ্গি করছে। হাতটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে বিধায় মাঝে মাঝে পেটের দু ইঞ্চি খালি জায়গাটা তিন ইঞ্চিতে রুপান্তর হচ্ছে। রাতের মাথা গরম হয়ে সব টালমাটাল অবস্থা। রাগে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। ইচ্ছে হচ্ছে সন্ধ্যার গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিতে নাহয়,পেটে গরম ছ্যাকা লাগিয়ে দিতে। রাত আর পারছেনা সহ্য করতে এবার কি তবে ওর ভেতরের রাগটা বেড়িয়ে আসতে চাইছে?? সব বাধ ভেঙে গিয়ে রাতের ভয়ংকর রুপটা সন্ধ্যা দেখতে চলেছে??

রাতের চোখে অগ্নিনালা বয়ছে। হাতদুটো মুঠো করে নিজের রাগকে দমিয়ে রাখতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে কই? বরংচ রাগটা আরো বেশি তীব্র হয়ে আসছে।

“” রাত,তুই এখানে? আর আমি তোকে খুজতে খুজতে কাহিল!””

হঠাৎ অন্যকারো কন্ঠে রাত পেছনঘুরে তাকায়। সায়ন দাড়িয়ে আছে দরজার কাছটাতে। রাতের দিকে ঠিকমতো খেয়াল বাদ দিয়ে সন্ধ্যাকে ঘুরঘুর করে দেখছে সায়ন। বেশ কিছুক্ষন দেখে নিয়ে হালকা হেঁসে বললো,,

“” তুমি সন্ধ্যা না? সেই ছোট্টবেলা দেখেছিলাম। তুমি তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছো। বাহ! বেশ সুন্দরীও হয়েছো।””

সন্ধ্যা লজ্জা মাখতে গিয়েও মাখলোনা। সায়নের কাছে এগিয়ে বললো,,

“” সায়ন ভাইয়া,তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে?? আমি তো ছোটবেলা তোমাকে কত পছন্দ করতাম। তাও কেন এলেনা? হঠাৎ তুমি আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া বন্ধ করলে কেন?””
“” রাত তো আমাকে..””

সায়ন কথা ছুড়তে গিয়ে চুপ হয়ে গেলো। রাতের দিকে চোখ পড়তেই তার সবহাঁসি ফুরুৎ। এটা সে কি করতে যাচ্ছিলো?? এই টাগড়া যুবক বয়সে সে মরতে চায়না,তাও রাতের হাতে তো নয়ই। তাহলে দেখা যাবে মরেও শান্তি পাবেনা। সায়ন ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,,

“” আরে,আমি তো আান্টির সাথে এখনো দেখা করিনি। যাই আন্টির সাথে দেখা করে আসি।””

রাতের ক্রোধাগ্নি দৃষ্টি থেকে বাঁচতে চটপট পা চালিয়ে চলে গেলো সায়ন।

সন্ধ্যা সেদিকে তাকিয়েই বললো,,

“” রাত ভাইয়া,সায়ন ভাইয়া দেখতে এতো ভালো কেন?? উফ! আমার চোখ জুরিয়ে গিয়েছে! কি ভালো দেখতে। ছেলে মানুষ বুঝি দেখতে এতো ভালো হয়?””

রাতের অগ্নিদৃষ্টিকে কোনো পরোয়াই করছেনা সন্ধ্যা। নিজের মতো বকবক করে বের হতে যাবে অমনি রাত ওর হাতটা খামচে ধরলো। সন্ধ্যা রাতের হাতের উপর নিজের আরেকটা হাত রেখে বললো,,

“” এতো শক্ত করে ধরেছো কেন? আমার নরম হাতটা কি ভর্তা বানিয়ে দিবে?””

রাত আগুন ঝেড়ে কিছু বলতে যাবে অমনি সন্ধ্যার বান্ধুবী দিয়ার আগমন।

“” এই সন্ধ্যা, তোরা কি করছিস?””

সন্ধ্যা চোখ বাকিয়ে দিয়ার দিকে তাকালো। এবার তার চোখও রাগে লাল হয়ে আসছে। দিয়া রাতের দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়ে বলছে,

“” তোকে খুব সুন্দর লাগছে। ইচ্ছে করছে একটা চুমু খায়।””

সন্ধ্যা নিজের হাত ছাড়িয়ে কঠোরভাবে বললো,,

“” এই লুচু মেয়ে,তুই এখানে কি করছিস? আমি তো তোকে ইনভাইট করিনি।””
“” বান্ধুবীর জন্মদিনে আসতে ইনভাইট লাগে নাকি?””

সন্ধ্যার গলা ছেড়ে পাল্টা প্রশ্ন,,

“” দাওয়াত ছাড়া খেতে চলে এসেছিস? মুখ দিয়ে খাবি নাকি চোখ দিয়ে?””
“” যেটা দিয়ে খেলে তৃপ্তি পাবো।””

দুজনের কথোপকথনে রাত হতবাক। এদের মাঝখানে তার কিছু বলা উচিৎ নাকি তাও বুঝতে পারছেনা। একবার সন্ধ্যার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার দিয়ার দিকে। রাত হঠাৎই দিয়ার হাতে ধরে টেনে সন্ধ্যার পাশে দাড় করিয়ে দিলো। এতে যেন দিয়া বেশ বিস্মিত। অবাকের দৃষ্টি গিয়ে পড়েছে তার হাতে বাধা রাতের হাতে। রাত চাঞ্চলতার সাথে বললো,,

“” দেখ তো দিয়াকে সাদাকালো থ্রি-পিসটাই কত সুন্দর লাগছে।””

সন্ধ্যা অগ্নিদৃষ্টি ছুড়ে বললো,,

“” তাহলে ওকে খেয়ে ফেলো। তুমি কি দিয়ে খাবে বলো তো? আজ তো আমার জন্মদিন পার্টি নয়,ভক্ষণ পার্টি। যেখানে খাবার নয় অন্যকিছু খাওয়া হয়!””

রাত সন্ধ্যার কথা ঝেড়ে ফেলে অনুরোধী সুরে বললো,,

“”তুই ও ওর মতো একটা থ্রি-পিস পড়ে নে। এসব লেহেঙ্গাতে তোকে একদম মানাচ্ছেনা।””

দুজনের কথার মাঝখানে ফোড়ন কাটলো দিয়া। কিছুটা সন্ধ্যার দিকে ঝুকে এসে ফিসফিস করে বললো,,

“” তোর রাত ভাইয়ার কাছে, তোর চাওয়া পুরন হয়েছে কি? তাহলে আমিও একটু চাইতাম। উনাকে দেখলেইনা আমার বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে,আমি ব্যাকুল হয়ে পাগল হয়ে যাই। আমার মনে হয় আমি তোর রাত ভাইয়ার প্রে…””

দিয়া কথা শেষ করার আগেই ওর পায়ের উপর নিজের পাটা রাখে সন্ধ্যা। নিজের হাইহীল দিয়ে পিষিয়ে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছে চালিয়ে ঝাঝড়া কন্ঠে বললো,,

“” যখন তখন তোর প্রেম জেগে উঠে না? তুই এখন আমার সামনে থেকে যাবি নাকি তোর জামা টেনে ছিড়ে ফেলবো। আসছে আমার সাদাকালো রানী!””

দিয়াকে অনেকটা জোর করে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিয়েছে সন্ধ্যা। রাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই সন্ধ্যা ওকে টেনে নিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালো। রাতের ঠিক পাশে দাড়িয়ে আছে। পাশাপাশি,কাছাকাছি। রাতের ডান হাতটাতে সন্ধ্যা নিজের বা হাতটা দিয়ে জড়িয়ে আরেকটু কাছ ঘেষে দাড়িয়ে আয়নাতে চেয়ে আছে।

সন্ধ্যা কি করতে চাচ্ছে বা আয়নাতেই বা কি এতো দেখছে সেটা বুঝার চেষ্টা করছে রাত। মাথায় চড়ে বসা রাগটা তখনো টগবগে। তবে আগের মতো নয়। অনেকটাই কমে এসেছে। সন্ধ্যার হাতের বাধনে তাকিয়ে কিছু একটা অনুভব করছে,ভালো লাগা নাকি ভালোবাসা? ঠিক তখনি সন্ধ্যা বলে উঠলো,,

“” রাত ভাইয়া,তোমার হাইট কত?””

রাতের দিক থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে ওর হাতটা ছেড়ে দিয়ে ওর সামনাসামনি দাড়ালো সন্ধ্যা।

“” কোথায় হারিয়েছো? আমি যে বকর বকর করছি,তুমি শুনতে পাচ্ছোনা?””
“”শুনতে দিলি কই? শোনার আগেই তো সব শেষ।””

সন্ধ্যা কপাল কুঁচকে বললো,,

“” কি শেষ?””
“” কিছুনা।””

সন্ধ্যা বিরক্তভর্তি একটা নিশ্বাস ছাড়লো। রুমের একসাইডে থাকা একটা চেয়ার নিয়ে এসে রাতের সামনে রাখলো।

“” চেয়ার দিয়ে কি করবি?””

রাতের কথার কোনো উত্তর দিলো না সন্ধ্যা। চেয়ারে উঠে দাড়িয়ে হাতের ইশারায় রাতকে ওর কাছে ডাকলো।

“”এখন তো আমি তোমার থেকে লম্বা হয়ে গিয়েছি। তোমাকে কে বলেছে এতো লম্বা হতে? নিচে দাড়ালে তুমি লম্বা আর উপরে দাড়ালে আমি লম্বা। বেখাপ্পা হাইট নিয়ে তুমি কেন জন্মালে,রাত ভাইয়া?””
“” আমি বেখাপ্পা লম্বা?””
“” তা নাহলে কি? পুরো তালগাছ। আমি ৫ ফুট তিন হয়েও তোমার কাধ অবধি! তাহলে কি তুমি বোঝাতে চাচ্ছো আমি খাটো মেয়ে?””
“” আমি সেটা কখন বললাম?””
“” মাত্রইতো বললে।””
“” না আমি বেখাপ্পা আর না তুই খাটো। দুজনেই দুজনের দিক থেকে পারফেক্ট!””
“” মোটেও না। আমি তো তোমার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারিনা। মাথা উচু করে আকাশ পানে চেয়ে কথা বলতে হয়। আমার ঘাড় ব্যথা হয়না বুঝি?””

রাতের ইচ্ছে হলো সন্ধ্যার মাথাটা বুকের সাথে ল্যাপ্টে নিয়ে বলতে,তোর ঘাড় ব্যথা করে আমার সাথে কথা বলতে হবেনা। আমার বুকে কান পেতে আমার হার্টবিটরা কি বলছে সেটা শুনলেই হবে। আমি তো তোর স্পর্শেই তোর সব না বলা কথাগুলো বুঝে নিবো!

“” আবার কি বিড়বিড় করছো? এইদিকে চুপ করে দাড়াও। চোখটা বন্ধ করো তো।””
“” কেন?””
“” এতো প্রশ্ন করো কেন? তোমার কি মনে হয়,আমি লুকিয়ে তোমাকে চুমু খাবো? আমাকে তোমার অমন মনে হয়? আমার চুমু খাওয়ার মানুষের অভাব নেই। তোমার মতো বেখাপ্পা লোককে আমি কেন চুমু খেতে যাবো?””

রাত আর কথা না বাড়িয়ে চোখটা বন্ধ করে নিলো। এই মেয়েটা একটুও ভালো করে কথা বলতে পারেনা। সবসময় হৃদয়ক্ষত কথা বলবে।

রাত চোখ বন্ধ করতেই সন্ধ্যা কাজল ল্যাপ্টে দিচ্ছে রাতের গালে,কপালে,নাকে,থুতনিতে এমন কি ঠোঁটেও! রাত হকচকিয়ে বললো,,

“” আরে আরে কি করছিস?””
“” একদম নড়নচড়ন নয়। চোখ খুললে খবর আছে। তোমাকে এখন আমি সাজাবো। তুমি এতো ফর্সা কেন? আমার থেকেও বেশি ফর্সা। ছেলেমানুষ এতো ফর্সা কেমনজানি অশোভন লাগে। এই জন্যইতো বুড়ো হতে চললে তাও তোমার কোনো গার্লফ্রেন্ড হয়নি।””

সন্ধ্যা রাতের মুখের সাজটা শেষ করে হাতে পায়েও কাজল মেখে দিলো। ঠিকঠাকমতো মিশিয়ে পুরো শ্যামবর্ন বানিয়ে আহ্লাদী স্বরে বললো,,

“” ইশ! তোমাকে কি সুন্দর লাগছে গো রাত ভাইয়া। আমার একটা বোন থাকলে তোমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিতাম।””

রাত বাঁকাচোখে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে আছে,আমি তোকে বিয়ে করার জন্য ১৮ বছর ধরে পুড়ছি,আর তুই নাই বোনের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য আফসোসে মরছিস। একেই বলে কপাল! তবে এই পোড়া কপাল নিয়েই তোকে আমি পুড়াবো,ভালোবাসার দহনে তোকে জ্বালিয়ে শেষ করে দিবো আমি,আমি তো সেই সময়ের অপেক্ষায় আছি!

সন্ধ্যা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ক্ষীণস্বরে চিল্লিয়ে বললো,,

“” আল্লাহ! আটটা বেজে গিয়েছে?? শিপন,অমিত,দিহাম,আরমান সবাইতো চলে এসেছে। আমাকে নিশ্চয় খোঁজছে। আমি কেক কাটবো কখন? তোমার জন্য আমার লেট হয়ে গেলো।””

সন্ধ্যা ছুটাছুটি করে চুলটা আচড়িয়ে নিলো,লেহেঙ্গার ওড়নাটা গলায় ফেলে,গালের এপাশওপাশ কিছু একটা মাখলো,ঠোঁটের লিপস্টিকটা আরেকটু গাঢ় করলো,কপালের টিকলিটাও এদিক ওদিক সরিয়ে সোজা করলো। রাত চুপচাপ সন্ধ্যার কার্যকলাপ দেখছে,মুখে একটা রা শব্দও নেই। সন্ধ্যার টেনে আনা চেয়ারটাতেই গম্ভীর আসনে বসে ওকে দেখে যাচ্ছে।

সন্ধ্যা নিজেকে পরিপাটি করে রাতের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দৌড় দিবে ঠিক তখনি ওর কনুই চেপে ধরলো রাত। শান্তস্বভাবেই বললো,,

“” লেহেঙ্গাটা চেন্জ করে নে।””

সন্ধ্যার চটপট উত্তর।

“”অসম্ভব,আমার সবসাজ ঘেটে যাবে। ছাড়ো,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।””

রাত বসা থেকে উঠে দাড়ালো। সন্ধ্যাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বললো,,

“” তুই এটা পড়ে বাইরে যেতে পারবিনা।””
“” যাবো।””
“” না,যাবিনা।””
“” ১০০ বার যাবো। তোমার কি?””
“” সন্ধ্যা কথা বাড়াস না। বলছিতো এটা পড়ে বেরোনো যাবেনা।””
“” যাবে যাবে যাবে। আমি যাবো যাবো যাবো। তোমার কথা শুনবোনা।””

সন্ধ্যার জেদের পাহাড়টা দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এক টানে সব ছিড়ে ফেলতে,গুড়িয়ে দিতে সন্ধ্যার জেদের পাহাড়।

সন্ধ্যা নিজের একরোখা কথা থেকে যে পিছপা হবেনা সেটা ওর চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। সেই চোখটার দিকে কড়া চোখে তাকাতে পারছেনা রাত। তবুও জোর করে তাকানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে বললো,,

“” আমি বলছি তুই যাবিনা,আর এটাইতেই তুই অনুবর্তী হবি!””

সন্ধ্যার একরোখা জবাব,,

“” হবোনা। কি করবে? আমাকে বকবে? মারবে? নাকি..””

সন্ধ্যার কথা শেষ হওয়ার আগেই ওর হাত ছেড়ে দিয়েছে রাত। ওর দিকে একবার তাকানোর প্রয়োজন মনে করলোনা। মাত্রাতিরিক্ত রাগে তার কপালের উভয়পাশের শিরারা বেড়িয়ে আসার উপক্রম। কানে শুধু সন্ধ্যার কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে,কি করতে পারি সেটা তোকে জানাতে চায়না বলেই আজ তোর এতো অধপতন!

~~

সন্ধ্যার জন্মদিনের কেকটা ছুড়ে ফেলে দিলো,খাবার আসনগুলো আছাড় মেরে গুড়িয়ে দিচ্ছে,চারপাশের জ্বলমলে আলোর রশ্নিগুলো টেনে ছিড়ে ফেলে বাইরে বেড়িয়ে পড়লো রাত। পেছনে শতশত চেনা অচেনা মানুষের চিৎকারের ভয়ানক কন্ঠস্বরগুলো শুনার সময়টুকু যেন নেই। দ্রুতপদে ব্যস্ত রাস্তার কিনার ধরে হাঁটা শুরু করেছে,কাঁপছে সে,পুরো শরীরে কম্পনের খেলা চলছে!

~~

ঘড়ির কাটা যখন ১২ টা পার করলো তখন রাত বাসায় পা ফেলেছে। কয়েক ঘন্টার তফাতে বাড়ির বৈচিত্র পুরো বিপরীত। কোনোদিকে চোখ না ঘুরিয়ে সোজা নিজের রুমের দিকে পা চালাচ্ছ রাত। বারান্দায় দাড়িয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার জন্য চোখটা বন্ধ করতেই পেছনে কারো উপস্থিত টের পেলো।

সন্ধ্যার বাবা সিকান্দার সাহেবকে দেখে মাথাটা নিচু করে ফেলেছে রাত।

“” কেন করেছো এটা জানতে চাইবোনা। আমি কখনোই তোমার কাছে কোনো কাজের জবাব চায়নি। আমি সবসময় ভেবে এসেছি,তুমি যথেষ্ট বুদ্ধীন্দ্রিয় একজন ছেলে। ছোটবেলা থেকেই তোমাকে আমি খুব পছন্দ করে এসেছি। এখনো করি। তবে আজ তোমার ফুপা হিসেবে একটা কথা বলতে এসেছি,যার উপর রাগ তার উপরেই ঝেড়ে ফেলা উচিত,যাতে সে দ্বিতীয়বার তোমার রাগের দর্শন পাওয়ার আগে একবার হলেও চিন্তিত হয়। তুমি আজ একজনের জন্য অনেকগুলো মানুষের মন ভেঙে দিয়েছো। এটা কি ঠিক হয়েছে? একজনের জন্য আরেকজন কেন ক্ষতিগ্রস্থ হবে?””
“” সরি ফুপা!””
“” আশা করি আমার উপদেশটা তোমার কাজে লাগবে!””

সিকান্দার সাহেব বেড়িয়ে যেতেই রাতের মা তিয়ামতী এসেছেন।

“” আম্মু,তুমি এখনো জেগে?””
“” আমি এখনি রিমার সাথে কথা বলবো,কালকেই তোদের বিয়ে!””
“” বিয়ে? কার বিয়ে?””
“” তোর আর সন্ধ্যার!””

তিয়ামতীর কথা শুনে ক্ষনিকের জন্য রাতের চিন্তাশক্তিরা আলাদা হয়ে গিয়েছে। মায়ের দিকে ফ্যালফ্যাল ভঙ্গিমায় তাকানো ছাড়া আর কোনো কথাইবের হচ্ছেনা ওর মুখ থেকে। হয়তো তিয়ামতীর এমন অপ্রত্যাশিত কথার ধাক্কাটা সে সামলিয়ে উঠতে পারেনি। রাতের নিরবতা দেখে তিয়ামতী নিজের কথা চালিয়ে বললো,,

“” আমি আর তোদের এমন রাগ-অভিমান দেখতে পারছিনা। সন্ধ্যার কথা বাদই দিলাম,তুই তো দিনে দিনে ভয়ংকর হয়ে উঠছিস। আর তাছাড়াও..””
“” তাছাড়া?””

তিয়ামতী পেরে উঠা কথাটা লুকিয়েই বললো,,

“” তাছাড়া আর কি? বিয়ে হয়ে গেলে বদ্ধরুমে রাগ-অভিমান আটকে নিবি। আর সন্ধ্যাটাও তো বড় হয়েছে,ওর ছেলেমানুষিও কমবে।””

রাত তিয়ামতীকে নিজের বিছানায় বসালো। নিজেও পাশে বসে মায়ের দুটো হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে বললো,,

“” ভয় পাচ্ছো,আম্মু?””

তিয়ামতী নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চট করে দাড়িয়ে গেলো। কিছুক্ষণ ইততস্ত করে বললো,,

“” ভয়? এখানে ভয় আসলো কি করে? আমি তো তোদের সংসার গুছিয়ে দিতে চাইছি। তোরা দুজনই ছেলেমানুষ,একজন আরেকজনের সাথে সারাক্ষন লড়াই করে যাচ্ছিস,যেটা তোরা নিজেরাও উপলব্ধি করতে পারছিসনা। বিয়ের নামে নাহয় সেই লড়াইটা প্রকাশ পাক।””

রাত তিয়ামতীর সামনে এসে দাড়ালো,ঠোঁটদুটো প্রসারিত করে ভরসা দিয়ে বললো,,

“” তুমি ভয় পেয়োনা আম্মু, যে কারণে বাবা তোমার থেকে দুরে সেই একি কারণে সন্ধ্যা আমার থেকে দুরে থাকতে পারবেনা। আমি থাকতে দিবোনা। কি হবে না হবে আমি জানিনা,তবে হ্যা এইটুকু জানি,আমার শেষ নিশ্বাসটা নেওয়ার জন্যও সন্ধ্যাকে আমার পাশে চায়,আমি তো শুধু ওর মুখে ভালোবাসিটা শুনতে চাচ্ছি। এই একটা শব্দ শোনার জন্যই আমি এখনো অপেক্ষা করে যাচ্ছি। ওকে বলতে হবে,নিজ থেকে,নিজ ইচ্ছায়। আমার ইচ্ছেতে নয়। আর যেদিন যে সময়ে এ চার অক্ষরের শব্দটা বলে উঠবে ঠিক সেদিনই ওকে তিন অক্ষরের শব্দ কবুল বলতে হবে। ভালোবাসি ওর ইচ্ছেতে বললেও কবুলটা আমার ইচ্ছেতেই হবে!””

রাতের বাক্যব্যয়ে তিয়ামতী বাকরুদ্ধ হয়ে রইলো। না সে বাবার ভালোবাসাটা বুঝতে পেরেছে আর না সে ছেলের ভালোবাসা। তবে এইটুকু ঠিক বুঝেছে,দুজনের ভেতরে চলে সবসময় অভুরন্ত ভালোবাসার তোলপাড়। তা যেকোনো সময় যেকোনো দিক ভাসিয়ে নিতে পারে বিধ্বস্তভাবে। একজন তো এতোই ভালোবাসে যে নিজের থেকে ভালোবাসার মানুষটিকেই তাড়িয়ে দিয়েছে,আর আরেকজন এতোই ভালোবাসে যে,২৪ ঘন্টা তার কাছে ঘুরঘুর করে অথচ ভালোবাসিটা বলেনা।

তিয়ামতীকে ওর রুমে শুয়িয়ে দিয়ে কম্বলটা পেরে দিলো রাত। লাইটটা নিভিয়ে বেড়িয়ে আসবে তখনি তিয়ামতীর প্রশ্ন,,

“” তুই কেন বলছিস না যে তুই ওকে ভালোবাসিস? এমন ও তো হতে পারে সন্ধ্যা চাইছে ভালোবাসি কথাটা তুই আগে বল!””

রাত দরজার কাছেই দাড়িয়ে বললো,,

“” কিভাবে বলবো? সুযোগটা দিচ্ছে কই? যখনি মনে হয় এবার হয়তো ও বড় হয়েছে ঠিক তখনি এমন এমন কান্ড করবে যে হয় আমি রেগে যাই আর নাহয় আমি ভেবে বসি ও এখনো বাচ্চায় রয়ে গেছে। আর আমি তো ওর উপর রাগ দেখাতে চায়না। ওর প্রতি সবটা অনুভূতি ভালোবাসার হবে,রাগের নয়। আবার ভয় ও হয়,যদি ভাবে ওর বাচ্চামীর সুযোগ নিচ্ছি??””
“” তোর কাছে ও সারাজীবনই বাচ্চা থাকবে কেননা তোর ছায়াতেই তো ও একটু একটু করে বড় হচ্ছে। তবে ওর ভেতরে তোর প্রতি ভালোবাসাটা জন্মেছে বহু আগে। যেটা তুই টের পাসনি।””
“” মানে?””
“” আর কিছু বলা যাবেনা। পাগলিটা এমনি আমাকে মুখপাতলা উপাধি দিয়ে দিয়েছে।””

রাত তিয়ামতীর কাছে এলো। ওর মাথার কাছে বসে অস্থির হয়ে বললো,,

“” কি বলবেনা আম্মু?””
“” কিছুনা!””
“” আম্মু!””

রাতের মলিন মুখটা দেখে তিয়ামতীর মায়া হলো। রাতের নাক টেনে বললো,,

“” তুই যখন এমন মুখ করিস তখন তোকে আমার কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে ইচ্ছে করে। তুই যে কেন বড় হলি!””
“” আম্মু,বলোনা!””

তিয়ামতী মুচকি হেঁসে বললো,,

“” তোর সন্ধ্যা তোকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে,কবে জানিস? যখন ওর বয়স ছয়!””
“” কেড়ে নিয়েছে? কি বলছো?””

তিয়ামতী রাতের পড়নের কালো-শার্টটাতে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,,

“” এটা কে ইস্ত্রি করে রেখেছিলো? সন্ধ্যা। তুই ঘুম থেকে উঠলে সবসময় ব্রাশে পেস্ট লাগানো পাস,কে লাগিয়ে রাখে? আমি? উহু! তোর সন্ধ্যা রাখে। তোর রুমের প্রত্যেকটা জিনিস সন্ধ্যার হাতে গুছিয়ে রাখা,সকালে তোর স্পেশাল নাস্তাটাও ও বানায়। এমনকি আমাদের সব ময়লাকাপড় রিনা ধুলেও তোরটা কিন্তু ধুতে দেয়না,তাহলে কে ধোয়?””

রাত ঘোরের মধ্যেই উত্তর দিলো,,

“” সন্ধ্যা!””
“” হুম। এই যে ওর সাথে রেগে এটাওটা ভেঙে হাত-পা কাটিস,এগুলোতে ঔষুধ লাগায় কে? বৃষ্টিতে ভিজে জোর বাধালে তোর কপালে জল-পট্টি দেয় কে? তোর কি মনে হয় এগুলো আমি করি? সুযোগ পেলে তো! আমি শুরু করার আগে সন্ধ্যার শেষ করে ফেলে। আর এগুলো ও এখন থেকে নয় সেই ছোট্টবেলা থেকে করে আসছে, তোর ব্যাপারে যে এতোটা সিরিয়াস সে মেয়ে কিনা বাচ্চা? তুই যখন ওকে নিয়ে নালিশ করতে আসিস তখন তো আমি ভেবেই পায়না কোনটা বিশ্বাস করবো,যা আমি চোখে দেখছি নাকি যা তুই বলছিস!””

রাত বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছেনা। বিস্ময়ের মাঝে অবিশ্বাসটাও ক্ষীণ হয়ে উকি দিচ্ছে। কিন্তু মা হয়ে ছেলের কাছে কেন মিথ্যে বানিয়ে বলবে?? আর এগুলো যদি সত্যিই হয় তাহলে তার চোখে পড়েনি কেন? এতোটা বছর ধরে একি কাজ চলে আসছে লাগাতার ধরে এটা সে কি করে মিস করতে পারে?

রাতের মনে জেগে উঠা প্রশ্নের উত্তর দিলো তিয়ামতী,,

“” তুই যেমন তোর রাগটাকে লুকিয়ে রেখেছিস,ঠিক তেমনি সন্ধ্যাও তার ভালোবাসাটাকে লুকিয়ে রেখেছে। কেন রেখেছে তা আমি জানিনা।””

রাত চট করে উঠে দাড়ালো। মায়ের রুম থেকে বের হতে হতে বললো,,

“” আম্মু,আমার আর ভালোবাসি শোনা লাগবেনা। আমার এখন কবুল চায়। তুমি বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দাও!””

রাতের চলে যাওয়ার পানে তিয়ামতী হা করে তাকিয়ে রইলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here