#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_৮
#সুলতানা_সিমা
তন্দ্রার সাথে ফোনে কথা বলছিল দিহান তখনই রুমে শাওন আর নীলের আগমন ঘটে। ওদের দেখে দিহান তন্দ্রাকে বিদায় জানিয়ে ফোন কেটে দেয়। নীল খাটের এক পাশে শাওন অন্য পাশে এসে বসল। নীল মুখটা গোমড়া করে বসে আছে দেখে দিহান তার পিঠে চাপড় দিয়ে বলল “কি ব্যাপার আমাদের নীল দরিয়ার কি হল?” নীল রাগি লুকে তাকাল। দিহান নীলের পিঠ থেকে হাত সরিয়ে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে তালা দিল। শাওনকে ইশারায় বলল কি হইছে। শাওন কিছু বলল না। দিহান এবার নীলের হাতের উপর নিজের হাত রেখে বলল” দোস্ত কি হইছে? কেউ কিছু বলছে?” নীল এখনও চুপ। দিহান আরও দু’একবার জিজ্ঞেস করল। নীল দিহানকে বলল”
_আচ্ছা দিহান তুই একটা কথা বল তো তোর বোন এত অহংকারী হল কি করে? তুই আন্টি বা আংকেল তো এমন না। তাহলে ও এমন হলো কেন?
_কেন কি করছে কিছু বলছে তোকে?
_আমাকে বলেনি অন্য কাউকে বলছে। আচ্ছা দিহান তুই বল তো একটা মানুষের যদি সমর্থ থাকেনা ভাল কিছু গিফট করার বা ভাল কিছু পরার তাহলে কি সেটা তার দুষ? উপরওয়ালা তাকে গরিব দিছে সে কি করবে?
_আমি ত তোর কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতেছি না বুঝিয়ে বল।
_আচ্ছা বলতো লুপার ফ্রেন্ড যে এসেছিল ও দেখতে কেমন?
_অরিনের কথা বলছিস?
_নাম জানিনা। আজ যেটা মেরুন ড্রেস পরেছিল ওইটা। বল ও দেখতে কেমন?
_ভালই তবে চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর।
_ও কি দেখতে ক্ষেত?” দিহান এবার নীলের দিকে কপাল কুঁচকে তাকাল। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল”
_তু তুই হঠাৎ এসব কে কেন জিজ্ঞেস করছিস?
_আগে বল মেয়েটা কি দেখতে ক্ষেত?
_আমি কি জানি। আমি ওসব খেয়াল করিনা।
_আচ্ছা এটা বল ও তর বউ হলে তুই কি ওকে নিয়ে সমাজে চলতে পারবি না? মানলাম মেয়েটা দেখতে তন্দ্রার মতো সুন্দরী না। তাই বলে সে খারাপ? সে তর বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা?” নীলের কথা শুনে দিহানের গলা শুকিয়ে গেছে। তাহলে কি অরিন সবাইকে বলে দিছে তাদের বিয়ের কথা? দিহান শুকনো একটা ঢোক গিলে বলল ”
_বিশ্বাস কর নীল আমার কোনো দুষ নাই। সব দুষ ওর।
_দুষ যারই হোক কাউকে নিয়ে এভাবে কথা বলা ঠিক না। মানুষ যেমনই হয় সে মানুষ। তাই তাকে ছোট করে দেখার কিছুই নেই।
_ছোট করার জন্য এসব বলা হয়নি নীল এগুলা কষ্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
_তাই বলে এসব কথা বলবে?
_যদি তোর সাথে কেউ এমন করত তুই কি তার উপর ক্ষেপে থাকতি না।
_কেমন যদি করত?
_ও যা করছে?
_হ্যা সেটাই ত আমি বলছি ও কেন এটা করল। ও কি ছোট ওর মাথায় কি বুদ্ধি নাই?
_জানিস দুইবার বলেছে আমার পেন্টের চেইন খোলা। এবার বুঝ মেয়েটা কেমন নোংরা কথা বলে।
_দিশা তর সাথে এমন ফাজলামো করে?
_দিশা কি ওর মত ফাজিল?
_ওর মত মানে? কার মত?
_অ…এক মিনিট তুই কার কথা বলছিস?
_এটা তো আমার প্রশ্ন। তুই কার কথা বলছিস?
নীল দিহান দু’জন দুজনার দিকে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে আছে। শাওন এসবের আগামাথা কিছুই বুঝতেছে না। সে দিহানকে বলল “দিহান কে তোকে দুইবার পেন্টের চেইন খোলা বলছে?” দিহান শুকনো একটা ঢোক গিলে বললো ”
_ক ক কই কে কে কে কেউ বলেনি।” শাওন নীল এবার দিহানের দিকে সন্দেহের চোখে তাকাল। শাওন এসে দিহানের পাশে বসল। এক পাশে নীল এক পাশে শাওন। দিহান লাফ দিয়ে উঠে বলল “দি দি দিশাকে নিয়ে আসছি আ আজ না আমাদের ট্রুথ এ এ এ এন্ড ডেয়ার খেলার কথা।” বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল দিহান। এক কথায় পালালো।
__________________
লুপাদের বাসা থেকে এসেছে দু’দিন হলো। এখন অরিনের মন থেকে মুছতে পারছে না দিহানের বলা কথা গুলা। কিভাবে লোকটা চোখে চোখ রেখে কথাগুলা বলে দিল। মনে দয়া মায়া নাই? আচ্ছা উনার জিএফ দেখতে কেমন? নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী। উনি মানুষটাই তো এত সুন্দর যে উনার সামনে সুন্দরী কারই প্রয়োজন। করুক উনি যে কাউকে বিয়ে। তাতে কি সে কি উনাকে ভালোবাসে? যে কাজটার জন্য বিয়ে করছে সেটা শেষ হয়ে গেলে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। এসব ভেবে ভেবে আনমনে রাস্তা দিয়ে হাটছিল অরিন। হটাৎ একটা মেয়েকে দেখে থেমে যায় সে। বয়স ৮-৯ হবে। হাতে একগুচ্ছ গোলাপ। পরনে হলুদ একটা ফ্রক। ফ্রকটা ময়লা হয়ে আছে। এক ধ্যানে মেয়েটা শপের দিকে তাকিয়ে আছে। অরিন একটু এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার সামনে দাঁড়াল। লাল একটা ফ্রক টাঙানো শপের ভিতর। ওই ফ্রকটার দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। অরিন মেয়েটাকে বলল “এই পিচ্চি কি দেখিস এখানে?” অরিনের কথায় চমকে ওঠে মেয়েটা। তারপর হাসি মুখে বলে “আমাগো তো দেইকাই মন ভরতে অয়। আমাগো ত আপনাগো মত টাকা নাই যে কিন্না পইড়া মন ভরমু।” মেয়েটার কথা শুনে অরিনের বুকটা ছেৎ করে উঠল। অরিনের ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে কিনে দিতে কিন্তু তার হাতে মাত্র ২৮০ টাকা আছে। আর এই ড্রেসটা কম হলেও চার হাজার হবে। মেয়েটা চলে যেতে লাগল। এরই মাঝে ওই দোকানে দিহান ঢুকল। অরিন সেটা দেখে পিছন থেকে মেয়েটাকে ডাক দিল। “ওই ফুল কলি পিচ্চি।” মেয়েটা পিছন ঘুরে তাকাল। অরিন বলল “আমার সাথে আয় আমি তোকে ড্রেস কিনে দিব।” মেয়েটা বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বললো “সত্যিইইইইই।” অরিন হাতে ধরে তাকে নিয়ে শপে ঢুকল। দিহান শাড়ি দেখছে মনে হয় উনার জিএফকে গিফট দিবেন। অরিন যে দিহানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে তা দিহান খেয়াল করেনি। অরিন লাল ড্রেসটা প্যাক করাল। দামও জিজ্ঞেস করল না। ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলল”
_কত হইছে?
_পাচঁ হাজার টাকা।
_পা পাচঁ হাজার(চোখ বড় বড় করে)। ওকে ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমার স্বামীর অনেক টাকা আছে সে দিয়ে দিবে।
_উনাকে ডাক দিন। “” অরিন দিহানের হাত জড়িয়ে বলল “ডাক দিব কেন এইত আমার স্বামী”। হঠাৎ কেউ দিহানের হাত জড়িয়ে এমন কথা বলায় তাকিয়ে অরিনকে দেখে টাশকি খেল। শুকনো একটা ঢোক গিলে দোকানদারের দিকে তাকাল দোকানদার ইয়া মোটা হা করে তাকিয়ে আছে। বুঝাই যাচ্ছে ৪৪০ এর উপরে শকড খেয়েছে দোকানদার। অরিন বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলল ” আমার স্বামী এক্ষনি আপনার সব টাকা পরিশোধ করে দিবে। এই উনাকে পাচঁ হাজার টাকা দাওতো।” দোকানদার দিহানকে বলল” দিহান তুই বিয়ে করে ফেলছিস?” দিহান রাগি লুকে তাকিয়ে অরিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে ওখান থেকে সরে একটু আড়ালে আসল। তারপর টাস করে অরিনের গালে একটা থাপ্পড় দিল, দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল”
_ওই মেয়ে পেয়েছিস কি তুই? যখন যা খুশি তাই করবি? আমি আজই তর নামে মামলা করব। এবং আজও তোকে আমি পুলিশে ধরিয়ে,,,,,বাকিটা বলতে পারেনি দিহান তার আগেই অরিন সেদিনের তুলা পিক টা দিহানের সামনে তুলে ধরল। দিহান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। সত্যি সত্যি তার চেইন খোলা ছিল। দিহান ফোন ধরতে যাবে তার আগেই অরিন ফোনটা সরিয়ে নিল। তারপর হাতে একটু থু থু নিয়ে দিহানের থেকে তিন গুন জোরে সে একটা চর মারল। মেরে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলল ” উফফফ জ্বলে কেন? আপনার গাল জ্বলতেছে তো? এবার আসেন সুন্দর করে টাকা টা দিয়ে যান। নয়তো ছবিটা নেটে ছেড়ে দিতে এক মিনিটও লেট হবেনা।” বলে অরিন হাটা ধরল। দিহান তৎক্ষনাৎ অরিনের এক পা জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল “আপা। আপা গো আপনে আমার আপা লাগেন। পিকটা ডিলিট করে দেন প্লিজ। মামলা করা তো দূরের কথা আর জিবনে আপনারে মারব না আপা। আর জীবনে আপনারে তুই বলব না। পিকচার টা ডিলিট করে দেন প্লিজ।” অরিন দিহানের মাথায় হাত দিয়ে বলল। “বেঁচে থাকেন স্বোয়ামি আমার বেঁচে থাকেন। আমার সাথে উল্টা পাল্টা না করলে আমি নেটে ছাড়ব না। এবার উঠেন কেউ দেখে ফেলবে।” দিহান উঠল। অরিন আবার হাটা ধরল। দিহান খপ করে অরিনের হাত ধরে মিনতির স্বরে বলল”
_আপা দোকানদার আমার আপন মামা লাগে। উনার সামনে এমন কিছু কইরেন না প্লিজ। আমি আপনার সব কথা শুনব। যা বলবেন তাই করব।
_আপা ডাকেন কেন? আমি আপনার বইন লাগি?”” দিহান দ্রুত কয়েকবার না সূচক মাথা নাড়াল। অরিন বলল
_আমি আপনার কি লাগি?
_যম।
_কিইইইই?
_না না না আমার বোনের বান্ধবী।
_আমি জিজ্ঞেস করছি আপনার কি লাগি?
দিহান মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো হয়ে কিঞ্চিৎ স্বরে বলল “বউ”।
_হুমমমমম। এইতো বুদ্ধিমান ছেলে(দিহানের বাহুতে চাপড় দিয়ে)। মনে থাকবে তো আমি আপনার কি লাগি?
_জি।
_আজ থেকে আমি যা বলব তাই শুনবেন। আমার সাথে কোনো ধরনের বেয়াদবি চলবে না। আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলা যাবেনা। নয়তো ছবিটা এমন ভাইরাল হবে। আর হ্যা আমাকে দেখেই সালাম দিতে হবে।
_জি আসসালামু আলাইকুম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_৯
#সুলতানা_সিমা
দোকান থেকে বেরিয়ে দিহান হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তার মামাকে অরিন বলেছে সে মজা করছিল। ভাগ্যিস এটা তার ছোট মামা। যদি বড় টা হত তাহলে অক্ষরে অক্ষরে চালাকি বুঝাত। দোকান থেকে বেরিয়ে অরিন কই যেন গেছে। তাকে বলে গেছে এই ব্রিজের সামনে দাঁড়াতে তাই সে তীব্র রোদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন পরে অরিন আসল। আজ টিউশনির টাকা দেওয়ার কথা। সেটাই নিয়ে আসল। অরিন একটা গাছের নিচে ছায়ায় দাঁড়িয়ে দিহানকে ডাক দিল। দিহান ভিতুর মত হেটে অরিনের সামনে এসে দাঁড়ালো।
অরিন বলল “পাচঁ হাজার টাকার জন্য খারাপ লাগছে রাইট? এবার বুঝেছেন নিশ্চয়ই? কাউকে কিছু দিতে হলে নিজের সামর্থ অনুযায়ী দিতে হয়। আমার টাকা কম ছিল তাই কম দামের জিনিস গিফট করেছিলাম। আপনার তো অনেক টাকা। আপনি নিশ্চয়ই কম দামের জিনিস কাউকে গিফট করবেন না। তাই দামি টা করালাম। এটা আপনি প্রতিশোধও বলতে পারেন। আবার এটা আপনি দান হিসাবেও ধরে নিতে পারেন। কাউকে কিছু বলতে তো আপনার মুখে বাধেনা। আপনি নিশ্চয়ই এটাও বলে দিবেন এই মেয়েটা এই ড্রেস পরার যোগ্যতা রাখে না। তাহলে বলে দেই। সে গরিব হতে পারে তার ইচ্ছে ছোট নয়। এই ড্রেসটা পড়তে তার ইচ্ছে হয়েছে। এখন যদি এটার বদলে হাজার টা ড্রেসও পায় এটার জন্য তার একটা আক্ষেপ থেকে যাবে। হ্যা এই টাকা দিয়ে তাকে অনেক কিছু দেওয়া যেত। কিন্তু সেটা কতদিনের জন্য? বড় জোর পাচঁ ছয় মাস সে সেটা ইউজ করত। কিন্তু এই যে এই ড্রেস টা এটার কথা তার আজীবন মনে থাকবে। কারন এটা তার স্বপ্নের ড্রেস ছিল। শখের জিনিস যতটা আনন্দ দেয় ততটা কিন্তু অন্যটা দেয়না আমাদের। যদি কোনোদিন পারি তো আপনার টাকা টা দিয়ে দিব। আপাতত এটা রাখেন।
অরিন এক হাজার টাকার দুইটা নোট বারিয়ে দিল দিহানের সামনে। দিহান বলল ”
_এটা কি?
_আপনার থেকে দু’হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম সেটা।
_থাক লাগবে না। ওটা আপনি নিয়ে নিন।
_জি না আমি অন্যের টাকায় চলিনা। যদি চলতাম তাহলে মানুষের বাড়িতে ফকিন্নি বেশে যেতাম না।
কথাটা শুনে দিহানের খারাপ লাগল। মেয়েটাকে সেদিন এতোগুলা কথা বলা ঠিক হয়নি। মেয়েটার গলা অন্য রকম শুনাচ্ছে। মনে হচ্ছে কথাটা বলতে গিয়ে তার কান্না পাচ্ছে। দিহান বলল ”
_আসলে হঠাৎ করে আপনি আমার সাথে যা করলেন সেটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। তাই মনে জমা রাগ আপনার উপর ঝাড়তে গিয়ে আপনাকে এত গুলা কথা বলে দিছি। আমি এগুলা আপনাকে মন থেকে বলিনি। কষ্ট দিতে বলছি।
_জি জানি। এবার টাকা টা নিন।
_থাক ওটা লাগবে না।
_আপনি কি আমার সাথে বেয়াদবি করছেন?
দিহান তৎক্ষনাৎ টাকা টা হাতে নিয়ে বলল ”
_না না না নিচ্ছি তো। আমি কেন আমার দাদাও আপনার সাথে বেয়াদবি করবে না।
_গুড বয়। আমি যদি আপনার উপর অধিকার কাটাতাম। বউয়ের দাবি করতাম। তাহলে আপনি যা করতেন সয্য করে নিতাম। এভাবে কিছু করলে তো আমি সয্য করব না। অবশ্যই তার শাস্তি দিব। কখনো বেয়াদবি করার চেষ্টা করবেন না। বেয়াদবি করবেন তো আজ যা হল তার থেকে দ্বীগুন কিছু হবে।আমি এখন যাচ্ছি। গুড বাই।
অরিন যাওয়া ধরল। দু’কদম এগুতেই কানে এল”
_অসভ্য মেয়ে একটা যা না। তরে ধরে রাখছে কিডা?
অরিন রক্তিম চোখে পিছন ফিরে তাকাল। দিহান কথাটা বিরবির করে বলেছে। অরিন শুনে ফেলবে বুঝেনি। শুকনো একটা ঢোক গিলে দিল এক দৌড়। দৌড়ে পালিয়ে গেল। আর জীবনে এই মেয়ের সামনে আসবে না সে। নয়ত তার অবস্থা শেষ করে দিবে।
অনেক জায়গা দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে হাটুতে ভড় দিয়ে হাপাতে লাগল। তার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। একটা মেয়ে তাকে বিয়ে করল। অথচ কখনো বউয়ের অধিকার চাইল না? কি চায় এই মেয়েটা? নিশ্চয়ই এই বিয়ের পেছনে কোনো বড়সড় কারণ আছে। সেদিনের কথা গুলার প্রতিশোধ আজ কিভাবে নিল। কি স্বাংঘাতিক মেয়ে বাবা প্রতিশোধ নেওয়ার কি স্টাইল। তন্দ্রার জন্য একটা শাড়ি কিনতে আসছিল আর পারল না কিনতে। তার মামার দোকান হলেও সে ফ্রিতে কিছু নেয়না নয়ত নিতে পারত। হাতেও আর টাকা নাই। তন্দ্রা বলেছে শাড়ি না দিলে সে রাগ করবে। আজ নিশ্চয়ই তন্দ্রার সাথে ঝগড়া হবে। কিন্তু তার খারাপ লাগছে না তার শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে সে অনেক ভাল একটা কাজ করেছে। সত্যিই তো মানুষ গরিব হলে তো আর ইচ্ছে ছোট হয় না। তারও ইচ্ছে থাকে তারও স্বপ্ন থাকে। মেয়েটা কত ভাল। হ্যা একটু ডেঞ্জারাস টাইপ তবে খুব বুঝদার। অনেক বুঝে। তন্দ্রা হলে হয়ত বলত এই পথের মেয়েটাকে এত দামে ড্রেস দিয়ে শুধু শুধু কেন টাকা টা নষ্ট করবে? অথচ এই মেয়েটা? তন্দ্রার আর এই মেয়েটার মাঝে কত পার্থক্য। ভাবতেই বুক ছিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল দিহানের।
__________________________________
পরের দিন দিহান নীল আর শাওন মিলে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। রেস্টুরেন্টে ঢুকা মাত্রই দিহানের চোখে পরল অরিন আর লুপা বসে আছে। অরিনকে দেখে দিহান উল্টা দিকে দৌড় দিল। আকস্মিক ঘটনায় নীল আর শাওন হতভম্ব হয়ে গেল। শাওন আর নীল দিহানের পিছনে দৌড় দিল। দু’জন গিয়ে দিহানের দু’হাত ধরে দিহানকে আটকাল। দিহান নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করতে করতে বলল। “ভাই দোহাই লাগে প্লিজ আমাকে ছাড়।” নীল বলল ”
_আরে তুই এভাবে হঠাৎ দৌড় মারলি কেন? কই যাচ্ছিস?
_ছাড় ভাই তোদের আল্লাহর দোহাই লাগে।
_দিহান পাবলিক প্লেস এটা। পাগলামি করছিস কেন?[শাওন]
_আমায় ছেড়ে দে ভাই। আমি টয়লেটে যাব।[কাঁদো কাঁদো হয়ে]
_টয়লেটে যাবি তো ওইদিকে কই যাচ্ছিস রেস্টুরেন্টের ভিতরেই তো ওয়াসরুম আছে।[নীল]
_দেখ দিহান সবাই তাকিয়ে আছে চুপচাপ ভিতরে চল।[শাওন]
বাধ্য হয়ে দিহান ভিতরে গেল। ভিতরে গিয়ে লুপা আর অরিনকে বসা দেখে নীলের মনটা খুশিতে নেচে উঠল।দিহান কে বলল “ওই দেখ লুপা এখানে। চল ওদের পাশে বসি।” নীলের কথা লুপার কান পর্যন্ত পৌছাল। পাশ ফিরে তাকাতেই শাওনকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। নীল শাওন দিহান এসে তাদের টেবিলে বসল। দিহান কাচুমাচু হয়ে বসল। তার হাত পা কাঁপছে।ভিতু চোখে বার বার অরিনের দিকে তাকাচ্ছে। অরিন এটা খুব ইঞ্জয় করছে। দিহানের দৌড়ে যাওয়াটা তার চোখ এড়ায়নি। অনেক কষ্ট করে হাসি চেপে রেখেছে সে। লুপা শাওন কে উদ্দেশ্য করে বলল”
_ভালো আছেন শাওন ভাইয়া?
_হ্যা খুব ভাল তুমি? দিশা ইশি সবাই ভাল আছে তো।
_জি সবাই ভাল।
_আমাকে জিজ্ঞেস কর আমি কেমন আছি। [নীল]
_কেমন আছেন। [দাঁতে দাঁত চেপে]
_হেএএএএএ খুউউউউউব ভাল। একদম ফাটাফাটি। তুমি ভাল তো?
_জি। [দাঁতে দাঁত চেপে ]
_হাই তুমি অরিন রাইট। [শাওন]
_জি ভাইয়া কেমন আছেন?
_অনেক ভালো। তুমি?
_জি আমিও ভাল।
_হ্যা হ্যা আমিও ভাল। [নীল]
_আপনাকে কি ও জিজ্ঞেস করছে আপনি কেমন আছেন। [দাঁতে দাঁত চেপে লুপা]
_এমনিতেই তো জিগাইত তাই আগে বলে দিলাম।
লুপা নীলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট নাড়িয়ে অনেক গুলা গালি দিল। দিহান সামনে না হলে তাকে আচ্ছা করে কথা শুনাতো। দিহান বার বার আড়চোখে অরিনের দিকে তাকাচ্ছে। একবার অরিনের চোখে চোখ পরল। চোখ পড়তেই সোজা হয়ে বলে উঠল ”
_আসসালামু আলাইকুম।” হঠাৎ দিহানের এভাবে সালাম দেওয়া দেখে সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকাল। দিহান ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সত্যি সে কোনো বাঘের সামনে বসে আছে।
_এই দিহান বসে আছিস কেন যা [নীল]
_কই যাবে? [লুপা]
_টয়লেটে যাবে ওর হাগু পাইছে। [নীল]
দিহান বড় বড় চোখ করে নীলের দিকে তাকাল। নীল তার বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছে। নীলের কথায় সবাই কিঞ্চিৎ আওয়াজে হেসে উঠল। লুপা বলল”
_ছিঃ আপনি দেখি কোথায় কি বলতে হয় সেটাও জানেন না। এটা রেস্টুরেন্ট এখানে এসব বলছেন? ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
_আমার কি দুষ বল? শাওনকে জিজ্ঞেস কর। তোমার ভাইয়ের এতো বেশি চাপ দিছিল যে ও রেস্টুরেন্ট থেকে বাড়ির দিকে দৌড় দিছিল টয়লেট যাবে বলে।
দিহান নীলের দিকে রক্তিম চোখে তাকাল। চোখ দিয়ে নীলকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। অরিন অনেক কষ্ট করে নিজের হাসিটা চেপে রেখে বলল”
_আমার মনে হয় উনার তারাতাড়ি যাওয়া উচিত। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি খুব কষ্টে আছেন।
শাওন আর নীল আর হাসি আটকাতে পারল না। দিহান যেন এবার ওদের খুন করেই ফেলবে। অগ্নি দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে ভয়ে তার অবস্থা শেষ। সেদিন অরিন তাকে হাতে পায়নি আজ যদি ওয়াসরুমে যায় অরিন যে গিয়ে খপ করে তার কলার চেপে ধরবে না এটার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
চলবে….।
বিঃদ্রঃ যারা বলেন অরিন খুব বারাবাড়ি করছে। অরিনের আত্মসম্মান নেই। অরিন গায়ে পড়া স্বভাবের। তারা প্লিজ একটু ধর্য্য ধরুন। গল্পটায় কিন্তু রহস্য আছে সেটা খুলাসা হলে আপনাদের ভুল ধারনা ভেঙে যাবে।
চলবে…..।
নেক্সট না বললেও আমি নেক্সট দিব। তাই গঠনমূলক মন্তব্য করে উৎসাহ দিন।