ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব ১৫

#ভালোবাসি হয়নি বলা
#সাদিয়া নওরিন

পর্ব— ১৫
(( এইটা সসম্পূর্ণ কাল্পনিক কেউ রিয়েললাইফের সাথে মিলাবেন না))

তামান্না দৌড়ে দৌড়ে ভার্সিটিতে ডুকছে.. আজকে আবারও লেইট সে. টিচারদের ভয় করছেনা সে.. কারন টিচাররা তো নিজেরাই লেইট হয় আর স্টুডেন্টেসদের প্রতিও এতোটা স্ট্রিক নন তারা.. কিন্তু সে ভয় পায় রোদেলাকে.. মেয়েটা সব টাইম টু টাইম করে.. এতো এক্টিভ মেয়ে সে তার পুরো লাইফে দেখে নাই.. কিন্তু তামান্নার আজ কেন যেন মনে হচ্ছে আগের রোদেলাই বেটার ছিল.. যদি জাদু করতে পারতো তাহলে একনিমিষে এই রোদেলাকে পাল্টে আগের রোদেলা বানিয়ে দিত সে.. এইসব ভাবতে ভাবতে সে কলেজের দিকে এগোল..যেই সে সিঁড়ি দিয়ে ওঠতে যাবে সে দেখলো সামনে কোমড়ে হাত গুঁজে রোদেলা দাড়িয়ে.. বেগুনিকালারের আনারকলি আর লম্বা বেনীকরা চুলে তাকে অসম্তব কিউট লাগছে।। যদি হাসিটাও থাকতো হয়তো আরো কিউট লাগতো.. এইসব ভাবতে ভাবতে সে রোদেলার দিকে তাকালো….

— এই যে মিস হায়দার.. সবসময় এতো লেট কেন আপনার??লেট লতিফ…
তামান্না — ওফ রোদেলা কতবার বলবো তোকে ওইটার আব্বুর নাম.. আমার না.. আমি অনলি তামান্না.. আর দেখ স্যার আসতে আরো ত্রিরিশ মিনিটস আছে..
রোদেলা মৃদু হেসে দিল.. এই মেয়েটাকে জ্বালাতে তার ভালো লাগে..আর এই নামে ডাকলেই মেয়েটা জ্বলে…সে ভাবলো এই মেয়েটা তার জিবনে না আসলে হয়তো সে স্বাভাবিকও হতে পারতো না..
রোদেলা আমার মুৃখে রাগীভাবটা আবার ফুটিয়ে তোলে বলল– তো.. তাতে কি.. তাও তোকে না বললাম চল্লিশ মিনিট আগে আসতে আমরা ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখবো..
তামান্না মুখ বেঁকিয়ে বলল– হু.. কি আর ঘুরবি.. লাভ কাপলগুলোকে বিব্রতমূলক প্রশ্ন করবি গিয়ে.. যেগুলো শুনলে তারা ইতস্তত হয়ে যাবে…
রোদেলা— তো আর কি করব.. এইসব ছেলেরা এইজন্যই ইতস্তত হয় কারন তারা রিয়েললাভ করে না.. যদি করতো ঘাবড়াতো না.. বেশির ভাগ ঘাবড়ে যায়.. আসলে ভালোবাসা বলতে কিছুই নাই সব ভালোলাগা…
তামান্না — তোরে বলছে.. আমার আম্মু আব্বুকে দেখ কতোটা ভালোবাসা।।।ওনাদের ও তো লাভ ম্যারেজ…
রোদেলা— ওগুলো আগের তো তাই অমন.. আজকালকার যুগে তো শুধু নিজেদের চাহিদাটাই আসল.. ভালোবাসা বলতে কিছুই নেয়…
রোদেলার গলা ধরে এলো.. ভিতরের চাপা কষ্টটা কেন যেন নাড়া দিয়ে ওঠলো হঠাৎ তাকে!!
তামান্না মৃদু স্বরে বলল– এখনো হাসনাত ভাইয়াকে মিস করিস?
রোদেলা চমকে তাকালো.. পরমূহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল– সেইটা আবার কে…
তামান্না হেসে রোদেলার ডাইরীটা তার হাতে তুলে দিল…তারপর বলল– এই গল্পের হিরো?
রোদেলা আমাতাআমাতা করে বলল– একসময় ডাইরী লিখতাম অনেক.. রোজ কি কি হচ্ছে লিখে রাখতাম.. বড় হয়ে পুরোনো স্মৃতি মনে করবো তাই.. কিন্তু এই ডাইরী আর এর স্মৃতি মনে করার ইচ্ছে নেয় আমার.. তাই চিলেকোঠায় নিক্ষেপ করেছিলাম.এইটা… তারপর ডাইরীটা গায়ে হাত বুলিয়ে হঠাৎ ফুফিয়ে কান্না করে ওঠে বলল– কাউকে মিস করি না আমি.. আর ঐ মানুষটা.. যার নাম তুই বললি.. ঘৃনা করি তাকে.. সবচেয়ে বেশি ঘৃনা.. এই বলে কাঁদতে কাদতে গাছের গুড়ির ওপর বসে পড়লো রোদেলা ডাইরীটাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল.তামান্না ও আলতো করে তার পাশে বসে তার কাধে হাত রাখলো..
সে আজ মানা করবে না রোদেলাকে.. কারন কিছু কষ্ট অশ্রু হয়ে ঝড়ে পড়লেই ভালো নাহয় মানুষের হৃদয়ে জং ধরে যায়.. আর অস্তিত্বে মরিচা পড়ে… যারা কান্না করে তারা কখনোই দূর্বল নয়.. মূলত তারা সবচেয়ে বেশী সাহসী কারন তারা নিজেদের আবেগটাকে ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারে….
কিন্তু রোদেলাকে হালকা করতে তামান্না আবার বলে ওঠলো— আচ্ছা তোর সাথে আর কোন কাজিনের দেখা হয় নি…
রোদেলা মাথা দুলিয়ে দাড়িয়ে গেল.. তারপর হাটতে শুরু করলো.. তামান্না তাড়াতাড়ি তার পিছনে দাড়িয়ে বলল– সরি তোকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম এমনিতেই জিঙ্গেস করলাম ইয়ার…

রোদেলা হালকা হেসে– দূর বোকা.. রাগ করি নি আমি..বুঝতে পারছি তোর আরো জানতে ইচ্ছে হচ্ছে…
এই বলে মৃদু হেসে গোলচত্বরে বসে গেল রোদেলা.. দৃষ্টি তার সামনে মরা গাছটির দিকে.. শুধু শুকনা ডালগুলো নিয়ে দাড়িয়ে আছে গাছটা হয়তো রোদেলাও এখন সেই গাছের মতো!!.. সেদিকে তাকিয়ে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলল– বাসায় এসে দেখলাম আব্বু সবই জানে.. আমি আব্বুকে ধরে সেদিন অজোর নয়নে কান্না করে দি.. আব্বু জাস্ট একটা কথা বলেছিল.. নিজের ভূলথেকে শিক্ষা নাও.. আর এভাবে নিজেকে গড়ে তোলো যাতে একদিন তোমার উন্নতি দেখে তাদের আফসুস হয়…
এই একটা কথা আমাকে স্ট্রং করার জন্য যথেষ্ট ছিল… আমি শুধু পড়ালেখায় মনোনিবেশ করলাম.. কিন্তু পড়তে বসলে সবকিছু চোখের সামনে দেখতাম আমি…এতোটা বিচলিত হতাম কান্নায় ভেঙ্গে পড়তাম বারবার.. নাম্বার চেন্জ করে ফেললাম নিজের.. কোন রিলোটিভের সাথে যোগায়োগ করতাম না আমি. আমরা আর নানুর বাড়ি যায় নি.. আমাদের বাসায় ও ওরা আসতো না.. সবকিছু থেকে আলাদা হয়ে গেলাম আমরা….তবে আম্মু কথা বলে.. হাজার হোক ওনার আত্নীয়.. আব্বু মানা করেন না তাকে..
চোখ থেকে অজোরে পানি পড়ছে রোদেলার.. হয়তো সে সেই সময়টা মনে করছে.. তার চোখের সামনে ভাসছে সবস্মৃতি..
আসলে কেউ কারো অবস্হাটা শুনে বোঝতে পারে না.. যদিনা সেইজায়গায় নিজেকে দাড়া করাই.. তামান্নাও কান্না করছে.. কারন সে নিজেকে সেই জায়গায় বসিয়ে দেখেছে.. ছোট একটা মেয়ের মনের ওপর কতো বড় ঝড় ওঠেছিল.. সে যে সুইসাইড না করে এতোটা স্ট্রং হয়ে এখনো আছে সেইটাও তার মনোবল.. এইসব ভাবতে ভাবতে
তামান্না রোদেলার কাধে হাত দিয়ে বলল– বাকিদের কোন খবর জানিস না.. সবাই কি অবস্হায় আছে…
রোদেলা দির্ঘনিশ্বাস নিয়ে বলল– সুনান ভাইয়া একবছর আগে দেশে ফিরে বিয়ে করেছে.. আম্মুরা গিয়েছে তবে আমি যায় নি… বাকিরা সবাই হয়তো স্টাডিতে আছে.. আর কোন খবর জানি না আমি..
তামান্না — আর ইফ্ফাত???
রোদেলা হালকা হেসে বলল– সামনের মাসে বিয়ে.. ইফতী ভাইয়ের সাথে.. ভাইয়া এখন নাকি কলেজের প্রফেসর.. বিসিএস এ টিকে গিয়েছিলেন ওনি.. তবে মামা নাকি বিয়ে দিতে চান নি.. আরো ভালো কাউকে চাচ্ছিলেন.. ও তো ডাক্তারি পড়ছে.. মাও শিশুতে… তাই ওর জন্য ডাক্তার বর চাইছিল মামা..
তামান্না হালকা হেসে+– ওদের মিলটা তাহলে হয়ে গেল…কি বলিস?? বিয়েতে যাবি?
রোদেলা হালকা মাথা দুলিয়ে দাড়াতে দাড়াতে বলল– নাহ… আমি কোন ফাংশন এটেন্ড করি না তুই তো জানিস…
তামান্না মাথা ধোলাল.. তারপর হেসে– হাসনাত ভাইয়ার কি কোন খবর জানিস না??
রোদেলা অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তামান্নার দিকে.. সে আমাতাআমাতা করে বলল– এইভাবে তাকাবি না দোস্ত.. মনে তো প্রশ্ন হতেই পারে…
রোদেলা মুখ বাকিয়ে বলল– হয়তো ইস্পাকে বিয়ে করে ২ ৩ বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে…
তামান্না চোখ বড় বড় করে বলল– দোস্ত.. এতো তাড়াতাড়ি এতো বাচ্চা…
রোদেলা কোমড়ে হাত গুজে বলল– কেন.. এর থেকে বেশি বেবি নিলে তোর কোন প্রবলেম আছে..
তামান্না তাড়াতাড়ি মাথা ধোলাল.. কে নিজের ইচ্ছায় নাগিনের সামনে নাগিনডান্স দেওয়ার শখ করবে..

হঠাৎ একটা মেয়ে দৌড়ে এসে ওদের জড়িয়ে ধরে নাচতে লাগলো.. রোদেলা হতাশাজনক লুক দিয়ে বলল– অদ্রি সমস্যা কি তোর…
অদ্রি— আরে ইয়ার… মিশিকা গতোবার কি বলেছিল মনে আছে?? ম্যাথ স্যারের ওপর ও ট্রাই মারবে.. নিউ যদি অন্যকোন ইয়াং স্যার আসে.. ওইটা আমার জন্য ছেড়ে দিবে..
রোদেলা তিতা খেয়েছে এমন মুখ করে— তো.. ইয়াং স্যার কি আসছে?
অদ্রি খুশিতে লাফিয়ে— হুম,,, এ্যাকাউন্টিং স্যার..
তামান্না মুখ ভেঙ্চিয়ে — তো স্যার কি বলেছে নাকি.. তোর সাথে প্রেম করবে..
অদ্রি অধৈর্য হয়ে— আরে.. আমি তো বললাম মিশিকা যদি লাইন না মারে.. আমার রাস্তা ক্লিয়ার..
তামান্না— কেন.. আমরা কোন দিকে খারাপ…

অদ্রি তেড়ে কিছুবলার আগে রোদেলা তাকে থামিয়ে রাগীলুক দিয়ে— কিরে,, কি লাগাইছস।। বাচ্চা মেয়ে নাকি তোরা.. আর এইসব ভালোবাসা বাসি বলতে কিছু নাই বুজলি…
অদ্রি— হু.. দেখলে ক্রাশ খাবি তুই ও…
রোদেলা— এই ফালতু জিনিস রোদেলা খায় না.. এইবলে রোদেলা হাটা দিল.. অদ্রি মুখ ফোলিয়ে বলল– এই মেয়ে এমন কেন.. পুরা নিরামিষ.. একে আমিষ বানানোর জন্য এর একমাত্র জামাইটা কোন দুনিয়ায় আছে কে জানে???
তামান্না জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে ছেড়ে দিল.. তারপর বিরবিরিয়ে বলল– আমাকে একটা খুন করা যদি এলাউ করতো ওই শালা হাসনাতের মাথা ফাটিয়ে দিতাম আমি….এইসব ভেবে সেও রোদেলার পিছনে দৌড় দিল…

দুজন গল্প করতে করতে একটা জায়গায় থমকে দাড়ালো.. কয়েকটা ছেলে একটা মেয়ের সাথে বেয়াদবি করছে.. ছেলেগুলো পলিটিক্স করে বিধায় সবাই জাস্ট তামাশা দেখছে.. রোদেলা তেড়ে সেদিকে আগালো.. তামান্না তার হাত আকড়ে ধরলো.. চার পাচটা ছেলে সেখানে…
রোদেলা তামান্নার হাত সরিয়ে যেই সামনে আগালো… হঠাৎ ছেলেগুলো স্ব শব্দে থাপড় খেল.. ছেলেগুলো অবাক হয়ে তাকালো একটা ছেলের দিকে.. কয়েকটা ছেলে মারার জন্য তেড়ে এলো তাকে .. কিন্তু সেইছেলেটার শক্তির সাথে তেমন পারলো না তারা.. তারপর ছেলেটা নিজের পরিচয় দিল.. সে নিজেও পলিটিক্স এ ছিল.. সেইম দলে.. তবে অনেক ওপরের পোস্টে…
সে নিজের কলার ঠিক করতে করতে বলল– এইসব অনেক আগে ছেড়ে দিয়েছি.. সুতরাং রাগ তোলবে না আমার… পলিটিক্স কখনো কাউকে অসম্মান করা শেখায় না.. তোমরা পলিটিক্স এ গিয়ে সেইটাকে নোংরা কর.. আর বিভিন্ন দলের বদনামি কর…
ওরা সরি বলে চলে গেল সাথে মেয়েটাও থেংকিও বলে চলে গেল….

রোদেলা এতোখন পুলকিত হয়ে সেদিকে দেখছিল.. ছেলেটার পিছনটা দেখা যাচ্ছে.. তার কেন যেন ছেলেটা ব্যক্তিত্ব অনেক ভালো লাগছে… কিন্তু ছেলেটার ভয়েসটা খুব পরিচিত লাগছে হঠাৎ তার.. সে ভালোভাবে সেদিকে তাকালো..
হঠাৎ ছেলেটা তাদের দিকে ফিরে তাকালো.. সাথে সাথে রোদেলার চোখ বড় বড় হয়ে গেল..যেন তার চোখ এখন কোটর থেকেই বেরিয়ে আসবে…সে অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো.. হঠাৎ তার পুরো শরীরের ওপর শিতল হওয়া বয়ে গেল.. তার এতোদিনের নরমালবিট করা হার্ডটা যেন হঠাৎ জোরে বিট করতে শুরু করলো যা রোদেলাও শুনতে পাচ্ছে.. আর মুখ থেকে অস্ফুটভাবে বেরিয়ে এলো—- হাসনাত ভাই….

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here