ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব ১৪

#ভালোবাসি হয়নি বলা
#সাদিয়া নওরিন

পর্ব—— ১৪

এইটা কি স্বপ্ন ছিল নাকি সত্যি.. আমি আলতো করে নিজেকে চিমটি কাটলাম.. এইটা যে সত্যি.. তার মানে হাসনাত ভাই নিজে থেকে ক্রিম মেখেছে.. আর সেইটা আমার সাথে!!! আমার কেন যেন খুশি লাগছে.. ইচ্ছে হচ্ছে গান ছেড়ে কিছুখন নাচানাচি করি….হাসনাত ভাইয়া কি সেইম ফিল করে যা তাকে নিয়ে আমি করি. এইসব ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে ওঠলাম আমি… লাজুকহাসি দিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালাম আমি ..
হঠাৎ সুনান ভাইকে দেখলাম খুশিতে নাচানাচি করতেছে.. অবাক হয়ে তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম.. সে লাফাতে লাফাতে বলল– তার জব ইন্টারভিড ছিল টোবাকোতে.. এই দেশটাতে বাংলাদেশের পোর্ট এন্ট্রি আছে.. আর এইটা সাউথ অ্যামেরিকার একটা প্রদেশ.ওনার জব কর্নফার্ম করেছে ওরা.. পাচদিন পর জয়েনিং..
সব ভাইগুলো খুশিতে ওনাকে জড়িয়ে ধরলো.. আমিও খুশিতে কংগ্রেচুলেশন জানানোর জন্য ওনার সামনে দাড়ালাম.. ওনি হেসে আমার দিকে তাকালো.. হঠাৎ কাকলি আপু আমার সামনে এসে বলল– সরি…আমি অবাক হয়ে বললাম— কেন??
সে হেসে– আসলে, তোদের মধ্যে যদি অন্যকোন রিলেশন থাকতো তাহলে ওনার চলে যাওয়া শুনে তোর মন খারাপ হতো কিন্তু তুই তো নাচতেছোস..
সুনান ভাই হেসে বলল– আরে আমাদের মাঝে ভাইবোন ছাড়া আর কোন সম্পর্কও নেয়..আর আমি যেইটা ক্রাশ ক্রাশ করি.. তোরা সেইটাকে খারাপ ভাবোস.. আসলে কাউকে হালকা সুন্দর লাগলেই এই ওয়ার্ড ইয়োজ করি আমি বোঝছোস.. ভালো তো শুধু বৌ কে বাসবো… তারপর আমরা সবাই অহহহ বলে হেসে দিলাম.ভাইয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল.. লাজুক চেহারাই অনেক সুন্দর লাগছে ভাইয়াকে…
আমার আজকে মনটা অতিরিক্ত খুশি.. সব সন্দেহের অবসান হলো আজকে.. আর তার ওপর আজ হিটলারের মনে আমার জন্য কিছুটা ফিল পাচ্ছি আমি.. আমি তাকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ এক জায়গায় আমার চোখ স্হির হয়ে গেল.. হাসনাত ভাই ইস্পাকে কোলে করে বিছানায় শোয়ো দিচ্ছে.. ইস্পার হাত হাসনাত ভাইয়ের কাধে.. আমি স্তব্ধ হয়ে সেইখানেই দাঁড়িয়ে গেলাম. সারাশরীর কাঁপতে শুরু করলো আমার.. মাথাটা ঘোরতে শুরু করলো হঠাৎ .. হাসনাত ভাইয়ের এই রুপটা কেন যেন আমার সহ্য হলো না.. একটা পুরুষের কতোটা খারাপ রুপ থাকে তা হাসনাতভাইকে না দেখলে বোঝতাম ই না আমি. পুরো পুরুষ জাতির ওপর প্রবল ঘৃনায় কুকড়ে ওঠলাম আমি…

ঐইজায়গা থেকে সরে এলাম আমি.. ওদের রাসলীলা দেখার কোন ইচ্ছেই নেয় আমার… মোটামোটি অনুষ্টান উপভোগ করার মন নিয়ে বসে পড়লাম.. কিন্তু মাথায় যেন শুধু ওনাদের ওই সিনটাই ঘোরছে… কিছুখন আগে যে স্পর্শ আমার মাঝে শিহরন জাগিয়েছিল সেই স্পর্শ যেন আমার মাঝে প্রবল ঘৃনা সৃষ্টি হচ্ছে.. নিজের ওপর নিজেরই ঘৃনা হচ্ছে কেমন মানুষকে আমি ভালোবেসেছি…

হঠাৎ মেঝমামির বোনের ছেলে আমার পাশে এসে বসে পড়লো..আর আমাকে নানা রকম প্রশংসামুলক কথা বলতে শুরু করলো.. আমার এইসব যেন গায়ে ফুটোদিচ্ছে মনে হচ্ছে.. আমি ওঠে আসতে চায়লাম কিন্তু সে হঠাৎ আমার হাত ধরে টেনে ধরলো.. তারপর আমার দিকে বাজে লুকে তাকিয়ে বলল– কি সমস্যা তোমার.. সুন্দরের বড়াই করো নিশ্চয়ই.. আমার তোমাকে ভালো লেগেছে আমার.. এইবলে নিজের নিচের ঠোট আলতো ভিজালো জিব্হা দিয়ে.. তারপর হেসে– ..ভালোবাসি তোমায়…

মেজাজটা যেন চরমভাবে বিগড়ে ওঠলো আমার.. হিতাহিত জ্ঞান শক্তি লোপ পেতে শুরু করলো আমার.. রিয়েক্ট করা যেন ভুলে গেলাম হঠাৎ.. ভালোবাসা এই শব্দটাকে হঠাৎ অনেকবেশি ঘৃণিত মনে হলো আমার কাছে.. তাকে সজোরে থাপ্পড় দিয়ে দিলাম আমি আর হনহনিয়ে ওইজায়গা ত্যাগ করলাম আমি..

আন্টির রূমে এসে সকল ড্রেসগুলো খোলে অজোর নয়নে কান্না করতে লাগলাম.. পুরো দুনিয়াটা ঘুরছে যেন আমার.. এই ঘটনা আমার কোমল মনে কতোটুকু দাগ কেটেছে তা হয়তো কেউ জানে না..শুধু আমি জানি সেইকষ্টের অনুভূতি…ওয়াসরুমে গিয়ে নিজেকে ভালোভাবে ডলে ডলে ধোলাম.. নিজের মুখ যেইখানে হাসনাত ভাইয়ের স্পর্শ মাখা ছিল সেই জায়গাটা ডলে ডলে লাল করে ফেললাম আমি..গালের দাগটা হয়তো কয়েকদিনে চলে যাবে.. তবে মনের দাগটা কখনোই যাওয়া সম্ভব নয়..এইসব ভাবতে ভাবতে ঝরনা ছেড়ে আজোরে কান্না করতে লাগলাম…

সকালে ঘুম ভেঙ্গে পরিবেশটা থমথমে মনে হলো আমার.. একেকজন একেক দিকে ছন্নছাড়া হয়ে বসে আছে.. আম্মুকে দেখলাম কান্না করছে চুপিসারে.. আর মেজমামি দেখলাম রাগে জ্বলছে…
আমাকে দেখতেই আমার সামনে দাড়িয়ে বলল– আমার বোনের ছেলের গায়ে হাত তুললে কোন সাহসে.. তুমি কি জান তুমি তার পায়ের ও যোগ্য নয়… তোমাকে কতোবার বলা হয়েছে মানুষের সাথে ভালোব্যাবহার করো.. কিন্তু তোমাকে শিখাতে পারলাম না আমি… আসলে দোষতো তোমার মায়ের.. বাচ্চা মানুষ করতে জানে নাই..
আমি যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম.. আমি আমাতাআমাতা করে বললাম — মামি ওনি আমার দিকে বাজে ভাবে তাকিয়েছেন।। আমার হাত ধরেছেন…
মামি রেগে বলল– তো তুমি কি তো দুধে ধোয়া তুলসী পাতা… কি কি কর আমরা বোধহয় জানি না.. আমি অবাক দৃষ্টিতে তারদিকে তাকালাম আর প্রশ্ন করলাম– কি করি আমি.. তখন তিনি যা বলেন আমি অবাক হয়ে যায়.. আমার ড্রেসে নাকি শালীনতা নাই.. আমি ছেলেদের নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে নানা অঙ্গভঙ্গি করি.. আরো নানা ধরনের কথা বলতে লাগলো তিনি আমাকে .. সাথে আশেপাশের অনেকে চরম সমালোচনা শুরু করে দেয় .আমাকে নিয়ে.. আমার বড়খালামনি হালকা প্রতিবাদ করেন সাথে মেঘলা আপু.. কিন্তু সকল বাকি কাজিন আর খালারা আমাকেই দোষারোপ করতে থাকে.. আমি কান্নাকরে ঐখানেই বসে পড়ি.. কিন্তু আমার খালা,মামি, মামাতো বোন আর খালাতো বোনের আমার প্রতি অন্পও মায়া হয় না.. তারা নিজেদের যুক্তির বেড়িতে এমনভাবে পেঁচিয়ে ফেলে আমায়… তারা ভূলেই যায় আমি মাত্র ১৭ বছরের এক কিশোরী মেয়ে…

সেইদিন অনেকটা বড় হয়ে ওঠি আমি ভিতরদিকে.. তাদের কিছু কড়া কথা শুনিয়ে সেইখান থেকে বেরিয়ে আসি.. নিজেকে রাইট প্রমান করতে পেরেছিলাম শেষপর্যন্ত.. কিন্তু তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত টাও সেইদিনই নিয়ে ফেলি আমি..হাসনাত ভাইকে দেখি নাই আর সেইদিন..না তাকে দেখার কোন ইচ্ছে ছিল আমার.. আমার এই না বলা ভালোবাসা না বলাই থেকে যাক.. নিজের ভিতরে দাফন করে দিলাম একে..

জিবনের কালো এই অধ্যায়কে নিজের হাতে মেরে সেইদিন নতুন রোদেলার জন্ম দি আমি..”” মুছে দিব আমার সকল সরলতাকে.. আর নিজেকে তৈরি করি পাথর রুপে.. “”এইসব ভাবতে ভাবতে নানুর বাড়িতে আর কোনদিন পা রাখবো না এই পন নিয়ে আপুর হাত ধরে বেরিয়ে আসি……….

ডাইরীটা ওল্টে পাল্টে দেখছে তামান্না.. এরপর আর কিছুই লিখা নেই.. হয়তো আর কোনদিন রোদেলা এই ডাইরী লিখেনি.. এই পাচ বছরে!!!!

রোদেলা তামান্নার বেস্টফ্রেন্ড.. দুইজন চট্রগ্রাম ভার্সিটিতে ফিনেন্সে পড়াশোনা করছে.. তারা এখন ফোর্থ ইয়ারে..
তামান্না ভার্সিটিতে প্রথমে এক ছেলের দ্বারা উত্ত্যক্ত হয়.. তখনই কেউ একজন তাকে বাচায়.সেদিকে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে যায়. সেইটা কোন ছেলে না মূলত সে ছিল একটা মেয়ে..পরনে ত্রিপিস.. কিন্তু চাহনী যেকোন স্ট্রং ছেলেকে হার মানাবে.. উচুস্বরে প্রতিবাদ করেছিল সেইদিন…ভার্সিটি কারো কাছে হারে না সে ,,, না সে অন্যায় সহ্য করতে পারে.. অন্যরকম ব্যাক্তিতের অধিকারিনী সে.. তামান্নার সাথে মিশতে মিশতে খুব ভালো বান্ধবী হয়ে ওঠে সেইমেয়েটি. মেয়েটি আর কেউ নয়.. রোদেলা এমরুল!!!
তবে তামান্নার কেন যেন মনে হতো এই স্ট্রং রোদেলার মাঝে এক নরম রোদেলার বাস রয়েছে হয়তো. সে রোদেলার নরম মনের প্রমান কয়েকবার পেয়েছে. কিন্তু ছেলেদের প্রতি ঘৃনাটা তারকাছে বড্ড অদ্ভূত লাগতো..পুরোই রহস্যজনক ছিল তার কাছে..

রোদেলার বাসায় একদিন রোদেলাকে না বলে গিয়েছিল সে.. রোদেলা বাসায় নেই সেদিন আর আন্টি পুরোনো বই বিক্রি করার জন্য সব স্তুপ করেছে..তামান্না রোদেলার মাকে সাহায্য করার সময় হঠাৎ সে তালা দেওয়া একটা ডাইরী দেখতে পায়.. আর তারওপর লিখা ছিল– ডোন্ট টার্চ ইট…
তামান্না তার কৌতুহল দমাতে পারে না.. সে ডাইরীটা নিজের বাসায় নিয়ে আসে..তালাটা নিজের চুলের ক্লিপ দিয়ে খুলে!!! ডাইরীতে রোদেলার নাম দেখে সে অনেকটা অবাক হয়..তারপর কৌতুহল নিয়ে সে পুরোটা পুরো রাত জেগে শেষ করে…
।ফুফিয়ে কান্না করছে তামান্না.. তার অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে আজ..রোদেলার চেহারাটা তার চোখের সামনে ভাসছে..মেয়েটা এইজন্য নানুর বাড়ি রিলেটেড কোন গল্প শুনতো না.. তবে তামান্নার কেন যেন মনে হচ্চিলো হাসনাত হয়তো রোদেলাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসত…
তাহলে এখন কই হাসনাত..এই পাচ বছরে সে একবারও কেন রোদেলার খবর নিলো না.. নাকি সে ইস্পাকে বিয়ে করে ফেলেছে..যদি বিয়ে ই করে থাকে.. তাহলে রোদেলার সাথে এতো নাটক করেছিল বা কেন….

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here