ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব ১৩

#ভালোবাসি হয়নি বলা
#সাদিয়া নওরিন

পর্ব— ১৩

মুনিরা আমার কাধে আলতো হেসে বলল– তোমার ড্রেস এনে দিতে বলি আর একটা?? আমি দাত দিয়ে নক কাটতে কাটতে বললাম— নাহ এইটা পড়ব.. দুইজন ভূত দেখার মতো চমকে বলল– কি?? এইটা কিভাবে পড়বা সেলাই করে??
ইফ্ফাত — কিরে চুপ করে আছ কেন?
আমি আনমনে দাত দিয়ে নক কাটায় মন দিলাম.. মূলত আমি এখন হাসনাত ভাইকে হেনস্তা করার উপায় খুজছি..
হঠাৎ মুনিরা আমাকে ডেকে বলল– তুমি নক এইভাবে কখন থেকে কাট??
আমি– ছোটবেলা থেকে.. কেন??
সে আমার পাশে বসতে বসতে বলল– কেন??
আমি — কারন ভাবতাম আল্লাহ এগুলো খাওয়ার জন্য দিচ্ছে..
দুইজনই চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো.. আর আমি স্বাভাবিক ভাবে রেডি হওয়ার জন্য দাড়িয়ে গেলাম..শাড়িটা জরজেটের.. আচলা অনেক বেশি কাজ.. আর আচলটাকে দু টুকরা.. আর শাড়িটাকে দুটুকরা করে কেটে রাখছে তিনি..
আমি বড় টুকরা কুচি করে পেচিয়ে ওড়লাম.. ভাগ্য ভালো ব্লাউজটা লম্বা আর হাতও লম্বা.. সেইটা পড়ে নিলাম.. গর্জিয়াস পার্টটা ছোট ছোট কুচি করে কুচির ওপর পিন দিয়ে লাগিয়ে আবার পড়ে ফেললাম কোমড়ে.. দুতালা করে কুচি হয়েছে এখন.. আর একটা কাটা পিস একপাশে লেহেঙ্গার ওড়নার মতো কুচি করে পিন দিয়ে একপাশে লাগিয়ে দিলাম.. আর বাকি কাটা অংশটা পিছনে কুচি করে লাগিয়ে দিলাম.. ইফ্ফাত হা হয়ে তাকিয়ে রইলো.. তারপর বলল– দুনিয়ার ওল্টাপাল্টা বুদ্ধি সব তোমার ভিতর?? কিন্তু এতে আরো বেশি কিউট লাগতেছে.তোমারে. আমাকেও বানিয়ে দাওনা.. আমি মুখ ভেঙ্গিয়ে বললাম— ন বানা.. যেইটা পড়ছোস কিউট লাগতেছে.. তখন সে হেসে– থেংকিও.. তবে তোমার মতো ইউনিক আর কেউ পড়বে না আমি সিউর.. তখন ইফতি ভাই হেসে বলল– আরো একজন পড়ছে.. আমি ব্রু কুঁচকে বললাম— কে??
সে হেসে ইশারা করলো.. আর সেদিকে তাকিয়ে আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেল…
আমার ডিজাইন করা পান্জাবীটা পড়ে ঘোরতেছে হাসনাত ভাই.. রেড কালার গেন্জির সাথে পরেছে.. কাটার ভিতর দিকে লাল দেখা যাচ্ছে.. সাদার ভিতর লাল.. তারে কতোটা কিউট লাগতেছে সে কি তা জানে.. আমি নগদে ক্রাশ খাচ্ছি.. আমার সামনে এসে ব্রু নাচিয়ে চোখ টিপ দিয়ে দিল আমায় সে তারপর হেসে চলে গেল.. আর আমি বেয়াক্কেলের মতো তাকিয়ে রইলাম.সে দিকে. কি দিয়ে বানায়ছে এরে.আল্লাহ!!!. ইফতিভাই হেসে– আর দেখিও না.. আমার ভাইয়ের নজর লাগবে.. আমি মুখ ভেঙ্চিয়ে বললাম— আপনার নজর আমার বোনের ওপর পড়ে আছে সেইটা বোধহয় বুজি না আমি….সে মৃদু হেসে দিল
ইফফাত কাজের ছুতো দিয়ে কেটে পড়লো হঠাৎ ..আর ইফতি ভাই অপলকে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল.. আমি কোমড়ে হাত গুঁজে বললাম— কি.. প্রপোজ করেছেন??
সে আমাতাআমাতা করে বলল– আসলে কি বলবো.. ওর সামনে গেলে সব কথা গুলিয়ে যায় আমার. আর আমি তো মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলি না..
আমি হতাশাজনক লুক দিয়ে বললাম— তো আমার বোনকি একশটা প্রেম করছে নাকি.. হু?? জানেন আমার বোনের কতো স্বপ্ন তার লাইফপাটনার নিয়ে.. যান আপনার দ্বারা হবে না কিছু.এই বলে হাটা ধরলাম আমি..সে তাড়াতাড়ি আমার সামনে এসে বলল– আরে.. আপু।। আমি তো এইটা বলি নি.. কি স্বপ্ন বলেন.. আমি সব পূরণের চেষ্টা করবো.. আমি মৃদূহেসে বললাম— ওকে.. ফাস্টে প্রপোজ করে দেখান.. ওয়েট আমি আপনাকে ট্রেনিং দেওয়ার মানুষ দিচ্ছি।। ফলো মি.. এইবলে হাটতে শুরু করলাম..আর সে কনফিউস্ট লুক নিয়ে আমার পিছু পিছু আশা শুরু করলো..

আমি মেহেদীর সামনে গিয়ে দাড়ালাম.. সে আরাফদের সাথে গল্প করছে.. আমি ওকে ডাকদিতেই ওঠে এলো.. আমি মিষ্টি হেসে– মেহেদী আমি তোর কি হয়??
মেহেদি হেসে– আমার বড় আপু..কেন?
আমি– আমি যদি তোকে কোন কাজ দি.. করবি না..
সে—আরে.. আদেশ করো শুধু ছোটভাইদের আদেশ করে বড় বোনরা..
আমি মৃদু হেসে ইফতি ভাইয়াকে দেখিয়ে বললাম— এই ভাইয়াকে চিনিস তুই?
সে হেসে– হুম.. আমার তো ভালোই লাগে.. অনেক শান্ত তাই না আপু.
আমি– হু.. তুই নাকি ভালো নাটক করিস.. আর ইউনিক স্টাইলও??
সে হেসে হালকা ভাব নিয়ে বলল– হু.. আপু..
আমি ইফতিভাইকে ওর সামনে দাড় করিয়ে বললাম— ওনাকে ইউনিক স্টাইলে প্রপোজ করা শিখাবি..
সে ব্রু নাচিয়ে বলল– ওকে.. সমস্যা নাই. আমি অনেক স্টাইল পারি.. তারপর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল– তো লাকি মেয়েটাকে??
আমি নির্লিপ্ত ভাবে বললাম— ইফ্ফাত..
মেহেদীর চোখ গুলো আপনাআপনি রসগুল্লার মতো হয়ে গেল.. আর ভাইয়া তাড়াতাড়ি অন্যদিকে তাকালো.. মেহেদী চরম বিস্ময় নিয়ে– আমি ওনারে আমার বোনকে প্রপোজ করা শিখাতাম??
আমি — হু.. কেন?? নাকি ইমা আপুর হাসবেন্ড কে গিয়ে বলব??
সে হালকা ঢুক গিলে বলল– ইফ্ফাত মারবে আমাকে..
আমি ওর কাধে হাত দিয়ে বললাম— ইফ্ফাত ও লাইক করে ওনাকে..
সে চরম বিস্ময় নিয়ে বলল– তো.. আবার এই নাটক কেন তো?
আমি রাগীচোখে বললাম— আদেশ করতেছি.. জিঙ্গেস না.. যা আজ রাতের মধ্যে শিখিয়ে নিয়ে আয়..যদি ভালো হয় তোরে ললিপপ কিনে দিবো..
সে মুখ বাঁকিয়ে বলল– তুমি খাওগা.. এইসব খায়না আমি.. চলেন ভাইয়া.. আমি হেসে– দুলাভাই বল.. তোর দুলাভাই লাগে..সে তিতাকরলা মুখে দিছে এমন লুক দিয়ে প্রস্হান করলো..
হেসে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম হাসনাত ভাই কোমড়ে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।। আমি মুখ ভেঙ্গিয়ে তাকে পাচ করতেই সে আমার হাত ধরে তার সামনে দাড় করে বলল– কি চলে??
আমি মুখ বাঁকিয়ে — কি চলবে.. ওদের একটা গতি করতেছি.. নিজের তো কোন গতি হচ্ছে না.. ভাবতেছি বিয়ে করে ফেলবো.. তারপর জামাইয়ের সাথে রোমান্স করবো…
সে রহস্যময়ভাবে হেসে বলল– তো.. বিয়েটা কখন করবি ভাবলি? ভাবছি তুই যেদিন বিয়ে করবি আমিও সেদিন বিয়ে করবো…
আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম— কেন? দিনকি কম পড়েছে? সেইম দিনে কেন আপনার ও করতে হবে??
সে হেসে– কারন ওদিন ছাড়া যে সম্তব না..
আমি হতাশাজনক লুক দিয়ে বললাম— মাথার ভিতর কি সব জিলাপির প্যাচ?? সোজাভাবে কথা বলতে পারেন না??
সে মুখ বাঁকিয়ে বলল– তুই শুধু গাধা ভাবতাম.. এখন দেখলাম তুই বেকুব ও…
আমি তেড়ে বললাম— আমি যা হয়,, আমার জামাইয়ের সম্পত্তি.. সে আমাকে যা ইচ্ছে বলবে.. খবরদার তুমি কিছু বলবা না…
সে মৃদূহেসে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল– তুই এতো বেয়াক্কেল কেন?? তবে আজিবন এমনই থাকিস.. আই লাইক ইট.
এই বলে সে প্রস্হান নিল আর আমি সেইখানেই অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলাম.. কি সব বলে গেল সে আমাকে.. কিছুইতো বোঝলাম না…
হঠাৎ তাকে অপদস্থ করার অনেক ভালো উপায় পেয়ে গেলাম আমি.. মুখে হাসি ঝোলিয়ে অনুষ্টানে মনযোগ দিলাম.আমি. সবাই কেক খাওয়াচ্ছে জিবনভাইয়াকে আর আমি জানি কেকের ক্রিম সবচেয়ে বেশি অপছন্দ হাসনাত ভাইয়ের.. আর আমি সেইটাকে হাতিয়ার বানালাম.. আস্তে করে কয়েকপিস কেকের ক্রিম নিয়ে এসে তাকে খুজতে লাগলাম.. দেখলাম সে একপাশে দাড়িয়ে ফোনে কি যেন দেখছে।। আমি আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে গেলাম. যেই তার গালে লাগাবো অমনি সে বড় একটুকরা আমার মুখে ঘসে দিল.. তারপর হেসে দিল. আমি চরম অবাক হয়ে তারদিকে তাকালাম.. সে হাসতে হাসতে বলল– তোরে আমার অংশ দিয়ে বানিয়েছে রোদেলা. আার তাই তোর মাথায় কি ঘোরে সব আমার জানা ।।

হঠাৎ সে আস্তে আস্তে আমার দিকে আগাতে লাগলো আর আমি পিছাতে লাগলাম..
এই বান্দা এইভাবে কাছে আসছে কেন আজব.. আমার হার্ডবিটযে বাড়তে বাড়তে বেরিয়ে আসবে সেই খেয়াল কি তার আছে.. আমি পরপর কয়েকটা ঢুক গিললাম!! গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে আমার.. একগ্লাস ঠান্ডা পানি এখন খুব দরকার আমার.. পুরো শরিরে যেন ভাইব্রেশন হচ্ছে এইভাবে কাঁপছি আমি.. কাপতে কাঁপতে বললাম— হ-স-না-ত ভা..
সে আঙ্গুল উঁচিয়ে ঠোটের ওপর দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল– সসসসসস.. যখন ই কথা বের হয়. আবোলতাবোল ই হয় চুপ থাক..
আমি তার শিতল কন্ঠে বরফের মতো জমে গেলাম.. প্যারালাইজ রোগীর মতো নিজের শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছি আমি.. একেমন অনুভূতি!! আমি সে হঠাৎ আমার খুব কাছে এসে নিজের গালটা আমার গালের সাথে আলতো করে ছোয়ালো. তারপর অন্যগালটাও.. আমি আবেশে চোখ অফ করে রইলাম.. তার ছোয়া যেন শিহরনের সৃষ্টি হচ্ছে আমার মাঝে.. সে ফিসফিসিয়ে বলল– যা তোর ইচ্ছা পূরন করে দিলাম.. এই বলে চোখ টিপ দিয়ে চলে গেল..আর আমি স্তব্ধ হয়ে সেইখানেই দাড়িয়ে রইলাম..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here