মাত্র তিন মাস
পর্বঃ ২
-তবে ওকে,আমিও চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করলাম।আমিও ঠিক তিন মাস পাড় হতেই ৯১ দিনের দিনই আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে সায়ানকে বুকে জড়িয়ে নেবো।
-মনে রাখবেন,সময় মাত্র তিন মাস।
এর পর থেকে উৎস আমাকে ইম্প্রেশ করার চেষ্টা করছে।
কিন্তু কিছুতেই আমার মন ওকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারছেনা।
পারবেই বা কি করে,আমি যে অনেক আগেই সায়ানকে ভালবেসে বসে আছি।
বিয়ের স্বপ্ন দেখেছি।
বাবা মা মেনে নিলেই আজ আমি সায়ানের ঘরে থাকতাম।
সায়ানকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন বুনেছি আমি।স্বপ্ন গুলো শুধু পূরণের অপেক্ষায় ছিলাম।আর সেই স্বপ্ন গুলো আমার পুড়ে ছাই হয়ে গেলো।
-অনামিকা,এই অনামিকা কি ভাবছো?
-প্লিজ আপনি যান এখান থেকে।
আর শাড়ীটাও নিয়ে যান।আমার ভালো লাগছেনা।আমাকে একটু একা থাকতে দিন।
উৎস চলে যায়।
কিছু ক্ষণ পর উৎসর মা আমাকে এসে ডাকেন।
-বউমা,বউমা কোথায় তুমি?
-এইতো মা আসছি।
উৎসের আত্মীয় স্বজনরা এসেছেন।
সবাই আমাকে দেখতে এসেছেন।
মা সেই জন্যই আমাকে ডেকেছেন।
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
এটাই কি উৎসের বউ?
-হ্যাঁ গো ভাবী,এটাই আমাদের উৎসের বউ।
-বাহ্ কি সুন্দর দেখতে গো আমাদের বউ মা।
এসো মা এসো,বসো এখানে।
আমি গিয়ে সবার সাথে বসলাম।
ভাবী সবাইকে নাস্তা এনে দিলেন।
সবাই আমার সাথে কথা বলছেন এক এক করে।
-জানো বউ মা,তোমার বর কিন্তু খুব ভালো।আজ পর্যন্ত এ পাড়ার কেউ ওকে খারাপ বলতে পারেনি।
-আরে আরে,পারবে কি করে,ও কি কোন মন্দ কাজ করেছে নাকি এখন অবধি?
সবাই উৎসের প্রশংসা করছে।
কিন্তু এসব শুনতে আমার একটুও ভালো লাগছেনা।
এখানে যদি সায়ানের প্রশংসা করা হতো তবে হয়তো আমার কখনোই মন্দ লাগতোনা।
কিন্তু উৎসকে যে আমার সহ্যই হয়না।
যদিও উৎস দেখতে ভালোই হ্যান্ডসাম।কিন্তু আমার চোখে সায়ানই পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর পুরুষ।
আমার ফোন বাজছে।
আমি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুমে গেলাম।
গিয়ে দেখি উৎস আমার ফোনের সামনেই বসে।
ফোন বাজছে আর ও দেখে যাচ্ছে।
অন্য কেউ হলে হয়তো এত ক্ষণে ফোনটা রিসিভ করে যা তা বলে দিতো।
কারণ স্পষ্ট ভাবেই স্ক্রিনে বার বার নাম টা ভেসে উঠছে,
”জান আমার”
আমি ফোন টা হাতে নিতেই উৎস রুম থেকে আবার বেরিয়ে গেলো।
-হ্যাঁ বলো।
-এত ক্ষণ লাগে ফোন ধরতে?কত চিন্তা করছিলাম জানো?
-সরি!আসলে বিজি ছিলাম একটু।
-ওই উৎসের সাথে নয়তো?
-সায়ান প্লিজ।
তোমাকে বলেছিনা,ও আমার হাত টাও আমার অনুমতি ছাড়া ছুঁয়ে দেখবেনা।
এমন ছেলে ও।
-বাহ্!তিন দিনেই চিনে গেলে।
-তুমি কি এখন ঝগড়া করবে আমার সাথে?
-না।
আচ্ছা রাখছি।নিজের খেয়াল রেখো।
-ওকে।তুমিও।
সায়ান ফোন রেখে দেয়।
দেখতে দেখতে কেটে যায় পনের দিন।
উৎসর পরিবারের সবাই আমাকে খুব স্নেহ করে।
তারা ছেলের বউ হিসেবে না।
এ বাড়ীর মেয়ের মতই রাখছেন আমাকে।
এর মধ্যে আমি আর আমাদের বাসায় যাইনি।
আব্বু সুস্থ হয়েছেন এখন।
আমি আর যাইনি তাকে দেখতে।যেই মানুষ টা আমার স্বপ্ন গুলোকে গলা টিপে হত্যা করলো।তাকে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে টা আর নেই।
উৎস এর মধ্যে কয়েক দিন ই বাড়ীর কাউকে না জানিয়ে গিয়ে দেখে এসেছে আম্মু আব্বুকে।
আমি যাইনি।
না জানিয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে,তাহলেই সবাই বলবে আমি কেন গেলাম না।
তাই আমি ছাড়া আর কাউকেই জানায়নি।
যদিও একদিন শুধু সবার সাথে গিয়ে দেখে এসেছিলাম।
কিন্তু তেমন কোন কথা বলিনি।সবার সামনে যত টুকু বলার দরকার ছিলো তত টুকুই বলেছি।
ফোন বাজছে,
-হ্যালো সায়ান,
-কবে আসবে তুমি বলোতো?আমার কিন্তু এসব মোটেও ভালো লাগছেনা।আমার ভালবাসার মানুষ অন্যের ঘরে আমি এটা মানতে পারবোনা।
তাছাড়া এখন কিসের দেরি তোমার?
তোমার বাবাও তো এখন সুস্থ।
-সায়ান আর মাত্র ২ মাস ১৫ দিন।
তারপরই আমরা এক হবো।
-আমি আর ধৈর্য্য রাখতে পারছিনা অনামিকা।
আমার বার বার মনে হয় ওই ব্যাটা উৎস তোমাকে…
-কোন চিন্তা করোনা।ও এমন না।
-উফ রাখছি আমি।ভালো লাগছেনা আমার।
-আচ্ছা ভালো থেকো।
আসলেই তো,কারো পক্ষেই সম্ভব না তার ভালবাসার মানুষটাকে অন্যের হতে দেখা।
সায়ান কিভাবে পারবে সহ্য করতে তাহলে।
কিন্তু উৎস!আমি তো ওর বিবাহিতা স্ত্রী।
আমি যখন সায়ানের সাথে চলে যাবো,তখন ও এটা মানতে পারবেতো?
পারবেনা কেন!অবশ্যই পারবে।আমি তো আর ওর ভালবাসা না।
আমি তো আগেই সব বলে দিয়েছি আমি ওকে ভালবাসিনা।
আমি সায়ানের কাছে চলে যাবো।
সেহেতু ওর আমাকে ভালবাসারও কোন প্রশ্নই উঠেনা।
তাই আমি গেলেও যা না গেলেও সেই একই।
ভাবতে ভাবতেই উৎসর আগমন।
-অনু,
-জ্বী।
-আজ সন্ধ্যায় আমার একটা অফিস প্রোগ্রাম আছে।সবাই তাদের ওয়াইফ কে নিয়ে যাবে।
তুমি কি আমার সাথে একটু যাবে প্লিজ?
-সরি।
-ওহ।
আসলে সবার সামনে আমি একটু ছোট হয়ে যেতাম কিনা।
যাজ্ঞে,সমস্যা নেই।
উৎস গোসল করতে চলে গেলো।
আমি বিছানা ঠিক করছি।
রুম ঝাড়ু দিচ্ছি।
-অনু,আমি তোয়ালে টা নিতে ভুলে গেছি একটু দিবে প্লিজ?
-দিচ্ছি,
আমি উৎসকে তোয়ালে টা দিতে দরজায় নক করি,আর ও দরজা খুলে দিতেই আমি কিভাবে যেন পা পিছলে ওর ওপরে পড়ে যাই।
আর আমি ভিজতে থাকি ওর সাথে।
ভিজে যাই অনেক টা।
-উফফ অসহ্য।
-কি অসহ্য?
-ছাড়ুন আমাকে।
-আমি কি বলেছিলাম আমার ওপর এসে পড়ো?
তুমিই তো আমার সাথে গোসল করতে ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে এলে।
আর আমি যদি এখন না ধরতাম তবে তো যেতো কোমর এক বারে ভেঙে।
মন কি জয় করে ফেলেছি নাকি হুম?
-মন জয় মাই ফুট।
ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন।
এদিকে ভাবী আমাকে ডাকতে আমাদের রুমে আসেন।
কোন সাড়া না পেয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখে আমরা দুজন নায়ক নায়িকার স্টাইলে ভিজিছি।
আর ভাবী লজ্জা পেয়ে বলেন,সরি সরি।
রোমান্টিক মোমেন্টে চলে এসেছি।
আমি যাই।
গোসল হলে তোমরা চলে এসো।
মা বাবা তোমাদের ডেকেছেন।
এদিকে আমি উৎসের বুকে দুইটা চার টা ধুম ধাম কিল ঘুষি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নেই।
আর বেশরম নির্লজ্জ বলে কয়টা গালিও দেই।
উৎস গোসল সেরে এক বারে প্রোগ্রামের জন্য রেডি হয়।
ছেলেটা দেখতে খারাপ না।
ভালোই লাগছে।
-অনু,
-জ্বী।
-কেমন লাগছে আমাকে বলোতো?
-ঠিক ঠাক।
-ওহ আচ্ছা।
আচ্ছা শোনো,আমি বাবা মার সাথে দেখা করে একবারে প্রোগ্রামে চলে যাবো।
তুমি রাতে খেয়ে নিও।
-আচ্ছা ঠিকাছে।
-তুমি আমার সাথে এলে ভালো হতো।
আচ্ছা আসি।
-হুম।
উৎস চলে যায়।
আমি টিভি অন করে টিভি দেখতে থাকি।
কিছু ক্ষণ পর দেখি হঠাৎ মেসেঞ্জার টোন বেজে উঠে।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখি উৎস ভুল করে ওর মোবাইল টাই রেখে চলে গেছে।
কেন যেন আমি ওর মেসেঞ্জারে ঢুকলাম।
দেখি ওর এক বন্ধুর মেসেজ,
-কিরে উৎস,এত লেইট হচ্ছে কেন?ভাবী কি খুব বেশি মেকাপ করছে নাকি?
তুই না বলেছিলি,ভাবী না সেজেই রাজ কন্যা?তাহলে এত লেইট কেন শুনি?আচ্ছা তাড়াতাড়ি ভাবীকে নিয়ে আয়।তারপর ভাবীর কাছেই শুনে নেবো।
আমি উৎসের মেসেঞ্জার চেক করতে লাগলাম।
কয়েকটা মেয়ে ওকে অনেক মেসেজ দিয়েছে।
ও কয়েক জন কে মেসেজ ব্লক দিয়ে রেখেছে।
আর প্রায় সবাইকেই বলেছে আই এম ম্যারিড।
আমি সব পুরোনো মেসেজ চেক করলাম।
আমি ওর ফেসবুক আইডিটাই ঢুকলাম।
কি সুন্দর সুন্দর পিক আপ্লোড করা ওর।
সেখানে শত শত লাইক কমেন্ট।
মেয়েরা ক্রাশ খাবেই বা না কেন।
ফাজিল টা দেখতে কি কম হ্যান্ডসাম নাকি।
আমার জীবনে সায়ান না থাকলে হয়তো আমিও ওকে আমার ক্রাশ বলে পরিচয় দিতাম।
উৎস যাদের সাথেই চ্যাট করেছে,সবার কাছেই আমার অনেক সুনাম করেছে।সব দেখলাম একে একে।
অথচ আমি ওর কেয়ার বা কিছুই করিনা।
কতই না মিথ্যে বলেছে ছেলেটা আমার প্রশংসা করে।
বাহ্ রিলেশনশিপে ম্যারিড ও দিয়ে রেখেছে।
এত ফেমাস হবার পরও ম্যারিড দিয়েছে।
অথচ আজকাল তো মানুষ দু চার বাচ্চার মা বাবা হলেও সিংগেল দিয়ে রাখে।
কিছু ক্ষণ পর আবার একটা মেসেজ এলো।
উৎস কই তুই?
-আমি এখানে রিপ্লাই করলাম।
ভাইয়া উৎস মোবাইল টা ভুল করে বাসায় রেখে চলে গেছে।আমি অনামিকা।
-আপনি কোথায় ভাবী?
-আমিও বাসায়।
-কি বলছেন?আমরা সবাই এখানে কাপল রা এসেছি।আর আপনি উৎসকে একা পাঠিয়ে দিলেন?
জানেন এখানে ওর কত ফ্যান ফলোয়ার আছে।
পরে অন্যের দখলে চলে গেলে কাঁদবেন না যেন।
-আচ্ছা ভাইয়া আল্লাহ্ হাফেজ।
ওই দিকে উৎসও পৌছে যায়।
-কিরে ভাবী কই?
-আরে ও একটু অসুস্থ।
সবাই উৎসকে ঘিরে ধরে ভাবী কই ভাবী কই।
আশেপাশে কয়েকটা মেয়ে উৎসর সাথে কথা বলছে।
সবাই ইঞ্জয় করছে প্রোগ্রাম।
কাপল ডান্স করছে কাপল গুলো।
উৎস আর নিঝুম দাঁড়িয়ে।
এই নিঝুমই উৎসকে খুব বিরক্ত করে।তাই উৎস ওকে ব্লক করেছে।
সব দেখে নিয়েছি আমি।
হঠাৎ নিঝুম বলে উঠে,চলো আমরা দুজন এক সাথে ডান্স করি।
আর তখনই আমি সেখানে গিয়ে উঠি,
আর বলি,
-কেন?আমি কি মরে গেছি?
#চলবে