মাত্র তিন মাস পর্ব -০১

উৎস লাল টুকটুকে একটা শাড়ী আমার হাতে দেয়া মাত্রই আমি শাড়ীটা ছুড়ে মারলাম দরজা বরাবর বাইরে ফেলে দেয়ার জন্য।
কিন্তু শাড়ীটা বাইরে না গিয়ে দরজায় লেগে ফ্লোরে পড়ে গেলো।

-কি পেয়েছেন আপনি?শাড়ী এনেছেন কেন?আমি কি আপনাকে বলেছি আমার জন্য শাড়ী আনতে?
অধিকার ফলাচ্ছেন?অধিকার?আজ শাড়ী দিবেন কাল গায়ে হাত দিবেন।
এটাইতো?

-এসব কি বলছো তুমি অনু?
এমন করছো কেন?

-আপনাকে আমি কি বলেছি আপনার মনে নেই?
আমি আপনাকে স্বামী বলে স্বীকার করিনা।
মানিনা আপনাকে আমি স্বামী।কোন দিন আর আসবেন না আমার ইচ্ছে পূরণ করতে।

-তুমিই তো গতকাল ভাবীর সাথে টিভি দেখার সময় বললে,
ভাবী,আমার না টকটকে লাল রঙের একটা শাড়ী আর কালো রঙের একটা ব্লাউজ পরতে ইচ্ছে করছে।
তাইতো আমি তোমার জন্য নিয়ে এলাম।

-আমি কি আপনাকে বলেছিলাম?
-না।
-আপনাকে আনতে বলেছিলাম?
-না।
-তাহলে?
যাকে আমি ভালবাসি না,স্বামী বলে স্বীকার করিনা তার কাছ থেকে কিছু নেয়ারও প্রশ্নই আসেনা।

-তুমি না মানলেও এটাই সত্যি যে তুমি আমার স্ত্রী।আর তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করার দায়িত্ব এখন আমার।

-আমার কোন ইচ্ছে আপনাকে পূরণ করতে হবেনা।ধন্যবাদ।
আপনি এবার আসতে পারেন।

আর আপনি আপনার সময় গুনেন।

এবং প্লিজ যান এখান থেকে।
আমাকে একা থাকতে দিন।

উৎস!
আমার বিয়ে করা বর।
যাকে আমি তিন দিন হয় কবুল বলে বিয়ে করেছি।
কিন্তু আমি ওকে মন থেকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারিনি।
আর কোন দিন পারবো বলেও মনে হয়না।

কেননা বিয়েটা আমি নিজ ইচ্ছেয় করিনি।
বিয়েটা সম্পূর্ণ বাবা মায়ের ইচ্ছেতেই হয়েছে।

একদিন আমি অনয়ের(ছোট ভাই) সাথে লুডু খেলছিলাম আর দুষ্টুমি করছিলাম।
আর হুট করে উৎস ওর পরিবারের লোক জন নিয়ে আমাদের বাসায় হাজির।

বাবা মাও সেদিন খুব রান্নাবান্না করেছিলেন।
বুঝতে পারছিলাম না কেন এত আয়োজন।

উৎস বাবার বন্ধুর ছেলে।
উৎস আর আমার আব্বু দুজন ছোট বেলার খেলার সঙ্গী।
দুজনকে নাকি দোস্ত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাদের বাবা মা।
সেই থেকেই তারা কলিজার বন্ধু।

উনাদের দেখে ভাবলাম হয়তো আম্মু আব্বু এমনিতেই নিমন্ত্রণ করেছেন।

কিন্তু তখনই আমার ভুল ভাঙে যখন আব্বু এসে আমাকে বললেন,

অনামিকা আজ তোর বিয়ে।
এবং তা উৎসর সাথে।

উৎসর বাবা মা এই শাড়ী গহনা নিয়ে এসেছেন।

যা এগুলো পরে নে।

-আব্বু!এসব কি বলছো তুমি?

-যা শুনেছিস ঠিক শুনেছিস।যা এগুলো পরে নে।

-তোমরা কি পুতুল পেয়েছো আমায়?যা বলবে তা ই মাথা পেতে নেবো?

আমি বলছি না গত কাল?আমি সায়ানকে ভালবাসি!
বিয়ে যদি করতেই হয় তবে আমি সায়ানকেই করবো।

নয়তো আর কাউকে না।

কিন্তু বাবা সেদিন আমার কোন কথা শোনেন নি।

গত রাতে আমি সায়ানের কথা বলার পরই তারা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেন উৎসের সাথে।

উৎসের পরিবার থেকে অনেক দিন আগেই আমার বাসায় প্রস্তাব দিয়েছিলো বিয়ের জন্য।

আব্বু তখন না করেছিলেন,আর বলেছিলেন লেখা পড়া শেষ হোক আগে অনামিকার।
তারপর ভেবে দেখা যাবে।

কিন্তু যখনই আমি পরিবারে সায়ানের কথা জানালাম।তখনই তারা এমন প্ল্যান করলেন।

আমি খুব করে না করেছি।
কিন্তু আমার বারণ শুনে বাবা স্ট্রোক করেন।
আর বাধ্য হয়ে সেদিন আমার উৎসকে বিয়ে করতে হয়।

আমি অনামিকা।
বাবা মায়ের এক মাত্র মেয়ে।
আমার ছোট্ট একটা ভাই আছে,ওর নাম অয়ন।
বাবা মায়ের অবাধ্য কোন দিন হইনি আমি ছোট বেলা থেকে।

তারা যা বলেছেন তাই শুনেছি।
তাই ভেবেছিলাম সায়ানের কথা বললে,তারা আমার এক মাত্র আবদার টা রাখবেন।

কিন্তু রাখলেন না।
এবারো তাদের কথা মত আমার ভালবাসাকে কোরবানি দিতে হলো।

সায়ানকে হারাতে হলো।

কিন্তু সায়ান আমাকে রিয়েল লাভ করে,

তাই তো বিয়ের কথা,আর আমার পরিস্থিতির কথা শোনা মাত্রই আমাকে বল্লো,

-আমি তোমাকে ভালবাসি।তোমার শরীরটাকে নয়।
তুমি ছয় মাস বা বছর পরও যদি আমার কাছে চলে আসো।তাহলেও আমি তোমাকে গ্রহণ করবো।

তাই আমি বাসর রাতেই উৎসকে সব বলে দেই।
আর বলি,আমি আপনার সাথে সংসার করতে পারবোনা।
আমি সায়ানের কাছে চলে যাবো।শুধু বাবা একটু সুস্থ হলেই।
আর আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন।
আমি পরিস্থিতির চাপে পড়ে আপনাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি।বাবা এমন অসুস্থ না হলে আমি সায়ানের সাথে পালিয়ে যেতাম।
তাই আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন।
স্বামীর অধিকার চাইতে আসবেন না একদম।নইলে একদম খুন করে ফেলবো।

আপনাকে না।নিজেকে।

কিন্তু উৎস আমার কথা গুলো শুনে যা বল্লো তা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।

-শোনো মিসেস অনু।
-এই অনু কে?
আমার নাম অনামিকা।আর আমি আপনার মিসেস নই।

-আমি তোমাকে আদর করে অনু ডাকবো।

ডিভোর্স চাওতো?ওকে।
আমি তোমায় ডিভোর্স দিবো।

তবে তিন মাস পর।

-তিন মাস পর মানে?

-হ্যাঁ।তিন মাস পর তোমাকে আমি ডিভোর্স দিবো।যদি তুমি চাও।

কিন্তু এই তিন মাস আমাকে সময় দিতে হবে।
আর আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি,এই তিন মাসে তুমি নিজেকেই বদলে ফেলবে।
আর আমাকে বুকে টেনে নেবে।

-হা হা হা!এত কনফিডেন্স?

-ইয়েস।

-তবে ওকে,আমিও চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করলাম।আমিও ঠিক তিন মাস পাড় হতেই ৯১ দিনের দিনই আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে সায়ানকে বুকে জড়িয়ে নেবো।

-মনে রাখবেন, মাত্র তিন মাস।

মাত্র তিন মাস।
১ম_পর্ব

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here