তোমার পিছুপিছু পর্ব -২৭+২৮ শেষ

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-২৭+২৮(শেষ)

পারভিন বেগম চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন….. জরজরি বেগম এক নাগাড়ে ওনার মাথায় পানি ঢেলেই যাচ্ছেন। পারভিন বেগমের মনে হচ্ছে…. উনার বুঝি শেষ সময় চলেই এলো….. নাহলে এটা কিভাবে সম্ভম!!!! যেই ছেলে আজও পর্যন্ত কখনো উনার অবাধ্য হলেন না,,,,,সেই ছেলে কি না এখন উনাকে না জানিয়ে এতো বড় ডিসিশন নিয়ে নিলো!!!!! সব ওই পাগলা মেয়েটার কারসাজি,,,,,, ,, ওই মেয়ে যাদুটোনা করেছে আমার এই আলাভোলা ছেলেকে…….. ওই মেয়ের পাল্লায় আমার ছেলেটা গেলো!!!! এনগেজমেন্ট!!!!! তাও আবার ওই মেয়ের সাথে!!!!
কার্ডও নাকি আবার বিলি করা হয়ে গেছে!!!!!! এতো কিছু ওনার নাকের নিচ দিয়ে ঘটে গেলো!!
কিন্তু উনিও দেখিয়ে ছাড়বেন কিভাবে হয় এই এংগেজমেন্ট!!!!!!!! ওরা বাপ ছেলে আর পাগলা মেয়ে যদি চলে পাতায় পাতায়!!!! তবে পারভিন বেগম চলেন শিড়ায় শিড়ায়…..
– “ওহ আল্লাহগো!!!! আল্লাহ….. রহমত করো….. আমার ছেলেটাকে রক্ষা করো” চাপা স্বরে আর্তনাদ করে উঠলেন পারভিন বেগম…..
পাশ থেকে জরজরি বেগম বলে উঠলেন….
-আম্মা…… অক্ষুনে ডাক্তার আইতাসে…… কতক্ষন সবুর করেন আম্মা….. এইতান কিচ্চু না…… কিচ্চু নাগো…… এবলাদা সব ঠিক হইয়া যাইবো….. দেইহেন চাইন…..
বেশি করে পানি ঢালতে লাগলেন জরজরি বেগম,,,,,,৷,,,

👇👇👇
তামান্না ওর নিজের ডেস্কের উপর অতি দামী ডিজাইনেবল গোল্ডেন এন্ড হোয়াইট এনগেজমেন্ট কার্ডটার দিকে আরো একবার তাকালো………অফিসের প্রত্যেকটা স্টাফ অতি উৎসাহ নিয়ে এই এনগেজমেন্ট নিয়ে গসিপ শুরু করেছে…… এটাই কি স্বাভাবিক না!!!!! আর যাই হোক বড় স্যারের এনগেজমেন্ট বলে কথা!!!!! তামান্না ম্লান হাসলো,,,, নিজের উপর………!!!!
তামান্নার হাতেও দুইটা সাদা এনভেলাপ……… একটা এনভেলোপ অফিসিয়াল আর একটা আনঅফিসিয়াল……….
তামান্না ম্যানেজারের রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালো,,,,,,, আচ্ছা এভাবে হুট করে চাকরি ছেড়ে দেওয়াতে ওকে আবার জরিমানা দিতে হবে নাতো!!!!!!

👇👇👇
বর্ন ওদের বাড়ির বিশাল বড় বারান্দায় বসে আছে। কোলের উপর একটা বই। খুব মনযোগ দিয়ে বইটা পড়ছে। এতো বেশি মনযোগী ছিল যে কখন ওর বাবা পাশে এসে বসেছে ওর কোনো খবর নেই। বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে ছেলের বই পড়া দেখার পর ছেলের নড়চড় না দেখে মিলন সাহেব নিজেই বলে উঠলেন,
-কিরে তুতুস, বইটা কি খুব মজার?
বর্ন চোখ উঠিয়ে বাবাকে দেখে সুন্দর করে হাসল।
-বাবার সাথে আজকে একটু আড্ডা দিবি?
কোলের উপরের বইটা বন্ধ করতে করতে বর্ন হাসি হাসি মুখ করেই বলল
-দিবো।
-তা, তোর যে বিয়ে ঠিক হয়ে গেলরে। কেমন লাগছে তোর?
– বিশেষ কোনো কিছু অনুভব হচ্ছে নাতো বাবা,,
-সেকি, কি বলিস!! আমার বিয়ের সময়তো আমি লজ্জায় কুটকুট হয়ে গিয়েছিলাম। তোর লজ্জা লাগছে না?
– লজ্জা কিভাবে পেতে হয় তাতো জানি না,,,
-হাহাহা,,কি যে দুর্ভাগ্য আমার,,ছেলের লজ্জা পাওয়া লাল মুখটা দেখা হবে না। আর তোর বউ যে দস্যি,, ওকে দেখেত লজ্জাও মনে হয় উলটো দৌড় দিবে।
এই বলেই মিলন সাহেব বেশ কিছুক্ষণ হাসলেন। তারপর হাসি থামিয়ে হঠাৎই গম্ভীর হয়ে বললেন
-বর্ন, বিয়ে খুবই মজার একটা বিষয় জানিস। এবং বিয়ের জন্য সবচেয়ে বেস্ট পার্টনার হলো তোমার একজন বন্ধু………. কিন্তু………. লাইফ পার্টনারের জন্য একজন বন্ধু বেস্ট চয়েজ হলেও……. বন্ধুত্বের খাতিরে কি কাউকে লাইফ পার্টনার হিসেবে নেওয়া উচিত!!!!!!……………….
তাছাড়াও কাউকে সাহায্য করার জন্য সারাজীবন বন্ধু হয়ে পাশে থাকা যায়, জীবনসঙ্গী হয়ে না। বিয়ে করে সঙ্গীকে সুখী রাখার জন্য আগে নিজের সুখী হওয়া প্রয়োজন জানিসতো।……………. বর্ন আমি বরাবরই তোর একজন ভালো বন্ধু ছিলাম, বাবা হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে আমি বন্ধু হয়ে জানতে চাই তোর আর নীলময়ীর এই এনগেজমেন্ট এবং সম্পর্কটা
করে তুই সুখি হবি কি?
-(নিশ্চুপ)
-তোর যদি কোনো পছন্দ থাকে, ভালোলাগা অথবা ভালোবাসাও থাকে তুই তাও এই বুড়ো বন্ধুটাকে বলতে পারিস।
বর্ন একমনে তাকিয়ে আছে সামনের নাড়কেল গাছটার দিকে।…… বেশকিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর চোখ ফিরালো বাবার দিকে ম্লান হেসে বলল,
-জানো বাবা,,,,,,,,,, আমার কাছে একটা কৌটা আছে। কৌটাটার নাম আমি দিয়েছি ‘স্মৃতি কৌটা’। ………….. আমার জীবনের বেশ কিছু সুন্দর অতুলনীয় স্মৃতি অথবা মুহূর্ত বলতে পারো,,আমি সেই কৌটায় রেখে দিয়েছি। যখন আমার সেই মুহূর্তগুলো নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করে তখন আমি কৌটার মুখ খুলে দেই আর মুহুর্তগুলো আমার সামনে ভেসে উঠে।
-তাই নাকি!!! তা কি কি মুহুর্ত আছে তোর সেই কৌটায়?
-শুনবে,,, অনেকগুলো মুহূর্ত আছে তার মধ্যে দুইটা আমার সবচেয়ে প্রিয়।
– কি কি?
– প্রথমটা হচ্ছে যখন আমি ছিলাম ক্লাস টু’তে। আমদের স্কুলে যেমন খুশি তেমন সাজ হল সবাইকে বলা হল সুপারহিরো সেজে আসতে। সবাই নিজের পচ্ছন্দমত সাজলো, কেউ স্পাইডারম্যান তো কেউ সুপারম্যান। সবার শেষে আমাকে উঠানো হল স্টেজে। আমি খুব সাধারন একটা সাদা পাঞ্জাবি পরে গিয়েছিলাম। আমাকে যখন জিগ্যেস করল তুমি কোন সুপারহিরো সেজেছো আমি খুব সহজভাবেই বললাম”আমার বাবা”। একসময় সবাই তালি বাজিয়ে উঠল, আর আমি দেখলাম অনুষ্ঠানে লেট হয়ে যাওয়ার ফলে একজন মানুষ কোণায় দাড়িয়ে আছে। উনি একই সাথে হাসছেন আর কাদছেন। জানো বাবা আমি একই সাথে কখন কাউকে হাসতে আর কাদতে দেখি নি।
মিলন সাহেবের চোখ ছলছল করে উঠল। তিনি ভাবেন, সবসময় ছেলেগুলো হয় মা পাগলা তার ছেলেটা বাপ পাগলা হল কি করে!! উনি ছলছল চোখেই জিগ্যেস করলেন,
-আর একটা প্রিয় মুহূর্ত?
এতক্ষণ কথাগুলো বাবার দিকে তাকিয়ে বললেও এবার বর্ন শুরু করল বাহিরে তাকিয়ে,
-ঝুম বৃষ্টিতে একটি মেয়ের সাথে ফুটো ছাতা মাথায় হেটে যাওয়া। একজন অপরিচিত ছেলের সাথে ছাতা শেয়ার করা এবং ফুটো ছাতা শেয়ার করার জন্য একই সাথে মেয়েটির চেহারায় রাগ ও লজ্জা ভেসে উঠল। একদিকে ঝুম বৃষ্টি অন্যদিকে ভিন্ন আভাময়ী এক মেয়ে। একই সাথে এতো সুন্দর দুটি দৃশ্য। অদ্ভুত এক মুহূর্ত বাবা, জানো।
কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বর্ন আবার শুরু করল,
-বাবা আমি জানি না ভালোবাসা কি!! কিভাবে হয়!! কিভাবে বাসতে হয়, কিন্তু কি বাবা জানো,, জটিল জটিল বইয়ের জটিল জটিল বিষয়গুলো নিয়ে মেয়েটির সাথে কথা বলতে ভালো লাগে, কি করব বাবা বলো আমি যে গল্প পারি না,,কিন্তু এইসব হাবিজাবির অজুহাতে মিথ্যা বলে মেয়েটিকে সামনে বসিয়ে রাখতে ভালো লাগে,,কিন্তু আমি আগে কখনো কিন্তু মিথ্যা বলিনি,,দুষ্টুমি করে মেয়েটিকে রাগিয়ে দিতে ভালো লাগে,,কিন্তু বাবা আমি তো কখনোই দুষ্টু ছিলাম না। মেয়েটির রাগারাগি শোনার জন্য মনযোগী শ্রোতা হতেও ভাল লাগে। কিন্তু…………….
বলেই বর্ন চুপ করে গেল। মিলন সাহেব অবাক হয়ে শুনলেন যে…………… বইয়ের বাহিরেও তার ছেলের একটি দুনিয়া আছে,,,,। কিছুক্ষণ পর তিনিই নিরবতা ভেঙে বললেন
– তোর জন্য এই অনুভূতিগুলোর কি নাম জানি না। কি ব্যাখ্যা এদের দিবি তাও জানি না। কিন্তু যদি আমাকে জিগ্যেস করিস তাহলে আমি একটা কথাই বলব my son,,congratulation you are in love.
এই কথা বলেই তিনি বর্নর কাধে হালকা চাপড় দিয়ে চলে গেলেন। বর্ন অবাক হয়েই মনে মনে বলল “তাই নাকি!!”

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-২৮

তামান্নার মাথা ভন ভন করছে…… চোখ জ্বালা করছে….. চোখের কোণা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে….বার বার মুছলেও থামছে না…. কি আশ্চর্য্য!!!!! এভাবে চোখের পানি পড়ার কি কারন!!!! তামান্না শুয়ে থেকে পাশ ফিরলো……..ভিতর ভিতর এতোটা খারাপ লাগার কি কথা ছিলো….. তামান্না জানে ও প্রচুর বাস্তববাদী মেয়ে…….বাস্তবতার কাছে আবেগ ওর কাছে কিছুই ছিলো না…… ও ১০০% নিশ্চিত ছিলো…… প্রয়োজনের বস্তু নিয়ে তামান্না কখনো অবহেলা করে না……. কিন্তু সব…… সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়ে গেলো….. সবকিছু……
তামান্না হাত ভাজ করে চোখের উপর রাখল……. আবার চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে শুরু করল….. কি জ্বালা!!!!
আচ্ছা….. কতদিন যাবৎ মা’র সাথে কথা হয় না….. একবার গ্রামে ফোন করা দরকার……
আচ্ছা…. গ্রামে চলে গেলে কেমন হয়!!!!!
শোয়া থেকে উঠে বসল তামান্না………।

👇👇👇
আজ ঠিক ২ সপ্তাহ পর বর্ন অফিসে এলো…… নিজের লেদার চেয়ারটায় বসে তাকিয়ে আছে কাচের গ্লাসের অপর পাশে তামান্নার ডেস্কের দিকে……. যেদিকটায় তাকিয়ে থেকে ও একসময় ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার করে দিতে পারতো……..
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বর্ন তাকালো নিজের ডেস্কের উপর…… দুইটা সাদা রং-এর খাম রাখা আছে…… একটা তামান্নার রেসিগনেশন লেটার…. অন্যটায় শুধু “মি. বর্ন” লিখা….. আর কিছুই না!!!!
রেসিগনেশন লেটারটা কিছুক্ষন আগে এসে ম্যানেজার সাহেব দিয়ে গেলেও…… অন্য চিঠিটা আগেই এখানে রাখা ছিলো…..বর্ন রেসিগনেশন লেটার বাদে অপর চিঠিটা পকেটে ভরলো….. এবং সাথে সাথে উঠে দাড়ালো……

👇👇👇
নীলময়ী বসে আছে নিজের বিছানায়….. কোমড় পর্যন্ত ব্লাংকেট টেনে বসে আছে…. চুলগুলো এলোমেলো অবস্থায় চোখে মুখে পড়ে আছে… ও মাথা নিচু করে হাতের রুবিক্স কিউবটা মিলানোর চেষ্টা করছে…….
বর্ন ওর বিছানার সামনে রাখা সিংগেল সোফায় বসে একনাগাড়ে পা নাচিয়ে যাচ্ছে……
অনেক….. অনেকক্ষন চুপ থাকার পর বর্ন শুরু করল…….
-নীলময়ী.……
-হুম…….
-আমি……. আমি……. আমি সবসময় আপনার পাশে থাকবো……
-হুম….
-আমি কখনো আপনাকে অবহেলা করবো না…. কোন প্রকার কষ্ট দিবো না.……….
-হুম……
-এবং নীলময়ী..…. আমি আপনাকে বিয়ে করবো…..অবশ্যই বিয়ে করবো…..
-আচ্ছা……..
-আমি থাকবো… দেখবেন….. আমি ঠিক আপনার সুপারম্যান হয়ে আপনার সামনে ঢাল হয়ে থাকবো…….
-আচ্ছা……..
বর্ন একবার ঢোক গিলল…. তারপর মাথা নিচু করে বলল,,,,
-কিন্তু নীলময়ী……আমি…. আমি কখনো আপনাকে…………. ভালোবাসতে পারবো না………..কিন্তু……
-……..…
-কিন্তু আমি আপনাকে খুব খুব সুখে রাখবো…… ওয়াদা করছি………
-কেনো……
বর্ন মাথা তুলে নীলময়ীর দিকে তাকালো…… নীলময়ী ওর দিকেই তাকিয়ে……. চোখে মুখে কাঠিন্য নেই….. কিন্তু………..!!!!
-কেনো আপনি আমাকে সুখে রাখতে চাইছেন!!!!! যদি আপনি আমাকে ভালোই না বাসেন!?……
-কারন আপনি আমার অতি প্রিয় একজন ব্যাক্তি….. যাকে আমি কখনো কষ্ট দিতে চাই না……
-আর আমাকে বিয়ে করলেই কি আমি কষ্ট মুক্ত হয়ে যাবো!!???
-………………..
-বর্ন…… আপনি কি জানেন মানুষ তার জীবনের প্রথম ভালোবাসা কখনো ভুলতে পারে না…….তাই তো আমি আজও তাকে ভুলতে পারিনি…… হাজার হাজার চেষ্টার পরও,,,, আমি তাকে ভুলতে পারি নি…… আজও রাতে ঘুমাবার আগে আমার তার কথা মনে পড়ে……. আপনি জানেন বর্ন…… আমার সুইসাইডাল হওয়ার পিছনে “ও”-ই ছিলো মূল কারন……. ওর কাছ থেকে পাওয়া অবহেলাটাই আমার জন্য যথেষ্ট ছিলো সুইসাইড করার মত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য….. তারপরও…… আজও…. কেনো আজও ওর কথা মনে পড়লে বুকের ভিতর এভাবে চিনচিন ব্যাথা করে বলতে পারেন!!!!!
-নীলময়ী….. আমি…………..
-বর্ন,,,,,, প্রথম ভালোবাসার টান খুব শক্ত বুঝলেন….. কারন প্রথম ভালোবাসার মানুষটাই আমাদের প্রথম নতুন কিছু অনূভূতির সাথে পরিচয় করায়…… যা আমরা আগে কখনো অনুভব করি নি….. তাই প্রথম ভালোবাসাটা এতোটা সুন্দর আবার অসুন্দরও……… আর ভুলে থাকার বোঝা খুব ক্লান্তিকর তা জানেন………… এবং আমি চাই না….. আমার প্রথম প্রিয় একজন বন্ধু এই বোঝ বইতে বইতে আমার মত ক্লান্ত হয়ে পড়ুক…… অবশ্যই আমি তা চাই না………..
-আমি….. আমি……. আমি কিচ্ছু জানি না….. সত্যি আমি কিচ্ছু জানি না…..
বর্ন দুই হাতে মাথা চেপে ধরল…….
-বর্ন আপনি যদি এক্ষনি এখান থেকে না যান….. তবে আমি আপনার বুকের ঠিক এইখানটায় ছুড়ি ধরবো…. তারপর বলবো…” বল……. দেহো দিবি নাকি মন দিবি….. বল”
বর্ন তাকালো নীলময়ীর দিকে….. চোখে মুখে দুষ্ট হাসির ঝলক……….
-কিন্তু!!!!
-দেখুন….. আমি কিন্তু পরে আপনাকে দড়ি দিয়ে বেধে রেখে দিবো…. পরে কিন্তু আবার কান্নাকাটি করতে পারবেন না……..
বর্ন উঠে দাড়ালো…..দরজার কাছে যেয়ে ঘুরে তাকালো নীলময়ীর দিকে
-ধন্যবাদ নীলময়ী……
-হেই…. নো সরি এন্ড নো থ্যাংক ইউ…. ইন ফ্রেন্ডশিপ…..
ঝারি মারার সুরে কথাটা বলেই নীলময়ী ফিক করে হেসে দিলো।

👇👇👇
বর্ন গাড়িতে উঠেই সেলিম মিয়াকে বলল….
-ঢাকা শহরে কোথায় সাদা ধবধবে শাপলা ফুল পাওয়া যায়!!!! গাড়ি নিয়ে ওখানে চলুন……
গাড়ি চলতে শুরু করলে…….. বর্নপকেট থেকে তামান্নার দেওয়া চিঠিটা বের করল। সাদা কাগজে গোল গোল হাতের লিখা………

“বর্ন সাহেব,
কেমন আছেন আপনি? অবশ্যই ভালো…… হুম ভালো থাকারই কথা তাই না!!!…. বর্ন সাহেব আমি আজ আপনাকে কিছু কঠিন কথা বলতে চাই..….. যেই কথাগুলো আমি সরাসরি কখনোই আপনাকে বলতে পারতাম না…….কিন্তু বলা খুবই প্রয়োজনীয় ছিলো…….
আমি হচ্ছি নিতান্তই একজন গ্রামের মেয়ে..….. আমার বাবা ছিলেন অতি কর্মঠ, বলশালী, শক্তসমর্থ একজন মানুষ…… গাম্ভীর্য্যই ছিলো ওনার চরিত্র……..তাই আমি সবসময় ধরেই এসেছি যে পুরুষ মানুষ হতে হবে এমন গম্ভীর, দাপটে, বলশালী। কোন প্রকার হেবলা, ক্যাবলা, ভ্যাবলা ছেলেদের প্রতি ছিলো আমার ভয়ংকর রকম এলার্জী…. অর্থাৎ এমনটাইপ ছেলে দেখলেই আমার রাগ উঠে যেত……
কিন্তু সেদিন ঝুম বৃষ্টিতে নীলক্ষেতের বইয়ের গলির মাঝে সাদা শার্ট সাদা প্যান্ট পড়নে এক হেবলা ছেলে দেখলাম…… দেখে মনে হলো…. আচ্ছা উনি কি কোন রাজ্যের রাজপুত্র…. ভুল করে এখানে চলে এলেন….!!!!! কিন্তু তারপরও কেনো জানি এই হেবলা ক্যাবলা ভ্যাবলা ছেলেটাকে আমার মনে ধরে গেলো….. কিন্তু আবেগের কোন যায়গা নেই আমার জীবনে…. খুব কঠিনভাবে নিজেকে বুঝ দিতে লাগলাম.….এইসবের পাল্লায় পড়া যাবে না….. কিন্তু আমি যতই না করি মন যেন ততোই আপনার কাছে ছুটে……. মন এতোটাই জোরে ছুটে গেলো যে একসময় হাল ছেড়ে দিলাম…. আবেগের কাছে আমি পরাজিত হয়ে গেলাম…….. কিন্তু!!!!
ওইযে বলে না বামুন হয়ে চাঁদে হাত দিতে নেই….. কিন্তু আমিতো দিয়ে দিয়েছিলাম… পরিনাম হলো ভয়াবহ….!!!! মন ভাঙার এতো কেনো কষ্ট হয় বলতে পারেন!!!!
বর্ন সাহেব আপনার কি মনে আছে,,,,, আমি একবার আপনাকে একটা স্বপ্নের কথা বলেছিলাম,,,,আজ আমি আপনাকে স্বপ্নটা শুনাতে চাই………..আমি দেখলাম কি আমি আর আপনি নৌকায় চড়ে একটা ঝিলের মাঝে ঘুরছি….. আপনার হাতে বৈইঠা…. আর আমার হাত ভর্তি সাদা শাপলাফুল….. হঠাৎ মেঘ করতে শুরু করল,,,,আপনি আমায় বললেন “মিস তামান্না বৃষ্টি নামবে বোধহয়……. এই বৃষ্টিতে আমি আপনার সাথে এই ঝিলে চিৎ সাতার দিতে চাই” ….. তখন আমি মানা করলাম….. কিন্তু আমার মানা করার পরও আপনি ঝুপ করে ঝিলে নেমে গেলেন…… আমার কলিজা ধ্বক করে উঠল…… আমিও নামলাম…. কিন্তু কোথাও আপনাকে খুজে পাই না….. আমি বার বার ডুব দিয়ে পানির নিচে দেখছি আপনি কোথাও নেই…… আমার ভয় করতে লাগল,,,,আপনাকে কি তবে হারিয়ে ফেললাম………
স্বপ্নটাকে আমি খুব সুন্দর বলেছিলাম,,,,, কারন জানেন!!!!! কারন এই স্বপ্নটা আমায় চরম সত্যটা বুঝিয়ে দিলো…. যে আপনি কখনোই আমার হতে পারবেন না……………………..
আমি এই চাকরিটা শুরু করার আগে আপনার বাবাকে নিশ্চিত করেছিলাম যে আমি অবশ্যই প্রোফেশনালী কাজ করবো……. কিন্তু আমি আমার কথা রাখতে পারিনি….. তাই নিজেই নিজের যায়গা থেকে সড়ে এলাম,,,আর হয়তো কখনো দেখা হবে না….. যদি কখনো সখনো দেখা হয়েও যায়….. আপনি কি আমায় “মিস তামান্না” বলে ডাক দিবেন?? নাকি মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবেন বলুন তো!!!!!

মিস তামান্না

চিঠিটা ভাজ করে বর্ন আবার পকেটে ভরল…… মুখ ঘুরিয়ে রাস্তার দিকে তাকালো……সবকিছু এমন ঝাপসা লাগছে কেনো!!!!

👇👇👇
তামান্না বসে আছে ওদের ঘরের বারান্দায়….. সন্ধ্যা হয়েছে…… উঠানের আশেপাশের বাকি ঘর গুলোতে সন্ধ্যার আলো জ্বলছে….. ওর মা আর ছোট বোন একটু বাহিরে গেছে…… ওদের ঘর অন্ধকার….. তামান্না উঠি উঠি করেও বসে আছে…… এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে…….. মাঝে মাঝে আকাশ ডাকছে….. ঝুম বৃষ্টি নামবে বোধহয় আজ…….. হঠাৎ ওদের উঠানে এসে থামলো এক কালো প্রাইভেট কার….. তামান্না এই গাড়িটা খুব ভালো করে চিনে….…. ও সাথে সাথে বসা থেকে উঠে দাড়ালো……
গাড়ির ভিতর থেকে বর্ন নেমে দাড়ালো….. ওর হাত ভর্তি সাদা শাপলাফুল……. বর্ন ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে দাড়ালো ঠিক তামান্নার এক হাত দূরে…….. এক হাটু গেড়ে বসল তামান্নার সামনে…… তামান্না বড় বড় চোখ করে বর্ন কার্যক্রম দেখছে…….
বর্ন বসা থেকেই ফুলগুলো এগিয়ে ধরল তামান্নার সামনে…
-মিস তামান্না আমি আজীবন আপনার সাথে নৌকায় চড়ে শাপলা ফুল তুলতে চাই….. ঝুম বৃষ্টিতে একসাথে ভিজতে চাই…. পুকুরে চিৎ সাতার দিতে চাই……… কিন্তু আমিতো সাতার পারি না……. আপনি কি আমায় পুকুরে চিৎ সাতার দেওয়া শিখাবেন!!!! আজই………..
তামান্না দুইহাতে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে কেদে চলছে…… বর্ন ঠায় নিজের যায়গায়……. কিছুক্ষণ পর মুখ থেকে হাত সড়ালো তামান্না…. বর্ন মুগ্ধ হয়ে তামান্নার মুখের কান্নামিশ্রিত হাসি দেখছে………কি অপূর্ব!!!!!
হঠাৎ মেঘ গর্জন করল…… ঝুম বৃষ্টির নামবে বোধহয়।

(সমাপ্ত)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here