তোমার পিছুপিছু পর্ব -১৯+২০+২১

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-১৯+২০+২১

তামান্না বর্নর অফিস রুম থেকে বের হয়ে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে হাটা দিলো…. তামান্না বুঝে পায় একটা মানুষ এতো বই বই কিভাবে করতে পারে!!!! মাথার ভিতর যেনো রাজ্যের তত্ত্ব নিয়ে ঘুরে,,,,আর ঘন্টার পর ঘন্টা ওর সাথেই বা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার কারন কি!!! তামান্না বুঝে পায় না,,,,, আগেতো প্রচুর মেজাজ খারাপ হত,,,,ইচ্ছা হতো একটা বড় হাতুড়ি দিয়ে ওনার মাথাটা ফাটিয়ে দিতে,,,,কিন্তু ইদানীংকাল দেখা যাচ্ছে, তামান্নার মেজাজ খারাপ হওয়া উধাও হয়ে গেছে,,,,,,আশ্চর্য্যতো!!!!! তামান্না বরং আজকাল খুব আগ্রহ নিয়ে ওনার কথাবার্তা শুনে,,,,কেনো!!! তামান্না কি এই সময়গুলো উপভোগ করতে শুরু করেছে!!!
মাথা ঝাকিয়ে তামান্না এসব চিন্তাভাবনা উড়িয়ে দিলো…… এরকম অর্থহীন চিন্তাভাবনার কোন মানে হয় না,,,,,।

নীলময়ী ট্রেডমিলের স্টপ বাটনে প্রেস করল,,,, সাথে সাথে ট্রেডমিলের স্পিড কমে গিয়ে একদম থেমে গেলো…. রুমের লাউড মিউজিকও অফ করে,,,,ফ্লোর টু সিলিং কাচের দেয়ালের সামনে দাড়ালো…. খুব হালকা বৃষ্টি পড়ছে…. নীলময়ীর হঠাৎ কি মনে হল,,,,ও দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে হালকা ফ্রেশ হলো…. তারপর মেইন গেটের উদ্দেশ্যে হাটতে লাগল…. মেইন গেট দিয়ে বাহিরে বের হওয়ার সময় দারোয়ানকে হাতের ইশারায় মুখ বন্ধ রাখতে বলে দিলো… গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে ডানে একবার তাকালো বায়ে একবার তাকালো…. তারপর ডানে ঘুরে হাটতে লাগল।

তামান্না অফিসের কাচের মেইন ডোর ঠেলে বাহিরে এসে দাড়ালো…. মেজাজ খারাপ হচ্ছে ওর…. কি মুসিবত!!! অফিস শেষে ও প্রতিদিন নিউ মার্কেট যায়,,,নতুন বাসার উদ্দেশ্যে টুকটাক জিনিসপত্র কিনতে… এভাবে বৃষ্টিতে কি কেনাকাটা করা সম্ভব নাকি!!!! তামান্না ব্যাগ থেকে ছাতা বের করল….
-মিস তামান্না,,,
হঠাৎ পিছন থেকে কেউ ডেকে উঠায় তামান্না ভয়ে লাফিয়ে উঠল। পিছনে ঘুরে দেখে বর্ন দাঁড়িয়ে….
-জ্বী স্যার….
-ইয়ে মানে,,, মিস তামান্না আমাকে একটু হেল্প করতে পারবেন….
-জ্বী স্যার বলুন……
এখন যদি কফি বানানোর কথা বলিস রে ক্যাবলা….. গরম কফি আমি তোর প্যান্টের ভিতর ঢেলে দিবো…. মনে মনে কটমট করলেও,,, চেহারায় একটা ভাবলেশহীন ভাব ধরে রাখল তামান্না……
বর্ন একটু আনইজি ভাবে ঘাড়ের পিছন চুলকাতে লাগল…..
-মানে মিস তামান্না….আমাকে একটু সামনের ওই স্টোরটা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবেন প্লিজ… একচুয়েলি আমার কাছে তো ছাতা নেই…… তাই আর কি….
তামান্না কয়েকসেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বলল,
-চলুন স্যার….
বর্নর মুখ এলইডি বাল্বের মত উজ্জ্বল হয়ে উঠল,,,
-চলুন…..
তামান্না দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন করল না…. বসের সাথে তর্কাতর্কি করা একটা নিশ্চিত বোকামী।
স্টোরের সামনে যেয়ে তামান্না বলল,
-স্যার এখানেই তো!?
-জ্বী…. ধন্যবাদ মিস তামান্না….
-অবশ্যই স্যার….. আমি তাহলে আসি….
বলেই তামান্না ঘুরে হাটতে শুরু করল। যতক্ষন তামান্নাকে দেখা যায় বর্ন ঠিক ততক্ষন তামান্নার গমন পথের দিকে চেয়ে রইল….. তামান্না মোড় ঘুরে উধাও হয়ে যাওয়ার পরও বর্ন চেয়ে রইল…. তারপর নিজেও উল্টো ঘুরে হাটতে শুরু করল। আজকে কেনো জানি হেটে হেটে যেতে মন চাইছে।

বৃষ্টি খুব হালকা হলেও বর্ন অনেকটা ভিজে গেলো…. চুল বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে,,,গায়ের ব্লেজারটাও ভিজে আছে….. এখন অবশ্য ওর শীত করতে শুরু করল,,,,রাস্তার মোড় ঘুরতেই বর্নর হাটার গতি কমে এলো…… ফুটপাত ধরে প্রায় কয়েকটা ৮/৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়ে সিরিয়ালে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে…. এবং এদের একদম শেষমাথায় বসে আছে নীলময়ী…. সেও মনের সুখে আইসক্রিম খেয়ে যাচ্ছে….. বর্ন এগিয়ে গেলো…. নীলময়ীর পিছনে দাঁড়িয়ে হালকা করে কাশল…. নীলময়ী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েই বলল,,,
-আ-আ-আমি জানতাম আপনার সাথে আজ দেখা হবেই হবেই….
অতি শীতে ওর দাতে দাতে ঠোকাঠুকি শুরু হয়েছে…. বর্ন কিছু না বলে শুধু হাসল
-খা-খা-খাবেন? মজা আছে….
বর্ন একটা রঙ বেরংগের গোলা আইসক্রিম নিয়ে নীলময়ীর পাশে বসে পড়ল,,,
-হুম,,,এই দেখুন ঠিক এভাবে টান দিন,,,হ্যা হ্যা,,,দিন,,,
বলেই নীলময়ী সুড়ুত করে আইসক্রিম চুষতে লাগল….
বর্ন নীলময়ীর মত আইসক্রিমে টান দিতে গেয়ে,,,বিষম খেয়ে কাশতে লাগল,,
-আহহহা…. আপনিতো দেখি একটা ড্যামনার ড্যামনা,,,আইসক্রিম খেতে পারেন না,,,,ডিগবাজিও খেতে পারেন না……
বর্ন একটু লজ্জা পেয়ে আবার আইসক্রিমে সুড়ুত করে টান দিলো…..
-এইতো,,,হ্যা ঠিক এভাবেই,,,,সাব্বাস………… শুনুন ছেলে…. আমাকে বিয়ে করতে হলে কিন্তু সব পারতে হবে….. লাটিম খেলা পারতে হবে,,,ঘুড়ি ওড়ানো পারতে হবে,,,,গোল্লাছুট, দাড়িয়াব……….. কিন্তু ধ্যাত!!!! আপনি তো ডিগবাজিও খেতে পারেন না!!!!
বর্ন বেশকিছুক্ষন চুপ থেকে আস্তে আস্তে বলল
-আমি খেয়েছিলাম…. একবার……
-কি!?
-ডিগবাজি…. ক্লাস টু’তে থাকতে বন্ধুদের দেখে বাসায় এসে খেয়েছিলাম….. বিছানাটা একটু উচা ছিলো…. উল্টো হয়ে কোণাকুণি এংগেলে না যেয়ে ১৮০° এংগেলে ঘুরে গেলাম…. উপুর হয়ে বিছানা থেকে পড়ে বা হাতের কুনুইয়ে ব্যাথা পেয়ে ফ্র‍্যাকচার করে ফেললাম…. জ্বর টর বাধিয়ে একাকার অবস্থা…… সামান্য একটা চেষ্টা ভয়ংকর ফলাফল হয়ে গেলো…. তাই আর কি….
বর্ন আড়চোখে নীলময়ীর দিকে তাকালো….
নীলময়ীর খানিকটা সময় লাগল,,,,,কথাগুলো হজম করতে…. যখন হজম হলো…. তখন ওর হাসি যেনো আর ধরে না….. ওর দেখাদেখি পাশে বসা পিচ্ছি ছেলেমেয়েগুলোও হাসতে লাগল….. এমনকি বর্ন নিজেও হাসতে লাগল,,,,।

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-২০

১টা বেজে ১৫ মিনিট,,,, তামান্না ক্যান্টিন থেকে লাঞ্চ সেড়ে এসে নিজের ডেস্কে বসল। অভ্যাসবশত কাচের গ্লাসের অপর পাশে বর্নর রুমে তাকালো….. কিন্তু চেয়ারটা ফাকা…. তামান্না কিছুক্ষন খালি চেয়ারটার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের কম্পিউটার অন করল…..
তামান্না একজন সাধারণ এমপ্লয়ি মাত্র…. তার বসের অফিসে আসতে মন চাইলে আসবে, না আসতে মন চাইলে আসবে না….. এটা নিয়ে তামান্নার প্রশ্ন করার কোন অধিকার নেই….
কিন্তু আজ মনে হচ্ছে অবশ্যই স্যারের ব্যাপারে একটু খোজ নিতে হবে…. বেশকয়েকটা মিটিং পেনডিং-এ আছে….. স্যারের সাথে কথাবলে টাইম ফিক্সড করা দরকার।

তামান্না খুব মনোযোগ সহকারে হাতের কাজগুলো শেষ করল,,, ঘড়িতে বাজে ৫টা ২ মিনিট….. কম্পিউটার অফ করে টেবিলের ফাইলগুলো গুছিয়ে তামান্না ম্যানেজার মো. সলিমুল্লাহর কেবিনে নক করল,,,ভিতর থেকে সাড়া পেতেই প্রবেশ করল,,,,
-বলুন মিস সুলতানা…..
-স্যার,,,,, আসলে কিছু আর্জেন্ট মিটিং সিডিউল করা প্রয়োজন ছিল,,কিন্তু স্যারতো আজও এলেন না……
-হুম…আপনি নাহয় কাল পর্যন্ত ওয়েট করুন…. কালও যদি স্যার না আসেন আমরা কিছু ব্যবস্থা নিবো…..
-জ্বী আচ্ছা স্যার।
তামান্না ফিরেই যাচ্ছিল,,,কিন্তু মো. সলিমুল্লাহ আবার ডেকে উঠলেন,
-মিস সুলতানা,,, আপনি বরং এককাজ করুন,,,কাল অফিসে আসার আগে সরাসরি স্যারের বাড়ি যেয়ে একবার স্যারের সাথে কথা বলে আসুন….
-জ্বী,,,,মানে স্যার…….. আপনি নাহয় আমাকে স্যারের ফোন নাম্বারটা দিন….. আমি ফোনে যোগাযোগ করে নিবো….
মুখ কাচুমাচু করে তামান্না বলল,,,,,
-স্যারের পারসোনাল ফোন নাম্বার দেওয়া নেই…. অফিসে,,,। আপনি বাসায়ই চলে যান…. সব কিছু একবারে ফিক্সড করে নিবেন…..
বর্নর বাড়ির এড্রেস নিয়ে তামান্না ম্যানেজারের রুম থেকে বের হলো….. কিছুক্ষন এনড্রেসটার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল…

👇👇👇
তামান্না বর্নর বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো ঠিক ৮টা ৪৫ মিনিট…. এতো সকালে আসা কি ঠিক হলো…. সবাই যদি ঘুমে থাকে…. বড়লোক মানুষরা নিশ্চয়ই এতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে না…. তাদের বেড টি-ও বোধহয় এখনো পৌছে নি….. তামান্না এখন ভিতরে গেলে কি ওনাদের ঘুমের ডিস্টার্ব হবে….তামান্না বাড়ির আশেপাশে তাকালো….. কোন চায়ের দোকানও নেই….. সময় কাটানো প্রয়োজন…..

👇👇👇
পারভিন বেগমের মেজাজ সপ্তমে চড়ে আছে,….সকাল সকাল ড্রাইভার সালাম মিয়াকে পাঠিয়েছিলেন মাছের আড়তে…. টাটকা দেখে কিছু মাছ আনতে…. দুপুরের পরে মাছ বাশি হয়ে যায়…. কিন্তু এই লোকের বুদ্ধিতে পারভিন বেগম রীতিমত ক্রুদ্ধ….. এত্ত বড় শোল মাছ এই লোক কোন আক্কেলে আনলো…… পারভিন বেগমের সামনে সালাম মিয়া মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে….
-জবাব দাও না কেনো তুমি!!!! তোমাকে ইয়া বিশাল মাছ আনতে কে বলছে…..
-………………………………
-তুমি জানো না…. জরজরি বাড়ি গেছে….. তাহলে এতো নবাবগীরি দেখানো কেনো….. কে কাটবে এখন এতো বড় মাছ!!!
-………………………………..
-জবাব দাও না কেনো!!!! এই হাবার বাচ্চা হাবা….তুমি কি আমাকে কাজের বেটি মনে করো…যে এটাকে কেটে ধুয়ে রেধে খাওয়াবো তোমাদের… কি মনে করে আনলে তুমি এটা!!!
পেচার মত মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকবে না খবরদার….
না,,না… তা কাটতে পারবি না… খেয়ে খেয়ে শুধু ডুমসি হয়ে যাচ্ছিস….. হাতির মত গতর নিয়ে কি আর কাম করতে পারবি নাকি….. মনে মনে সালাম মিয়া এসব কথা বলে কয়েকটা গালি দিলেও….. মুখ খুলল খুব ভয়ে ভয়ে
-ম্যাডাম…..আমি আসলে…. ছোট স্যারের জন্য আনসিলাম….. ওনার জ্বর… তাই ভাবলাম বড় মাছ……….
-একদম চুপ…. তোমাকে কে বলছে বর্নর দেখাশুনার দায়ভার নিতে….. বর্নর বাপ মা কি মরে গেছে নাকি!!!
-তওবা ম্যাডাম….. আমি আসোলে ওভাবে বলি নি…. আমি…………..
হঠাৎ ইন্টারকম বেজে উঠায়….. সালাম মিয়ার কথা কাটা পড়ল…… পারভিন বেগম ইন্টারকম রিসিভ করে কথা বলে এসে আবার জায়গামত বসিলেন।
-আর কক্ষনো যদি তোমাদের দেখেছি এমন বসগীরি দেখাতে খবর করে ছাড়বো বলে দিলাম।

👇👇👇
ডুপ্লেক্স বাড়িটার সিড়ি বেয়ে তামান্না যত উপরে উঠছে ওর বুকের ধুকপুকানি ততো বাড়ছে……. ইয়া আল্লাহ আর যাই করো…. চাকরি যেনো না যায় কোন কারনে… একটু দেখো আল্লাহ….. তামান্না উপরে উঠতে উঠতে হামকি ধামকির শব্দ শুনতে পেলো….. ও মাঝপথেই থেমে গেলো…. ও কি ফিরে যাবে….!!! ধ্যাত আজ আসাটাই ঠিক হয়নি….. ওই ক্যাবলার অফিস ক্যাবলার মিটিং,,, ক্যাবলাই বুঝত…… যার অফিস তার খবর নাই…. পাড়াপড়শির ঘুম নাই…. এমন একটা অবস্থা….. তামান্না দুইবার দুরুদ শরীফ পড়ে বুকে ফু দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল।

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-২১

(আমার গল্পগুলোতে পাঠক যেনো কিভাবে কিভাবে আগেভাগেই প্রেডিক্ট করে ফেলো…… ধ্যাত মজা লাগে না 😑😑)

তামান্না একটু গুটিসুটি মেরেই দাঁড়িয়ে আছে পারভিন বেগমের সামনে। পারভিন বেগমের তীক্ষ্ণ চাহনি দেখে তামান্নার আত্বা যাই যাই করছে…… পারভিন বেগম বেশকিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে,,এবার জিজ্ঞেস করলেন….
-তো মেয়ে তুমি আমার ছেলের অফিসে কাজ করো বুঝলাম….. কিন্তু এভাবে ফাইলের গাট্টি নিয়ে আমার বাড়িতে এসেছো কেনো!?
-ম্যাডাম আসলে স্যারের সাথে একটু কথা ছিলো,।
-অফিসে কি করো যে কথা নিয়ে বাড়ি আসতে হবে!?
তামান্না চুপ করে রইল…. এই মহিলাকে কিভাবে বুঝাবে অফিসের কথা নিয়ে বাড়ি আসার কারন!!!
-ছেলেটা আমার কি পরিমান জ্বরে ভুগছে তার খবর আছে কারো!!!! সব নষ্টের মূল ওর বাপ…… ওর বাপকে ধরবো আজ আমি…. ব্যবসা ব্যবসা করে মাথা খেয়ে ফেলল আমার ছেলেটার………
এসবই বিড়বিড় করতে লাগলেন পারভিন বেগম…..
তামান্না ঠায় দাঁড়িয়ে…. পা ব্যাথা করছে ওর…রাস্তায়ও বেশকিছুক্ষন দাঁড়িয়ে সময় কাটাতে হয়েছে…… কোথাও বসতে পারলে হত…. এই মহিলা যেই অভিযোগের ভান্ডার খুলে বসেছে,,, মনে হয় না তা এতো দ্রুত শেষ হবে…..
-তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে কেনো..?
পারভিন বেগমের হুংকারে তামান্নার কলিজা ব্যাঙের মত লাফিয়ে উঠল। সালাম মিয়াকে ধমকের পর পারভিন বেগম চোখ ঘুরালেন তামান্নার দিকে….
-এই মেয়ে তুমি মাছ কাটতে পারো…..?
তামান্নার মনে ক্ষীণ একটা সন্দেহ ছিল,,,এই মহিলা এমন কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে….
-জ্বী আমি?
-কেনো মেয়ে তুমি কি ঐশ্বরিয়া নাকি যে তোমাকে জিজ্ঞেস করা যাবে না!!!
-জ্বী ম্যাডাম,,,আমি পারি মাছ কাটতে……
-দেখোতো এই মাছটা কাটতে পারবে কিনা!?
তামান্না ফোস করে একটা শ্বাস ছাড়লো…. তামান্না বুঝে পায় না…. এই মা ছেলে ওকে পেয়েছেটা কি!!! কাজের বুয়া!!! ওকে দেখলেই ওনাদের কাজের অর্ডার দিতে মন চায়!!! তামান্নার মন চাইছে এই মহিলাকে কঠিন কিছু কথা বলে চুপ করিয়ে রাখতে… কিন্তু না! বসের মায়ের সাথে তর্কাতর্কি করে চাকরি খুয়ানোর মত বোকা মেয়ে তামান্না না…….
তামান্না হাতের ফাইলগুলো সিকিউরলি রেখে,,, ওড়নাটা গুছিয়ে নিতে লাগল।

👇👇👇
পারভিন বেগম তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন…. মেয়েটা কি সুন্দর করে এতো বড় মাছটা কায়দা করে কেটে নিচ্ছে…..। বিয়ের আগে কম বেশি মাছ কাটলেও…. বিয়ের পর এসব আর ধরতে হয়নি…..আর এই পুচকা একটা মেয়ে কিরকম ভাবে তড়তড়িয়ে মাছ কাটছে……
-তুমি এতো বড় মাছ কাটা কার কাছ থেকে শিখেছো…..
-……………… বাবার কাছ থেকে ম্যাডাম।
-তোমার বাবা?

তামান্নার বিরক্ত লাগছে,,,এত প্রশ্ন করে কেনো এই মহিলা…..
-ম্যাডাম আমি গ্রামের মেয়ে….. বাবা প্রতি হাটবার বাজারের সবচেয়ে বড় মাছটা নিয়ে বাড়ি আসতেন…. এবং আমাদের দুইবোনকে সামনে বসিয়ে রেখে মাছ কাটতেন……সেখান থেকেই শিখা…..
-ওহ… কি করেন তোমার বাবা?
-বাবা গত হয়েছেন আজ ৫বছর ম্যাডাম।
বলেই তামান্না কাটা মাছের টুকরোয় লবণ ছীটাতে লাগল….।

👇👇👇
তামান্না বর্নর রুমের সামনে দাড়িয়ে হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো,,,,, ১১টা বাজে….. মহিলা শুধু মাছ কাটিয়েই ক্ষান্ত হন নি…. ওকে আবার চা-ও বানাতে হয়েছে…. তামান্নার এখন সবকিছু ছেড়েছুড়ে বাসায় যেতে মন চাইছে। শরীর থেকে মাছ আর ঘামের বিচ্ছিরি গন্ধ বের হচ্ছে…..ইয়াক!
কিন্তু আজ মিটিং ফাইনাল না করলেই না।
তামান্না দুইবার নক করল রুমের দরজায়…. কোন সাড়াশব্দ সাড়াশব্দ না পেয়ে… হালকা একটু ভিতরে উকি দিলো….
বর্ন জানালার ধারে বই হাতে বসে… পড়নে বোতল গ্রীন কালারের একটা ফুল স্লিভ টি-শার্ট এবং স্পর্টস ট্রাউজার। মুখে একটা থার্মোমিটার….
বর্ন দরজার দিকেই চেয়ে ছিলো… তামান্নাকে দেখে খুব কস্ট করে হাসলো… যেনো মুখ থেকে থার্মোমিটার পড়ে না যায়….
-আসবো স্যার?
মাথা ঝাকালো বর্ন।
-স্যার কিছু ফাইল ছিলো,, কয়েকজন ক্লায়েন্ট মিটিং এরেঞ্জ করতে চাচ্ছেন…………………..
স্যার আপনি কি অনেক অসুস্থ?
মাথা নাড়ালো বর্ন।
পারভিন বেগন হন্তদন্ত হয়ে বর্নর রুমে প্রবেশ করলেন,,,, থার্মোমিটার চেক করল……
-খুব খারাপ লাগছে খোকন! এখনো ১০২° জ্বর….. হাতের বই টই ফেলতো… একটু রেস্ট নিয়ে নে নাহয়…. একটু গরম দুধ নিয়ে আসি…. খাবি?
-লাগবে না মা… এভাবেই ঠিক আছি…. ডাকবো তোমায় যদি কিছু লাগে……
পারভিন বেগম তামান্নার দিকে তাকালেন
-এই মেয়ে ছেলেটার জ্বর আমার। কম প্রেসার দিও…. কয়েকদিন বস না গেলে অফিস লাটে উঠে যাবে না!!
বলেই পারভিন বেগম চলে গেলেন….বর্ন খুব সাবলীলভাবে হাসলো…..
-কেমন আছেন মিস তামান্না?
-জ্বী স্যার ভালো।
-আমি ভালো নেই মিস তামান্না….
-জ্বী,,,দেখতে পারছি স্যার।

তামান্না আর কথা বাড়ালো না। ফাইলগুলো ব্যাগে রেখে দিলো…. বেচারার অসুস্থতার সময় এতো চাপ দেওয়ার কি দরকার। কিন্তু কিছু মিটিং ফাইনাল করলো। এবং বর্নর কম্পিউটার দিয়ে কিছু ই-মেইল চেক করল এবং রিপ্লাই দিলো। বেশকিছুক্ষন একনাগাড়ে কাজ করার পর তামান্না ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখল বর্ন ঘুমিয়ে। কম্বল গায়ে জড়ানো। তামান্না একটু এগিয়ে গেলো। ঘামছে বর্ন,,,জ্বর ছাড়ছে হয়ত। তামান্না একটু দ্বিধান্বিত হলেও বর্নর কপালে হাত রেখে জ্বরটা চেক করল। নাহ!! জ্বর এখনো ভালোই আছে। তামান্না আস্তে করে কম্বলটা একটু সড়িয়ে দিলো…. ঘুরে দাড়াতেই মনে হল ওড়নায় টান লাগছে। পিছনে তাকিয়ে দেখে,,,, বর্ন দিব্বি চেয়ে আছে,,,,আর হাত দিয়ে ওর ওড়না ধরে রেখেছে….
তামান্নার হাত পা কাপতে লাগল। কোনরকমে রাগী গলা করে বলল
-কি আশ্চর্য্য!!! ওড়না ধরে কেনো টানাটানি করছেন!?…. ছাড়ুন,,,, ছাড়ুন বলছি…. এটা কোনধরনের কাজকারবার!! কেনো……………….
তামান্না কথা শেষ করার আগেই বর্ন তামান্নার ওড়না ধরে হেচকা টান মারলো….. তাল সামলাতে না পেরে তামান্না সোজা যেয়ে পড়ল বর্ন উপর…..
-মিস তামান্না আপনি সবসময় এতো রাগী রাগী হয়ে থাকেন কেনো!! বলুন তো…. সবসময় বকাঝকা…..
তামান্না মোচড়া মুচড়ি করতে লাগল…বর্ন শক্ত করে জড়িয়ে ধরল…
-আপনি জানেন না অসুস্থ মানুষকে সেবা করতে হয়… করুন তো… আমায় একটু সেবা করুন….
-ছাড়ুন
অস্ফুট স্বরে তামান্নার জবাব।
-মিস তামান্না আপনার শরীর থেকে লেবু পাতার ঘ্রান আসছে…… ওয়াই? বাট স্মেলস নাইস
বর্ন তামান্নার ঘাড়ে মুখ ডুবালো….
তামান্না এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে গেলো…. বড় বড় পা ফেলে সোজা রুমের বাহিরে। কত্ত বড় অসভ্য এই লোক এখন জড়াজড়িতে নেমে গেছে…. এই লোককে একটা কঠিন শিক্ষা দিতে হবে…. অনেক বড় কঠিন শিক্ষা।

(আসছে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here