মায়ার বাঁধন পর্ব -২১+২২

#মায়ার_বাঁধন
২১.
তুরানের ক্রোধিত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শৈথিল্য নামে নীরার অবয়ব অবলোকন করে। দূরত্ব প্রগাঢ় তবু থেমে নেই দু’জনে। দৃষ্টি ঝাপসা হলেও মনের দৃষ্টি যেন একেবারে স্বচ্ছ। এত দূর থেকেও তুরান স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে নীরার বক্ষ যন্ত্রণা। নীরার প্রজ্জ্বলিত অক্ষিযুগল কল্পনা করে বক্ষপটে নাড়া দিতেই পুনরায় ক্রোধে শক্ত হয় তুরানের চিবুক। সহসা হিং’স্র বা’ঘের ন্যায় আ’ক্র’মণ করে বসে জেরিকে। ঠাটিয়ে এক চ’ড় বসায় জেরির মুখবিবরে। মুহুর্তেই গমগমে পরিবেশে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। কারো মুখে ‘রা’ শব্দট নেই। ভ’য়ে সিটিয়ে সব। জেরি টলমলে, স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে। সেই চোখে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তুরানের গর্জন,

-“আর কখনো যদি তোর এই বেহায়া মুখ নিয়ে আমার সামনে আসিস তবে তার ফল খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি। আশা করি আজকের দৃশ্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে তোর স্মৃতিতে।”

স্থিতিশীল পরিবেশকে এলোমেলো করে দিয়ে ঝড়ের বেগে স্থান ত্যাগ করল তুরান। তার প্রস্থানে সম্বিৎ ফিরল সকলের। মুহুর্তেই কানাঘুষা, হাসিঠাট্টা শুরু হয়ে গেল জেরিকে নিয়ে। জেরি সইতে পারল না আর। তার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। উগ্র কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠল। বলল,

-“স্টপ ইট! খবর্দার বলছি কেউ আর একটা টু শব্দও করবে না। নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

জেরির হুমকিতে কিছুটা শান্ত হলো পরিবেশ। জেরির উগ্র আচরণ সম্পর্কে সকলেই কম বেশি অবগত। তার ওপর তার বাবা পুলিশ কমিশনার। এজন্য তাকে অনেকটা সমিহ করে চলে স্টুডেন্টরা। পরিস্থিতি আয়ত্তে আসলে আর এক মুহূর্ত সময় ব্যয় করল না জেরি। গটগট পায়ে এগিয়ে প্রস্থান করল। তার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে খালি হতে শুরু করল ক্যাম্পাস।

অন্তঃকরণের তীব্র সুখানুভূতিতে এতটাই বিমুগ্ধ ছিল নীরা যে তার আশেপাশের সকল কিছু ভুলতে বসেছে নিমেষেই। আনন্দে আটখানা হয়ে আহ্লাদী লোচনে ছুটে বেড়িয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। তার চলে যাওয়াতে চরম বিস্মিত হয় তিন বান্ধবী। সীমা অবাক কন্ঠে বলল,

-“ও এভাবে চলে গেল কেন?”

রুহিও হতবাক। সে বলল,
-“কী জানি।”

অতশী মেয়েটা সবে সবে একটু আনন্দের মুখ দেখেছিল কিন্তু নীরার কর্মকাণ্ড তাকেও নাড়িয়ে দিয়েছে ভীষণ। কেন জানি তার সবকিছু ঠিকঠাক লাগছে না৷ কুচ তো গড়বড় হে!
—-

যথারীতি বাড়ির গাড়িতে করে বাড়ি ফিরে আসে নীরা। আজকেও তুরান অনুপস্থিত। “কী এত কাজ লোকটার?” এটাই ভেবে কুল-কিনারা হারায় নীরা। রোজ রোজ সন্ধ্যা নামিয়ে ঘরে ফেরে। এমন অনিয়ম কেউ করে? দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফ্রেশ হয়ে নেয় সে। অভ্যাস বসত শ্বাশুড়ির সঙ্গে গল্প গুজব করে নেয় কিছু সময়। ততক্ষণে তুরান হাজির। এসেই রোজকার নিয়মে হাঁক ছাড়তে ভুলেনি। “নীরা,নীরা” বলে চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে ফেলছে ক্রমাগত।

জাহানারা চৌধুরী মনে মনে হাসেন। ছেলে তার শুরুতে কতটা অমত করেছিল এই বিয়েতে তা ভেবেই তিনি মজা পান। আর এখন কীভাবে চোখে হারায় নীরাকে। আচ্ছা, ওদের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে তো? প্রশ্নটি মনের দরজায় কড়া নাড়লেও মুখ ফুটে জিজ্ঞেস করার পরিস্থিতি হয়ে ওঠে নি কখনো। ছেলে বা ছেলের বউয়ের কাছে এমন প্রশ্ন উপস্থাপন করাটা নেহাৎই অস্বস্তিকর বৈকি। তুরানের ডাকে শ্বাশুড়ি মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে ঘরের দিকে যায় নীরা। একটু উঁকিঝুঁকি দিয়ে বুঝতে পারে তুরান শাওয়ারে। বুক ভরে শ্বাস টেনে ভেতরে ঢুকে সে। ঝটপট তুরানের জন্য ট্রাউজার আর টি শার্ট বের করে বেডে রাখে। এটা এখন তার নিত্যদিনের কর্মের মধ্যে একটি। এই কাজটি করতে তুরানই তাকে আদেশ করেছে। বলেছে, “সর্বদা স্বামী সেবা করবে। পাশে পাশে থেকে আমার কখন কী প্রয়োজন – অপ্রয়োজন সবকিছুর খেয়াল রাখবে। মনে থাকে যেন।”
প্রতুত্তরে তখন নীরা মুখ ভেংচি কাটলেও কাজে তা পালন করে অক্ষরে অক্ষরে। ছায়ার মতো লেগে থাকে তুরানের সঙ্গে।

প্রয়োজনীয় সামগ্রী গুছিয়ে রেখে নীরা ছুট লাগায় ডাইনিংয়ে। ঝটপট খাবার গরম করে সাজিয়ে নেয় প্লেটে। ঘরে পানি আছে তাই আর পানি সঙ্গে করে নেয় না শুধু প্লেট টা নিয়ে এগিয়ে যায় ঘরে। তুরান বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে ফোন টিপছে। নীরা এসে খাবার রাখে তার পাশে। নম্র কন্ঠে বলে,

-“খেয়ে নিন।”
-“খায়িয়ে দাও।”

নীরার চোখ কপালে। মনে মনে ভাবছে হয়তো ভুল শুনেছে। পরীক্ষা করার জন্য পুনরায় বলল,
-“খেয়ে নিন। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।”

তুরানের দৃষ্টি এখনো ফোনে। তবে কন্ঠ স্বাভাবিক। বিরক্ত হলো বোধহয় সে নীরার কথায়। কপাল কুঁচকে বলল,

-“এই মেয়ে,,তুমি কী কালা?”

নীরা ক্ষেপে ওঠে,
-“আজব! কালা কেন হতে যাব?”

-“তাহলে যা বলেছি তা না করে পকর পকর করছ কেন?”

নীরা মনে মনে ভাবে, “তাহলে সত্যিই বলেছে।” কিন্তু প্রকাশ্যে বলে, “কিন্তু কীভাবে সম্ভব?”

-“অসম্ভব কেন?”

-“না মানে আসলে….।”

তুরান হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দেয়। ছাটকাট বলে দেয়,
-“ভূমিকা না করে চুপচাপ খায়িয়ে দাও। আঙুল কেটেছে খেতে পারব না নিজ হাতে।”

নীরা অস্থির হয়। তত্রস্থ এগিয়ে যায় তুরানের নিকট। ব্যগ্র কন্ঠে শুধায়,

-“কই কী হয়েছে দেখি দেখি। অনেক লেগেছে? কীভাবে লাগল? আরেহ দেখান না।”

নীরার উত্তেজিত বদনখানি কোথাও একটা প্রশান্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে তুরানের। সে তো এমনটাই চেয়েছে। নীরা তার জন্য পাগল হোক সর্বপরি। তার চিন্তায় নিমগ্ন থাকুক সর্বক্ষণ। তার সুখে হাসুক তার দুঃখে কাঁদুক। অধর কোণে ফুটে ওঠা এক চিলতে হাসির রেখা আড়ালে আবডালে লুকিয়ে ফেলে তুরান। নীরার হাত ধরে টেনে বসায় তার পাশ ঘেঁষে। হাত রাখে নীরার মুখবিবরে। নীরার দৃষ্টি শিথিল হয়। বোঝার চেষ্টা করে তুরানের হাবভাব। তুরান জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। অসহায় কন্ঠে বলে,

-“কষ্ট পেয়েছ ভীষণ?”

-“কেন কথা ছিল বুঝি?”

-“আমি জানি তুমি কষ্ট পেয়েছ। তোমার হৃদয় উপলব্ধি করতে পারি আমি।”

নীরা হাসে কিঞ্চিৎ। দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকায় তুরানের পানে। অতঃপর বলে,

-“কষ্ট তখন হতো যদি আপনি সব চুপচাপ সহ্য করতেন। প্রশয় দিতেন অন্যায়কে। কিন্তু আপনি তো অন্যায়ের যোগ্য জবাব দিয়েছেন। শিথিল করেছেন আমার অন্তরিক্ষ। তাহলে আমি কেন কষ্ট পাবো? আমি সুখী, ভীষণ সুখী। আনন্দিত, পুলকিত।”

সহসা কী হয় তুরান টুক করে একটা চুমু একে দেয় নীরার ললাটে। থরথরিয়ে কেঁপে ওঠে নীরা। এমন হবে কল্পনাও করেনি সে। আশাতীত কিছু হয়ে গেলে তা হয় আমাদের স্তব্ধতার কারণ। নীরার অবস্থাও সেম। কিন্তু তুরান স্বাভাবিক। সে সোজা হয়ে বসে যায়। পূর্বের ন্যায় ফোনে মনোযোগী হয়। কিন্তু ধ্যান পুরোপুরি নীরাতে। গম্ভীর, সুচালো কন্ঠ ছুড়ে বলে,

-“খায়িয়ে দাও তাড়াতাড়ি।”

-“কিন্তু আপনার হাত……”

-“ক্ষিদে পেয়েছে ভীষণ।”

নীরা থেমে যায়। কিন্তু বলতে পারে না আর। বুঝে গেছে তুরান কিছুই বলবে না। তবে খাওয়া শেষ হলে আরেকটু চেষ্টা সে করবে। যদি বলে সেই আশায়। ভাতের সঙ্গে তরকারি মিলিয়ে তুরানের মুখের সামনে লোকমা তুলে ধরে নীরা। পরম যত্নে আঙ্গুলে ওষ্ঠ ছুঁয়িয়ে সে খাবার মুখে তুলে নেয় তুরান৷ নীরার সর্বাঙ্গ ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। সে দৃশ্য স্পষ্ট ধরা পড়ে তুরানের চোখে। অগোচরে বাঁকা হাসিতে নিমজ্জিত হয় সে। পুরোটা সময় এভাবেই জ্বালিয়ে মা’র’ল সে নীরাকে।

.
চলবে,
®অহমিকা মুনতাহাজ নিশি#মায়ার_বাঁধন
২২.
ক্লাস শেষ করে বান্ধবীদের ক্ষপ্পরে পড়েছে নীরা। আজ নাকি সকলের সঙ্গে ওকেও কফি খেতে বসতে হবে। কী আর করার জোরাজুরিতে ব্যর্থ হয়ে রাজি হয়ে গেল সে। অতঃপর হৈ হৈ করতে করতে চারজন বেড়িয়ে পড়ল ভার্সিটির অপজিট প্লেসের একটা ক্যাফেটেরিয়ায়। বেশ রমরমা পরিবেশ ভেতরে। বেশিরভাগ কাপল। চার চেয়ার বিশিষ্ট একটি টেবিল বুক করে নিল ওরা। অর্ডার দিল কফি। এখানে কফি ছাড়াও স্ন্যাক্সের ব্যবস্থা রয়েছে। অতশী হালকা কিছু স্ন্যাক্সও অর্ডার দিয়ে দিল। নীরা শহরের এসব হালচালে অভস্ত্য নয় তবে সে সর্বক্ষেত্রে মানিয়ে চলার অস্বাভাবিক গুণ নিয়ে জন্মেছে। খাবার এসে গেছে। চার বান্ধবী চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। এ পর্যায়ে সীমা বলে ওঠে,

“তা নীরা আজ একটা সত্যি কথা বলবি।”

নীরা ভ্রু কুঁচকে ফেলে। প্রশ্নাত্মক চাহনিতে তাকিয়ে বলে,
“কী সত্যি?”

“এটাই যে তোর কোনো স্বপ্ন পুরুষ আছে কী না? অথবা কোনো প্রমিক পুরুষ? দেখ আমরা তো সবটাই শেয়ার করি তোর কাছে এবার তুইও কিছু বল।”

নীরা দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে। কী বলবে বুঝতে পারছে না। একবার ভেবেছিল সত্যিটা বলে দেবে কিন্তু তুরানের নিষেধাজ্ঞা মনে করে চুপ হয়ে যায়। নীরাকে চুপ থাকতে দেখে রুহি মুখ খুলে। বলে,

“কী হলো চুপ হয়ে গেলি যে? বল কেউ আছে তোর জীবনে?”

অতশীও সায় জানায়। মজার ছলে বলে,
“হ্যাঁ হ্যাঁ বাবু বলো। আমরাও একটু শুনি।”

নীরা নিজেকে ধাতস্থ করে নেয়। পরপরই অধরে জোরপূর্বক হাসি ঝুলিয়ে এপাশ ওপাশ মাথা নাড়ে দ্রুত। চটপটে কন্ঠে বলে,

“আরেহ নাহ নাহ কেউ নেই আমার। কী সব বলছিস তোরা? এমনটা হলে আমি আগেই জানাব।”

সকলের দৃষ্টি সন্দিহান। অতশী আঙ্গুল তুলে বলল,
“সত্যি তো?”

“আলবাত সত্যি।”

“তবে মেনে নিচ্ছি কিন্তু।”

“হুম মানতে তো হবেই।”

আরও কিছুক্ষণ টুকটাক আড্ডা দিয়ে তাড়া দেয় নীরা। তাকে এখন উঠতে হবে গাড়ি হয়তো এতক্ষণে চলে এসেছে। নীরার সঙ্গে সঙ্গে ওরাও বেড়িয়ে যায়। সীমা, রুহি রোজ একসঙ্গে যযাতায়াত করে। তাদের বাড়ি পাশাপাশি। সেই সুবাদে আজও একসঙ্গে রিকশা ডেকে চলে গেল। নীরা অতশীকে বিদায় জানিয়ে ঝটপট গাড়িতে উঠে বসল। সব শেষে অতশীর পালা৷ সে নীরার ছুটন্ত গাড়িটির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে এগোতে লাগল। পথিমধ্যে পড়ল বাঁধা। পায়ের সঙ্গে কিছুর সংঘর্ষে থেমে গেল তার পায়ের চলন। দৃষ্টি ফেলে দেখল একখানা ডায়েরি পড়ে আছে এলোমেলো ভাবে। অতশী তুলে নেয় সেটা। কৌতুহল বসত প্রথম পৃষ্ঠা মেলতেই ভেসে ওঠে গোটা গোটা অক্ষরে “নীরা চৌধুরী” লেখা নামটি। অতশীর বুঝতে বাকি নেই এটা হয়তো নীরা ভুল করে ফেলে গেছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ডায়েরিটা নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয় সে। অতঃপর রিক্সা ডেকে চলে যায় গন্তব্যে।

…..
বাসায় পৌঁছতে আজকে একটু লেট হয়ে যায় নীরার। অভ্যাস বসত ফ্রেশ হয়ে আগে উঁকি দেয় শ্বাশুড়ির ঘরে। সেখানে তুরান আগে থেকেই উপস্থিত। তার আসতে লেট হওয়ায় তুরান আগে ভাগেই পৌঁছে গেছে। নীরা সৌজন্যতা সরূপ দরজায় নক করে। ভেতর থেকে ভেসে আসে তুরানের কন্ঠ,
“কাম ইন।”

নীরা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে। আজকের দৃশ্য কিছুটা ভিন্ন। জাহানারা চৌধুরীকে বেশিরভাগ ছুটাছুটি করতে দেখা যায় তিনি শুয়ে থাকেন খুবই কম সময়। রোজকার দিনে এই সময়টায় তুরান মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকে আর জাহানারা চৌধুরী তার চুলে বিলি কেটে দেয়। কিন্তু আজকে জাহানারা চৌধুরী বিছানায় শয্যাশায়ী আর তুরান চিন্তিত ভঙ্গিতে তার পাশে বসে। নীরা সহসা উদগ্রীব হয়ে উঠল। তত্রস্থ পায়ে এগিয়ে গেল জাহানারা চৌধুরীর নিকট। বিচলিত কন্ঠে প্রশ্ন করল,

“কী হয়েছে? মা শুয়ে আছেন কেন?”

তুরান নিরেট কন্ঠে উত্তর দেয়,
“মায়ের শরীর ঠিক নেই। প্রেসার আপ-ডাউন করছে।”

নীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠে। জাহানারা চৌধুরীর মাথার কাছে বসে পড়ে ধপ করে। তার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
“বলেছিলাম না তোমায় রান্না ঘরে যাবে না। বেশি স্ট্রেস নেবে না। তুমি নিশ্চয়ই কথা শোনো না তাই না। আমরা চলে গেলেই ছোটাছুটি করে আগুনের তাপে রান্না করো? এজন্যই শরীর খারাপ করেছে? একটা কথাও নেই তো…..”

জাহানারা চৌধুরী নীরাকে কথা শেষ করতে দেয় না। ওদের হাতের ওপর হাত রেখে মৃদু হেসে বলেন,
“আরেহ পাগলী মেয়ে, আমার কিচ্ছু হয়নি। ঠিক হয়ে যাব তো এতো চিন্তা করিস না। সারাদিন পর ফিরলি কিছু খেয়ে নে। যাহহ।”

“তোমার এই অবস্থা আর আমি খাব এটাও সম্ভব?”

“আরেহ না খেলে শরীর খারাপ করবে তো। আর আমি তো এখন ঠিক আছি। তুরান আছে আমার কাছে তুই গিয়ে খেয়ে আয়।”

নীরা আরও কিছু বলতে নিলে তার আগে ভেসে আসে তুরানের কন্ঠ,
“আজ এতো লেট করলে যে?”

নীরা মাথা নিচু করে মিনমিনিয়ে বলল,
“ফ্রেন্ডরা জোর করল তাই একটু ভার্সিটির অপজিটে ওই কফি শপে গিয়েছিলাম।”

“তাহলে যাও আগে খেয়ে এসো। তারপর মায়ের কাছে থেকো।”

“আপনি খেয়েছেন?”

“নাহ পড়ে খেয়ে নিব। তুমি যাও।”

জাহানারা চৌধুরী বললেন,
“দেখ না সেই কখন থেকে খেতে বলছি কিন্তু যাচ্ছেই না। সেই থেকে বলে চলেছে, ‘পরে খাব, পরে খাব’।”

নীরা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। একটু উচ্চ কন্ঠে বলে,
“এটা কোনো কথা আমাকে ধরে বেঁধে খেতে পাঠানো হচ্ছে অথচ নিজে না খেয়ে? আমি খাবার নিয়ে আসছি এখানে বসেই খেয়ে নিবেন।”

তুরান কিছু বলে না। চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকে। সম্মত বুঝে নীরা ছুট লাগায় খাবার আনতে। জাহানারা চৌধুরী প্রশান্তির হাসি হাসেন। তিনি এবার নিশ্চিন্ত।সে ছাড়াও তার ছেলের দ্বায়িত্ব নেওয়ার লোক এসে গেছে।

নীরা খাবার নিয়ে এসে তুরানের সামনে রাখে। আদেশের সুরে বলে,
“খেয়ে নিন।”

তুরানের সাবলীল উত্তর, “খায়িয়ে দাও।”

নীরার চোখ খুলে আসার উপক্রম। কী বলছে লোকটা এসব? সেদিন না হয় ঘরে বসে দিয়েছে খায়িয়ে কিন্তু আজ শ্বাশুড়ির সামনে? নাউজুবিল্লাহ কীভাবে কী?

নীরার স্থিতিশীল হাবভাবে তুরান এক পলক নজর বুলায়৷ পরপরই রুক্ষ কন্ঠে বলে,
“না চাইলে চলে যেতে পারো এগুলো নিয়ে।”

নীরা আড়চোখে একবার শ্বাশুড়ি তো একবার স্বামীকে পর্যবেক্ষণ করছে। খেয়াল করে উচ্চ স্বরে হেসে উঠেন জাহানারা চৌধুরী। লজ্জায় মিয়িয়ে পড়ে নীরা। ঠোঁটকাটা, লাজ-লজ্জাহীন বর নিয়ে তার হয়েছে যত জ্বালা। জাহানারা চৌধুরীর হাসি থামে না। তিনি সেভাবেই নীরার উদ্দেশ্যে বলেন,
“বলছে যখন দে খায়িয়ে। আমি না হয় চোখ বুজে রইলাম।”

নীরা উল্টো দিকে ঘুরে জিভে কামড় বসায়। বিড়বিড়িয়ে বলে,”যেমন ছেলে তার তেমন মা।”

এত সব কান্ড ঘটিয়ে তুরান নিরুদ্বেগ। সে স্বাভাবিক বসে ফোনে নজর বোলাচ্ছে। যেন আশেপাশের কিছুই তার কর্ণে পৌঁছতে ব্যর্থ।

.
চলবে,
®অহমিকা মুনতাহাজ নিশি
গ্রুপ –

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here