মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩৫

0
2604

মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩৫
❤❤
রোদ_রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

মেঘের ঘুম ভাঙতে মেঘ উঠতে যাবে তখনি ফিল করে তার বুকের ওপর ভারী কোনো বস্তু আছে যার জন্য মেঘ উঠতে পারছে না।মেঘ হালকা চোখ খুলে বুকের ওপর তাকাতে দেখে বৃষ্টি তাকে জরিয়ে ধরে তার বুকের ওপর ঘুমোচ্ছে। মেঘ হয়তো ভুল দেখেছে তাই ভালো করে চোখ ডলা দিয়ে আবারও দেখতে লাগলো কিন্তু এটাতো সত্যি।








মেঘ তাড়াতাড়ি ছিটকে সরে গেল কারণ বৃষ্টি যদি উঠে দেখে সে মেঘের সাথে একি বিছানায় তার বুকের ওপর তাহলে কেলেংকারী হয়ে যাবে। মেঘ পুরো রুম চোখ ঘুরিয়ে দেখে সে নিজের রুমে আছে তারমানে বৃষ্টি মেঘের রুমে।কিন্তু বৃষ্টি বিছানায় এলো কীভাবে। ঘুমন্ত অবস্থায় মেঘ আবার কিছু করে ফেলেনি তো।না না মেঘের যতোটুকু মনে আছে সে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরে।এর পরের কিছুই তো মেঘের মনে নাই। মেঘ এবার দুজনের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে না কাপড় তো ঠিক আছে তার মানে ভুল কিছু করেনি। মেঘ সরে আসতেই বৃষ্টি নড়ে ওঠলো।মেঘ ভয় পেয়ে যায় যদি বৃষ্টির ঘুম ভেঙে যায়। মেঘ তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। বের হয়ে রেডি হয়ে অফিসে চলে গেল।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
বৃষ্টির ঘুম ভাঙতে দেখে সকাল ১১ টা।কাল রাতে মেঘের সেবা করতে করতে অনেক রাত হয় ঘুমানোর জন্য। তাই উঠতে লেট হয়।উঠে দেখে মেঘ বিছানায় নাই, ওয়াশরুমের দরজা ও খোলা। তার মানে মেঘ রুমে নেই। গতকাল রাতের কথা মনে পরতে বৃষ্টি কেন জানি লজ্জা পেয়ে যায়। কেনই বা পাবে না এ প্রথম বৃষ্টি মেঘকে কিস করেছে তাও মেঘের অজান্তে।যদি মেঘ জেগে যেতো ইসস কি লজ্জায় না পরতে হতো কথা গুলো ভাবতেই বৃষ্টি নিজেই হেসে উঠে। রেডি হয়ে নিচে গিয়ে সার্ভেন্টদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলে মেঘ অফিসে চলে গেছে। বৃষ্টি আর কিছু না ভেবে নাস্তা করে নেয়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
অফিসে বসে মেঘ কাজ করছে কিন্তু তার মনে এখনো কালকে রাতের ঘটনা টা ঘুরছে।বৃষ্টি তার বুকের ওপর ঘুমিয়েছে তাও তাকে জরিয়ে ধরে। যেখানে তাকে দেখলে সবসময় দূরে থাকতে সেখানে তার সাথে কাল সারারাত ছিল। বিষয়টা ভাবতে মেঘের কেমন জানি ভালো লাগছে কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে যায় তখনি, যখন বুঝতে পারে হয়তো ঘুমের ঘোরে বৃষ্টি এমনটা করেছে। মেঘ আবারও নিজের কাজে মন দেয়।
.
.
.
.
.
.
.
.
আজ বৃষ্টি অফিসে যাবে। এক সপ্তাহ হলো বৃষ্টি অফিসে যায়নি।এখন বৃষ্টি আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ তাই ভাবছে বসে থেকে আর লাভ নেই বরং কাজে জয়েন করা যাক।তাছাড়া এতোদিন কাজ না করাই না জানি কতো কাজ জমে গেছে যদি ও মেঘ বলেছে সে অনেকটা করে ফেলেছে তবুও বৃষ্টির জন্য মেঘকে বারতি জামেলা পোহাতে হচ্ছে। যদি বৃষ্টি ও কাজ করে তবে মেঘের চাপ কমবে। তাই আগের মতো সকালে উঠে সব কাজ করে তৈরি হয়ে নেয়।

তার শ্বাশুড়ির জন্য কেন জানি খারাপ লাগছে। কারণ এর আগে ওনি বৃষ্টিকে কোনো কাজ করতে দিতো না বরং বৃষ্টির হাতের নাগালে সব রেখে দিতেন।বৃষ্টি অনেকবার তার শ্বাশুড়িকে চলে আসার জন্য বলেছে কিন্তু ওদিনের ঘটনার জন্য তিনি বৃষ্টির সামনে আসতে নারাজ।তার ওপর মেঘের কাজকর্মে তিনি অনেকটা অপমানিত বোধ করেছেন তাই তিনি সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি এখন আর এ বাড়িতে আসবেন না। আর বৃষ্টি ও জোর করে নি।এসব কথা চিন্তা করতে থাকে বৃষ্টি।








অফিসে গিয়ে বৃষ্টি নিজের কেবিনে ব্যাগটা রেখে তৃনার কাছে যায়। তৃনা বৃষ্টিকে দেখে অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে ফেলে।বৃষ্টি সেটা বুঝতে পেরে ওর সামনে গিয়ে দাড়ায়।তৃনা বৃষ্টিকে দেখে ও না দেখার ভান করে নিজের মতো কাজ করতে থাকে।বৃষ্টি তৃনার গায়ে হাত দিতেই তৃনা এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে দেয়। তৃনার এহেন আচরণে বৃষ্টি খানিকটা অবাক হয় কারণ এতোদিন ধরে দুজন একসাথে কাজ করছে কিন্তু তৃনা কখনো বৃষ্টির সাথে এমন আচরণ করেনি তাহলে হঠাৎ এমন কি হলো যে তৃনা বৃষ্টিকে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে। তবুও বৃষ্টি তৃনার সামনে বসে তৃনাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে,

———-কিরে তৃনা তুই এমন করছিস কেন, আর আমাকে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন

———কেন তুই এমন কে যে তোকে এড়িয়ে চলা যাবে না, দেখতেই যখন পাচ্ছিস তোর সাথে কথা বলতে চাইছি না তাহলে কেন কথা বলছিস।

———তৃনা এমন করিস না আমি যদি কোনো ভুল করি তবে সেটা বল আমায় কিন্তু আমি তোর থেকে এমন ব্যবহার নিতে পারছি না।

———-নিতে না পারলেও আমি এটাই করবো।কারন তুই সবসময় আমার সাথে এমন কিছু করিস।যেদিন থেকে তুই এ অফিসে এসেছিলি সেদিন থেকে তোকে আমি শুধু আমার বন্ধু নয় বোন মনে করেছি কিন্তু তুই কখনো আমায় নিজের বোনতো দূরে থাক বন্ধু ও ভাবতে পারিস নি।যদি ভাবতি তাহলে আমার থেকে সব লুকাতে পারতি না।

তৃনার এমন কথা শুনে বৃষ্টি চমকে যায় তার মানে তৃনাকে কি সব সত্যি জেনে গেছে আর তাই এমন করছে।

———-আ..মি….আমি আবার কি লুকিয়েছি

———-কি লুকিয়েছিস সেটা আবার জিজ্ঞেস ও করছিস।আচ্ছা তোর ভালো মন্দ জানার কি কোনো অধিকার আমার নেই। তুই এতোদিন অসুস্থ ছিলি আর আমাকে জানানোর দরকার মনে করলি না আর জানিস কতোবার তোকে কল দিয়েছি বারবার বন্ধ জানাচ্ছিল।

তাই আর না পেরে স্যার থেকে জিজ্ঞেস করলে ওনি জানান তুই নাকি অসুস্থ তাই আসতে পারছিস না আর তোর ঠিকানাও জানিনা যে তোর সাথে দেখা করবো।তুই কি জানিস তোকে আমার একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে তোর খবর নেই তাই মনে মনে ঠিক করছি তুই এলেও তোর সাথে কোনো কথা নেই।

বৃষ্টি এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তার মানে বৃষ্টি যা ভেবেছিলো তা নয়।বৃষ্টি বেশ বুঝতে পেরেছে তৃনা রেগে আছে তাই রাগ কমাতে,

——–সরি রে আসলে আমি তোদের চিন্তার মধ্যে রাখতে চাই নি একদিকে এতো কাজ তার ওপর তোকে অসুস্থতার কথা জানালে তুই চিন্তা করতি আর আমার সিমটাও চেঞ্জ করে ফেলেছিলাম তাই। প্লিজ রাগ করিস না এবার থেকে আমার কিছু হলেও সব তোকে বলবো।এবার বল আমাকে এমন কি সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য তোর এতো তাড়া।

———হুমম মনে রাখিস পরে যেন আর না হয়।আর সারপ্রাইজ টা হচ্ছে শ্রাবন আমাকে প্রপোজ করেছে শুধু তাই নয় আমাকে বিয়ের প্রা্স্তাবও দিয়েছে। জানিস শ্রাবন ওর পরিবারে আমার কথা বলেছে ওনারাও আমাকে মেনে নিয়েছে।









তৃনা এক এক করে সব কথা খুলে বলে বৃষ্টিকে। বৃষ্টি তো খুব খুশি কারণ তৃনার মতো মেয়ে বন্ধু আর বোন হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।শেষ পর্যন্ত শ্রাবন তৃনাকে এক্সেপ্ট করলো সেটা শুনেই বৃষ্টির মনে একটা স্বস্তির ভাব এলো।কিন্তু তৃনা ভয় পাচ্ছে যদি ওর পরিবার কোনো সমস্যা করে।

———তুই ভয় পাসনা আমি সবসময় তোর সাথে আছি আর থাকবো। আগে শ্রাবন আরেকটু সেটেল হয়ে নিক তারপর আমরা সবাই তোর পরিবারকে বুঝাবো তুই টেনশন নিসনা।

———আচ্ছা আমারটা না হয় সল্ভ করলি তোর কি হবে।তোর কি কোনো মনের মানুষ আছে নাকি আর থাকলে আমায় বল আমিও একটু দেখি আমার হবু দুলাভাই কেমন।

তৃনার কথায় বৃষ্টি কিছু টা লজ্জা পেয়ে,

——— অপেক্ষা কর খুব তাড়াতাড়ি ওনার সাথে তোদের আলাপ করে দিবো।আগে অফিসের প্রজেক্ট আর তোর পরিবারের জামেলা শেষ হোক তারপর আমারটাকে তোদের সামনে আনবো। দেখবি সেদিন পুরো চমকে যাবি।

———-তার মানে কেউ আছে, এ কে বলনা আমার তো তর সইছে না এক্ষুনি দেখতে ইচ্ছে করছে প্লিজ দেখা না কোনো পিক থাকলে।

———উহু এখন না বললাম তো সারপ্রাইজ যেদিন দেখবি সেদিন আলাপ করিস আর এখন এ নিয়ে কোনো কথা না চল কফি খেয়ে আসি।

তৃনাও আর জোর না করে কফি খেতে চলে গেল।









রাত ১০ টা। রোদ দাঁড়িয়ে আছে ছাদের এক কোণে।চেয়ে আছে আকাশের দিকে। আসলে চেয়ে আছে বললে ভুল হবে সে ভাবছে তার আর বৃষ্টির কথা গুলো।সেদিন রেস্টুরেন্টে বৃষ্টি তাকে কি কি বলেছিলো।তার মানে কি বৃষ্টির কথা গুলো ঠিক। সে কি জেদের বশে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নাতো।সত্যি বলতে রোদেলা তো শুধু তাকে ভালোবাসে তাহলে এভাবে ওকে কষ্ট দিয়ে রোদ তো অন্যায় করছে।কিন্তু মেঘের করা অন্যায়টা তো রোদকে কিছুই ভুলতে দিচ্ছে না। কি করবে সে বুঝে উঠতে পারছে না। রোদ যখন এসব ভাবনায় মত্ত তখন কারো গলার আওয়াজ পেয়ে পাশে ফিরে তাকায় দেখে রোদেলা তার পাশে এসে দাড়িয়েছে।

———কি হলো কি এমন চিন্তা করছো

———কিছু না তুমি কখন এলে।

——— আমি তো এসেছি অনেক্ষন হলো কিন্তু তুমি ভাবনায় এতোটাই মত্ত ছিলে যে আমি এসেছি তুমি টেরও পাওনি।কি এমন কথা ভাবছো যে আশেপাশের কিছুতে নজর নেই। নাকি কাউকে মনে পরছে।

কথা টা শুনে রোদের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সে রোদেলার দিকে তাকিয়ে তুতলিয়ে তুতলিয়ে

———-কি বলছো কাকে মনে করবো আর কার কথা বলছো।

———-মিথ্যা বলার দরকার নাই রোদ। তুমি হয়তো আমায় ভালোবাসো না কিন্তু আমি তো বাসি তাই তোমার চোখ দেখে বুঝতে পারি তোমার মনের কথা।বৃষ্টি ভাবীর কথা ভাবছো তাই না।

বৃষ্টির নাম রোদেলার মুখে শুনে রোদ আরেক দফা অবাক হলো কারণ রোদ যে বৃষ্টির কথা ভাবছে সেটা তো রোদেলার জানার কথা না। তার মানে কি রোদেলা,

———-কি বলতে চাইছো তুমি আর এখানে বৃষ্টির কথা আসছে কেন

———কারণ আমাদের মাঝে এতো দূরত্ব, তোমার আর ভাইয়া মাঝে শএুতা সব কিছু তো ভাবীর জন্য। কি মনে করেছো আমি কীভাবে জানি। হুমম আমি সব জানি অনেক আগে থেকে জানি।আমি যখন ঘর পরিষ্কার করছিলাম তখনি তোমার ডায়রিটা হাতে পায় কিছু কথা ওখান থেকে, এরপর মায়ের কাছ থেকে শুনি বাকি কথা গুলো। তারপর সেদিন তুমি আর ভাইয়া যখন ঝগড়া করছিলে তখন বাহির থেকে আমি সব শুনি।

কিছুক্ষন চুপ থেকে,

এখন তোমার প্রশ্ন আসতে পারে আমি সব জেনেও এতোদিন চুপ ছিলাম কেন তাই তো।আসলে কি জানো তো আমি তোমাদের কারো বিরুদ্ধে কিছুই বলতে পারবো না।কেননা একদিকে তুমি যাকে আমি ভালোবাসি অন্য দিকে আমার ভাই যে কিনা আমাকে ছোট থেকে কখনো কষ্ট দেয়নি আমার সব আবদার পূরন করেছে। তাহলে আমি কাকে কি বলতাম।আমি জানি যে আমার ভাই যা করেছে তা মোটেও ভালো করে নি।ওনি তোমাদের সাথে অন্যায় করেছে। কিন্তু তুমি কি জানো আমার ভাই কেন এসব করেছে শুধু মাএ ভাবীকে ভালোবাসে বলে। আমি আমার ভাইয়ের চোখে ভাবীর জন্য অজস্র ভালোবাসা দেখেছি।খুব ভালোবাসে ভাবীকে।

তোমার কাছে অনুরোধ করছি তুমি ওনাদের মাঝখান থেকে সরে আসো। কারণ চাইলেও সবকিছু তো আর পাওয়া যায় না। তুমি হয়তো আমায় ভালোবাসো না কিন্তু আমি তোমায় ভালোবাসি আর এও জানি যে তুমি আমায় ডিভোর্স দিতে চাও,আমার সাথে থাকতে চাওনা। তাই তোমার সুখের জন্য হলেও আমি তোমার থেকে দূরে চলে যাবো।কিন্তু তুমি ভাইয় ভাবীর মাঝে আর বাধা হয়ে দাঁড়িও না প্লিজ প্লিজ। তুমি চাইলে আমি কালকেই এ বাড়ি , এ শহর এমনকি তোমার জীবন থেকে চলে যাবো আর কখনো তোমার কাছে ফিরে আসবো না।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
রোদেলা কান্না করতে করতে কথা গুলো বলছে আর রোদ নিরব দর্শকের মতো শুনছে।কারণ রোদেলা এতোকিছু জানার পরও সে রোদের সাথে কখনো খারাপ বিহেভ করেনি বরং রোদের সাথে যথাযথ ভাবে মানিয়ে নিয়েছে। রোদ ভাবতেই পারছে না একটা মানুষ কতোটা কষ্ট সহিঞ্চু হয় তা রোদেলাকে না দেখলে বোঝায় যেতো না।এতো কষ্ট জমিয়ে রেখেছে কিন্তু কাউকে বুঝতেও দেয়নি।রোদেলা আর কিছু না বলে কাদতে কাদতে নিচে চলে যায়। আর রোদ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।,
,
,
,
,,
,
,
,
,
চলবে……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here