রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -২২

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_22

শিকদার মির্জা প্রেস-মিডিয়ার সামনে নিজের বক্তব্য রাখে। সেই বক্তব্য শুনে বৃষ্টির রক্ত জমে বরফে পরিণত হয়।

শিকদার মির্জা বলেন,”আমার ছেলের বউ বৃষ্টি! তাকে কখনো আমি ছেলের বউ হিসাবে দেখি নাই। নিজের মেয়ের মতো ভেবেছি। তাই নিজের মেয়ে যদি বিধবা হয় তাহলে তার জীবনের সব রং ছিঁনিয়ে নেওয়ার কোনো অধিকার কোন পিতার থাকে না। আমার বউমা’র ডাক্তার রোদের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে দিবো। এবার বুঝতে পারছেন তাদের এতোটা ক্লোজ হওয়াতে আমাদের কেনো কোন সমস্যা নেই? আমার পরিবার অনেক আগেই সব কিছু ঠিকঠাক করে রেখেছি। তবে হ্যাঁ নিজের পরিবারের পারিবারিক কথা পাবলিশ করে সমাজসেবা করতে চাই নি। তাই রোদ বৃষ্টির এই রিলেশনের কথা আপনাদের কাছে থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। যেহেতু আজ সবটা সামনে এসে গেছে। সেখানে আর লুকোচুরি করার কিছু নেই।”

ডায়না মির্জা বলে,”আপনারা তো বিয়ের নিউজ কভার করতে আসছেন তাহলে সেই নিউজ কভার করে যান।”

তখন একজন সাংবাদিক বলে,”মিস্টার খানের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না স্যার। তাহলে আমরা কোন নিউজ কভার করবো?”

শিকদার মির্জা নিজের স্ত্রীর দিতে তাকাতেই ডায়না মির্জা স্বামীকে চোখের ইশারাতে সম্মিত দেয়।

স্ত্রীর কাছে থেকে সম্মিত পাওয়ার সাথে সাথে শিকদার মির্জা বলেন,’ আজ এই বিয়ের আসরে আমি আমার ছোট ছেলের বিধবা বউয়ের দ্বিতীয় বিয়ে দিবো মিস্টার খানের একমাত্র ছেলে ডাক্তার রোদের সাথে।”

সাংবাদিক – মিস্টার খানের পরিবার কি আপনাদের এই প্রস্তাবে রাজী হবে?

শিকদার মির্জা মিস্টার খানের সামনে এসে তাকে একটু আড়ালে নিয়ে গিয়ে কিছু কথা বলেন তারপর দুজনে সবার সামনে এসে দাঁড়ায়।

মিস্টার খান- এখানে উপস্থিত সবাই যেহেতু বিয়ের দাওয়াতে এসেছেন সেহেতু আপনাদের কাউকে আমরা নিরাশ করবো না। আজ এই বিয়েে আসরে আমার ছেলের সাথে শিকদার মির্জার ছোট ছেলের বউ বৃষ্টির বিয়ে হবে।

রোদ নিজের এমন ভাবে বিয়ের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না। সে তার বাবার সাথে কথা বলতে যায়।

তখন রোদের বাবা তাকে বলে,”আমার মান-সম্মান সব তো তোর বোন নষ্ট করে দিয়েছে। বাকিটা না হয় এই বিয়েটা করে তুই বাঁচিয়ে দে। আর যদি মনে করিশ বিয়েটা করবি না সমস্যা নেই। আমি সবাই কে চলে যেতে বলছি। সাথে আমার মান-সম্মানের চল্লিশার দাওয়াত দিয়ে দিবো।”

বাবার এমন কথা শুনে রোদ আর কোনো কথা বলে না। সে নিরবে বিয়ের জন্য বসে পড়ে।

এদিকে শিকদার মির্জা বৃষ্টির কাছে এসে বলে,”যাও বিয়ের কাজ টা সম্পন্ন করে নাও। তোমার বিয়ের ঝামেলা মিটে গেলে আমাদের বাড়িতে ফিরতে হবে।”

বৃষ্টি কিছু বলতে চাইলে তাকে ধমকের সুরে বলে,”যাও তোমাকে না বলছি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে। বিয়েটা করে আমাদের উদ্ধার করো।”

বৃষ্টির তাদের রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে মাথা নিচু করে রোদের সামনে গিয়ে বসে পড়ে।

এদিকে রোদ বৃষ্টির বিয়ের তোড়জোড় শুরু হতেই সেই পরিবেশটাকে আবারো অশান্ত করে দেয় বিহান।

বিহান চিৎকার করে বলে,”মিস্টার খান আমি আমার করা নালিশের ফলাফল কিন্তু পেলাম না। আপনি আমার দিকটা ক্লিয়ার না করে নিজের মান-সম্মান বাঁচাতে উদ্ধত হচ্ছেন। ”

মিস্টার খান বিহানের সামনে মাথা নিচু করে বলে,”আমার মেয়ের করা কাজের জন্য আমি লজ্জিত বাবা। আমি তোমার সাথে করা ঘৃণিত কাজ তো ঠিক করতে পারবো না।”

বিহান – আপনি পারবেন আমার সম্মান ফিরিয়ে দিতে।

মিস্টার খান- বলো বাবা আমি তোমার মান-সম্মান কি ভাবে ফিরিয়ে দিতে পারি?

বিহান বলে,” আপনার মেয়ের জন্য আজ আমার চাকুরীটা যাওয়ার পথে। আমাকে ছয় মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। আমার সাথে এই ছয় মাস আমার পরিবারের সবাই সাফার করবে! কারণ আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জন কারী ব্যক্তি আমি। আমার উপার্জিত টাকাতে আমাদের সংসার চলে। আপনার মেয়ের করা ভুলে জন্য সব এলোমেলো হয়ে গেছে।”

মিস্টার খান বলে,”আচ্ছা তাহলে আমি এই ছয়মাসের জন্য তোমার পরিবারের সবার দায়ভার নিজে নিচ্ছি। তোমার চাকুরী ঠিক হলে তখন আর সাহায্যদান করবো না।”

বিহান রাগি কন্ঠে বলে,”আমি কি আপনার কাছে দয়া ভিক্ষা করতে আসছি? আমি কেনো আপনার টাকাতে আমার পরিবারের ভরণপোষণ করতে যাবো?”

মিস্টার খান- তাহলে তুমি আমার কাছে কি চাই- ছো?

বিহান গম্ভীর কন্ঠে বলে,”আপনার মেয়ের জন্য আমার পরিবারের সদস্যদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। আমি চাই আপনার মেয়েও আমার পরিবারের সাথে থেকে সেই ভোগান্তি পোহাবে। ”

মিস্টার খান- মানে কী?

বিহান -মানেটা খুব সোজা!

রোদ উঠে এসে বলে,” আপনি কোন দিকে ইঙ্গিত করছেন জানতে পারি?”

বিহান বলে,”আপনার বোন কে আমার সাথে ছয় মাস আমার বাড়িতে আমার পরিবারের সাথে থাকতে হবে।”

রোদ- রাগি কন্ঠে বলে,”তোমার সাহস হয় কি করে এমন কথা বলার?”

বিহান বলে,”নিজের বোন যখন নিজেই নিজের চরিত্রে কলঙ্কের কালী লেপন করতে পারে তাহলে আমি কেন নিজের স্বার্থ নিয়ে ভাবতে যাবো না? তোমার বোনের করা পাপের জন্য অযথা আমি এবং আমার পরিবার কেনো বিনাদোষে অপরাধীদের মতো শাস্তি ভোগ করবে?”

মিস্টার খান এসে বলে,”দেখো বাবা আমি জানি আমার মেয়ে বড় অন্যায় কাজ করেছে। তার জন্য ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই। তাই বলে একটা পরপুরুষের সাথে বিনা সম্পর্কে ছয় মাসের জন্য তার বাড়িতে কি করে পাঠিয়ে দেয় বলো?”

বিহান বলে,”তাহলে আমার সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দিন। ছয় মাসপর ইচ্ছা হলে সংসার কন্টিনিউয়াস করা হবে নয়তো ডির্ভোস হবে আমাদের।”

মিস্টার খান- বিহানের মুখে এমন কথা শুনে ধাক্কা খায়। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার আগেই তার সংসার ভাঙ্গার কথা চলছে!

মিস্টার খানের আর কিছু করার নেই। কারণ সেখানে উপস্থিত সকলে নানারকম আজেবাজে কথা বলতে শুরুকরে দেয়। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেয় বিহানের রাখা প্রস্তাবে রাজী হয়ে যাবে।

মিস্টার খান বিহানের প্রস্তাবে সম্মিত দিতেই কাজী সাহেব প্রথমে রোদ বৃষ্টির বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে। তারপর বিহানের সাথে রিনির বিয়ের কার্যসম্পাদন করে।

রিনি বিয়ে করতে চাইছিল না। মিসেস খান স্বামী এবং ছেলের সম্মান বাঁচাতে রিনিকে ইমোশনাল ভাবে অপদস্থ করে। রিনিকে বলে,”আজকে যদি তুই এই বিয়েটা না করিশ তাহলে কাল সকালে তোর বাবা- মা’র মৃত মুখ দেখার জন্য প্রস্তুত হয়ে যা।”

বাবা-মা’র কোনো খারাপ কিছু সে মেনে নিতে পারবে না। তাই ইচ্ছা না থাকার পরেও বিহান কে স্বামী রুপে গ্রহণ করে নেয়।

এদিকে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে বিহান রিনির হাত ধরে তাকে নিয়ে স্থান ত্যাগ করে চলে যায়।

এদিকে রোদ বিয়ে কমপ্লিট হওয়ার সাথে সাথে বিয়ের আসর থেকে উঠে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।

এদিকে বিয়ের আয়োজন শেষে সবাই খুশি মনে খান বাড়ির সবার বিচক্ষণতার প্রশংসা করে। এই প্রশংসা তে অন্যদের ভালো হোক বা না হোক শিকদার মির্জার জন্য ভোটের আগে ভালোমতো পাবলিসিটি হয়ে গেছে।

হঠাৎ করে বৃষ্টি শিকদার মির্জা এবং তার বউয়ের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে একটা রুমে চলে যায়।

(আস্তে আস্তে গল্পটা নতুন রহস্যের দিকে যাচ্ছে 😁)




চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here