রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -২৩

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_23

শিকদার মির্জার পা জড়িয়ে ধরে কান্নারত অবস্থায় আকুতি মিনতি করছে বৃষ্টি।

শিকদার মির্জার চেহার কঠোরতা একদম স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সে বৃষ্টির এসব কান্নায় মোটেই গলে যাবার পাএ নয়।

ডায়না মির্জা বৃষ্টির চুলের মুঠি ধরে বলে,”বেহায়াপনা করার এতোই যখন শখ ছিলো। তখন আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করে ওকে কেন খেয়ে ফেলেছিস। তুই তো একটা ডায়নি। আমার ছেলেটা কে খাবার পরও খান্ত হবার নাম নেই তোর। এখন আমার পরিবারের সম্মান খেতে বসেছিস। আমাদের ভুল হয়েছিল। সেদিন যদি আমার ছেলের সাথে তোকে জ্যান্ত কবর দিয়ে দিতাম তাহলে আজকের এই দিন আমাদের দেখতে হইতো না। তুই তো কালনাগিনী। তাই বলে বৃষ্টির গালে মনের সুখে থাপ্পড় দিতে থাকে।”

একটা সময় ক্লান্ত হয়ে নিজেই স্বামীর বুকের মাঝে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। তার স্বামী একহাত মুঠ করে আরেক হাত দিয়ে স্ত্রী কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখেন।

বৃষ্টি এতো মার খাবার পরেও টু শব্দ করে নি। তার এসবে কিছুই মনে হয় না। তার ফর্শা গাল লাল টকটকে হয়ে আছে। গালে থাপ্পড়ের দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অতিরিক্ত কান্নার জন্য চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। একটু এদিকে ওদিকে হলেই রক্তেরা বাধ ভেঙ্গে গড়িয়ে পড়বে।

এসবের পরোয়া না করে বৃষ্টি ফুঁপিয়ে কান্নারত অবস্থায় বলতে শুরু করে,প্লিজ বিশ্বাস করেন আমি কখনো আপনাদের সম্মান নষ্ট করার দুঃসাহস দেখাতে যাবো না। আমি জানি তো আমার পা রাখার জন্য কতোটা চাদর বিছিয়ে রাখা। তাছাড়া আমার একটু ভুলের জন্য আমার পরিবারের জীবন যাপন করা দুষ্কর হবে এটা খুব ভালো করে জানি। তাদের সাথে খুব খারাপ কিছু করতে পারেন আপনারা এসব জেনে বুঝে আমি কেনো মিস্টার রোদের সাথে এমন পরিস্থিতি তে আপত্তিকর অবস্থায় থাকতে যাবো? প্রেস-মিডিয়া তাদের নিউজের জন্য আমার সম্মান নষ্ট করে আপনার সামনে ইলেকশনে সমস্যা সৃষ্টি করতে চাইছিল। যদি আমি নিজেই রোদের সাথে খারাপ সম্পর্কে থাকতাম তাহলে সে কথা অনেক আগেই আপনি জানতে পারতেন। কারণ আপনি আমার পেছনে সব সময় লোক লাগিয়ে রেখেছিলেন।
আর হ্যাঁ! আমার যদি এতোই বেহায়াপনা করার ইচ্ছা থাকতো তাহলে কখনো দুই বছর বিনা কারণে বিধবার বেশে আপনার বাড়িতে থাকতাম না। দুইটা বছর জীবনের কাল হয়েছিল আমার। যে নরক যন্ত্রণা ভোগ করে পরেছিলাম তারপরেও আপনারা আমাকেই ভুল বুঝলেন। দু বছরে আমাকে একটু বুঝতে পারলেন না?

ডায়না মির্জা চেঁচিয়ে বলে,”হ্যাঁ এতোই যখন জানতিস তাহলে আজকের এই ঘটনার সৃষ্টি কী করে হলো? কেনো তুই এমন পরিস্থিতি উৎপন্ন করছিস যার জন্য আমার কলিজার টুকরো ছেলের বিধবা বউ কে অন্যর বাড়ির বউ হিসাবে দেখতে হচ্ছে। তুই সবটা ইচ্ছা করে করেছিস তাই না? দেখ এবার তোর পরিবারের সবার আমি কি হাল করি। আমাকে তো তুই ভালো করেই জানিস। কথা ছিলো আমার ছেলের বিধবার বেশে সারাজীবন আমাদের বাড়িতেই থাকবি। সে কথা তুই রাখাতে পাড়িস নি। তাহলে আমি কেনো আমার কথা রাখতে যাবো?”

বৃষ্টি ডায়না মির্জার পা জড়িয়ে ধরে বলে,”দোহাই লাগে আপনার তাদের সাথে খারাপ কিছু করবেন না। যদি বলেন আমি আত্মহত্যা করছি। আপনার ছেলের কাছে ওপারে চলে যাচ্ছি। তবুও যে পরিবারের কারো সাথে আমার কোন সম্পর্ক থেকেও নেই। তাদের বিনাদোষে শাস্তি দিয়েন না।”

ডায়না মির্জা আরো কিছু বলতে যাবে তার আগে শিকদার মির্জার মোবাইলে কল আসে। সে কল রিসিভ করে কথা বলা শেষে নিজের স্ত্রীর হাত ধরে বলে,”চলে ডায়না আজকের পর বৃষ্টির উপর আমাদের কোনো অধিকার নেই। সে এখন খান বাড়ির বউ। তার সাথে সব সম্পর্ক শেষ। অযথা মৃত ছেলের সাথে থাকা সম্পর্ক নিয়ে তাকে কতো কাল বেধে রাখবে তুমি?”

ডায়না- তুমি কি বলছো?

শিকদার মির্জা – আমি যা বলছি ঠিক বলছি।
তুমি এখন অতিরিক্ত রেগে আছো তাই সঠিক ভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছো না। বাড়িতে চলো আমি তোমাকে সবটা বুঝিয়ে বলবো।

ডায়না মির্জা যেতে চাইছিল না। তারপর ও শিকদার মির্জা একপ্রকার জোর জবরদস্তি করে নিয়ে যেতে থাকে। যাবার সময় বৃষ্টিকে বলে,”আমার সাথে মোটেই চালাকি করার চেষ্টা করবে না। তাহলে এর ফল খুব খারাপ হবে। বিয়েটা যখন দিয়েছি তা ভেঙ্গে দিতেও সময় লাগবে না। সামনে আমার ইলেকশন বলে ভেবো না আমাকে দমিয়ে রাখতে পারবে। তোমার বিয়েটাকেও আমি না হয় আমার ইলেকশনের জন্য কাজে লাগাবো।

শিকদার মির্জা চলে যাবার পর বৃষ্টি চোখের জল মুখে মুখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি এঁকে বলে,”আপনার বাড়িতে থেকে আপনার কাছ থেকে রাজনীতির চাল দেওয়া শিখেছি। আমাকে বাজিমাত করার সাধ্য আপনার নেই। তবে হ্যাঁ আপনি লোকটা সৎ। আপনার বাড়িতে দু বছর থেকেছি খেয়েছি পড়েছি তার ঋণ হিসাবে না হয় একটু উপকার করে দিবো। আর হ্যাঁ ধন্যবাদ আপনাকে এভাবে এতো সুন্দর করে আমার জীবনটা সেটেল করে দেওয়ার জন্য। দু বছর আপনার পরিবারের কাছে সময় নষ্ট করার বিনিময়ে সার জীবন সুখেই কাটাতে পারবো। এটা কম কিসের?”

একটুপর রোদের কাজিনেরা এসে বৃষ্টিকে রোদের রুমে রেখে আসে।

বৃষ্টি জানে রোদ আজকে রাতে এ রুমে প্রবেশ করবে না। সে অনেক বেশি ইমোশনাল ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে।

বৃষ্টি রোদের রুমের সব কিছু স্পর্শ করে দেখতে থাকে আর মনে মনে বলে,”দুই বছর আগেও এ রুমে বহুবার এসেছি। এখানে সব কিছু আগের মতোই আছে। সেই সাথে আপনার প্রতি থাকা অনুভূতি গুলোও আমার আগের মতো আছে। আগেও আপনাকে ভালোবাসতাম আজকেও ভালোবাসি। আচ্ছা আপনি কি আমায় ভালোবাসেন? হয়তো হ্যাঁ! নয়তো না! তাতে আমার কী? আমি আপনাকে বাধ্য করবো আমাকে আপনার সবটা উজাড় করে ভালোবাসতে। কিছু মানুষের স্বার্থের সামনে আমার অবুঝ ভালোবাসা একটা সময় পদদলিত হয়েছিল। ঝরেছিল এই বুকের মাঝে রক্তে ঝর্ণাধারা। সেদিনের বৃষ্টিকে সবাই খুন করেছিল। তবে আজকের বৃষ্টির সাথে কেউ এমনটা করার সাহস দেখাতে পারবে না। আজকের আমি বদলে গেছি।”

হঠাৎ বৃষ্টির ভাবনার মাঝে ফুঁটো করে রোদের আগমণ হয়। রোদের এমন হঠাৎ আগমনে বৃষ্টি একটু ঘাবড়ে যায়। তবে মনে মনে খুশি হয় যাক রোদের সাথে তাহলে বাসরঘর করতে পারবে সে। নিজের মনের খুশিকে আড়ালে রেখে মুখের উপর বিষণ্ণতার ছাঁপ এঁকে রোদের সামনে এসে দাঁড়ায়।

রোদ – দেখুন আমি জানতাম না আপনি বিধবা। শিকদার মির্জা আপনার বাবা নয় শ্বশুর মশাই।

বৃষ্টি- দেখুন আগে বিধবা ছিলাম কি না জানি না। তবে হ্যাঁ আজকে থেকে আপনার বিবাহিত স্ত্রী আমি। শিকদার মির্জা শ্বশুর কি না জানি না তবে তাকে বাবার মত সম্মান করি বাবা বলে ডাকি। তাই আমার পুরাতন অতীতের কাসুন্দি না ঘাটলে খুশি হবো।

রোদ- মানে! আপনে কি বলতে চাইছেন।

বৃষ্টি- আমি এতো কথা ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে বলতে পারি না সোজা ভাবে বলছি। আজকে থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রীর। তা-ই এই সম্পর্ক নিয়ে কথা বলাটাই উচিত।

রোদ- আপনি এই বিয়েটা কে মানবেন?

বৃষ্টি – না মানার মতো কিছু তো দেখছি না। বিয়েটা যেহেতু হয়ে গেছে সেহেতু সম্পর্কটা কে একটা সুযোগ দেওয়া দরকার। “জীবন কোন সিনেমা নয় যে বিয়ে করে বলবো বিয়েটা কে মানি না হ্যানত্যান সাত সতেরো।”

বৃষ্টির মুখে এমন পরিস্থিতি তে এধরনের কথা শুনে রোদের চোখ কপালে উঠেছে। আল্লাহ মেয়েটা কি ভাবে সবকিছু এতো দ্রুত নরমাল মনে করতে পারে?

রোদ একটু খেয়াল করে দেখে বৃষ্টির চেহারা অবস্থা খুব খারাপ। সে কিছু একটা আন্দাজ করে। হয়তো তাকে এ সম্পর্কটা মেনে নেওয়ার জন্য উনারা জোর করেছে তাই হয়ত সবটাই নরমাল ভাবে নিচ্ছে বৃষ্টি তবে রোদ সব কিছু সহজ ভাবে নিতে পারছে না।

তাই রোদ- বৃষ্টিকে বলে এই সম্পর্কটা কে মেনে নেওয়ার জন্য আমার সময়ের দরকার। আজকে এতো কিছু হয়েছে যে আমি আমাদের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারছি না।

বৃষ্টি – আচ্ছা সমস্যা নেই বলে সোজা বিছানাতে গিয়ে একপাশে শুয়ে পড়ে।

বৃষ্টির এমন কান্ড রোদ তাজ্জব হয়ে যায়। মেয়েটার ফ্রেশ হবার দরকার হলো না এমনিতে শুয়ে পড়েছে । অবশ্য এতো ফ্রেশ হবার মতো কিছু নেই বৃষ্টির মাঝে। কারণ সে রিনির বিয়েতে একটা ক্রীম কালারের কাতান শাড়ি পড়েছি। সাথে সামান্য একটু সাজ এক হিজাব। কোনো রকমের অলঙ্কার সে পড়ে নাই। এই সাজে সে রোদের সাথে বিয়ের পবিত্র সম্পর্কে আবন্ধ হয়েছে। হয়তো একটু আগে মুখটা ধৌত করেছে তাই সেই হালকা সাজটাও নেই। তাই তো সোজা ঘুমাতে গেছে।

রোদ আর সাত পাঁচ না ভেবে বিছানার অপর খালি পাশে শুয়ে পড়ে। অপেক্ষা নতুন একটা ভোরের যে ভোরে আলো তার জীবনের সব সমস্যার সমাধান করে দিবে।

(আজকের পর্বটা কেমন লাগছে? প্লিজ কমেন্ট জানাবেন সবাই!নয়তো গল্পটা লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি)
:
:
চলবে….!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here