রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -২৪

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_24

নতুন সকালের আগমণ বৃষ্টির জীবনে রংধনুুর সাত রং সঙ্গে করে আনলেও রিনির জীবনে জাহান্নামের মতো উত্তাপ ছড়াতে থাকে।

বিহান রিনিকে তাদের গ্রামের বাড়িতে এনেছে। মধ্যরাতে তারা রওনা দিয়েছিল। সকালে এখানে এসেছে। সারাপথ রিনি পাথরের মতো স্তব্ধ ছিলো।
তবে এখন সে তার সামনে তাকিয়ে দেখে একটা বহুপুরোনো দোতলা বিল্ডিং। রংচটা হয়তো অনেক বছর ধরে অযত্নে পড়ে আছে। নয়তো টাকার অভাবে বাড়ির সৌন্দর্যে মরিচা পড়েছে। বাড়িটার চারপাশে গাছপালা দিয়ে ভর্তি। গাছ গুলো অনেক পুরাতন দেখে বোঝা যাচ্ছে। তবে বাড়িটা একদম ভুতুড়ে দেখতে বাহিরে থেকে। আল্লাহ এই ভুতের বাড়িতে আমাকে মেরে গুম করে দিবে না তো?

ঠিক তখন বাড়ির ভেতরে থেকে শোরগোলের আওয়াজ আসবার সাথে সাথে বিহান রিনিকে ভুলে বাড়ির ভেতরে দ্রুত প্রবেশ করে।

রিনি না চাই-তেও হ্যাংলা মেয়ের মতো সেই ভুতুড়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।

বাড়ির সদর দরজাতে দাঁড়াতেই এতজন মধ্যে বয়স্ক মহিলা এসে রিনিকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

আচমকা এমন ভাবে ধাক্কা খাওয়াতে তাল সামলাতে না পেরে রিনি দরজার সাথে বাড়ি খায়। বিহান সাথে সাথে দৌড়ে এসে বলে,”আহ মা এ কি করছো? ঐ মেয়েটা তোমার ছয় মাসের বউ মা। তাকে এভাবে আঘাত দিয়ে বরণ করবে না কি তুমি?”

বিহানের মা – এই সেই কালনাগিনী যার জন্য আমার সোনার সংসার ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। আমি কোনোদিন ও এই কালনাগিনী কে আমার ছেলের বউ হিসাবে মেনে নিবো না। এটা কে তো আমার বাড়ির কাজের মেয়েও করবো না। তুই এই আপদ কে আমার বাড়ি থেকে বিদায় কর বলছি।

বিহান – মা! এমন করে রিয়াক্ট করতে নেই। তাছাড়া বাবার শরীরটাও খুব একটা ভালো যায় না। তার মাঝে সে যদি এসব জানতে পারে তাহলে কিন্তু খুব অশান্তি করবে। তুমি প্লিজ ছয় মাসের জন্য একটু মানিয়ে নাও। তারপর না হয় সবকিছু আগের মতো নরমাল করে দিবো আমি।

বিহানের মা – তুই এই কালনাগিনীর থেকে দূরে থাকবি তাহলে একে আমার বাড়িতে থাকতে দিবো নয়তোে না।

বিহান- এই মেয়ের সাথে তোমার যা ইচ্ছা হয় তাই করিও। তাতে আমি কিচ্ছু বলবো না। তবে হ্যাঁ কেনো রকমের শারীরিক টর্চার করবে না ওর সাথে তাহলে হবে।

বিহানের মা – এই কালনাগিনীর জন্য তোর এতো দরদ হচ্ছে কেনো? বিয়ে করে বউ করেছিস বলে?

বিহান – সে সব কিছু না মা। এই দেখো আমি বাহিরে চলে যাচ্ছি তোমার যা মন চাই- করো রিনির সাথে।

বিহান চলে যাবার পর রিনি নিজের কপালে হাত দিয়ে বুঝতে পারে কপালের এক পাশে আলু জন্ম নিয়েছে।খুব ব্যাথা করছে হয়তো একটু রক্ত ঝরে গেলে ভালো লাগতো। আর এই বিহানের মা এতো ডেঞ্জারাস কেন? আমার সাথে তাদের কিসের এতো শত্রুতা? আমি তাদের কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি?

রিনির চিন্তার মাঝে তার শাশুড়ি হাত ধরে দোতলার চিলেকোঠার রুমে এক ধাক্কায় ফেলে দিয়ে বলে,”আজ থেকে ছয় মাসের জন্য এটার তোর আবাসস্থল। এটাকে জাত করে থাকার মতো করে নে।”

উনি এসব কথা বলে হনহন করে স্থান ত্যাগ করে। রুমটা দোতলার উপরে ছাদের সিঁড়িঘরের সাথে।এ ঘরে সব পুরাতন আসবাবপত্রে ভরপুর। তবে হ্যাঁ একটা রুম সাজাতে যা কিছুর দরকার সব কিছু এখানে আছে। রিনি বাধ্য মেয়ের মতো নিজের ছয় মাসের বাসস্থান সংস্কার করতে ব্যস্ত।

এদিকে সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে একটা সুন্দর লাল রঙের সুতি জামদানী শাড়ি পড়ে সোজা নিচে ডাইনিং রুমে চলে আসে। সেখান এসে মিসেস খান কে দেখে বলে,”শুভ সকাল শাশুড়ি মা!”

মিসেস খান বৃষ্টির কথায় কান দেয় না। তিনি মুখটা কালো করে স্থান ত্যাগ করে রান্নাঘরে চলে যায়।

বৃষ্টি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বাড়িরে কাজের মানুষকে বলে নাস্তা রেডি করে দিতে। নাস্তা রেডি করছিল এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে রোদ দ্রুত রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিল। তখন পেছন থেকে বৃষ্টি রোদের হাত ধরে বলে,”আরে আমার জামায় টা সকালে নাস্তা না করে এতো দ্রুতগামী গাড়ি হয়ে কোথায় যাচ্ছে? ”

রোদ- আমার দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। সেখানে ইমারজেন্সি তে খুব খারাপ অবস্থায় অনেক রোগীর ভীড় জমেছে। তাদের দ্রুত চিকিৎসার দরকার।

বৃষ্টি – নাস্তা রেডি হয়ে গেছে। আপনি একটু কিছু হলেও খেয়ে তারপর এখান থেকে যাবেন। নয়তো আপনার বাড়ির বাড়িয়ে যাওয়া হবে না।

রোদ- মগেরমুল্লুক না কি?

বৃষ্টি – উঁহু না! বউয়ের মুল্লুক এটা তাই। দেখুক অযথা আমার সাথে তর্ক না করে দ্রুত কিছুমিছু খেয়ে বেড়িয়ে পরলেই পারেন।

তখন মিসেস খান এসে বলে,”রোদের ইমারর্জেন্সি তে যখন কাজে যায়। তখন কোনে কিছু না খেয়ে সকালে বেড়িয়ে যায়। তাই অযথা রোদের সাথে জোড় জবরদস্তি করবে না।

বৃষ্টি – মা আপনার ছেলে বিয়ের আগে কি করতো তা জানার কোন আগ্রহ নেই। তবে এখন আমাদের সম্পর্কের সমীকরণ বদলে গেছে তাই আপনার ছেলেকেও বদলাতে হবে।

রোদ মহিলা মানুষের কথার প্যাচে পড়তে রাজি না। তাই সে টেবিলের সামনে গিয়ে একটা সিদ্ধ ডিম আর এক গ্লাস জুস খেয়ে দ্রুত বেড়িয়ে যায়।

রোদের চলে যাবার পর বৃষ্টি তার শাশুড়ি মা কে উদ্দেশ্য করে বলে,” শাশুড়ি মা আমাদের আকদ তো কমপ্লিট এবার ওলিমার ব্যবস্থা করুন।”

মিসেস খান ভ্রূ কুঁচকে প্রশ্ন করে -মানে কি?

বৃষ্টি একটা আপেল খেতে খেতে বলে, “আমার বৌ ভাতের ব্যবস্থা করেন। দেখুন যদি ভেবে থাকেন এসব কিছু করবেন না।” তাহলে আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ” বিয়েটা কিন্তু টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করেছিল। তাই আপনার আত্মীয়দের জনাতে না চাইলেও তারা জেনে গেছে। এবার তাদের দাওয়াত দিয়ে এই বিয়ের ক্যাচাল থেকে মুক্ত হতে পারেন। তাদের দাওয়াত করে যদি না খাওয়ান তাহলে হয়তো সারাজীবন তাদের সামনে মাথা নিচু করে থাকতে হবে।দরকার হলে সে ব্যবস্থা আমি করবো। আর হ্যাঁ আমার বৌভাতের অনুষ্ঠানের দিন আপনার কনিষ্ঠ কন্যার বৌভাতের ব্যবস্থা করিয়েন। মনে হয় না আপনার জামাতা সে সব কিছু করে তার বিয়ের ঢাকঢোল পিটাবে।”

একভাবে সব কথা বলে বৃষ্টি নিজের রুমে চলে যায়।

এদিকে মিসেস খান ভাবতে থাকে মেয়েটা ভুল কিছু বলে নি।
(হুট করে যদি লাস্ট পর্ব দিয়ে দেয় তখন কেমন লাগবে? তাই শেষ পর্ব না চাই- লে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন)



চলবে??????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here