রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -২৯

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_29

রোদের দাদীমা নাতনির এমন কাহিনী শুনে চিৎকার চেঁচামেচি করে বলতে থাকে এরা একটা অসহায় মেয়ের সাথে বড় অন্যায় করেছিল। সেই অন্যায়ের জন্য আজ এই বাড়ির সকলের এমন দুর্দশা।

রোদ একটু এগিয়ে দাদীমা কে প্রশ্ন করে,” কে কার সাথে অন্যায় করেছিল দাদীমা? ”

দাদীমা রিনির দিকে তাকাতেই রিনির মুখটা শুকিয়ে চানাচুর হয়ে যায়।

রিনির কাছ থেকে সরিয়ে দৃষ্টি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে। বৃষ্টি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

দাদীমা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসে।

বিহান, রোদ এসে দাদীমা’র পাশে বসে কথা শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

দাদীমা বলতে শুরু করে,,,,,,,,,,,

আজ থেকে কয়েক-বছর আগের কথা। রোদ দাদুভাই শুরু থেকে দেশের বাহিরে থাকতো। তাকে নিয়েই গল্পের শুরুটা।
একটা মেধাবী মেয়ে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে গ্রাম থেকে শহরে আসে। মেয়েটা খুব সরল মনে সহজেই সবার সাথে মিলেমিশে যেতো। মেয়েটার মা ছিলো না, বাবা ছিলো তাও অসুস্থ। বড় চাচা- চাচীর কাছে সে বড় হয়। তাদের বাড়িটা যেহেতু গ্রামে ছিলো তাই মেয়েটার পরিবারের কেউ চাইতো না মেয়ে মানুষ বেশিদূর পড়াশোনা করুক। তবে মেয়েটা প্রচুর মেধাবী ছিলো তা-ই সে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে শহরে পড়তে চলে আসে। এই শহরটা তার জীবনের গল্পটা বদলে দেয়।

এখানে এসে ভালো একটা কলেজে ইন্টারে ভর্তি হয়।
ও যে কলেজে ভর্তি হয় সেই কলেজে রিনিও পড়তো।
রিনির সাথে হঠাৎ করে মেয়েটার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেয়েটার গ্রামের বাড়ি বহুদূরে ছিলো। আর এই ঢাকা শহরে কোন আত্মীয় না থাকার কারণে তাকে কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়তে হতো।

মিশুক স্বভাবের মেয়েটা কে রিনির বেশ পছন্দ হয়।
সে মেয়েটা- কে আমাদের বাড়িতে সাথে করে নিয়ে আসে। মেয়েটার সাথে মিশে মনে হচ্ছিল না সে আমাদের অপরিচিত কেউ। মনে হচ্ছিল আমাদের আপন কেউ।
রিনি তাকে সাথে করে পুরোবাড়িতে ঘুরতে থাকে হঠাৎ করে ঐ কিশোরী মেয়েটার পা থমকে দাঁড়ায় একটা রুমের সামনে এসে। রুমটা আর কারো নয় রোদের রুম। রিনির সাথে সে রুমে প্রবেশ করে।

রোদ প্রশ্ন করে মেয়েটার নাম কি দাদীমা?

দাদীমা রোদের কথার জবাব না দিয়ে আবোরো বলতে শুরু করে।

রিনি- জানো বৃষ্টি এই সাজানোর গোছানো রুমটা আমার বড় ভাই রোদের।

বৃষ্টি- মাশাল্লাহ্ রুমটা অনেক সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যার রুচি এতো ভালো সে দেখতেও মাশাল্লাহ্ সুন্দর হবে।

রিনি- হুম! ভাইয়া মাশাল্লাহ্ অনেক সুন্দর।

বৃষ্টি – এ রুমের কোথায় তার কোন ছবি দেখছি না যে?

রিনি- ভাইয়া বিদেশে থাকলেও কি হবে? সে কি সব ট্রেন্ড ফলো করে আল্লাহ মালুম। সে তার রুমে কোন ছবি রাখতে রাজি না। সারা বাড়ি খুঁজেও তার একটা ছবি পাবে না। তবে আমার ছবির অভাব নাই।

বৃষ্টি – মাশাল্লাহ্! তার চিন্তা ভাবনা অনেক সুন্দর। আমি তোমার ভাইয়াকে না দেখেই তার রুম আর চরিত্রের উপর ফিদা হয়ে গেছি।

রিনি আর বৃষ্টি কিছু সময় মজা কর। তারপর ড্রয়িংরুমে সবার সাথে বৃষ্টির ভালোভাবে পরিচয় হয়।

আমাদের বাড়ির সবার বৃষ্টিকে খুব পছন্দ হয়। সে যেহেতু রিনির বয়সি তাই তার সম্পর্কে জানার পর আমাদের বাড়িতে থাকতে বলা হয়। সে প্রখমে রাজী হয় না।
তখন রিনির বাবা বৃষ্টির বাবার সাথে ফোনে কথা বলে। তার বাড়িতে রিনির সাথে থাকতে বলে। যেহেতু রিনি একাই থাকে ওর একটা সঙ্গী হবে।

বৃষ্টির বাবা অমত করে না। এতে যদি মেয়েটা একটা পরিবারের সাথে থাকে তাহলে এটা তো তার মেয়ের জন্য ভালো।

এরপর বৃষ্টি রিনিদের বাড়িতে থাকতে শুরু করে। সাদিকের সাথে রিনি আর বৃষ্টির খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সাদিক যে বৃষ্টিকে পছন্দ করতে শুরু করে এটা সবাই বুঝতে পারে। তবে বৃষ্টির মনে যে সাদিকের জন্য কোন অনুভূতি ছিলো না তা সবাই জানে। এইভাবে ওদের দু জনের কলেজ লাইফ শেষ হয়ে যায়।

এরপর দুজনে একসাথে ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি পরিক্ষা দিতে যায়। ওরা দুজনে ভার্সিটি তে চান্স পায়। সাদিক আগে থেকেই ওদের ভার্সিটিতে সিনিয়র ছিল।

ভার্সিটিতে প্রথম দিন একটা ছেলে বৃষ্টিকে প্রোপোজ করে। বৃষ্টি তাকে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে না করে দেয়। তবে! কেউ একজন বৃষ্টির নাম ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে ছেলেটার সাথে রেগুলার কথা বলতো। এমনি কি সেই ফেইক আইডি ছেলেটার সাথে চুটিয়ে প্রেম করে।
হুট করে একদিন সাদিক ভার্সিটির সবার সামনে বৃষ্টিকে প্রোপোজ করে বসে।

বৃষ্টি- সাদিক ভাই আপনার থেকে এমন কিছু কখনো আশা করি নাই।

তখন সেই ছেলেটা এসে সাদিকের সাথে ভার্সিটির সবার সামনে বৃষ্টিকে নিয়ে খুব ঝামেলা করে।
ওদের মাঝে এক সময় মারামারি শুরু হয়ে যায়।

ছেলেটা এক-সময় সবার সামনে বলে,” বৃষ্টির সাথে আমার গভীর প্রেমের সম্পর্ক আছে।”

সাদিক- ছেলেটার শার্টের কলার্ট ধরে বলে,”তোর কাছে কোন প্রমাণ আছে?”

ছেলেটা মোবাইল ফোন বাহির করে বৃষ্টি আর তার চ্যাটিং দেখায়। ছেলেটা বৃষ্টির অনেক ছবি বাহির করে দেখায়।

বৃষ্টি – চিৎকার করে বলে,”আমি এসবের কোন কিছুই জানি না।”

সাদিক- বৃষ্টির ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ব্রাউজারে আইডি লগ ইন করা। আইডি দেখে ফোনটা ছুড়ে ফেলে দেয়।

বৃষ্টি কান্না করতে করতে রিনিকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই তো জানিস আমি ফোনের কোন কিছুই বুঝি না।এসব কিছু মিথ্যা।কেউ ইচ্ছা করে আমাকে ফাঁসিয়ে দিছে।”

রিনি- তখন বলে, “দোস্ত প্রমাণ তো সব তো বিরুদ্ধে?তুই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবি কি করে?'”

বৃষ্টি কান্নারত অবস্থায় রিনি- সাথে বাড়িতে ফিরে আসে। খান বাড়ির সবাই এসব জানতে পারে দেখে বৃষ্টির সাথে রাগারাগি করে। বৃষ্টির অসুস্থ বাবাকে তারা ফোন করে পুরো বেপারটা বাড়াবাড়ি ভাবে বানিয়ে বলে। এতে অসুস্থ মানুষটা আরো অসুস্থ হয়ে যায়। কেউ বৃষ্টিকে বুঝতেই চেষ্টা করছে না।

এমন অবস্থায় মিস্টার খান- রিনিকে সোজা ভাবে বলে,”তোমার বান্ধবী কে বলে দাও কাল সকালে যেন আমাদের বাড়ি থেকে চলে যায়। আমরা তাকে এ বাড়িতে রাখবো না।”

বৃষ্টি জানে এখন যদি সে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যায় তাহলে সোজা তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে।
এতো কষ্টের পর সে এতো দূরে এসেছে!
এখন মাঝপথে সব কিছু হারাতে চাইছে না।
তাই সে ভার্সিটির স্যারদের সাথে যোগাযোগ করে।
সে ভার্সিটির হোস্টেলে সেটেল হবে।
আর যে এই কাজ করেছে তাকে খুঁজে বাহির করবে।
নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবেই।

(দেড়িতে দেওয়ার জন্য দুঃখীত)



চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here