#লাভার_নাকি_ভিলেন?
#পার্টঃ২০
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona
মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।অনেক্ষন কাঁদার পর সে নিচে আসল।
সবাই খুব মজা করছে কেউ মেহেদি পড়তে ব্যস্ত অনেকেই আবার নাচ প্র্যাকটিস করছে।সুমি বারবার মেঘলাকে বলল মেহেদি পড়তে কিন্তু মেঘলার এসব ভাল লাগছে না।
সে ঘরের এক কোণে বসে আছে কিন্তু ইরার সেটাও সহ্য হল না।
ইরাঃ এখানে বসে কি করছো?
মেঘলাঃ সবাইকে দেখছিলাম…আর কিছুনা।
ইরাঃ মানুষকে দেখার জন্য তোমাকে এ বাড়িতে রাখা হয়েছে?কাজগুলি কে করবে?
মেঘলাঃ অনুষ্টানের কাজের জন্য তো ইভেন্ট ম্যানিজমেন্টের লোক আনা হয়েছে।
ইরাঃ আমি সেসব কাজের কথা বলি নি এসো আমার সাথে।
মেঘলা ইরার সাথে গেল।
ইরা নিজের এক গাঁদা কাপড় বের করে দিয়ে বলল সেগুলি ধুয়ে দিতে।
মেঘলা মুখ ফসকে বলে ফেলল আমি এসব করলে আকাশ ভাইয়া রাগ করবেন…এর আগে মেঘলা কাজ করলে আকাশ সবসময় রাগ করত তাই মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলল।
ইরা হেসে বলল শোনো মেঘলা তুমি এখনো কল্পনার জগতে আছো সেখান থেকে বেরিয়ে এসো।এতদিন আমি এখানে ছিলাম না তাই আকাশ এমন করেছে কিন্তু এখন আমি চলে এসেছি আর তুমি আকাশের বউ এর কাজ করে দিচ্ছো আকাশ রাগ তো দূর বরং খুশি হবে। এতদিন যা হয়েছে ভুলে যাও এবার থেকে আকাশ শুধু ইরার কথা ভাব্বে।
কাপড় গুলি তাড়াতাড়ি কেচে শুকাতে দাও আর একটা কথা এরপর আমার মুখের উপড় কথা বললে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিব।
কথাগুলি বলে ইরা বাইরে চলে গেল
মেঘলা ভাবছে এই ভর সন্ধ্যা বেলা কাপড় ধোয়ার কি দরকার ছিল কিন্তু মালিক পক্ষ যখন বলেছে করতে তো হবেই। মেঘলা কাপড় কাচতে লাগল কাপড় ধুতে ধুতে রাত হয়ে গেছে।
মেঘলা যখন নিচে নামল সবাই খেতে বসেছে। সুমি মেঘলাকে খেতে ডাকল মেঘলার মন খারাপ তাই খেল না।
।
রাত ৯ বাজে আকাশ আর কয়েকটা ছেলে অনেকগুলি শাড়ি আর অর্নামেন্টস নিয়ে আসল। সব কাজিনরা খুশিতে গিয়ে যে যার মত জিনিস নিচ্ছে। হলুদে সবাই সেম রং এর শাড়ি পড়বে তাই এ ব্যবস্থা।
আকাশ পাশে বসে ফোন টিপছে।
মেঘলা মন খারাপ করে একটু দাঁড়িয়ে আছে ইচ্ছে করছে আকাশ কে ইচ্ছামত মারতে।কিন্তু এখানে তো সবাই আছে।তাই মারা তো দূর বকা দেওয়াও সম্ভব না।
আকাশ একবারো মেঘলার দিকে তাকাচ্ছে না.. ফোনে গেম খেলছে।
মেঘলাঃ ইরা আপু তো সত্যিই বলেছে আকাশ তো সবাইকে সব কিনে দিল কই আমাকে তো একবারো বলল না শাড়ি নিতে( মনে মনে)
হটাৎ সুমির চোখ পড়ল মেঘলার দিকে।
সুমিঃ আরে মেঘলা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন এসো শাড়ি নাও পড়ে তো আর পাবে না।
মেঘলার ইচ্ছে নেই শাড়ি নেওয়ার কিন্তু যার বিয়ে সে সবার সামনে বলছে না নিলে খারাপ দেখায় তাই মেঘলা এগিয়ে গেল সুমির হাত থেকে শাড়ি নেওয়ার জন্য মেঘলা হাত বাড়াতেই পাশ থেকে আকাশ বলল ওকে শাড়ি দিচ্ছিস কেন ওর জন্য তো শাড়ি আনি নি।
কথাটা শুনে যতটা কষ্ট পাওয়া যায় ততটাই পেল মেঘলা। কিন্তু কষ্টের চেয়েও লজ্জা পেল বেশি কারন আকাশের কথা শুনে সবাই হাসতে শুরু করল।
মেঘলা শাড়িটা ছেড়ে দিল।
।
ইরাঃ সুমি আপু তুমিও না… কখনো শুনেছো কাজের মেয়ে আর বাড়ির মেয়েরা সেইম কাপড় পড়ে? তোমরা কেন যে ওকে এত মাথায় তুলো বোঝি না। কেন ভুলে যাও মেঘলা এই বাড়ির কাজের মেয়ে।আকাশ একদম ঠিক কাজ করেছে ওর জন্য সেম কাপড় আনলে আমাদের অপমান করা হত।
আর মেঘলা তুমিও সুমি আপু বলার সাথে সাথেই নির্লজ্জের মত এসে শাড়ি নেওয়া শুরু করে দিয়েছো।লজ্জা বলতে নেই তাই না?
যাই হোক শাড়িটা তুমি ধরেছো এটা আর কে পড়বে? আকাশ থাক অনেক শাড়ি আছে তো একটা দিয়ে দেই।
।
লজ্জায় মেঘলার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।
।
আকাশ এবার ফোন টা পকেটে রেখে উঠে দাঁড়াল।
আকাশঃ ইরা কোন শো তে কখনো দেখেছো শোজ টপার,ভায়া মডেলের মত একই রকম কাপড় পড়ে।
।
ইরাঃ মানে কি?
।
আকাশঃ মানে টা হল মেইন মডেল কখনো পিছনের সাড়ির মডেলদের মত ড্রেস পড়ে না।কোন মুভির সং বা গ্রুপ পারফপারফরম্যান্স এ লক্ষ্য করে দেখো মেইন মডেল সবার চেয়ে এক্সক্লুসিভ ড্রেসটাই পড়ে এক্ষেত্রেও তাই মেঘলার বয়ফ্রেন্ড চায় না মেঘলা অন্যদের মত কোন অর্ডিনারি ড্রেস পড়ুক।আর শাড়ি তো অবশ্যই না। কারন ও শাড়ি সামলে রাখতে পাড়ে পেট দেখা যায় তাই ও শাড়ি শুধু তার হজবেন্ডের সামনেই পড়বে আর কারো সামনে না।
আর অই যে দেখছো সুমির জন্য করা শপিং ওখানে মেঘলার জন্য ৩ টা এক্সক্লুসিভ লেহেংগা আছে যেগুলি ডিজাইনার দিয়ে শুধুমাত্র মেঘলার জন্যই তৈরি করা হয়েছে মার্কেটে তার ২য় পিস পাওয়া যাবে না।১ টা হলুদের জন্য ১ টা বিয়ের ১ টা রিসিপশনের। আশা করছি বোঝতে পেড়েছি মেঘলা তার বয়ফ্রেন্ডের কাছে কতটা স্পেশাল তাই এর পর থেজে ওকে কথা বলার আগে ১বার নয় ২ বার নয় ১০ বার ভেবে নিও।
।
মেঘলা অবাক হয়ে আকাশের কথা শুনছে।
লজ্জায় ইরার মাথা নিচু হয়ে গেল….সে ভাবতেও পাড়েনি আকাশ এভাবে রিয়েক্ট করবে।
।
আকাশ চলে যাচ্ছিল কিন্তু আবার পিছন ঘুরে বলল ওহ সুমি আপু তোমাকে তো একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম তুমি আজ আমার ঘরে ঘুমিও।
।
সুমিঃ কি বলছিস আকাশ তর ঘরে তো পারমিশন ছাড়া কারোর ঢুকাই নিষেধ আংকেল আন্টি পর্যন্ত ঢুকার আগে পারমিশন নেয় আর তুই বলছিস সেই ঘরে ঘুমাতে কিভাবে সম্ভব এটা?
আকাশঃ হুম আমিই বলছি তখন শুনলে না বল্লাম মেঘলার ঘরে ইরা ঘুমাবে।আসলে আজ যদি মেঘলা নিজের ঘরে ঘুমায় তাহলে ওর কারো না কারো সাথে রুম শেয়ার করে ঘুমাতে হবে।আর মাঝরাতে সেই অন্যজনের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা হতে পাড়ে সে দরজা খোলে বাইরে যেতেই পাড়ে আর ঘুমের মধ্যে মেঘলার পড়নের কাপড় এলোমেলো হয়ে থাকতে পাড়ে তখন যদি সেদিক দিয়ে কোন ছেলে যায় মেঘলাকে এই অবস্থায় দেখতেই পাড়ে এমন ঘটবেই বলছি না তবুও ঘটতেও তো পাড়ে তাই এই ইন্সিকিউরিটি টা মেঘলার বয়ফ্রেন্ড নিতে চায় না।
তাই মেঘলা আমার ঘরে ঘুমাবে আর আমারো থাকার কোন জায়গা নেই তাই আমিও অই ঘরেই সোফায় ঘুমাব কিন্তু একটা ছেলে একটা মেয়ে তো এক ঘরে থাকতে পাড়ে না তাইনা? লোকে খারাপ বলবে তাই তুমি ওর সাথে ঘুমাবে।
সুমিঃ বাহ বাহ আমাদের মেঘলার কপাল তো দেখি একদম সোনায় সোহাগা ওর বয়ফ্রেন্ড কত ভাবে ওর জন্য।সুমি ইরার দিকে তাকিয়ে ইরাকে ইংগিত করে বলল মেঘলা শোনো এই বিএফকে সামলে রেখো দেখো যেন কারোর যেন নজর না পড়ে।
মেঘলা আকাশের কথায় খুব অবাক হয়ে গেল।
উনি আমার কথা এত ভাবেন….!! কিন্তু আকাশ ইরার বিয়ের কথা পরক্ষনেই মনে পড়ে গেল।আবার রাগ উঠে গেল।
তাই মেঘলা অভিমানি সুরে বলতে লাগল দরকার নেই আমার এমন বয়ফ্রেন্ডের… আর আপনি উনাকে বলে দিবেন আমি এসব ড্রেস পড়ব না আর আপনার ঘরেও ঘুমাব না।তার সব কথা শুনতে আমি বাধ্য নই।
আকাশঃ তুই ড্রেস পড়বি নাকি ফেলে দিবি সেটা তর আর তোর বিএফের ব্যাপার,তোরা বোঝে নিস এর মধ্যে আমি নেই কিন্তু যেখানে সেখানে ঘুমাতে তুই পাড়বি না আমার ঘরেই ঘুমাতে হবে তোকে।
মেঘলাঃ বলছি না পাড়ব না….
আকাশঃ দরকার হলে হাতপা বেঁধে ফেলে ঘরে বন্দি করে রাখব তাও মাঝ রাতে এত ছেলেদের মাঝে ঘুরাঘুরি করা চলবে না। যাই হোক তোর বর তোকে অনেক্ষন থেকে ফোন করছে তুই নাকি ফোন তুলিস নি। আবার এখন নাকি ফোন বন্ধ করেও রেখেছিস?
মেঘলাঃ আমার ফোন আমি বন্ধ রাখব নাকি খোলা রাখব সেটা কি আপনাদের বলতে হবে? আর এতক্ষন তো হতচ্ছাড়া বয়ফ্রেন্ড ছিল এখন বর হল কি করে? শুনোন আমি মরে গেলেও অই উগান্ডাকে বিয়ে করব না।
আকাশঃযা বোন ঘরে যা, ঘরে গিয়ে ২ টা প্যারাসিটামল খেয়ে নে। মনে হয় মাথায় সমস্যা হয়েছে খুব বেশি উল্টা পালটা বকছিস।
মেঘলাঃ বিষ খাব বিষ বোঝেছেন….সবাইকে মুক্তি দিয়ে দিব।
আকাশ প্রচন্ড রেগে বলল কথাগুলি বলতে কলিজা কাঁপছে না? সাহস বেড়ে গেছে মনে হয়? ওহ বোঝেছি অনেকদিন হয় থাপ্পড় খাস না তাই না?
মেঘলা আর কিছু বলার সাহস পেল না কারন সে জানে এবার কথা বল্লে থাপ্পড় খেতে হবে।
আকাশঃ রান্না ঘরে গিয়ে চুপচাপ খাবার নিয়ে আমার ঘরে আয় ক্ষুদা পেয়েছে… আর একটু উল্টা পালটা করবি তাহলে…. বাকিটা সবার সামনে আর না বলি কি যে হবে তুই নিশ্চুই সেটা জানিস।
মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে….
আকাশঃ কথা কানে যায় নি? বল্লাম না ক্ষুদা পেয়েছে তাড়াতাড়ি যা খুব বাড়াবাড়ি শিখেছিস দেখছি(ধমক দিয়ে)
মেঘলাঃ উনি যা ইচ্ছা তাই করতে পাড়বে আমি করলেই মার খেতে হবে আজব নিয়ম,কেন আমি কি মানুষ নই (মনে মনে)
আকাশঃ যেদিন আমার মত বুদ্ধি হবে সেদিন তুই ও যা খুশি করিস।
মেঘলা অবাক এর সাথে ভয় মিশিয়ে আমতা আমতা করে বলল আ আ আ আমি কিছু বলি নি…
আকাশঃ আমি স্পষ্টই শুনেছি কি বলেছিস এবার যদি না যাস আর খাবই না।
মেঘলা কি সর্বনাশ মনের কথাও শুনে ফেলে মেঘলা পালা এখান থেকে এক্ষুনি পালা (মনে মনে)
আকাশঃ আবার বকবক করছিস….
মেঘলা পিছন ঘুরে দৌড়।
আকাশ ইরাদের দিকে তাকিয়ে বলল
সুমি আপু কি বোঝলে….???
সুমি হেসে বলল জেরি আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র। তোর চোখ আছে মানতে হবে একদম পার্ফেক্ট আছে….
ইরাঃ কি পার্ফেক্ট….???
সুমিঃ তুমি বোঝবে না। ভাই তুই এগিয়ে যা আমি তোর পাশে আছি।
আকাশঃ সময়মত ঘুমাতে চলে এসো…. বলেই উপড়ে চলে গেল।
রাগে ইরার গাঁ জ্বলছে….এই অপমানের শোধ আমি তুলব মেঘলা….
।
।
।
চলবে
লাভার_নাকি_ভিলেন?
#পার্টঃ২১
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona
আকাশঃ কথা কানে যায় নি? বল্লাম না ক্ষুদা পেয়েছে তাড়াতাড়ি যা (ধমক দিয়ে)
মেঘলাঃ উনি যা ইচ্ছা তাই করতে পাড়বে আমি করলেই মার খেতে হবে আজব নিয়ম,কেন আমি কি মানুষ নই (মনে মনে)
আকাশঃ যেদিন আমার মত বুদ্ধি হবে সেদিন তুই ও যা খুশি করিস।
মেঘলা অবাক এর সাথে ভয় মিশিয়ে আমতা আমতা করে বলল আ আ আ আমি কিছু বলি নি…
আকাশঃ আমি স্পষ্টই শুনেছি কি বলেছিস এবার যদি না যাস আর খাবই না।
মেঘলা পিছন ঘুরে দৌড়।
বিপাশার এসব মোটেও ভাল লাগল না।সেও কিছুক্ষন পরে মেঘলার পিছু পিছু রান্না ঘরে গেল।
মেঘলা আকাশের ১৪ গোস্টি উদ্ধার করতে করতে প্লেটে খাবার নিচ্ছে।
বিপাশাঃ মেঘলা বাইরে অনেকেই বসে আছে এদের তো কিছু খাবার দেওয়া হয় নি তুমি প্লিজ একটু পায়েশ বসিয়ে দাও না।
মেঘলাঃ আচ্ছা ভাবি আমি ভাইয়ার খাবারটা দিয়ে এসেই করে দিচ্ছি।
বিপাশাঃ আরে আকাশ তো কেবল ঘরে গেল ও ফ্রেশ হতে হতে তুমি বসিয়ে দাও।
মেঘলা কারোর মুখের উপড় কথা বলতে পাড়েনা আর আকাশের উপড়েও রেগে আছে তাই আকাশের খাবার রেখে পায়েশের জোগার করতে লাগল
বিপাশাঃ এবার দেখি আকাশের এত কেয়ার কোথায় যায়। আকাশ যেভাবে বারবার বলে গেল দেরি হলে তোমার কি অবস্থা করবে দেখতেই পাবে (মনে মনে)
আকাশ এদিকে অপেক্ষা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠল তার খুব রাগ হচ্ছে। সে রুম থেকে বেরিয়ে দেখল মেঘলা রান্না ঘরে কিছু রান্না করছে এটা দেখে আকাশ ক্ষেপে গেল, রাগে ছাদে চলে গেল প্রায় আধা ঘন্টা পড়ে নিজের ঘরে ফিরে আসল।
ততক্ষনে মেঘলাও এসেছে তার ঘরে।
আকাশ রেগে বলল লাগবে না খাবার নিয়ে যা এসব….
মেঘলাঃ আগে বল্লেই তো হত তাহলে কষ্ট করে আনতাম না।
আকাশঃ খাবার এনে আমার জীবন একদম ধন্য করে দিয়েছিস মনে হয়?চাই না তোর খাবার।
মেঘলাঃ ও আমি তো ভুলেই গেছিলাম। বাড়িতে এখন আপনার বউ আছে সেই নিশ্চুই খায়িয়ে দিয়ে গেছে তাহলে আমার খাবার ভাল লাগবে কেন?যাচ্ছি আমি বলে মেঘলা চলে যাইয়ে চাইল।
আকাশ মেঘলার হাত ধরে বলল তুই দেড়ি করে এসেছিস জন্য রাগ করলাম আর তুই আমার রাগ না ভাংগিয়ে নিজেই রাগ দেখাচ্ছিস?
আমাকে খাবার না দিয়েই চলে যাচ্ছিস…??
মেঘলাঃ হাত ছাড়ুন যখন তখন মেয়েদের গায়ে হাত দিতে খুব ভাল লাগে তাই না? দুশ্চরিত্র ছেলে একটা।
আকাশঃ নিচে তোর আচারন আশ্চর্যজনক লাগলেও অস্বাভাবিক লাগে নি কিন্তু এখন তো দেখছি তোর মাথায় সত্যি সত্যি গন্ডগোল দেখা দিয়েছে….কাকে কি বলছিস বোঝতে পাড়ছিস?
মেঘলাঃ যাকে যা বলা উচিত তাই বলছি….আপনার মত ছেলেদের জন্যই আমার হাজার হাজার মেয়েদের স্বপ্ন ভেংগে যায়,তাদের জীবন নস্ট হয়ে যায়….
আকাশ অবাক হয়ে বলল কিসব বলছিস মেঘলা?
মেঘলাঃ ঠিকি বলছি কতগুলি মেয়ের জীবন নষ্ট করেছেন হয়ত নিজেও জানেনা আপনাকে দেখে আজ আমার লজ্জা হচ্ছে কি করে এমন একটা প্রতারককে আমি ভালবাসলাম? ইরা আপু কে বিয়ে করার পড়েও আমার সাথে এত ঘনিষ্ট হতে লজ্জা করল না? ছি ছি ছি আজ যদি আপু না বলত আর বিয়ের ছবি গুলি না দেখতাম আমি তো এসব জানতেই পাড়তাম না।আপনাকে দেখে ঘিন্না হচ্ছে…আপনার এই অপবিত্র হায়ে আর কখনো আমাকে স্পর্শ করবেন i just hate you.
আকাশ কোনরকম নিজেকে কন্ট্রোল করে মেঘলার হাত থেকে খাবার টা টেবিলে রাখল তারপর আলমারি থেকে কিছু কাপড় নিয়ে মেঘলার উপড় ছুড়ে মারল।
মেঘলাঃ কি হয়েছে?এগুলি দিয়ে কি হবে?
আকাশঃ এগুলো নিয়ে আমার সাথে আয়…
মেঘলা কিছু বোঝল না সে আকাশের পিছু পিছু গেল।
আকাশ নিচে নেমে ইরার কাছে গেল মেঘলাও তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে….
আকাশ মেঘলার হাত থেকে কাপড় গুলি নিয়ে ইরার সামনে রেখে বলল ইরা আমার কাপড় গুলি কেচে দাও তো….
আকাশের কথায় সবাই যেন থমকে গেল।
বিপাশাঃ কি বলছো এসব ও কাপড় কাচবে মানে?
আকাশঃ হ্যা অবশ্যই কাচবে ও যেহেতু আমার বউ তাহলে তো ওর উচিত আমার সব কাজ করা তাই না? আর আমি ভাইয়া নই আমার বউ বাড়ির সব কাজ করবে ইরা বেবি কাজে লেগে পড়ো।আজ থেকে তুমি আমাদের সংসার চালাবে।
ইরা অবাক হয়ে বলল কিন্তু আকাশ আমাদের তো বিয়েই হয়নি?
ইরার কথা শুনে মেঘলা আকাশ থেকে পড়ল,কি মিথ্যাবাদি মেয়েরে বাবা একটু আগেই তো বলেছে বিয়ে হয়েছে…
আকাশঃ ওমা বিয়ে হয় নি বোঝি…?? তাহলে সারা বাড়ির লোক কে কেন বলে বেড়াচ্ছো বিয়ে হয়েছে?
ইরাঃ ……..
বিয়ে হয়নি শুনে মেঘলার মাথা ঘুরছে ছি ছি এই মেয়ের কথায় আকাশকে কতগুলি খারাপ কথা বলেছি আজ আমার কপালে তো দুঃখ আছে জানি কিন্তু বিয়ে যদি না হয় তাহলে ছবিগুলি…?? (মনে মনে)
ইরাঃ না মানে বিয়ে হয়েছে বলতে এনগেইজমেন্ট হয়েছে সেটাই বলেছি আর কি…সেদিন যদি তুমি রাজি থাকতে তাহলে তো বিয়েটা হয়েই যেত।
আকাশঃ যেটা হয় নি সেটা না বলে যেটা হয়েছে সেটা বল্লে ভাল হয় না?
ইরাঃ ভুল হয়ে গেছে সরি আকাশ আমি বোঝতে পাড়ি নি।
আকাশঃ ভুল যখন করেই ফেলেছো কাপড় গুলি ধুয়ে দাও তাহলে আর এমন ভুল হবে না। মেঘলার দিকে তাকিয়ে আকাশ বলল আজ হোক কাল হোক তোমার সাথে বিয়েটা তো আমার হবেই আফটার অল দুশ্চরিত্র তো হতে পাড়ব না।সবাই যখন ধরেই নিয়েছে বিয়েটা হয়ে গেছে তাহলে বিয়েটা হবেই তাই বরের কাজ করা এখন থেকেই শিখে ফেলো। যদি কাজ করতে না চাও বলতে পাড়ো তাহলে আমি ভেবে দেখব….
ইরাঃ না না আমি করে দিচ্ছি, সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে কি এত সহজে ছাড়া যায় (মনে মনে) কিন্তু মেঘলা তোকে দিয়ে কাপড় ধুয়িয়েছি বলে আকাশকে দিয়ে আমায় জব্দ করালি এর ফল ভাল হবে না… সুযোগ একদিন আমারো আসবে…
আকাশ চলে যাচ্ছে মেঘলা দৌড়ে গিয়ে বলল বিয়ে হয়নি সেটা ঘরে বল্লেই তো হত সবার সামনে ইরা আপুকে এভাবে বলার কি ছিল? উনি নিশ্চুই ভেবেছে আমি এসব করিয়েছি।
আকাশঃ ঘরে তোকে সারাদিন বললেও তুই শুনতি না তাই যে বলেছে বিয়ে হয়েছে তাকে দিয়েই বলিয়ে দিলাম বিয়েটা হয় নি….!!আকাশ কথায় নয় কাজে বিশ্বাসি।সর সামনে থেকে তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা বা সময় কোনোটাই আমার নেই।বলে আকাশ চলে যাচ্ছে।
মেঘলাঃ ভাইয়া আর একটা প্রশ্ন ছিল একটু শুনুন না? আকাশের পিছন পিছন ছুটছে মেঘলা কিন্তু আকাশ তাকে পাত্তা না দিয়ে ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিতে চাইলো, মেঘলা তার আগেই কোন রকমে ঘরে ঢুকে গেল।
আকাশঃ মেঘলা বের হ ঘর থেকে তোর সাথে আমার কোন কথা নেই।
মেঘলাঃ আপনি না বলেছেন আমি আজ এ ঘরে থাকব…??
আকাশঃ হুম থাকবি কিন্তু তুই কি এখন ঘুমাবি? আমার তো মনে হয় না তুই ঘুমাবি কানের কাছে জ্ঞান করবি আমার রাগ উঠবে তাই এখন যা পড়ে আছিস যদি ঘুমাস তাহলে ঘরে থাক না হলে এক্ষুনি বের হ।
মেঘলাঃ ঘুমাব তো…
আকাশঃ ঠিক আছে তাহলে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়…একটা আওয়াজ করবি তাহলে গলা টিপে দিব।
মেঘলাঃ খুব রাগ করেছে মনে হচ্ছে.আর করবেই বা না কেন?কতগুলি খারাপ কথা বল্লাম… রাগ করাটা স্বাভাবিক কিন্তু রাগ তো ভাংগাতে হবে (মনে মনে)
আকাশ সোফায় বসে এক মনে গেম খেলেছে মেঘলার দিকে তাকানোর নামেই নিচ্ছে না।
মেঘলা বিছানায় শুয়ে বার বার আকাশ কে উঁকি মেরে দেখছে আর চিন্তা করছে কি বাহানা নিয়ে কথা বলা যায়?
হটাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল।
সে উঠে গিয়ে একটা মেহেদী নিয়ে আসল।
মেঘলাঃ আমাকে কেউ ভালবাসে না তাই কেউ একটু মেহেদিও কেউ পড়িয়ে দিল না….. (অভিমানি কন্ঠে)
আকাশঃ…..
মেঘলা এবার আর একটু জোরে বলল আমি কি বুড়ি হয়ে গেছি? আমার কি ইচ্ছা করে না?
আকাশ ফোনের দিকে মুখ রেখেই বলল কানের কাছে জ্ঞান জ্ঞান করবি না বলছি না?নিচে গিয়ে কাউকে বল পড়িয়ে দিবে।
মেঘলাঃ আমার কেউ নেই… আমাকে একা একাই পড়তে হবে।বলে নিজেই মেহেদি দিতে শুরু করল মেহেদী পড়তে গিয়ে গালে,চুলে,জামায় সব জায়গায় মেহেদি লাগিয়ে ফেলেছে সে।
আকাশঃ উফফ….আর সহ্য হচ্ছে না হচ্ছেটা কি এসব?কি করছিস এগুলা?
মেঘলাঃ কোথায় কি হয়েছে?মেহেদি পড়ছি।
আকাশঃ পড়ার সাথে সাথে একটু খেয়েও দেখ কেমন লাগে?
মেঘলাঃ আজব তো….কি ধরনের কথা এগুলো? জীবনেও শুনি নি মেহেদী খাওয়া যায়।
আকাশঃ আমিও দেখিনি কাউকে চুলে গালে জামায় মেহেদী পড়তে…
মেঘলা এবার লক্ষ্য করল আর দেখে অবাক হলেও মুখ ভার করে বলল তাতে আপনার কি?আমাকে তো আর পড়িয়ে দিবেন না।
আকাশ উঠে গিয়ে বলল বোঝেছি উঠ গিয়ে ভাল করে হাতমুখ ধোয়ে আয়….
মেঘলাঃ কেন?
আকাশঃকথা বলতে ইচ্ছে করছে না যাবি নাকি যাবি না?
মেঘলা কথা না বাড়িয়ে গিয়ে ধুয়ে আসল।
আকাশ মেহেদিটা নিজের হাতে নিয়ে মেঘলাকে পাশে বসিয়ে মেঘলার হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিতে শুরু করল।
মেঘলা এটাই তো চাচ্ছিলাম….এবার কথা না বলে যাবে কোথায়?
মেঘলাঃ একটা কথা বলি…
আকাশঃ না…
মেঘলাঃ কিসের না? আমি বলছি আপনি শুনলে শুনুন না শুনলে নাই… আমি তো কাউকে বলি নি আমার কথা শুনতে।
আচ্ছা আমি কাপড় ধুয়েছি এটা কেউ জানল কি করে?আমি তাকে বলি নি আর আমাকে কাপড় ধুতে কেউ দেখেও নি তাহলে তিনি কি করে জানলেন?
আকাশ মেহেদী পড়ানোর দিকে মনোযোগ রেখেই বলল ছাদে লাইটিং ভালো করে করা হয়েছে কিনা দেখতে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানে গিয়ে অদ্ভুত কিছু দেখলাম।
মেঘলাঃ কি দেখলেন?
আকাশঃ ছাদে কিছু ভিজা কাপড় ঝুলছে বিয়ে বাড়িতে এতগুলি কাপড় ধোয়ার কার ইচ্ছে হতে পাড়ে তাও এই রাতের বেলা চিন্তা করছিলাম তখন মনে হল আমাদের বাড়িতে তো তুই আর ভাবি ছাড়া কোন মেয়ে নেই, তোর আর ভাবির ২ জনের কাপড় চোপড় আমার চিনা,বাকি থাকল সুমি সে টিশার্ট প্যান্ট পড়ে অতএব ভিজা কাপড় গুলি ওর নয় তাই বোঝলাম কাপড়গুলি ইরার আর তুই ছাড়া বাড়িতে সবাই আজ মেহেদি পড়েছে মেহেদি হাতে কেউ নিশ্চুই এতগুলি কাপড় কাচবে না তাই বোঝলাম এগুলি তুই ধুয়েছিস।
মেঘলাঃ ওমা কি বুদ্ধি আপনার…কিন্তু আমি ধুলেই বা কি? তাই বলে ইরা আপুকে দিয়ে কাজ করাবেন?
আকাশঃ আমার বউ আমি কি করাব না করাব আমি বোঝব,তুই চিন্তা করছিস কেন?
মেঘলাঃ তাই তো….!!!
আকাশঃ আচ্ছা মেঘলা তোর কি একবারো মনে হল না ইরার সাথে যদি আমার বিয়েই হয়ে থাকে তাহলে ও কেন আমাদের বাড়িতে থাকে না আর যদিওবা না থাকে তাহলে আসার পর কেন তোর রুমে থাকবে আমার রুমে কেন নয়?
মেঘলাঃ এসব তো আগে ভাবি নি।
আকাশঃ এসব না ভাবলেও ভেবেছিস আকাশ আমাকে কিভাবে ঠকাল,আমার সাথে প্রতারনা করলো? আমাকে নিয়ে খেলল এসব ঠিকি ভেবেছিস তাই না?
মেঘলাঃ ভাবাভাবির কি আছে খেলেছেনই তো…
এতক্ষন আকাশ নিচের দিকে তাকিয়ে মেহেদি পড়াচ্ছিল আর কথা বলছিল কিন্তু মেঘলার এই কথাটা শুনে মেহেদি পড়ানো বন্ধ করে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল কি করেছি?
মেঘলাঃ খেলেছেন….
আকাশ একটা থাপ্পড় মারল…
মেঘলা যেই গালে হাত দিতে যাবে আকাশ তার হাত ধরে বলল মেহেদী নস্ট হলে মেরে ফেলব।
মেঘলাঃ মারলেন কেন?মিথ্যা কি বলেছি এনগেইজম্যান্ট আর বিয়ের মধ্যে পার্থক্য কি?
।
।
।
চলবে…!!!