#শুভ্র_রাঙা_প্রেম 🤍
#পর্ব_৩
#Usha (Writer)
৫.
মিসেস.তৌসি আদৃতার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো
~তুমি এমনটা করবে আমি কখনো ভাবতে পারিনি আদিয়াত।তুমি জানো না আমার কত ইচ্ছে ছিলো তোমার বিয়ে নিয়ে?অর্ণব আগেই একটা মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছে তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে তাই আমি হাসিমুখে মেনে নিয়েছি আর তোমার ছোট হওয়ার পরেও তোমার আগেই ওর বিয়ে ঠিক করেছিলাম।কিন্তু তুমি?তুমি তো কাউকে ভালোবাসতে না আর দু’দিন আগেও তুমি বিয়ে করতে নারাজ ছিলো।তবে কি এমন হলো যে এই মেয়েকে বিয়ে করলে?জানো আমি কতকিছু ভেবে রেখেছিলাম আর বড়ছেলের বিয়ে নিয়ে?আর তুমি আমার সব ইচ্ছেরও কোনো মূল্য দিলে না?আমার অনুমতি ছাড়া আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে নিলে?
আদিত্য আহমেদ চুপ করে আছে তিনি চাচ্ছেন মা-ছেলের ব্যাপার তারাই মিটিয়ে নেক আর আদৃতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আদিয়াত শান্ত ভাবে মায়ের সকল অভিযোগ শুনলো।তারপরে মায়ের দিকে তাকিয়ে খুবই শান্ত কন্ঠে বললো
~সরি মা।আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি জানি আমার তোমায় সব জানানো উচিৎ ছিলো কিন্তু তখন সত্যিই তোমায় জানানোর মতো পরিস্থিতিতে ছিলাম না।তুমি তো সবসময়ই আমাকে বিয়ের জন্য পাগল করে ফেলতে তাহলে এখন এমন করছো কেন?সবকিছু মেনে নাও না মা।আর বাকি রইলো তোমার ইচ্ছে? তুমি এখন নাহয় তোমার ইচ্ছেগুলো পূরণ করো?
তৌসি আহমেদ রাগী কন্ঠে বলে উঠলো
~আদিয়াত আমি তোমায় বিয়ের জন্য পাগল করতাম মানে এই না যে যাকে তাকে বিয়ে করে নিয়ে আসবে তুমি?আর কি মেনে নিতে বলছো তুমি আমায়?অর্ণব তিষাকে পছন্দ করেছে আমি কিছু বলেছি?উহু বলিনি কারণ তিষা মেয়েটি যথেষ্ট সুন্দর আর স্মার্ট।আর ও (আদৃতাকে উদ্দেশ্য করে) ওর মধ্যে কি এমন আছে?আমারতো মনে হচ্ছে তিষা ওর সৎ বোন হয়ে এতো বড়লোক বাড়ির বউ হবে সেটা মেনে নিতে না পেরে লোভে পড়ে তোমাকে ফা’সি’য়ে বিয়ে করেছে।
এসব শুনে আদৃতার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা নোনোজল।আর আদিয়াত এতক্ষণ হাত মুঠ করে ছিলো কিন্তু আদৃতার চোখে পানি দেখে ও রেগে গিয়ে বললো
~ওকে তুমি কতটুকু চেনো মা?একটা মানুষকে ঠিকমতো না জেনে না চিনে তার সম্পর্কে কোনো খারাপ মন্তব্য করাটা কিন্তু ঠিক না মা।দু’দিনও তো ওকে কাছে থেকে দেখলে না এরমধ্যেই ওর সম্পর্কে এতো কিছু জেনে গেলে?কিন্তু আমি তো জানতাম আমার মা অনেক নরম মনের একটা মানুষ,সে উপরে যতই রাগ দেখাক সে কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে পারে না।তবে কি আমি এতোদিন ভুল ছিলাম?আর রইলো ওরমধ্যে কি আছে?যদি গুণের দিক দিয়ে দেখো তো ও যথেষ্ট গুণবতী, অন্তত শপিং করে পার্টি করে টাকা নষ্ট করে না।আর রূপের দিক দিয়ে যদি দেখো তাহলে তোমার আদরের বৌমা তিষা আদৃতার নখের যোগ্যও না।সারাদিন ভারি মেকআপ নিয়ে ঘুরলেই সেটাকে রূপ বলে না।
তৌসি আহমেদ রেগে চিৎকার করে বললো
~আদিয়াত চুপ করো তুমি।
আদিয়াত নিজেও রেগে দ্বিগুণ চিৎকার করে বললো
~কেন চুপ করবো?নিজের সামনে নিজের স্ত্রীকে অপমানিত হতে দেখে চুপ করে থাকাটা কাপুরুষের কাজ।আর আমি মোটেও কাপুরুষ নই।আমি নিজের বউয়ের সম্মান রক্ষা করতে জানি।
তৌসি আহমেদ রেগে গিয়ে বললো
~বাহ্ ভালোই তো একদিনেই দেখছি বস করে নিয়েছে এই মেয়ে তোমায়?এখন নিজের মা’কে কথা শোনাচ্ছো?
আদিয়াত বললো
~আমি যা বলেছি সব কথাই সত্যি। আর তোমাকে এখানে কথা শোনানোর মতো কিছু আমি দেখছি না তুমি কয়েকটা কথা বলেছো আর আমি শুধু সেটারই উত্তর দিয়েছি।
তৌসি আহমেদ অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করে আদিয়াতকে বললো
~আদি দেখো তোমার পুরোটা জীবন এখনো পরে আছে।তুমি এই মেয়েটাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও আমি ওর চেয়ে হাজার গুণ ভালো মেয়ে দেখে তোমার বিয়ে দিবো বাবা।
ডিভোর্স শব্দটা শুনতেই কেঁপে উঠলো আদৃতা।
আদিত্য আহমেদ এতক্ষণ চুপ থাকলেও এখন আর চুপ থাকলো না।তিনি বললেন
~তৌসি তুমি চুপ করো।বাড়িভর্তি মেহমান এখন এরমধ্যে আর অশান্তি করো না।
তৌসি আহমেদ রেগে বললো
~ওহ আচ্ছা আচ্ছা এখন আমি অশান্তি করছি?বেশ আমি আর কোনো কথাই বলবো না।
বলেই তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন।
আদিত্য আহমেদ আদিয়াত-আদৃতাকে রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে বলে নিজেও চলে গেলেন।
৬.
আদিয়াত একটু বাইরে গিয়েছিলো বাইরে থেকে রুমে আসতেই দেখলো কোথাও আদৃতা নেই।ও চমকে গেলো সারা বাড়ি খুঁজলো, ছাদে খুঁজলো কিন্তু কোথাও পেলো না হঠাৎ ওর মনে হলো ওর রুমের বেলকনি দেখা হয়নি।আদিয়াত তাড়াতাড়ি নিজের বেলকনির দিকে ছুটলো।বেলকনিতে গিয়ে ও কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।আদৃতা বেলকনির দোলনায় ঘুমিয়ে আছে।
আদিয়াত অবাক হয়ে ভাবলো আমি সারাবাড়ি ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি আর ও এখানে শান্তিতে ঘুমোচ্ছে।আদৃতাকে ডাকতে গিয়েও আর ডাকলো না।ওকে আলতো করে কোলে তুলে রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।তারপর নিজে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
__♥__
পার্লারের মহিলারা এসেই আদৃতার ঘুম ভাঙালো।আদৃতা ঘুমঘুম চোখ নিয়ে উঠতেই পার্লারের মহিলারা বললো
~ম্যাডাম আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন তাড়াতাড়ি।
আদৃতা তাদের কথা শুনে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বসলো চুপচাপ।
আদৃতা বসতেই তারা ওকে সাজানো শুরু করলো।
সবশেষে খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিলো ওকে।গোল্ডেন কালারের শাড়িটায় আদৃতাকে যেন বেশ মানিয়েছে।
দেখতে দেখতে পার্টির সময় চলে এলো।অনেক মেহমানরাই আসছে আর আদৃতা-তিষার হাতে গিফট দিচ্ছে।অনেকেই আবার তিষার থেকে আদৃতার প্রশংসা করছে বেশি।আদৃতাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে আর তিষাকে যদিও খারাপ লাগছে না কিন্তু খুব একটা ভালোও লাগছে না।তিষা হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।গোলাপি করঙের লেহেঙ্গার সাথে প্রচুর গর্জিয়াস মেক-আপ করেছে তিষা।যার কারণে ওর বাস্তব চেহারাই যেন বদলে গেছে।তিষা ভেবেছিলো পার্টির সবাই আজ ওর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে আর আদৃতাকে কেউই পছন্দ করবে না।কিন্তু হয়ে গেলো একদম তার উল্টোটা।
অন্যদিকে কেউ একজন ঘোরলাগা দৃষ্টিতে আদৃতার দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ সে আনমনেই বলে উঠলো
~মায়াবিনী তোমার প্রতিটা রূপেই আমি বারবার মুগ্ধ হই।কি এতো আছে তোমার ঐ স্নিগ্ধ মুখে?যার যাদু বারবার তোমার মুগ্ধতায় আমায় আঁটকে ফেলে?
পার্টির একপাশে দাঁড়িয়ে আছে তৃণা খান।তিনি তামান্না খানের বোন মানে তিষার খালামনি।তিনি নিজেও কোনো একটা কারণে আদৃতার বিয়েতে উহু ঠিক বিয়েতে না এতো বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হওয়ায় খুব রেগে আছে।
তবুও সেটা কাউকে বুঝতে না দিয়ে মুখে একটা মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
হুট করে মাথায় কিছু একটা আসতেই তিনি অর্ণবের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
~তোমার মা কই অর্ণব?তাকে দেখছি না যে?
অর্ণব বললো
~আব মা..?মা তো নিজের রুমেই আছে।
তৃণা খানের কিছুটা খটকা লাগলো।তবুও কোনোমতে নিজেকে সামলে বললো
~ওহ্ আচ্ছা। আমি তাহলে যাই তোমার মায়ের সাথে দেখা করে আসি।
বলেই তিনি চলে গেলেন মিসেস.তৌসির রুমে।যদিও তিনি চিনেন না রুম তাই সার্ভেন্টের সাহায্য নিতে হয়েছে।
রুমে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ মিসেস.তৌসির সাথে কথা বললেন।এরপর বেশ খুশিমনেই তার রুম থেকে বের হলেন।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো মিসেস.তৌসি সকালের পর রুম থেকেই বের হয়নি কিন্তু মিসেস.তৃণার সাথে কথা বলার পর তিনি হাসিমুখেই রেডি হয়ে পার্টিতে উপস্থিত হলেন।
চলবে…