#শেষ_কান্না
#পর্ব_৭
#লেখা_Bobita_Ray
গ্রাম-অঞ্চলে রাত ন’দশটার দিকেই গা ছমছমে একটা ভাব এসে যায়।মনে হয় না জানি কতো রাত!চারপাশ কেমন নিস্তব্ধ। রাকিবের বুক ফাটা আর্তনাদ মিশ্রিত চিৎকারে সবাই ধড়ফড়িয়ে ওঠে রাকিবের ঘরে ছুটে এল।রাকিবের অস্বাভাবিক চাউনী দেখে ফুলমতি ভয় পেয়ে রাকিবকে বুকের সাথে চেপে ধরল।মাথায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে বলল,
-“কী হইসে বাজান?
রাকিব আতঙ্কে কথা বলতে পারছে না।খুব জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে।রায়হান রাকিবের পাশে বসে বলল,
-“কী হয়েছে রাকিব? কোনো কিছু দেখে ভয় পেয়েছিস?
রাকিবের মুখটা শুকিয়ে গেল।সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠছে।দু’চোখ দিয়ে অঝোরে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।ফুলমতি আঁচল দিয়ে রাকিবের চোখের জল মুছে দিল।রাকিব কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা এগিয়ে দিল রায়হানের দিকে।রায়হান ফোনটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-“কী?
-“(নিশ্চুপ)
রায়হান আর কথা বাড়াল না। ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকাতেই চোখ আঁটকে গেল।স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করছে রথীর মায়াবী মুখখানি।ছবিটা দেখেই রায়হানের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে উঠল।কিন্তু পরক্ষণেই হাসিটা মিলিয়ে গেল।সেখানে ভর করল একরাশ বিস্ময়।বিস্ফোরিত চাউনীতে তাকিয়ে আছে রথীর পাশের পঁচা, গলা লাশের ছবির দিকে।রায়হান শরীরে কোন বশ পাচ্ছে না।পুরো শরীর অসার হয়ে আসছে।চোখ দুটোতে বিন্দু বিন্দু পানির কণা জমেছে।হাত থরথর করে কাঁপছে।ফুলমতি চোখে মুখে বিরক্ত ফুটিয়ে বলল,
-“কী হইসে ক’তো?রাত দুপুরে দুই ভাই ফোনের দিকে হা কইরা তাকাইয়া রইসা ক্যাঁ?দেহি এইদিকে ফোন দে। দেহি ফোনে কি আছে?
রায়হান হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ল।তারপর দু’হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল।বিড়বিড় করে বলল,
-“রথী আর নাই আম্মা! রথী আর নাই!আমার ছোট্ট বোনটা আমাদের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে।
মুহূর্তেই বাড়িতে কান্নার রুল পড়ে গেল।ফুলমতি চিৎকার করে কাঁদছে আর বুক থাবড়ে বলছে,
-“আল্লাহ্ গো,আমার কি সর্বনাশ হইলো।আমারে থুইয়া তুমি আমার এক রথী ম্যায়াডারে নিয়া গেলা ক্যান?আমি তোমার কুনু ক্ষতি করছিনি?আমার ম্যাইয়াডা কালা বইলা মানসের কতা হুইনা সারাক্ষণ বকতাম। সেই ম্যায়াডা আমার উপর গুসা কইরা চইল্লা গেছে।
ঘণ্টা দুই একটানা ফুলমতি চিৎকার চেঁচামিচি করে কাঁদতে কাঁদতে গলা ভেঙে গেছে।অস্ফুট স্বরে বারে বারে বলছে,
-“আমার বাড়িতে কালা ছায়া পড়ছে।আমার তিলে তিলে গড়া সোনার সংসারডা নিমিষেই ছারখার হইয়া গেল।ঐ অপয়া,বেহায়া, ম্যায়াডার জন্যেই আমি আমার ম্যায়াডারে হারাইছি। ফুলমতি আচমকা ক্ষেপে গিয়ে অরুর চুলের মুঠি টেনে ধরে পিঠে দুটো কিল দিয়ে ঝাঁঝাঁলো কণ্ঠে বলল,
-“তোর ভালো হইবো না।তুই একটা রাক্ষসী।তুই আসার পর থেইক্কা আমার সংসারে অশান্তি শুরু হইসে।তোর ভালো হইবো না।আমার নাড়ী ছিঁড়া ধন যেভাবে হারাইছি তুইও একদিন তোর পেটের ডারে হারাবি।অভিশাপ দিলাম তোরে।তুই এই জীবনে সুখের মুখ দেখবি না। কুনুদিনও না।
অরু ব্যাথায়,ভয়ে,কষ্টে শব্দ করে কেঁদে দিল। তারপর ফুলমতির দু’পা জড়িয়ে ধরে বলল,
-“মা গো আল্লাহ্ দোহায় লাগে আপনি এতবড় অভিশাপ আমার বাচ্চাটারে দিয়েন না।ও মা, মা, আপনি অভিশাপ ফিরিয়ে নেন।আমি যেন বাচ্চা হওয়ার সময় মরে যাই তবুও আমার বাচ্চাটা বেঁচে থাকুক।
ফুলমতি অতিরিক্ত রাগে ফসফস করছে।অরুর বুকে একটা লাত্থি মেরে বলল,
-“বেজন্মার বাচ্চা বেজন্মা তুই এত তাড়াতাড়ি মরবি না।আমাগো হাড্ডি, মাংস, জ্বালাইয়া ভাঁজা ভাঁজা করে খাইলেও তোর মরণ নাই।মরলে তো যেদিন হুনছা পেটের মধ্যে জারজ বাচ্চা আছে হেই দিনই মরতি।
পুরোটা সময় রায়হান,রাকিব নীরবে চোখের জল ফেলল।ফুলমতি বলল,
-“বাজান আমার ম্যাইয়াডারে কি শেষ দেখা দেখবার পারুম না?
রায়হান ভরসা দিয়ে বলল,
-“পারবে আম্মা। খোঁজ নিয়ে দেখি রথীকে কোথায় রাখা হয়েছে!কাল তোমাকে নিয়ে যাব। এখন একটু বিশ্রাম নাও।রাকিব আম্মাকে ঘরে নিয়ে যা।
রাকির ফুলমতিকে ধরে ঘরে নিয়ে গেল।ওরা চলে যেতেই রায়হান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরুর দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিল।অরু মাটিতে বসে আঁচলে মুখ গুঁজে অঝোরে কাঁদছে।প্রচণ্ড অভিমানে রায়হানের হাত সরিয়ে দিল।রায়হান কোন কথা না বলে অরুকে পাঁজকোলা করে ঘরে নিয়ে গেল।তারপর খাটে বসিয়ে দিতেই অরু রায়হানের শার্টের কোণা খাঁমচে ধরে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল।রায়হান মুখ তুলে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল।।অরু আচমকা রায়হানকে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল।রায়হান অরুর মাথায়,পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,
-“শান্ত হও। এত কাঁদলে শরীর খারাপ করবে।
অরু নাক টানতে টানতে বলল,
-“তু-মি তো জানো রথীকে আমি খুব ভালোবাসি।মায়ের মতো তোমারও কী মনে হয় রথীর মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী?
রায়হান থমথমে গলায় বলল,
-“আম্মার কথায় মন খারাপ করো না । তুমি তো জানো আম্মা ওরকমই।
অরু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-“ওনি একজন মা হয়ে আরেকজন মা’কে কী করে অভিশাপ দিতে পারে?আল্লাহ্ না করুক আমার অনাগত বাচ্চাটার যদি কিছু হয়ে যায়।বলেই ভয়ে এক ঢোক গিলল অরু।রায়হান বিরক্ত ভঙ্গীতে অরুকে ছেড়ে দিয়ে বিছানার অপর পাশে শুয়ে বলল,
-“বেশি কথা বলো কেন?আম্মা তোমাকে মন থেকে অভিশাপ দিয়েছে না কী?হয়ত রাগের মাথায় বলেছে।সামান্য একটা কথাকে শুধু শুধু প্যাঁচাচ্ছো।
অরু আর কথা বাড়াল না।রায়হান যে বদলে গেছে তা খুব ভালো করেই জানে অরু।আগে অরুকে এক পলক দেখার জন্য যে ছেলেটা পাগলের মতো ছটফট করতো আর এখন সারাক্ষণ চোখের সামনে থাকলেও দু’চোখ পেতে দেখতে পারে না অরুকে রায়হান।সেসব কথা ভাবতেই বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অরু।সত্যিই মানুষ চিনতে বড্ড ভুল করে ফেলেছে অরু।
***
-”অরুর বিয়ে হয়ে গেছে মানে কী মামা?ছোট্ট বেলা থেকে ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। একথা অরু বাদে আপনারা সবাই জানেন।বলেন জানেন না? তারপরও কোন সাহসে আমার আমানতকে আপনি অন্য কারো হাতে তুলে দেন?কথাটা বলেই কপোট রাগে দেয়ালে সজোরে একটা ঘুষি মারল প্রতীক।অরুর বাবা অনিন্দ সাহেব বলল,
-“প্রতীক শান্ত হও।আমার পুরো কথাটা শুনো প্লিজ!
প্রতীক তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
-“কী শুনব মামা?আর কি শোনার বাকি আছে।বরং আপনি একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন।অরু আমার না তো অন্য কারো না।যে করেই হউক আমি ওকে খুঁজে বের করব। তারপর ওর সংসার ভেঙে তছনছ করে দিব। আপনারা সবাই আমাকে ঠকিয়েছেন! ছোট্ট বেলায় আমার সাথে বিয়ের পাঁকা কথা দিয়ে যেই আমার থেকে ভালো কাউকে পেয়েছেন ওমনি মেয়েকে গছিয়ে দিয়েছেন।
-“প্রতীক…তুমি শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝছ!
প্রতীকের মা প্রীতি বলল,
-“আপনার কাছ থেকে এরকম আশা করিনি ভাইজান।মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ভালো কথা! একটি বার আমাদের জানানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না।মানুষ ঠিকই বলে, মা, বাবা,যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন ভাইয়েরা বোনদের আদর করে, দেখা শোনা করে,খোঁজ খবর নেয়। যেই না বাবা,মা,মারা যায় ওমনি ভাইয়েরাও পর হয়ে যায়। আম্মা বেঁচে থাকতে এ বাড়ির ছোট, বড় সব অনুষ্ঠানেই আমাকে ডাকত।অথচ আজ আম্মা নেই বলে মেয়ের বিয়ে দিলেন অথচ আমাকে একটু জানালেনও না।
অনিন্দ ছোট বোন প্রীতির হাত চেপে ধরে বলল,
-“আমাকে ভুল বুঝিন না প্রীতি।তোর ভাইঝিকে আমি বিয়ে দেইনি!
প্রতীক অবাক হয়ে বলল,
-“তো কে বিয়ে দিয়েছে মামা?
অনিন্দ একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে একে একে সব ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে প্রতীকের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। রাগে ফসফস করে বলল,
-“অরুকে যে প্রেগন্যান্ট করেছে। ঐ কুত্তার বাচ্চাকে তো আমি ছাড়ব না।আর এতকিছু ঘটে গেল আমাকে ফোনে জানালেন না কেন মামা?
অনিন্দ মাথা নিচু করে বলল,
-“কোন মুখে বলতাম।সব শুনে কী তুমি অরুকে বিয়ে করতে?
-“কেন বিয়ে করতাম না!অবশ্যই বিয়ে করতাম। সমাজে যদি একজন ডিভোর্সির অবিবাহিত ছেলের সাথে বিয়ে হতে পারে,একজন বউ মরা পুরুষের কম বয়সী মেয়ের সাথে বিয়ে হতে পারে,তাহলে আমার অরুকে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায় বলুন?তারচে বড় কথা, আজকাল এমন যুগে দাঁড়িয়ে আছি আমরা,যেখানে প্রতিনিয়ত মেয়েরা বয়ফ্রেন্ডের প্রতারণার শিকার হয়ে রাতের আঁধারে প্রেগন্যান্ট হয় আবার রাতের আঁধারেই এবোর্ট করে মা,বাবার পছন্দ করা ছেলের সাথে হাসিমুখে বিয়ের পিড়িতে বসে। সেখানে আমার অরুকে সেই ছোট্ট বেলা থেকে ভালোবাসি। ওর একটা ভুলকে মাফ করে দিয়ে আরেকটি সুযোগ দেওয়া কি খুব অন্যায় হতো?আপসোস আপনি আমাকে সবটা না জানিয়ে অনেক বড় বোকামির পরিচয় দিয়েছেন।আপনি কী সিত্তর যে ছেলেটা অরুর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট বানিয়ে দিয়েছে।বিয়ে করবে না বলে নানান ঝামেলা করেছে। তার সাথে আপনার মেয়ে আঁধোও সুখে থাকবে তো মামা?আমার তো মনে হয় না।
অনিন্দ থমথমে গলায় বলল,
-“এখন আমি কি করব প্রতীক?মেয়েটাকে রাগের মাথায় দু’টো শর্ত জুরে দিয়েছিলাম।আমার অভিমানি মেয়েটা দ্বিতীয় শর্ত মেনে সেই যে এক কাপড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেছে আজ তিন মাস হয়ে গেল অথচ এখনো এলো না।ভেবেছি রাগ,জেদ,কমে গেলে আসবে!কিন্তু অরু যে কথাটা এতখানি সিরিয়াসলি নেবে আমি ভাবতেই পারিনি।
প্রতীক চিন্তিত মুখে বলল,
-“ছেলেটার গ্রামের বাড়ি কোথায়! আপনি জানেন?
-“না।জানলে কি আর এভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতাম।অবশ্যই এতদিন মেয়েটাকে দেখে আসতাম।আল্লাহ্ জানে আমার মেয়েটা কেমন আছে!
প্রতীক ভরসা দিয়ে বলল,
-“আপনি কোন চিন্তা করবেন না মামা।আমি খুঁজে দেখব ওর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না কী!
হঠাৎ অনিন্দ প্রতীকের হাত ধরে ঝরঝর করে কেঁদে দিল।চোখের জল মুছে প্রতীকের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-“আমার মেয়ে ভালো আছে তো প্রতীক?
প্রতীক একটি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলল,
-“আল্লাহ্ ভরসা”
***
ইন্সপেক্টর জাহিদ সাহেব রায়হান,ফুলমতি,রাকিবকে সাথে নিয়ে থানা থেকে বেড়িয়ে সোজা মর্গে চলে গেল।আজ ভোরের বাসে ফেসবুকে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী রায়হানরা রংপুর থানায় এসেছে।
মর্গের আশেপাশে কেমন পঁচা পঁচা একটা গন্ধ।জাহিদ সাহেব সহ পাঁচ জন নাকে রুমাল চেপে মর্গের ছয় নাম্বার কক্ষের দিকে এগোলো।১০৭ নং ডয়ার খুলে দিতেই ফুলমতি মেয়েকে দেখে ভয়ে এক চিৎকার দিয়ে উঠল।রায়হান, রাকিবও এক ঢোক গিলে দু’পা পিছিয়ে গেল।রথীর চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। পঁচে,গলে একদম মুখ থেকে মাংস খসে খসে পড়ছে।এক নজর দেখেই রায়হানের বুকের রক্ত ছলকে উঠল।বুকটা কেমন খাঁ খাঁ করছে।মাথা ঝিমঝিম করছে।ফুলমতির দাঁত লেগে গেছে।মর্গ থেকে বেড়িয়ে জাহিদ সাহেব ইতঃস্তত করে বলল,
-“আমি কেসটা লড়তে চাচ্ছি। এটা যে কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু না আপনারা ভালো করেই জানেন।তাই নিজের বোনের খুনিকে যদি শাস্তি দিতে চান অবশ্যই আমাদের হেল্প করবেন!
রায়হান দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
-”আমার কলিজার টুকরো বোনকে যে খুন করেছে তাকে আমি পুঁতে ফেলব।আপনি তদরন্ত করুন।যত টাকা, সাহায্যে লাগে আমি দিব।
জাহিদ সাহেব মৃদু হেসে বলল,
-“টাকার প্রসঙ্গ পরে দেখা যাবে।আগে থানায় চলুন আপনার বোনের বিষয়ে একটু কথা বলা যাক!
-“জ্বী চলুন।
জাহিদ সাহেব থানায় এসে আয়েশ করে চেয়ারে গা এলিয়ে দিল।রায়হান, রাকিব জাহিদ সাহেবের মুখোমুখি চেয়ারে বসল।জাহিদ সাহেন সরাসরি রথীর প্রসঙ্গে চলে গেলেন।
-“মেয়েটার নাম রথী রাইট?
-“হুম
-“আপনাদের দু’ভাইয়ের এক বোন।
রায়হান, রাকিবের দিকে এক নজর কোণা চোখে তাকাল।রাকিব মাথা নিচু করে ফেলল।রায়হান বলল,
-“হ্যাঁ”
-“আপনার বোন মানে রথী কী কাউকে ভালোবাসত?আইমিন কারো সাথে রিলেশনে ছিল?
রায়হান আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,
-“না!রথী অনেক কালো ছিল। তাই ওর সাথে কেউ মিশতো না।আর প্রেম করলে অন্তত আমি বা রাকিব জানতাম।”
-“আপনাদের কি কাউকে সন্দেহ হয়?
-“না।আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না। ওকে কেউ শুধু শুধু খুন করবে কেন?
জাহিদ সাহেব মুচকি হেসে বলল,
-“শুধু শুধু তো খুন করেনি!
-“তাহলে!
জাহিদ সাহেব চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল। বলল,
-“আপনাদের ভাষ্যমতে, সেদিন রথী স্কুল থেকে নিঁখোজ হয়েছে।তারমানে ওকে যে কিডনাফ করেছে সে খুব ভালো করেই জানত রথী ঐ স্কুলে পড়ে।এবং ওর উপরে দীর্ঘদিন যাবৎ কড়া ভাবে নজর রেখেছে আর সুযোগ খুঁজেছে।সেদিন হয়ত সুযোগ পেয়ে ওর হাত-মুখ বেধে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে।আপনাদের বাড়ি থেকে বাসে রংপুর আসতে ৮ -৯ ঘণ্টা সময় লাগে।আর ঐ জায়গাটা খুব নির্জন।সেখানে রাতে হাত-মুখ বেঁধে ধর্ষণ করেছে।যখন দেখেছে মেয়েটি আধমরা হয়ে গেছে। তাই কোনো রিস্ক নিতে চায়নি একদম জানে মেরে দিয়েছে।আর খুব কৌশলে বস্তাবন্ধি করে পানিতে লাঠি গেড়ে পুঁতে রেখেছে।খুনী খুব চালাক! নিখুঁত ভাবে খুন করেছে কোনো প্রমাণ রাখেনি।তাই না রাকিব সাহেব?রাকিব চমকে উঠল! ভীতু চোখে জাহিদ সাহেবের দিকে তাকাল।আমতা আমতা করে বলল,
-“জ্বী-মা-নে?
জাহিদ সাহেব উচ্চশব্দে হাসল।তারপর হাসি থামিয়ে এক গ্লাস পানি রাকিবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“পানিটা খেয়ে নিন রাকিব সাহেব। ভিতর -বাহির সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে ।উপরে ফ্যান চলছে! এত ঘামলে চলে?
রায়হান অবাক হয়ে বলল,
-” সবই তো বুঝলাম কিন্তু এত মেয়ে রেখে আমার বোনটাকেই ওরা এতটা নির্মম ভাবে মেরে ফেলল কেন?
জাহিদ সাহেব বলল,
-“আমি আন্দাজে বলেছি।পুরোটা মিলতেই পারে নাও পারে!হতে পারে, খুনী আপনাদের খুব কাছের কেউ আবার হতে পারে, খুনীকে আপনারা চিনেনই না বা কখনো দেখেননি।
রায়হান বলল,
-”আপনার কথার আগা-মাথা কিছুই বুঝলাম না। সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।একটু ক্লিয়ার করে বলবেন প্লিজ?
-“আরেহ্, রায়হান সাহেব এতটা অধৈর্য হয়ে চলে?শান্ত হন।যে এত নিখুঁত ভাবে কোনো প্রমাণ ছাড়া খুন করেছে। সে যে এত সহজে ধরা দিবে না এটা আমি খুব ভালো করেই জানি।তবে এর শেষ দেখে ছাড়ব আমি।শেষের কথাটা জাহিদ সাহেব টেবিলে সজোরে থাবা মেরে বলল।
রায়হান বলল,
-“আজ উঠি।কোন হেল্প লাগলে বলবেন?
-“হুম অবশ্যই”
চলবে