#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_বিশ
[#প্রকৃতি]
–” সকাল সকাল মানুষ হেসে দিন শুরু করে আর তুমি কিনা সকালটা মন খারাপ দিয়ে শুরু করলে।”
–” মন যা ভালোছিল তা আপনাকে দেখে খারাপ হয়েগেছে। কথাটা হেসে বলে দিল স্নিগ্ধা।
—” কি বললে?”
–” বললাম হাসি জিনিসটা একটা অনুভূতির প্রকাশ সব সময় যে হাসি হাসি ভাব থাকবে বা মন ভালো থাকবে তেমন কোন কথা নেই। আসলে শত হলেও আমি মানুষ সব সময় যে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে রাখতে পারবো তা ও নয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন বিষয়টা!”
–” হয়তো তোমার মুডসুইং হচ্ছে, ব্যাপার না আসলে এই সময়কার মেয়েদের হুট করে মুডসুইং হয়।
ইটস্ নরমাল! কিন্তু তোমার উচিৎ কারোর সঙ্গে মন খুলে কথা বলার। আইমিন, কোন ভালো সঙ্গি খুজেঁ তাকে সব শেয়ার করা। এই ক্ষেত্রে তুমি আমাকে সব বলতে পারো বন্ধু ভেবে।” বলেই হেসে স্নিগ্ধার দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখল স্নিগ্ধা পাশে নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সে,
চোখ পরল মহিমা আর উৎপলের দিকে। স্নিগ্ধা উৎপলের সঙ্গে দুষ্টুমি করছে। উৎপল মহিমার চুল ধরে টেনে দিচ্ছে।
আয়মান নিজের মনে হেসে দিল মেয়েটা যতটা গম্ভীর দেখায় সে আসলে ততটা গম্ভীর না।
উৎপল দুষ্টুমি করে মহিমার হাত ধরে বলল –
–” প্রিয়া আমায় ছেড়ে যে ও না কখনো, ভুলে যেও না প্রিয়া! তোমার বিরহে আমার হৃদয়ের দমনীগুলো রক্ত সঞ্চালনা বন্ধ করে দেয়। বুক তখন ধক ধক করে!
একবার এই বুক ছুয়ে দেখো, মোবাইলের ভাইব্রেটের থেকেও বেশি গতিতে ভাইব্রেট করছে।”
স্নিগ্ধা উৎপলকে প্রশ্ন করল
–” কোন দিকে করছে?”
–” এইদিকে করছে, মনটা ঠিক যেন বলছে
—” বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়!
তুমি ছুয়ে দিলে হায়
আমার কি যে হয়ে যায়!”
বুকের বা দিকটায় হাত দিয়ে দেখিয়ে উৎপল ভঙ্গিমার সাথে নেচে চলেছে। উৎপলের সাথে তাল মিলিয়ে স্নিগ্ধা ও উৎপলের সঙ্গে দুষ্টুমি করছে।
শ্রাবণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে আর হাসছে, স্বর্ণা ও এলো তাদের মধ্যে। স্বর্ণা শ্রাবণের সঙ্গে নাচতে চাইলে ও শ্রাবণ নাচতে চাইলো না। পরে বাধ্য হয়ে স্বর্ণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচলো তবে তা সম্পূর্ণ এমনি দুষ্টুমি করে। যাকে বলে নাচতে না জানলে উঠুন বাকাঁ। স্নিগ্ধার দিকে দুয়েকবার চোখ পরতেই শ্রাবণ চোখ টিপ দিল।
আর স্নিগ্ধা তাকে ভেংচি কেটেদিল,শ্রাবণ প্রতি উত্তরে হেসে দিল।পুরোটা সকাল সবাই মিলে দুষ্টুমি করার পর যে যার রুমে গিয়ে তৈরি হয়ে নিল। কারন একটু পরেই আবার তাদের জাফলং যেতে হবে।
শ্রীমঙ্গলকে বলা হলো বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী।
প্রতিবছর এই অঞ্চলে হাজারো পর্যটক আসে।
শ্রী মঙ্গল যে শুধু চা বাগান তাই নয়, এক টুকরো স্বণীয় উদ্যানের সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। আহা নয়নাভিরাম সবুজে ঘেরা এই অঞ্চলটিতে চোখ জুড়িয়ে যায়।
দুটো গাড়ি এক সঙ্গে চলছে, গাড়ির জানালা খুলে রাখায় সাই সাই করে বাতাসের শব্দ গুলো কানে কানে কত কিছু বলে যায়। শব্দগুলো বোবা হলেও এর শব্দের ধরণ গুলো যেন বলছে –
–” এসো হারিয়ে যাও আমাতে!
ডুবে যাও গভীরে
অতল স্পর্শে !
রাঙ্গিতে নেও নিজেকে
ছাড়ো গভীর থেকে বিষাক্ত নিশ্বাস
এসো আমার বক্ষে!”
স্নিগ্ধা পুরোটা সময় জানালার বাইরের দৃশ্যগুলো দেখতে ব্যাস্ত ছিল। প্রকৃতির এই দৃশ্য তার মন ভরছে না মনে হচ্ছে আরও হারিয়ে যেতে, ছুয়েঁ দিতে ইচ্ছে করছে তার।
এত মধুর দৃশ্য! এত মায়া!
প্রায় ঘন্টা খানিক বাদেই তারা সবাই জাফলং গিয়ে পৌছাল। জাফলং এর পথটা খুব একটা সুন্দর না হলেও এর পরের দৃশ্যটা সব সময় মনে পরবে স্নিগ্ধার।
উচুনিচু টিলার পাশেই স্নিগ্ধার নজর পরল।
জাফলংয়ের পাশে ভারতের শেষ সীমানা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উচু উচু পাহাড় দেখা যাচ্ছে চোখ ঘুরিয়ে স্নিগ্ধা সামনে তাকালো টুরিস্টরা যে যার মত দোকান থেকে কেনাকাটা করছে। শ্রাবণের ডাক শুনে তার সামনে যেতেই শ্রাবণ তাকে বলল –
–” কি কিছু কিনবি?”
–” না, ”
–” তাহলে সময় নষ্ট করিস না, এই তোরা সবাই আয়। ঘুরে তারপর আবার রিসোর্টে ফিরতে হবে। ”
খাড়া খাড়া সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে সবাই, মহিমার পাশে তাশদীদ, শ্রাবণ হাটতে হাটতে গলায় ঝুলানো ক্যামেরাটা নিয়ে বেশ কয়েক ছবি তুলে নিচ্ছে। স্নিগ্ধা সিড়িগুলোতে খুব সাবধানে নেমে যাচ্ছে।
স্নিগ্ধা হঠাৎ নামতে গিয়ে থেমে গেল সিড়িতে। শ্রাবণ ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎ নিচে তাকিয়ে দেখল সবাই নিচে নেমেগেছে, তাদের সবাইকে দেখে স্নিগ্ধাকে খুজলো ওদের মধ্যে। ওদের কারোর মধ্যেই স্নিগ্ধা নেই। শ্রাবণ চিন্তিত হয়ে উপরে তাকাতেই দেখল স্নিগ্ধা উপরে দাড়িয়ে আছে।
শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে একবার ডাকলো। স্নিগ্ধা নিজের ড্রেসটাকে সেটিয়ে এক জায়গায় চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
শ্রাবণ স্নিগ্ধার সামনে এসে বলল –
–” এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন?”
—-
–” কিরে বল, নিচে চল, সবাই অপেক্ষা করছে !”
–” আমি যেতে পারবো না,”
–” কেন?”
—-
–” বলবি তো কেন? কেন যেতে চাস না?”
–” আমার আসলে শরীর খারাপ,”
–” এই তো আসার সময় দিব্বি ঠিক ছিল, এখন কি হলো?”শ্রাবণ স্নিগ্ধার হাত ধরতে চাইলে স্নিগ্ধা সরিয়ে নিল। শ্রাবণ স্নিগ্ধার ড্রেসে হাত দেওয়া হাতটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপরই তার টনক নড়ল।
স্নিগ্ধার মুখটা কেমন ছোট হয়েগেছে। শ্রাবণ স্নিগ্ধার গায়ে জড়ানো ওড়নাটাকে ভালো করে ওর শরীরে পেচিয়ে স্নিগ্ধার পিছনে দাড়িয়ে বলল
–” তুই হাটতে থাক, আমি তোর পিছন পিছন আসছি। কেউ দেখবে না, এত এত পাকা কথা বলিস এই টুকু জিনিস হাসবেন্ডকে বলতে পারিস না? কোন যুগে পরে আছিস কে জানে। নিচ থেকে সবাই শ্রাবণ আর স্নিগ্ধাকে ডেকে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি আসার জন্য, দেরী হয়ে যাবে।
পাশের একটা রিসোর্টের একটা রুমে ম্যানেজারকে বলে স্নিগ্ধাকে রুমের ব্যবস্থা করে দিল। কিছুক্ষণ বাদে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে প্যাকেটে কিছু নিয়ে এসে স্নিগ্ধার হাতে ধরিয়ে দিল। স্নিগ্ধার সামনে না দাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে। হাতে ধরে রাখা প্যাকেটটি নিয়ে স্নিগ্ধা খুব লজ্জায় পরেগেল। বিনা কথায় মানুষটা দূর থেকেই তার উপর নজর রেগেছে। আবার তাকে আলাদা করে নিজের সমস্যা উপস্থাপন করতে হয়নি নিজেই বুঝে নিয়েছে।
” ভালোবাসার মানুষগুলো বুঝি এমনই হয়?
না সম্পর্ক এবং দায়বদ্ধতার কারনে এমন দায়িত্ববান হয়ে পাশে দাড়ায় মাত্র?
সব সময় কি এমন ভাবে আগলে রাখে? না সময় ফুরানোর সাথে সাথে ভালোবাসার মানুষটির কেয়ার গুলো পাল্টে যায়?”
মনের মধ্যে একটানা যুদ্ধ করে সে হাতে থাকা ন্যাপকিনের প্যাকেটটার দিকে তাকালো। জীবনে হয়তো প্রত্যেকটা মেয়ে তার মতই এমন স্বামী চাইবে নয় সবাই চায়।
আচ্ছা এই ছোট ছোট কেয়ার করা, সবার সঙ্গে মিষ্টি হেসে কথা বলা মানুষটিকে সে কি নাম দিবে? স্নিগ্ধা মনটাকে শক্ত করে রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখল শ্রাবণ দাড়িয়ে আছে বাইরে।
শ্রাবণের সামনে দাড়াতেই শ্রাবণ হেসে বলল –
–“কিছু খাবি? জুস,ডাবের পানি?”
–” না,”
–” না বললে তো শুনবো না, চল খেয়েনি,”
অগত্যা বাধ্য হলো স্নিগ্ধা শ্রাবণের কথা শুনতে। দোকান থেকে একটা জুসের বোতল হাতে ধরিয়ে দিল স্নিগ্ধার।
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে দেখল স্নিগ্ধা মাথা নিচু করে রেখেছে। শ্রাবণের মনে হলো নারীর লজ্জায় রাঙ্গা মুখটি ও পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য! আর তা অবশ্যই প্রিয়তমার।
দুজনে মিলে নিচে নামতেই স্বর্ণা সবাইকে পিছনে ফেলে একদম সিড়ির কয়েক ধাপ উপরে উঠে বলল –
–” উফফ শ্রাবণ এত লেট করলে কেন?”
–” স্নিগ্ধার পিরিয়ড ছিল, হঠাৎ করেই এমন হয়েছে। ”
–” এটা কোন কথা? এই মেয়ে তুমি ডেট জানোনা?
আশর্চয্য এতটা নির্বোধ ও আজকাল কোন মেয়ে হয়?
স্মার্টনেস বলে ও তো কিছু আছে? পিরিয়ড যখন তখন তো হয়না, ডেট অনুযায়ী হয়। তুমি কি সব সময় এরকম যেখানে সেখানে..
–” স্বর্ণা এটা পাবলিক প্লেস, পিরিয়ড যে শুধু ডেট দেখেই হবে তেমন কোন কথা না। বিভিন্ন কারনে মান্থ মিস হতেই পারে। ও হয়তো দূর্বল তাই মান্থ মিস গিয়েছে।
–” তাই বলে…
–” যাস্ট সাট আপ! তোমার কি কোন সেন্স নেই? কোথায় কি বলো সব ভুলে যাও? আর তাছাড়া ওর দোষ কোথায় আমাকে বলতে পারো? মান্থ মিস টা অনেক কারনে হয় স্বর্ণা এটুকু তুমি অবশ্যই জানতে। না জানার মত কিছুই নয় এটা। হরমোনাল প্রবেলেমের কারনে এমন হয়। বেশির ভাগ সময় রক্তশূন্যতার ফলে মান্থ মিস হয়।
এই বিষয়গুলো নিয়ে দোষারোপ করাটা তোমার মত স্মার্ট এডুকেটেড মেয়ের থেকে আশা করা যায় না স্বর্ণা।
খুব স্মার্ট তুমি কিন্তু এখনো স্মার্টনেসটাকে আয়ত্ত করতে পারলে না। ভেরি সেড! একটা কিশোরী মেয়ের সঙ্গে যেভাবে রুড বিহেভ করেছো তুমি, আমাকে খুব ভাবাচ্ছে তুমি কি আসলে কোন সুস্থ স্বাভাবিক মেয়ে? নাহলে মেয়ে হয়ে একটা মেয়েকে নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করতে?”
চলবে।