#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_ছয় [সারপ্রাইজ]
অন্যদিকে শ্রাবণ ভাবছে এই পাগল স্বভাবের চঞ্চল আর ঝগড়ুটে মেয়েটি কিভাবে তার স্ত্রী হয়েগেল। এর থেকে দূর কিভাবে হবে? একে নিয়ে সংসার করবে কিভাবে? নেহাৎ দাদুর কারনে সব মেনেনিয়ছে। দাদুর কথাতো বাদ এখন দাদি ও তার হাত ধরে নাতনির হাত তুলে দিল তার হাতে। কিভাবে এত বড় দায়িত্ব সে নিবে? দাদির বলা সব কথা তার মাথায় বারবার এসে বারি দিয়ে যাচ্ছে।
__________________________
সকাল সকাল শ্রাবণ ইউনিভার্সিটির জন্য তৈরী হয়েগেল। ছোট মামি ও অফিসে চলে যাবে, মামা কিছুক্ষণ আগেই চলেগেছেন।স্নিগ্ধাকে ছোটমামি বললেন, খালি বাসায় হয়তো তেমন ভালো না ও লাগতে পারে। খালি বাসায় একা না থেকে ছাদে চলেযেতে।
সবাই বেরিয়ে গেলে স্নিগ্ধা পুরোটা সময় বসেই ছিল বসে থেকে একপ্রকার বিরক্ত হয়েগেল।
না এবার আর ভালো লাগছে না, ছাদে চলেগেল সে। ছাদে উঠেই দেখল পাশেই দক্ষিণ দিকে রাতের বেলায় দেখা সেই লেক। আর তার উত্তরে একটা বিশাল বড় মাঠ, মামির কাছ থেকে শুনেছে ওটা ক্যান্টনমেন্ট এরিয়ার মাঠ।এইদুটো স্থান ছাড়া যতটুকু চোখ যায় শুধু উচু উচু দালান আর দালান। স্নিগ্ধার চোখ যায় তাদের পাশের ছাদেই একদল ছেলেমেয়ে দাড়িয়ে আছে হাসাহাসি করছে। স্নিগ্ধা সেখানে একবার চেয়ে বাইরে তাকাতে লাগল। মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। না ভালো লাগছে না,
হঠাৎ ম্যাসেঞ্জারে টুং করে শব্দ করে উঠলে।
ম্যাসেঞ্জারে ডুকেই দেখল একটি ম্যাসেঞ্জ রিকুয়েস্ট –
” একা বসে তুমি দেখছো কি একই নীল আকাশ?”
স্নিগ্ধার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো, কিছুটা সময় কাটানোর জন্য সে ম্যাসেজ দিল–
— “কিন্তু এখানে তো তারার দেখা পাবো না!”
–” তুমি চাইলে বৃষ্টি, মেঘ ও ছিল রাজি! অপেক্ষা সুদূর বর্ষণের!”
— “আমার নীল আকাশের ও দরকার নেই, সুদূর বর্ষণের ও প্রয়োজন নেই!”
–” আমার সকল অভিযোগে তুমি, তোমার মিষ্টি হাসিটা কি আমি?”
–” জীবনে কোনদিন দেখিই নাই, আর হাসি তো দূরে থাক ” বিরক্ত হয়ে সেই ম্যাসেজ দাতা এবার প্রশ্ন করল –
–” কি করে তোমার মন পাবো ষোড়শী?”
–” আমার মন পাওয়ার বৃথাই চেষ্টা করছেন, কারন আমার সীট আগেই বুকিং হয়েগেছে! আমি এখন ডাবল সীট ছাড়া চলতে পারবো না!” ঐ আইডি থেকে কিছু সেড ইমোজির ম্যাসেজ আসার পর স্নিগ্ধা তাকে ম্যাসেজ করল” বাই”। আবার সেই আইডি থেকে ম্যাসেজ এলো —
—“অপেক্ষায় থাকবো ষোড়শী, কখন তুমি এই হাতটা ধরো” স্নিগ্ধা আইডিটাকে ব্লক করে,উঠে দাড়ালো না সে আর অপেক্ষা করবে না যত তারাতারি সম্ভব কলেজে ভর্তি হতে হবে তাকে।ছাদ থেকে নেমেই বাসায় ডুকে পরল। আসার কিছুক্ষণ পর শ্রাবণ এলো বাসায়। হাতে কিছু একটা নিয়ে এসেছে সে। স্নিগ্ধা উচু হয়ে দেখতে চাইল, কিন্তু শ্রাবণ সেটা লুকিয়ে ফেলল।
স্নিগ্ধা আর তাকে ঘাটাতে গেল না, শ্রাবণকে নিয়ে তার ভাবনা তেমন বেশি না। সে এখন পড়াশুনায় মনযোগ দিতে চায়।
সারাটাদিন পেরিয়ে গেল কেউ কারোর সঙ্গে কথা বলেনি। কিন্তু স্নিগ্ধা খেয়াল করল শ্রাবণ আসার পর থেকেই কিছু নিয়ে আপসেট। কোন একটা বিষয় নিয়ে সে অনেক বেশি চিন্তায়। স্নিগ্ধা সব দিধা ভুলে শ্রাবণের
রুমের কাছে যেতেই শুনলো শ্রাবণ কাউকে বলছে –
—” আরে কি বলছিস? ওর মাথা খারাপ বলে কি আমারো মাথা খারাপ? আমার দাদু স্নিগ্ধার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। ও কে আমি স্ত্রী মানিনা, তবে তারপর ও কাজিন হিসেবে আমার ওর জন্য কিছু দায়িত্ব আছে। কিন্তু এই মুহুর্তে ওকে এগুলো কি করে বুঝাই? আরে ও তো সামান্য আমাকে অন্য মেয়ের সঙ্গে কথা বলতেই দেয়না। এখন আবার স্নিগ্ধাকে বিয়ে করার পর সেই ঘটনা শুনতেও পারবে না। ওর কত বড় সাহস সে আমার জন্য সুইসাইড করতে গেছে ভাবতে পারছিস তুই?” অপরপাশ থেকে কে কি বলছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।
–” আরে কি বলছিস তুই? আমি যদি ওকে এই ব্যাপারটা না জানাই ও পরে এর চেয়ে ও খারাপ কিছু করে বসবে। ” স্নিগ্ধা বুঝতে পারল শ্রাবণের হয়তো কারোর সঙ্গে রিলেশন আছে। হয়তো সেই প্রেমিকাই তার জন্য সুইসাইড করতে গিয়েছিল। স্নিগ্ধা আর দাড়ালো না, যে কাজের জন্য এসেছিল আর যা শুনার জন্য এসেছিল তা সে সবই শুনেছে। সে না দাড়িয়ে তার রুমে চলেগেল।
অপর পাশে শ্রাবণ বলতে লাগল –
–” মহিমা শুন, তুই হয়তো জানিস আমি এইসব প্রেম-ট্রেমে বিশ্বাস করিনা। আর তার চেয়ে বড় কথা আজ বা কাল স্নিগ্ধাকেই আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে হবে।
আমি সেই স্থান বাদ দিতে পারবো না, হ্যা কাল পর্যন্ত আমার মনে হয়েছিল স্নিগ্ধা আমার জন্য পারফেক্ট কেউ নয়। তবে একটা জিনিস আমার মনে হল, জীবন সঙ্গী হতেগেলে কাউকে সবদিক দিয়ে পারফেক্ট হতে বলে মনে হয় না। স্নিগ্ধা নাহয় আমার জন্য এমনই থাকুক!”
অপরপাশ থেকে মহিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-
–” দেখ, যা ভালো মনে করিস তাই কর। স্নিগ্ধাকে তাহলে দেখে রাখিস, ওর বয়সটাও অনেক কম কখন কার প্রেমে পরে যায় বলা যায় না।পরে ভাবীর হাত ধরে সংসার করার আগেই ভাবী হাত ছেড়ে চলে যাবে।
আচ্ছা শুন তুই এখন আর ওকে স্নিগ্ধা বা তোর বিয়ের কথা বলিস না। ইউনিভার্সিটি কেন তোর পরিচিত বন্ধু ছাড়া কাউকে বলিস না!”
–” ওটাই করতে হবে।”
–” আচ্ছা রাখি,”
________________________________________
আজ প্রায় পাচঁদিন পর স্নিগ্ধা বেরিয়েছে শ্রাবণের সঙ্গে তাও তার নতুন কলেজের উদ্দেশ্যে। স্নিগ্ধা মামার সঙ্গে আসতে চাইলেও মামা শ্রাবণকে তার সঙ্গে পাঠিয়ে দিল।
তার নাক অনেক জরুরি কাজ আছে। স্নিগ্ধা জানে মামা তাকে ইচ্ছে কর শ্রাবণের সঙ্গে পাঠিয়েছে, যেন দুজনের মধ্যে একটা সম্পর্ক হোক। কিন্তু স্নিগ্ধার এইসব ভালো লাগে না তারা কেন বুঝতে চাইছে না এই সম্পর্ক জোড়া লাগার নয়। এই সম্পর্কটা নামেই বিয়ে! বিয়ের বা বৈবাহিক সম্পর্কের কোন ইচ্ছেই দুজনের নয়।
স্নিগ্ধা গাড়ি থেকে নেমে হাটতে লাগল। শ্রাবণ পিছন থেকে ডেকে উঠলো –
–” কিরে দাড়া, চিনতে পারবি না, আমি চিনিয়ে দিচ্ছি।”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের কথায় হেসে উঠে বলল-
–” শ্রাবণ ভাই আমি পড়তে পারি, তুমি হয়তো ভুলেগেছ। প্রত্যেকটা ব্লকে এবং প্রত্যেকটা ক্লাসে সেকশন, ক্লাস, হাউজ নাম্বার লেখা থাকে। বুঝতে না পারলে কাউকে জিঙ্গেস করলেই বলে দেবে। শুধু কষ্ট করে তোমাকে আসতে হবে না। তুমি বরং ইউনিভার্সিটিতে যাও!”
–” হঠাৎ ভাই?”
–” কলেজে তো আর তোমাকে জামাই পরিচয় দিয়ে তোমার নামে কেস করানোর ধান্দা করতে পারিনা!”
–” ও, আচ্ছা! হা, হা, হা, সত্যি তুই পারিস ও বটে!
যা তবে কোন সমস্যা হলে আমাকে সময় মত জানিয়ে দিস! আর শোন আমি কলেজ ছুটির পর এসে অপেক্ষা করবো তুই একটু অপেক্ষা করিস।”
–” হুম,” বলেই স্নিগ্ধা চলেগেল কলেজের ভিতরে আর শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে আছে। এই সব দুষ্টু বুদ্ধি স্নিগ্ধার মাথায় আসে সব সময়। সে তো ভুলেই গিয়েছিল এই কথাটা। শ্রাবণ গাড়িতে উঠে চলেগেল ভার্সিটিতে।
স্নিগ্ধা কলেজে এসে মোটামুটি সবার সঙ্গেই মিশেগেছে। মিশুক আর চঞ্চল বলেই হয়তো অনায়াসে সবার সঙ্গে মিশতে পারে। এর মধ্যে একজন ছিল যে কিনা স্নিগ্ধাদের এলাকায় থাকে। ছোটমামিদের বাসার থেকে কিছুটা সামনেই। স্নিগ্ধা সারাদিন কলেজে থাকার পর সেই বান্ধবীটির সঙ্গে একসঙ্গে বাসায় চলে এলো।
কিছুক্ষণ পর শ্রাবণ হুড়মুড় করে বাসায় আসলো।
স্নিগ্ধা রুমে ডুকতে নিলেই শ্রাবণ বিকট শব্দে চিৎকার করে বলল –
–” তোকে কি বলেছিলাম আমি?”
–” কি?”
–” তুই শুনিস নি?”
–” কি বলেছিলে?”
–” তোকে আমি বলিনি যে ছুটির সময় আমি গাড়ি নিয়ে ওখানে দাড়াবো?”
–” আমার মনে হয়েছে, শ্রাবণ ভাই ঐ সময় আপনার জন্য দাড়ালে আমার সময় নষ্ট হবে!”
–” তুই সময় নষ্ট হবে তা ভাবলি, এটা ভাবলি না এটা ঢাকা শহর, এখানে একটা ভুল মানুষের জীবন যেমন গড়ে তুলে। একটা ভুলে মানুষের জীবন ধংস করে তুলে।” কতটা রিস্ক জানিস তুই? নতুন এসেছিস। কটা দিন গেলে নাহয় তুই একাই আসা যাওয়া করতে পারতিস। কেন এই কাজটা তুই করতে গেলি?”
চলবে।
“কে ম্যাসেজ টা দিল? কে এলো এই পর্বে?”
— প্রশ্নটা পাঠকদের জন্য – সমাধান দিতে হবে,
এর বদলে রসকসহীন নেক্সট আর নাইস পার্টিরা দয়া করে এই কমেন্ট আর করবেন না!