সমাধি পর্ব-১০

#সমাধি ♦
#পর্ব —১০
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
____________________________°
সকলে নিরব দর্শক , চেয়ে সব দেখছে ঠিক, তবে এখানে কি বলবে তা জানেনা। কারন ঘটনা কি চলছে বুঝতেই পারল না।

মতি অনুর পিছনে দাড়িয়ে রয়েছে।রাসেদ যে মেয়েটাকে ঘর থেকেই তারিয়ে দিলো। এত পাষান তো রাসেদ নয়।এত দিন ভাবতাম মানুষ চিনি।তবে এখন তো দেখছি আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছি।

“- রাসেদ ভাই কেন এমন করছো? আমার কেন মনে হচ্ছে তুমি আমার সেই রাসেদ ভাই নও।শুধু রাসেদ ভাইয়ের মত দেখতে আর কিছু নয়।
প্লিজ রাসেদ ভাই আমায় তারিয়ে দিও না প্লিজ।

— আহ অনু।এখানে আর তামাশা করিস না।আমার একটু হেসে কথা বলাকে কি সব নাম দিচ্ছিস!! এখানে আমায় বদনাম করতে এসেছিস?
আমার এখন প্রেম বা বিয়ে করার কোন ইচ্ছা বা সময় একটাও নেই।
আমার টাকা চাই প্রচুর টাকা।সেই টাকা কামানোর পথে কাউকে বাধা হতে দেবো না।
তর বুঝা মাথায় নিয়ে আমার বড়লোক হওয়ার সপ্নগুলোকে মাটি চাপা দিতে পারিনা।

” দরজার এপাশে থেকে কথা গুলো অনেক কষ্টে বলেছে রাসেদ। অনুকে আঘাত না করলে সে এখান থেকে যাবেনা। নিজের প্রতি ওর মনে ঘেন্না জমাতে হবে , এত ঘেন্না যে আমার নামও শুনলে থু থু ফেলে।

— রাসেদ ভাই এতটা দিন তুমি আমার থেকে দূরে থাকলেও মনে হয়েছে তুমি আমার আশে পাশেই রয়েছো।তবে আজ এত কাছে এসে মনে হচ্ছে তুমি আমার থেকে অনেক দূরে অনেক।

– বার বার এমন ড্রামা না করলেই না অনু। এবার কিন্তু আমি তর গায়ে হাত তুলে দেবো।

” মারো এসো মারো,মেরে আমার হাত পা গুরিয়ে দাও। নয়তো একেবারে জানে শেষ করে দাও।তাও আমায় শান্তি দাও।এভাবে কষ্ট দিও না।

— অনু এত বড় হয়েছে কবে? ওর কথা শুনে রাসেদের কলিজা জ্বলছে। এমন অন্তর পুরানো কথা শিখলো কবে!!
” ঘরের দরজাটা খুলে দিয়েছে রাসেদ।অনুর মুখে হাসি।রাসেদ ভাই আমার ডাকে সারা দিয়েছে ভেবে চোখে এক উজ্জ্বলতা ফুটে উঠেছে।
—– শক্ত করে অনুর বাহুটা চেপে ধরেছে রাসেদ। মুহুর্তেই খুশিটা সমাধি নিলো,
শরিলটা ঝাকনি দিয়ে উচ্চস্বর কন্ঠে আঘাত অনুর মনে….

তুুই বাংলা বুঝিস না। কেমন গায়ে পরা বেহায়া মেয়ে তুই ছি অনু।

” বলো আরো বলো তবু এমন করোনা , তোমার চোখ আর মুখের কথা আলাদা তা বুঝতে পারছি।
— তুই আমার মাথা বুঝিস।
দেখ অনু চাইছিলাম না তোকে সত্যিটা বলে কষ্ট দিই তবে তুই সত্যি না শুনে মানবিনা।
“কোন সত্যি রাসেদ ভাই!!!

অনুর মায়া ভরা প্রশ্ন সূচক চোখের দিকে তাকিয়ে রাসেদের মিথ্যা বলতে কষ্ট হবে।তাই অন্য দিকে ফিরেই কথা বলা শুরু।

— দেখ অনু আমি গ্রামের ছেলে, অভাব কাকে বলে তা আমার চাইতে ভালো কেউ বুঝবে না।
জীবনে আমি অনেক বড় হতে চাই।আর চাই টাকা অনেক টাকা। আর তার সার্ট কার্ট রাস্তা হল বড় লোকের মেয়ে ফাঁসিয়ে বিয়ে করা।।

তুই বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে সব ধেস্তে দিলি। চেয়ে ছিলাম তোকে বিয়ে করব।তবে তর বাপ তো তা হতে দেবে না।পালিয়ে গিয়ে তোকে বিয়ে করলে আমি তো কিছুই পাবোনা। এক পয়সা দেবেনা তর বাবা।তাহলে তোকে বিয়ে করে লাভ!!!
বরং তর ভাইয়ের নামে সব দিয়ে দেবে তর বাবা।
তাই তোকে বিয়ে করে ভিকিরির মত জীবন পার করতে পারব না। আমায় মাফ কর।
আর শোন আমার টাকা চাই, আর তাই আমি সেই বড় লোকের মেয়েও খুজে নিয়েছি।প্লিজ অনু তর পায়ে পরি আমার বড়লোক হবার রাস্তায় কাটা হস না।

“— অনু চট করে চোখের পানিটা মুছে রাসেদকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে।
মুখে হালকা হালকা হাসি টেনে অনু রাসেদকে বুঝাতে চাইছে।

“- ঠিক আছে রাসেদ ভাই, তোমার কষ্ট করতে হবে না।আমাদের বিয়ের পর সংসারের সমস্তটা খরচ আমি বইবো।আমি চাকরি করব দিনে রাতে পরিশ্রম করে টাকা জোগার করে তোমার হাতে তুলে দেবো। দরকার পরলে অন্যের বাড়িতে কাজের মেয়ের কাজ করব।
তুমি শুধু ঘরে বসে আয়েস করে খাবে ঘুরবে আর আমায় ভালোবাসবে, বাস হলো তো চলো চলো আমরা পালিয়ে যাই।
— (অনু আমায় ভালোবাসে বুঝতে পারলাম। তবে এতটা ভালোবাসে তা জানতাম না। এক গ্লাস পানি উঠিয়ে খায়না যে মেয়ে সে আমার জন্যে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে প্রস্তুত। এত ভালোবাসে আমায় অনু….আমি কি করব আল্লাহ আমায় পথ দেখাও। এখন তো আবেগে ভেসে কথা বলছে।তবে বিয়ের পর অভাব ঘরের দরজায় দাড়ালে এই ভালোবাসা থাকবে না। অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা সময় হারিয়ে গেলো রাসেদ।)
(অনুর এই সরলতার কাছে হার মেনেছে রাসেদ। তাই এবার শেষ ডোজ……৷
সারা জীবন অভাবে কষ্ট করার চেয়ে একটু কষ্ট এখন করুক জীবন সুন্দর হবে। স্বামীর ঘরে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।)

— অনু আমার শেষ কথা তোকে জানিয়ে দিয়েছি, আমি অন্য কাউকে বিয়ে করব কথা দিয়েছি।এখনও যদি তুই তর জেদ না ছারিস তাহলে রাস্তায় গিয়ে ট্রাকের নিচে মাথা দেবো বলে দিলাম।
রাসেদের এই একটা কথা অনুর কদম পিছু করতে বাদ্ধ হয়েছে।

-রাসেদ ভাই কি বললো? মানে উনি মরতে চায়?? আমি উনার জন্য এতটাই বিরক্ত কর যে কারনে এমন একটা কথা বললো??? রাসেদ ভাই কবে এত টাকার মায়ায় ছিলো বুঝতেই পারিনি।

“— তুমি কেন মরতে যাবে,মরবতো আমি, কারন ভালোবেসেছি আমি। তাই সাজা তো আমার পাবার কথা।

অনু পাগলের মত ছুটছে- বেরিয়ে গেছে রাসেদের গলি।
রাসেদ অনুর যাবার পানেই তাকিয়ে। আটকানোর সাহস নেই না তাকে বুকে আগলে নেবার।

“— ছি রাসেদ তোমায় ছোট ভাই হিসাবে বুকে টেনে নিয়েছিলাম,ভেবেছিলাম তুমি বেশ বড় মনের মানুষ। কিন্তু আজ জানলাম তুমি একটা ছোট লোক। এমন নিষ্পাপ একটা মেয়েকে এভাবে তারালে?
মেয়েটা তোমায় পাগলের মত ভালোবাসত।টাকা জীবনে কত আসে কত যায়,তবে ভালোবাসা বার বার আসেনা রাসেদ।
সামান্য টাকার জন্য?? ছি ছি।

সত্যি না জেনেই মতি তার বক্তব্য শেষ করলো রাসেদের জন্য মনে অনেক ঘিন্না জন্মেছে। চোখের সামনে যে রুপ দেখলো তা কম নাকি ঘিন্না করার।

———- রাসেদ মতির গলা জরিয়ে কান্নায় ভেঙে পরেছে।মতি ভাই আমি অনুকে বড্ড ভালোবাসি বড্ড।
ওর চোখের পানি আমায় শেষ করে দিচ্ছে মতি ভাই। হো হো করে মেয়েদের মত কাঁদছে রাসেদ, অনুর জন্যে আমি আজ ওর জীবনের সব চাইতে বড় কষ্টের কারন হয়েছি। ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি পাপ করেছি মতি ভাই পাপ।
উপস্থিত সকলে বেশ অবাক।

” মতি সব না বুঝলেও একটু বুঝতে পারলো।দুজনই দুজনকে ভালোবাসে। তবে মুখে বলছে না। কিছু একটা তো আছে যার কারনে রাসেদ এমন করল।
“তাহলে ফিরিয়ে দিলে যে??
মতির কথার উওর রাসেদের জানা নেই। সত্যি কেন? ওর মা বাবার জন্যে? নাকি নিজের সামর্থ্যের কাছে হার মেনে??

“- নাহহহ মতির জীবনে যা ঘটেছে তা ওদের জীবনে ঘটতে দিবে না। যাকে ভালোবেসে ছিলাম তাকে না পেয়ে যে যন্ত্রণায় কাতর আমি আজও সেই যন্ত্রণা ওদের সইতে দেবো না।না হই আমি ওদের কেউ ছোট ভাই বলে ডেকেছি তাই বড় ভাইয়ের দায়িত্বের বুঝা আমিই বইবো।

“- মতি রাসেদের হাত নিজের গলা থেকে ছারিয়ে ছুটে চলছে।
আমি এখনই ঐ মেয়েকে সব বলছি, তুই তো তর মনের কথা বলবি না তাই আমিই বলবো।

— রাসেদ মতির কথা শুনে মতির পিছু ছুটেছে।না মতি ভাই আল্লাহর দোহাই লাগে যাবেন না।

তোমার কথা শুনছিনা, আমি সব বলবোই আর তোমাদের বিয়েও আজকেই হবে।আমি সব ব্যাবস্থা করব।
-৷ মতি আর রাসেদ ছুটছে।একজন ছুটছে অনুকে আটকাতে,তো আরেকজন মতি ভাইকে থামাতে।এখন অনু এসব শুনে নিলে ওকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবোনা।

— মেন রাস্তায় আসতেই চারিদিকে নজর ঘুরিয়ে, মতি অনুর দেখা পেলো, ঐ যে রাস্তার ঐ পাশে।অনু তার গাড়িতে বসে কাদঁছে।

এই যে এই মেয়ে..ইসস কি নাম যেনো বললো রাসেদ??
ওহ অনু!
অনু!! অনু!!!
মতির এই ডাক অনুর কান অবদি পৌছালোনা।কারন অনু কিছুটা দূরত্বে আছে।আর রাস্তায় তো শুধু ওরা দুজন নয়।।। মানুষের ভির গাড়ির লম্বা সারি। বিভিন্ন গাড়ির বিরক্তকর হর্ণ। সব মিলিয়ে বিস্রি লাগছে।

“— নাহ রাস্তার ঐ পাশে যেতেই হবে। মতি এদিক সেদিক দেখে তরিঘরিতে রাস্তা পার করতে চাইছে। রাস্তার মাঝা মাঝি আসতেই রাসেদ মতির হাতটা ধরে নেয়।
মতি ভাই আল্লাহর দোহাই আপনি অনুকে কিছু বলবেন না। আপনি কিছুই জানেন না।

— ছারো মিয়া।তোমার কথা শুনছিনা, আর না কিছু জানতে চাই।তোমার বৌ কে যদি খাওয়া সমস্যা হয় তাহলে ওর সমস্ত খরচ আমি বইবো।তবুও ওকে ফিরিয়ে দিও না।সত্যি কারের ভালোবাসা সবার জোটেনা।

” নাহ রাসেদ ছারবেনা নিজের শরিলের সমস্ত জোর লাগিয়ে মতিকে আটকাতে চাইছে।
এদিকে অনু ওর গাড়ি স্ট্রার্ট দিয়ে ফেলেছে। আর কার জন্যে দেরি করবে সে।কার আশায় বসে রবে।

মতি এখনও দেখতে পারছে অনুকে। ও যদি চলে যায়?? তখন শেষ সব। ওকে মতি খুজেই পাবেনা। আর না রাসেদ ওর ঠিকানা দেবে।
তাই একটাই রাস্তা রাসেদকে ধাক্কা মেরে ফেলে দৌড়ে অনুকে আটকানো।

ভাবার সাথে সাথেই সেই কাজে লেগে পরেছে, নাহ মতির জোর রাসেদের জোরের সাথে কুলাচ্ছেনা।

মতি এবার বেশ দম লাগিয়ে রাসেদের হাত নিজের থেকে ছারিয়ে দৌড় দিতেই একটা বাসের সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পরে।
বাস ধারাম একটা শব্দ কানে আসলো।
“—– এই মাএ কি হল?? রাসেদের মুখে কি ছিটকে এলো পানির মত? মুখে হাত দিয়ে কি লেগেছে দেখতে হাতটা সামনে এনেই দেখলো রক্ত.. এখানে এত ভির কেন?? মতি ভাই??.মতি ভাইয়ের রক্ত লেগে আছে রাসেদের শার্টে।

মতি ভাই… চিৎকার করে মতির কাছে ছোটেছে রাসেদ।
মানুষের ভির আছে তবে উপকারের চেয়ে ছবি আর ভিডিও করাতেই ব্যাস্ত। পোষ্ট করতে হবে তো।

অনু চলে গেছে সে এদিকের খবর জানলোই না।
রাসেদের হাত ফসকে এভাবে মতি ভাই ছুটবে ভাবতেই পারেনি।

“— দুদিন হাসপাতালে ছিলো,অবস্থা একটু একটু করে আরো খারাপ হওয়া শুরু করল।
বেঁচে থাকলেও মনে হয় না কোন দিন সোয়া থেকে উঠতে পারত।মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে গেছে।মাথায় বেশ আঘাত পেয়েছে। মাথার পিছন সাইডে বেশ আঘাতটা। যার কারনে এই দশা। গলায় একটা ছোট্ট কাচের টুকরো বিধেছে।
তাই কথা বলতে পারছেনা।

— শেফা তখন বেশ ভেঙে পরেছিলো কি করে হল কেন হল মাথায় কিছুই আসছেনা ওর।এক মাএ ওর ভাই ছারা দুনিয়ায় কেউ নেই। তাই মতিও হয়তো বুঝতে পেরেছে ওর সময় শেষ….. তাই বোনের একটা ব্যাবস্থা করে যেতে হবে।

চলবে..★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here