সাইকো_লাভার পর্বঃ১৮

0
1702

সাইকো_লাভার পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃসাদিয়া_সিদ্দিক_মিম

আদি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাদছে,,,মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাব,,,কিছুক্ষণ পরপর আদি আমার সারা মুখে পাগলের মত চুমু দিচ্ছে,,,আমি চোখ বন্ধ করে আদির স্পর্শ গুলো অনুভব করছি।আমার চোখ দিয়ে এখনও পানি পড়ছে।

দিয়াঃ আমি তোমাকে অবিশ্বাস করি নি আদি,,,আমি তোমাকে আগের মতই বিশ্বাস করি,,,পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে এতদিন তোমার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে আমাকে,,,কিন্তু আর না এবার আমি আর তোমার থেকে দূরে যাব না,,,তোমার দূরে থেকে ভালো করতে গিয়ে তোমার ক্ষতি করেছি আমি,,,আমাকে তুমি পারলে ক্ষমা করো।(কাঁদতে কাঁদতে)

আদিঃ এই জান,,,তুমি কেঁদো না,,,আমার ত কষ্ট হয় জান,,,তুমি প্লিজ কেঁদো না।আমি আর রাগ করব না তোমার সাথে,,,প্লিজ কেঁদো না।(দিয়ার গালে হাত রেখে)

দিয়াঃ আমি তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি তাই না,,,খুব খারাপ আমি,,,তোমার দিয়া খুব খারাপ।(কাঁদতে কাঁদতে)

আদিঃ হে আমার দিয়া খুব খারাপ,,,আমাকে চারটা মাস দূরে রেখেছে,,,এবার আমি তার প্রতিশোধ গুনে গুনে নিব,,,জানো আমার কত কষ্ট হয়েছিল।

দিয়াঃ হুম নিও,,,যত ইচ্ছে শাস্তি দেও আমাকে,,,আমি সব শাস্তি মাথা পেতে নিব,,,কিন্তু তার জন্য আমাকে সময় দিতে হবে।(আদির চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল)

আদিঃ না আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না,,,আর কোন সময় নেয়ানেয়ি নাই,,,আমি তোমাকে আর দূরে যাওয়ার সুযোগই দিব না,,,এবার থেকে চব্বিশ ঘণ্টা তুমি আমার সাথে থাকবে,,,আর পালাতে দিব না আমি তোমাকে।(জড়িয়ে ধরে)

দিয়াঃ তুমি কী কান্না থামাবে হুম,,,কান্না না থামালে কিন্তু আমি আবার চলে যাব,,,কান্না থামাও প্লিজ।(করুন স্বরে)

আদিঃ ঠিক আছে আমি আর কাঁদব না,,,কিন্তু আমি তোমাকে আর কোথাও যেতে দিব না।

দিয়াঃ হুম তুমি আর কাঁদবে না,,,এবার থেকে কাঁদবে তারা, যারা এতদিন আমাকে তোমার থেকে দূরে রেখেছে,,,যারা আমার ছোট মা আর তনয়াকে খুন করেছে।(আদির চোখের পানি মুছে কপালে চুমু দিয়ে)

আদিঃ কী বলছো তুমি এসব,,,কে তোমাকে আমার থেকে দূরে রেখেছে দিয়া,,,একবার তার নাম বলো লাশ ফেলে দিব।

দিয়াঃ তুমি শান্ত হও,,,আর আমার কথা মাথা ঠান্ডা করে শুনো।(আদিকে খাটে বসিয়ে তার পাশে বসে হাতে হাত রেখে বললাম)

আদিঃ হুম বলো।

দিয়াঃ যেদিন ছোট মা আর তনয়া মারা যায় সেদিন কী কী হয়েছে বলো আমাকে।

আদিঃ সেদিন ছোট মা তনয়াকে স্কুল থেকে আনতে যায় সেদিন ছোট মার গাড়িটা রাস্তায়ই খারাপ হয়ে যায়,,,আর আমি ঐদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তার জন্য আমি ওদের পিক করে নেই,,,মাঝ রাস্তায় এসে তনয়া বায়না করেছিল তনয়া বেলুন নিবে,,,আর আমি গাড়ি থেকে নেমে বেলুন আনতে যাই,,,তখন আমি বেলুন আনতে যাওয়ার সময় একটা বইকের সাথে ধাক্কা লাগে আর কিছু জায়গায় কেটে যায়,,,তখন আশেপাশের কয়েকজন মিলে কাছেই একটা ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যায়,,,তারপর এসে দেখি তনয়া বা ছোট মা কেউ গাড়িতে নেই,,,আমি চারপাশে খুঁজেও তাদেরকে পাই নি,,,তখন একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি তারা নাকি একটা গাড়ি করে চলে গেছে,,,আমি ভেবেছি ছোট মা আর তনয়া অপেক্ষা করে হয়ত চলে গেছে কারো সাথে,,,আর আমার অফিসে একটা মিটিং ছিল তার জন্য আমি আর কিছু না ভেবে অফিসে চলে আসি।

দিয়াঃ আর সেদিনি বিকেল বেলা তনয়া আর ছোট মার লাশ পাওয়া যায় একটা বন্ধ ফ্যাক্টরির কাছে যেটা ছিল তোমাদের,,,ঠিক বলছি ত।

আদিঃ হে ঠিকই বলছো তুমি,,,কিন্তু দিয়া তুমি বিশ্বাস করো আমি ওদের খুন করি নি।

দিয়াঃ আমি জানি আদি তুমি কাউকে খুন করো নি,,,আমি প্রথম থেকেই বিশ্বাস করি তুমি নির্দোষ,,,তাই আমি রায়ান ভাইয়ার সাহায্য নেই,,, রায়ান ভাইয়াকে দিয়ে অল্প অল্প করে কিছু প্রমান যোগাড় করেছি যেটা দিয়ে প্রমান হয় তুমি নির্দোষ।

আদিঃ তবে এতদিন তুমি কেন আমার থেকে দূরে ছিলে দিয়া,,,এতই যদি বিশ্বাস করো তবে কেন তুমি আমার থেকে চারটা মাস কেরে নিলে,,,৩ বছরের রিলেশন ছিল আমাদের,,,তুমি ত জানতে তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারি না,,,তারপরও সবটা জেনে কেন আমার থেকে দূরে ছিলে তুমি,,,কীসের শাস্তি দিয়েছ তুমি আমাকে।(দিয়ার দুই বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে রেগে বলল)

দিয়াঃ আমার আর কিছু করার ছিল না,,,তোমার জীবন বাঁচানোর জন্য এতদিন আমাকে তোমার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে।(মাথা নিচু করে)

আদিঃ মানে?

দিয়াঃ আমি যেদিন জানতে পারি তুমি নির্দোষ সেদিনি আমি সবাইকে জানাতে চেয়েছি আমার আদি নির্দোষ কিন্তু তার আগেই আমার কাছে অচেনা এক নাম্বার থেকে ভিডিও আসে যেখানে তোমার দিকে একজন বন্ধুক তাক করে আছে,,,শ্বাস আঁটকে আসছিল আমার তখন,,,তার সাথে সাথেই আরেকটা ম্যাসেজ আসে যেখানে বলা হয়েছে প্রমান গুলো নষ্ট করে দিতে আর তোমার থেকে দূরে থাকতে নয়ত তোমাকেও অরা ছোট মা আর তনয়ার মত,,,,,

আর বলতে পারলাম না,,,চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।আদি আমাকে পরম আবেশে বুকে জড়িয়ে ধরে।

আদিঃ কে বা কারা এসব করেছে কিছু জানো তুমি।(নরম গলায়)

দিয়াঃ না সেটা জানতে পারি নি কিন্তু জানতে বেশি সময় লাগবে না,,,তোমার ঐ গার্ডকে নজরে রাখো,,,আমার মনে হচ্ছে অয়ও এসবের সাথে জড়িত,,,আমার ধারনা যদি সত্যি হয় তবে বাইরের খাবার গুলো খেয়ে নিশ্চয় কোন পোকা মাকড় এখন মরে পড়ে আছে।

আমি আদির হাত ধরে বাইরে নিয়ে এলাম কিন্তু একি এখানে ত খাবারের কোন ছিটেফোঁটাও নেই।

দিয়াঃ আমি শিয়োর আদি তোমার ঐ গার্ডই এসবের সাথে জড়িত,,,তখন তোমাকে আঘাত করা,আবার এই খাবার দিয়ে যাওয়া সবটার পিছনেই ঐ গার্ড আছে আমার মনে হচ্ছে।আর ঐ গার্ডের পিছনে আছে ঐ মেয়েটা যে খাবারটা দিয়ে গেছে,,,,কিন্তু সে মেয়েটা কে?খুব চেনা চেনা লাগছিল কিন্তু কে মেয়েটা মনে করতে পারছি না।

আদিঃ দিয়া তুমি শান্ত হও,,,আমি দেখছি।

দিয়াঃ শোন,,,আমরা এতদিন যেভাবে চলেছি সেভাবেই চলব,,,কাউকে বুঝতে দিলে চলবে না যে আমাদের মধ্যেকার সব মান অভিমানের চাদর সরে গেছে,,,জানলে তোমার বিপদ হতে পারে।

আদিঃ কেউ জানবে না,,,কিন্তু তুমি প্রমিস করো এবার থেকে কিছু করার আগে আমাকে জানাবে,,,এভাবে না জানিয়ে আর কিছু করবে না।(আমার হাতটা আদির হাতের মুঠোয় নিয়ে)

দিয়াঃ হুম প্রমিস করলাম তোমাকে জানিয়েই সবকিছু করব।(আদির হাতের উপর হাত রেখে)

আদিঃ হুম ঠিক আছে চলো এবার ভিতরে।

বলেই আদি আমার কাঁধে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ভিতরে নিয়ে এলো।

আদিঃ তুমি একটু বসো আমি একটু আসছি।

দিয়াঃ কই যাবে তুমি।

আদিঃ মৃদুল কে খুঁজতে,,,অয় যে তখন গেলো এখনও ত এলো না।

দিয়াঃ আচ্ছা যাও,,,কিন্তু সাবধান চোখ কান খোলা রেখো।

আদিঃ ওরে আমার গোয়েন্দা গিন্নি রে,,,,ঠিক আছে সাবধানেই থাকব,,,তুমি বসো আমি যাব আর আসব।

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই আদি বেরিয়ে গেলো রুম থেকে,,,আমি ভাবছি মেয়েটা কে,,,আর আদিকেই বা মারতে চাইছে কেন?,,,কী শত্রুতা ঐ মেয়েটার আদির সাথে,,,আচ্ছা এই মেয়েটাই কী এসবের পিছনে,,,ছোট মা আর তনয়ার খুনের সাথে কী মেয়েটার কোন সম্পর্ক আছে,,,উফফ মাথায় কিছু ধরছে না।

আমি যখন এসব ভাবনায় মগ্ন তখন বাইরে থেকে চিৎকার ভেষে আসে,,,আমি দৌড়ে বাইরে গিয়ে দেখি আদির সে গার্ডটা মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে,,,আর আদি দৌড়ে বাইরের দিকে যাচ্ছে।আদির সাথে কয়েকজন গার্ডও গেছে।আমি গার্ডের দিকে তাকিয়ে দেখি কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে,,,তাই আমি গার্ডের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে বোঝার চেষ্টা করছি কী বলতে চাইছে।

দিয়াঃ আপনার এ অবস্থা কে করেছে,,,কে গুলি করেছে আপনাকে?

গার্ডঃ আআআমি বব বাঁচতে চচাই,,,প্লিজ আআআমাকে বাঁচান।

দিয়াঃ আপনি চোখ বন্ধ করবেন না,,,আমি অ্যাম্বুলেন্সে ফোন দিচ্ছি।

বলেই উঠে গেটের কাছে এসে চিৎকার করে আদিকে ডাকলাম,,,কিন্তু আদির কোন পাত্তাই নেই,,,আমি আবার ভিতরে গেলাম,,,নাহ কোন গার্ড নেই,,,কেউ নেই।আমার এবার আদির গাড়ির দিকে নজর গেলো,,,আর চাবিটা নিশ্চয়ই আদির ঘরে হবে তাই আমি আর কিছু না ভেবে এবার বাড়ির ভিতরে গিয়ে গাড়ির চাবি খুঁজতে থাকি,,,চাবিটা একটা ড্রয়ারে পাই আর সেটা নিয়ে গাড়ি নিয়ে এলাম,,,এসে গার্ডের কাছে এসে দেখি সে জ্ঞান হারিয়েছে,,,আর তার পাশে স আকাঁ,,,এই স দিয়ে কী বুঝাতে চাইল,,,না আর কিছু ভাবলে চলবে না,,,একে বাঁচাতে হবে,,,তাই লোকটাকে অনেক কষ্টে গাড়িতে উঠালাম,,,গাড়িতে উঠিয়ে হাঁপাচ্ছি আমি,,,উফফ একজন পুরুষ কে কী এভাবে গাড়িতে উঠানো আমার মত মেয়ের কাজ,,,গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি,,,তখন আদি সামনে পড়ে আমি আদিকে কিছু বলব কিন্তু তার আগেই আমার চোখ যায় আদির পাশে পড়ে থাকা আরেকটা গার্ড মৃদুলের উপর সেও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে,,,আর আদির হাতটাও অনেকটা কেটে গেছে।আমি দৌড়ে গাড়ি থেকে নেমে এলাম।

দিয়াঃ আদি কী হয়েছে,,,তোমাদের এ অবস্থা কে করল।(উত্তেজিত হয়ে)

আদিঃ দিয়া পরে সব বলব কিন্তু আগে ওকে হসপিটালে নেও আর পঙ্কজ(গাড়িতে যে গার্ড আছে তার নাম) কই।

দিয়াঃ উনি গাড়িতে আছে,,,তুমি উনাকে গাড়িতে উঠাও।

বলেই আমি ড্রাইভিং সিটে বসি,,আর আদি পিছনে সেই গার্ডকে বসিয়ে আমার পাশে বসে,,,আমি আদির থেকে জেনে নেই কোনদিকে হসপিটাল,,,তারপর আমরা রওনা দিলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here