পর্বঃ০৯
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(কার্টেসি ছাড়া গল্প কপি নিষেধ।)
…
সবেই খেতে বসেছে রাইদা এমন সময় দরজায় কেউ নক করলে প্রচন্ড বিরক্ত হয় সে। চামচটা শব্দ করে প্লেটে রেখে দরজা খুলে। দরজা খোলার সাথে সাথে হুড়োহুড়ি করে রুবেল,যামিনী রুমে প্রবেশ করে। রাইদা বোকার মতো তাকিয়ে দুই বন্ধুর কার্যকলাপ দেখতে থাকে। রুবেল আর যামিনী কোনো কথা নিয়ে ঝগড়া করছে এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না রাইদার।
যামিনী রুবেলকে কিছু বলছে আর রুবেল কানে হাত দিয়ে বিছানায় বসে পরে।
‘আমার উপর রেগে আছো রাই?’,রাইদার পিছনে দাঁড়িয়ে ধীর গলায় বলে আরাফ।
রাইদা ঘাড় ঘুরিয়ে আরাফের দিকে তাকায়।যামিনী আর রুবেলের ঝগড়ায় সে আরাফকে এতক্ষণ খেয়ালই করেনি।
‘আপনার উপর রাগ করার কারণ আছে কোনো?’, হেঁসে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
আরাফ মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দেয়।
‘তাহলে রাগ করিনি।আসলে গত রাতে ঘুম হয়নি তাই আজকে ঘুম দিলাম।’,আরাফকে বলে রাইদা।
‘এই রাই তোমার শরীর ঠিক আছে? বীচ থেকে ফিরে আর বের হলে না আমাদের সাথে কেনো?’,যামিনী এসে রাইদার বাহু ধরে বলে।
‘এখন একদম ঠিক আছি আপু।’,যামিনীকে উত্তর দেয় রাইদা।
‘তুমি তো এখনো রাতের খাবার খাওনি।খেয়ে ঘুম দাও কালকে সকাল সকাল উঠতে হবে আবার।’,রুবেল এসে বলে।
‘হ্যা সকালে আমরা পুরো কুয়াকাটা ঘুরতে বের হবো।একদম ভোর চার টার দিকে সূর্যদয় দেখবো।অনেক মজা হবে।’, উচ্ছাসিত হয়ে বলে যামিনী।
‘ঠিক আছে আমি রেডি বসে থাকবো আপনারা যাওয়ার সময় আমাকে ডাক দিয়েন।’,রাইদা বলে।
‘এই যোমিন রুমে গিয়া শ্রেয়াকে বল এখনই সাজতে নেইলে ভোরে বাইর হইতে পারবি না।ওর তো সাজতে বইলে দিন শেষ হইয়া যায়।’,রুবেল যামিনীকে তাড়া দিয়ে বলে।
‘তুই বলতে চাচ্ছিস আমরা বেশি সময় নেই?’,রেগে যামিনী প্রশ্ন করে রুবেলকে।
‘এই দেখ বললাম শ্রেয়াকে লাগলো তোর গায়ে তার মানে তুই ও এমন।এই রাই গেলাম আমি না হলে যোমিন আমার মাথা নষ্ট করে দিবে।’,রুবেল কানে হাত দিয়ে কথাগুলো বলে দরজার দিকে যায়।
‘রাই ভোরে রেডি হয়ে থেকো দেরি করবা না।এই রুবেল কি বললি তুই?’,কথাগুলো বলে যামিনী রুবেলের পিছন পিছন গিয়ে ঝগড়া করতে থাকে।
রাইদা ওদের দু’জনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। চোখ ঘুরিয়ে তাকালে দেখে আরাফ তার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘আপনি কি এখানে থাকার প্লান করছেন?’,আরাফকে প্রশ্ন করে রাইদা।
‘এখানে তো বেড একটা তো কোথায় ঘুমাবো আমি?’,বিছানার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেঁসে বলে আরাফ।
‘কেনো ফ্লোর খালি আছে তো।আপনি এখানে শুবেন।’,হাত দিয়ে ফ্লোর দেখিয়ে বলে রাইদা।
‘ঠিক আছে এক্ষুনি জামা পাল্টে আসছি দরজা কিন্তু খুলে রাখবা।’,দরজার দিকে পা বাড়িয়ে বলে আরাফ।
রাইদা আরাফের পিছন পিছন যায় দরজা লাগানোর জন্য।দরজার সামনে গিয়ে কিছু মনে হতেই আরাফ পকেটে হাত দেয়।
‘হাত পাতো।’,নিজের ডান হাত মুঠো করে রাইদার দিকে বাড়িয়ে বলে আরাফ।
‘কি?’,কোনো কিছু না বুঝে প্রশ্ন করে রাইদা।
‘হাত এদিকে দাও তাহলেই দেখতে পাবে।’
রাইদা ডান হাত পাতলে আরাফ ওর হাতে একটা ঝিনুকের কিছু দেয়।জিনিসটা হাতে নিয়ে দেখে ঝিনুকের পায়েল। আরাফের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মাথা চুলকে হাসছে।রাইদাও আরাফের দিকে তাকিয়ে হেঁসে দেয়।
আরাফ চলে গেলে পায়েলটা বিছানার পাশের সাইড ড্রয়ারের উপর রেখে খেতে বসে। খাওয়া শেষ করে ঘুম দেয়।
…
ভোর চারটায় উঠে সকলের জন্য মোটর সাইকেল ভাড়া করা হয় গঙ্গামতি চড়ে যাওয়ার জন্য। সকলেই বাইকের পিছনে উঠে বসে কিন্তু রাইদা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
‘কি হলো রাই উঠো জলদি।’,যামিনী রাইদাকে তাড়া দিয়ে বলে।
‘আপু আমি উঠবো না।’,মাথা নিচু করে বলে রাইদা।
‘কেনো ভয় লাগে? বাচ্চা মেয়ে সাজতে চাইছো?যত্তসব ন্যাকামি।’,শ্রেয়া চোখ ঘুরিয়ে রাইদার দিকে তাকিয়ে বলে।
‘আরে শ্রেয়া ওরে বলতে তো দে কি সমস্যা ।কি হয়েছে বলো আমাদের।’,রুবেল জিজ্ঞেস করে রাইদাকে।
‘কিছু না ভাইয়া, আপনারা যান আমি বাইকে যাবো না।’,রাইদা আগের ন্যায় মাথা নিচু করে বলে।
সায়ন নিজের কপালে আঙুল রেখে কিছু ভাবলো তারপর বাইক থেকে নেমে বাকিদের চলে যেতে বলে।বাকিরা কিছু না বুঝে চলে যায়।আরাফ পুরোটা সময় নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।তার কি বলা বা করা উচিত বুঝে উঠতে পারে না।যাওয়ার সময় কিছু বলতে রাইদার দিকে তাকালে দেখে রাইদা তাকে ইশারায় চলে যেতে বলে।শেষে রাইদার কথা রাখতে চলে যায় আরাফ।
হোটেলের পাকিং থেকে নিজের গাড়ি বের করে আনে সায়ন।রাইদা বাহিরে অপেক্ষা করছিলো। সায়ন গাড়ি নিয়ে এলে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে রাইদা। গাড়ির জানালা খুলে প্রাণ ভরে ভোরের মুক্ত বাতাস চোখ বন্ধ করে নিতে থাকে রাইদা। সায়ন আঁড়চোখে রাইদাকে দেখছে আর গাড়ি চালাচ্ছে।গত কালকের ঘটনার পর এখনো দু’জনের মধ্যে কোনো কথা আদান প্রদান হয়নি।
পাঁচটা বাজতে বিশ মিনিট বাকি তখন রাইদা আর সায়ন গঙ্গামতির চড়ে পৌঁছায়। গাড়ি থেকে নেমেই সমুদ্রের দিকে ছুটে রাইদা। সায়ন রাইদাকে ডাকতে গিয়েও ডাকে না ধীর পায়ে রাইদাকে অনুসরণ করে।
সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে রাইদা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধীরে ধীরে আঁধার কেটে সূর্য নিজের লাল আভা ছড়িয়ে ধরণীকে জানান দিচ্ছে সে চলে এসেছে।সূর্য যেখান থেকে উদয় হচ্ছে মনে হচ্ছে এটাই তার বাসস্থান। বিশাল সূর্যটা ধীরে ধীরে আলো ছড়িয়ে দিতে থাকে চারিদিকে। সূর্যের আলো চোখে মুখে পড়তেই চোখ কুঁচকে ফেলে রাইদা।একটু পর অনুভব করে তার চোখে আলো পড়ছে না।এক চোখ খুলে দেখে তার মুখের সামনে কেউ দু’হাত তাক করে সূর্যের আলো আসতে বাঁধা দিচ্ছে। পাশে তাকিয়ে দেখে সায়ন এভাবে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘এভাবেই আমার জীবনে আলো আসতে যাতে না পারে সেই বাঁধাই দিতে চাচ্ছেন?’,সায়নের চোখে চোখ রেখে বলে রাইদা।
‘কখনো কখনো জীবনের জন্য অন্ধকার ভালো।এখন আলো বাঁধা দিচ্ছি পরে প্রয়োজন হলে অন্ধকারকে বাঁধা দিয়ে আলো আনবো।ইউ নো মি বেটার রাইট?’,সায়ন শান্ত চোখে জবাব দেয়।
সায়নের করা শেষ প্রশ্নটা শুনে রাইদা দু পা পিছিয়ে যায়।
‘শেষে কি বললেন?’,রাইদা প্রশ্ন করে।
‘সবসময় অসভ্য লোক বলো আমায় সেইজন্য বললাম।’
সায়নের কাছ থেকে উত্তর পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রাইদা। সায়ন বাম দিকে হাঁটা দেয়।রাইদা সেখানেই দাঁড়িয়ে সমুদ্রের পাড়ের লাল কাঁকড়া গুলোকে দেখছে। পুরো চরে ছোট বড় লাল কাঁকড়া অবাধ বিচরণ।
ক্যামেরার ক্লিকের শব্দে রাইদা সেদিকে তাকায়।
‘একটু হাসো রাই। সকাল সকাল তোমাকে হাসিমুখে দেখলে আমার দিন ভালো যায়।’,ক্যামেরা তাক করে বলে আরাফ।
আরাফের কথা শুনে ভেংচি দেয় রাইদা।সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যটা ক্যামেরা বন্দি করে ফেলে আরাফ।
‘এই ছবি আমি ভাইরাল করে দিবো।’,চোখ থেকে ক্যামেরা নামিয়ে ছবি দেখে হাসতে হাসতে বলে আরাফ।
‘এক্ষুনি ডিলিট করুন না হলে ক্যামেরা পানিতে ফেলে দিবো।’,কথাটা বলে আরাফের দিকে এগিয়ে এসে ক্যামেরার পানে হাত বাড়ায় রাইদা।
আরাফ এক হাতে ক্যামেরা উঁচু করে রাইদার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।রাইদা হাত উঁচিয়ে আরাফের হাত ধরে টানে তাও হাত নামাতে পারে না
‘আরাফ! এদিকে আয়।’,সায়ন জোরে ডাক দেয় আরাফকে।
রাইদা ঘাড় ঘুরিয়ে সায়নের দিকে তাকালে দেখে সে চোখ মুখ শক্ত করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথে নিজের হাত নামিয়ে আরাফের থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়। আরাফ সায়নের দিকে এগিয়ে যায়।
সকাল বাড়তেই সকলে চলে যায় কুয়াকাটার সবচেয়ে বড় রাখাইন সম্প্রদায়ের বসতি গোড়া আমখোলাপাড়া রাখাইন পল্লীতে। রাখাইন পল্লীতে এসে সকালের নাশতা সেরে নেয় সকালের।
এরপর রাখাইন পল্লীর মার্কেট ঘুরতে বের হয়।মার্কেট ঘুরে সকলেই টুকিটাকি কিছু কেনাকাটা করে নেয়।
সেখান থেকে বেরিয়ে চলে যায় ইলিশ পার্ক এবং রিসোর্টে।সেখানেই দুপুরের ভোজন সারে সবাই। ।
পরবর্তী গন্তব্য বৌদ্ধ বিহার।
কুয়াকাটার বৌদ্ধ বিহারে প্রবেশের মুখে একটি কুয়া রয়েছে। কুয়াকাটা নামটি এই কুয়া থেকে এসেছে। সমুদ্রের লবণ পানির এলাকায় মিষ্টি পানির একমাত্র আধার এই কুয়া।কুয়ার পাশের রয়েছে বৌদ্ধমন্দির। যা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার নামে পরিচিত। এখানে নয়টি ধাতুর সমন্বয়ে তৈরি বৌদ্ধ মূতি রয়েছে।বিহারে প্রবেশের মুখে দাড়ান দুইটি মূর্তি রয়েছে। এগুলো চুনদ্রী দেবীর। রাইদা নিজের ক্যামেরা বের করে সব কিছু রেকর্ড করে রাখছে।সে যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে। যামিনী তাকে এসবের বিষয়ে বিস্তারিত বলছে।
বৌদ্ধ বিহারের উপরের দিকে সিড়ির শেষ প্রান্তে রয়েছে শাক্য রাজার মূর্তি।উপরে উঠে পুরোটা স্থানকে নিজের ক্যামেরা বন্দি করে রাইদা।অপর দিকে আরাফ ছবি তুলে নিচ্ছে সকলের।
শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার ও রাখাইন মার্কেটের সংলগ্ন ভেড়িবাধের ঢালে কুয়াকাটার নৌকা জাদুঘর অবস্থিত। বিকাল বেলা বৌদ্ধ বিহার থেকে বেরিয়ে কুয়াকাটার নৌকা জাদুঘর দেখতে চলে যায়।
গত কালকের মতো সায়ন গাড়ি ঘুরিয়ে লেম্বু বাগানে চলে যায়।এখান থেকে সূর্যাস্ত সবথেকে ভাল দেখা যায়। সূর্যদয়ের সময় ভিডিও করতে ভুলে গেলেও সূর্যস্তারে সময় সুযোগটা মিস করে না রাইদা। ভোরে যেভাবে নিজের উপস্থিতি জানাতে সূর্য চারিদিকে আলো ছড়িয়ে এসেছিলো। সন্ধ্যা বেলাও নিজের অস্তিত্ব মেটাতে ধরণীতে অন্ধকার নামিয়ে ধীরে ধীরে সমুদ্রের বুকে হারিয়ে যেতে থাকে। এতো সুন্দর দৃশ্য নিজের স্মৃতিতে সারাজীবনের জন্য বন্দি করে নেয় রাইদা।
এই লেম্বু বাগানে কিছু দোকান রয়েছে যারা কাঁকড়া,চিংড়ি এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ফ্রাই করে বিক্রি করে। সায়ন আর রুবেল গিয়ে বড় সাইজের কাঁকড়া এবং মাছ কিনে তা ফ্রাই করতে দেয়।
খেতে বসলে কাঁকড়া দেখে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে রাইদা।সে কাঁকড়া নামক জিনিসটা খায় না।আরাফ নিজে গিয়ে রাইদার জন্য চিংড়ি কিনে আনে।শেষে রাইদা শুধু চিংড়ি ফ্রাই খায়।
সারাদিন ঘুরাঘুরি করে হোটেলে ফিরতে রাত দশটার বেশি বেজে যায়। ক্লান্ত হয়ে সকলে নিজেদের রুমে যায় ফ্রেশ হতে। কাপড় পাল্টে রাইদা চুল মুছতেছিলো তখনই দরজায় কেউ নক করে। রাইদা দরজা খুলে দেখে যামিনী দাঁড়িয়ে আছে।
‘হল রুমে নাকি হোটেলের কিছু গেস্ট মিলে ছোট খাটো পার্টি অরগানাইজ করেছে সেখানে আমাদেরকে ইনভাইট করেছে।তুমি জলদি রেডি হয়ে আসো আমরা যাচ্ছি।’,যামিনী নিজের দুল ঠিক করতে করতে বলে।
‘কিন্তু আপু আমি তো টায়ার্ড।’,হাই তুলে বলে রাইদা।
‘আমি বসছি যাও তুমি চেঞ্জ করো।’,যামিনী বিছানায় বসে বলে।
রাইদা মন খারাপ করে প্যান্ট, টি শার্ট আর শার্ট নিয়ে বাথরুমে চলে যায়।
মিনিট পাঁচেক পর বের হলে যামিনীকে দেখতে পায় না। চুল আঁচড়ে চলে যায় হল রুমে।
যামিনী বলেছিলো ছোট খাটো আয়োজন কিন্তু হল রুমে গিয়ে দেখে এলাহীকান্ড। মাথা এদিক সেদিক ঘুরিয়ে রাইদা সকলকে খোঁজার চেষ্টা করে। রুবেল হাত নেড়ে রাইদাকে নিজেদের দিকে ডাকে। রাইদা ওদের দিকে এগুতে থাকে। চেয়ারে বসে আছে শ্রেয়া,যামিনী, আরাফ,রুবেল।সেখানেই আরেকটা চেয়ার টেনে বসে রাইদা।আশে পাশে সায়নকে না দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে।
পাশেই কিছু কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়ে ডেয়ার খেলতে বসেছে।
‘আমি খেলবো আমাকে নাও তোমাদের সাথে।’,রুবেল উঠে গিয়ে ছেলে মেয়েগুলোকে বলে।
‘আমাদের গেম কিন্তু ভিন্ন এখানে বোতল ঘুরে যার সামনে পরবে সে অনলি ডেয়ার করবে। আর আমরা জোড়ায় খেলছি আপনাকে নিলে বেজোড় হয়ে যাবে।আপনি একজন মেয়ে আনুন তাহলে খেলায় নিবো।’,সকলের মধ্যে হতে একজন ছেলে বলে উঠে।
‘রাইকে নে।’,হুট করে শ্রেয়া বলে রুবেলকে।
‘রাই তুমি খেলতে পারো?’,রুবেল জিজ্ঞেস করে।
‘কি রাই পারো না? আমার ধারণা তুমি পারো।’,শ্রেয়া ব্যাঙ্গ করে বলে রাইদাকে।
শ্রেয়ার কথায় রাইদা বিরক্ত হয় কিন্তু তারপরও ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলে না।
‘এই না তোমার খেলতে হবে না এসব।’,যামিনী রাইদাকে খেলতে বারণ করে।
‘আমি খেলবো না আপনারা খেলুন।’,রাইদা জবাব দেয়।
‘ভয় পেলে রাই?’,শ্রেয়া হাসতে হাসতে বলে।
শ্রেয়ার কথাটা রাইদার গায়ে লাগে সে উঠে গিয়ে বসে ডেয়ার খেলতে।
বোতল ঘুরিয়ে খেলা শুরু হয়। একে একে সকলকে ডেয়ার দেওয়া হয় কেউ ঠিক ঠিক সেটা পূরণ করে কেউ বা পারে না। রুবেলের সামনে বোতল পরতেই তার বিপরীতে থাকা মেয়েটা হেঁসে রুবেলকে কাঁচা মরিচ খাওয়ার ডেয়ার দেয়। ঝাল কাঁচা মরিচ খেয়ে বেচারা রুবেলের অবস্থা কাহিল হয়ে যায়।যামিনী সেগুলো ফোনে ভিডিও করে রাখে।
খেলা শুরু হলে এবার রাইদার সামনে বোতল পরে।
‘আপু আপনি কি নাচতে জানেন?’,রাইদার বিপরীতে বসা ছেলেটা জিজ্ঞেস করে।
‘এটা তো অনলি ডেয়ার তাই আমাকে কোনো প্রশ্ন করতে পারবা না।সোজা ডেয়ার দিবা নো প্রশ্ন।’,রাইদা জবাব দেয়।
রাইদার কাছ থেকে এমন উত্তর কেউ প্রত্যাশা করেনি। ছেলেটা অপমানিত বোধ করে সে রাইদাকে এখন জব্দ করতে চায়।
‘ঐ যে স্টেজটা যেখানে গান বাজনা হচ্ছে ওখানে গিয়ে আপনাকে ডান্স করতে হবে তবে আমার সিলেক্ট করা গানে।আর যদি না পারেন শাস্তি আমরা যা দিবো মানতে হবে।’,ছেলেটা জবাব দেয়।
‘কি রাই পারবে না? না পারলে বলে দাও শুধু শুধু নিজের বেইজ্জতি করার প্রয়োজন নেই।’,শ্রেয়া রাইদাকে ফোঁড়ন দিয়ে বলে।
রাইদা স্টেজের দিকে তাকিয়ে বলে,’ওকে চলো।’
সায়ন রুম থেকে বেরিয়ে হল রুমে আসে।যামিনী তাকে এখানে আসার জন্য আরো আগেই বলেছে কিন্তু সায়ন আসবে না বলে জানিয়েছিলো। এখন কি জানি ভেবে বের হলো।
হল রুমের দরজায় গিয়ে সিগারেট বের করে ধরানোর জন্য কিন্তু পকেট হাতিয়ে দিয়াশলাই না পেয়ে চরম বিরক্ত হয়। সিগারেট হাতে হল রুমে প্রবেশ করে কারো থেকে দিয়াশলাই নিয়ে সিগারেট ধরানোর আশায়।হল রুমে ঢুকে স্টেজে তার নজর যায়।
সাউন্ড বক্সে ছেলেটা বিলিভার গানটা ছেড়েছে।স্টেজে দাঁড়িয়ে রাইদা শার্টের হাতা গুটিয়ে নিতে থাকে।
‘আপু গান চলছে তো আপনি দাঁড়িয়ে কেনো?হার মেনে নিন এটাই আপনার জন্য ভালো।’,ছেলেটা চেঁচিয়ে বলে।
চশমাটা খুলে সেটা এক ওয়েটারের হাতে ধরিয়ে দেয় রাইদা।আঙুল দিয়ে ইশারা করে ছেলেটাকে আবারো গান বাজাতে বলে শুরু থেকে।ছেলেটাও তাই করে।
লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে রাইদা পারফর্ম করতে শুরু করে। পুরো হল রুমের মানুষ রাইদার পারফরম্যান্স দেখে হাত তালি দিয়ে উৎসাহ দিতে থাকে।
আরাফ গালে হাত দিয়ে রাইদার নাচ দেখছে আর বিরবির করছে,’তোমার আর যে কত রুপ দেখা রাই!সেদিন রবীন্দ্র সংগীতে নৃত্য আর আজকে ইংরেজি গানে হিপহপ।’
‘রাই তো পুরাই প্রফেশনাল ডান্সারদের মতো পারফর্ম করতেছে।’,রুবেল অবাক হয়ে বলে।
শ্রেয়া অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাসই হচ্ছে না।
‘আরে এটা তো ফ্রেন্ডস ব্যান্ডের রাই আপু।’,সায়নের পাশে দাঁড়ানো একটা ছেলে রাইদাকে দেখে চিল্লিয়া বলে।ফোন বের করে ছেলেটা রাইদার নাচের ভিডিও করতে থাকে।
‘ভাইয়া কি বলছো? একটু এদিকে এসে বলো।’,রুবেল ছেলেটাকে ডেকে বলে।
‘রাই আপুকে আপনারা চিনেন না?’,ছেলেটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে সকলকে।
‘কেনো ও কি সেলিব্রিটি নাকি?’,শ্রেয়া বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘নিজেই দেখে নিন।আপনাদের ফোনটা দিন দেখাচ্ছি।,রুবেল নিজের ফোন দিলে ফোনে একটা ফেসবুক পেজ বের করে শ্রেয়ার হাতে দেয় ছেলেটা।
‘রাই আপু আর তার বন্ধুদের ব্যান্ডের নাম ফ্রেন্ডস। তাদের মধ্যে রাই আপু সবথেকে পরিচিত মুখ।এই পেজে রাই আপু আর তার বন্ধুরা বিভিন্ন রকম নাচের ভিডিও শেয়ার করে আবার রাই আপুর আলাদা পেজ আছে সেখানে ট্রাভেলিং ভিডিও শেয়ার করে।’,ছেলেটা অনর্গল বলতে থাকে।
রুবেল শ্রেয়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে দেখে পেজের নাম ফ্রেন্ডস।পেজের কভারে ছয়জন ছেলে মেয়ের হাসিমুখের ছবি দেওয়া।ছবিটা জুম করে দেখে মাঝে হাসি মুখে রাই দাঁড়ানো তার দুই পাশে বাপ্পি আর অর্ক দাঁড়িয়ে রাইয়ের গাল টানছে। রাইয়ের পিছনে ফাহিম দাঁড়ানো আর ফাহিমের দুই কাঁধে পায়েল আর রুহি হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রত্যেকের ছবির পাশে ছোট করে তাদের নাম লিখে দেওয়া।
‘ছবিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাইয়ের বন্ধু মহলের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক।’,রুবেল যামিনীর হাতে ফোন দিয়ে বলে।
‘আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না রাই এতো ট্যালেন্টেড একটা মেয়ে।’,যামিনী পেজের ভিডিও গুলো দেখতে দেখতে বলে।
‘রাই আপু তার বন্ধুদের নিয়ে গতবছর আমাদের বিএম কলেজের এক প্রোগ্রামে এসেছিলো লাইভ পারফর্ম করতে,সেখান থেকেই আমি রাই আপুকে চিনি।’,ছেলেটা কথাগুলো বলে ভিডিও করায় ব্যস্ত হয়ে যায়।
সায়ন নিজের হাত থাকা সিগারেটটার দিকে তাকিয়ে হল ত্যাগ করে। আরাফ এতক্ষণ সব কথা মন দিয়ে শুনছিলো। উঠানে সেদিন রাইদাকে নাচের ভিডিও করতে দেখে সে আচঁ করেছিলো কিছুটা তবে এতো কিছু ভাবেনি।
রাইদার পারফরম্যান্স শেষ হলে সকলে করতালি দিয়ে রাইদার প্রশংসা করতে থাকে। হাসিমুখে স্টেজ থেকে নেমে ওয়েটারের কাছ থেকে নিজের চশমা নিয়ে যামিনীদের দিকে এগুতে থাকে, পথি মধ্যে যেই ছেলেটা ভিডিও করছিলো সে এসে রাইদার সাথে ছবি তুলে। ছেলেটার দেখা দেখি আরো কিছু ছেলে মেয়ে এসে ছবি তুলে।রাইদা হাসিমুখে সকলের সাথে ছবি তুলে।
আরাফের ফোন বেজে উঠলে আরাফ হল রুম থেকে বের হয় ফোনে কথা বলতে।
‘রাই ফাটিয়ে দিয়েছো।তবে নিজের সম্পর্কে তথ্য লুকিয়ে তুমি কিন্তু কাজটা ঠিক করোনি।’,রুবেল রাইদাকে বলে।
প্রতি উত্তরে রাইদা হেঁসে দেয়।
‘তোমার যে ব্যান্ড আছে সেটাও আমাদের বলোনি রাই।’,যামিনী মুখ কালো করে বলে।
‘ছোট একটা ব্যান্ড এটা নিয়ে বলার কি বা আছে।’,রাইদা হেঁসে বলে।
‘সাড়ে চার লক্ষ ফলোয়ার তোমাদের পেজে আর তুমি বলছো ছোট ব্যান্ড!’,রুবেল রাইদাকে বলে।
‘ছোটই তো।আচ্ছা আমার টায়ার্ড লাগছে কালকে গল্প করবনি এখন ঘুমাতে যাই।’,রাই ঘাড়ে হাত মালিশ করে বলে।
‘রাতের খাবার খেয়ে যাও।’,যামিনী রাইদাকে বলে।
‘না আপু খারাপ লাগছে অনেক।’,রাইদা নাকচ করে দেয়।
‘আচ্ছা তুমি যাও ওয়েটারকে দিয়ে আমরা খাবার পাঠিয়ে দিবো সমস্যা নেই।’,রুবেল রাইদাকে যেতে বলে।
রাইদা আশে পাশে তাকিয়ে আরাফকে না দেখতে পেয়ে হল রুম থেকে বের হয়।
তৃতীয় তলায় উঠে রাইদা নিজের রুমের দিকে যেতে থাকে তখনই দেখে সায়ন একটা রুমের লক খুলে ভিতরে চলে যায়। রাইদা অবাক হয় সায়নকে এই রুমে দেখে কারণ পাশের রুমেই সে থাকে।রাইদার মাথায় অনেকগুলো প্রশ্ন এসে জমা হয়।সে নিচে নেমে কাউন্টারে গিয়ে ম্যানেজারকে জেরা করে তথ্য আদায় করে।
উপরে এসে সায়নের রুমের দরজায় নক করে রাইদা।কয়েকবার নক করার পরও সায়ন দরজা খুলে না। রাইদা এক নাগাড়ে দরজায় নক করতেই থাকে।মিনিট পাঁচেক পর সায়ন দরজা খুলে।রাইদা কিছু বলার আগেই তার নাক মুখে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ে সায়ন।
কাশতে কাশতে রাইদা সায়নকে ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকে।সায়ন নিজেও ভ্যাবাচ্যাকা খায়।সে রুমে শুয়ে সিগারেট টানছিলো এমন সময় দরজায় কেউ নক করায় বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতে চায় না কিন্তু অনবরত দরজায় শব্দ হলে তাকে অসময়ে বিরক্ত করা মানুষটাকে শিক্ষা দিতে দরজা খুলেই তার মুখে সিগারেটের ধোঁয়া সব ছাড়ে। কিন্তু সে তো জানতো না দরজায় রাইদা।
রাইদা রুমে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে ছোট টি টেবিলের উপর রাখা বোতলটা খুলে পানি খেতে শুরু করে।
ততক্ষণে দরজা লক করে সায়ন এসে রাইদার পিছনে দাঁড়ায়।
পানি খাওয়া শেষ হলে সায়নের হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে ট্রে তে ফেলে নিভিয়ে দেয়।
‘আপনার কি জ্ঞান হবে না? কেউ কারো মুখে ধোঁয়া ছাড়ে?নিজে তো মরবের এই সিগারেট খেয়ে আবার আশেপাশের মানুষদেরও মারতে চাইছেন।’, সায়নের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে রাইদা।
‘এই রাত বারোটায় তুমি যে আমার রুমে আসবা আমি কি করে জানবো বলো?’,সায়ন প্যান্টের পকেটে দুই হাত ভরে বলে।
‘আমারো কোনো শখ নেই আপনার রুমে আসার। এসেছি উত্তর চাইতে।’
‘কিসের উত্তর?আর তুমি ভাবলে কি করে তুমি প্রশ্ন করবে আর আমি তার উত্তর দিবো?’
‘আমার বলা কথা আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছেন? ‘
‘আরো অনেক কিছু আছে ফিরিয়ে দিতে চাই, নিবা?’,রাইদার দিকে মাথা ঝুঁকে জিজ্ঞেস করে আরাফ।
‘ফালতু কথা রাখেন আগে বলেন আপনার রুম আমার রুমের পাশে কেনো?আপনার রুম তো বাকিদের সাথে দ্বিতীয় তলায় হওয়ার কথা না? ‘
‘এত কিছু জেনে তোমার কি লাভ?’
‘ম্যানেজারকে আমি হু*ম*কি দিয়ে সব জেনেছি।আপনি এক্সট্রা পে করে আমার রুমটার গেস্টদের বুকিং ক্যান্সেল করে সেটা নিয়েছেন আর দ্বিতীয় তলার রুমটা না নিয়ে আমার পাশের রুমটা নিজে নিয়েছেন।’
‘তো?তাতে তোমার কি? আমার ইচ্ছে আমি যে কোনো রুম নিতেই পারি।তোমার যদি সমস্যা হয় তুমি তোমার রুম ছেড়ে অন্য কোথাও উঠতে পারো।আচ্ছা তুমি কি ভাবছো তোমাকে দেখার জন্য আমি এই রুম নিয়েছি?’
সায়নের কথা শুনে রাইদার চোখ বড় করে ফেলে।
‘আমি কখন বললাম আমাকে দেখতে এই রুম নিয়েছেন?আপনি এক্সট্রা পে করে আরেকজনের বুকিং ক্যান্সেল করেছেন এটা আমার সমস্যা। আর শুনুন অন্যের টাকায় রাই চলে না তাই আপনাকে আমার রুমের ভাড়া দিয়ে দিবো সেটা বলতেই এসেছি।’
‘দাও তাহলে।’,রাইদার দিকে ডান হাত বাড়িয়ে বলে সায়ন।
‘ব্যাগ রুমে আমি এক্ষুনি আনছি।’,রাইদা দরজার দিকে যেতে থাকে।
‘টাকা তো আমি ফেরত নিবো রাই।’
সায়নের কথা শুনে রাইদার পা থেমে যায়।
‘মানে?আপনি যত টাকা পে করেছেন সেটা আপনি না চাইলেও আমি ফেরত দিবো।’
‘টাকার বদলে অন্য কিছু নিবো কিন্তু টাকা নিবো না।’,ভরাট গলায় বলে সায়ন।
‘টাকার বদলে এখন কি স্বর্ন মুদ্রা চাইছেন নাকি?’
‘সেবা নিবো।’,রাইদার দিকে এগিয়ে বলে সায়ন।
‘মানে?’
‘মানে সিম্পল তুমি রুমের ভাড়া ফেরত দিতে চাইছো কিন্তু আমি ভাড়া নিতে রাজি তবে টাকার বদলে সেবা নিবো তোমার।এই যে আমি শুবো তুমি আমার মাথা টিপে দিবা সাথে হাত টিপে দিবা।’,কথাগুলো বলে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে বলে সায়ন।
‘ইম্পসিবল এসব আমি পারবো না।আপনার টাকা ফেরত দিচ্ছি এক্ষুনি। ‘
‘যা পে করেছি তার তিনগুন দিলে আমি ফেরত নিবো।তিনগুনে হয় পঞ্চাশ হাজার টাকা।যদি এখন টাকা ফেরত দিতে চাও তাহলে পঞ্চাশ হাজার ফেরত দাও।’
‘পঞ্চাশ হাজার!’,রাইদা বিস্ময়ে বলে।
…
(চলবে…)
(আমি কখনো কুয়াকাটা যাইনি তাই যদি কোনো ভুল তথ্য দিয়ে থাকি তাহলে আমি দুঃখিত। ধৈর্য্য ধরে সকলকে পুরো গল্প পড়ার অনুরোধ রইলো।গল্পের মূল চরিত্র কারা এসব ধীরে ধীরে জানতে পারবেন। কমেন্টে অবশ্যই আজকের পর্ব নিয়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো।)