লেডিস ওয়াশরুম থেকে নিজের জামা থেকে পানি ঝাড়তে ঝাড়তে মাত্রই বেরিয়ে এলো আফিয়া। তার অন্যদিকে খেয়াল নেই সে তার নিজের জামা নিয়ে ব্যস্ত হঠাৎই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নিলে, কেউ তাকে নিজের সাথে পেচিয়ে ধরে ফেলে। আফিয়া চোখমুখ খিচে বন্ধ করে আছে ভেবেছিল এই বুঝি কমড়টা গেলো তার। তারপর চোখ মেলে তাকিয়ে যাকে দেখে সে তাকে দেখেতো আফিয়া অবাক হয়ে যায় আর বলে
—–আপনি? আপনি এখানে,আর আমাকে ধরার সাহস কে দিল আপনাকে? ছাড়ুন,ছাড়ুন বলছি আমাকে, এরিশ ভ্রুকুচকে
—-ওকে বলেই ছেড়ে দেয়। আর আফিয়া নিচে পরে যায় কমড়ে বসে ব্যথাও পায়। সে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এরিশের দিকে। বান্ধবীর বার্থডে পার্টি করছিল আফিয়ারা তখনই তার ড্রেসে কেক লেগে যায় আর সেটা পরিষ্কার করতেই তার এখানে আসা। কিন্তু তার মনযোগ ছিল নিজের জামায় তখনই এরিশ পাশের রুম থেকে ক্লাইন্টদের সাথে ডিল ফাইনাল আর দুপুরে লান্ঞ্চ করে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল। আর সেই সময়ই আফিয়ার সাথে ধাক্কা লাগে তার। আজ সকালেই তাদের দেখায় হয়।
সকালে গাড়ি করে অফিসে যাচ্ছিল এরিশ রাস্তায় জেমের কারণে আটকা পড়ে যায় সে। চারদিকে গাড়ির আওয়াজ আর তার ওপর গরমের তান্ডব বিরক্ত লাগছে তার কাছে, তাই গাড়ির গ্লাসটা বন্ধ করে দেয় এরিশ। আর তখন সে সই লেভেল এর জেমের উপর খেপা ছিল। অফিসটা নিজেদের হোলেও টাইম জিনিসটার প্রচুর খেয়াল রাখে সে।সময়ের কাজ সময় মতো না করতে পারলে তার মেজাজ বিগরে যায়। আর এখন বাজে ১০ঃ২০ আর অফিস শুরুহয় ১০ঃ৩০ মিনিটে। মানে ১০ মিনিটে কিভাবে কি করবে, তখনই তার গাড়িরর জানালায় কেউ নক করে, এরিশ তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে, সে গ্লাসটা ওপনে করে দিয়ে বলে
—–কি চাই? মেয়েটা নিচু হয়ে এরিশের দিকে কিছু ব্লু ভায়োলেট এর কমন ফুল আর সাথে গোলাপ ফুল এগিয়ে দিয়ে বলে।
—-ফুল গুলো নিবেন মি.? এরিশতো তাকিয়ে আছে সেই মেয়েটির দিখে, পরনে তার হলকা বেগুনি রঙের জামা, লম্বা চুলগুলো খোলা, গায়ের রং ধবধবে ফর্সা, আর ঠোঁট গুলো ঠিক চেরির মতো লাল। এরিশ যেন নিজের মধ্যে নেই কিছু সময় আগে যে রেগেছিল সেটা নিমেষেই শেষ। মেয়টি সেই কখন থেকে বলে চলেছে কিন্তু এরিশের কোনো তাল নেই শেষে সে বিরক্ত হয়ে চলে যেতে নিলে, এরিশের হুশ আসে সে মেয়েটিকে ডাক দেয়, মেয়েটি তার সামনে দাড়িয়ে বলে
—দেখুন আমি কোনো বিশ্ব সুন্দরী প্রিয়াংঙ্কা চোপরা বা ঐশ্যরিয়া রায় নোই, আমার দিকে না তাকিয়ে থেকে এটা বলেন ফুল কিনবেন কিনা? এরিশ মেয়েটার কথা শুনে রেগে যায় রাগটা আগে থেকেই মাথায় চড়ে ছিল ব্লু ভায়োলেট টা নিয়ে বলে।
—আমি এটাই নিব, আর আপনি ঠিকই ধরেছেন আপনাকে আপনি বিশ্ব সুন্দরী না আপনাকে জোকারের মতোই লাগছে তাই দেখছিলাম।তা দেখেতো ভদ্র ঘরের ময়ে মনে হচ্ছে তা ফুল হাতে কেনো? আর পকেট থেকে বের করে দেয় ১০০টাকার একটা নোট। আফিয়া ভ্রুকুচকে সেটা নিয়ে রেগে বললো
—- এনাকন্ডার তাল গাছ , আমার যা ইচ্ছা করব আপনার কী? আর একটা ভেংচি কেটে বাকি গোলাপগুলিও এরিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে রডের অন্যপাশে চলে যায় আর এরিশ শুধু দেখছে মেয়েটার কর্মকান্ড, পিচ্ছে মেয়ে তাকে ঝাড়ি মেরে গেলো ভাবা যায়। সে দেখে একটা বাচ্চাকে সে এরিশের দেয়া টাকা আর নিজের বেগে থেকে একটা পাঁচশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে একটা চুমু দিয়ে দৌড়ে জেমের মধ্যে হারিয়ে গেলো আর তখনই জেম ছুটে যায়, তাই আর এরিশ বাধ্য হয়ে নিজের অফিসের দিকে এগিয়ে যেতে লাগে, আর সেই মেয়েটার কথা ভাবতে লাগে।
—দেখতে মাশাআল্লাহ কিন্তু ব্যবহার আসতাগফিরুল্লাহ্। তাকে অপমান করলো এরিশ চৌধুরীকে।।। How dare she talk to me like that
অপরদিকে পিংকি তাড়াদিয়ে আফিয়াকে বলে
—এই তাড়াতাড়ি আয়,জলদি করে বস, ভার্সিটির জন্য লেট হচ্ছে। মেয়েটা দৌড়ে এসে স্কুটিতে বসে বলে
—-সরিরে পিংকি, কিন্তু বাচ্চাটার ফুল বিক্রি হচ্ছিলো না তাই বিক্রি করে দিলাম জেমে বসে বসে, খারাপ লাগছিল বাচ্চাটা কে দেখে। কিন্তু । পিংকি আফিয়ার কথা শুনে বলে
—এটা আর নতুন কি? তুই তো প্রায়ই করিস, দয়ালু নে এখন জলদি বস নয়তো সুকুমার স্যারের বোকা খেতে হবে লেট হলে।কিন্তু কি? আফিয়া বলে
—-প্যারা নাই দোস্ত চিল। চল যাওয়া যাক নয়তো বকা খেতে হবে।
চলুন পরিচয় জেনে নেওয়া যাক।
~~~♥এরিশ চৌধুরীর, এহসান চৌধুরীর ছোট ছেলে আর আদ্র হলো এরিশের বড় ভাই সে থাকে আমেরিকাতে।৷ সেখানেও তাদের কোম্পানি আছে সে সেটার দেখা শুনা করে। আর এরিশ বাংলাদেশ তার বাবা এহসান চৌধুরী হলো নামকরা ব্যবসায়ী। এরিশ তার মা বাবা আর বোন নিয়ে বাংলাদেশ থেকে। আদ্রের সাথে কথা হয় কিন্তু শুধু এরিশের সাথে তার বাবা মোটেও চায়নি আদ্র আমেরিকায় থাকুক সে চাই তো তার পরিবার একসাথে থাকবে কিন্তু আদ্রের বউ মিথিলা বাংলাদেশে থাকতে নারাজ। আর আদ্রও নিজের বউয়ের আবদার রাখতে গিয়ে নিজের ফ্যামিলির মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলে নিজের অজান্তেই। এহসান চৌধুরী সাফ সাফ বলে দিয়েছে আমেরিকার কোম্পানি আদ্রের কিন্তু দেশেরটা এরিশের আর এটা নিয়ে আদ্র কোনোদিন কিছু বলতে পারবে না, মিথিলা এই নিয়ে হ্যাপি না তাও সে কোনো মতে নিজের মনকে বুঝিয়ে নিয়েছে। আর মেয়ের দৃষ্টির জন্য তার সেভিংসই যথেষ্ট। হ্যা দৃষ্টি এরিশেরই বোন, আর আফিয়া জানে দৃষ্টির বাবা একজন বিজনেসম্যান আর তার ভাইয়ারাও এর বেশি না। এত বড় ফ্যামেলির মেয়া হওয়ার পর দুইজনের চালচলন খুবই নরমাল। মনে নেই কোনোরকম অহংকারে বিজ।
আফিয়া আফরাঃ- দেখতে মাশাআল্লাহ পুতুলের মতো। মানবিক বিভাগের আনর্স ২য় বর্ষের ছাত্রী। আফিয়ার বাবা জনাব আব্দুলল্লাহ্ আহমেদ আজিম পেশায় একজন সৎ জার্নালিস্ট। আর মা গৃহিণী একটা বড় ভাই আছে সে বিজনেস করে এরিশের পরই তার কোম্পানি নাম অধির আহমেদ । আফিয়া অনেক চন্ঞ্চল আর হাসিখুশি। সহজেই মানিয়ে নিতে পারে সব কিছুতে। তার স্বপ্ন নিজের পায়ে দাঁড়ানো, নিজের কিছুর করার। অসহায় লোকেদের সাহায্য করার। বাবার মেয়ে বাবার মতোই। গল্পে ফিরা যাক
—-এরিশের অফিসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ১১টা বেজে যায় সে গিয়ে দেখে সবাই চলে আসছে। সে রেগে গিয়ে তার পিএ আকাশকে বলে কবিনে আসার জন্য। সেও যায় দেখে আজ দুইটা মিটিং আছে। একটা দুপুরে তাই তারা ঠিক করে দুপুরে লান্ঞ্চ তারা রেস্টুরেন্টে করবে আর সেখানেই ডিলটা ফাইনাল করবে।।।
অপর দিকে ঠিক টাইম মতো আফিয়া আর পিংকি পৌঁছে গেলো ভার্সিটিতে আর দৌড়ে উঠতে লাগলো ২য় তালায়। যেয়ে দেখে স্যার এখনো আসেনি তাই তারা চুপ করে গিয়ে বসে পরলো তাদের অন্য বন্ধুদের সাথে । আফিয়াদের বন্ধুদের গ্রুপটা বেশ ভালো, পিংকি,আফিয়া, সুনালী আর দৃষ্টি। চারজন কলিজার বন্ধু, আজ দৃষ্টির জন্ম দিন ,তাই আফিয়া নিজের বেগে থেকে খাতা বের করে একটা পেজ ছিড়ে দৃষ্টির দিকে এগিয়ে দেয় আর বলে
—–শুভ পয়দা দিবস। এই নে তোর গিফ্ট আর ট্রিটদে। দৃষ্টি কাগজটা হাতে নিয়ে কিছু সময় দেখলো তারপর আফিয়ার দিকে তাকিয়ে মিকি হাসি দিয়ে কলম নিয়ে কিছু আঁকিবুঁকি করে বলে
—– এই নে তোর ট্রিট। আফিয়া মুখটা বাকিয়ে কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে খাবারের ছবি আকাঁ। আফিয়া বলে
—-তুই ট্রিটদিবি আজকে, মনে যেনো থাকে।
সুনালী আর পিংকিও তাল মিলায়। ওরা আগে থেকেই একটা সারপ্রাইজ পার্টির প্লান করে রেখেছে। ভার্সিটি থেকে তারা ২টা নাগাত বেড়িয়ে গেলো, তারপর আফিয়া সহ সবাই রেস্টুরেন্টএ প্রবেশ করলো আর তার কিছু সময় পর আফিয়ার দৃষ্টির জন্য ওডার দেওয়া কেকটা চলে এলো সাথে অন্যান খাবার। আর আফিয়া সহ সবাই জোরে জোরে গাইতে লাগলো হ্যাপি পয়দা দিবস টু ইউ….. তখনই ওয়েটার বলে।
—-ম্যাম একটু আস্তে সেলেব্রেইট করেন, পাশের পাইভেট রুমে বিজনেস মিটিং চলছে। আফিয়া একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে দৃষ্টিকে বলে
—-এই কুদৃষ্টি কেক কেটে আমাকে ধনী ওফ্ফ সরি ধন্য করুন। দৃষ্টি রাগী চোখে আফিয়ার দিকে তাকিয়ে কেক কাটলো তারপর সবাইকে খায়িয়ে দিলো। তখনই আফিয়া এক পিস কেক নিয়ে দৃষ্টির গালে লাগিয়ে দেয় আর দৃষ্টি কেক লাগাতে গিয়ে আফিয়া জামায় ফেলে দেয়, আর সেটা পরিষ্কার করার জন্যই আফিয়া পা বাড়ায় ওয়াশরুমের দিকে। আর তারপর সে লেডিস ওয়াশরুমে গিয়ে জামা পরিষ্কার করে বের হয়। পরের কাহিনি আপনারা জানেন। এরিশ নিচে বসে আফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে
—-তোমার মতো থার্ড ক্লাস মাইন্ডের মেয়েদের ধরতেও চায়না এই এরিশ চৌধুরী। আফিয়া বলে
—আপনি এরিশ হন না ফ্রান্সের প্যারিস কাজটা আপনি ঠিক করলেন না, সময় মতো এর বদলা আমি আফিয়া নিয়ে ছাড়বো। বায় ফাউল এটিটিউড এর দোকান। বলে ওঠে চলে যায় আর এরিশ রাগী চোখে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার পানে
আর মনে মনে বললো
—I will see you mis afiya। কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছো তুমি বুঝতে পারবে।যদি নেক্সট টাইম তোমাকে বাগে পাই,এই আমি এরিশ বুঝিয়ে দিব আমার সাথে মিস বিহেভিয়ার করার পরিনাম। অপর দিকে আফিয়া রেগে বম হয়ে আছে কি মনে করে নিজেকে সে? অভদ্রের আনলিমিটেড কিংডম। মনতো চাচ্ছে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কেটে কিমা বানিয়ে তারপর নুন ঝালদিয়ে ডাম্পলিং করে চায়নাতে সাপ্লাই করে দিতে। এই খাদ্য নামক অখাদ্যটাকে তারাও ঠিক ভাবে গিলতে পারবে না , কিন্তু কাটতে গেলেও হয়তো বলবে আমাকে এই থার্ড ক্লাস কুড়াল দিয়ে কাটবেনা যত্তসব । সে জানে আমি থার্ড ক্লাস মাইন্ডের মেয়ে? নিজে কি এনা কন্ডার তাল গাছ, লম্বা খাম্বা একটা, যত্তসব। আফিয়া বকবক করছে আর …..
চলবে
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে। আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছো। গল্পটা কেমন হলো জানাতে ভুলোনা তোমাদের গল্পের প্রতি আগ্রহ দেখেই নেক্সট পর্ব দিবো❤️❤️ কালে থেকে গল্প দেওয়ার কথা আজকেই দিয়ে দিলাম।হাতখুরখুর করছিল শুধু 😑
গল্পের নামঃ- #স্নিগ্ধ_ছোঁয়া🌼🌼
Writer:-।। আইদা ইসলাম কনিকা।।
#Blue_violet💜পর্বঃ০১