#হবে-কি-আমার(২)
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_20
বাহিরে ফুরফুরে হাওয়া বইছে,ব্যালকনির থাই গ্লাস খোলা যার ফলে মৃদু বাতাস রুমে প্রবেশ করছে, রুমের মধ্যে ও সিলিং ফ্যান ছুটে চলেছে। প্রকৃতিতে শীত শীত ভাব তার মধ্যেই বেঘোরে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে অনু। দিন দুনিয়ার খবর নেই তার সে আপন ঘুমে রাজ্যের একমাত্র ঘুমরানী। প্রায় তিন ঘন্টা এভাবেই বিভোরে ঘুমে আচ্ছন্ন সে। গ্রাম থেকে ফিরে এসেছে তারা আজ দুপুরেই, অনু গাড়িতেই অরিন্দমের বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে প্রশান্তির ঘুম দিয়েছিল, মৃন্ময় তনুশ্রী তাদের ড্রপ করে দিয়ে গিয়েছে বাড়ির সামনে,তখন ও অনু ঘুমিয়ে ছিল, অরিন্দম তাকে ডেকে সাড়া পাইনি, তনুশ্রী বোনের ঘুমের ব্যাপারে অবগত আছে, কিন্তু তখন অরিন্দমের সামনে ইতস্তত বোধ করছিল, তবুও সে নম্র গলায় বলেছিল যে তার বোন একবার ঘুমিয়েছে তো দুতিন ঘন্টা না হলে উঠবে না। তাকে যেন বকাঝকা না করে আস্তে আস্তে সব শিখে যাবে সে। অরিন্দম এ বিষয়ে আগে থেকেই জানত তাই সে তাকে নিশ্চিন্ত থাকতে বলেছে, এবং বলেছে তার বোনকে সে বিন্দুমাত্র ও কষ্ট দেবে না। না কখনো তাকে অকারনে বকাঝকা করবে। অতঃপর অরিন্দম অনুকে পাঁজা কোলে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে তাদের বিদায় জানিয়ে রুমে এসেছে,এর মধ্যে অনু জাস্ট একবার পিটপিট করে তাকিয়ে ফ্যান অন করে কম্বল মুড়ি দিয়ে আবার ঘুমাচ্ছে, অরিন্দম বুঝে পায় না মেয়েটার এত ঘুম আসে কোথা থেকে, এতবার করে তাকে ডেকে চলেছে কিন্তু ওঠা কোন নাম নেই মেয়েটার, এদিকে ঘড়িতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে পড়েছে, অরিন্দম বেশ বিরক্ত বোধ করলো। সে খাটে বসে অনু কে টেনে তুললো। অনু উঠলো কিন্তু সে অরিন্দমের বুকে মাথা রেখে চোখ পুনরায় বুঝিয়ে নিল। অরিন্দমের বিরক্তি বোধ হঠাৎ করে উড়ে গিয়ে এক ঝাঁক ভালো লাগা জেকে ধরলো মনে,সে এক হাতে অনুকে জড়িয়ে অপর হাতে তার মুখমন্ডলে হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলল,
__’ এত ঘুম কই পাও! সেই থেকে ডেকে যাচ্ছি,উঠছো না কেন? অনেকক্ষণ কিছু খাওনি, এবার উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও তো।’
অনু মুখ গুজে ঘুম জোড়ালো কণ্ঠে বলল,
__’আর একটু..’
অরিন্দম শুনলো না তাকে নিয়ে ওয়াশরুমে গেল,অনু সেই দিনের কথা মনে পড়তেই চটজলদি চোখ খুলে বলল,
__’আজকেও প্লিজ শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দেবেন না আমি আর ঘুমাবো না।’
অরিন্দম হেসে ফেললো, সেই দিন অনুর ফেশ রিয়্যাকশন দেখার মত ছিল,মেয়েটাকে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দিতে সে যখন ভিজে গিয়েছিল সে চিৎকারে সাথে সাথে ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল, অরিন্দম প্রথমে চমকে গিয়ে অনুকে সামলাতে গিয়েও থেমে যায়.. সেই দিন কেমন যেন মেয়েটার কান্না তার ভালো লাগছিল। যেন মনে হচ্ছিল দু’চারটে চড় বসিয়ে দিই গালে আর বসে বসে সারা দিন তার কান্না দেখুক সে, কিন্তু সেটা কখনো পূরণ হবে না কারণ সে মেয়েটার গায়ে হাত তোলা তো দূর তার সামান্য ফুলের ঠোকা ও লাগতে দেবে না।
অরিন্দম অনুকে দাঁড় করিয়ে বেসিনের কল খুলে হাতে জল নিল অতঃপর সে ভিজে হাত অনুর চোখে মুখে বুলিয়ে দিতে লাগলো অনু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল অরিন্দমের মুখপানে। সে যে এতটা ভালোবাসা এতটা কেয়ার পাবে তা ভাবতেই পারেনি কখনো। প্রথম প্রথম তো অরিন্দম তাকে পছন্দ করত না তাকে বারংবার ফিরিয়ে দিত, কিন্তু যখন থেকে অরিন্দম তার কাছে আসতে শুরু করেছে অনু একটু একটু করে প্রতিদিন তাকে নতুন ভাবে চিনছে, নতুন করে জানছে, তাকে আবিস্কার করছে এক সুপুরুষ রুপে। অরিন্দম মুখহাত নিজেও ধুয়ে অনুর হাত ধরে ওয়াশরুম থেকে বাহিরে যেতে যেতে বলল,
___’ নীচে চলো সকাল থেকে আমিও কিছু খাইনি, খুব খিদে পেয়েছে।’
অনু অবাক হলো সে ঘুমিয়ে ছিল সেজন্য তার খাওয়া হয়নি কিন্তু অরিন্দম ও না খেয়ে আছে কেন? অনু জিজ্ঞাসা করল,
__’আপনি সকাল থেকে খাননি কেন? রান্নার মাসি আসেনি?’
__’ এসেছিলেন ইভেন রান্না করে সব টেবিলে সাজিয়ে দিয়েও গিয়েছেন! কিন্তু তুমি ঘুমিয়ে আছো, না খেয়ে, আমি কি করে খেয়ে নিই বলো তোমাকে ছাড়া!’
অনুর হঠাৎ করেই চোখ ফেটে কান্না এল হঠাৎ মনে হল তার এত সুখ সইবে তো? এত সুখী কাউকে হতে হয় বুঝি? তার স্বামী এত ভালো কেন?
অরিন্দম চেয়ার টেনে অনুকে বসাল অতঃপর সে পাশের চেয়ার টেনে বসতে যাবে অনু কেঁদে ওঠে অরিন্দমের পেটের কাছে শার্ট মুঠো করে ধরলো। অরিন্দম চমকা-লো,ভড়কে গেল সে ক্ষীণ প্রহর। উদগ্রীব নয়নে সে অনুর কান্নারত মুখপানে তাকাল। ব্যাস্ত হয়ে বলল,
__’ কি হয়েছে তোমার বউ, কাঁদছ কেন? শরীর খারাপ লাগছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে! একবার বল?’
অনু অরিন্দমের পেটে ছোট বাচ্চাদের মতো মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো কিছু বলতে নিলেও বলতে পারলো না, কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা পাল্টাতে বলল,
__’আমার খুব ক্ষুদা লেগেছে।’
অরিন্দমের ভ্রু কুঁচকে গেল,সে অনুকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে তার মুখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
__’এতে কান্নার কি আছে?’
অনু কিছু বললো না দুহাত টেবিলের ওপর রাখল, অরিন্দম কিছুক্ষণ সরু চোখে তাকিয়ে থাকলো,বোঝার চেষ্টা করল, কোনো উত্তর না পেয়ে সে খাবারে মনযোগ দিল।
___
রাত প্রায় দুটো বাজে বন্ধ ঘরে লালচে ড্রিম লাইট জ্বলছে। অরিন্দম কাত হয়ে অনুর কোমর জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে আর মেয়েটা তার বুকে বিড়াল ছানার মতো গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে কিন্তু হঠাৎ অনু ধরফরিয়ে উঠে বসে জোরে কেঁদে কিছু বলতে লাগলো অরিন্দম হঠাৎ কান্নার শব্দে হকচকিয়ে গেল সে অনুর দিকে ঘুম জোড়ালো চোখে তাকালো দুচোখে ঘুমে টুইটুম্বর তার, পরিষ্কার করে তাকানোর আগেই অনু হঠাৎ দুহাতে অরিন্দমের মুখ ধরে এলোপাথাড়ি চুমু দিতে লাগল অরিন্দম হতভম্ব হল অনু কাঁদতে কাঁদতে কপালে কপাল ঠেকালো, বলল,
__’আপনি কাল অফিসে যাবেন না! যাবেন না কোথাও, যাবেন না বাড়ির বাইরে!
অরিন্দম তাকে সরালো, পিটপিট নেত্রে তাকিয়ে রইল তার জন্য চিন্তিত নারীটির দিকে, কিছুক্ষণ নিষ্পলক চেয়ে বলল,
__’স্বপ্ন দেখেছ?’
অনু জল ভরা চোখে মাথা ওপর নিচে করল! অরিন্দম বুঝল সে দুহাতে তাকে আকড়ে নিয়ে বলল,
__’চিন্তা করে না। ওটা স্বপ্ন, যা সত্যি হয় না।’
অনু শুনলো না সে পুনরায় ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বলল,
__’যাবেন না বলুন?’
অরিন্দম তার মনের অবস্থা বুঝে সায় দিয়ে বলল,
___’যাব না!’
__’সত্যি বলছে?’
__’তিন সত্যি! এবার ঘুমাও।’
অনু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো তার দিকে। অরিন্দম তার গালে হাত রেখে বলল,
__’কি হলো ঘুমাবে না? ঘুম পাগলি না তুমি!’
__’ তিনটে চুমু দিন তারপর ঘুমাবো!’
অরিন্দম শব্দ করে হেসে দিল অনুর বাচ্চামি আবদার দেখে। অনু ঠোঁট ফুলিয়ে রইল, অরিন্দম হাসি থামিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
__’যদি চারটে দিই ক্ষতি আছে?’
অনু ক্ষীণ লজ্জা পেল তবুও মাথা দুলিয়ে বোঝাল ক্ষতি নেই। অরিন্দম তার দুচোখে অধর ছোঁয়াল, দুগালে শব্দ করে চুমু দিয়ে কপালে দীর্ঘ সময় নিয়ে স্পর্শ করলো,অনুর দুগাল লজ্জায় ভারি হয়ে এল সে গুটিশুটি হয়ে অরিন্দমের বক্ষবন্ধনী হয়ে গেল! অরিন্দম তা দেখে হাসলো, বিস্তর হাসি তার, জীবনে এই মেয়েটা আসার পর থেকে সে কেমন সুখ সুখ অনুভব করে,কত অনুভূতির সাথে সে পরিচিত হয়েছে,কত স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে সে। কথা কথা জমতে তার যা অনুকে বলেও ফুরায় না। মাঝেমাঝে ভাবে মেয়েটার এত ঋণ শোধ করবে কিভাবে সে? আদেও এই খুশি এই আনন্দের ঋণ শোধ করা যায় কি?
#চলবে
[