হিয়ার মাঝে পর্ব ১৩+১৪

#হিয়ার_মাঝে
১৩.
#Mousumi_Akter

রুমের দরজা লাগিয়ে সারারুম ময় পায়চারি করছি আমি ভীষণ অস্হির লাগছে আমার। এ অস্হিরতা যেনো ভীষণ লজ্জার।বার বার উনার আবৃত্তি টা মনে পড়ছে।ইস মানুষ টা কি সর্বনাশ টাই না করে দিলো আমার।কই কখনো তো কবিদের মতো বার বার প্রেমের কবিতা শুনান নি আমাকে অথবা কারণে অকারণে ইমপ্রেস করতে ও চান নি।তাহলে আমার মন হারালো কিভাবে।কি বিশেষত্ব আছে উনার মাঝে।উনি ঠিক কি বলেছেন আমাকে ক্যানোই বা উনার কাছে মন হারালাম আমি।উনি কি কোনো ম্যাজিক করেছেন আমাকে।উনি কি কোনো ম্যাজিশিয়ান।

এমন সময়ে কারো হাতের সুপ্ত স্পর্শ কোমরে এসে পড়লো।নিমিষেই কেঁপে উঠলাম আমি।পেছন থেকে দুই হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে মুখের সাথে উনার মুখ মিশিয়ে বলেন,,

“প্রেম নিজেই একটা ম্যাজিক। সে যাকে পছন্দ করে তাকেই ম্যাজিশিয়ান বানিয়ে নেয়।তাই এখানে ম্যাজিশিয়ান তুমি।এই মায়াবী মায়াবী চোখে তাকিয়ে আমার কিছুতেই তুমিময় করে দিয়েছো”

এমন সময় ফোনে টুংটাং সাউন্ডে মেসেজ এলো জানি আমাকেই ভাবছো। তোমার কল্পনাতে আমি ই আছি।কল্পনার জগতে আমাকে নিয়ে কোথায় বিচরণ করেছো আমি কি জানতে পারি।তাহলে ওই নিঁখুত কল্পনাকে সত্য করে দিতাম।

উফফফ গড।আমি এত সময় নিরব কে কল্পনা করছিলাম।মানে সত্যি ওটা নিরব ছিলো না।ওটা আমার কল্পণা ছিলো।কিন্তু আমি যে নিরবের অস্তিত্ব অনুভব করেছি।ওর উপস্হিতি ছিলো।সত্যি ছিলো। আমি রুমের চারদিক চোখ বোলালাম কোথায় আছে নিরব।কিন্তু কোথাও নেই।ফোন টা আবার বেজে উঠলো মেসেজের সাউন্ডে।

“কি ভাবছো আমাকেই তো নাকি ভীষণ লজ্জা পাচ্ছো।মেয়েরা প্রথম ভালবাসার স্পর্শ তে ভীষণ লজ্জা পায়।এই লজ্জা বোধ হয় প্রকৃতির সৃষ্টি। মেসেজ পড়ছো আর লাজুকতায় নাক ফুলে উঠছে তোমার।তুমি লজ্জা পেলে বোধহয় ভীষণ সুন্দর লাগে।কিন্তু ওই চার দেওয়ালের মাঝে লজ্জামাখা মুখ টা দেখিও না ও জড় পদার্থের ও প্রাণ সৃষ্টি হয়ে যাবে ওই লাজুকতা দেখলে।তুমি লজ্জা পেলে শুধু মাত্র আমার সামনে পাবে।আমি দেখবো ওই লাজুকমুখের অদল।যা দেখে আমি মুগ্ধ হবো বারেবার।আমি প্রেমে পড়বো বারেবার।আমি একবার না হাজার বার না প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে প্রেমে পড়তে চাই।তোমার ঠোঁটের উপরের ওই তিল টা বারেবাফ কাছে টানে আমায়।আমার চক্ষুযুগল বারেবার ওই ঠোঁট আর তিলের মাঝে ডুবে যায়।আচ্ছা তুমি এতটা সুন্দর হলে কেনো?খুব দরকার ছিলো এত বেশী সুন্দর হওয়ার।একটু কম হলে কি ক্ষতি হতো।আমি অন্তত নিশ্চিন্ত থাকতে পারতাম কেউ যেনো নজর না দেই।তুমি একটু কম সুন্দর হলেও আমি ঠিক এতটাই পাগল হতাম।জানতে চাও আমি ঠিক কতটা পাগল তোমার জন্য।যতটা পাগল হলে একটা মানুষকে পাবনাতে পাঠালেও সুস্থ হয় না শুধু মাত্র তার পাগলির ঠিকানায় সুস্থ হওয়ার মেডিসিন থাকে।যতটা ভালবাসলে এক জীবনে অন্য কাউকে ভালবাসার প্রয়োজন হয় না ঠিক ততটাই ভালবাসি।নাহ আর বেশী কিছু বলবো না তাহলে লজ্জায় আমার সামনেই আসতে পারবে না।একবার বাইরে এসো তো এক্ষুণি দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে তোমায়।”

দরজা খুলেই ছুটে গেলাম নিরবের রুমে কিন্তু নিরব নেই।এইদিকে দেখি ওয়াশ রুমে নিরব বডিওয়াশ মাখিয়ে চোখে কালো সানগ্লাস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি কপাল কুচকে তাকালাম উনার দিকে কি ব্যাপার টা কি সেটা বোঝার জন্য।আমি নিরব কে দেখে ভীষণ লজ্জা পেলেও সেই লজ্জা সামলে বললাম কি ব্যাপার আপনি এভাবে সাবান মাখিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন যে।নিরব আমাকে বলে তোমার বোন আমাকে ওয়াশিং মেশিন পেয়েছে।কথা ঘুরাতে বলেছিলাম তোমার কাপড় আমি ভালবেসে কাচতে চেয়েছিলাম তারপর বাকিটা ইতিহাস সব কাপড় এনে দিয়ে গিয়েছে ভালবেসে কাচতে।আম্মু দেখে যাও তোমার আদরের ছেলেকে যে আজ ও হাতে তুলে খাবার খাই না সে হবু শ্বশুর বাড়ি এসে চৌদ্দ গুষ্টির কাপড় কাচতেছে।মনে হচ্ছে এ বাড়িতে বিয়ে হয়ে এসছে আমার।এ বাড়ির বউ আমি।নিরবের কথাগুলো শুনে খুব জোরে হেসে দিলাম আমি।না হেসে আর পারলাম না।নিরব আমার হাসি দেখে বলে কারো পৌষ মাস আর কারো সর্বনাশ।

আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম কার সর্বনাশ হলো শুনি।নিরব আমার দিকে তাকিয়ে বলে তোমার হাসিতে আমার মহা সর্বনাশ।

নিরবের সাথে আপুর ড্রেস গুলা ধুয়ে সব ছাদে শুকোতে দিয়ে আসলাম।

রাতে ডিনারের সময় আমি খাবার দিচ্ছি সবাইকে।আমার গায়ে নতুন ড্রেস দেখে আপু অবাক হয়ে যায়।আপু আমাকে বলে এই ড্রেস কোথায় পেলি মিথু।আমি মুখ কাজুবাজু করে বললাম নিরব ভাইয়া দিয়েছে।মা আমাকে বিশ্রি ভাবে বলে উঠলো তোর স্বভাব তো তোর মায়ের থেকেও খারাপ হয়েছে।কিভাবে ছেলে পটাতে হয় ভালোই জানিস তাইনা মিথু।গায়ের রং একটু ভাল হয়েছে দেখে চামড়া বিক্রি করা শুরু করিস না আবার।তোর মা ও সেইম কাজ টা করেছিলো।

আমি চোখের কোনার পানি মুছে বললাম তুমি মা হয়ে একথা বলতে পারলে আমি চামড়া বিক্রি করছি।

মা কিসের মা কার মা।তুই কি আমার পেটে ছিলি।তুই কোন দিক থেকে আমার মেয়ে। তোর মা আমার স্বামির সাথে বিয়ে করেছিলো আদেও তুই তাদের বৈধ সন্তান কিনা আমার সন্দেহ আছে।এমন ও তো হতে পারে তুই ওদের পাপের ফসল আর পাপ লুকাতে বিয়ে করেছিলো।তোর জন্মের ই কোনো ঠিক নেই তাহলে কিসের মা মা করছিস।

মা প্লিজ আর বলো না।সামান্য একটা জামার জন্য এভাবে বলছো।নিরব ভাইয়া তো আপুকেও ড্রেস দিয়েছে কই আপুকে তো এভাবে বললে না।আমার বেলায় কেনো মা?

নবনিতা আর তুই কি এক হলি।আমার মেয়ের স্বভাব এমন না যে কাউকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কিছু নিবে।এমন স্বভাব তোর রক্তে আছে।

নবনিতা আপু মা কে আরো উসকিয়ে দিয়ে বললো মা ও সারাক্ষণ নিরব ভাইয়ার পিছু ঘুরে।ওর নিরব ভাইয়ার স্যাম্পেথি চাই বুঝলে মা।নিরব ভাইয়া ভাল মনের মানুষ তো।নিশ্চয়ই কেঁদে কেঁদে আমাদের বদনাম বলেছে তাই নিরব ভাইয়া এটা সেটা দেই।শোন মিথু ভুলেও যেনো নিরব ভাইয়ার আশ পাশে না দেখি তোকে।

আমি কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে ড্রেস টা খুলে রাখলাম।আবার আগের ড্রেস পরেই বাইরে এলাম।এত সময় ঘটে যাওয়া ঘটনার কিছুই জানেনা নিরব।দরজার পাশে সুপ্তি অপেক্ষা করছে নোটস দিবে বলে।আমি নোটস গুলো নিয়েই চলে এলাম সকালে আবার এক্সাম আছে।নিরব ডায়নিং এ আমাকে খুজছিলো আপু বলেছে আমি খেয়ে চলে এসছি।কিন্তু নিরব বুঝতে পেরেছে আমি খাই নি।কারণ সবার খাওয়া না হলে আমি একদিন ও খাই না।নিরব ভাত দু একবার মুখে দিয়ে হাত ধুয়ে চলে এসছে।আমাকে নোটস নিয়ে যাওয়ার সময় নিরব ডাকে।আমি কোনো কথার উত্তর না দিয়ে হাঁটতে থাকি।নিরব আমাকে বলে আমার ড্রেস তোমার পছন্দ হয় নি মিথু।তোমাকে যে পরতে বলেছিলাম।পরো নি কেনো।উনার কথার উত্তর না দিয়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলাম।না খেয়েই রুমের দরজা লাগিয়ে দিলাম।চুপ চাপ বই পড়ছি আর কাঁদছি।বইয়ের পাতা চোখের পানিতে ভিজে যাচ্ছে।আজ যদি মা থাকতো হাজার টা অন্যায় করলেও বুকে টেনে নিতো।এই যে না খেয়ে চলে এসছি কেউ খোজ ও নিবে না আমি খেয়েছি কিনা।আজ নিজের মা থাকলে হাজার বার অনুনয় বিনয় করতো আমার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করতো।আসলে এই পৃথিবীতে কেউ নেই যে আমার রাগের কারণ খোজে।আমার অভিমানের মূল্য দিবে।পৃথিবীতে কেউ নেই আমার কেউ না।চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।

এই দিকে হঠাত দেখছি নিরবের ফোন।বার বার ফোন টা কেটে দিচ্ছি আমি।কিন্তু নিরব বিরতিহীন ভাবে ফোন দিয়ে যাচ্ছে।ফোন টা দূরে ফেলে দিলাম আমি।কেনো ফোন দিচ্ছে উনি।কে হয় উনি আমার।কিসের এত দরদ উনার।উনার জন্য ই তো আজ এত খারাপ কথা শুনলাম।উনি যদি আজ আমার কিছু হতেন ই তাহলে মা আর আপু এভাবে বলতে পারতো না।আমি কোনো ভাবেই ফোন রিসিভ করলাম না।নিরব মেসেজের উপর মেসেজ করেই যাচ্ছে প্লিজ একবার দরজা টা খোলো।কি হয়েছে তোমার।তোমার মন খারাপ কেনো?প্লিজ মিথু দরজা খোলো।তোমার সাথে কথা না বললে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।আমি জানি তুমি ভেতরে কাঁদছো।যদি দরজা না খোলো আমি সারারাত ছাদে দাঁড়িয়ে থাকবো।যদি না আসো সারারাত ছাদে সিগারেট টানবো আমি।আমাকে এইভাবে জলতে দেখেও যদি তুমি না আসো থাহলে আমি এভাবেই থাকবো।

নিরবের ডাকে সাড়া না দিয়ে বন্ধ ঘরে সারারাত কেঁদে কেঁদে কাটিয়ে দিলাম।
পরের দিন সকালে উঠে নামাজ পড়ে সবার নাস্তা গুছিয়ে পরীক্ষা দিতে চলে গেলাম।নিরব বার বার চেষ্টা করলেও আমি এড়িয়ে গিয়েছি নিরব কে।

সুপ্তির সাথেও কোনো কথা না বলে পরীক্ষা দিতে গেলাম।সুপ্তি বার বার জানতে চাইলেও কিছুই বলি নি আমি।।

পরীক্ষা শেষে সুপ্তি হাতে একটি চিরকুট ধরিয়ে দিলো,,

“মানুষের তো মেরুদণ্ড থাকে আঘাত করলেও উঠে দাঁড়াতে পারে কিন্তু মনের তো কোনো শক্ত ভীত নেই।মন খুব কোমল জিনিস।মন আঘাত পেলে সেটা কিভাবে সহ্য করা যায়।”
#হিয়ার_মাঝে
১৪.
#WriterঃMousumi_Akter

🍁
চিরকুট টা পড়ে নির্বাক নয়নে তাকিয়ে রইলাম চিরকুটের দিকে।লেখা টা যে নিরবের সেটা বুঝতে একবিন্দু বাকি নেই আমার।ভীষণ বিষন্নতা নিয়ে বসে পড়লাম ক্লাস রুমে।বুকের মাঝে ধুকপুক করঁে হার্টবিট।সবাই একে একে বেরিয়ে গেলেও আমি বেরোতে পারলাম না।চারদিক থেকে বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে আমায়।আমি যেনো ক্লান্ত হয়ে পড়েছি আর পারছি না এই মানসিক যন্ত্রণা নিতে মনে চাইছে এক্ষুণি মারা যায়।এই খাচায় বন্দি জীবনের থেকে মুক্তি চাইছিলাম আমি।এতদিন জীবন ছিলো মা আর আপুর অত্যাচারের জীবন।কিন্তু এখন একটু একটু করে অন্যকারো অনুপস্হিতির অত্যাচার অনুভব করতে পারছি।

“সুপ্তি আমার হাত ধরে বলে আর কত মিথু?এখনো কি ঘুরে দাঁড়াবি না।অন্যায় যে করে আর সহে দুজন ই সমান অপরাধী।তুই কেনো পড়ে পড়ে এই অন্যায় মেনে নিচ্ছিস মিথু।তোর ও তো অভিযোগ করা উচিত।প্রতিবাদ করা উচিত।কেনো মেরুদণ্ডহীন মানুষের মতো পড়ে থাকবি।”

“সুপ্তি শরীরের আঘাত দেখিয়ে মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যায় কিন্তু মনের আঘাত কি কাউকে দেখানো যায়।তার কি কোনো প্রমান থাকে। কি নিয়ে অভিযোগ করবো বলতো।কার কাছে বলবো আমার অভিযোগ কে শুনবে আমার কথা।”

“আজ বুঝতে পারছিস তো মিথু নিজের একটা মানুষ থাকা ভীষণ প্রয়োজন।যার কাছে মন খুলে সব টা বলা যায়।যে নিংড়ে নিবে তোর মনের সব কষ্ট।”

“এমন কেউ নেই সুপ্তি।যে আমার কষ্ট বুঝবে।যে আমার অভিশপ্ত জীবনে জড়াবে।আর আমি চাই ও না সেটা। কেউ আসুক আর আমার সাথে তার জীবন টাও অভিশপ্ত করে তুলুক।”

“সুপ্তি আমার হাত ধরে বলে আজ বিকালে যাবি একটা জায়গা আমার সাথে।”

“কোথায় যাবো?”

“যেখানে গেলে তোর মনের ঠাঁই মিলবে।তুই পাবি আত্মতৃপ্তি।যে তৃপ্তিতে তোর বুকে সুখের কম্পন সৃষ্টি হবে।সহসা মনে হবে এই বুঝি আমার সর্বনাশ করে চলে গেলো কেউ।”

“এমন চমৎকার জায়গা কোথায় আছে সুপ্তি।”

“বাসায় চল ফ্রেশ হয়ে যাবো।নিজেই দেখতে পাবি।”

বাসায় ফেরার পর রুমে টেবিলের উপরে ফাইল টা রাখলাম,গায়ের কাপড় টা খুলে ফ্যান ছেড়ে বিছানায় সুয়ে পড়লাম।কাল থেকে কিছুই খাই নি বড্ড ক্লান্ত লাগছে।হঠাত মনে পড়লো নিরবের কথা।সে কি খেয়েছে কিছু।।হঠাত বাইরে থেকে চেচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছে।দরজা খুলে বাইরে গেলাম মা বকবক করছে।কোনো জানতে চাইলাম না নিরবে দাঁড়িয়ে রইলাম।আপু মা কে বলছে মা নিরব ভাইয়ার কি নিয়ে মন খারাপ নাকি রাগ করেছে কিছু নিয়ে।মা বিরক্তি নিয়ে বললো সেটাই তো বুঝতে পারছি না ছেলেটা কাল ভাতের প্লেটে পানি ঢেলে দিলো বলল খেতে ইচ্ছা হচ্ছে না।আবার সকালেও কিছু খেলো না কিছুক্ষণ আগে বেরিয়ে গেলো খুব গম্ভীর লাগছিলো।কি হয়েছিলো সেটাই তো বুঝছি না।যত্ন আত্মীর কিছু কম হচ্ছে কিনা সেটাই বুঝতে পারছি না।যে আদুরে ছেলে বাবা মায়ের।আমাদের সৌভাগ্য যে আমাদের বাসায় এসেছে।নব তুই একটু ভাল ভাবে খেয়াল রাখিস তো মা ছেলেটার।কখন কি লাগে না লাগে।

তার মানে উনি কিছুই খান নি।কাল থেকে না খেয়ে কেনো কষ্ট পাচ্ছেন উনি।শুধুই আমার জন্য কাল সারারাত কি সত্যি ছাদে ছিলেন উনি।এক দৌড়ে ছাদে গেলাম আমি।ছাদে গিয়ে কত গুলো সিগারেট এর খেয়ে ফেলে দেওয়া অংশ পেলাম।উনি কি স্মোক করেছেন।মানে মানুষ টার মেসেজে বলা কথা গুলো সব সত্যি ছিলো।বুকের মাঝে ভীষণ হাহাকার করছে আমার।এই মুহুর্তে তাকে দেখতে ইচ্ছা করছে।কোথায় সে?ছুটে তার রুমে গেলাম কিন্তু কোথাও নেই সে।

আগামিকাল মা বাবার বিবাহবার্ষিকী। বাবা বাড়িতে থাকলে দিন টা সুন্দর ভাবে পালন করেন।এ বছরে বাবা থাকতে পারে নি।বাবার বিজনেস এর গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বিদেশে সেখানেই আছে বাবা।বাবা নেই বলে দিন টা পালন হবে না কিন্তু মা কে ছোট্ট সারপ্রাইজ তো দেওয়া ই চলে।আপু প্লান করছে মা কে কি গিফট করবে।আপুর টাকার অভাব নেই চাইলেই দামি কিছু দিতে পারবে।মনে মনে ভাবলাম আমি কিছু দিলে যদি মা খুশি হয়। ।বিকালে সুপ্তিদের বাসায় গেলাম।কলিং বেল চাপতেই সুপ্তির মা দরজা খুলে দিলো।সুপ্তির মা বরাবর খুব ভালবাসেন আমায়।আন্টি আমাকে দেখেই মিষ্টি হেসে বলেন মা মিথু অনেক দিন দেখি না যে তোমায়।

“আন্টি বাসায় আত্মীয় এসছে তাই একটু বিজি।”

“আচ্ছা ভেতরে এসো মা।সুপ্তি এই যে দেখ মিথু এসছে।দ্রুত বাইরে আয় ওয়াশ রুমে গিয়েছিস নাকি বিশ্ব জয় করতে গিয়েছিস।”

“মা এইতো হয়ে গিয়েছে।তুমি যেখানে যাচ্ছিলে যাও আমি আসতেছি।”

“মৃথিলা পড়ালেখা কেমন চলছে মা।”

“জ্বী আন্টি ভালোই।”

“মৃথিলা সব জানি সব ই দেখি শুধু অন্যর সংসারে নাক গলাতে পারি না তাই।তোমার মা ভীষণ ভাল মানুষ ছিলেন।কেউ না জানলেও আমি তো জানি।আজ যদি বেঁচে থাকতো তাহলে তোমার জীবনে এত অশান্তি হতো না।তবে ভেবো না মা তোমার যে রেজাল্ট একদিন অনেক ভাল কিছু করতে পারবে তুমি।চারদিকের যারা তোমাকে আজ অবহেলা করছে তারাই সেদিন তোমাকে বাহবা দিবে মা।”

“দোয়া করবেন আন্টি।”

“তোমার জন্য সব সময় দোয়া করি মা।আমি বাইরে সুপ্তির নানার বাড়িতে যাচ্ছি তুমি থাকো আমি আসি মা।”

“সাবধানে যাবেন আন্টি।”

সুপ্তি ওয়াশ রুমে থেকে বেরেলো খানিক টা তাড়া দিলাম তুই না কোথায় যাবি বলে আমাকে বার বার কল দিচ্ছিস আর এখন ওয়াশ রুম থেকেই বেরোচ্ছিস না তুই।

“যেখানে যেতে চেয়েছিলাম সেখানে যাবো না।কারণ যাওয়ার কারণ টা আমাদের ফ্ল্যাটেই হবে।”

“মানে কি সুপ্তি।”

মানে টা এসে বলছি।নিচে কারেন্ট বিল এর কাগজ এসছে নিয়ে আসি বস তুই।সুপ্তি নিচে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বেজে উঠলো সুপ্তি ফিরে এসছে ভেবে দরজা খুলতেই কেউ একজন মুখোশ পরা রুমে ঢুকেই দরজা লক করে দিলো।ভয়ে হৃদয় ভীত হরিণির মতো কাঁপছে।কে এই মুখোশ ধারী।ভয়ে হাত পা শিরা উপশিরা কাঁপছে আমার।আমি দরজা খোলার চেষ্টা করতেই মানুষ টা আমাকে পাজা কোল করে সুপ্তির রুমে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।আমি কাঁপতে কাঁপতে বললাম কে কেএএএ আপনি।আর কি চাই আপনার।আমাকে খুন করে কি সুপ্তিদের বাসায় ডাকাতি করবে নাকি।শুনেছি এক ধরণের মুখোশ ধারী আছে যারা মানুষ কে খুন করে তাদের কিডনী চোখ নিয়ে বিক্রি করে দেই।আমার সাথেও কি আজ তাই হতে চলেছে।মানুষ টা একটা প্যাকেট খুলছে। প্যাকেট খুলে কি অস্ত্র বের করছে নাকি।আমি ভয়ে দোয়া ইউনুস জপছি।উনার দিকে তাকিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।আমার কাঁন্নার তাল গোল সব ই কেটে গেলো কারণ উনি আমার কাঁন্না ভিডিও করে প্লে করে দিলেন।নিজের কাঁন্নার রিপিট শুনতে কেমন লাগে।এবার যেনো আমার লজ্জা পাচ্ছে খুব।হুট করেই কাঁন্না থামিয়ে দিলাম।উনি প্যাকেট খুলতেই প্রাণ জুড়ানো একটা ঘ্রাণ নাকে এলো।আহা!এটা বিরিয়ানির ঘ্রাণ বের হচ্ছে।কে এই আগন্তক এইভাবে আমাকে ঘরবন্দি করে বিরিয়ানির অফার করছে।আমি আবার মুখ খুলতে গেলে নিজের ফোনে কিছু একটা লিখে ধরলেন, চুপচাপ খাইয়ে দিচ্ছি খাবার টা খেয়ে নাও না হলে কিন্তু ছেলেধরা দের কাছে বিক্রি করে দিবো।এ্যাহ না খেলে ছেলে ধরাদের কাছে বিক্রি করে দিবে তার থেকে আগে খাওয়া ই ভাল ইয়া বড় এক হা করে রইলাম উনি মুখে খাবার দিতে লাগলেন।বিরিয়ানি টা ভীষণ ফেভারিট আমার এই মানুষ টা জানলো কিভাবে।খাচ্ছি আর বার বার ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি আমি কে এই মানুষ টা।এমন ভাবে মুখোশ পরা চেনার উপায় নেই মোটেও।খেতে খেতে হঠাত উনার মুখের মুখোশ টেনে খুলতে গেলে উনার বুকের উপর পড়ে গেলাম।কি এক্টা অবস্থা চিনি না জানিনা এক আগন্তক এর বুকের উপর পড়ে গেলাম আমি।সাথে সাথে ওঠার চেষ্টা করলাম কিন্তু উনি আমাকে হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন উঠতে পারছি না।

“এইবার আমি সাহস করে বলেই ফেললাম দেখুন ছাড়ুন বলছি।একটা মেয়েকে পেয়ে এইরকম করা উচিত নয়। কি চাই আপনার বলুন।”

“সব ভাবনার মোড় ঘুরিয়ে চেনা কন্ঠস্বর বলে উঠলো তোমাকে চাই।”

কথাটা শুনেই নিশ্চিন্ত হলাম।সব ভয় দূর হয়ে গেলো মন থেকে।এক স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম।যাকে দেখার জন্য ছটফট করছিলাম সেই মানুষ টার বুকেই আছি আমি।এবার উনি নিজেই মুখোশ টা খুললেন।উনার ঠোঁটের কোনে ভাল লাগার এক সুপ্ত হাসি লেগে আছে।আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললেন উঠবে নাকি এভাবেই থাকবে।অবশ্য তুমি চাইলে একটা জীবন এভাবেই কাটিয়ে দিতে পারবো।

কি নির্লজ্জর মতো পড়ে আছি ছিঃদ্রুত উঠে ওড়না ঠিক করে নিলাম।নিরব মুখোশ টা ফেলে দিয়ে মাথার নিচে হাত দিয়ে সুয়ে আছে।ওকে দেখেই হালকা হেসে দিলাম আমি।

আমি চলে যেতে চাইলে নিরব আমাকে বলে দাঁড়াও মৃথিলা।

থমকে গেলাম আমি।আমার ভেতর আমাকে আটকে দিলো।তার কথায় মন সায় দিলো।তার দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই সর্বনাশ হলো আমার।ভীষণ মাত্রায় ক্রাশ খেলাম তাকে দেখে।খাট থেকে উঠে নিঁচের ঠোঁট কামড়ে ধরে শার্টের হাতা গোটাচ্ছেন উনি।কি নিঁখুত চেহারার মানুষ টা।উনার দিকে থেকে কোনো ভাবেই চোখ সরানো যাচ্ছে না।শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে আমার কাছে এসে বলেন কি লুকাচ্ছো আমার থেকে।তোমার কি মনে হয় আমি কিছুই বুঝি না।তোমার মন খারাপের কারণ বোঝার ক্ষমতা আমার আছে।একটু ঝুকে এসে বলেন আমাকে ইগনোর করলেই কি আমি বুঝবো না যে তোমার মন খারাপ।আমাকে একবার ইগনোর করলে একশবার তোমার সামনে আসবো হ্যাঁ এটাই আমি মিস মৃথিলা।আমাকে এভাবে ইগনোর করার ক্ষমতা তোমার নেই।

“আপনি আমার কি হন বলুন তো যে আপনাকে ইগনোর করবো।আর আমি বা আপনার কি হই।”

“গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন করেছো তুমি আমার কি হও।আচ্ছা তোমাকে ঠিক কি বলএ সম্বোধন করা যায় বলো তো।কোন সম্বোধন টাতে তুমি পূর্ণ তৃপ্তি পাবে।তোমাকে দেওয়া আমার কোনো নাম নেই।তুমি আমার কাছে শুধুই তুমি।”

“আপনি কেনো এমন করছেন নিরব ভাইয়া।”

“কেনো এমন করছি এটা বুঝতে হলে তোমাকে আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে।আমার চোখে রোখ রাখতে হবে।খুজতে হবে সেই কারণ।এসব তোমাকে এখন বোঝাতে চাই না।এগুলা বোঝার আগে অন্য কিছু বুঝতে হবে তোমাকে।।।”

“কি বুঝতে হবে বলুন।”

“আচ্ছা মৃথিলা আমরা কষ্ট পাই কাদের জন্য নিশ্চয়ই আপন জনের জন্য।আমরা নরমালি তখন কষ্ট পাই যখন আপন জন বকে তখন।যখন আপন জন কষ্ট দেওয়া কথা বলে।এর ব্যাতিত যদি কেউ কষ্ট পাই তাহলে বুঝতে হবে সে কষ্টের কোনো মানেই বোঝে না।যেমন তুমি একজন তেমন মেয়ে।”

“আমি অমন মেয়ে কিভাবে হলাম।”

“আচ্ছা রোজ যদি বিরিয়ানি খাও দেখবা বিরিয়ানির প্রিয় টেস্ট টা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।তেমন রোজ যদি কেউ কাউকে বকাঝকা করে তাহলে বুঝতে হবে সেই মানুষ টা তার প্রিয় নয়।কারন প্রিয়রা শাষন করতে পারে সেটা ভালোর জন্য প্রিয়রা কারনে অকারনে দোষ ত্রুটি খুজে বকা দেওয়ার অজুহাত খোজে না।তোমাকে রোজ বাসা থেকে বাজে কথা বলে যারা বলে তারা তোমাকে বিন্দুমাত্র ভালবাসে না।আর যারা ভালবাসে না তাদের খারাপ ব্যবহার এতটা ম্যাটার করা ঠিক নয়।এই কারণে অকারণে কষ্ট পাও যারা ভালবাসে না তাদের জন্য।যেদিন কেউ ভীষণ ভালবাসবে সেই চমৎকার মানুষ টা চলে আসলে দেখবে হৃদয় উজাড় করা ভালবাসা দিবে।ভীষণ ভালবাসা মানুষ টা যখন একটু চোখের আড়াল হবে সেদিন বুঝতে পারবে সত্যিকারের কষ্ট কি?এসব ফাউ মানুষের জন্য কেনো কষ্ট পাও তুমি।রক্তের সম্পর্ক হলেই মানুষ গুলো বেঈমানি করে না এমন টা ভাবা ঠিক না কিন্তু।এই পৃথিবী টা বড় নিষ্টুর আর আজব প্রকৃতির মৃথিলা।তুমি যদি একটু দূর্বল হও তাহলে তোমাকে পায়ের নিচে দিয়ে পিষে খারাপ আর স্বার্থপর মানুষ রা আরো একটু উপরে উঠে দাঁড়াবে।তাই তোমাকে শক্ত হতে হবে।তোমার নিজের টা নিজেকে বুঝে নিতে হবে মৃথিলা।একটা বার ও কি ইচ্ছা করে না জীবন টা উপভোগ করতে।সৃষ্টিকর্তা অনেক ভালবেসে তোমাকে সৃষ্টি করেছে কারো জন্য।তোমাকে যার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সেই মানুষ টা কি তোমাকে এভাবে চাইবে।তার কি ভাল লাগবে তোমাকে এভাবে দেখতে।আচ্ছা যে মানুষ টাকে তোমার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার কি অপরাধ বলো তো।বিনা দোষে তাকে কেনো শাস্তি দিচ্ছো।যে মানুষ টার জন্ম হয়েছে শুধু তোমার জন্য তোমার তো উচিত তাক ভাল রাখা।সে হয়তো চাইছে তুমি ঘুরে দাঁড়াও। তুমি প্রতিবাদী হলেই তার ভাল লাগবে।”

“উনার কথা শুনে নিঃশ্বাস ভারী হয়এ এলো আমার।কাঁপা কন্ঠে বললাম কোথায় সে মানুষ টা।”

“আম্মুর এই নিষ্পাপ ছেলেটা যদি সেই মানুষ টা হতে চাই তাহলে কি আম্মুর হবু বৌমা খুব রাগ করবে।আম্মুর এই নিষ্পাপ ছেলেটাকে কি সে গ্রহন করবে।আম্মুর নিষ্পাপ ছেলেটার রাজ্য যে দখল করেছে তার বৌমা।”

“কোন রাজ্য। ”

মনের রাজ্য,বলেই কানের কাছে মুখ দিয়ে বলতে থাকেন

“আমাদের বুকের বাঁদিকে হৃদয় নামের একটি প্রদেশ আছে।
অথচ কেউই আমরা সেখানে শাসক নই।
রাজা অথবা রানী হিসেবে সেখানে শাসন করে অন্য কেউ।”

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here