হিয়ার মাঝে পর্ব ১৫+১৬

#হিয়ার_মাঝে
১৫.
#হিয়ার_মাঝে
১৫.
#WriterঃMousumi_Akter

প্রিয় রা বোধ হয় সত্যি ম্যাজিশিয়ান হয়।আর সেই ম্যাজিকে ফেসে গিয়েছি আমি।আচ্ছা ওর কি এমন হয় ইদানিং আমার যেমন হয়।আমার বেহুদা হাসি পাই, বেহুদা কাঁন্না পাই।অভিমান করার অজুহাত খুজতে ইচ্ছা করে কেনো জানিনা মনে হয় আমার অভিমানি মুখ দেখলে কারো বুক ব্যাথায় চিন চিন করবে।কেউ আমার অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করবে।কেউ বার বার জানতে চাইবে আমার অভিমানি মুখের কারণ।আচ্ছা উনার ও কি ঠিক এমন টাই হয়।উনিও কি এভাবেই ভাবেন।আজ বাবা মায়ের ম্যারেজ ডে।আপু আজ বলেছে সবাই কে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে।যদিও প্রতিবার তারা যায় আমাকে বাড়িতে রেখেই।আমার কখনো সিনেমা দেখা হয় নি আর ইচ্ছা থাকলেও যাওয়া হয় নি।শখ কার না আছে ঘুরতে কার না ভাল লাগে কিন্তু আমি এসব কখনোই পাই নি।

ঘড়িতে ঠিক সন্ধ্যা ছয় টা বাজে।আমি আজ বিভিন্ন রকমের আইটেমের রান্না করেছি।রান্না ঘরে বেশ করেক বার এটা সেটার আনার অজুহাতে নিরব গিয়েছে।রান্না টেস্ট ও করে এসছে।

ডায়নিং এ খাবার টা সাজিয়ে সবাই কে খেতে ডাকলে আপু এসে মা কে সুন্দর একটা শাড়ি গিফট করে।আমিও আজ মায়ের জন্য একটা গিফট এনেছি।

মা এই গিফট টা তোমার জন্য বলেই একটা গিফট বক্স এগিয়ে দিলাম মায়ের দিকে।মা, নিরব,নবনিতা আপু সবাই যেনো চমকে গেলো আমার হাতে মায়ের জন্য গিফট দেখে।মায়ের মুখভঙ্গি দেখে একটুও মনে হলো না যে মা খুশি হয়েছে।

নবনিতা আপু চোখ,মুখ কুচকিয়ে মুখের বাজে ভঙ্গিমা করে বলে কি গিফট এনেছিস ফুটপাতে কেউ কিছু ফেলে দিয়েছে সেখান থেকে তুলে এনেছিস তাইনা।নিজের যখন ক্ষমতা নেই তাহলে গিফট আনতে যাস কিজন্য বুঝি না।

আপু বক্স টা খুলেই দেখো।আপু ধীরে ধীরে বক্স টা খুললো,বক্স টা খুলেই চমকে গেলো কারণ আমি মায়ের জন্য একটা গোল্ড এর চেইন এনেছিলাম।মা,বা আপুর কল্পনাতেও ছিলো না যে আমি এমন কোনো গিফট দিবো।আসলে একটা কথা আছে দেখতে নারী চলন বাকা।আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো।গিফট পেয়ে খুশি হওয়ার পরিবর্তে গোয়েন্দা গিরি শুরু হলো।নিরবের চোখ মুখ হাস্যজ্জ্বল দেখাচ্ছে খুব।নিরব অনেক টা প্রাউড ফিল করছে আমাকে দামি গিফট দিতে দেখে।নিরবের একটা বিশেষ গুন আছে।ও বড়দের খুব সম্মান করে কাউকে কিছু দেওয়া টা খুব পছন্দ করে।ও সব সময় চাই সবার সাথে ভাল সম্পর্ক বজিয়ে রাখতে।

নিরবের চোখে,মুখে ঠোঁটে অসম্ভব সুন্দর হাসি।’ওর হাসিটা কি স্নিগ্ধ লাগছে।ও পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।কি এত দেখছে আমাকে।আমার ও বারবার ওর দিকেই নজর চলে যাচ্ছে।

মা আর আপু দুজন দুজনের দিকে তাকাচ্ছে বারেবার।দুজনে যেনো আকাশ থেকে পড়েছে।

“মা আমাকে প্রশ্ন করে তুই এত দামি গিফট কিভাবে কিনলি মিথু।”

“তোমার পছন্দ হয়েছে মা।”

‘তুই কোথায় পেয়েছিস আগে সেটা বল।তোর কাছে তো এত টাকা থাকে না।তাহলে তুই এটা কোথায় পেলি।এত সুন্দর চেইন তো এক দু টাকাতে হয় না।সত্যি করে বল কোথায় পেয়েছিস।”

“মা যেখান থেকেই দেই তোমার পছন্দ হলেই আমি খুশি।”

“আপু বলে উঠলো মা ও নিশ্চয়ই চুরি করেছে কোনো জায়গা থেকে।না হলে কোথায় পাবে এটা।”

“মা আমার হাত শক্ত ভাবে চেপে ধরে বলে সত্যি করে বল কোন জায়গা থেকে চুরি করেছিস।এই ফ্ল্যাটের কারো থেকে চুরি করিস নি তো।এমনি তে তো মান সম্মান কিছুই রাখিস নি।এইবার এই কেলেঙ্কারি করে আমাদের নাকে মুখে চুন কালি দিবি তাইনা।”

“আপু বলে উঠলো মা,বাবা আমার গত জন্মদিনে যে চেইন টা এনে দিয়েছিলো ওটা তো অনেক দিন ধরে পাওয়া যাচ্ছিলো না।এমন নয়তো সেই চেইন টা ও চুরি করে রেখে এখন নতুন করে বানিয়ে গিফট দেওয়ার বাহানায় ভাল আর মহান সাজতে চাইছে।”

“মা আমার হাত আরো শক্ত ভাবে চেপে ধরে বলে, তুই আমার মেয়ের চেইন চুরি করে আমাকে দিচ্ছিস।তোর চরিত্রের তো ঠিক নেই দেখছি।আমাদের মান সম্মান যা আছে সব রাস্তায় নামিয়ে দিবি দেখছি।তোর মতো চোর নিয়ে তো এক বাড়িতে থাকা যায় না।”

নিরব বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে আমাদের কথোপকথন শুনছিলো।আমাকে চোখ এর ইশারা দিয়ে বলছে চিন্তা করো না আর মন খারাপ করো না।ওর ইশারা বুঝে একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিলাম আমি।

নিরব এগিয়ে এসে মায়ের হাতে একটা শাড়ি দিয়ে বলে আন্টি এটা আপনার জন্য।আপনার ম্যারেজ ডে আজ সেটা মৃথিলা বলেছিলো আমাকে।এনি ওয়ে আন্টি মনে হয় মৃথিলা আপনাকে গিফট টা অনেক ভালবেসে দিয়েছে আপনার গ্রহন করাটা উচিত হবে।

বাবা নিরব ও নিজে থেকে দিলে আমি সেটা গ্রহন করতাম।কিন্তু ও আমার মেয়ের চেইন চুরি করে আমাকে দিচ্ছে।তুমি বলো আমি কি করবো।

নিরব শান্ত কন্ঠে বললো মৃথিলা কারো কাছে এমন প্রশ্ন করাটাই ঠিক না যে গিফট টা কিভাবে কিনলে।আমি লজ্জিত হয়ে জানতে চাইছি এটা কিভাবে কিনলে।আমি জানি এটা তুমি যেভাবেই হোক তোমার টাকাতেই কিনেছো।এটা কি বৃত্তির টাকা জমিয়ে কিনেছো।

আচ্ছা একটা মানুষ সাধারণ একটা প্রশ্ন এতটা নমনীয় ভাবে কিভাবে করতে পারে।আজ মা বা আপুর কথায় আমার একটুও মন খারাপ হয় নি বা খারাপ লাগে নি।কারণ নিরব আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে যারা ভালবাসে না তাদের জন্য মন খারাপ করে লাভ নেই।মন খারাপ করতে হয় ভালবাসার মানুষের জন্য।নিরব আমাকে বুঝিয়েছে পৃথিবীতে সব কিছু অতটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবে নিতে নেই।কিছু জিনিস ডোন্ট কেয়ার ভাবে ছেড়ে দিতে হয়।আমি আজ তাই করলাম।মনের মাঝে বয়ে চলেছে প্রশান্তির এক শান্তিময় বাতাস।জীবনে ভাল থাকাটা কত সহজ করে দিয়েছে নিরব আমার।

আমি নিরব কে বললাম মায়ের একটা বালা ছিলো আমার কাছে আমি সেটাই দোকানে দিয়ে সেই ওজনের একতা চেইন এনেছি।

মা, আপু, নিরব যেনো আকস্মিক চমকে গেলো।তাদের কল্পনাতেও ছিলোনা আমি এমন কিছু করবো।তার পর ও আপু চিল্লাতে লাগলো যে আমি মিথ্যা বলছি আর সাথে মা ও চিল্লাতে লাগলো। আমি নাকি সব মিথ্যা বলছি।শুধু এতেই তাদের আক্ষেপ কমে নি মা আরো বললো ভাবলি কিভাবে তোর মায়ের কোনো জিনিস আমি নিবো।রেগুলারের মতো যেগুলা বলে সেগুলা বলে দিলো।

নিরব খুব চিন্তিত ভাবে চেয়ে রইলো আমার দিকে ও ভাবছে আমি হয়তো আবার কেঁদে দিবো।কিন্তু না আমি নিরব কে অবাক করে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে সুন্দর একটা হাসি দিলাম।নিরব আমার হাসি দেখে বলে ওহ ইয়েস।মনে হলো নিরব যেনো কোনো ম্যাচ জিতেছে।

যে সিসুয়েশন সৃষ্টি হয়েছিলো তার মোড় ঘুরাতে নিরব বলে ওঠে আজ মৃথিলা রান্না করেছে নিশ্চয় ই অনেক টেস্টি হবে খাবার।আর আমার ফেভারিট মুড়িঘন্ট রান্না করেছে মৃথিলা।মৃথিলা কে এই বিশেষ খাবার রান্নার জন্য একটা স্পেশাল গিফট দিতেই হয়।সবাই কে খাবার দেওয়ার সময় নিরব সবার আগে মুড়িঘন্ট ই প্লেটে নিলো।নিরব একবার খাবার মুখে নিয়ে বলে ওয়াও অনেক টেস্টি।আজ আমার একটা সুন্দর ইচ্ছা হয়েছে বাট নব যদি রাগ করে তাই বলছি না।

মা বলে কি ইচ্ছা বাবা বলেই ফেলো।

আন্টি আপনি মুরুব্বি মানুষ সব ইচ্ছা কি আর আপনার সামনে পূরণ করা যায়।

মা বলে বুঝতে পেরেছি বাবা আমি যাচ্ছি প্লেট নিয়ে আমার রুমে তোমরা যা ইচ্ছা করো।

মা চলে গেলে নিরব বলে নবনিতা আমার একটা শখ পূরণ করবে তুমি।আসলে তুমি ব্যাপার টা কিভাবে নিবে জানিনা তাই বলতে কেমন লাগছে।

আপু বললো আপনার সব ইচ্ছা পূরণ করতে আমি প্রস্তুত বলুন কি চাই আপনার।

আমি তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে চাই।তুমি কি মাইন্ড করবে।

আপুর চোখে মুখে মারাত্মক চমক। আপু যেনো খুশিতে আটখানা।আপু ভাবতেই পারেনি নিরব এমন একটা প্রস্তাব দিবে।আপুর চোখে মুখে ভীষণ লজ্জা দেখতে পাচ্ছি।আপুর চোখে মুখের ভাবে অন্য কিছু প্রকাশ পাচ্ছে।আমার কাছে কেমন যেনো সন্দেহ লাগছে আপুর চোখ মুখ দেখে।আমি স্পষ্ট অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছি।নিরব ভাত মাখিয়ে হাত ধুয়ে আপুকে চামচ দিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে।আমার মনে চাচ্ছিলো আমি এক্ষুনি পটল তুলে ফেলি।কেমন যেনো জ্বলন হচ্ছিলো মনের মাঝে।রাগে সমস্ত শরীর জ্বলছিলো আমার।আমি যেনো এটা মেনে নিতে পারছিলাম না।উনি হঠাত এমন অদ্ভুত আচরণ করছেন কেনো?কি সাহস আমার সামনে অন্য একজন কে খাইয়ে দিচ্ছে।মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।আপু একবার মুখে নিয়ে বলে আর খাবো না।কিন্তু নিরব খুব ই নমনীয় ব্যাবহার করে আপুকে খাইয়ে দিচ্ছে।আপু দুই এক বার খাবার নিয়ে চলে গেলো।

আমি নিরবের দিকে তাকিয়ে মুখ ঝামটা দিয়ে বেরিয়ে গেলাম।নিরব বুঝতে পারলো আমি রেগে গিয়েছি।নিরব আমার রুমে গিয়ে বলে এই যে মিসের মৃথিলা রাগ করেছেন মনে হচ্ছে।

না রাগ করবো কেনো গাল ফুলিয়ে বললাম।

মিথ্যা ও বলতে পারো দেখছি।

তা কি করবো আপুকে যেভাবে খাইয়ে দিচ্ছিলেন।

অমন অমৃত যে তোমার আপুকে মানায় তাই আপুকেই খাইয়ে দিলাম।

মানে।

তোমার খাবারের প্রশংসা করায় নবনিতা খাবারে সাবান গোলা দিয়েছিলো।আমি মুখে দেওয়ায় বুঝে গেছিলাম।যার জন্য আমি পাম দিয়ে ওটা নবনিতাকেই খাইয়ে দিয়েছিলাম।ওর জন্য এটাই উপযুক্ত বিচার ছিলো।কিছু মানুষ কে এভাবেই শাস্তি দিতে হয়।একে বলে নিরব টাইট।

আমি হেসে দিয়ে বললাম আপনি না পারেন ও বটে।

হুম পারতে তো হবেই।আমার রুমে একটা কাগজ আছে টেবিলে যাও দেখে আসো।আমি ছুটে গিয়ে দেখি চিঠিটা আপু পড়ছে। আমাকে দেখে আপু চিঠিটা নিয়ে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

কি ব্যাপার আপু কি ভাবলো চিঠিটা আপুর জন্য।

আপু যখন রুমে ছিলো না আপুর রুমে গিয়ে চিঠিটা পড়লাম।

প্রিয়,
তোমাকে নিয়ে বার বার লিখতে গিয়েও থমকে যায় আমি।আমার কলমে তোমাকে নিয়ে লেখার জন্য বিশেষ কিছু এই মুহুর্তে মাথায় আসছে না।তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সাদা ড্রেসে।আমার মনে হয়েছিলো সাদা একটা পরী দাঁড়িয়ে আছে।আচ্ছা তোমাকে নিয়ে কি লেখা যায় বলোতো।তোমাকে নিয়ে আমার সারাদিনের ভাবনা লিখে বোঝাতে পারবো না।তোমার ওই লজ্জা মাখা অভিমানি মুখে বার বার আদরে ডুব দিতে ইচ্ছা করে।তোমার আমার নামের অক্ষর দুটোও পাশাপাশি দেখেছো।ওরাও মনে হয় একে অপরের সাথে মন দেওয়া নেওয়া করে।জানো তোমায় নিয়ে আমার বিশেষ কিছু ভাবনা। যে ভাবনা তে ভাবনাময় হয়ে ঘিরে বেড়াচ্ছো তুমি আমার কল্পনায়।আচ্ছা তোমার ভেবেই আমার বুকের মাঝে শুরু হয় এক ভয়ংকর তান্ডব। মন পাখিটা তোমাকে তার ভেতরে আবদ্ধ রাখতে ছট ফট করে।

ইতি আম্মুর নিষ্পাপ ছেলে।
#হিয়ার_মাঝে
১৬.
#Writer_Mousumi_আক্তের

শহরে সন্ধ্যা নেমেছে কিছুক্ষণ হলো।সন্ধ্যার হলদেটে আলোর সাথে সাথে অলিতে গলিতে রোড লাইটের আলো চিক চিক করছে পুরো শহর।বাসার সামনে ছেলেরা ব্যাডমিন্টন খেলছে নেটের চারদিকে রং বেরঙের জুনি লাইট সেট করেছে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।একটা গল্পের বই হাতে নিয়ে পড়ছি রুমে বসে বসে।জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশ টা দেখছি আর উনার চিঠির কথা গুলো বার বার ভাবছি।চিঠি টা আপু নিলেও অনুভুতি গুলো যে আমার জন্যই প্রকাশ করেছে সেটা আমি বুঝতে পেরেছি।আচ্ছা মানুষ টা এতটা অনুভুতি প্রবন কিভাবে হতে পারে।কিভাবে আমার আপাদমস্তক এর খেয়াল রাখে।চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে আমার হয়েই থেকো প্রিয়।এই তুমি টা শুধুই আমার।ফোন টা হাতে নিয়ে একটা মেসেজ পেলাম।

জানো তো ইচ্ছাকরছে খুব ইচ্ছা করছে একটা তুমিময় কবিতা লিখতে।যেখানে থাকবে প্রথম লাইনে তোমাকে ভালবাসার প্রথম প্রহরের প্রথম অনুভূতি। যে অনুভুতিতে মিশে থাকবে শুধু তুমি।যেখানে লেখা থাকবে তোমার প্রতি আমার নেশাক্ত হওয়ার কারণ গুলো।যদি জানতে চাও কিসের প্রতি নেশাক্ত হয়েছি আমি তবে ইয়া বড় বিশাল একটা লিস্ট ধরিয়ে দিবো।আয়নায় সামনে যাও আগে তারপর বাকিটা পড়ো।এটুকু পড়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি।আবার পড়তে শুরু করলাম।

কি আয়নার দিকে আজ নিজেকে দেখতে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছো।জানতে চাও কিভাবে বুঝলাম কারণ আজকাল আয়না দেখলস আমার ও ভীষণ লজ্জা করে। কারণ আয়নার মাঝে তুমি এসে আদর করো আমায়।তোমার ওই পাতলা গোলাপি ঠোঁট আমায় পাগল করেছে।এই পাগল কে যৌনতার কারণ ভেবোনা।এটা মনের গহীনের জমে থাকা সুপ্ত ভালবাসা।তোমার ঠোঁটের উপরের ওই তিল আমাকে বারবার আকর্ষিত করে।তোমার ওই টানা টানা ভ্রু আমাকে বার বার কাছে ডাকে।তোমার ওই গেজ দাঁত এর হাসিতে বার বার প্রেমে পড়তে ইচ্ছা করে।নিজেই তাকিয়ে দেখো নিজেকে।নিজেকে আয়নায় দেখছিলাম আর উনার বর্ণনা গুলো ভাবছিলাম।

বই টা রেখে পা ঝুলিয়ে বিছানায় সুয়ে পড়লাম। উপরে সিলিং ফ্যান ঘুরছে ফ্যানের পাখার মাঝে আমি নিরবের মুখ দেখতে পাচ্ছি।মানুষ টার নিচের ঠোঁট কামরে ধরে মৃদু মৃদু হাসি চোখের সামনে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।বাইরে থেকে মায়ের আওয়াজ ভেষে আসছে।মা ফোন কথা বলছে।

“আসসালামু আলাইকুম ভাই।”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাবি।কেমন আছেন।”

“জ্বী আলহামদুলিল্লাহ।আপনারা কেমন আছেন।”

“আমরাও ভাল আছি।নিরব কে নিয়ে চিন্তিত ছেলে বড় হয়েছে বিয়ে দিতে হবে।কিন্তু ছেলের যা মতিগতি মেয়ে পছন্দ করা মুশকিল হবে।নিরবের তেমন কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড নেই।ছেলে আমাদের অনেক শৌখিন টাইপের।সব সময় আন কমন জিনিস খোজে।কমন কোনো কিছুই তার পছন্দ না।”

“নিরবের মতো ছেলের জন্য মেয়ের অভাব হবে না।আমরা কি তাহলে মেয়ে দেখা শুরু করবো।আমার ও মেয়ে বড় হচ্ছে আমরাও চিন্তা করছি মেয়ের বিয়ে দিবো।”

“তাহলে তো ভালোই হবে,আমাদের দুই বন্ধুর সম্পর্ক ঠিক থাকবে আর বাইরে কষ্ট করে মেয়েও খোজ লাগবে না।”

“আপনার বন্ধু ও এক ই কথা বলছিলেন যে নিরবের সাথে আমাদের নবনিতার বিয়ে হলে কেমন হবে।আমি বলেছিলাম নিরব বিদেশ থেকেছে ওর কি পছন্দ হবে মেয়ে।তবে এখন দেখছি বেশ ভাব হয়ে উঠেছে দুজনের মাঝে।”

“তাহলে তো এটা অনেক ভাল সংবাদ।আজকাল কার যুগ ছেলে মেয়েদের সময় দেওয়া উচিত।ভাবি ওদের সময় দিন ওরা ঘুরুক ফিরুক ওরা নিজেরাই বলবে আমাদের। তাছাড়া আমরা দু’মাস বাদেই ফিরছি।তখন এসে এনগেজমেন্ট করবো।”

“জ্বী ভাই ঠিক আছে।আর আপনার বন্ধুর সাথে কথা বলবেন একটু এ বিষয়ে। ”

“ওকে ভাবি।এখন রাখছি।আল্লাহ হাফেজ।”

মা নিরবের বাবার সাথে ফোনে কথা বলে আপুকে ডাকলো।আপু আসলে মা আপুকে বলে শোন মিথু নিরব কে তোর কেমন লাগে।

ক্যানো মা বলোতো।

নিরবের বাবা তোর আর নিরবের বিয়ের কথা বলছে।আমার তো মনে হয় নিরব ও তোকে পছন্দ করে।

হ্যাঁ মা তোমাকে বলা হয় নি। নিরব ও আমাকে হয়তো এটাই বোঝাতে, চাই। তোমাকে বলা হয় নি।আমার মনে হয় ওর হাব ভাব এটাই বোঝা যায়।

শোন মা আগুন আর ঘি পাশাপাশি থাকলে ঘি গলবেই।ছেলেরা মেয়েদের পাশাপাশি থাকলে ছেলেরা দূর্বল হবেই।তুই নিরব কে হাতের মুঠোতে রাখবি।নিরব যেনো হাত ছাড়া না হয়।সব সময় নিরবের চোখের সামনে থাকবি।নিরব একবার তোকে ভালবেসে ফেললেই দেখবি কাজ হয়ে গিয়েছে।

মা আর আপুর এ কথোপকথন আমার অজানা ছিলো।নিরবের বাবার সাথেও এ কথা গুলো কিছুই জানতাম না আমি।

রুমে দাঁড়িয়ে বাইরে উঁকিঝুকি মারছি।হুট করেই নিরব রুমে প্রবেশ করলো আপেল খেতে খেতে।আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি এই অসময়ে আমার রুমে উনি কেনো।আস্তে আস্তে আমার দিকে এগোচ্ছেন এক পা দু’পা করে।আর আমি এক পা দু’পা করে পেছনের দিকে যাচ্ছি।যেতে যেতে খাটে ধাক্কা লেগে বিছানায় পড়ে গেলাম।নিরব আমার দিকে ঝুঁকে ঠোঁটের কাছাকাছি চলে এলো।বুকের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এলো আমার। বুকের মাঝে ধুকপুক করছে।গরম নিঃশ্বাস নাকে মুখে উপচে পড়ছে।আমার ঠোঁটের উপরিভাগে ঘাম জমেছে।নিরবের ও নাকে, মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম।আমি বললাম কি করছেন।ওর চোখ দুটো যেনো হাসছে ঠোঁট কাঁপছে।শান্ত গলায় উত্তর দিলো তোমাকে দেখছি।এত সুন্দর কেনো তুমি।এতটা সুন্দর হওয়া দন্ডনীয় অপরাধ প্রেমিকের কাছে জানোনা।তার জন্য পানিসমেন্ট খেতে হবে।

ভারী কন্ঠে জবাব দিলাম কি পানিসমেন্ট।নিরব আমার গালে আপেল পুরে দিয়ে বলে আপাতত আপেল খাও।বিয়ের আগে অন্য কিছু খাওয়াতে চাই না।এখন চটপট রেডি হয়ে নাও।

“নিরব আমাকে রেডি হয়ে নিতে বললো।আমি বললাম।কোথায় যাবো?”

“নিরব বললো সিনেমা দেখতে।”

“কে কে? ”

“আমি আর তুমি”

“মজা করছেন মা আর আপু যাবে তো।আর ওদের সাথে আমাকে মরে গেলেও নিবে না।”

“আপনার মা যাচ্ছে না।আপনার আপু যাচ্ছে সাথে ব্যাপার না।আপনিও রেডি হন।”

“না প্লিজ।আমি যাবো না।”

“ওহ হো জানিতো এমনি তে রেডি হবে না বলেই নিরব আমার ওড়না ধরে টান দিলো।”

“আরে কি করছেন ছাড়ুন। ”

“কেনো লজ্জা পাচ্ছো।পাও আরো বেশী করে লজ্জা পাও।এখনি রেডি না হলে আরো লজ্জা পাওয়া কাজ করবো।”

“কি কাজ শুনি।”

“এদিকে এসো বলছি।”

“না আমি আসবো না রেডি হয়ে নিচ্ছি ছাড়ুন।”

“শোনো,আগের যে ড্রেসগুলা এনেছিলাম ওর মাঝে একটা কালো গাউন আছে ওইটা পরবা,চোখে একটু কাজল দিবা,কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ পরবা,চুল গুলো এলোমেলো রাখবা।তোমাকে এই অপূর্ব রূপে আমি দেখতে চাই।”

নিরবের কথা ভেবেই আজ ঠোঁটে গাড় লাল লিপিস্টিক পরলাম।আজকের সাজটা শুধুই নিরবের জন্য।

আপু লাল একটা শাড়ি পরে মাথায় গাজরা পরে সুন্দর করে সেজে রেডি হয়ে নিলো।আপুকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে।চোখ ই ফেরানো যাচ্ছে না।নিরব আপুকে দেখে বলে আরে লাল পরী যে রাস্তা থেকে কোনো জ্বীনে না নিয়ে যায়।

আপনি নিজেই তো একটা জ্বীন।

আমি জ্বীন না জ্বীনের থেকেও খারাপ কিছু।

আপু আমাকে দেখে বলে,বাবাহ মিথু এত সুন্দর ড্রেস কোথায় পেলি আর তুই এত সেজেছিস বা কেনো কোথায় যাচ্ছিস।

তোমাদের সাথে সিনেমা দেখতে।

কে নিচ্ছে তোকে।ডং দেখো।জীবনে তোকে নিয়েছি কোথাও?আমি আর নিরব যাবো শুধু। তোর সাহস হলো কিভাবে আমার সাথে যাবি।আমি তোকে কোথাও নিচ্ছি না।

এর ক মাঝে নিরব এসে আপুকে বলে আমি নিরব ভাইয়া থেকে নিরব হলাম কখন।আর মিথু ও আমাদের সাথেই যাচ্ছে।কোথাও একা যেতে ভাল লাগে না আমার।সবাই মিলে আড্ডা দেওয়ার মজাই আলাদা।

নিরবের মুখের উপর কিছু বলতে পারলো আ আপু।রাগে বক বক করলো খানিক টা।তারপর রওনা হলাম।ফ্লোরে তেল পড়ে ছিলো যেটাতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে পা মচকে গেলো আমার।যাত্রা পথে এমন অঘটন দেখে মন খারাপ হলো আমার।আমি হাঁটতে পারছিলাম না। নিরব কে বললাম আপনারা চলে যান।

পায়ের ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম একটুও হাঁটতে পারছি না।

নিরব মুড অফ করে বলে উঠলো,,

নবনিতা মুভি দেখা ক্যান্সেল আমি মৃথিলাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।মৃথিলার পায়ের অবস্থা ভাল না আজ কোনো মুভি হবে না।অন্য দিন হবে।মা বললো ডাক্তার বাড়িতে ডেকে নিচ্ছি তুমি আর নবনিতা মুভি দেখতে যাও।

না আন্টি এটা অনেক সিরয়াস ইস্যু মুভি দেখার থেকে।মুভি অন্য একদিন দেখা যাবে।নিরব আমার হাত ধরে বলে উঠে আসার চেষ্টা করো।আমি কিছুতেই উঠতে পারছিলাম না।নিরব কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে আমাকে কোলে তুলে নিলো।কোলে তুলে নিয়ে মা আর আপুর সামনে দিয়ে হন হন করে নেমে গেলো।আপুর মুখে যেনো মাছি ঢুকে গেলো।কথায় আছে অন্যর জন্য গর্ত করলে সেখানে নিজেকেই পড়তে হয়।আপুর ক্ষেত্রে ও সেইম হলো।চেয়েছিলো আমার পা ভেঙে দিতে যাতে নিরবের সাথে আমি যেতে না পারি।কিন্তু উল্টা হলো আপুর ই যাওয়া হলো না।সেই আমি ই নিরবের সাথে বাইরে গেলাম।

আপু ইচ্ছা করে তেল ফেলেছিলো যাতে আমি পড়ে যায়।আর আমি বাইরে যেতে না পারি।আপুর প্লান সাকসেস হলেও শেষ টা নিরব অন্য রকম করে দিলো।আপু আর মায়ের রিয়্যাক্ট টা কি ছিল সেটা ফেস না দেখলে বোঝার উপায় নেই।আমাকে কোলে তুলে সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় নিরব একবার ও আমার চোখ থেকে চোখ সরায় নি।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here