হৃদয়ের দহন পর্ব ৫

#হৃদয়ের দহন
#পর্বঃ৫
#সামিরা পপি

সামিরা ঘুমোচ্ছে।সারাদিনের ক্লান্তি তার উপর মাথায় ব্যাথা।তাই শোয়ার সাথেই ঘুমিয়ে পড়েছে।এইদিকে আজাদ সাহেব ও রোমানা বসে বসে সামিরার ব্যাপারে কথা বলছে।আজাদ সাহেব বললেন,
—-“একটা কথা বলার ছিল।তুমি কি আমার কথাটা মানবে?”
—-“তুমি এমন করে কেন কথা বলছ?তোমার যা ইচ্ছা করো। এতে এইভাবে আমাকে বলার কি আছে?”
—-“কিছু তো নেই।তবুও বলছি আরকি।আচ্ছা সামিরাকে যদি আমাদের ঘরে রেখে দেয় তোমার কি প্রব্লেম হবে?মানে দেখো মেয়েটা একদম একা।ও কোথায় যাবে একা একটা মেয়ে বলো?ওকে কি আমাদের ঘরে রাখা যাই?”
রোমানা মনে হয় খুশি হয়েছে এই কথায়।তাই বলল,
—-“এতে এত ভাবার কি আছে?আর তুমি তো জানো আমারও একটা মেয়ের কত শখ।আমি সামিরাকে আমার কাছেই রেখে দিব আমার মেয়ে বানিয়ে।”
আজাদ সাহেব যেন স্বস্থি পেলেন।বললেন,
—“হুম।”
তারা আরো টুকিটাকি কথা বলতে লাগল।কথা বলতে বলতেই রাতের দশটা বেজে গেল।তখন ঘরে আসল নাবিল।নাবিলকে দেখে আজাদ সাহেব বললেন,।
—-“কোথা থেকে আসছিস এত দেরি করে?”
নাবিল তার বাবার কথায় বিরক্ত হলো।চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
—-“আব্বু তুমি সব সময় এমন করো।মাত্র দশটা বাজে।এটা কোন রাত হলো?আর আমি কি মেয়ে?এত চিন্তার কি আছে?”
আজাদ সাহেব গম্ভির গলায় বললেন,
—-“তুমি মেয়ে না তা’তে কি?কিন্তু তুমি আমাদের এক মাত্র ছেলে।তোমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা হয় তাইতো এত খোঁজ রাখি।সেটা কি বুঝনা?”
—-“আব্বু এত চিন্তা করো না।দেখো আমরা আল্লাহর সৃষ্টি।আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন তবে এই মূহুর্তেও তার কাছে নিয়ে যেতে পারেন।তুমি বা তোমরা চাইলেও আঁটকাতে পারবে না।তাই অযথা চিন্তা করিও না।এইটুকু তো ভরসা আল্লাহর উপর রাখো।আর আম্মু খিদে লেগেছে খেতে দাও।”
বলেই নাবিল তার ঘরের দিকে যেতে লাগল।এইদিকে নাবিলের যাওয়ার দিকে তার বাবা মা চেয়ে আছে।ছেলেটা সত্যিই বড় হয়ে গেছে।কেমন কথা শিখে গেছে।আল্লাহর উপর ভরসা করতে শিখে গেছে।ভেবেই নাবিলের মা’য়ের চোখের কোণে পানি চিকচিক করে উঠল।সেই পানি মুছে খাবার দিতে চলে গেল।এইদিকে নাবিল তার ঘরে যাওয়ার সময় দেখল তার পাশের রুমে লাইট,ফ্যান চলছে।ওই রুমটা গেস্ট রুম।তাই তেমন একটা খোলা থাকে।আজ হঠাৎ খোলা দেখে নাবিল অবাক হলো।আবার ভাবল কোন মেহমান এসেছে হয়তো।তাই একবার ভাবলে দেখে আসবে আবার ভাবল পরে দেখবে।কিন্তু মনের মধ্যে কৌতুহল যেন বেড়েই চলেছে।তাই ভাবতে ভাবতে গেস্ট রুমের ভেতর উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখল।হ্যাঁ খাটে কেউ একজন শুয়ে আছে।নাবিল আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল।গিয়ে দেখল একটা মেয়ে ঘুমিয়ে আছে।মাথায় ব্যান্ডেজ করা।কিন্তু এই মেয়েকে সে কখনও দেখেছে বলে মনে হয়না।মেয়েটার মানে সামিরার মুখের দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষন।কি নিষ্পাপ লাগছে।আবার মুখটা ফ্যাকাশেও লাগছে খুব।কে এই মেয়ে?কোথা থেকে এসেছে?তার মাথায় ব্যান্ডেজ কেন?কি হয়েছে?কে নিয়ে এসেছে?এমন অনেক কথায় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নাবিলের।আবার ভাবল আম্মু থেকে জিজ্ঞেস করব।ভেবেই চলে গেল নিজের রুমে।গিয়ে ফ্রেস হয়ে খেতে গেল।নাবিল আর তার মা বাবা খেতে বসেছে।সবাই মিলে খাচ্ছে আর একটু আধটু কথা বলছে।সেই ফাঁকে নাবিল জিজ্ঞেস করে বসল,
—–“আম্মু মেয়েটা কে?”
রোমানা ভ্রু কুঁচকে বলল,
—-“কোন মেয়ে?”
—-“ওই যে গেস্ট রুমে ঘুমোচ্ছে?আগে তো কখনও দেখিনি?”
—-“ওহ্।ওর নাম সামিরা।”
—-“দেখলাম মেয়েটার মাথায় ব্যান্ডেজ? কি হয়েছে?আর কে এই মেয়ে?”
খেতে খেতে নাবিলের মা সব কিছু বলল নাবিলকে।এইবার নাবিলেরো একটু খারাপ লাগছে।তাই আর কোন কথা না বলে নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়ে।

সকালে সামিরা ঘুম থেকে উঠে।আজ ঘুমটা খুব ভালো হয়েছে।মাথার ব্যাথাও কমেছে।আস্তে আস্তে উঠে বাথরুমে গিয়ে মুখ হাত ধুঁয়ে আসে।গতকাল গোসল করেনি।তার উপর সারাদিন রোদের মধ্যে বসে ছিল।তাই কেমন খারাপ লাগছে তার।ভাবল একটু গোসল করে নিলে ভালো হবে।কিন্তু মনে পড়ল তার তো কাপড় নেই কোন।তাই চুপ করে বসে রইল।কিছুক্ষন পর রোমানা সামিরার রুমে আসল এসে দেখল সামিরা বসে আছে।তাই রোমানা হেসে বলল,
—-“উঠে গেছ?”
সামিরা মাথা উঠিয়ে মলিন হাসল।বলল,
—-“জ্বী মামনি।”
বলেই আবার চুপ হয়ে গেল।রোমানা সামিরার মলিন মুখ দেখে বলল,
—-“কি হয়েছে?মন খারাপ কেন?”
সামিরা কাঁচুমাচু মুখ করে বলল,
—–“আসলে মামনি আমি গতকাল গোসল করতে পারিনি তাই এখন গোসল করতে চাচ্ছি।কিন্তু আমার কাপড় নেই তাই পারছি না।”
—–“ওহ ব্যাপার না।তুমি ওয়েট করো।”
বলেই রোমানা চলে গেল।কিছুক্ষন পর নিজের শাড়ি, পেটিকোট আর ব্লাউজ নিয়ে এসে বলল,
—–“আপাদত গোসল করে আমার এই শাড়িটা পড়।তোমার আঙ্কেলকে বলে তোমার জন্য জামা আনার ব্যবস্থা করব।”
সামিরা কাপড় হাতে নিল।ব্লাউজ দেখে বলল,
—-“এইটা আমার হবে?এইটা তো বড়।”
—-“উম্ম আচ্ছা চিন্তা করো না আমি ঠিক করে দিব।তুমি শাড়ি পড়তে পারো?”
—-“জ্বী পারি।”
—-“আচ্ছা তুমি পড়ে ফেলো আমি আসছি।”
—“আচ্ছা।”
বলেই রোমানা চলে গেল।আর সামিরা বাথরুমে গিয়ে গোসল করে পেটিকোট আর ব্লাউজ পড়ে নিল।তারপর রুমে এসে শাড়িটা পড়তে লাগল।

এইদিকে নাবিল ঘুম থেকে উঠে গেছে আজ।ঘুম থেকে উঠেই সামিরার কথা মনে পড়ল।তাই ভাবল গিয়ে দেখে আসুক সামিরাকে।আর ও ঘুম থেকে উঠেছে কি’না?তাই নাবিল সামিরার রুমে গেল।খাটে চোখ বুলালো কিন্তু সামিরা নেই।তার মানে উঠে পড়েছে তাই নাবিল সম্পূর্ণ রুমে ঢুকে পড়ল।চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বাথরুমের দরজার থেকে আরেকটু সামনেই সামিরাকে শাড়ি পড়তে দেখল।সামিরাকে এই অবস্থায় দেখে নাবিল স্তব্ধ হয়ে গেল।সে যেন সব ভূলেই গেছে।তাই সামিরার দিকে তাকিয়েই রইল।সামিরা শাড়ি পড়ে শাড়ির আঁচল উঠিয়ে যেই সামনে তাকালো ওমনি নাবিলকে দেখল।আর সাথে সাথে দিল এক চিৎকার। সামিরার চিৎকারে নাবিলের ধ্যান ফিরে।দ্রুত সামিরার মুখ চেপে ধরে।বলল,
—–“শুসস।এমন জোরে চিৎকার করার কি আছে?”
সামিরা নাবিলের হাত জোর করে ছাড়িয়ে বলল,
—–“আপনি কে?আর আপনি এতক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন তাই না?মানে আমাকে এমন অবস্থায় দেখে ফেলেছেন তাই না?বলুন জবাব দিন?”
—-“আরে আরে চিল্লাচ্ছ কেন?সত্যি বলছি আমি কিছুই দেখিনি।মাত্রই রুমে এসেছি আর তুমি আমাকে দেখেই চিল্লাচ্ছ।”
—–“সত্যি বলছেন তো?কিছু দেখেন নি তো?”
—-“সত্যি বলছি দেখিনি।”
—-“ওহ।কিন্তু আপনি কে?আপনাকে তো চিনলাম না?”
নাবিল খাটের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলিল,
—-“আমি নাবিল।এই বাড়ির এক মাত্র ছেলে।”
সামিরাও এগিয়ে এসে বলিল,
—-“ওহ তার মানে আঙ্কেল আর মামনির ছেলে?”
—-“হুম।”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here