#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ৬
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat
আয়াত দাঁড়িয়ে আছে একটা রেস্তোরাঁর সামনে। ভাবছে ভেতরে যাবে কি না। রেস্তোরাঁর নাম শুনেই বুঝে গিয়েছে যে এটা চৌধুরীদের রেস্তোরাঁ।
এইতোহ ৩০ মিনিট আগে আরনাবের কল দেওয়ার পর এক প্রকার দৌড়ে এসেছে আয়াত। কল তোহ দেয়নি দিয়েছে হুমকি।
৩০ মিনিট আগে
আয়াতের ফোন ভাজচ্ছে। আয়াত ধরবে কি ধরবে না দোটানায় আছে। এইসব ভাবতে ভাবতে কোথায় থেকে হায়াত আসলো আর ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে কল রিসিভ করলো
হায়াতঃ হ্যালো স্যার কেমন আছেন। আমি তোহ একদম টেস্টি আছি। তোহ কি মনে করে কল দিয়েছেন হুম।
আরনাবঃ ওহ মিষ্টি তুমি দেও তোমার বোনকে কল দেও।
হায়াতঃ আমার বোনকে দিয়ে কি করবেন।
আরনাবঃ দেখো হায়াত..
হায়াতঃ আরে স্যার দেখাদেখি পড়ে হবে তোহ আপনি আপনার যা কাজ তাতে মন দিন।
আয়াত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তা দেখে হায়াত দাত বের করে হেসে দিলো।😁
হায়াতঃশুনেন আরনাব স্যার আমার কাছে ম্যাজিক আছে তাই আমি সব জানি তোহ এতো না ভেবে আয়াতের সাথে কথা বলুন আমি গেলাম বাই।
হায়াত আয়াতকে ফোন দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আয়াতঃ নিশ্চুপ
আরনাবঃ হ্যালো আয়াত কয়টা বাজে তোমাকে কি বলেছি মনে নেই যলদি চলে আসো নয়তো আমি এসে তুলে নিয়ে কিডন্যাপ করে ফেলবো বলে দিলাম। ২৫ মিনিটের মধ্যে তুমি চৌধুরী রেস্তোরাঁয় চলে আসবা।
ফোন কেটে দিলো। আয়াত এক প্রকার দৌড় বোরকা পড়ে দিলো দৌড়।
★★
আয়াতকে বাহিরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একজন স্টাফ এসে ভেতরে যেতে বলল। আয়াত সাহস নিয়ে ভেতরে গেলো।
আয়াতঃ এমা পুরো রেস্তোরাঁ এমন ফাকা কেনো। সত্যি সত্যি কি আমাকে কিডন্যাপ করবে নাকি (ভাবছে আয়াত)
হঠাৎ কাদে কারো স্পর্শ পেয়ে ভয় পেয়ে যায় আয়াত মুহূর্তেই দূরে সরে পেছন ফিরে দেখে আরনাব দাঁড়িয়ে আছে।
তা দেখে আয়াতের কলিজা শুকিয়ে গেলো। আরনাব যদি ওকে মেরে এখানে কবর দিয়ে দেয় তখন। আরনাব স্যার এখানে কেনো আসতে বলল ভাবছে আয়াত।
আরনাবঃ বসো আয়াত।
আয়াতঃ জিইই।
আরনাবঃ বসো।
আয়াত ধপ করে পাশের চেয়ারে বসে পড়লো তা দেখে আরনাব মুচকি হাসলো। আয়াত ভয়ে একাকার।
১০মিনিট পর
১০ মিনিট ধরে আয়াত ৩ প্লেট ফুসকা খেয়ে ফেলেছে।
আয়াতঃ (আজ মনে হয় আমাকে ফুসকা খাইয়ে মেরেই ফেলবে সয়তান)স্যার আমায় কি কিছু বলবেন। সেই ৫ মিনিট ধরে বসে আছি। কিছু তোহ বলছেন না
আরনাবঃ তুমি তোমার ফুসকা শেষ করো। খুব তোহ ফুসকা খাওয়ার সখ। আর কি জেনো বলেছিলে ওই ছেলে কে তা যেনে আমি কি করবো তাই না।
আয়াতঃ ইয়ে মানে স্যার আসলে।
আরনাবঃ স্যার স্যার করবে না। আরনাব বলো।
আয়াত আরনাবের এমন ব্যবহার বিষম খেলো। আরনাব তারাতারি পানি এগিয়ে দিলো। একদম অস্থির হয়ে আছে আরনাব। মনে হচ্ছে কষ্ট আয়াতের না আরনাবের হচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর জেনি রেস্তোরাঁতে ডুকলো। আরনাব ও আয়াতকে পাশাপাশি দেখে প্রচুর রাগ হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। আয়াত ও আরনাব দাঁড়িয়ে গেলো।
জেনিঃ আরু বেবি (বলেই জড়িয়ে ধরতে নেয়
কিন্তু আরনাব মাঝে আয়াতকে টেনে নিয়ে আসে তাতে জেনি আয়তকে জড়িয়ে ধরে)
জেনি রেগে আয়াতকে ছেড়ে দেয়।
আরনাবঃআহা ননদ ভাবির কতো মিল। বাহ জেনি বোন তোর কি ভাবিকে অনেক পছন্দ হয়েছে নাকি.. (হেসে বলল)
আরনাবের কথায় জেনি ও আয়তা দুজনেই অবাক হলো।
জেনিঃ মানে।
আরনাব আয়াতের বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আয়াত অবাক হয়ে চেয়ে আছে।
আরনাবঃ মানে তোকে একজনের সাথে দেখা করাবো। আয়াত এ হলো তোমার আরেকটা ননদ। আমার ধর্মের বোন। আর জেনি এ হলো আমার হবু বউ আয়াত আহমেদ।ওকে আমি ভালোবাসি। তোর হবু ভাবি হয়( হেসে রাগী দৃষ্টিতে জেনির দিকে তাকালো)
আয়াত অবাকের শেষ পর্যায় চলে গেলো। বলে কি আমি নাকি হবু বউ। আয়াত একবার জেনির দিকে আরেকবার আরনাবের দিকে তাকাচ্ছে। জেনি কিছু না বলে আয়াতের দিকে রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে দৌড়ে চলে গেলো।
আয়াত জেনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আরনাবকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিলো।
আয়াতঃ কি ভাবেন নিজেকে স্যার হয়েছেন বলে কি কিছুই বলবো না। বুঝলাম জেনির সাথে আপনার ঝগড়া হয়েছে। জেনিকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এই ড্রামা করলেন। আচ্ছা এই ড্রামা করার জন্য কি আর কাউকে পেলেন না আমার সাথেই করতে হলো।
এই বলে চলে যাচ্ছিলো। আরনাব আয়াতের হাত ধরে ফেলে আয়াত ফেছন ফিরে না।
আরনবাঃ তুমি কি শুনতে পাওনি আমি জেনিকে কি বলেছি।
আয়াতঃ হ্যা শুনেছি বলেছেন আমি আপনার হবু বউ আমাকে আপনি ভালোবাসেন। বলে আবার হাটা দিয়ে কয়েককদম যেয়ে থেমে গেলো। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আরনাব হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াত নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরনাব তা দেখে হাসলো। আয়াত আস্তে আস্তে আরনাবের সামনে এসে দাড়ালো।
আয়াতঃ আমি আপনার হবু বউ। আপনি আমায় ভালোবাসেন এটা কি সত্যি বলেছেন(অবাক হয়ে)
আরনাবঃ আমি তোমায় ভালোবাসি আয়াত আহমেদ।
আয়াত নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। কি বলছে আরনাব সে আমায় ভালোবাসে।
আয়াতঃ স্যা..র আপনি আমায় ভালোবাসেন?
আরনাব বলা শুরু করলো
আরনাবঃ যেদিন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় ওইদিন আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম একটি মেয়ের দিকে যে কিনা অনেক গুলো বই নিয়ে নাচতে নাচতে ধপাস করে পড়ে যায়। তখনি দৌড়ে তার কাছে যাই আর দেখি সে তার চশমা খুজছে আর নিজের মতোই বকবক করছে। তাকে চশমা পড়িয়ে তার সাথে কথা বললাম। এরপর প্রায়ই তার সাথে ইচ্ছে করে তর্ক করা আরকি। সে পারেও বটে হাহাহা। তার প্রতিটি বলা শব্দ আমায় পাগল করে ছিলো। আমি তাকে সব সময় ফলো করতাম। তার ফুসকা নিয়ে মারামারি সবই আমার মনে গেথে গিয়েছিলো। আর সবচেয়ে সুন্দর লাগতো যখন তারা ৫ জন এক সাথে থাকতো। টিফিন টাইমে সবাই ক্যানটিনে থাকে বা ক্লাসে থাকে তারা সবাই মাঠের মাঝে বসে থাকে। আমি সব সময় তার আশেপাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তাকে বোঝার চেষ্টা করেছি। তাকে না দেখে থাকতে পারতাম না তাই তোহ রাত বিরাতে তাকে কল দিয়ে এটা সেটার বাহানা দিয়ে কথা বলতাম। তার জন্য আমার মনে এক অজানা_অনুভূতি জন্ম নেয়। সেই অনুভূতিটা কালকে উপলব্ধি করলাম যখন তার পাশে অন্য কাউকে দেখলাম। তাই অবশেষে একটা কথাই বলব ভালোবাসি তোমায় আয়াত আহমেদ। অনেক অনেক ভালোবাসি। (আরনাব পকেট থেকে রিং বের করে হাটু ঘিরে বসলো) হবে কি আমার রাজ্যের রানী। আমি তোমাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে চাই। আমি তোমাকে আমার পাশে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত চাই। উইল ইউ মেরি মি.
আয়াত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সে কি সপ্ন দেখছে নাকি। আয়াত আর কিছু না বলে হাত বাড়িয়ে দিলো।
আয়াতঃ হ্যা আমিও আপনাকে ভালোবাসি স্যার।
আরনাব ঃস্যার (রেগে)
আয়াত হেসে দিলো। আরনাব রিং পড়িয়ে দিলো। ওদের উপর গোলাপের পাপড়ি পড়ছে। দুজন দুজনের দিকে চেয়ে আছে।
তালির শব্দে ধ্যান ভাঙ্গলো। ওরা তাকিয়ে দেখলো হায়াত,আনিশা,অর্পা,আরহাম,ইভান,ইফাত,ইশান আসছে। হায়াত তালি দিচ্ছে।
আয়াত অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। হায়াত এসেই আয়াতকে জড়িয়ে ধরেছে। আরনাব অর্পার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো অর্পা হেসে দিলো মানে অর্পা সবাইকে বলে দিয়েছে আরনাবের প্ল্যান।
হায়াতঃ অবশেষে প্রেম করার সুযোগ হলো আপনার তাই না(কানে কানে বলল)
আয়াত হেসে দিলো।
আয়াত ওর ভাইদের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইশানঃ এইভাবে তাকিয়ে লাভ নেই প্রেমে যখন পড়েছিস। এখন আমাদের ট্রিট দে।
প্রিসাঃ ইশ আসছে ট্রিট নিতে। এই তুমি কেমন ভাই বলো তোহ বোন প্রেমে পড়েছে সেই জন্য বোনের কাছ থেকে ট্রিট নিচ্ছো। ছি ছি ছি।
ইশানঃ ঢং করে লাভ নেই সারা রাস্তা আমাকে বকতে বকতে নিয়ে আসছো যে আয়াতকে যেনো কিছু না বলি আর এখন পল্টি খাচ্ছো।বাহ বাহ বাহ
প্রিসা ভেংচে কেটে আয়াতের কাছে গেলো।
ইফাতঃ হ্যা বাসায় গিয়ে আমার জন্য তোর হাতের বিরিয়ানির রান্না করবি অনেক দিন ধরে খাইনা।
আনিশাঃ বিরিয়ানি তুমি একা খাবে কেনো।আমাদের জন্য রান্না করবি আজকে তোদের বাসায় থাকবো।
ইফাতঃ কেনো তোমার কি বাসা নাই নাকি।
আনিশাঃ না নাই ওইটা আমারই বাড়ি দুইদিন পর তোহ ওই বাড়িতেই থাকতে হবে।(বলে চুপ হয়ে গেলো মুখ ফসকে বলে ফেলেছে)
ইফাত হেসে দিলো।ইভান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আয়াত ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে।
অর্পাঃ একটা জিনিস দেখলাম আমার লাইফে যে বোন প্রেম করছে আর তার তিন ভাই সেটা জানে। আর তুমি কি এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবা ইভান তোমার বোনকে নতুন প্রেমে পড়ার শুভেচ্ছা জানাও।
ইভানঃ প্রেমে পড়ার শুভেচ্ছা কি জানাবো। আমি নিজেই একটা প্যারা নিয়ে আছি।সারাদিন খালি বকবক করে। এখনে তোহ এক প্রকার আমাকে টেনে নিয়ে আসছে। যাইহোক আয়াত বনু এই তোর ভাবি তোকে কিছু বলতে আমাকে মানা করেছে।সারা রাস্তা সে আমারে ভাষন দিয়েছে। (অর্পা ইভানকে একটা গুতা দিলো) তাই নতুন প্রেমে পড়ার শুভেচ্ছে।
সবাই হেসে দিলো। সবাই টেবিলে বসলো। হায়াতের পাশে আরহাম বসেছে।সবাই জোড়া জোড়া।
হায়াত গালে হাত দিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
আর সবার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই যার যার কাপল নিয়ে ব্যস্ত। আরহাম ফোন টিপছে।
হায়াতঃঅফফো মনে হচ্ছে কোনো কাপল সোতে আসছি।কাপলই কাপল আমি যে এইখানে একটা সিংগেল মানুষ আছি।তা কি তোমাদের চোখে পড়ে না। থাক পড়া লাগবে না আমি আইসক্রিম খাচ্ছি হুহহ। মিংগেলদের মাঝে আমি সিংগেল এক অবলা নারী হুহহ।
আরহাম হায়াতের কথা শুনে ফোন ছেড়ে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে কুটিকুটি। সবাই আরহামের দিকে চেয়ে আছে। অর্পা আর ইভান একে অপরের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো।
হায়াত অনেক গুলো আইসক্রিম অর্ডার দিয়ে খাচ্ছে।
আরনাবঃ আমার লাইফে প্রথম দেখলাম বাংলাদেশে যে তিন ভাই ও তাদের প্রিয়তমা। আমি আমার প্রিয়তমা। আমার বড় ভাই। আর একজন সিংগেল অবলা নারী এক সাথে বসে আছি।
সবাই হেসে দিলো। আর ওইদিকে হায়াত কারো কথা কান না দিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে
হায়াতঃ আপনাদের আইসক্রিম তোহ অনেক টেস্টি।(আরহামকে উদ্দেশ্য করে)
আরহামঃ তা তোহ হবেই করলা যখন মিস্টি জাতীয় কিছু খায় তখন তা টেস্টি হয়ে যায়।
হায়াতঃ আচ্ছা করলা আর মিস্টি এক সাথে মেশালে তা টেস্টি হয়ে যায়। তাহলে আপনি করলা আপনার বউ মিস্টি দুইজন মিলে হয়ে যাবেন টেস্টি। আহা কতো সুন্দর কবিতা। নিজেকে কবি কবি ভাব আসছে।
আরহাম আবার হেসে দিলো। সবাই খাচ্ছে কথা বলছে। পরিবেশটা খুবই সুন্দর। হঠাৎ সুন্দর পরিবেশে। তুফান এসে হাজির মানে জাটকা থুক্কু জেসিকা এসে হাজির। জেসিকা এসেই আরনাবের কলার চেপে ধরলো। আর আয়াত তা ছোটানোর চেষ্টা করছে আয়াতকে ধাক্কা দেয় আর আয়াত হায়াতের উপর পড়ে।
জেসিকাঃ তোর সাহস কি করে হয় এমনটা করার। আরনাব চৌধুরী।
আরহামঃ জেসিকা তুমি কি করছো এটা।
জেসিকাঃ দেখতে পাচ্ছো না কি করছি। তোমার ভাই আমার বোনকে কষ্ট দিয়েছে। আর সে এই নষ্টা মেয়ের সাথে বসে বসে ফুসকা খাচ্ছে।
আরনাবঃ জেসিকা নিজের মুখে লাগাম দেও।
উপস্থিত সবাই রেগে গিয়েছে। আয়াত হায়াতকে ধরে রেখেছে।যাতে হায়াত কিছু না করে।
আরহামঃ জেসিকা আরনাবের কলার ছাড়ো বলছি( জোড়ে)
জেসিকাঃ বাহ এখন আমায় জোর গলায় কথা শোনাচ্ছো তাই না। তোহ হঠাৎ এতো পরিবর্তন হলো কিভাবে। আগে তোহ এমন ছিলে না।
আরহামঃ আগে তুমিও এমন ছিলে না।জেসিকা এমন করছো কেনো
জেসিকাঃ দেখো আরহাম তোমার ভাই একটা ফালতু মেয়ের জন্য আমার বোনকে কষ্ট দিয়েছে। এই মেয়েই সেই মেয়ে না। তোকে তোহ আমি ছাড়বো না।
হায়াত টেনে আয়াতকে নিজে পাশে এনে সামনে দাড়ালো। আরহাম জেসিকাকে ধরে রেখেছি।হায়াত টেবিল থেকে আইসক্রিম এর বক্স হাতে নিয়ে সোজা জেসিকার মাথায় ঢেলে দিলো। সবাই স্বাভাবিক আছে।আরহাম অবাক হয়ে হালকা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আরহাম কিছু বলবে হায়াত ওইদিকে ভ্রুক্ষেপহী না করে বলা শুরু করলো।
হায়াতঃ আইসক্রিম দিয়ে মাথা ঠান্ডা করুন মিস জেসিকা। এতো তেজ ভালো নয়।এতে স্কিনের ক্ষতি হতে পারে। আর হ্যা কাকে নষ্টা মেয়ে ফালতু মেয়ে বলছেন। আমি চেনেন ওকে(আয়াতকে) কখনো কথা বলেছেন নাকি ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন ওকে।না চিনে আন্দাজে শুধু বলেই যাচ্ছেন। আপনার যেমন আপনার বোনের কষ্ট সহ্য হচ্ছে না তেমনি আমার বোনকে বলা আপনার প্রতিটা শব্দ সহ্য হচ্ছে না।(হালকা রেগে)
জেসিকাঃ চুপ নিজের এই ভাষন অন্য কাউকে শুনিয়ে দিস আমাকে না। আমি তোদের মতো মেয়েদের ভালো করেই চিনি যতসব লোভি। আর তুমি ছাড়ো আমায়(নিজেকে আরহামের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো) তোমার ভাইকে এর জন্য খুব পস্তাতে হবে। এই থার্ড ক্লাস মেয়েদেরকেও আমি দেখে নিবো। আর তুমি আমার কাছ থেকে দূরে থাকো আরহাম।
আরহামঃ জেসিকা তুমি কি বলছো।
জেসিকাঃ কি বলছি। এইরকম একটা লো ক্লাস মেয়ে আমার উপর আইসক্রিম ঢেলেছে আর তুমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছো।
ইভানঃ দেখুন আপনি কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছেন।আমার বোনদের লো ক্লাস বলার অধিকার কারো নেই।
ইশানঃ হ্যা কখন থেকে আপনার কথা শুনেই যাচ্ছি।
ইফাতঃ যা নয় তাই বলে যাচ্ছেন।
আরহাম দোটানায় পড়ে গেল কি করবে বুঝতে পারছে না। কি সঠিক আর কি বেঠিক তা ঠিক করতে পারছে না।
আরনাবঃ মিস জেসিকা বুঝতেছিনা আপনি কেনো তামাশা করছেন তাই আপনাকে জানিয়ে দেই। প্রথমত আমি আরনাব আপনাত বোনকে বোনের চোখেই দেখতাম। আসলে দেখতাম না এখনো দেখি সামনেও দেখবো। আর হ্যা আপনার বোনকে কষ্ট দেওয়ার কিছু হয়নি বরং আপনার বোন আমার আয়াতকে কষ্ট দিয়েছে কালকে রাতে সে আমার ফোন নিজের কাছে রেখে আয়াতকে যা নয় তাই বলেছে।আমার ফোনে অটো রেকর্ড হয়। রেকর্ডিং শুনেছি আমি চাইলে আপনিও শুনতে পারেন। আর হ্যা ফালতু মেয়ে নষ্ট মেয়ে কাকে বলছেন। সি ইজ মাই উড বি উয়াইফ তাই রেস্পেক্ট দিয়ে কথা বলুন নয়তো আমাদের থেক দূরে থাকুন। চলো আয়াত।
আরনাব আয়াতের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। ইশান, ইফাত, ইভানকে নিয়ে গেলো। আনিশা, প্রিসা,অর্পা দাঁড়িয়ে আছে।হায়াত হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আরহামঃ জেসিকা চলো বাসায়।(হাত ধরে)
জেসিকাঃ আমি বাসায় একা যেতে পারি তুমি বরং তোমার স্টুডেন্টদের নিয়েই থাকো।
জেসিকা হেটে চলে যাচ্ছে। আরহাম একবার হায়াতের দিকে তাকিয়ে জেসিকার পেছন পেছন যাচ্ছে।
★★
এরপর জেসিকা আর কোনো কিছুই করেনি। জেনির খবর পাওয়া যায়নি। জেসিকাও আরহামের সাথে সব নরমাল হয়ে গিয়েছে।জেসিকা নিজে এসে সবাইকে স্যরি বলেছে।
এভাবে দিনকাল যাচ্ছে। দেখতে দেখতে হায়াতদের টেস্ট পরিক্ষা এসে গেলো।
টেস্ট শেষ হওয়ার পর শুরু হলো নতুন কান্ড। অর্পা জেদ ধরেছে এখন ওর ১৮ বছর হয়েছে তাই ও বিয়ে করবে। সবাই অনেক বুঝিয়েছে এক্সাম এর পর কিন্তু মহারানী শুনতেই চাচ্ছে না। শেষ ফলে ওকে আরহাম বুঝিয়ে রাজি করালো।
এরপর সবাই পড়া নয়ে ব্যস্ত।সাথে আছে ইশান প্রিসা,আনিশা ইফাত, আরনবা আয়াত ইভান অর্পা ওদের প্রেম চলছে। আরহাম জেসিকার সাথেও প্রেম চলছে।
এইচএসসি আগে বিদায় অনুষ্ঠানের দিন হায়াতেরা কলেজে ছিলো। সেখানে আদনান গেস্ট ছিলো। অনুষ্ঠান শেষ এ আদনান হায়াতের কাছে এসে দুই চারটা কথা বলছে আর কিছু বলার আগেই ইভান হাজির । এই নিয়ে ইভান ও হায়াতের মাঝে ঝামেলা হয়।
অত:পর এইচএসসি এক্সাম শেষ হলো।
অর্পা ইভানের বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয়।
একদিন হায়াতরা ঘুরে বাসায় এসে অবাক। বাড়ির বাহিরে বড় বড় চারটা গাড়ি। ওদের বাড়ির মধ্যে এতো মানুষ দেখে আয়াত, হায়াত অবাক।
হায়াতঃ এতো মানুষ কেনো কি হয়েছে।
আয়াতঃ চল ভেতরে গিয়ে দেখি।
হায়াতরা ভেতরে যাওয়ার পর। ইশান হায়াতকে টেনে রুমে নিয়ে গেলো। হায়াতের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলো না শুধু বলল বের হবি না। আয়াতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইফাত ইশারায় ভেতরে যেতে বলল
আয়াতঃ আমাদের বাড়িতে এতো মানুষ কেনো।
হায়াতঃ আগে এটা বল আদনানের বাবা এখানে কি করছে।
আয়াতঃ মনে হয় ইভান ভাইয়ের জন্য আসছে।
হায়াতঃ ইভানের জন্য কেনো আসবে।
আয়াতঃ আরে ভুলে গেছিস। অর্পার ফুফাতো ভাই হয় আদনান।
হায়াতঃ অহ হ্যা তাই তোহ আদনান বলেছিলো অর্পা ওনার বোন।
এরপর সবাই চলে গেলো কেউ কিছুই বলল না।হায়াতরাও জোর দেয়নি।
আস্তে আস্তে বিয়ের দিন চলে এলো। ইভান হায়াতকে বলেছে ওর বিয়ের কোনো কাজে যেনো হায়াত না থাকে। আর হায়াতও বলেছে সে তার বান্ধুবির বিয়েত থাকবে।
এভাবে গায়ে হলুদ শেষ হলো। হায়াতকে জোর করে ইভানের হলুদে বসিয়ে হলুদ দিয়েছে ওর দাদী। একটাই কথা ঘরের কথা ঘরেই থাকবে লোকজনকে জানানোর দরকার নেই তাই আত্নীয়স্বজন আছে বাধ্য হয়ে হলুদ দিলো।
পরের দিন বিয়ে পড়ানো হবে। সবাই রেডি এমন সময় খবর ইভান মাইক হাতে একটা এনাউন্সমেন্ট করলো তাতে সবাই অবাক।
ইভানঃ আসসালামু আলাইকুম আজকে আমার বিয়ের সাথে সাথে আরহাম চৌধুরীরও বিয়ে হবে
সবাই অবাক বলছে কি আরহামের বিয়ে কার সাথে। সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
#অজানা_অনুভূতি
#বোনাস_পার্ট
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat
ইভানঃ আজকে আমার বিয়ের সাথে সাথে আরহাম চৌধুরীর বিয়ে হবে।
আরহাম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সবাই কানাঘুঁষা করছে। আরহামকে স্বাভাবিক দেখে আরনাব অবাক। অর্পার বিয়েতে আদনান এসেছে সেও অবাক। আদনান সবার বড় এরপর আরহাম এরপর আরনাব । জেসিকা এই কথা শুনে চুপচাপ চলে যায়।
আরহামের বাবা আরহামকে টেনে সাইডে নিয়ে গেলো
আরহামের বাবাঃ মানে কি আরহাম তুমি আজকে বিয়ে করবে কাকে আর আমাদের বললে না কেনো।
আরহামঃ নিশ্চুপ
আরহামের মাঃ আরহাম শুনতে পাওনি তোমার বাবা কি বলেছে।
আরহামঃ হ্যা আমি শুনেছি আর আমি আজই বিয়ে করবো।
আরনাব চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওর ভাইকে বোঝার চেষ্টা করছে। আদনান এসেও দাঁড়িয়ে আছে।
আরহামের দাদীঃ তোমার পছন্দ ছিলো জানতাম তাই বলে নিজের বোনের বিয়ের দিন বিয়ে করতে হবে এটা কেমন কথা
আদনানঃ আচ্ছা নানীমা থাকনা বাদ দিন।
আরহামের দাদীঃ তোমাকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তুমি এভাবে আমাদের মাঝে কি করছো।
আদনানের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
অর্পার বাবাঃ মা এসব পরে। আরহাম বিয়ে করবে কাকে সেটা নিয়ে ভাবুন।
আরহামঃ কিছুক্ষণ পর বউ আসবে অর্পার সাথে নিজেরাই দেখে নিয়েন।আর হ্যা আমার বিয়েতে কোনো রকম ঝামেলা চাই না।আমার বিয়ে না হলে অর্পার বিয়েও হবে না।
আরহাম চলে গেলো। সবাই চিন্তিত হয়ে আছে।
আরহামের দাদীঃ ছেলেটা দেশের বাহিরে পাঠিয়ে মোটেও ঠিক করিসনি। একজন অনেক নরম হয়েছে আরেকজন অনেক শক্ত। দুই ভাই ১৫ মিনিট এর ছোট বড় হয়ে আকাশ পাতাল তফাত। আমার কথা তোহ কেউ শোনোনি এবার বোঝ। চুপচাপ চল। আর আমার নাতী যা করে করুক।আমি আর এতে বাধা দিবো না। আগে বউ কে সেটা দেখি।
★★
কাজী এসে হাজির সবাই অপেক্ষা করছে আরহামের বউ জন্য কে সে।
বেশকিছুক্ষন পর অর্পা,আয়াত, আসছে ওদের সাথে ঘোমটা পরা একটি আসছে। আনিশ আর প্রিসা। বউ এর ড্রেস দেখে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে। ইফাত ও ইশান কিছুই বুঝতেছে না।
আরহামের পাশে বসানো হলো একজনকে। আয়াত ঘোমটা তুলে দিলো সবাই অবাক।
প্রিসাঃ হায়াত।
আনিশাঃ আরহাম স্যার এর সাথে হায়াতের বিয়ে কিভাবে সম্ভব।
ইশানঃ মানে কি হচ্ছেটা কি
ইফাতঃ আমিও তাই ভাবছি।
কাজীকে বলা হলো বিয়ে পড়ানোর কথা। হায়াতের চাচা চাচী আর দাদী ইভানকে নানান প্রশ্ন করছে। ইভান ওনাদের চুপ করিয়ে রেখেছে।
২ ঘন্টা আগে
এই তোহ ইভানরা অর্পাদের বাসায় আসার পর। ইভান অর্পা ও হায়াতকে একটা রুমে নিয়ে যায়।
ইভানঃ আরহাম তোকে আজকে একটা কাজ করতে হবে।
আরহামঃ সকাল থেকে তোহ কাজই করছি।
ইভানঃ আমি এখন মজার মুডে নেই আরহাম।(রাগী ভাবে)
অর্পাঃ ইভান কিছুক্ষণ পর আমাদের বিয়ে আর তুমি কি বলতে ডেকেছো পরেও তোহ বলা যাবে তাই না।
ইভানঃ না এখনই বলতে হবে।
হায়াত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ইভান একবার হায়াতের দিকে তাকালো।
ইভানঃ আরহাম তুই হায়াতকে আজ বিয়ে করবি।
আরহামঃ হহাহাহাহা কিযে বলছিস এখন কি মজা করার সময় নাকি।
ইভানঃ আমি মজা করছি না এখন আমার ও অর্পার বিয়ের সাথে তোর আর হায়াতের বিয়ে হবে এটাই শেষ কথা। তুই যদি হায়াতকে বিয়ে না করিস তাহলে অর্পাকে আমি বিয়ে করবো না।
আরহামঃ কিসব বলছিস ইভান। এটা তুই কি বলছিস। তুই তোহ অর্পাকে ভালোবাসিস তাহলে এটা কেনো। তুই কি মজা করছিস। দেখ এমন বিষয় এ ফাজলামি করা ঠিক না।
হায়াতের চোখে পানি টলমল করছে সবার আড়ালে পানিটা মুছে ফেলল। অর্পা রীতিমতো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।
ইভানঃ আমি কোনো ফাজলামির মুডে নেই। আর আমি যা বলেছি তাই হবে আজ বিয়ে হলে আমাদের চারজনের বিয়ে হবে নয়তো আমরা বাসায় চলে যাবো।
আরহামের রাগ মাথায় উঠে গিয়েছে। আরহাম রেগে ইভানের কলার ধরে ফেলল। ইভানও আরহামের কলার ধরে আছে।অর্পা ইভানকে আর হায়াত আরহামকে ধরে ছুটিয়েছে।
হায়াতঃ কি করছেন কি বাড়ি ভর্তি মানুষ আর আপনারা এভাবে। আপনাদের এভাবে দেখলে মানুষ কি বলবে।
আরহামঃ মানুষ কি বলবে তা জানার দরকার নেই আমার। আমি এক কথায় এই বিয়ে করতে পারবো না মানে পারবো না। কারন..
হায়াতঃ কারন আপনি জেসিকাকে ভালোবাসেন তাইতোহ।
আরহামঃ হ্যা আর তুমি এইভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো কেনো বোঝাও তোমার ভাইকে।
হায়াত ইভানের দিকে তাকালো
হায়াতঃ আপ..নি যদি আজ আমায় বিয়ে না করেন তাহলে অর্পারও আজ বিয়ে হবে না। সব সময় নিজের কথা ভাববেন না।একজনের জন্য সবাইকে কষ্ট দেওয়া টা বেমানান হয়ে যায়।(স্বাভাবিক ভাবে বলল)
আরহাম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে হায়াতের দিকে এরমানে হায়াত এই বিয়েতে রাজি কিন্তু কেনো ভাবছে আরহাম। আরহাম একবার অর্পার দিকে তাকালো।
অর্পা আরহামকে ধরে কান্না করছে। কান্না করতে করতে হেচকি উঠে গিয়েছে।আরহাম অর্পাকে সোফায় বসালো।
অর্পাঃ ভাই আমি ইভানকে ছাড়া বাচবো না।
আরহামঃ অর্পা বোন আমার কাদিস না। শান্ত হো আর বল আমি এই বিয়ে করলে কি তুই খুশি।তুইকি হায়াতকে আমার সাথে বিয়ে দিতে চাস। তুই যা বলবি তাই হবে( অর্পার কান্না সহ্য করতে পারছে না আরহাম। ওদের বংশের দুটি মেয়ে একটা আদনানের মা আরেকটা অর্পা সবার চোখের মনি তাই তোহ ইভানের সাথে বিয়ে দিতে অর্পার দাদীও মানা করেনি। সবাই অনেক ভালোবাসে অর্পাকে। আরহামের অনেক সখ ছিলো একটা বোনের আর ওরা অর্পাকে অনেক ভালোবাসে। তাই কি করবে আরহাম বুঝতে পারছে না)
অর্পা একবার হায়াত ও ইভানের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকালো মানে সে এই বিয়েতে রাজি।
অর্পার উত্তর এ আরহাম দাঁড়িয়ে ইভানকে বলল বিয়ে সব রেডি করতে। যেভাবে আছে ওইভাবেই বিয়েটা করবে। হায়াত নির্বাক হয়ে শুধু চেয়ে দেখছে। কারন তার যে কোনো উপায় নেই। অর্পাদের বাসায় আসার আগে ইভান হায়াতকে বলেছে সব। আর বলেছে যদি রাজি না হয় তাহলে আয়াতের আথে আরনাবের, ইশানের সাথে প্রিসার, ইফাতের সাথে আনিশার আর নিজের সাথে অর্পার বিয়ে হবে না। অনেক কষ্টে নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে হায়াত রাজি হয়েছে বিয়েতে। একটা কথাও বলেনি ইভানকে। আসলে বলার কিছুই নেই। জানে না সে কেনো তার ভাই এমন করছে তার তোহ কোনো দোষ নেই। কেনো ইভান তারা বাবা মাউএর মৃত্যুর কারন হায়াতকে দেয়। আর হায়াতও কেনো বলে না কিভাবে তার বাবা মা মারা গিয়েছে।
হায়াত ওয়াশরুমে গেলো। আরহাম বাহিরে চলে গেলো।
অর্পা ইভানকে একটা গুতা দিলো।
অর্পাঃ তোমার কারনে আমার কাজল নষ্ট হয়ে গেলো। কতো খরচ করে ৮ হাজার টাকা দিয়ে সেজেছি।
ইভানঃ সমস্যা নেই তোমাকে আমি টাকা ফেরত দিয়ে দিবো হু। বাসর ঘরে সব ফেরত দিবো।
অর্পাঃ আর আমার চোখে পানি সেটা কে দিবে। আমি তোহ বিদাইয়েও এতো কান্না করতাম হলে না যতটা কান্না তোমার এই প্ল্যানে করতে হচ্ছে।
ইভানঃ আস্তে বলো। আমার বোন ওয়াশরুমে আছে শুনতে পারে আমাদের করলাভাজি বানিয়ে ফেলবে।
অর্পাঃ ঠিক আছে চলো। আচ্ছা আমার এক্টিং টা সুন্দর ছিলো না।
ইভানঃ হ্যা অনেক সুন্দর।
ইভানেরা বের হয়ে অবাক।
অর্পাঃ আরহাম ভাই তুই।
আরহাম ওদের দিকে তাকিয়ে তারপর বলল
আরহামঃ আমার ফোনটা রেখে গিয়েছিলাম।
★★
হায়াত ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো আরহাম দাঁড়িয়ে আছে। হায়াত আরহামকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো। আরহাম হায়াতকে টেনে দেয়ালে আটকে ধরে।
আরহামঃ তুমি বিয়েতে না করলেও পারতে। আমি তোহ বাধ্য ছিলাম তুমি কেনো না করোনি।
হায়াত চুপচাপ আরহামের দিকে চেয়ে আছে। তার যে কিছুই বলার নেই। অনেক সময় কাছের মানুষদের খুশির জন্য নিজের খুশিকে বিসর্জন দিতে হয়। হায়াত আরহামকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়
হায়াতঃ সব কিছুর উত্তর থাকেনা মিস্টার আরহাম।
আরহাম হায়াতের দিকে চেয়ে আছে। আজকের হায়াত ও আগের হায়াতের মিল খুজে পাচ্ছে না আরহাম। পরক্ষনে কি ভেবে উত্তর দিলো
আরহামঃ তুমি জেসিকাকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন করছো না।দেখো জেসিকা তোহ তোমায় স্যরি বলেছে।
হায়াতঃ আজকে আমাদের বিয়ে। আজ থেকে ঠিক ছয় মাস পর আমাদের ডিভোর্স হবে। অর্পার জন্য হলেও বিয়েটা করে নিন। কারন আপনাদের ছেলেদের ডিভোর্সি হলে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু আমাদের সমাজ ডিভোর্সি মেয়েদের কি ভাবে তারাই ভালো জানে। আর হ্যা বিয়ে হবে আজই হবে আর ডিভোর্সও হবে। আর শুনুন এই ছয় মাস আমি আপনার স্ত্রি আপনি মানেন আর না মানেন। আজকের এই কথা জেনো আমাদের মাঝেই থাকে মিস্টার আরহাম।
আরহাম রেগে দেয়ালে ঘুষি মারে এতে হায়া হালকা ভয় পেলেও প্রকাশ করেনি।
আরহামঃ ঠিক আছে। বিয়ে হবে আজই হবে। এর ফল তোমাকে পোহাতে হবে আগামী ছয় মাসে।
হায়াত হাসলো তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে গেল কারন সে জানে আরহাম তার সাথে কতকিছুই করবে। যে বিয়ের আগে এত কিছু করতে পারে সে বিয়ের বিষয় নিয়ে কতো কি করবে। আরহাম হায়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে সব কিছু জেনো ধোয়াশার মধ্যে আছে।
কাজি বিয়ে পড়াচ্ছে। আদনান হায়াতকে দেখে বেশ অবাক হয়েছে। তার যেনো খুব খারাপ লাগছে। প্রথম প্রেমেই সে হেরে গেলো। চলে যাচ্ছে তার ভালোলাগার মানুষটি অন্যের হাত ধরে। আদনান নিজেকে সামলাতে না পেরে চলে গেলো।
আরহাম অবাক হলো যখন দেখলো ইভান বিয়ের কাগজ থেকে শুরু করে সব ঠিক করে আছে ওরা আসলো বসলো আর বিয়ে।কবুল বলে সাইন করে দিলেই কি বিয়ে হয়ে যায়। একে অপরের জীবনসঙ্গী হয়ে যায়।
হায়াত চুপচাপ বসে আছে। আয়াত হায়াতের ছবি তুলছে। ইশান ও ইফাত হায়াতের দিকেই চেয়ে আছে। ওদের খুব কষ্ট হচ্ছে। নিজের এতো আদরের বোনের বিয়েটা যে এভাবে হবে ভাবতে পারছে না। আয়াতকে বলা হয়েছে হায়াত নিজেই বিয়েতে রাজি তাই কেউ হায়াতকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করেনি কারন তারা জানে কিল ঘুষি ফেরত পাবে কিন্তু কারন পাবে না। আয়াত এসে বাকি সবাইকে বলল।
বিদায় হবার পালা অর্পার বিদায়।কিন্তু তার কান্না আসে না।কারন বিয়েটা যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হলো না মনে হচ্ছে সবাই শোক পালন করছে। অত:পর সবাই চলে যাচ্ছে। ইশান ও ইফাত তাদের বোনকে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না। হায়াতই মনে হয় প্রথম বধু যে নিজে বিয়ে করতে ছেলের বাড়িতে আসছে। তাও কফি কালারের লেহেঙ্গা পড়ে। যাওয়ার আগে ইভান একবার ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। এই হাসি বিজয়ের হাসি। হাসি দিয়ে অর্পার হাত শক্ত করে ধরলো। এই মেয়ে তাকে বুঝে তার কি দরকার না দরকার তাই তোহ তার একটা কথায় নাটক করতে রাজি হয়ে যায়। বড্ড বেশি ভালোবাসে অর্পাকে।অর্পা ইভানের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো। সেযে তার বোনের ভালোর জন্য এটা করেছে তা ভালো করেই জানে অর্পা। এক ডিলে ৫ পাখি মারা হলো।
হায়াতকে সোফায় বসানো হলো। নিজেকে কেমন একা একা লাগছে।সবাই হায়াতের দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।মেয়েদের নাকি আর কেউ থাক বা না থাক নিজের স্বামী সব সময় পাশে থাকে কিন্তু আরহামের কোনো খোজ নেই। আরহামের দাদী এসে সবার সামনে হায়াতকে সোনার বালা পরিয়ে দিল এতে সবাই অবাক। আরহামের মা ও চাচী মুচকি হাসলো কারন এর মানে আরহামের দাদী হায়াতকে মেনে নিয়েছে নাত বউ হিসেবে কিন্তু প্রকাশ করছে না। অর্পার ফ্রেন্ড হিসেবে সবাই চিনে সবাই পছন্দ করতো কিন্তু এই পছন্দ যে ছেলের বউ হিসেবে হবে ভাবতে পারেনি তারা। ওনারা ভেবেছিলো আয়াতকে আরহামের বউ হায়াতকে আরনাবের বউ করে আনবে। কিন্তু এখন তোহ উলটো হলো। তারপরও সবাই খুশি যে ভালো বউ পেয়েছে। দেশের মেয়েই বিয়ে করেছে আরহাম।
রাত ১২ টা
আরহাম এখনো রুমে আসেনি। হায়াত বিরক্ত হয়ে বসে আছে। ঠিক বসে আছে না নিজের ফোন দিয়ে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কয়েকশো ছবি তুলে আবার ডিলিট করে। ফুল ছবি তুলবে কিন্তু কোনো ক্যামেরা ম্যান নেই তাই আরনাব এর কাছ থেকে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড নিয়ে ডোরেমন দেখতে বসলো। কারন হায়াতকে বলেছে স্বামী না আসা পর্যন্ত ঘুমাতে না।
বেশ কিছুক্ষণ পর আরহাম আসলো। আরহাম এসে নিজে আলমারি থেকে ড্রেস বের করছে।
হায়াত ভ্রু কুচকে তাকালো। এরপর আরহামের কাছে গেলো
হায়াতঃ এতো দেরি হলো কেনো। আমি সেই কখন থেকে বসে আছি আপনার জন্য।
আরহামঃ আমি কি তোমায় বলেছি আমার জন্য অপেক্ষা করতে। তাহলে কেনো অপেক্ষা করছো। তোমার আর আমার মাঝে শুধু নামে মাত্র স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক।
এই বলে বাথরুমে চলে গেলো।হায়াত আলমারি থেকে আরহামের একটা শার্ট লেহেঙ্গার উপর কোনোরকম পড়েছে।
হায়াতঃ আমি কি তোমায় বলেছি আমার জন্য অপেক্ষা করতে। তাহলে কেনো অপেক্ষা করেছো। তোমার আর আমার মাঝে শুধু নামে মাত্র স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। হুহহ ঢং দেখলে বাচি না যেমন মনে হয় আমার স্মৃতিশক্তি দূর্বল যে বারবার এক কথা বলতে হবে।
আরহাম আসার আগে আগে শার্ট খুলে রেখে মেঝেতে বসে পড়লো। আরহাম ওয়াশরুন থেকে বের হয়ে হায়াতের দিকে একবার তাকিয়ে খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
হায়াত বসে বসে গান গাচ্ছে।
হায়াতঃ তুমি করলা আমি মিস্টি দুজনে মিলে হয়ে গেলাম টেস্টি। লালালালাল্লা লুলুলুলু। তুমি করলা আমি মিস্টি আজকে আমরা হয়ে গেলাম টেস্টি(হালকা জোরে জোরে চিল্লিয়ে গান গাচ্ছিলো)
আরহাম বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো।
আরহামঃ আচ্চাহ তুমি কি চুপ থাকতে পারো না আমায় ঘুমুতে দেও।
হায়াত এবার উঠে আরহামের কাছে গেল।
হায়াতঃ নীলবাবু থেকে ট্রান্সফার হওয়া বরবাবু আমার একটা কাজ করতে হবে তাহলেই আমি চুপ করবো।
আরহামঃ আর যদি না করি। (রেগে তাকালো)
হায়াতঃ তুমি করলা আমি মিস্টি দুজন মিলে হয়ে গেলাম টেস্টি ( আরহামের কানে জোড়ে বলল)
আরহামঃ কানে হাত দিয়ে আয়য়ায়া চুপ করো। কি চাও তুমি।
হায়াতঃ ক্যামেরাম্যান।
আরহামঃ মানে?
হায়াতঃ দেখুন নীলবাবু থেকে ট্রান্সফার হওয়া বরবাবু। আজকে আমার বিয়ে আর আমার বিয়ে নিয়ে কতশত সপ্ন ছিলো সব মাটি হয়েগেলো। ভেবেছিলাম। একটা নম্র ভদ্র, যে আমাকে ধমক দিবে না আমার কথা শুনবে আমাকে রাগ দেখাবে না তাকে বিয়ে করবো কিন্তু তা আর হলো কই তার উপর বিয়েতে কতো সুন্দর করে সাঝ দিবো বিয়ের লেহেঙ্গা পরবো। বাসর ঘরে বেলিফুল দিয়ে সাজানো থাকবে আরো কতো কি।
আরহামঃ সবই বুঝলাম ক্যামেরাম্যানকে দিয়ে কি করবা।
হায়াতঃ কি করবো আবার ছবি তুলবো৷ কাপল পিক তুলবো দেখুন বরবাবু আপনি মানেন আর না মানেন আপনার সাথে এখন আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তাই আগামী ৬ মাসে + আমার ফোনে কাপল পিক থাকবে। সবাইকে বলেছিলাম একবার বিয়েটা করি তারপর কাপল পিক কাকে বলে কতো প্রকার ও কি কি সব দেখিয়ে দিবো। তোহ এখন আপনি ক্যামেরাম্যান ডাকেন আর না ডাকলে আমি গান গাওয়া শুরু করলাম।
আরহাম মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। ভাবছে কি করবে। এই মেয়ের কি মাথার তার ছিরা নাকি স্ক্রু ডিলা। আজকে কতো ঝামেলার মধ্যে বিয়ে হলো আর সে আছে কাপল পিক নিয়ে। আরহাম রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওইদিকে জেসিকাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। জেসিকার বাড়িতে গিয়ে জানলাম জেসিকা নেই। অনেক খুজে না পেয়ে বাসায় এসে এমন ড্রামা কার ভালো লাগে। কিছু বলতেই পারছে না কারন ডিভোর্স তোহ হায়াত ছয়মাস পর দিবে কিন্তু এই ছয়মাস এই পাগল এর সাথে থাকতে হবে। আরহাম আরনাবকে ফোন করে আসতে বলল
।
কয়েকশত কাপল পিক তুলেছে হায়াত তারপরও আরো বাকি।নানান পোজে ছবি তুলল। আরহাম বাধ্য হয়ে ছবি তুলছে।
রাত ২ টা বাজে
হায়াত ফোন টিপতে টিপতে ঘুমিয়ে গিয়েছে। আরহাম কাউচে ঘুমিয়ে আছে।
পরের দিন সকালটা ওদের জন্য কি হবে জানা নেই কারো। এই সম্পর্কের কি নাম দিবে। আদৌ কি সবাই জানতে পারবে।কোন পরিস্থিতিতে ওরা বিয়ে করেছে।
চলবে
(