অন্যরকম ভালোবাসা, পর্ব:৯

0
988

#অন্যরকম_ভালোবাসা

#আফসানানীতু

#পর্ব_৯

মুশফিক সাহেব মাত্রই অফিস থেকে ফিরেছেন। তার থমথমে গম্ভীর চেহারা দেখে সাবিনা কী বলবেন বা আদৌ কিছু বলা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছেন না। খানিকক্ষণ স্বামীর আশেপাশে অযথাই ঘোরাফেরা করে শেষে নীরবতা ভেঙ্গে জিজ্ঞাসা করলেন,

-চা খাবে ?

-হুম খাবো , অন্তরা ফিরেছে ?

-হ্যাঁ , দুপুরে। এখন ঘরেই আছে।

– অন্তরার পিঁয়াজু খুব পছন্দ, তাই না ?

সাবিনা একটু অবাক হলেন , হঠাৎ পিঁয়াজুর প্রসঙ্গ আসলো কেন সেটা তার মাথায় খেলে না। তিনি বিস্মিত কণ্ঠে বললেন,
– হুম , কেনো ?

– তুমি এককাজ করো , কিছু পিঁয়াজু আর চা করে ছাদে নিয়ে এসো। তিনজন একসাথে বসে খাই। আর অন্তরাকে বল ওর সাথে আমার কথা আছে ও যেনো ছাদে আসে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

বলে তিনি উঠে টয়লেটে চলে গেলেন। স্বামীর কথায় সাবিনা মনে মনে একটু খুশীই হলেন। সেদিন মুশফিক সাহেব উনাকে বার বার নিষেধ করে দিয়েছিলেন অন্তরাকে যেনো তিনি এ ব্যাপারে কিছু না বলেন। এরপর দু’দিন পার হয়ে গেছে , মুশফিক সাহেব এ ব্যাপারে মেয়েকে বা তাকে কিছুই বলছেন না বলে তিনি খুব চিন্তিত ছিলেন। আজ সকালে স্বপ্ন এসেছিল খবর কী জানতে , উনি তাকে সন্তোষজনক কিছুই বলতে পারেননি বলে মনটা খারাপ ছিল। ভালই হলো! এখন সবাই একসাথে বসে আলাপ করলে ব্যাপারটার একটা কূলকিনারা করা যাবে।শুধু জেদী মেয়েটা বুঝলে হয়! তিনি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে অন্তরার ঘরের দিকে গেলেন।

অন্তরার রুমে ঢুকে দেখেন ও কার সাথে যেনো ভিডিও চ্যাট করছে , তাকে ঘরে ঢুকতে দেখেই ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলো অন্তরা। সাবিনা মনে মনে খানিকটা উচাটন অনুভব করেন, অন্তরা ওই ছেলেটার সাথে কথা বলছিল নাতো?

– অন্তু, তোকে তোর বাবা ডাকছে ছাদে।

– কেন আম্মা?

– তোর সাথে নাকি কি জরুরী কথা বলবে। তুই উপরে যা, আমি তোদের জন্য চা করে আনছি।

– আচ্ছা আম্মা , তুমি যাও আমি আসছি।

সাবিনা ঘর থেকে বের হতেই অন্তরা স্পন্দনকে তড়িঘড়ি আবারও কল দেয়।

– ভোদু , আম্মা এসেছিল ঘরে।

– তাই বলে ভয়ে কল কেটে দিবা! তার দিকে স্ক্রিন তাক করতে, আমি না হয় কষে একটা লম্বা সালাম দিয়ে দিতাম! আফটার অল হবু শাশুড়ি বলে কথা!

অন্তরা মুখ ঝামটা মেরে বলে,
– ফাজলামি বন্ধ করবা? শোনো, আম্মা বলে গেলো আব্বা নাকি আমার সঙ্গে কি সব জরুরী কথা বলবে তাই ডাকছে। তো পরে কথা বলি আচ্ছা ?

– হঠাৎ তোমার সঙ্গে জরুরি আলাপ করতে চাইল যে! আবার আমাদের ব্যাপারটা জেনে গেলো নাকি ?

– আরে নাহ্ ,আমরা প্রায়ই এমন ছাদে বসে সবাই আড্ডা দেই। আমার মনে হয়, ফাইনাল পরীক্ষার পর আব্বার সঙ্গে আর সেভাবে আলাপ হয়নি তাই হয়তো সামনে কি করব না করব সেই ব্যাপারে কথা বলবে। আচ্ছা শোনো, আমি তোমাকে পরে কল দিবোনে টা টা।

বলেই স্পন্দনকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল ডিসকানেক্ট করে উঠে পড়লো অন্তরা।

মুশফিক সাহেব দেখলেন অন্তরা হাসিমুখে ছাদে উঠে এসেছে। হালকা গোলাপি রঙের সালোয়ার-কামিজে তাকে অসম্ভব স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। হাস্যজ্জল অন্তরাকে দেখে মুশফিক সাহেবের ভেতরটা কেমন করে ওঠে, সত্যি …মেয়েটা কখন যে এত বড় হয়ে গেল তিনি টেরই পাননি!

– আব্বা ডেকেছো ?
আদুরে গলায় জানতে চায় অন্তরা।

– হুম! বস এখানটায়।

অন্তরা তার পাশে আদুরে বিড়াল ছানার মতন গুটিসুটি মেরে বসে পড়ে। তিনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত কন্ঠে বলেন,
– কেমন আছিসরে মা ? তোর ইন্টার্ণশীপ কেমন হচ্ছে? নিজেকে ডাক্তার ডাক্তার লাগে এখন?

– আর কই , আমরাতো এখনো বুয়া! স্যার ম্যাডামদের ফুট ফরমাশ খাটি। তবে যখন দেখি কোনো রুগী ভালো হয়ে হাসিমুখে বাড়ী ফিরছে তখন খুব ভালো লাগে আব্বা! সব কষ্ট তখন সার্থক মনে হয়।

– তাই !!

মুশফিক সাহেব স্মিত হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলান। তিনি আসলে বুঝতে পারছেন না মেয়েকে কীভাবে কথাগুলো বলবেন। ব্যক্তিগত জীবনে উনি খুবই রক্ষণশীল স্বভাবের। মেয়েকে স্নেহ করেন ঠিকই তবে এসব বিষয়ে এত খোলামেলা আলাপ কখনোই হয় নি , তাই ইতস্ততবোধ হচ্ছিলো। তবে এমনই এক সংবেদনশীল বিষয় এটা যে এখন এই বিষয়ে মেয়ের সঙ্গে কথা না বললেই নয়! তাই শেষে মনকে শক্ত করে সকল ইতস্ততা কাটিয়ে উঠে খোলামেলা মেয়েকে বলেই ফেললেন,
– মাগো, আমি তোমাকে কখনোই কোনো ব্যাপারে জোর করিনি। আমি নিজে হিসাব জগতের লোক তারপরও তুমি যখন ডাক্তারি পড়তে চাইলে আমি না বলিনি। শুধু চাওয়া একটাই ছিলো তুমি নিজের কেরিয়ারের ব্যাপারে আপোষহীন থাকবে, কারণ তুমি আমাদের একমাত্র মেয়ে।

– আব্বা, তুমি একটুও ভাববা না। আমি ক্যারিয়ারের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস!

– তাই যদি হবে তবে এগুলো কি একটু বোঝাও আমাকে।

বলে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ছবিগুলো বের করে টিটেবিলে এমনভাবে ছড়িয়ে রাখলেন যেনো অন্তরা ভালোমত সেগুলো দেখতে পায়।

ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে মুহূর্তেই অন্তরার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। ওর আর স্পন্দনের একসাথে তোলা কিছু ছবি…একটা ছবিতো একটু বেশীই অন্তরঙ্গ !!

কি বলবে ভেবে পায় না অন্তরা। এগুলো তার আব্বাকে কে দিলো মাথায় আসছে না অন্তরার। অন্তরা ভেবে রেখেছিলো যেহেতু ওর বাড়ী থেকে বিয়ের কোনো প্রেসার নেই আর স্পন্দনও কিছু করছে না তাই ওদের সম্পর্কের ব্যাপারে কিছুই এখন বাসায় জানাবে না। ওর ইন্টার্ণশীপ শেষ হতে হতে স্পন্দন ওর বাবার ব্যবসায় ঢুকে পড়বে, তখনই না হয় আস্তে ধীরে বলা যাবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে ব্যপারটা তারা জেনে যাবেন ভাবেনি অন্তরা। এসব ছবি কিভাবে পেল কিংবা কিভাবে জানলো তার থেকেও বড় সমস্যা এখন সে তার বাবাকে কি বলবে! ভেবে মুহূর্তেই ভেতরে ভেতরে ঘেমে অস্থির হয় অন্তরা।

মুশফিক সাহেব দেখলেন মেয়ে নীরবে বসে আছে। তারমানে ছবিগুলো কোন ফটোশপের কাজ নয়, ঘটনা সত্য। এই দু’দিন তিনি নানাভাবে স্পন্দনের বাড়ীর খোঁজ নিতে গিয়ে মনে মনে শুধু এটাই প্রার্থনা করছিলেন যেনো জিজ্ঞাসা করলে মেয়ে বলে যে ওরা শুধুই বন্ধু।

স্পন্দনের বাড়ীর অবস্থা খারাপ না। বাবার নিজস্ব ব্যবসা আছে , নিজেদের বাড়ী গাড়ী সবই আছে। তবে মনের ভেতর কিন্তুর কাটা গিয়ে আটকায় শুধু ছেলেটাকে নিয়েই। ছেলেটা ভালো ছাত্র, বুয়েট থেকে পাশ করেছে ….
সবই ঠিক ছিল, শুধু এতকিছুর পরও ছেলেটা ঘরে বসা। একটা মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার ছেলে কিছুই করে না, এ কেমন কথা !!! পাশ করে এক বছর ধরে ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে , বাবার ব্যবসার দেখাশোনা করা বা নিজে থেকে কিছুই করছে না! এমন একটা উড়নচন্ডী ছেলেকে কি করে তার অমন বুঝদার মেয়ে পছন্দ করলো তিনি ভেবে পাচ্ছেন না। সারাজীবন হিসেব মিলিয়ে চলা মুশফিক সাহেব আজ নিজের মেয়ের জীবনের হিসেবই মেলাতে পারছেন না। একটা অদ্ভুত রকমের অস্থিরতা তার বুকে পাথরের মতো চেপে বসে আছে।

মেয়েকে চুপ করে থাকতে দেখে তিনি থমথমে কন্ঠে বলেন,
– তোর কি কিছুই বলার নেই অন্তু?

– আব্বা ও স্পন্দন, আমাদের কলেজ এ্যারিয়াতেই ওদের বাসা। ও …খুব ভালো ছেলে আব্বা!

ভয়ে শঙ্কায় অন্তরার সব তালগোল পাকিয়ে যায়, সে এলোমেলোভাবে কি বলছে সে নিজেও জানে না। মুশফিক সাহেব মেয়ের প্রতিক্রিয়া দেখে চুপচাপ খানিকক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থাকেন তারপর মনে মনে ভাবেন, নাহ্! হুট করে রাগারাগি করাটা বোকামী হবে। অন্তরা ছেলেবেলা থেকেই খুব জেদি তাই খুব সাবধানে এগোতে হবে।

তিনি শান্তকণ্ঠে মেয়েকে বলেন,
-ঠিক আছে, তুই তাহলে ওকে পরশু আমার অফিসে আসতে বল। আমিও না হয় দেখি ,স্পন্দন কেমনতর ভালো ছেলে!

অন্তরা হতবিহ্বল মুখ করে বাবার মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। বিস্মিত অন্তরা বুঝতেই পারেনি তার বাবা এত সহজে ব্যাপারটা মেনে নেবেন। সে আনন্দে মুশফিক সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– থ্যাঙ্ক ইউ আব্বা , থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ… সো সো মাচ! শুধুমাত্র এই কারণেই তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয়!

মুশফিক সাহেব মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন ঠিকই তবে মনে মনে খুব চিন্তিত বোধ করলেন। তিনি বলতে পারছেন না স্পন্দনের সাথে তার সাক্ষাৎটা কতটা সুখকর হবে। তবে আশার কথা হল ছেলেটার রেজাল্ট ভালো! ছেলেটা যদি সত্যিই অন্তরাকে ভালোবেসে থাকে আর অন্তরা যদি তাদের জীবনের ব্যাপারে বাস্তবধর্মী ভাবনায় অটল থাকে তবে ছেলেটাকে গড়ে নেওয়া বোধহয় ততোটা কঠিন হবে না। কিন্তু ছেলেটা যে ইঞ্জিনিয়ার! সেকি তার মেয়ের এই ডাক্তারি পেশা মেনে নিতে পারবে? ভবিষ্যতে এ নিয়ে অযাচিত কোন সমস্যা হবে নাতো ওদের? মুশফিক সাহেব মেয়ের ভবিষ্যৎ ভাবনায় খুব শঙ্কিতবোধ করেন মনে মনে।

***

– কি করো গুটগুট?

– খেলা দেখি, যা মারদাঙ্গা অবস্থা তুমি না দেখলে বুঝবা না বিল্লু!

– আর মারদাঙ্গা! আসল স্টোরি তো আমার কাছে। আমরা তো ধরা খেয়ে গেছি।

– কী বলো !

– তাইলে আর বলি কি! কোন হতচ্ছাড়া যেনো তোমার আমার এত এত ছবি তুলে আব্বাকে পাঠিয়েছে। বলতে পারো আব্বার সামনে এখন আমাদের রিলেশন পুরাই খোলা কিতাব!

– তোমারে বাংলা সিনেমার দজ্জাল বাপের মতন আবার মাইর দেয় নাই তো? নাকি এই ভেবে খুশী যে, যাক্… আই বুড়ো মেয়েটা অবশেষে বিদায় হচ্ছে!

– এ্যাই আমি আইবুড়ো ? মাইর খাবা বুঝলা ? শোনো, আব্বা তোমাকে দেখতে চেয়েছে।

– ইন্না লিল্লাহ! খারাপ খবরটা এতক্ষণ পরে দিতেসো?

– হুমম , আব্বা তোমাকে পরশু তার অফিসে দেখা করতে বলেছে। ইস্, এখন কি হবে স্পন্দন ! বাবা যদি শেষমেষ বেঁকে বসে !?
শঙ্কায় অন্তরার গলা বুজে আসে।

– আরে ধুর ! ভয় পাও কেন ? উনি তো আর অবুঝ না।

– তুমি আব্বাকে চেনো না, উনি খুব জেদী স্বভাবের লোক!একবার যদি বেঁকে বসেন !!!

– ও , এইটা তাহলে তোমাদের জেনেটিক প্রবলেম?

– ধুর ! সব সময় মজা ভাল লাগে না স্পন্দন।

– শোনো অন্তু , অকারন ভয়ের কিছু নাই। আমি আছি তো… আছি না বল?

স্পন্দনের বলার ভঙ্গিতে এমন এক অভয়ের সুর ছিল যে মুহূর্তেই অন্তরার সব ভয় শঙ্কা কেটে যায়। এই মুহূর্তে ওকে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পুরুষ বলে মনে হয় অন্তরার।

***

স্বপ্ন শাহবাগে এসেছিল ওদের ক্লিনিকের নেক্সট সেমিনারের ডেকোরেশন অর্ডার দিতে। সব ঠিকমতো বুঝিয়ে দিয়ে গাড়ীতে উঠতে যাবে ঠিক এমন সময় রাস্তার ওপারে চোখ গেলো ওর। অনেকগুলো ছেলে রাস্তার পাশের চটপটির দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তাদের মধ্যে বসে থাকা একটা ছেলের উপর ওর চোখ আটকে যায়। কেউ বলে না দিলেও সে চিনতে পারে, ছেলেটা স্পন্দন। এ কয়দিনে ছবিতে ওই মুখটা ও এতবার দেখেছে যে ভুল হবার কোনো সম্ভবনাই নেই।

স্বপ্ন গাড়ীর দরজা বন্ধ করে রাস্তা পার হয়ে ওপারে চলে আসে। দেখা যখন হয়েই গেলো তখন একটু বোঝা পড়া না হয় করেই নেয়া যাক ভেগাবন্ডটার সাথে …. মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে স্বপ্ন।

– আপনি স্পন্দন ?

স্পন্দন তখন চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো বন্ধুদের সাথে। স্বপ্নের কথায় মুখ তুলে তাকায়। দেখে ধপ দুরস্ত পোশাকে সজ্জিত খুব ফর্সা একটা ছেলে থমথমে মুখে তাকিয়ে আছে ওরই দিকে। স্পন্দন তার স্মৃতি হাতরে কোথাও ছেলেটাকে খুঁজে পায়না তাই বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে,

– জ্বী , চেনেন আমাকে ?

– হুহ , আপনার মত লোভী বেকার ছেলেকে চিনতে আমার বয়েই গেছে!

ছেলেটার ঔদ্ধ্যত ব্যবহারে অবাক হয় স্পন্দন। তার বলার ভঙ্গিতে স্পন্দনের ফুরফুরে মেজাজটা বিগড়ে যায়। চেনা নেই পরিচয় নেই, এ কেমন ব্যবহার !!

– এক্সকিউজ মি , আর ইউ মেড !! পোশাকে তো ভদ্রলোকই মনে হয় তাহলে ব্যবহারের এমন সঙ্গিন হাল কেনো ? ভদ্রভাবে কথা বলুন।

-হুহ , আপনার মত একটা রাস্তার ছেলের কাছে আমার শিখতে হবে ভদ্রতা! শুনুন, যতই যাদুর ছড়ি ঘোরান… অন্তরা বাচ্চা মেয়ে তাই আপনার কথায় পোটতে পারে কিন্তু আমি স্বপ্ন মানুষ চিনতে ভুল করিনা।

– ওহ্ ,আপনিই তাহলে স্বপ্ন?

– চেনেন দেখছি।

– অন্তরার কাছে অনেক শুনেছি আপনার কথা। কিন্তু প্রশ্ন হল আপনি আমাকে চেনেন কীভাবে, আর আমার সম্পর্কে আপনার এত উচ্চ ধারণা পোষণের কারণই বা কী?

– শুধু আমি না , আপনাকে এখন অন্তরার বাবা মা সবাই চেনে। আপনার আসল চেহারা দেখিয়ে দিয়েছি সবাইকে। আর খুব শিগগির অন্তরাও হয়তো দেখতে পাবে আশা করি।

– আচ্ছা তো আপনিই সেই ব্যক্তি যে ছবিগুলো পাঠিয়েছে অন্তরার বাবাকে? ছিঃ, পুরুষ মানুষ হয়ে এমন পিঠে ছুড়ি মারতে আপনার লজ্জা করলো না!

স্পন্দনের কন্ঠের তিক্ততা একটুও ছুঁতে পারেনা স্বপ্নকে। সে আগের মতোই উদ্ধত কন্ঠে বলে,
– আপনার মত একটা রাস্তার ছেলেকে মারতে লজ্জা করবে না আমার কখনোই। এখন তো শুধু ছবি পাঠিয়েছি, অন্তরার পিছু না ছাড়লে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেবো। জানেন আমার হাত কত বড়? আমি আপনাদের মত রোডে আড্ডা দেয়া দুই টাকার ছেলে পেলে না !

স্পন্দনের সাথের ছেলেরা এতক্ষণ চুপচাপ স্বপ্নর কথা শুনছিল আর রাগে ফুঁসছিলো, শেষ কথাটা বলার সাথে সাথে সব কয়টা একসাথে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায় স্বপ্নকে মারবে বলে। তাই দেখে স্বপ্ন ভয়ে নিজের অজান্তেই দু’পা পিছিয়ে গেলো। কিন্তু স্পন্দন বন্ধুদের দিকে হাত তুলে তাদের ইশারায় নিষেধ করলো, তারপর স্বপ্নের খুব কাছে এসে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল,

– আপনার যা খুশী আপনি করতে পারেন মিস্টার স্বপ্ন। আমার ভয় ডর কম তবে রাগ খুব বেশি! তাই ভবিষ্যতে ভুলেও কখনো এমন আজেবাজে কথা বলতে আসবেন না । কারণ বার বার আমি একটা কাপুরুষকে ছেড়ে দিবো না। কথাটা মনে রাখবেন।

স্পন্দনের বলার ভঙ্গিতে এমন কিছু ছিলো যে স্বপ্ন আর কথা বাড়াবার সাহস পেলো না, তবে ভিতরে ভিতরে অন্ধ রাগে ফুঁসতে লাগলো।
সে স্পন্দন ও তার বন্ধুদের দিকে খানিকক্ষণ অগ্নি দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে তারপর কোনদিকে না তাকিয়ে অন্ধের মতো রাস্তা পার হয়ে গাড়ীর দিকে হন্তদন্ত পায়ে রওনা দেয়।

স্পন্দন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লোকটার চলে যাওয়া দেখছিলো আর ভাবছিলো ,পৃথিবীতে কত অদ্ভুত লোক আছে ! অন্তরা ওকে ভালোবাসেনা জেনেও অন্তরাকে পাবার জন্য পাগল কুকুর হয়ে গেছে লোকটা। এত শিক্ষিত লোক হয়েও এটা বোঝেনা যে কারো মনের উপর কখনো জোর চলে না। এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ স্পন্দন খেয়াল করলো, রাস্তার অপর পাশ থেকে একটা বাস তীব্র গতিতে ছুটে আসছে কিন্তু স্বপ্নের সেদিকে কোন খেয়াল নেই।

এক মুহূর্ত লাগলো স্পন্দনের ভাবতে , নাহ্ … লোকটাকে ডাক দিয়ে সরতে বলার সময় নেই হাতে, তাছাড়া ও ডাক দিলে শুনবে কিনা সেটাও কথা। আর ভাবার সময় নেই…দৌড়ে গিয়ে স্বপ্নকে লক্ষ্য করে ঝাঁপ দিলো স্পন্দন ……

চলবে …..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here