উপন্যাসের নাম-#আধখাওয়া_অষ্টভুজ
লেখনীতেঃউম্মে নাদিয়া তাবাসসুম
#পর্বঃ১
মাটি ছেয়ে শিমুল পড়ে আছে।স্নেহমাখা রোদ যেন আলতো হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ওদের গায়ে।কত নিষ্পাপ ওরা,তাইনা!
এক ঝাপ বৃষ্টিতে নাইয়ে এখন রোদের পরশে ঘুমিয়ে আছে।ঠিক যেন একটা আয়েশের ভাতঘুম দিচ্ছে!আনমনেই হাসতে থাকে ইন্তিকা।
-ওমা ইন্তু!এমন পাগলের মতো হাসছিস কেন?ভুতে ধরেছে নাকি রে!নাকি এই ভরদুপুরে পেত্নী চেপেছে ঘাড়ে?
-না না দেখ,কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে শিমুলগুলো।মাটিরাঙা করে রেখেছে পুরো,যেন মাটির উপর কেউ টকটকে লাল মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে দিয়েছে!কী সুন্দর!বল?
-ধুর!তোর খালি সবেতে বাড়াবাড়ি।শিমুলে এত কি দেখিস কে জানে,চল এবার ক্লাসে চল,দেরী হচ্ছে তো।
ক্লাসশেষে সারা টানতে টানতে ইন্তিকাকে নিয়ে এলো ক্যাম্পাসের বাইরে।
-এই ইন্তু!ঐ দেখ ছেলেটা কি বেশ না রে?
-কিহ ঐটা!ঐ ছাগলা দাড়িওয়ালা,হাসের ডিমের মতো চোখওয়ালা ঐ ছেলেটা?
-হ্যাঁ কি কিউট,বল বল বল?
-ইয়াক!থু থু থু….
দাড়া, এক্ষুনি সায়ান ভাইয়া কে একটা কল করি।
-ধুর ছাই!সায়ান,টায়ান কেন?মনের সুখে একটু ক্রাশ খাবো তার ও উপায় নেই,ধুর!
হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে ইন্তিকা।নব্য পাতা আসা মাধবীলতা গাছটার ছায়া এসে পড়েছে তার মুখে।রৌদ্রছায়ার খেলায় কি অপূর্ব লাগছে তাকে।স্নিগ্ধ বাতাস বইছে হালকা।বাতাসের ঝাপটায় সদ্য ফোটা কলিটা যখন লাগছে তার গালে দেখে মনে হচ্ছে যেন ইন্তিকার গালে কেউ ক্রিমসন ল্যাক আর স্কারলেট ল্যাক সাথে আবছা চাইনিজ হোয়াইট জলরং মিশিয়ে জীবন্ত মাধবীলতা এঁকে দিয়েছে।
ইন্তিকার আলাদা আলাদা করে কিছুর প্রেমে কেউ না পড়লেও তার ৩১ পাটি দাঁতের প্রেমে সবাই ধড়ফড় করে পড়বেই।কী সুন্দর,পিচ্চি পিচ্চি দাঁত।ঠিক যেন আদুরে ইঁদুরের দাঁত!আর সেই দাঁতের হাসিটা যে কতটা ভয়ংকর সুন্দর হতে পারে তা ইন্তিকাকে না দেখলে বিশ্বাস হবেনা।
সারা বিদায় নিয়ে রিকশায় উঠে সায়ানকে একটা কল দিল।সায়ান জোরে জোরে বলছে, “আহা,তুমি রিকশাওয়ালা মামাকে ফোনটা দাও না।”
সারা বাধ্য হয়ে দিলো।ফোনের ওপাশ থেকে শোনা যায়,”মামা,একটু সাবধানে একটু আস্তে চালাবেন হ্যাঁ?কোনো তাড়াহুড়ো করবেন না,সারা বললেও না।ঠিক আছে, মামা?”
সায়ানের কথা আবছা হতে থাকে,রিকশা ইন্তিকা থেকে অনেক দূরেই চলে গেছে।সায়ানের স্বর আবছা আবছা কানে লাগে বেশ বোঝা যায় না,ঢাকা শহরের কোলাহল যেন সব কিছুকেই আবছা করে দেয়..
ইন্তিকার এই ৩১ টা দাঁত তারও ভিষণ পছন্দের।পছন্দ না ঠিক যেন পাগলামি।রোজ নিয়মকরে গুণে আর দেখে সেই ৩১ টা দাঁত তার।তাহলে মানুষ কেন বলে, এক চড়ে তোর ৩২ টা দাঁত ফেলে দেবো?
ঐ যে সেদিন ঐ বদ রাফি বলেছিল,”এই যে ইন্তিকা না পুস্তিকা?এক থাপ্পড়ে তোর ৩২ টা দাঁত ফেলে দেবো।”
বদ রাফি ওকে এভাবেই ডাকে।
তখন ইন্তুর সে কি হাসি।পারলে ফেল ফেল!
আমার তো ৩১ টা দাঁত হাহাহা,এই দেখ ইইইই।
বিশ্বাস না হলে গুণে দেখ গাধা!
তখন রাফির চেহেরাটা যা হয়েছিল তা দেখার মতো ছিলো।
ইন্তিকা কোনো মতে হাসি চেপে ছিলো।রাফি চলে যেতেই পুরো ক্লাসে হো হো করে হাসির রোল পড়ে গেল।এরপর আর রাফি কে ইন্তিকার আশেপাশে কেউ দেখেনি।
বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে হাক দিল,রামিসা!রামিসা!
-বুবু তুমি চলে আসলে!কিছু আনলে না আমার জন্যে?
-অ্যাহ কিছু আনলে না!রোজ রোজ তোর জন্য কিছু আনতেই হবে নাকি রে?
রামিসা হপ করে গালফুলিয়ে দাড়িয়ে রইল।
“এই নে গালফোলানো বুড়ি আমার,তোর প্রিয় ফুচকা।সুন্দর করে পরিবেশন কর, আমি আসছি।”
রামিসা লাফাতে লাফাতে রান্নাঘরে গেল।একটা বাটিতে টক নিল,আর ফুচকাগুলো পুড় দিয়ে ভরিয়ে নিল তার উপর শসা,ডিম ঘষে দিল আর আলাদা করে কাঁচামরিচ কুঁচি করে রাখলো।
বুবু তো পোড়া মরিচ গুঁড়োও খেতে পছন্দ করে সাথে, রামিসা শুকনো মরিচ ভেজে তারপর গুঁড়ো করে একটা বাটিতে নিয়ে রাখলো।আর গুণগুণ করে গান ধরলো,
আহা মরি মরি চলিতে চলিতে
বাজায় কাঁকন পড়নে নীলাম্বরী…
গানের গলাটা মারাত্মক সুন্দর রামিসার।রসালো পাকা আমের ভেতর যদি মধু থাকতো আমটা ফালি করলে মিষ্টান্ন যেমন চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ত তেমন মিষ্টি গলা রামিসার।কথা বললেই যেন মন চাই আকাশের চাঁদ টা তুলে এনে দিই তাকে।এত মিষ্টি করে,আহ্লাদ করে কথা বোধ হয় এই ধরার আর কেউ বলতে পারেনা।প্রকৃতি যেন তার সব মিষ্টান্ন তার কন্ঠে ঢেলে দিয়েছে।
ভেতর থেকে ইন্তিকা এসেই বলল,ওরে আমার বাচ্চাটা তো কত কাজের হয়েছে রে!এত সব কি করে করলি?এত গুছিয়ে কাজ তো আমিও করতে পারি না রে,মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ!
খুব সুন্দর হয়েছে রে।
-ফুচকা চ্যালেন্জ করবে বুবু?কে কত তাড়াতাড়ি খেতে পারে?
-চ্যালেন্জ!তুই তো এমনিই হারবি রে, যা শুটকি তুই..আর খেতে তো তোর ২০ ঘন্টায় লেগে যায়,বলেই একটা বস বস ভাব নিল ইন্তিকা।
-হুহ, দেখা যাবে কে জেতে!আসলে হার-জিতে কি,মজাটাই তো আসল তাই না বলো?
ঐ যে প্রতিযোগিতার সময় যেমন টিচাররা বলে,হার-জিতে কি অংশগ্রহণই তো বড় কথা।
রামিসার কথা শুনে ইন্তিকা হাসতে হাসতে যেন এখনই লুটোপুটি খাবে মেঝেতে।
দুই বোন হাসতে হাসতে পাগল প্রায়।
-এই নে তোর ৫০ টা আমার ৫০ টা,মোট ১০০ টা এনেছি তুই যা রাক্ষস, তাই বেশি করেই এনেছি।
গপাগপ খাওয়া চলছে।ইন্তিকা চার/পাঁচটা মুখে দিয়েই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে রামিসার দিকে।তার চোখ ভিজে আসে,আম্মুর ঐ পুচকে মেয়েটা আজ কত বড় হয়ে গেছে আম্মু যদি দেখতো!আম্মুর রামি মা টা আজ রাধতেও পারে।ডানপিটে হয়নি একদম লক্ষীটি হয়েছে।
-ফিনিশ!ইয়ে!আমি জিতে গেছি বুবু,রামিসা চিল্লাতে থাকে।
চলবে…