ইংলিশ টিচার পর্ব ১৬

পর্ব -১৬
ইংলিশ টিচার
©Sumana Haque

শুভ মিলিকে খুব ভালো করে চিনে তাই শুভ বুঝতে পারছে আজ মিলি তাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে, কিন্তু রাজি না হয়েও উপায় নাই কারণ মিলির সাথে কথা বলা খুব জরুরি।

শুভ মিলিকে বলে,
-আমি রাজি, বলো কি করতে হবে??
-বাচ্চাদের একটু বিনোদন দিতে হবে।
-কিভাবে?
-কিভাবে মানে নেচে।
-নেচে মানে আমি তো এসব পারিনা। প্লিজ মিলি পাগলামি করবেনা।
-তাহলে বাসায় গেলাম।
-না,ওকে আমি নাচবো কিন্তু হাসবেনা।
-বাচ্চাদের বিনোদন দিবেন,তাই হাসতেই হবে।
-আচ্ছা ওকে।
মিলি গান সিলেক্ট করে দিবো, গান বাজতে শুরু করেছে দিলবার দিলবার হু দিলবার দিলবার,,
শুভ বেচারা সময় নষ্ট করবেনা বলে গানেই নাচা শুরু করলো আর বাচ্চাগুলো হাহাহা করে হাসতে লাগলো।

মিলি যা চাচ্ছিল তা তো শুভ করে দিলো এখন মিলির কথা রাখার পালা।
শুভ রিকশা ভাড়া করলো ১ ঘন্টার জন্য আর রিকশা।
মিলি প্রথমে রিকশাতে উঠলো আর তারপর শুভ উঠলো।
রিকশা একটু সামনে আগাতেই মিলি তার চুল গুলো ছেড়ে দিলো। চুল গুলা এবার বাতাসে উড়ছে, শুভর মুখে গিয়ে বারবার চুল গুলো পরছে। মিলি যদিও সরিয়ে নিতে চাচ্ছে কিন্তু কাজ হচ্ছেনা।

মিলি অনেকটা রেগে শুভকে বলে,
-আচ্ছা এভাবে বসিয়ে রাখতে আপনি আমাকে এনেছেন???
-না,বলবো তো।অবশ্যই বলবো, আমাকে বলতে তো হবেই।
-তো বলেন না কেন???
-আচ্ছা বলছি। মিলি কি শ্যাম্পু ইউজ করেছো ? আগে তো এটা করতে না।

-অহ আপনি এইটা জানার জন্য আমাকে এনেছেন এখানে।বাহ বাহ!!

-আরে বলছি তো একটু সময় দাও,কথা গুলো ভেতরে সাজিয়ে নিচ্ছি।আচ্ছা আই এম সরি,সেদিন তোমার সাথে এমন কথা আমার ঠিক হয়নি।সত্যি বলছি তুমি যখন পরীক্ষা দিচ্ছিলে, তখন দেখা করতে আসছিলাম সরি বলার জন্য কিন্তু আমার ইগোর জন্য বলতে পারিনি।

তারপর রেজাল্ট এর দিন সকালেই তোমার বাসায় যাবো ভেবেছি, কলেজ থেকে তোমাদের বাসায় যায় কিন্তু গিয়ে জানতে পারি তোমরা আর সেখানে থাকো না।আব্বু যে মারা গেছেন তাও সেদিন জানতে পারছি।আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি।

তুমি যেদিন চলে আসছিলা সেদিন তোমাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু খুঁজে পায়নি। আমি আমাদের সেই রুমটাতে সেদিন থেকে আর থাকিনা কারণ সেখানে গেলেই আমি তোমাকে অনেক মিস করি।প্লিজ মিলি মাফ করে দাও।

-কত সহজ বলা সবকিছু কিন্তু সবকিছু মেনে নেওয়া কি এত সহজ?
নিশ্চয় নয়।

আর কিছুদিন পর আমি ডাক্তার হয়ে যাবো। কে বলতে পারে এই যোগ্যতার জন্য হয়তো আমাকে মেনে নিয়েছেন।
আর সবচেয়ে বড় কথা ৪ বছর অনেকটা সময় এই ৪ বছর আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি।

সেই রাতের পর নিজেকে এই অবস্থানে নিয়ে আসতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, তবে একজনের কথা শুনে শুনে আমি অনেক মোটিভেশন পেয়েছি।

আর মজার ব্যাপার হলো এই একজন আয়মান সাদিক বা সুলেমান সুখন না এই একজন হলেন আপনি।
আপনি আমাকে এত্ত পরিমাণের অপমান করেছেন আমি শুধু সেগুলো মনে করেছি, আজ দেখুন আমার অবস্থান কোথায়।

শুভ আপনি চাইলে আয়মান সাদিক কিংবা সুলেমান সুখনের মতো মোটিভেশন দেওয়া পেশা হিসেবে নিতে পারেন তবে তারা মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আপনি না হয় তিতা তিতা কথা বলবেন।

-প্লিজ মিলি ফিরে চলো, বিয়ে করোনা প্লিজ।

-আমার বিয়ে? আপনি কিভাবে জানলেন?

-প্রতিরাতে তোমার আইডি চেক করতাম কখন এক্টিভ করো তার অপেক্ষায় থাকতাম, এই এক আইডি ছাড়া আর কোনো যোগাযোগব্যবস্থা ছিলো না তাই।একদিন তোমার একটা পোস্ট দেখলাম আর সেখানে তুমি বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলে।

-বাহ বাহ! কত বুদ্ধিমান। এত্ত বুদ্ধি মাথায় তাহলে এটা বুঝেন না এই লাস্ট মোমেন্টে এসে বিয়ে না করলে কি হবে।আর আমি বিয়ে না করবোই বা কেন?
একজন স্বার্থপর মানুষের কথা ভেবে আরেকজন ভালো মানুষকে ঠকানোর কোনো ইচ্ছে নাই।

সো প্লিজ এসব আজগুবি চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন।
মিলি বিয়ের কার্ড একটা ব্যাগ থেকে নিয়ে শুভকে দেয় আর বলে সেদিন যেন অবশ্যই শুভ আসে।
তারপর মিলি আর ১ মিনিট সময় ও রিকশায় থাকেনা।

শুভ কার্ড টা পকেটে ঢুকিয়ে তার শার্টের হাতা দিয়ে চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পরা পানিগুলো মুছে।
সেদিন বাসায় গিয়ে শুভ লাইট অফ করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।শুভর মা অনেকবার ডাক দেয় খেয়ে যেতে কিন্তু শুভ আসেনি।

আজ শুক্রবার আর আজ মিলির বিয়ে। কোনো স্বামী নিশ্চয় তার স্ত্রীর আরেক টা বিয়ে হতে দেখতে পারেনা।
শুভ ও পারছেনা।
শুভ সারারাত ঘুমাতে পারেনি তাই চোখ কেমন লাল হয়ে আছে।
শুভর মা দেখে তো ভয় পেয়ে প্রশ্ন করে বসে,
-তুই নেশা করেছিস?বাবা এইটা তুই কি করলি?
-আরে মা কিসব বলো। না এমন কিছুনা।সারারাত মাথাব্যথায় ঘুমাতে পারেনি তাই হয়তো দেখতে এমন লাগছে।
আচ্ছা মা খাবার রেডি করো আমাকে আবার বের হতে হবে।
-যাবি কোথায়?
-আজ মিলির বিয়ে ডিভোর্স পেপার এরসাথে কিছু তো গিফট দিতে হবে তাইনা।
-শুভ বাবা এসব তুই কি বলছিস।
-হ্যাঁ মা ঠিকি বলছি।
শুভ খাবার খেয়ে বের হয়ে ফুলের দোকানে গেলো, সেখান থেকে ৪ টা গোলাপ নিলো।
গোলাপ এক হাতে আর অন্য হাতে ডিভোর্স পেপার নিয়ে শুভ কমিউনিটি সেন্টারে গেলো।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here