“ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤ পর্ব_১১

0
390

#ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_১১
.
🌸
.
ডান হাতে ব্যান্ডেজ করা অজ্ঞান অবস্থায় প্রকাশ বিছানায় শুয়ে রয়েছে আর ডক্টর চেক আপ করছে,,দুরে দাঁড়িয়ে ইশারা বার বার চোখের জল মুছছে আর ডক্টরের পাশে রাতুল চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,

প্রকাশ যখন হাতের শিরায় কাঁচের টুকরো দিয়ে টান দিয়েছিল তখন গলগল করে রক্ত পরতে শুরু করে আর সেই রক্ত দেখে ইশারা কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় কিন্তু প্রকাশ যখন পরে যায় তখনই ইশারার হুশ আসে,,আর ইশারা ছুটে প্রকাশের কাছে এগিয়ে যায় আর প্রকাশ কে ধাক্কা দিতে থাকে,,,ইশারার তো কাওকে ডাকার মতো ও ক্ষমতা নেই অনেক রক্ত বের হচ্ছে দেখে ইশারা সঙ্গে সঙ্গে একটা কাপড়ের টুকরো জোগার করে ক্ষত স্থানে বেঁধে দেয় আর দৌঁড়ে নীচে চলে যায়,,,ভাগ্যবশত সেখানে রাতুল কে দেখতে পেয়েই রাতুলের হাত ধরে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে আসে,,,প্রকাশ কে এই অবস্থায় দেখে রাতুল ও অবাক হয়ে যায়,,প্রকাশের হাতের কাপড় টাও রক্তে ভিজে যাচ্ছে,,রাতুল তারাতারি প্রকাশ কে তুলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ডক্টর কে ফোন করে আর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে রীতিমতো,,

প্রকাশ কে চেক করা শেষ হলে ডক্টর বললো ইশারা কে বললো

ডক্টর: আপনি ওনার ওয়াইফ??

ইশারা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো

ডক্টর: কি করে হলো এই অবস্থা অনেক রক্ত ঝরেছে,,

ইশারা: নিশ্চুপ

ডক্টর: বললেন না তো?

রাতুল: অ্যাকচুয়লী ডক্টর ইশারা বৌদি কথা বলতে পারে না তাই কিছু বলছে না,,

ডক্টর একটু অবাক হলো কারণ এতো বড়ো বিসনেস ম্যানের ছেলে যার নিজের ও অনেক পয়সা বাবার টাকায় চলে না তার স্ত্রী কথা বলতে পারে না?? এসব চিন্তা বাদ দিয়ে ডক্টর বললো

ডক্টর: ওহ আ’ম সরি,,আসলে পেশেন্টর অনেক ব্লাড লস হয়েছে কিন্তু কাপড় বেঁধে দেওয়ায় বাঁচোয়া নাহলে হসপিটালে এডমিট করতে হতো ব্লাডের জন্য,,উনি একটু উইক এখন বেশি উত্তেজিত হতে দেবেন না রেস্ট নিতে বলবেন আর পেইন হতে পারে তাই এই কয়েকটা মেডিসিন লিখে দিলাম এগুলো দিয়ে দেবেন,,

রাতুল: শিরা কাটেনি তো ডক্টর??

ডক্টর: নাহ জাস্ট চোট পরেছে আর কাঁচ দিয়ে কাটায় রক্তক্ষরণ বেশি হয়েছে কিন্তু আরেকটু গভীর হলেই শিরা কেটে যেতো,,জ্ঞান আরেকটু পরেই ফিরে আসবে,,এই নিন এগুলো টাইমে দিয়ে দেবেন (প্রেসক্রিপশন দিয়ে)

রাতুল: চলুন আমি এগিয়ে দিচ্ছি,,আমাদের ড্রাইভার আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে,,

রাতুল ডক্টর কে নিয়ে বেরিয়ে গেলে ইশারা আস্তে আস্তে প্রকাশের পাশে গিয়ে বসে চোখের জল ফেলতে থাকে আর প্রকাশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবে

ইশারা: আজ আমার জন্য আপনার এই অবস্থা প্রকাশ,,বিশ্বাস করুন আমি চাইনি আপনাকে আঘাত করতে,,চাইনি আমি,,এই কয়েকদিন আপনার থেকে দূরে থেকে আমিও ভালো ছিলাম না প্রত্যেক মুহুর্তে আপনার কথা মনে পড়ত আমার,,আপনার যত্ন ভালোবাসা সব মনে পড়ত কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম বিশ্বাস করুন (ইশারা চোখ বুজে কাঁদতে লাগলো)

ইশারা যেহেতু প্রকাশের দিকে ঝুঁকে ছিলো তাই ইশারার চোখের জল গুলো প্রকাশের গলায় পড়ছিল চিবুকে পড়ছিল আর আস্তে আস্তে সে সময় প্রকাশের জ্ঞান ও ফিরছিল,,,প্রকাশ যখন পুরোপুরি চোখ খুলে নিজের কাছে ইশারা কে দেখলো তখন প্রথমে খুশি হলেও পরক্ষণে ইশারার চলে যাওয়ার কথা শুনে রাগ টা জেঁকে বসলো আর প্রকাশ মুখ অন্য পাশে ফিরযে বললো,,

প্রকাশ: চলে যান আমার চোখের সামনের থেকে,,

প্রকাশের কথায় ইশারা চোখ খুললো প্রকাশের জ্ঞান ফিরেছে এই দেখে ইশারার মুখে হাসি ফুটে উঠলো কিন্তু প্রকাশের কথা টা কানে গেলো না সেই আনন্দে,,তাই প্রকাশের মাথায় হাত দিতে গেলেই প্রকাশ বাম হাত দিয়ে ইশারার হাত টা ধরে নেয় আর বলে,,

প্রকাশ: আমি তো বললাম আমার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে,,কথা কানে যায় না?? আমি তো জানতাম আপনি কানে শুনতে পান,,

ইশারা: এরমভাবে কেনো বলছেন প্রকাশ (ইশারা)

প্রকাশ: প্লিজ,,প্লিজ চলে যান আপনি আমার সামনে থেকে আপনাকে দেখলেই আমার জীবনের প্রথম ভুলের কথা মনে পরে যায়,,,আপনাকে ভালোবেসে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল করেছি,,আপনি আমার সামনে থেকে যান নাহলে আমি আবার কিছু একটা করে বসবো,,

ইশারা আর কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো দৌঁড়ে আর প্রকাশ বিছানায় মাথা ঠেকিয়ে নিজে নিজে বলতে থাকলো

প্রকাশ: এতো ভালোবাসলাম তোমাকে তারপরেও তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে কেনো ইশারা?? আমাকে কি সত্যি ভালোবাসা যায় না?? এখন থেকে তুমি যা চাইবে সেটাই হবে আমি আর তোমার কাছে ভালোবাসার কথা বলবো না কোনো অধিকার ও খাটাবো না,,কিন্তু আমি চাইলেও তোমাকে না ভালোবেসে থাকতে পারবো না সেটা আমার পক্ষে অসম্ভব,,

প্রকাশের চোখের কোণা দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে আর চোখের সামনে শুধু ইশারার মুখটা ভেসে উঠছে,,সে সময় দরজায় নক করলো রাতুল

রাতুল: প্রকাশ দা আসবো??

প্রকাশ: হ,,হমম আয় (আস্তে করে উঠে বসে চোখের জল টা মুছে নিলো)

রাতুল: এনাও খেয়ে নাও,,এরপর ওষুধ খেতে হবে,,আর এখন কেমন লাগছে??

প্রকাশ: হম ঠিক আছি,,আর আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না নিয়ে যা প্লিজ

রাতুল: প্রকাশ দা নিজের রাগ টা তুমি প্রথমে নিজের ক্ষতি করে আর এখন খাবারের উপর দেখাচ্ছ,,,এতে তো ক্ষতি তোমারই হবে তাই না??

প্রকাশ: আমার যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে রে,,শোন আমি অন্য ঘরে যাচ্ছি এঘরে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয় আর,,বাঁচতে চাই ভালো ভাবে আমি শান্তি চাই একটু,,

বলেই প্রকাশ আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে গেলো,,যেহেতু হাত কেটেছে তাই হাঁটতে চলতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না জাস্ট শরীর টা দুর্বল প্রকাশের,,প্রকাশ দরজা থেকে বেরিয়ে যেতেই ওর বাম হাতে টান পরলো,,ইশারা দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলো কারণ রাতুল কে দিয়ে খাবার টা ওই পাঠিয়েছে,,প্রকাশ পিছন না ফিরেই ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো হাতটা আর বললো,,

প্রকাশ: আমি তো বললাম আমি একটু শান্তি চাই,,

বলেই প্রকাশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো আর নূপুরের শব্দ আস্তে লাগলো প্রকাশের কানে এর মানে ইশারা ও আসছে প্রকাশের পিছন পিছন,,এদিকে প্রকাশের বাইরে দাঁড়িয়ে কথাটা রাতুল শুনতে পেয়ে ও বেরিয়ে আসে আর ওদের পিছনে আস্তে থাকে,,প্রথমে প্রকাশ তারপর ইশারা আর ইশারার পরে রাতুল,,প্রকাশ একটা রুমে ঢুকে তারাতারি দরজা টা বন্ধ করে দিতে গেলে ইশারা দরজা টা আটকাতে যায় কিন্তু আটকাতে গিয়ে ইশারার আঙুল টা চাপা পরে যায় আর ইশারা ঝট করে সরিয়ে নিলেও আঙুল টা কেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে যায় এদিকে দরজা টা ও বন্ধ করে দেয় প্রকাশ,,রাতুল সঙ্গে সঙ্গে এসে ইশারার হাত টা ধরে আর বলতে থাকে,,

রাতুল: আরে বৌদি এটা কি করলেন এভাবে কেউ হাত দেয় নাকি দরজায়?? দেখুন তো কেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে গেলো,,

রাতুলের কথা শুনতে পেয়ে প্রকাশ সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে ইশারার সামনে চলে আসে আর উত্তেজিত হয়ে পরে,,

প্রকাশ: কে বলেছিল দরজায় হাত দিতে?? আমি বলেছিলাম?? একটা না একটা কিছু করে নিজের ক্ষতি করতেই হবে তাই না?? এই রাতুল যা গিয়ে তুই যা গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আয়,,রক্ত বের হচ্ছে তো (প্রকাশ ইশারার আঙুল টা মুখে পুরে নিলো রক্ত বন্ধ করার জন্য)

রাতুল: দা তুমি বৌদি কে এই ঘরে নিয়ে যাও এখানেই ফার্স্ট এইড বক্স টা আছে,,

প্রকাশ সঙ্গে সঙ্গে ইশারা কে ঘরে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স খুঁজতে লাগলো,,সেটা নিয়ে এসে সোফায় বসে খুব যত্ন করে ইশারার হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে প্রকাশ আর ইশারা অবাক চোখে প্রকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে,,,ব্যান্ডেজ হয়ে গেলে প্রকাশ ইশারা কে কিছু বলতে যাবে তখনই ইশারার এমন চাহুনী দেখে প্রকাশ কিছু টা ইতস্তত বোধ করে বলতে লাগলো

প্রকাশ: এভাবে আমার জন্য নিজের ক্ষতি করে লাভ নেই,,কেনোই বা ক্ষতি করবেন নিজের?? আমি তো কেউ হইনা আপনার তাই জন্যই তো বিরক্ত হয়ে ছেড়ে চ…..

প্রকাশ আর বলতে পারলো না তার আগেই ইশারা প্রকাশ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো ইশারা যে কাঁদছে তা প্রকাশ নিজের জামায় ভেজা অনুভব হওয়ায় বুঝতে পারছে,,প্রকাশ ইশারা কে দুরে সরাতে নিলে ইশারা আরো শক্ত করে প্রকাশ কে জরযে ধরে,,,প্রকাশ ও নিজেকে আটকাতে পারে না আর ইশারা ওএ জড়িয়ে ধরে প্রকাশের ও চোখ ছলছল করছে প্রকাশ ইশারার কান্না সহ্য করতে না পেরে দু হাত দিয়ে ইশারার মাথা তুলে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো,,ইশারা প্রথমে অবাক হলেও পরে প্রকাশের ডাকে সাড়া দিয়েছে,,প্রকাশ ইশারার কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলো আর ইশারা প্রকাশের কাঁধ খামচে ধরে রেখেছে,,দুজন সমান তালে তাল মিলাচ্ছে আজ হয়তো এভাবেই ওদের দুজনের মিল হলো #ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ হলো,,

বেশ কিছুক্ষণ পর প্রকাশ ইশারার ঠোঁট ছেড়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে শ্বাস নিতে থাকে,,প্রকাশের গরম নিশ্বাস ইশারার গলা আর বুকে আছড়ে পড়ায় ইশারা কেঁপে কেঁপে উঠছে আর প্রকাশ কে শক্ত করে ধরে রেখেছে,,প্রকাশ ইশারার গলায় মুখ ডুবিয়েই বলতে লাগলো,,

প্রকাশ: এরপর থেকে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবার আগে তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে আমার কি পরিণতি হবে সেটা ভাববে,,,ভাববে তুমি একটা ছেলে কে যে তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসে তাকে পুরোপুরি শেষ করে দিচ্ছো,,,চিরতরের মতো তাকে মেরে…

প্রকাশ কে থামিয়ে দিলো ইশারা ঠোঁটে আঙুল দিয়ে,,,কিন্তু ওরা এখন ও একই অবস্থায় আছে,,প্রকাশ একটু হেসে ইশারার হাতে চুমু খেলো গভীর ভাবে আর আবার ও কোমর জড়িয়ে গলায় নাক ঘষল,,প্রকাশ আস্তে আস্তে ইশারার কানের কাছে গিয়ে বললো

প্রকাশ: আই লাভ ইউ জান!

প্রতি উত্তরে ইশারা শুধু মুচকি হাসলো যার অর্থ প্রকাশ বুঝে গেছে,,,প্রকাশ ইশারার উত্তর পেয়ে আবার ও কানের কাছে গিয়ে বললো,,

প্রকাশ: আই নীড ইউ রাইট নাও (ঘোর লাগা কণ্ঠে,,কথাটা বলে একটা আলতো করে চুমু দিলো ইশারার কানের লতিতে)

এবার ইশারা একটু বেশীই লজ্জা পেলো আর প্রকাশের বুকে মুখ গুঁজলো,,প্রকাশ ইশারার কাঁধে চুমু দিয়ে আস্তে করে ইশারার সালোয়ারের ফিতে টা যেই না খুলতে যাবে সেইসময কেউ দরজায় নক করলো আর ইশারা চট করে সরে গেলো,,আর প্রকাশ তো বেজায় চটে গেছে ইশারার দিকে রাগী চোখে তাকাতেই ইশারা কে এসেছে দেখতে বললো ইশারায়,,

প্রকাশ: ধ্যাত! দিলো আমার সব রোম্যান্স এর ১২ দুগুনে ২৪ টা বাজিয়ে,,ভালো লাগে না ছাই,,

ইশারা হাসতে লাগলো প্রকাশের কথায়,,প্রকাশ গিয়ে দরজা টা খুললো কারণ রাতুল দরজা টা ভেজিয়ে দিয়ে গিয়েছিল,,,দরজা খুলে ওপারের ব্যক্তি কে দেখতেই প্রকাশের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে নিলো,,প্রকাশ কে এভাবে দেখে ইশারা এগিয়ে গেলো কে এসেছে দেখার জন্য,,,ব্যক্তি টিকে দেখতেই ইশারা প্রকাশের হাত চেপে ধরলো ভয়ে আর কিছুটা আড়ালে চলে গেলো প্রকাশের……………….
.

.
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here