“ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤ পর্ব_১০

#ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_১০
.
🌸
.
প্রকাশ রক্ত চক্ষু নিয়ে একটা সোফায় বসে আছে হাতে একটা ওয়াইনের গ্লাস,,চোয়াল শক্ত করে রেখেছে প্রকাশ দাঁত করমড় করছে,,,এক চুমুকে ওয়াইন টা খেয়ে নিয়ে গ্লাস টা হাতে শক্ত করে চেপে ধরলো,,,এতটা জোরে চেপে ধরলো যে গ্লাস টা ভেঙেই গেলো গ্লাস টা ভেঙে গিয়ে কাঁচ টা প্রকাশের হাতে গেথে গেছে আর অঝোরে রক্ত পড়ছে হাত থেকে কিন্তু প্রকাশের চাহুনী সামনের দিকে স্থির হয়ে রয়েছে একজনের উপর,,

বিছানায় হাঁটু মুড়ে বসে বসে কাঁদছে ইশারা এই মুহুর্তে প্রকাশ কে যমের চেয়েও বেশী ভয় পাচ্ছে ইশারা তাই সমানে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে,,প্রকাশের হাতের রক্ত টা দেখে ইচ্ছে করছে গিয়ে ওষুধ লাগিয়ে দিতে কিন্তু ভয়ের কারণে সেটাও পারছে না ইশারা,,,

🌸 🌸 কিছুক্ষণ আগে ❤ ❤

প্রকাশ নিজের ঘরে বসে স্মোক করছে সেইসময় প্রকাশের কাছে ফোন এলো,,

প্রকাশ: হমম

রাতুল: ইশারা বৌদির খবর পেয়েছি ভাই,,তুমি তারাতাড়ি নীচে আসো

প্রকাশ আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না সঙ্গে সঙ্গে যা পরে ছিলো তাই পরেই বেরিয়ে গেলো রাতুলের সাথে,,,প্রকাশ আজ ড্রাইভ করছে না রাতুল ড্রাইভ করছে প্রকাশের শরীর খুব একটা ভালো না এই দু-দিন ঠিক মতো খায়নি শুধু ছাই-পাশ খেয়েছে আর স্মোক করেছে তাও ভালো নিজের কোনো ক্ষতি তো করেনি,,মনে মনে ভাবছে রাতুল,,কিছুক্ষণ পরেই রাতুল আর প্রকাশ পৌঁছে গেলো সেই জায়গায় যেখানে ইশারা আছে বলে খোঁজ পেয়েছে রাতুল,,,

একটা একতলা সিমেন্টর বাড়ি শহরের থেকে অনেক দুরে প্রায় শেষ প্রান্তে প্রকাশ রাতুলের দিকে তাকাতেই রাতুল ইশারা করলো ভিতরে যাওয়ার জন্য,,,প্রকাশ রাতুল কে হাত দিয়ে ইশারা করলো বাড়ির বাইরে থাকার জন্য আর নিজে এগিয়ে গেলো বাড়ির ভিতরে,,,বুক কাঁপছে প্রকাশের যদি ইশারা না থাকে এখানে?? যদি ও না পায় ইশারা কে?? একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে প্রকাশ বাড়ির ভিতরে গেলো দরজা খোলা তাই আর নক করলো না চুপচাপ ভিতরে প্রবেশ করে গেলো,,,কিন্তু কিছুটা এগোতেই কাওর পায়ের নূপুরের ” ছন ছন ” শব্দ পেলো,,,এই একটা শব্দর দ্বারাই প্রকাশের ভিতরে শীতল হাওয়া বইয়ে দিচ্ছে প্রকাশের যে বড্ড চেনা এই নূপুরের শব্দ,,,প্রকাশ চোখ বন্ধ করে শব্দটা শুনছে তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে শব্দ টা কিন্তু হঠাৎ থেমে গেলো শব্দ টা,,স্টিলের বাসন-কাসোন পড়ে যাওয়ার ” ঝিন ঝিন ” শব্দ এলো আর প্রকাশ দ্রুত নিজের চোখ খুললো,,,চোখ খুলতেই দেখতে পেলো ” ইশারা ” কে

ইশারা প্রকাশ কে দেখে ভীষণ পরিমাণ ভয় পেয়ে গেছে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে হাঁটু ভেঙে আসছে ইশারার,,ইশারার পিছন থেকে ইশারা কে পাশ কাটিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ইশান প্রকাশ কে,,আর বলতে লাগলো,,

ইশান: দেখলি দিদিয়া আমি বলেছিলাম না প্রকাশ ভাইয়া আসবে,,তুই খালি খালি রাগ করতিস আমার ওপর আমি তো জানি প্রকাশ ভাইয়া তোকে কতটা ভালোবাসে হিহিহি,,,তুই একটা বোকা বুঝিসই না প্রকাশ ভাইয়ার ভালোবাসা টা শুধু শুধু এই দু-দিন প্রকাশ ভাইয়া কে কষ্ট দিলি কতবার বললাম কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমায় কিছু বললিই না আমায়,,দেখ তো ভাইয়ার অবস্থা কি হয়েছে এই দু-দিনে,,

ইশারা ইশানের কথায় প্রকাশের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখল মাথার চুল গুলো এলোমেলো চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে গোলাপি ঠোঁট গুলো কেমন কালো বর্ন ধারন করেছে বড়ো বড়ো চোখ গুলো ছোট ছোট লাগছে দেখে মনে হচ্ছে কতদিন ঠিক মতো খায়নি-ঘুমায়নি,,,ইশারা অবাক হয়ে যাচ্ছে প্রকাশের অবস্থা দেখে মাত্র দুই-দিনে এতটা খারাপ অবস্থা করেছে নিজের?? সত্যি বলতে ইশারা ও এই দুই-দিন ভালো ছিলো না,,ইশারা দেখলো প্রকাশ একটা টি-শার্ট আর ট্রাউসার পরা এর মানে খবর পেতেই হয়তো ছুটে চলে এসেছে ইশারার কাছে,,,

প্রকাশ ইশানের মাথায় হাত বুলালো চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো

প্রকাশ: বাইরে রাতুল আঙ্কেল গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তুমি গিয়ে বসে পরো গুড বয়ের মতো ওকেই??

ইশান: ইয়ে কি মজা বাড়ি যাবো,,,হুররে! (বলে দৌঁড় দিয়ে বেরিয়ে গেলো)

প্রকাশ এক-পা দু-পা করে এগিয়ে যাচ্ছে ইশারার দিকে আর ইশারা ভয়ে সালোয়ারের ওড়না পেঁচাচ্ছে প্রকাশ ইশারার সামনে এসে ট্রাউসার এর পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বললো

প্রকাশ: কেনো এভাবে ছেড়ে চলে এলে ইশারা??(শান্ত গলায়)

ইশারা: (নিশ্চুপ শুধু চোখের জল ফেলছে মাথা নীচু করে)

প্রকাশ: আমি কি এতটা খারাপ ইশারা যে আমার সাথে থাকা যায় না?? এত ভালোবাসার পরেও তুমি আমাকে ছেড়ে চলে এলে?? বলে দিতে পারতে আমায় আমি নিজে তোমাকে আমার কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দিতাম,,,কিন্তু এখন তোমাকে শাস্তি পেতে হবে ইউ হ্যাভ টু পে ফর দিস,,

প্রকাশ ইশারা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে বাইরে চলে এলো আর গাড়িতে বসিয়ে দিলো আর নিজেও গিয়ে সামনের সিটে বসে পরলো,,,রাতুল থাকায় বেশী কিছু বললো না প্রকাশ কিন্তু মনে মনে রাগ অভিমান কষ্ট ঠিকই হচ্ছে,,,ইশারা ইশান কে ও নার্সিংহোমের থেকে ডিসচার্জ করিয়ে নিজের সাথে নিয়ে যায় প্রকাশ ইশারা কে কলেজে না পেয়ে নার্সিংহোমে গেছিল সেখান থেকেই জানতে পারে ইশারা ইশান কে নিয়ে চলে গেছে সামান্য সুস্থ হতেই,,,সঙ্গে প্রকাশ এও বুঝলো যে ইশারা কে কেউ কিডন্যাপ করেনি ইশারা নিজের ইচ্ছায় গেছে,,,

🌸 🌸 এখন ❤ ❤

প্রকাশ একটান মেরে কাঁচ টা বাড় করে ফেললো তাতে রক্ত বেড়ানোর পরিমাণ আরো বেড়ে গেলো,,,এরপর উঠে দাঁড়িয়ে লাথি মেরে সামনের সেন্টার টেবিলের কাঁচ টা ফেলে দিলো আর কাঁচ টা পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো প্রকাশ ইশারার সামনে এসে চিৎকার করে বলে উঠলো,,

প্রকাশ: ওয়াই ইশারা ওয়াই?? কেনো করলে তুমি আমার সাথে এমন?? কম তো ভালোবাসিনি আমি তোমায়,,কতবার বলেছি তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না?? বলিনি?? (চিৎকার করে)

ইশারা: (নিশ্চুপ ভয়ে গুঁটিয়ে রয়েছে আর কাঁদছে)

প্রকাশ: কাঁদছ কেনো তুমি?? হ্যাঁ কাঁদছ কেনো?? অ্যান্সার মি ড্যাম ইট!! (হুঙ্কার দিয়ে)

প্রকাশ: (কিছুক্ষণ থেমে) ওওওও আমার কাছে ধরা পরে গেছো দেখে??? আমার কাছে ফিরে আসতে হয়েছে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে?? ভাবনি তাই না আবার আমার কাছে ফিরে আসতে হবে?? এইজন্য কষ্ট হচ্ছে তোমার??

প্রকাশ শান্ত হয়ে গেলো আর আস্তে করে গিয়ে ইশারার পায়ের সামনে ধপ করে দু-হাঁটু গেড়ে বসে পরলো আর ইশারার দিকে করুন ও অসহায় চোখে তাকালে ইশারার বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠলো,,প্রকাশ শান্ত গলায় বললো,,

প্রকাশ: আমি খুব খারাপ তাই না ইশারা?? বদমেজাজি একগুয়ে একটা ছেলে যে কিনা মারপিট করে লোক কে খুন করে,,এক্তা মাফিয়া,,ক্রিমিনাল আমি তাই না?? খুব বিরক্ত তুমি আমার উপর আমার রাগের উপর,,ঠিক আছে আর তোমাকে আমায় সহ্য করতে হবে না,,

ইশারার মন টা কেমন জানি করে উঠলো প্রকাশের এমন কথায়,,,প্রকাশ উঠে দাঁড়িয়ে ইশারার সামনে এসে ওর কপালে একটা গভীর ভাবে ভালোবাসার পরশ দিলো আর বললো,,

প্রকাশ: এটা আমার ভালোবাসার হয়তো শেষ চিহ্ন

বলেই সেন্টার টেবিলের ভাঙা কাঁচের টুকরো টা বাম হাতে নিয়ে ডান হাতের শিরায় এক পোচ দিলো,,,আর গলগল করে রক্ত পরতে লাগলো ইশারা শকড হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে চোখের সামনে মুহুর্তে এমন কিছু হবে তা ভাবতে পারেনি ইশারা,,,প্রকাশ নিজের মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,,

প্রকাশ: আর বিরক্তির কারণ হবো না তোমার,,,কিন্তু জীবনে তোমার আর কোনো অসুবিধা হবে না সব ব্যাবস্থা আ..আমি ক..করে (আর বলতে পারলো না পরে গেলো ধপ করে)
.

.
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

কেউ ছোট পার্ট বলে কষ্ট দেবেন না আজ এমনিতেই ভীষণ কষ্টে আছি সকাল থেকে,,এই একটা কাজই পারি গল্প লিখতে তাও অতো ভালো হয়না তাও যেই প্লাটফর্মে এই বিষয়ে সাফল্য পেয়েছিলাম সেই প্লাটফর্মে নিজের প্রথম আইডি হারানোর শোক টা এখনো ভুলতে পারছি না মাঝে মধ্যেই মন টা হু হু করে কেঁদে উঠছে 🙂 তাই আপনাদের একটু উৎসাহ দরকার দয়া করে সবাই বলবেন কেমন হয়েছে নাইস নেক্সট না বলে 🌸❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here