“ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤ পর্ব_৯

#ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_৯
.
🌸
.
ইশারা চোখ খুলে প্রকাশ কে সামনে আসতে দেখে পিছোতে লাগলো আর এক দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো ওখান থেকে আর নিজের ঘরে চলে গেলো,,,প্রকাশ এখনো দাঁড়িয়ে ইশারার চলে যাওয়ার পানে চেয়ে রয়েছে আর ভাবছে কি করে ইশারা এখানে এলো ওর তো আরো কিছুক্ষণ পর ফেরার কথা ছিলো,,

পরলশ নার্সিংহোমের থেকে বেরিয়ে যেতেই তার কিছুক্ষণ পর ইশারা ও বেরিয়ে যায় আর যখন বাড়ি ফেরে তখন গেট দিয়ে ঢোকার সময় বাড়ির পিছনের দিকে যে গোডাউন টা আছে সেটার দরজা খোলা দেখে,,,সেইদিকে এগিয়ে যেতে লাগলেই ইশারা একটি ছেলের আর্তনাদ শুনতে পায়,,সেই শুনে যখন গোডাউনের ভিতরে প্রবেশ করে তখন দেখে প্রকাশ একটা ছেলের দুই হাত শিকল দিয়ে দুটো পিলারের সাথে বেঁধে রেখেছে আর ছেলেটা সমানে আকুতি মিনতি করছে ছেড়ে দেওয়ার জন্য,,,এক হাত দিয়ে রক্ত পরছে ছেলেটার এসব দেখতে দেখতেই প্রকাশ হুট করে ছেলেটার পায়ে শুট করে দেয় আর সেই দেখেই ইশারা ভয়ে পিছিয়ে যায় আর দরজার সাইডে থাকা টেবিলের ফুলদানি টা পরে যায়,,

প্রকাশ: ইশারা আবার আমাকে ভুল বুঝবে শিট! আগের বার ছেলে গুলো কে হাতে মেরেছিলাম বলে আমাকে ইগ্নোর করছিল আর এবার তো শুট করতে দেখেছে,,,ওহ গড,,গার্ড এ জানো এখান থেকে বেঁচে না ফেরে যতক্ষণ না সত্যি বলছে ততক্ষণ টর্চার করতে থাকো (গার্ডের উদ্দেশ্যে বলে বেরিয়ে গেলো)

ইশারা ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে বিছানার পাশে গুঁটি শুঁটি মেরে বসে আছে কানে দু-হাত চাপা দিয়ে,,,অঝোরে কাঁদছে ইশারা প্রথম থেকেই এসব মারপিট খুন-খারাবা ভীষণ ভয় পায় আর আজ বার বার এই দৃশ্যগুলোই ওকে দেখতে হচ্ছে,,,ঘৃণা আসছে আজ প্রকাশের প্রতি ইশারার যা ভালো লাগা তৈরী হয়েছিল আজ নিমিষে তা ধুলোয় মিশিয়ে দিলো প্রকাশ,,,ইশারার ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে,,,এদিকে প্রকাশ সমানে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে তার আওয়াজ ইশারার কানে যাচ্ছে না কারণ দু-হাত দিয়ে কান চেপে রেখেছে আর এমনিতেই ওর কানে তুলো গোঁজা থাকে,,

প্রকাশ আর না পেরে দরজা ভেঙে দিলো আর সেই শব্দ ইশারার কানে গেলো যার জন্য ইশারা আরো ভয়ে গুঁটিয়ে গেলো,,,প্রকাশ এদিক ওদিক ইশারা কে খুঁজতে থাকায় বিছানার পাশে একটা শাড়ির আঁচল দেখা গেলো,,,প্রকাশ আস্তে আস্তে ওদিকে এগোতেই দেখলো ইশারা গুঁটি শুঁটি মেরে বসে আছে আর কাঁদছে,,,প্রকাশ ইশারার দিকে এগোতে নিলেই ইশারা পিছিয়ে যায়,,এভাবে পিছোতে পিছোতে ইশারার পিঠ দেয়ালে থেকে গেলে প্রকাশ ইশারার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে

প্রকাশ: কেনো ভয় পাচ্ছ তুমি আমাকে??

ইশারা: আমাকে মারবেন না প্লিজ! আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি বলুন (ইশারায়)

প্রকাশ: ইশারা তোমাকে মারার কথা আমি ভাবতে ও পারি না,,আমি তোমাকে ভালোবাসি ইশারা

ইশারা: কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না! ঘৃণা করি আমি আপনাকে,,আপনি একজন খুনি একজন মুখোশধারী আপনার মুখ ও দেখতে চাই না আমি (ইশারায়)

প্রকাশ ইশারার কথা সবই বুঝতে পারছে [কারণ টা আস্তে আস্তে জানবেন] কিন্তু ইশারা কে সত্যি টা বলতে পারছে না এখন যে সময় হয়নি সত্যি টা জানার,,,কিন্তু ইশারা যা রিয়াক্ট করছে তাতে ওকে সত্যি টা বলে দেওয়াই ভালো,,

প্রকাশ: ইশারা তুমি আমার কথা টা শোনো,,,আমি শুধু শুধু এমন করিনি কারণ আছে এর পিছনে

ইশারা দু কানে হাত দিয়ে চেপে ধরলো আর মাথা নীচু করে না বোধক মাথা নাড়তে লাগলো,,,এর মানে ইশারা কিচ্ছু শুনতে চায় না,,প্রকাশ এবার উঠে গেলো এক হাত কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বুড়ো আঙুল আর তর্জনি দিয়ে কপালে ঘষতে লাগলো কিছুক্ষণ পর রেগে সেন্টার টেবিলে একটা লাথি মারলো আর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো,,,সেন্টার টেবিলে লাথি মারায় ইশারা কিছুটা কেঁপে উঠলো আর প্রকাশ বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো আর শাওয়ারের নীচে বসে কান্না করতে লাগলো,,,

🌜🌕🌜 রাত ২টো 🌛🌕🌛

ইশারা বিছানায় বসে ঝিমাচ্ছে প্রকাশ এখনো ফেরেনি বাড়িতে সেই যে বেরিয়ে গেছে আর কোনো খবর নেই,,,ইশারা গার্ডদের জিজ্ঞেস কর্পে গার্ডরা বলে যে প্রকাশের ফোন সুইচ অফ,,ঝিমতে ঝিমতে ইশারা পড়ে গেলেই ঘুমটা ভেঙে যায় ইশারার আর ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত ২টো বাজে কিছুক্ষণ পাইচারি করতে থাকে ঘরের মধ্যে আর না পেরে নীচে যায়,,,ইশারা কিছুক্ষণ আগে প্রকাশের গার্ডদের বলেছিল প্রকাশ কে খুঁজতে যেতে সেই খবরটাই আনতে ইশারা নীচে যায়,,

ইশারা সিঁড়ি দিয়ে নামতেই দেখে দুটো গার্ডের ঘাড়ে ভর করে প্রকাশ হেলতে দুলতে বাড়ি ঢুকছে ঠিক মতোন হাঁটতেই পারছে না,,,ইশারা সিঁড়ি থেকে সরে গেলে গার্ড দুটো প্রকাশ কে নিয়ে ঘরে চলে যায় আর ইশারা দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলতে লাগে,,

ইশারা: এসব দেখাই বাকি ছিলো আমার,,আর কতো কিছু সহ্য করতে হবে এই জীবনে আমার? ভেবেছিলাম একজন ভালো স্বামী পেয়েছি কিন্তু না এখন মনে হচ্ছে এমন স্বামীর থাকার থেকে না থাকা ভালো,,,গুন্ডামি করে মানুষ খুন করে আবার নেশা ও করে বাহ! কি কপাল আমার! ভগবান বোধ হয় আমার কপালে সুখের ছিটা ফোঁটা ও দেননি মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে নিজেকে শেষ করেদি,,,শেষ করেদি (মনে মনে)

ইশারা কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ি তে বসে পরলে একজন এসে ইশারার পাশে বসে আর ইশারা পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে প্রকাশের একটা গার্ড,,,

গার্ড: আমার সাথে আপনার ঠিক করে কোনদিন পরিচয় হয়নি তাই না বৌদি?? আমি রাতুল প্রকাশের ভাই

ইশারা অবাক হয়ে তাকায় “ভাই” কথা টা শুনে,,প্রকাশের ভাই আছে এটা তো প্রকাশ কোনদিন বলেনি,,তাহলে?

রাতুল: আমি জানি আপনি ভাবছেন এসব আমি কি বলছি,,আসলে আমি প্রকাশ দার নিজের ভাই নই,,আমি অনাথ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কাজ করতাম আজ থেকে ৪ বছর আগে হঠাৎ করেই একটা ড্রাগস ডিলারদের হাতে পরে যাই ওরা আমাকে বলে যে ওদের হয়ে ড্রাগস পাচার করতে হবে আর এটাই আমার কাজ,,আমি চাইলেও না করতে পারবো না কারন আমি ওদের কে আর ওদের ব্যবসা সম্পর্কে জেনে গেছি,, যদি আমি কাজ টা না করি তাহলে আমায় ওরা খুন করে দেবে,,,প্রাণের ভয়ে আমি কাজ টা করি আর ধরা পরে যাই প্রকাশ দার হাতে,,আমার বয়স খুব কম ছিলো তখন সবে ১৮ আর প্রকাশ দার ২০ কিন্তু দেখে মনেই হতো না যে ২০ বছরের একটা ছেলের এতো পাওয়ার এতো রাগ,,,ভেবেছিলাম হয়তো মেরে দেবে আমায় কারণ আমি মুখ খুলতে পারবো না আমার গ্যাং এর বিরুদ্ধে তাহলে তারা কোন না কোনো ভাবে আমায় মেরে দেবে,,কিন্তু নাহ প্রকাশ দা আমায় সুযোগ দিলো বলল সত্যি টা বললে আমায় ছেড়ে দেবে আমি অবশ্য বিশ্বাস করিনি কারন সবাই সচরাচর কথা বাড় করানোর জন্য এই মিথ্যে কথা টা বলেই থাকে তাই আমি ভাবলাম সত্যি টা বলে দেওয়াই ভালো অন্তত একটা ভালো কাজ করে মরব,,,আমি সত্যি কথা বলতেই অদ্ভুত ভাবে প্রকাশ দা আমায় মারলো না বরঙ অনেক প্রটেকশান দিয়ে রাখলো যাতে আমায় কেউ মারতে না পারে,,,কয়েক দিন পর খবর পেলাম প্রকাশ দা ওদের কে পুলিশ এর হাতে দিয়ে দিয়েছে আর একজন কে মেরে দিয়েছে কারন সে নাকি একটা মেয়ে কে রেপ করেছিল আর এমন অনেক মেয়ে কে পাচার ও করেছে তাই তাকে পুলিশ এর হাতে না দিয়ে প্রকাশ দা মেরে দিয়েছে,,,আমি মনে করি যথেষ্ট ভালো কাজ করেছে প্রকাশ দা,,

ইশারা চুপ করে সব শুনছে রাতুলের কথা গুলো রাতুল আবার বলতে লাগলো

রাতুল: এরপর থেকে প্রকাশ দা আমাকে নিজের ভাই মনে করে আর আমি তাকে দাদা,,আমি হলপ করে বলতে পারি প্রকাশ দা আজ পর্যন্ত কোনো অন্যায় করেনি,,,আপনাকে ভীষণ ভালোবাসে প্রকাশ দা সব করতে পারে আপনার জন্য,,,কেনো বলছি জানেন? আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে কে নিয়ে এতটা ভাবেনি তার পরিবার নিয়ে ভাবেনি,,আমাদের কে টাকা দিয়ে দিতো আমরা পৌঁছে দিতাম আর আপনাকে তো নিজের দায়িত্ব মনে করে নিজের সম্পত্তি মনে করে,,একটু বোঝার চেষ্টা করুন দেখবেন ওর ভিতরের কষ্ট গুলো কে অনুভব করতে পারবেন,,আজ অনেকদিন পর প্রকাশ দা ড্রিংক করলো তাও এভাবে সম্ভবত আপনার সাথে পরিচয় হওয়ার পর এসব ছেড়ে দিয়েছিল,,,যাই হোক ওরা রেখে এসেছে প্রকাশ দা কে আপনি ঘরে যেতে পারেন আর কাইন্ডলী আমার কথা গুলো একটু ভেবে দেখবেন,,,

রাতুল কথা গুলো বলে চলে গেলো আর ইশারা নিজের চোখের জল মুছে ঘরের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো,,,ঘরে গিয়ে দেখলো প্রকাশ বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে রয়েছে পায়ের জুতো টাও খোলেনি,,ইশারা গিয়ে পায়ের জুতো টা খুলে দিলো আর প্রকাশ কে ঠিক ভাবে শোয়ানোর চেষ্টা করতে গেলেই প্রকাশ দু-হাতে ভর করে উঠে বসলো আর ইশারার কোমর জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো,,প্রকাশ খুব সফ্টলি কিস করছে ইশারা কে শুষে নিচ্ছে ইশারার ঠোঁট আর ইশারা আজকে বাধা দিতে চেয়েও দিতে পারছে না বরং প্রথম বারের মতো প্রকাশের সাথে তালে তাল মিলাচ্ছে,,,প্রকাশ ইশারার কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো আর ইশারা প্রকাশের গলা জড়িয়ে ধরে আছে চুল মুঠো করে রেখেছে,,,

প্রায় অনেকখন পর ইশারার ঠোঁট ছাড়ল প্রকাশ আর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো আর একটা ডিপ কিস করলো গলায় যার ফলে ইশারা প্রকাশের কাঁধ খামচে ধরলো,,,প্রকাশ নেশাক্ত কণ্ঠে বলতে লাগলো,,

প্রকাশ: আমার তোমাকে চাই ইশারা,,সারাজিবনের জন্য চাই ভালোবাসতে চাই তোমাকে আমি ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালোবাসতে চাই,,,আই লাভ ইউ আ লট

প্রকাশের কথাগুলো জানো আজ ইশারার মনে অনুভূতি জাগিয়ে তুলছে,,ইশারা প্রকাশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর প্রকাশ ইশারার গলায় মুখ ডুবিয়ে রেখেছে,,,কিছুক্ষণ পর ইশারার গলার মধ্যে নিজের নাক ঘসে দিলো প্রকাশ আর ইশারা সরে গেলো,,,ইশারা সরে গিয়ে প্রকাশ কে ঠিক মতো শুয়ে দিলো আর উঠে যেতে নিলেই প্রকাশ হাত ধরে টেনে ইশারা কে বিছানায় বসিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে পেটে মুখ গুঁজে দিলো,,,আর ঘুমিয়ে পড়ল এদিকে ইশারা প্রকাশের কান্ডকারখানা দেখে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছেনা,,

☀️☀️ পরেরদিন সকালে ☀️☀️

প্রকাশ ঘুম থেকে উঠে সারা বাড়ি খুঁজে ফেলেছে ইশারা কোথাও নেই আর গতরাতের কোন কথাই প্রকাশের মনে নেই,,,তাই ও তন্নতন্ন করে খুঁজছে,,,হুট করে রাতুল এসে প্রকাশ কে বললো যে ইশারা কলেজে গেছে এটা শুনে প্রকাশ একটু দম ফেললো আর সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেশ হয়ে ইশারার কলেজে চলে গেলো,,,কলেজে গিয়ে সবাই কে ইশারার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই সবাই বললো ইশারা আজ কলেজে আসেইনি,,,এই শুনে প্রকাশ নিজের গার্ডদের বললো পুরো শহরে খোঁজ নিতে প্রকাশ ও বেরিয়ে পরলো,,,

দুই দিন পর…………………..

🥀

ঘরের মেঝেতে মদের বোতল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আর প্রকাশ মেঝে তে সোজা হয়ে শুয়ে রয়েছে হাতে একটা মদের বোতল নিয়ে,,,দু-দিন হয়ে গেছে ইশারা কে প্রকাশ কোথাও পায়নি পাথর হয়ে গেছে প্রকাশ,,চিৎকার করে কাঁদে রাত হলেই কোনো কথা বলে না চুপচাপ ঘরে বন্দী হয়ে থাকে আর মদ খেয়ে মাতাল হয়ে থাকে,,কেউ খোঁজ খবর দিতে আসলে ইশারার সেটা শোনে আর পাগলের মতো হাসে,,,প্রত্যেক টা খবর প্রকাশ কে কাঁদায় কারণ ইশারা কে পাওয়া যায়নি,,

প্রকাশ: ইশারাআআআআ! কেনো আমায় ছেড়ে চলে গেলে একবার আমার কথাটা শুনতে পারতে,,,আমি যে পারবো না তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না আমি (চিৎকার করে কাঁদছে)
.

.
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here