“ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤ পর্ব_৮

#ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_৮
.
🌸
.
বর্তমান………………………

প্রকাশ কথাগুলো বলে থেমে গেলো আর চুপচাপ ইশারার কোলে শুয়ে রইলো আর কিছুক্ষণ পর অনুভব করলো ইশারার হাত প্রকাশের চুলে বিচরণ করছে না,,,থেমে গেছে তাই প্রকাশ ইশারার কোল থেকে মাথা তুলে দেখল ইশারা বিছানায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে সেই দেখে প্রকাশ ইশারা কে আস্তে করে বেডে শুয়ে দিলো আর কপালে হাত বোলাতে বোলাতে বললো

প্রকাশ: তুমি কবে বুঝবে ইশারা আমি তোমাকে ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি,,,তোমাকে আকড়ে ধরে বাকিটা জীবন বাঁচতে চাই (প্রকাশ ইশারার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে সোফায় শুয়ে পরলো)

ইশারা: আমি জানি প্রকাশ আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু এতে যে আপনার জীবন নষ্ট হবে,,আমি ভেবেছিলাম হয়তো বিয়েটা আমার ঐ লোকটার সাথেই হয়ে যাবে,,হয়ে গেলেই ভালো হতো তাহলে আপনার জীবন টা নষ্ট হতো না,,,আমি তো বুঝেছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু আপনি কবে বুঝবেন আমি আপনাকে কখনো সুখি করতে পারবো না (মনে মনে)

ইশারা ঘুম প্রকাশের ঠোঁটের ছোঁয়াতেই ভেঙে গেছে তবুও নড়াচড়া করেনি ও প্রকাশের কথা গুলো শুনে আপন মনেই কথাগুলো বললো আর ঘুমিয়ে গেলো,,,

সকালে ☀️☀️

ইশারা ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিয়েছে কিন্তু প্রকাশের আসার নাম নেই ইশারা সেই কখন থেকে প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু তার কোনো পাত্তাই নেই,,,ইশারা নীচে ও নামেনি কারণ প্রকাশ সার্ভেন্ট দিয়ে বারণ করে দিয়েছে,,,ইশারার এবার বিরক্ত লাগছে পটের বিবি হয়ে বসে থাকতে তাই কোনো কিছু না ভেবেই ইশারা আস্তে আস্তে নীচে নামলো আর সেসময় রান্নাঘর থেকে টুং টাং আওয়াজ শুনতে পেলো,,,

ইশারা রান্নাঘরের দিকে এগোতেই দেখতে পেলো প্রকাশ রান্না করছে আর সামনে ডাইনিং টেবিলে খাবার ও সাজানো হয়ে গেছে প্রায়,,ডাইনিং টেবিলে সকালের ব্রেকফাস্ট যেমন অরেঞ্জ জুস ব্রেড জ্যাম বাটার স্যান্ডউইচ সব সাজানো,,ইশারা এবার প্রকাশের দিকে তাকাতেই দেখলো প্রকাশ ডিম ফাটাচ্ছে আর ফ্রাইং প্যান গ্যাস ওভেনে বসানো,,ইশারা প্রকাশের দিকে এগিয়ে যেতেই প্রকাশ বললো

প্রকাশ: তোমাকে না বললাম নীচে আসতে না তাহলে কেনো এসেছ…আহ!

প্রকাশ ইশারার সাথে কথা বলতে গিয়ে বিনা কিছুর সাহায্যে ওভেনে বসানো ফ্রাইং প্যানটা ধরে ফেললো আর ততক্ষণাৎ হাত সরিয়ে নিলো কারণ ফ্রাইং প্যান টা গরম ছিলো,,,প্রকাশের আওয়াজ শুনে ইশারা এগিয়ে গেলো প্রকাশের কাছে আর হাত টা ধরে বেসিনে কলের তলায় দিয়ে দিলো,,,ইশারার মুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ প্রকাশ অবশ্য এটা দেখে মজাই পাচ্ছে,,কিছুক্ষণ পর প্রকাশ হাত ছাড়িয়ে বললো

প্রকাশ: আমি অয়েটমেন্ট লাগিয়ে নিচ্ছি চিন্তা করতে হবে না তুমি চলো খেয়ে নেবে,,

ইশারা: আমি ডিমের অমলেট করে নেবো আপনি যান ওষুধ লাগান হাতে,,,এ হাতে আপনাকে এসব করতে হবে না (ইশারায়)

প্রকাশ: কিন্তু…..(প্রকাশ কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ধাক্কিয়ে বাড় করে দিলো)

ইশারা ডিমের অমলেট করে ডাইনিং টেবিলে এসে রাখলো আর প্রকাশ তো চেয়ারে বসে একমনে ইশারাকেই দেখে চলেছে,,,আজ ইশারা কচি কলাপাতা কালারের একটা শাড়ি পড়েছে যেটা আলমারিতে রাখা ছিলো,,,বরাবরই প্রকাশের এই রঙ টা ভীষণ পছন্দের আর ইশারা যে এই রঙের শাড়িটা নিজের বিয়ের পরে প্রথম দিন পরবে সেটা প্রকাশ কল্পনা করতে পারেনি,,,ইশারা দেখতে ভীষণ সুন্দর গোলগাল মুখ টানা টানা চোখ ফর্সা গায়ের রঙ হাল্কা গোলাপি ঠোঁট আর লম্বা কোমর ছাড়ানো এক ছেয়ে চুল,,,সব দিক থেকেই ইশারা সঠিক শুধু কথা বলতে পারে না এটাই ইশারার অক্ষমতা,,,যে কেউ ইশারার রুপে মুগ্ধ হয়ে যায় তেমন প্রকাশ ও মুগ্ধ চাহুনী নিয়ে তাকিয়ে আছে কোনো সাজ গোজ ছাড়াই ইশারা কে অপরূপ সুন্দর লাগছে প্রকাশের কাছে,,,প্রকাশের এমন চাহুনী দেখে ইশারা কিছুটা লজ্জা পেয়ে ইশারা করে খেতে বললো,,আর প্রকাশ ও হেসে খাওয়া শুরু করলো,,,প্রকাশের এই হাসিটাই ইশারা কে ঘায়েল করে প্রত্যেক বার প্রকাশ ভীষণ কম হাসে বলতে গেলে হাসেই না সব সময় গম্ভীর আর এটিটিউডে থাকে তাই সচরাচর প্রকাশের এই ঘায়েল করা হাসি দেখা যায় না,,

প্রকাশ: আই নো আমার হাসিটা খুব সুন্দর আন্ড তুমি চাইলে আমি অলয়েস ৩২ পাটি দাঁত বাড় করে তোমার সামনে বসে থাকবো,,বাট তুমি এখন খাওয়া শুরু করো

ইশারা: বেটা বজ্জাত এভাবে কেউ লজ্জায় ফেলে নাকি,,,আমার দিকে তো কিছুক্ষণ আগেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়েছিল জানো আগে কখনো শাড়ি পরা মেয়ে দেখেনি হুহ,,,আমি কি কিছু বলেছি আর এই বেটা কে দেখো যখন তখন যা খুশি বলে দেয় কোনো লাগামই নেই,,,কেউ একে সেন্টার ফ্রেশ কিনে দাও তাহলে যদি ঠিক হয়,,,খচ্চর পোলা এক খান কপালে জুটসে আমার 😭 (মনে মনে)

প্রকাশ: খাওয়ার সময় এতো ভাবতে নেই আমাকে বকা পরেও দিতে পারবে আগে খেয়ে নাও শান্তি তে নাকি কালকে রাতের মতো খাইয়ে দিতে হবে??

ইশারা প্রকাশের কথা শুনে বিষম খেলো বড়সড়ো আর সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ ইশারার সামনে জল ধরলো আর মাথায় ফুঁ দিতে থাকলো,,ইশারা জল টা খেয়ে ভয়ে ভয়ে প্রকাশের দিকে তাকালো

ইশারা: বাপ রে এই রাক্ষস টা সাইকোলজি নিয়ে পরেছে নাকি যে মনের কথা বুঝে যাচ্ছে (মনে মনে)

প্রকাশ: তাকিয়ে না থেকে খেয়ে রেডি হয়ে নাও,,,ইশানের অপারেশন স্টার্ট হবে তাই আজকে আর কলেজ যেতে হবে না ওকে??

ইশারা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো আর খেয়ে নিয়ে রেডি হতে চলে গেলো,,,রেডি হয়ে নীচে নামতেই ইশারা এক দফা ক্রাস খেলো প্রকাশের উপর,,প্রকাশ সব সময়ের মতো ব্ল্যাক জিন্স অফ ওয়াইট কালারের শার্ট যার এক প্রান্ত গোজা আরেক প্রান্ত ছাড়া,,,ডান হাতে ব্রান্ডেড ঘড়ি আর বাম হাতে ব্ল্যাক ব্যান্ড চুলগুলো ব্রাশ করা পায়ে লোফার,,,ইশারা হা হয়ে দেখছে প্রকাশ কে আর সিঁড়ি দিয়ে নামছে কিন্তু কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পরতেই ইশারা চোখ সরিয়ে নিলো কিন্তু প্রকাশ কে এতো সুন্দর লাগছে যে ইশারার চোখ বার বার বেহায়ার মতো প্রকাশের দিকে চলে যাচ্ছে,,,ইশারা সোফার সামনে এসে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে সময় প্রকাশ গিয়ে ইশারার সামনে দাঁড়ালো আর ইশারা কে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো,,

প্রকাশ: চলো

ইশারা মাথা নাড়তেই প্রকাশ ইশারা কে কোলে তুলে নিলো আর ইশারা বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে রয়েছে আর প্রকাশ বাঁকা হেসে ইশারা কে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে,,,

ইশারা: আচ্ছা আমার কি পা নেই নাকি আমি হাটতে পারিনা কোনটা খোঁড়া?? এই বদ মাফিয়া বেটা আমায় হুট হাট কোলে তুলে নেয় কেনো?? (মনে মনে)

প্রকাশ গিয়ে ইশারা কে গাড়িতে বসিয়ে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলো আর ব্রাউন শেডের সানগ্লাস টা পরে নিলো আর ড্রাইভ করে নার্সিংহোমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো,,,নার্সিংহোমে গিয়ে ইশানের সাথে দেখা করে নিলো আর তারপর ইশানের অপারেশন শুরু হলো,,,ইশারা ওয়েটিং চেয়ারে বসে হাত কচ্লাচ্ছে আর বার বার ও.টি.র দিকে তাকাচ্ছে ওদিকে প্রকাশ ও হাল্কা নার্ভাস বাট ও সিওর ভালোই হবে,,,

আফটার ২ আওয়ার ⏳⏳

ডক্টর ও.টি. থেকে হাসি মুখে বেরাতেই ইশারা আর প্রকাশ একটু ভরসা পেলো ডক্টর প্রকাশ কে বললো,,

ডক্টর: এভরিথিং ইস অলরাইট,,,পেশেন্ট আউট অফ ডেঞ্জার

প্রকাশ: আমরা কি ওর সাথে দেখা করতে পারি??

ডক্টর: হমম কিছুক্ষণ পর ওকে কেবিনে দেবো তখন দেখা করে আসবেন

ডক্টর চলে গেলেন আর কিছুক্ষণ পর ইশান কে কেবিনে দেওয়া হলে ইশারা আর প্রকাশ দুজন দেখা করতে গেলো,,,ইশান ঘুমোচ্ছে আর ইশারা ওর পাশে বসে আছে সেই সময় প্রকাশের কাছে একটা কল এলো আর প্রকাশ কল টা দেখেই সরে গেলো ওখান থেকে আর কেবিনের বাইরে চলে এলো,,

প্রকাশ: হমম বল কি খবর?

__স্যার সব খবর তো পেয়েইছি সঙ্গে মানুষ টাকে ও তুলে নিয়েছি

প্রকাশ: ভেরি গুড কোথায় রেখেছিস

__আপনি যেখানে বলে ছিলেন সেইখানেই

প্রকাশ: ওকে আমি আসছি

প্রকাশ ফোন টা রেখে বাঁকা হাসলো আর কেবিনে গিয়ে ইশারা কে বললো,,

প্রকাশ: জান! তুমি ইশানের সাথে কথা বলে বাড়ি যাবে তো?

ইশারা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো

প্রকাশ: ওকে ইশান ঘুম থেকে উথলে ওর সাথে কথা বলে তুমি বাড়ি চলে যেও বাইরে তোমার জন্য গাড়ি ওয়েট করবে,,আমার একটু কাজ আছে আমাকে যেতে হবে,,,ওকে??

ইশারা: কি কাজ??(ইশারায়)

প্রকাশ: তুমি কি বুঝবে আমার কাজ??

ইশারা না বোধক মাথা নাড়লো

প্রকাশ ইশারার কপালে আলতো চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলো আর তারপর ইশারা ইশানের ঘুম থেকে উঠতেই কথা বলতে লাগলো,,,

🔥🔥 আফটার সাম টাইম 🔥🔥

__আ,,আমায় ছ,,ছেড়ে দিন আ,,আমি কিছু জ,,জানি না

প্রকাশ: ওহ রিয়েলি?? তুই কিচ্ছু জানিস না?? (ছেলেটির আশে পাশে ঘুরে)

__ন,,না

প্রকাশ: দেখ ভালোয় ভালোয় সত্যি কথা টা বলে দে নাহলে তোর জন্য ভালো হবে না,,আর তুই যদি কিছু না জানিস তাহলে যে জানে তার নাম বল (ছেলেটির মুখের সামনে দাঁড়িয়ে)

__আমি কিচ্ছু জানি না,,আপনারা কি ব্যাপারে বলছেন সেটাই জানি না আমি,,

প্রকাশ: হা হা হা হা হা হা (বিকট শব্দে হাসতে লাগলো)

প্রকাশ হাসতে হাসতেই পাশ থেকে একটা ছুরি নিয়ে ছেলেটির হাতে এক পোচ দিয়ে দিলো আর ছেলেটি কুঁকীয়ে উঠলো

__আঁহহহহহহ!!

প্রকাশ: আমি মিথ্যে কথা একদম পছন্দ করি না এখনো সময় আছে সত্যি টা বলে দে,,

__আপনি কেনো আমায় টর্চার করছেন আমি তো বললাম আমি কিছু জানি না

প্রকাশ: জানিস না তাই না??(ছেলেটার চুলের মুটি ধরে)

__ন,,না

প্রকাশ নিজের কোমরে গোঁজা গান টা বার করে ডিরেক্ট ছেলেটার পায়ে চালিয়ে দিলো আর ছেলেটা চিৎকার করে উঠলো,,,সেই সময় পিছন দিক দিয়ে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ হলো প্রকাশ পিছন ফিরতেই দেখলো একটা ফুলদানি পড়ে আছে আর সদর দরজার সামনে ইশারা কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে চোখ বুজে,,,প্রকাশ ইশারা কে এভাবে এখানে দেখে পুরো ঘাবড়ে গেলো প্রকাশ আলতো পায়ে এগিয়ে গেলো ইশারার দিকে

প্রকাশ: ইশারা!!

ইশারা চোখ খুলে প্রকাশ কে সামনে আসতে দেখে পিছোতে লাগলো আর এক দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো ওখান থেকে……………….
.

.
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here