একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৩০+৩১+৩২
🍁
রাতে সাদে একটু হাটার জন্য এসে দেখে তানিয়া রেলিং এর উপর বসে ভিডিও কলে কথা বলছে নাঈমের সাথে । তানভীর পেছন থেকে এসে মাথায় হালকা চড় দিতেই তানিয়া ওমাগো ভুত বলে লাফিয়ে উঠে । তানভীর এমন রিয়েকশন দেখে চোখ কুচকে তাকায় ।তানিয়া বুকে হাত রেখে জোরে নিশ্বাস নিয়ে পড়ে যাওয়া ফোন তুলে নেয় ।
—উফফ ভাইয়া। ভয় পেয়ে গেছিলাম একদম।
—তোর পড়াশুনা নেই ? সাদে এসে প্রেমালাপ করছিস
হ্যালো ইয়াং ম্যান..এভাবে টাইম লস করলে চলবে ? ভালো ডক্টর না হলে আমি কিন্তু আমার বোনকে তোমার হাতে দিবো না ।
—সরি ভাইয়া কাল চলে যাচ্ছি । তারপর তো কথা হবে না বললেই চলে । তো ভাইয়া আমার ফ্রেন্ডের সাথে সব মিট মাট ??
—জানিনা । কথাই বলতে পারলাম আর কই? বাসায় এরকমি হয় ।
—আমার মনে হয় সহজে অভিমান ভাঙবে না । পুতুল বউয়ের ব্যপারটাও ক্লিয়ার করে নিবেন । বড্ড অবুঝ তো পরে আবার ___
— কেনো বলোতো ? আমার পুতুল বউ তো দুষ্টু পুতুল ই।
— কিন্তু ভাইয়া ..
কিন্তু ভাইয়া ভাবি কিন্তু সত্যি পুতুল এর মতো সুন্দর । তোর সাথে অনেক মানাবে ।
তানিয়া নাঈমকে আটকে দিয়ে বলে । নাঈম তো পুরো অবাক হয়ে বলে —তানিয়া কথা ঘুরাচ্ছো কেন ? তুমিতো বললে ভাইয়ার কথায় তুমি বলেছো ভাইয়ার একটা বউ আছে বলতে । সেটা ভেবেই তো লাবিবা বোকার মতো বিশ্বাস করে রাগ দেখায়, কাদে ।
তানিয়া — ইস এতো বার না করলাম তবুও গাধাটা বাশ দিলো আমায় ।তানভীরের দিকে তাকিয়ে দেখে রেগে মেগে একসের হয়ে তাকিয়ে আছে । মনে মনে লা ইলাহা ইল্লাললা পড়ে বললো
— আআসলে ভাইয়া ঐটাতো আমি রেগে গিয়ে বলেছিলাম । লাস্ট ইয়ার যখন তুমি আমাকে টুরে না যেতে দিলে । সরি😭
—পেত্নি শাকচুন্নি তোর ট্যুর আমি বের করছি দারা ।
পা থেকে স্যন্ডেল খুলে দেয় এক দৌড়ানি। তানিয়া ও মাগো ভাইগো বলে দৌড়।
ক্লাসে আসতেই আবার মেয়েদের চোখ দিয়ে হুমড়ি খাওয়া । আজ হুয়াইট শার্টের সাথে ব্লু কোর্ট ব্লু টাই ব্লু পেন্ট ব্রাউন বুট এ দারুন হ্যান্ডসাম লাগছে । ক্লাসে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে লাবিবা মিসিং । তার মানে এখনো বাসায় আছে । তানভীর বলতে থাকে
— হ্যালো এভরিওয়ান । হাউ আর ইউ ? আজ আমি কিছু ব্যসিক আলোচনা করবো স্ট্যাটিসটিক সম্পর্কে __________________
আজো একি ব্যপার হলো সব মেয়েরা হা করে স্যারকে চোখ দিয়ে গিলছে আর ছেলেরা মেয়েদের দিকে অসহায় চেহারার লুক দিচ্ছে । পড়ানো শেষে মার্কার পকেটে ঢুকানোর সময় জবা সাহস করে দাড়িয়ে বলে
— স্যার একটা প্রশ্ন ছিলো ।
— ক্লাস টাইম ইজ ওভার । নেক্সট ক্লাসে কোয়াশ্চনটা করবে ।
তানভীর বেরিয়ে যেতেই মিলি শারমিন জবা তিনজন তিনজনের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন । তারপর ক্লাস থেকে বেরিয়ে ক্যম্পাসের উদ্দ্যেশে বের হয় । ঘাসের উপর বসে মন খারাপ করে । একসাথেই বলে উঠে —আজো জানা হলো না ।
কোথা থেকে ছাত্রদলের নেতা বাবু ভাই হাজির ।
— এইযে রানী এলিজাবেথের সখীগন এলিজা কোথায় ?
তিনজন ই আমতা আমতা করতে থাকে ভয় পেয়ে ।
মনে মনে বাবুর বাচ্চার পনের গোষ্টী উদ্দার করতে থাকে ।
শারমিন —ইয়ে মানে ভাইয়া ও তো বাসায় গিয়েছে ।
— ও আচ্ছা । তিন সখী মিলে কার কথা ভাবো ? ইয়াং প্রিন্সিপালের কথা ? মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে দেখি।
মিলি চটপট করে বললো
– আপনার ক্রাস গুলোও স্যারকে নিয়ে ভাবছে । আর আপনি কিছুই করছেন না অবাক আমি ভাইয়া ।
পেছন থেকে মামুন এসে বলে
—অবাক হলেও সত্যি আমার ক্রাস এখন প্রিন্সিপাল কে দেখে ফিদা ।এবার সত্যিই কিছু একটা করতে হয়।
মিলি ঢুক গিলে । এই মামুন আর বাবু ছাত্রদলের লিডার। অনেক মেয়েদের ক্রাস। তাদের দারা সব সম্ভব । সুমনের সাথে রিলেশন থাকা কালীন হটাৎ করেই একদিন বাইক থেকে নেমে সামনে দাড়িয়ে বলে —মিলি তোমাকে ভাল্লাগছে । আজ থেকে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড।
বললেই হয় নাকি ? মাথা মস্তক ঘুরে যায় । একটা রিলেশন থাকা কালীন এর সাথে কিভাবে রিলেশন সম্ভব ? সুমন পাগলা টা তো শহীদ খাবো । আগে পিছে না তাকিয়ে দৌড় দিয়ে পালাইছে । সেই থেকে সামনে পড়ে না আর । এখন সুমনের সাথে ব্রেকাপ হয়ে গেছে। মামুনের সাথে মন্দ হয়না ।
শারমিন চট করে বলে – ভাইয়া আমরা এখন একটু গ্রুপ স্টার্ডি করবো । করি ??
দুজনেই চলে যায় ।
তানভীর লাবিবার ফোনে বার বার ফোন দিচ্ছে । লাবিবা আননোন নাম্বার দেখে তুলছেনা । গালে হাত দিয়ে নাম্বারের দিক তাকিয়ে আছে । আব্বু না করে দিয়েছে খবরদার রং নাম্বারে কল এলে ধরবে না । তুলবে কি তুলবেনা কনফিউশনে ভুগছে । ছেসরা না হলে এতো বার কেউ ফোন দেয় নাকি । এই ব্যটাকে আচ্ছামতো বকে দিতে হবে । কোন মাফ নেই । ধরলাম । রেডি 3 2 1
— এই কে রে বারবার ফোন দিস ? ধরছিনা দেখেও কি বুঝছিস না তোর ফোন ধরবোনা আমি ? মুলার জুস খাইয়ে আমার ডিস্টাব নষ্ট করস। তোর ঘরে কি মা বোন নাই ? শালা ছেসরা ঘরের ছেসরা মেয়ে মানুষের কন্ঠ শুনলেই বার বার ফোন দিয়ে ডিস্টাব নষ্ট করতে মন চায় তাই না ? তোর বাপ মা এই শিক্ষা __
— দুষ্টু পুতুল😠(চিল্লিয়ে)
লাবিবার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলেও কেচ করে ফেলে কানে ধরে বলে
—স্যা স্যা স্যার স্যারর..।
—ফাস্ট অফ অল বার বার কেন ফোন দিতে হচ্ছে আমাকে ? ধরছোনা কেনো ? আমি মুলার জুস খাই তাইনা ?😠আমার ঘরে মা ও আছে বোন ও আছে বউ ও আছে । আজাইরা কথা বলতে এক্সপার্ট তাইনা ? মেয়ে কন্ঠ শুনে ফোন দিয়েছি আমি ? তুমি কি কথা বলেছিলে এর আগে ফোন ধরে ?বাপ মা তুলো । বেয়াদপ মেয়ে কথাকার ।
–সরি স্যার । আর হবে না ।
—এখনো বাসায় কি করছো ? থার্ড ইয়ারেও কি ইমপ্রুভ দিতে চাও ? আজি আসবে । কাকাকে সাথে নিয়ে আসবে । কাকা না আসলে বলো আমি গিয়ে নিয়ে আসছি ।
—আব্বুই নিয়ে যাবে । আপনি কেনো আসবেন? লাগবেনা আপনার আসা ।
ফোনটা কেটে দেয় লাবিবা । ভীষন মন খারাপ হয়ে গেছে ।মা বলেছে বোন বলেছে বউয়ের কথা কেনো বলতে গেলো ? বলবেই তো । বিলাতি বধু বলে কথা । পুতুলের মতো বউ । আলু ভর্তা হুহহহ😏।
বিকালেই ইসমাইলকে নিয়ে হোস্টেলে চলে আসে লাবিবা । হোস্টেলে এলে আর মন খারাপ থাকে না । শারমিনের সাথে গল্প করলেই মন ভালো হয়ে যায় ।
পরদিন সকালে ইয়েলো কালার একটা গাউন পড়ে পিংক কালার হিযআপ বেধে নেয় । উড়না বরাবরের জন্য একটা উটকো ঝামেলা মনে হয় । আগেও নেয় নি এখনো নিতে চায় না । বড় মাঝারি করে হিযআপ পড়ে যেন উড়না না নিতে হয় । ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে ।
ক্লাসে তানভীর ঢুকতেই চোখ পড়ে হলুদ পুতুলটার উপর । মনে পড়ে যায় যেদিন প্রথম এই পুতুলটাকে দেখেছিলো সেদিন হলুদ একটা জামাই পড়া ছিলো । কিন্তু সেটা ছিলো হাটু অব্দি আর এটা গোড়ালি অব্দি । সেদিন দু পাশে দুটো ঝুটি ছিলো । আর আজ হিযআপ পড়া । সেদিন ছিলো কিশোরী কন্যা আর আজ যুবতী কন্যা । আজকের সৌন্দর্যের তুলনায় সেদিনের সৌন্দর্য কিছুই নয় ।
স্যার এইভাবে দাড়িয়ে পড়ায় সবাই অবাক । যে স্যার হন হন করে ঢুকে ইংলিশে লেকচার দিতে থাকে একের পর এক । সেই স্যার কিনা দরজাতেই দাড়িয়ে তাও আবার চোখ আটকে গিয়েছে লাবিবার উপরে । সবাই মনে মনে জলে যায় । তাদের প্রতি স্যারের চোখ পড়লো না আর লাবিবা একটু সুন্দরী জন্য ই দেখেই দাড়িয়ে গেলো । ছাত্ররা হালকা কাশতেই ধ্যান ভাঙে তানভীরের । এগিয়ে এসে ডেস্কের কাছে দাড়ায় । স্টুডেন্টরা এখনো বসেনি । তানভীরের চোখ এখনো লাবিবার দিকে । লাবিবা আশেপাশে তাকি তুকি করছে। জবার গুতো খেয়ে শারমিন বলে উঠে
— স্যার ও আমাদের ফ্রেন্ড। আপনার ক্লাসে আজি প্রথম । এতোদিন বাসায় ছিলো তাই দেখেন নি ।
তানভীর হালকা কেশে উঠে । এটা রিতীমতো লজ্জা দেওয়া ছাড়া কিছুই নয় । নিজের বোকামি করা টা সবাই লক্ষ্য করেছে তাহলে । পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার জন্য ঠিক হয়ে বলে
— ওহ আই সি । হুয়াট ইজ ইউর নেইম ? (লাবিবাকে উদ্দ্যেশ্য করে )
— স্যার , মাই নেইম ইজ লাবিবা তানহা এ..লিজা
ডটার অফ ইসমাইল সাবিনা..
তানভীরের নজর এবার লাবিবার মুখের দিকে না হয়ে কোমড়ের দিকে ছিলো । মেয়েটা আজো কোমড় বাকিয়ে বাকিয়ে নাম বলে । মনে মনে হাসে তানভীর ।
— গুড । সিট ডাউন ।
______________
ক্লাস শেষে একটা বাড়তি ক্লাস করে ক্যাম্পাসে এসেছে লাবিবা জবা মিলি । শারমিন বাড়তি ক্লাস না করেই চলে গেছে । এরিমধ্যে লাইব্রেরী মামা এসে সম্মানের সহিত বলে রানী এলিজাবেথ আপনাকে অডিটরিয়মে স্যার ডাকছে । বলেই ফুড়ুৎ করে চলে যায় । ভার্সিটির প্রায় সবাই এলিজাবেথ বলে ডাকে । রানী এলিজাবেথ ..ভালোই লাগে মন্দ না । কিন্তু কোন স্যার ডাকে ? অডিটরিয়মে কেনো ? সামনে অনুষ্টান আছে তার জন্য কি ? ডান্স নিয়ে কিছু বলবে ? যাওয়া যাক দেখি । জবা মিলি চলে যায় তাদের বাসায় । লাবিবা অডিটরিয়মের ভিতরে ঢুকে আস্তে আস্তে অন্ধকারে পা ফেলতে থাকে। সুইচ বোর্ডের দিকে আলো জালানোর জন্য এগুতে কানে আসে সফটলি মিউজিক । আস্তে আস্তে টোন বাড়তে থাকে । বাইরের আলো কিছুটা উপর থেকে ভিতরে পড়েছে । সেই আলোয় মিউজিক যেদিক থেকে এসেছে সে দিকে এগুতে থাকে । সামনেই হটাৎ করে আলো জেলে ওঠে । আলোর নিচে আর কেউ নয় তানভীর । হাতে একটা ইলেকট্রিক গিটার । লাবিবা ঠোটের কোনে অজান্তেই হাসি ফুটে ওঠে । একটু একটু করে এগুতে থাকে । তানভীর মিউজিক চেঞ্জ করে গিটারে গান ধরে
🎶🎶তুমি আর তো কারো নও শুধু আমার
যত দূরে সরে যাও রবে আমার
স্তব্ধ সময় টাকে ধরে রেখে
স্মৃতির পাতায় শুধু তুমি আমার
কেনো আজ এতো একা আমি
আলো হয়ে দূরে তুমি
আলো আলো আমি কখনো খুজে পাবো না
চাদের আলো তুমি কখনো আমার হবে না ।।
হবেনা….হবেনা…হবেনা…।
রোমন্থন করি ফেলে আসা, দৃশ্যপট সপ্নে আকাঁ।
হয়তো ভবিষ্যতের আড়ালে
ঘাসের চাদরে শুয়ে একা
আকাশের পানে চেয়ে জেগে থাকা …….
…………………………………………🎶🎶🎶
To be continue ____
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৩১
🍁
হাত ধরে একটানে লাবিবাকে কোলে বসিয়ে নেয় । লাবিবা ওমাগো বলে চেচায় । তানভীর লাবিবার মুখের দিকে ভ্রু উচিয়ে তাকায় ।
—চেচাও কেনো ? লাবিবা ঢুক গিলে বলে —এভাবে কেউ টান দেয় নাকি ? আমার যদি আত্মা উড়ে যেতো তখন তো আমি মরেই যেতাম। আমার এতো মরার শখ নেই তারাতারি। আমার এখনো বিয়ে হয় নাই 😒।
তানভীরের ভ্রু টা আরেকটু কুচকে যায় ।
—মরে যাওয়ার সাথে বিয়ের সম্পর্ক কি ?
— আছে তো । এখনি মরবো নাকি ! বিয়ে হবে, বাচ্চা হবে, নাতির মুখ দেখবো , নাতির ঘরের পুতি-পুতির ঘরের হুতি – হুতির ঘরের মুতি দেখবো তবেই না মরবো 😊।
—পুতি পর্যন্ত শুনেছি এই হুতি আর মুতির কথা তো কখনো শুনি নি । হুতি কোন শব্দ নেই বাট মুতি আছে আই মিন প্রসাব…??
—এএ মা ছিহ ! থু থু! আছে আছে । আপনি শুনবেনি না ।
—আপনি তো সব জান্তা । সব সময় মুডের তেরোটা বাজায় ।
একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করে সামনের দিকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে । লাবিবা আবার আও করে উঠে । সেদিকে মন না দিয়ে গিটার টা লাবিবার কোলের উপর তুলে দু হাতে ধরে । এখন লাবিবা তানভীরের দু বাহুতে আবদ্ধ। কুচকে গিয়ে তানভীরের দিক ই চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে । তানভীর মুচকি হাসতেই সামনের দিকে ফিরে গিটারের দিকে তাকায় । লাবিবার কাধে থুতনি রেখে বলে
—দুষ্টু পুতুল ..কেমন লাগলো আমার গান ? তুমি তো গিটার বাজানো শিখতে চেয়েছিলে । হাত দাও গিটারে ..
তানভীর নিজেই হাত দুটো ধরে গিটারের উপর রাখে । নিজের আঙুলের মাঝে লাবিবার আঙুল ঢুকিয়ে আলতো করে ধরে রাখে ।
— তোমার হাত আঙুল ঠিক আগের মতোই সফট দুষ্টু পুতুল । একটুও হার্ড হয়নি ।
আঙুল বের করে গিটারের তারে হাত রাখে । একেকটা স্টেপ শেখাতে থাকে এক এক করে । লাবিবা একটু একটু করে তারে টান লাগাতে থাকে । মনে মনে খুব খুশি । এই গিটার টাই একদিন শিখতে চেয়েছিলো। দেয়ালে ঝুলানো ছিলো এটা । স্যারের প্রিয় গিটার । এতো বছর পর ও তিনি মনে রেখেছেন । আজ শেখানোর জন্যও এনেছেন । লাবিবার হাত ছেড়ে দিয়েছে তানভীর লাবিবা একাই বাজানোর ট্রাই করছে । পেটের দিকে হাত দুটে দিয়ে নিজের সাথে আষ্টে পৃষ্টে বেধে ফেলে তানভীর । লাবিবা সামান্য কেপে উঠে । ধীরে ধীরে ঘাড়ে মুখ গুজতে থাকে । হিযআপ ভেদ করে গরম নিশ্বাস গুলো ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে। শরীরের পশম গুলো কাটা দিয়ে উঠে । চোখ দুটো শক্ত করে বন্ধ করে নেয় । এ কেমন অনুভূতি?গিটারে হাত অনেক আগেই থেমে গেছে । মুখ দিয়ে কথা বের হতে চাচ্ছে না । তবুও অনেক কষ্টে চেচিয়ে বলেই ফেলে — স্যার আমি আপনার দু নাম্বার বউ হবো না।
বলেই এক লাফে কোল থেকে নেমে দাড়ায় । তানভীর অবাক হয়ে তাকায় । ওকে কখন বললাম দুই নাম্বার বউ হতে ? কখন কি বলতে হয় এখনো কি বুঝে না দুষ্টু পুতুল ..। মুডের তেরটা বাজাতে এক পা এগিয়ে ।
— তাহলে কতো নাম্বার বউ হতে চাও ? তিন নাম্বার নাকি চার ?
—কিহহ স্যার আপনি এতো গুলা বিয়ে করবেন ? আপনার তো চরিত্রে সমস্যা নষ্ট দেখি ।
—এতো গুলা কোথায় ? মাত্র চারটা বিয়ে করতে চাচ্ছি । ইসলাম অনুমোদিতো । আর থাকলো চরিত্র ..সেটা তো অবশ্যই সমস্যা । নয়তো কি ছাত্রীর প্রেমে পড়ে বিয়ে করতে চাই !!
— স্যার আপনার ঐ বিলাতি বধুও আপনার ছাত্রী ছিলো?
—- হা । ও ছাত্রী । তুমিও ছাত্রী । আরো যে দুটো হবে ওরাও ছাত্রী ।তোমার কোন সমস্যা নষ্ট হবে ? তবে তুমি যদি আমাকে আর বিয়ে করতে না করো আমি কিন্তু আর করবোনা । যতোই হোক তুমি আমার ছাত্রী তোমার কথা তো ফেলতে পারি না ।
এবার লাবিবা নিশ্চিত কাদবে । চোখে নদীর ঢেউ এর মতো টলমল করছে জল । পরবে পরবে করে দু ফোটা পরেই গেলো । তানভীর যেনো এটাই চাইছিলো । দুষ্টু পুতুলের কান্নাটা শুধু এতো দিন ফিল করেছে কিন্তু কান্নারতো কিউট মুখটা দেখতে পারেনি । আজ তার চোখের এই তৃষ্ণা মিটবে । কিন্তু তানভীরকে হতাশ করে কিছু না বলেই ব্যাগ নিয়ে হনহনিয়ে বেড়িয়ে পড়ে লাবিবা । তানভীর পেছন থেকে দুষ্টু পুতুল দুষ্টু পুতুল বলে অনেকক্ষন ডাকলেও শুনে না ।
__________________
ফুচকার দোকানের ইয়া বড়ো ছাতার নিচে বসে আছে লাবিবা নাঈম তানিয়া । লাবিবা শুধু নাঈমকেই আসতে বলেছিলো কিন্তু তানিয়াটাও চলে আসছে । নিজে তো কিছু বলবেই না । ভাইয়ের আদেশ লাবিবাকে কিছু বলা যাবেনা । টক ভর্তি ফুচকা মুখে দিয়ে চিবুতে চিবুতে বললো
—কিরে লাবু ? তোদের জালায় কি আমি ঠিকমতো পড়াশুনা করতে পারবো না ? কলেজ খুলেছে অথচো যেতে পারছি না । একজন বলছে যাও যাও আবার যেতে নিলে যেতে দিচ্ছে না । আমি রাতে বাস ধরবো রেড়ি হয়ে উঠতে গেছি তখন আরেকজন ফোন করে বলে যাবি না । কাল দেখা কর । আমার কলেজে আয় । আরেকদিকে আরেকজন সাফ সাফ বলে দিয়েছে বড় ডাক্তার না হলে নাকি তার বোন বিয়ে দিবে না । এতো জ্বালা কেন আমার ? আর ভাল্লাগেনা ।
তানিয়া ভেংচি কেটে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় ।
লাবিবা চিন্তিত মুখে টকের বাটিতে চামচ ঘুরাতে ঘুরাতে বলে
— স্যারের বিলাতি বধু দেখতে কেমন রে নাঈম ? কিসে পড়ে ? কেমন ঘরের মেয়ে ? লেখাপড়ায় কেমন ?
উত্তরের আশায় নাঈমের দিকে তাকিয়ে । নাঈম ও লাবিবার দিকে তাকিয়ে । তানিয়া চুপ । এই প্রশ্ন গুলো আজ তার জন্য উঠে আসছে । লাবিবা এগুলো প্রশ্ন করছে তানভীর জানতে পারলে আর তানিয়ার রক্ষে নেই। তাই মুখে কুলুপ লাগিয়ে দিয়েছে । নাঈমকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে লাবিবা আবারো বলে —তানিয়া কিছু বলবে না । তাই তোকে জিজ্জাসা করছি । তুই তো দেখেছিস তাকে । আমার থেকেও কি সুন্দরী ? নাকি আমি তার কোন দিক দিয়েই লেভেলে যেতে পারি না ? বলনা দোস্ত। বল ।
নাঈম বুঝতে পারে লাবিবার মন খারাপ । শুধু মন খারাপ হলেই তো চলে না ..খুব মন খারাপ হতে হবে । শালার বউ তোর জন্যই তো এই তানপুরাটার সাথে প্রেম হয়ছে । এখন সারাক্ষন মিউজিক বাজিয়ে বাজিয়ে জীবনটা ত্যানা ত্যানা বানিয়ে দিতেছে। প্যারাময় লাইফ । মনে মনে এক পৈশাচিক আনন্দ পায় নাঈম ।
—দোস্ত..স্যারের বিলাতি বধু ..বিলাতি দুধের মতোই ফ্রেশ বুঝলি !! কোয়েল পাখির ডিমের মতো গোল্লা গোল্লা চোখ । বাশের কোরল চিনিস ? যেটা চিংড়ি মাছ দিয়ে ভাজি খাইতে হেব্বি টেস্টি । তুই কোন দিন খাস নাই । আমি খাইছি । এগুলা উপজাতিরা খায় ।আমার এক উপজাতি বন্ধু আছে ও খাওয়াইছিলো বাড়ি থেকে এনে আমারে । ঐরকম নাক বুঝলি!! আধপাকা টমেটো আছে না ? মানে পাকবো পাকবো ভাব কিন্তু পুরোপুরি পাকা না ঐরকম দুইটা গাল। কমলার থেকে কোয়া আলাদা করলে যেরকম কোয়া দেখতে হয়না …ঐটার উপর যদি চকলেট ঢেলে দিস যেরকম দেখতে সেই রকম ঠোট । গোল ও না আবার লম্বাও না এরোকম লাউ দেখতে যেমন তেমনি গাল । গায়ের রং মুলার মতো সাদাও না আবার শিমলা আলুর মতো ___
তানিয়া দেয় এক ধাক্কা । বিশাল তেজ নিয়ে বলে
—ঐ তুমি আমার ভাবীর বর্ননা দিচ্ছো নাকি খাবারের স্টেটমেন্ট দিচ্ছো ? তুমি ডাক্তারি পড়ছো নাকি খাবার নিয়ে রিসার্স করছো বলোতো ? সত্যি করে বলবা ।
নাঈম উঠে দাড়ায় । এই হয়েছে এক জালা । প্রত্যেক কথায় ভুল ধরা আর প্রেসার দেওয়া ।
—জান ডাক্তারি পড়তে গিলে এইসব খাবার নিয়ে রিসার্স করতে হয় । তুমি ওসব বুঝবেনা । পড়ছ তো আর্টস নিয়ে ।
—কি বললে তুমি ??
লাবিবা দাড়িয়ে পড়ে । বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে বলে
—তোদের থেকে যে সঠিক তথ্য টা পাবো না ঐটা আমার আগেই বুঝা উচিত ছিলো । থাক তোরা গেলাম আমি ।
—ঐ ফুচকার টাকাটা দিয়ে যা ।
ব্যাগ থেকে টাকা বের করে হাতে দিয়ে চলে আসে ।
_________________
বিকাল বেলা হোস্টেল থেকে বের হয়ে সামনের রাস্তাতেই হাটছে শারমিন লাবিবা । হালকা শীতে চাদর গায়ে দিয়ে মুখে চকলেট রেখে চুটকাতে চুটকাতে হাটছে । রাস্তার ওপাশেই কলেজ পুকুর। রাস্তা পার হওয়ার সময় সামনে দুটো বাইক এসে থামে । সাথে সাথে লাবিবা শারমিনের কলিজাও কেপে উঠে । একটাতে বাবু আর পেছনে তার এক চেলা আরেকটাতে মামুন পেছনে তার দুই চেলা । এদের দেখলেই ভয় লাগে লাবিবার বিশেষ করে বাবুকে দেখলে । বাবু রোদচশমা মথায় তুলে মানের দিকে ঝুকে বলে –কিগো কিউটি স্মার্ট গার্ল ..রানী এলিজাবেথ ..তোমার এই বাবু কিং কে ছেড়ে কই গিয়ে থাকো বলোতো তুমি ? তোমারেযে আমি নিশি দিন খুজি ।
—- কানা মানুষের সারাজীবন হাতিয়ে হাতিয়ে চলতেই যাবো । খুইজা আর পাবেন না ।
—উফফফ এই তেজ টাই তো আমাকে ঘায়েল করে । তোমারেই তো আমার চাই রানী । তোমার এই তেজ যেদিন এই রাজা ভাঙ্গাইতে পারবো সেইদিন রাজা শান্ত হবো।
—-পাগলা কুকুর শান্ত হয়লেই কি না হয়লেই কি? ঘেউ ঘেউ করলে লাঠি দিয়ে দৌড়ানি দিতে হয় ।
—উফফফ আবারো সেই তেজ । শোন ডারলিং হ্যান্ডসাম প্রিন্সিপাল রে দেইখা আবার টাস্কি খাইও না । রেজাল্ট ভালো হবে না । তোমার রাজা কিন্তু আমিই হমু । উম্মাহ..ফ্লাইং কিস ই দিলাম রাস্তার মধ্যে বুঝছো তো । রসগোল্লার রস সবার সামনে খাওয়া যায় না । চলি রানী ।
বাইক দুটো চলে যেতেই শারমিন বুকের মধ্যে থু থু দিয়ে বলে —ঐ বেটা বাবু তোর ক্ষতি করেই ছাড়বো দেখিস । একটা বয় ফ্রেন্ড বানাইতে কতো বললাম শুনলিনাতো । বয়ফ্রেন্ড থাকলে আর এই সমস্যা হতো না। লাবিবা চাদর জড়িয়ে পুকুরের দিকে হাটা ধরে।
—- এরা গোন্ডা । বিএফ থাকলে বিএফকেই মারতো । এদের চোখে পড়লেই হলো আর রক্ষে নেই । কোন মতে অনার্সটা শেষ করি । এই এলাকায় আর পা রাখবো না ।
—মিলির ব্যপারটা দেখ । সুমন ভাই যেই মামুন ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললো তখনি মামুন ভাই মেনে গেলো । ছোট ভাইয়ের জিএফ মেনে নিলো । তোর বেলায় কেনো অন্যথায় হবে ?
—কারন মিলি আর আমার মাঝে অনেক ভেদাভেদ । শারমিন দাড়িয়ে পড়লো । লাবিবার দিকে তাকিয়ে থাকলো এক মিনিটের মতো । তারপর হাটা দিলো । লাবিবাও এগুতে এগুতে বললো
—বাবু আর মামুনের মাঝে আকাশ পাতাল তফাত । মামুন ভাইয়ের একটা পরিবার আছে সুন্দর । সেই পরিবারের আদর্শে থাকে সে । আর বাবু একটা মেয়েবাজ । ডেইলি রাতে মেয়ে না হলে তার চলে না। তুই রিলেশন করতে চা তোর সাথেও করে রাত কাটিয়ে ছেড়ে দিবে । সবাই তাকে দেখেই পটে যায় । কিন্তু আমার তার দিকে ইন্টারেস্ট নেই দেখে আমার সাথে লেগেছে । বাজে দৃষ্টি দেয় সব সময় । জানস দুই তিন দিন আমাকে টাচ করার চেষ্টাও করেছে । তুই সাথে ছিলি তাই করতে পারেনি ।
—আমার সামনেই টাচ করতে চায় অথচ আমি কিছুই বুঝতে পারি না । অবাক খাইছি । এই বাবু তোর পিছু লাগলো কি করে রে ??
To be continue _
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৩২
🍁
অনার্স 2য় বর্ষের প্রথম দিকে তোরা সবাই কতো ফ্যাশনাবল ছিলি । একেকদিন একেক ডিজাইনের ড্রেস , কালারফুল হেয়ার, মেকাপ, অরনামেন্টস কতো কি । তোদের দেখে খুব ভালো লাগতো আমার । তোদের কতো সুন্দর দেখাতো । তোদের মতো আমি চলতে পারতাম না । আব্বু আমাকে নিয়ে ভয় পেতো তাই বোরখা পড়াতো । কিন্তু ওসব পড়ে আমি খুবি আন কমফরটেবল ফিল করতাম । নেক আপ বাধতে হতো। আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতো । সারাদিনে মাথা ঘেমে চুলের বারোটা বাজলো । গরম এমনিতেই সহ্য করতে পারি না তার উপর বোরখা। কয়েকদিন ফিট ও খাইছি । একদিন ঠিক করলাম তোদের মতো বের হবো । একটা জেগিন্স পড়ে লং টপস পড়ে নিলাম । গলায় উড়না পেচিয়ে চুল উচু করে খোপা করে নিলাম । একটু পাউডার মেখে লিপিস্টিক আর নীল কাজল দিলাম । তারপর বেরিয়ে এলাম ব্যাগ নিয়ে হিল পড়ে । ক্লাস করলাম । সবার সাথে যেনো আমি মিশে গেছি । তারপর ছুটির পর একা পড়ে গেলাম । হাটতে লাগলাম। অডিটরিয়মের সামনে বাবুরা আড্ডা দিচ্ছিলো। আমাকে দেখে কয়েকজন পিছু থেকে ডাক দিলো —এক্সকিউজ মি আপু। আপু একটু দাড়ান । একটু কথা আছে ।
আমি দাড়িয়ে পড়লাম । পেছনে তাকিয়ে দেখি কয়েকজন । দুটো ছেলে এসে বললো —আপু আপনার নাম্বারটাকি পাওয়া যাবে ? আমাদের বাবু ভাই আপনাকে কল দিবে ।
—বাবু ভাই কে ? সে কেনো কল দিবে ? আপনারা কেনো এলেন ? মাসে কত টাকা মাইনে পান কাজ করে ?
পেছন থেকে বাবু এসে বলে —হ্যালো স্মার্ট গার্ল , আমি বাবু ।এই কলেজের মাথা। আমি নাম্বার চেয়েছি ভাল্লাগছে তোমায় । আর ওরা আমার ছেলে পুলে ।
—ও আমার আল্লাহ , আপনি মাথা?তাহলে এইযে চল্লিশ পঞ্চাশ একর কলেজের এরিয়া এইটা আপনার পেট? আপনি এতো মোটা 😱 । একটা গান আসতেছে গেয়েই ফেলি ।
🎶 আপনার ভুরি এতো মোটা এতো মোটা ..
আপনি নাকি চল্লিশ পঞ্চাশ একর জমির মাথা 🎶
সুন্দর গাইলাম না ? আর আপনার কয়টা ছেলে ? কত বছর বয়সে বিয়ে করেছেন ? আমি সিউর আপনি দশ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন তাই এখন আপনা বিশ বছরের ছেলে আছে । ওমা আপনার তো তাহলে অনেকগুলো বউ 😱নয়তো এতোগুলা বাচ্চা একসমান কেমনে হয় ? সাথের একজন কে জিজ্জাসা করে —এইযে ভাতিজা তোমার আম্মু কয়টা বলোতো?
বাবু একদম সামনে এসে বলে — ফাজলামি করো ?এতোগুলা কথা বাবুর সামনে বাবুর জিএফ ই একমাত্র বলতে পারে । হয়ে গেলে আমার জিএফ । নাম্বার বলো ।
—017 ফুসকা খাওয়াবেন নাকি খাবেন ?
—ঐ তগো ভাবী ফুসকা খাবো । আনসনাকে ?
আসলেই ক্ষুদা পায়ছিলো । আমিই আগে আগে হেটে ফুসকা খাইতে গেলাম । চেয়ারে বসতেই ফুসকার প্লেট হাতে পাইলাম । খাওয়া শুরু করলাম । দুই প্লেট ফুসকা খাওয়ার পর দেখি যে আমার দিকে তাকাইয়া আছে । আমি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে ফুসকা মামাকে দিয়ে জোরে জোরে হেটে চলে আসছি । পেছন থেকে ডাকছে শুনি নাই । তারপর আমার খোজ লাগায়ছে কিন্তু কেউ বলতে পারে নাই । কেউ তো দেখেই নাই আমায় । তারপর পহেলা বৈশাখে নাচ করার সময় দেখেছে । সাথে সাথে আমার সব খুজ খবর নিয়ে নিয়েছে । পুরো নাচের সময় তাকাইয়াই ছিলো আমি দেখেছি আড় চোখে । কমন রুমের দিক যাওয়ার সময় পথ আটকে ধরে । আমি চলে যেতে নিতে শাড়ির আচল টেনে ধরে । আমি রাগ পেয়ে পেছন দিক ফিরেই গালে চড় বসিয়ে দেই । তখন রেগে আমাকেও চড় দেয় ।
—শালী তোর এতো বড় সাহস আমার গালে চড় দেস ।বাবুর গালে চড়!! আজ তোরে আমি দেখে ছাড়বো । মিলন মামা দেখে স্যার দের খবর দেয় । স্যার মেডাম সবাই চলে আসে । বাবুকে ধরে বোঝায় । তখন থেকে আমার পিছু নিয়েছে । বাবু নোংরা মনমানসিকতার লোক। আমার সব সময় ভয় করে কখন না জানি কি করে ফেলে । একদিন একা রুমে পেয়ে ওর খারাপ মানসিকতার পরিচয় দিতে চেয়েছিলো । আমি আল্লার রহমতে বেচে ফিরছি । সেই ভয়ানক কথা আমি মনে করতে চাই না । আমার মাথা ধরে ।
শারমিন লাবিবার মাথা বুকে জড়িয়ে নেয় ।
—দোস্ত তোর কি সত্যি সত্যি মাথা ধরতেছে ?
—হু ।
— এর জন্য তুই সব সময় কলেজে চুপচাপ থাকস । তোর মেজাজ খারাপ থাকে । হার্ড পারসনের মতো কথা বলিস ।
—হু।
—আজ বুঝলাম হোস্টেল তো পুরা তুলে রাখস তোর জালায় বরই জলপাই গাছের একটা ফল ও কেউ খাইতে পারে না ,আমগুলা পাকার আগেই ভেনিস হয়ে যায়,পাশের বিল্ডিং গুলার কাচ ভাঙে তোর বলের জন্য, বড় আপুরা কিছু বলতে এলে হেলে পড়স তাদের উপরেই আর কলেজে কেন এতো ভদ্র। এতো দিনতো আর এই কথা জানতাম না । আমি ছিলাম না ঐ সময়ে ।
লাবিবা মাথা তুলে বলে —তারমানে তুই কি বলতে চাস আমি অভদ্র ???
—একদমি না মা । তুই কিউটমিউট মিস্টি লিচু😋।উম্মাহহ😘😘।
—ঐঐ একদম না । মাইনষের প্রোপার্টিতে হাত দেস কিলা ?
—ওকে ওকে । তোর ঐ লিচুর মতো গালে ভাইয়াই চুমো দিবে । আমরা ছোবোও না । এবার চল সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।
_______________
ক্লাসে ঢুকে তানভীর তৃপ্তির হাসি হাসে । আজ গোলাপি গাউন হিযআপ পড়েছে লাবিবা । তানভীর ও গোলাটি কোর্ট। হুয়াট এ কম্বিনেশন~দুজনের ড্রেস ই বেনারসি সিল্কের । ডেইলি মিলিয়ে ড্রেস পড়াই যায় । কিউট কাপল লাগবে । লাবিবা নিচ দিক হয়ে নোট গুলো তুলে নিচ্ছে । মাঝে মাঝে তানভীরের দিকে তাকাচ্ছে । কতোইনা নিষ্পাপ একটা মুখ । ক্লাস শেষে বেরিয়ে আসে তানভীর । শারমিন জবা মিলি পিছে পিছে দৌড়..লাবিবা বসে ছিলো জবা লাবিবাকে তুলে বলে –চল চল আজ জেনেই ছাড়বো ।
—আরে কি জেনে ছাড়বি ?
–চলতো ..
তানভীরের সাথে এসে দাড়িয়ে বলে
–স্যার স্যার একটু দাড়ান প্লিজ। তানভীর দাড়ায় ।
–কিছু বলবে ?
—স্যার আজকে আমাদের প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতেই হবে ।
তানভীর লাবিবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকায় । জবা বলে — স্যার আপনি কি ম্যারিড নাকি আনমেরিড ?সরি স্যার পার্সোনাল হলেও আমাদের জানা জরুরি।
প্রশ্ন শুনে তানভীর অবাক হয় । পরক্ষনেই লাবিবার দিকে তাকিয়ে বাকা স্মাইল দেয় । সেই স্মাইলে মিলি তো ফিদা । হেলে শারমিনের গায়ের উপর পড়ে যায় ।
লাবিবার অশান্ত চাহনির দিক তাকিয়ে বলে —দুটোই।বলে চলে যায় । এদিকে সবাই কনফিউজড । লাবিবা তো রাগে জলে ছারখার । হুংকার ছেড়ে বলে
–কুত্তি প্রিন্সিপালের দিক ও হাত বাড়াতে চাস । মাইনষের জামাইয়ের দিক নজর দেস । তোদের ঘরে কি বাপ ভাই নাই । যারে দেখস তার পিছেই লাগস 😡
মিলি লাজুক ভাবে মুচকি হেসে বলে –স্যারের জিএফ আছে তাই এমন বললো । মোড় ঘুরানোর জন্য তো আমি আছি । কাল থেকে চিনতেই পারবিনা আমায়। সর সর আমার এক্ষুনি পার্লারে গিয়ে বসতে হবে । বাই দোস্ত।
লাবিবা মাথা পুরো হ্যাং । মানে কি ? তারমানে এই মুলা স্যারের তিন নাম্বার বউ হতে যাচ্ছে আর আমার ছোট সতিন😳 কাভি নেহি । এর ব্যবস্থা করতেই হবে আমার ।
—মামুন ভাই আপনারে ডাকে ঐখানে দাড়িয়ে এক আপা । এক্ষুনি যেতে বলছে ।
—-আমাকে ডাকে ? স্ট্রেঞ্জ!!
লাবিবাকে দেখে চমকে যায় । যেই মেয়ে ভয় পেয়ে সামনেই আসতে চায় না সেই মেয়ে ডাকছে । কাছে যেতেই আরো চমক । লাবিবা বেঞ্চিতে বসে বলে
—-মামুনভাই । বস বস । ওরে আমার সোনা ভাইটারে । আমার তো ভাই নাই তোমাকে আমার নিজের ভাইই মনে করি । বসোনা পাশে ।
মামুন খুশি হয়ে যায় । পাশে বসে পড়ে ।
—বলো বোন ।
— শোন ভাই অনেকদিন সিংগেল আছো । আর কতো থাকবা ? আমি কিন্তু এটা মেনে নিবো না । আমার ভাবী চাই মানে চাই । এবার সময় এসে গেছে মিলিকে নিজের করে নেওয়ার ।
কথা একটানে বলেই লাবিবা ছেড়ে দিলো । উত্তরের অপেক্ষায় মামুনের দিক তাকিয়ে । মানুন তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে —ছোট ভাইয়ের জি এফ । ছোট বোনের মতো । সেটা আর হবার নয় ।
—আরে তুমিতো দেখি কোন খবর ই জানো না । সুমনের সাথে মিলির আর রিলেশন নেই । আর তাদের ব্রেকাপ টা কে করিয়েছে বলোতো ? তোমার এই ছোট বোন আমি । মিলিও তোমাকে পছন্দ করে । কিন্তু বলতে পারছে না । তুমি বললে সব ব্যবস্থা করে দিতে পারি । ভেবে বলো ।
মামুন কিছুক্ষন বসে ভাবলো । উঠে দাড়িয়ে বললো
—কাল স্টার হোটেলে ব্যবস্থা করে দিতে পারবে ?
—প্রথমেই হোটেল🙄। আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে । আসি কেমন ভাইয়া ? রেডি থাকবেন ।
পরদিন লাবিবা দলের সাথে না মিশেই গেইটে এগিয়ে এসে দাড়িয়ে আছে । মিলিকে রিকশাতে দেখেই রিকশা থামিয়ে উঠে পড়ে। রিকশা মামাকে রিকশা ঘোরাতে বলে ।
মিলি—এইটা কি হলো ? কোথায় যাচ্ছি আমরা ?
লাবি—একটা কাজ পড়ে গেছে দোস্ত। হেল্প মি । আমার সাথে থাক ।
হোটেলের সামনে নেমে উপরে নির্দিষ্ট রুমের দিকে যেতে থাকে । মিলি অবাক । —ঐ আমরা হোটেলে কেনো এলাম বলতো ? —চুপচাপ সাথে আয় ।
রুমের সামনে এসে মিলির সামনে দাড়ায় । এতোক্ষন তো খেয়াল ই করেনি । মিলিকে যে চেনাই যাচ্ছেনা । মনে হচ্ছে কোন পার্টিতে যাচ্ছে । ব্লাক থ্রিপিচ এর সাথে মেকাপ স্টোনের জুয়েলারি ওয়াওও। যাই হোক আল্লাহ বাচাইছে । অল দ্যা বেস্ট বলে দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় । বেচারা মিলি তো ভয়ে শেষ কি হলো এটা তার সাথে? রুমের অবস্থা দেখে তো আরো ভয় পেয়ে গেছে । পুরো রুম বেলুনে সাজানো মনে হচ্ছে প্রপোজ রুম ।
–আই লাভ ইউ মিলি জানপাখি ।
পেছনে চমকে তাকিয়ে অবাক । মামুন হাটু গেড়ে বসে গোলাপ সামনে ধরে আই লাভ ইউ বলছে । নিমেষেই ভয় কেটে যেন নেশা লেগে যায় মিলির চোখে । মামুন এমনিতেই ড্যাসিং বয় তার উপর আজ মেরুন কালার শার্ট , সামনের দুটো বোতাম খুলা ,স্পাইক হেয়ার , ডেনিম ব্লাক পেন্ট, চুল গুলো এসির হাওয়াতে হালকা উড়ু উড়ু করছে এত্তো সুন্দর কোন ছেলে হয় নাকি !! মিলি ঢুলে পড়ে যেতে নিলেই মামুন ধরে ফেলে । চোখে চোখ আটকে যায় ।
দরজা একটু ফাক করে লাবিবা দেখছিলো এক চোখে । মামুন মিলি কাছাকাছি যেতেই লাবিবা চোখদুটো বন্ধ করে নেয় । আল্লাগো কি শরম🙈।
রুমে থেকে বেরিয়ে সামনের রুমের দরজায় তাকাতেই দেখে একজন ভিতর দিকে উকি দিচ্ছে । এখানে নিরিবিলিতে মিটিং করার জন্য রুম বুক করেছিলো তানভীর । চিনতে অসুবিধা হয় না পেছন থেকে দেখেও যে এটা তার দুষ্টু পুতুল । কিন্তু এখানে কেনো ? কৌতুহলবশত এগিয়ে গিয়ে লাবিবার উপর দিয়ে উকি দিতেই চোখ ছানাবড়া । এ যে তার কলেজের ছাত্রদলের লিডার মামুন আর সেই মেয়েটা যে প্রতিদিন প্রশ্ন করে । দুজনের ঠোট ছুই ছুই । এইটা আমার দুষ্টু পুতুল লুকিয়ে দেখছে । চোখ বন্ধ করে রেখেছে ফিলিংস হচ্ছে তার । কোমড় ধরে তুলে মুখে হাত রেখে চেপে সেখান থেকে বুক করা রুমে পাখির মতো তুলে নিয়ে আসে । কোমড় ছেড়ে দরজা লক করে দেয় ।
To be continue ____