একগুচ্ছ কালো গোলাপ পর্ব-২৬+২৭+২৮+২৯

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_২৬+২৭+২৮+২৯

🍁
হেলতে দুলতে লাবিবা আসছে রাস্তা দিয়ে । একটু ভেবে দাড়িয়ে পড়ে । তাকে তো আবার ঘুরে আসতে হবে তার চেয়ে একেবাড়ে পড়েই বাসায় যাবে । আজ টেস্ট পেপার থেকে যেগুলো মার্ক করে দিয়েছে সেগুলো পড়বে । টেক্স বুকতো অলরেডি কমপ্লিট করে দিয়েছে । রাস্তা ঘুরে হাটতে থাকে । খান বাড়ির সামনে এসেই চোখ পড়ে ভিতরের দিক। কিন্তু একি ! কালো গোলাপের গাছটা কোথায় ? লাফা লাফি করেও দেখতে পায় না । গাছের কি পা আছে নাকি যে স্থান পরিবর্তন করবে ? প্রতিদিন তো এখান থেকেই দেখতাম । আজ কোথায় গেলো ? সামনের দিকে হাটতে হাতে হন্ত দন্ত হয়ে । রাস্তার পাশে ক্ষেতের উপরে চোখ পড়ে । গাছের ডাল গুলো ফেলে রেখেছে এখানে । তাহলে কি গাছ কেটে ফেলেছে ? চিক্কুর দিয়া দৌড়ে গেটের সামনে আসতেই আকবর ধরে ফেলে ।
– কি হয়েছে আম্মু ? কাদতেছো কেনো ? ভয় পায়ছো ? কি হয়েছে ?
– গাছ কোথায় ?? গাছ ঐখানে পড়ে আছে কেনো ? (চিল্লিয়ে)
– গাছ তো কেটে ফেলেছে মা ।
মাথা টা ঘুরে যায় । মাথায় দু হাত দিয়ে বসে পড়ে লাবিবা । আবার চিল্লিয়ে বলে
– কে কাটলো এই গাছ? কার এতো বড় সাহস ? স্যার কোথায় ?
– ছোট সাহেব তো সকাল বেলাই বিদেশ চলে গেছে । মনে নাই তোমার ?
অবাক হয়ে তাকিয়ে – বিদেশশ…কোন দেশ ?
– ইংল্যান্ড।
– চলে গেলো ..চলে গেলো …আমায় বললোনা কেনো ? কেনো বললোনা ?
গুটি গুটি পা ফেলে ভিতরে ঢুকে । চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে ..। এ কেমন শক খাওয়া … দিন দুনিয়াসব ভুলিয়ে যাচ্ছে । মেইন ডোর দিয়ে ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই মাথা ঘুরিয়ে যায় । হাটতে না পেরে দাড়িয়ে পড়ে । মমতা কিচেন থেকে লাবিবাকে দেখে চোখবন্ধ করে দাড়িয়ে আছে । দৌড়ে এসে লাবিবাকে ধরে ।
– লাবিবা..কি হয়েছে ? শরীর খারাপ লাগছে ? চোখ বন্ধ করে আছো কেনো ?
– আমার স্যার কই ? আমার কালো গোলাপ গাছ কই?
আমার স্যার কই ? আমার স্যার কই?
ততোক্ষনে সবাই চলে এসেছে । সোহানা এসে বলে
– তানভীর তোমায় বলে যায়নি ?
– স্যার সত্যিই চলে গেছে ..আমায় রেখে চলে গেলো ?
কেনো গেলো ? কেনো বললোনা আমায় ? আমি স্যারেথ কাছে যাবো । স্যার আমায় কেনো দিলোনা কালো গোলাপ ? না দিয়েই চলে গেলো কেনো ? আমাকে নিলো না কেনো ?
একদৌড়ে তানভীরের রুমের সামনে চলে আসে । দরজা লক দেখে চিল্লাতে শুরু করে – দরজা খুলো , দরজা খুলো ।
সোহানা এসে দরজা খুলে দেয় ।লাবিবা ভিতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় । সবাই এমন করাতে ভয় পেয়ে যায় । খাটে বসে ও স্যার ..ও স্যার বলে কাদতে থাকে । সোহানা ইসমাইলকে ফোন দিলে ইসমাইল সাবিনা দুজনেই চলে আসে । ইসমাইল দরজায় নক করে
– লাবিবা দরজা খুলো । এগুলো কি করছো তুমি এখানে এসে ? বাসায় যাবে চলো ।
– আমি যাবো না তোমার সাথে । তোমরা সবাই খারাপ । আমাকে বলোনি স্যার চলে গেছে । ও স্যার গো ..ও কালো গোলাপ গো ..ও স্যার গো ..।
দরজার সামনে সবাই দাড়িয়ে লাবিবার চিৎকার শুনছে । সাবিনা বলে – তোমার স্যার পড়াশুনা করতে গেছে । তোমায় বলেনি বলেইনি …তাই বলে স্যারের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিবে ? বের হয়ে আসো বলছি ।
– কেন বলবেনা আমাকে ? কেনো ‌? তুমিও বলোনি কেনো? লাগবেনা কাউকে আমার কেউ ভালুপাসে না।
রাগে বিছানার চাদর তুলে ফেলে । সাজানো সো পিচ গুলো আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলছে ।
ফিরোজ এখন আর না পেরে তানভীরকে কল দিতে নিলে মনে পড়ে ও এখন ফ্লাইটে আছে । সারা রাত দরজার সামনে বসে রাত পার করেছে ইসমাইল সাবিনা সোহানা । লাবিবা কাদতে কাদতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়েছে । তানভীর ফ্লাইট থেকে নেমে সোহানা কে কল দেয় । সোহানা ফোন নিয়ে পাশে সরে গিয়ে দাড়ায় । ওপাশ থেকে তানভীর বলে
– মম আমি পৌছে গেছি ।
– হা ভালো । কিন্তু এদিকটা তো খারাপ করে গেছিস । তুই যাওয়ার সময় লাবিবাকে বলে যাসনি কেনো বলতো ?
– ও কান্না কাটি করবে মম ।
– এখনো তো করছে । তুই তো বুঝিয়ে সুঝিয়ে রেখে যেতে পারতি । সারারাত তোর রুমে ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে কেদে কেদে ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা।
– হ্যা । দুষ্টু পুতুল আমার রুমে ?
– হ্যা । কাল এসে শুনে তুই চলে গেছিস । তারপর থেকে কাদতে কাদতে অবস্থা খারাপ । তোর পছন্দের সমস্ত শো পিচ ভেঙে ফেলেছে । দরজা লক করে রেখেছে । কিছুতেই খুলাতে পারছি না । এখন তুই কথা বল ।
– তুমি ওকে ডাকো মম। আমি এপার্টমেন্টে পৌছে ফোন দিচ্ছি ।
লাবিবাকে ডাকতে ডাকতে বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে আবার খাটে গিয়ে বসে । এক রাতেই মুখটার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। হাল বেহাল করে ফেলেছে রুমের।
লোক ডাকিয়ে সোহানা রুম পরিস্কার করায় । ইসমাইল সাবিনা শুকনো মুখে ড্রয়িং রুমে বসেছে লাবিবাকে দেখে । সোহানা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বুকে নিয়ে বলে
– স্যার চলে আসবেতো । এমন পাগলামো কেউ করে ?
– গাছ কেনো কাটলো ?
– কাটেনিতো । ডাল কেটে ছোট করে দিয়েছে। দু বছর পর পর এভাবে কাটে । তবুও গাছ অনেক বড় হয়ে যায় ।
তখনি তানভীরের ভিডিও কল আসে । সোহানা মুচকি হেসে বলে নাও কথা বলো স্যারের সাথে । যতো রাগ আছে সব ঝেরে নাও । দরজা ভেজিয়ে দিয়ে চলে যায় । তানভীরকে দেখেই লাবিবা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে থাকে । তানভীর বিরতিহীন চোখে সেই কান্না সিক্ত মুখ পানে তাকিয়ে থাকে ।
– দুষ্টু পুতুল ..ডোন্ট ক্রাই ।
– একশোবার কাদবো । আপনি খুব পচা একটা ডলফিন । রাক্ষসের মতো । আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন কেনো ? আমায় নিয়ে যান ‌ । আমি যাবো আপনার সাথে😭😭
– প্লিজ ..ডিয়ার ডোন্ট ক্রাই । লুক হেয়ার আই এম ।
– আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না । আই মিস ইউ ভুরিভুরি । আমাকে আপনার কাছে নিয়ে যান । আমার কষ্ট হচ্ছে খুব ‌।
তানভীর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে । চোখে পানি চিক চিক করছে । নিজেকে সামলে নিয়ে বলে
– নিয়ে আসবো। ওয়েট করতে হবে তোমাকে । পারবেনা আমার জন্য ওয়েট করতে ?
– পারবো । আমায় নিয়ে যান ।
– আমার কাছে আসতে হলে তো তোমাকে আগে ভালো করে পড়াশুনা করতে হবে । আমার মতো বড় হতে হবে । বড় না হলে আমার কাছে তোমাকে কিভাবে নিয়ে আসবো বলোতো ?
– আমি বড় হচ্ছি ।
– হ্যা । সামনে পরিক্ষা । রেজাল্ট যদি ভালো না করো তাহলেতো আমার কাছে আসতে পারবেনা । আমি যে কতো মজার মজার চকলেট কিনে দিবো সেগুলোও তো খেতে পারবেনা । তুমি মন বসাও পড়া শুনায় । আমি ঠিক ই নিয়ে আসবো তোমাকে আমার কাছে । এখন বাসায় যাবে ‌। গোছল করে খেয়ে দেয়ে পড়াশুনা স্টার্ট করবে । কেমন ??
– আচ্ছা । আম সরি ।
– কেনো ?
– আপনার ঘরের জিনিস অনেকগুলা ভেঙে ফেলেছি ।
– ওগুলো তোমারো ছিলো । নিজের জিনিস ভাঙলে কারো যায় আসে না । আবার কিনে নেওয়া যাবে ।
রাখছি ।
লাবিবার চোখের জল উধাও । নিচে নামতেই ছাবিনা ধরে বসায় । নড়াচড়া করার শক্তিও যেনো নেই । তানিয়া বড় একটা টেডি এনে লাবিবাকে দেয় । সোহানা জিজ্জাসা করে কি খাবি মা ?
– ডুডুলস।
নুডুলস রান্না করে এনে খাইয়ে দেয় লাবিবাকে । আব্বু আম্মুনির সাথে বাসায় চলে আসে । পড়া শুনায় মন বসায় । দেখতে দেখতে পরিক্ষা চলে আসে । লাবিবা এখনো মন থেকে তানভীরকে সরাতে পারেনি । পড়ার ফাকে ফাকে ডায়েরী নিয়ে বসে পড়ে । মনের সব হাবিজাবি যতো কথা আছে সব লিখে ।
” ভেবেছিলাম তুমি খুব সুন্দর একটা ডলফিন । তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমিও ডলফিনের মতো হয়ে যাবো । তারপর দুজনে সমুদ্রে সাতার কাটবো । আমার কতো দিনের শখ আমি ডলফিনের মতো ঘুরে ঘুরে বেড়াবো । তুমি জেলফিস গুলো ধরে এনে দিবে আমি গপ করে খেয়ে নিবো । ”
” ও স্যার আই মিস ইউ ভুরি ভুরি । কবে আসবেন আপনি ? আপনি এলে আমি গিটার বাজানো শিখবো । গান গাওয়া শিখবো । তার পর বনে বাদাড়ে গান গেয়ে পাখি ধরবো । আমার কতো দিনের শখ ।”
” স্যার আমি আপনার সব কথাই শুনি । আজ নাইমকে ছোট ক্লাসের একটা মেয়ে এসে স্কুলের পেছনে টেনে নিয়ে গেছে । ব্যাগ থেকে একটা গোলাপ বের করতেই আমি বুঝে গেছি নাঈম কে ইভটিজিং করছে মেয়েটা । আমি আর নুপুর দৌড়ে গেছি । ফুল দিয়ে হাটু মুড়ে বসতেই নাঈমকে গিয়ে বলে দিয়েছি নাঈম এই মেয়টা তোকে ইভটিজিং করছে । এটা আইনতো অপরাধ । আমরা ছাত্র সমাজ অপরাধ করা যাবে না । ওকে উপযুক্ত শাস্তি দে। নাঈম পচা মেয়ে বলে চড় দিয়েছে একটা গালে । মেয়েটা ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিয়ে চলে গেছে । নাঈমকে সাব্বাস বলতেই আমাকেও চড় দিয়েছে । আর বলেছে আমার জন্য নাকি তার প্রেমটা হলো না । ওও নাকি পছন্দ করতো মেয়েটাকে । আমার কথা না শুনলে আমি তাকে মারতাম ভয়েই মেয়েটাকে মেরে দিছে । এটা কোন কথা হলো ? এর জন্য ই বলে কারো ভালো করতে নেই । যত দোষ নন্দ ঘোষ। ইভটিজিং হলে ভালো হতো তখন😏।”
” আজকে একটা সুন্দর পোলা দেখছি । বাপরে বাপ যে কিউটের ফিউট ..সব মেয়েরা হুমড়ি খাইয়ে পড়ছিলো । কিন্তু আমি খাই না । একবার দেখেই চলে আসছি । মাইনসের জামাইরে দেখার এতো শখ নাই আমার । ”
” আপনার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি স্যার । শিক্ষকের কথা না শুনলে জীবনেও পরিক্ষাতে পাস নেহি করতা । এর জন্য আমি অনেকগুলা চকলেট পাই আপনার কাছে । অনেক বড় হতে হবে পড়াশুনা করে । এই এক মাসে এক ইঞ্চি লম্বা হয়ছি পড়াশুনা বেশি বেশি করে । ”
” একটা বড়ো মেয়ে আমার একটা জামা উড়না চেয়েছিলো আম্মুনির কাছে । আমি দিতে দেই নাই । কিন্তু কষ্ট লাগতেছিলো । উড়না তো দেওয়া নিষেধ । তার মানে কোন জামাও দেওয়া নিষেধ। তাই আব্বুর পকেট থেকে চুপিচুপি টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে শার্ট প্যান্ট কিনে দিয়ে আসছি । হাতে নিয়ে মেয়েটা মুখ হা করে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো । আমি বুঝে গিয়েছিলাম তো খুশিতে মুখ হা হয়ে গেছে তাই থ্যাংকু বলতে পারে নি । আহারে গরীব মানুষ । আমিও একটু হেসে ওয়েলকাম বলে চলে আসছি । ”
” আব্বুর সব কথা শুনি । আব্বু বলছিলো টেস্ট পরিক্ষার রেজাল্ট কার্ড কোথাও যেনো না লুকিয়ে রাখি । আমিও লুকায়নি । একদম আব্বুর পকেটে ভরে দিয়েছি । স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বু বললে বলেছি আব্বুকে দিয়ে দিয়েছি । আব্বু পরে সারা ঘর খুজেছে । সব উলট পালট করে দিয়েছে । বাসায় এলে কড়া করে বলেছে আমি আবার দুষ্টুমি করেছি । এদিকে আমি কিছুই করলাম না । পকেট থেকে পেপারটা বের করে হাতে দিয়ে চলে এসছি রুমে । বোকা আব্বু । ”

To be continue _____

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_২৭

🍁
আজ প্রথম পরিক্ষা। একদিন অন্তর অন্তর পরিক্ষার ডেট পড়েছে। সকালে সাবিনা রেডি করিয়ে পাঠিয়ে দেয় সবার থেকে দোয়া নিয়ে একাই বেড়িয়ে পরে লাবিবা । ইসমাইল কাজের জন্য সদরে গিয়েছে তাই লাবিবার প্রথম পরিক্ষা হওয়াতেও সাথে যেতে পারেননি । একটা রিকসা ডেকে উঠে পড়েছে । পথের মাঝে রাস্তার পাশে অনেক ভিড় দেখতে পায় । উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্জাসা করে
– রিকসা মামা ..এখানে ভিড় কিসের ?
– মনে তো হয়তাছে বেদেরা আসছে ।
– দাড়াও তো একটু ।
রিকসা থেকে নেমে ভিড় ঠেলে ভিতরে গিয়ে দাড়ায়। বেদের দলের চারজন মেয়ে এসেছে এখানে । চেহারা ভালো । এদের পোশাক আশাক ঠিক থাকে না তাই বেশির ভাগ এদের ডাকে ছেলে রাই বেশি আসে । পাশে গাছের সাথে লেগে হেলান দিয়ে দাড়ায়। এখান থেকে পেছনের দিক ভালোই দেখা যায় । একবার ফিরে দেখলো রিকসা মামা দাড়িয়ে আছে । চলে যায় নি তাহলে । বেদে দুজন মেয়ে উঠে দাড়িয়ে বাটি পেতে টাকা তুলতে লাগলো । বাকি দুজন কতোইনা বয়ান দিচ্ছে সামনে সাপের চারটা বাক্স আর সাদা চাদর পাতা বিভিন্ন জরিপুটি গাছ গাছলার ছাল হরিনের শিং শামুকের খোলস রেখে । বাতের ব্যথা সারাতে ঐষধ দিচ্ছে তারা । লোকজন ও কিনছে । পেছন থেকে রিকসা মামা ডাকে – পরিক্ষার দেরি হয়ে যাবো তারাতারি আও। লাবিবা হাত দিয়ে সবুর করে দাড়াতে বলে। আবার তামাশা দেখায় মন দেয় । দুজন এদের মাঝে হটাৎ করে গান গেয়ে উঠে আর দুজন নাচতে থাকে । বিচ্ছিরি ভয়েজে গানের সাথে হেলে দুলে নাচ দেখলে যে কারো গা গিন গিন করে রাগ উঠে । লাবিবার কিছুই মনে হলো না । এটা নতুন তার জন্য । এমন নাচ টিভিতে দেখেছে খুবই ইন্টারেস্টিং । চোখ পিট পিট করে তামাশাই দেখতে থাকে । পেছন থেকে রিকসা মামা ডাকতে ডাকতে রিকসাতে উঠে নিজেই বসে থাকে ।

পরিক্ষার বেল দিতেই খাতা দিয়ে দেয় । মাঝখানে একটা সিট খালি দেখে গার্ডরত টিচার বলে ঐ স্কুলের হ্যাডটিচারকে বলতে পিয়নকে। পিয়ন এসে অফিসে বসা মুক্তাকে বললে মুক্তা গিয়ে দেখে লাবিবা নেই তার সিট খালি । বিনার ফোনে ফোন লাগায় । বিনাকে বলে – লাবিবা কোথায় ?
– ও তো কখন গিয়েছে । জুলহাস মামার রিকসা করে গেছে।
– মানে কি ? এখনো আসেনি ? কিছু হলো নাতো ।
– তুমি একটু দেখোনা এগিয়ে .. ।
মুক্তা ফোন রেখে বাইক নিয়ে বের হয় । সাবিনাকে জানাতেই ইসমাইলকে ফোন করে আসতে বলে তারাতারি । মুক্তা অর্ধেক রাস্তা এগুতেই দেখে জুলহাস তার নিজের রিকসাতে নিজেই বসে আছে । গাড়ি থামিয়ে – জুলহাস লাবু কই ?
– ঐতো বেদের নাচ দেখে । কতোক্ষন থেকে ডাকছি আসেই না ।
মুক্তার রাগ উঠে যায় । জে এস সি পরিক্ষা তার কোথায় টেনশনে হাত পা কাপবে আর পরিক্ষা না দিয়ে নাচ দেখছে 😡। ভিড় ঠেলে গিয়ে হেচকা টানে টানতে টানতে এনে লাবিবাকে বাইকের পেছনে বসায় । হলে গিয়ে রিকুয়েস্ট করে পরিক্ষা দিতে বসায় । অলমোস্ট 30 মিনিট শেষ পরিক্ষার । সৃজনশীল বাংলা পরিক্ষা 3 ঘন্টাতে কত তারাহুরা করে শেষ করতে হয় তার মধ্যে আবার 30 মিনিট গোয়িং। আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে পরিক্ষা শেষ করে ।
বাসায় আসতেই ইসমাইল তেড়ে আসে লাবিবার দিকে । মারতে না পেরে বকাবকি শুরু করে দেয় । মুক্তা না থাকলে আজ পরিক্ষাটাই দিতে পারতো না । এরকম বোধাই মেয়ে জন্ম দিয়ে জীবনটাই ত্যানা ত্যানা । লাবিবা চুপচাপ নিচ দিক হয়ে বকা শুনে । সাবিনা এসে কথা ধরে যখন ইসমাইল বলে সব সাবিনার আস্কারাতে লায় পেয়ে এমন হয়েছে । রেগে বলে – তুমি সবসময় তুমার চেয়্যারম্যানি নিয়ে থাকো । মেয়ের দিক কি খেয়াল রাখার সময় আছে তোমার ? আজ কোন ছাত্রীর গার্ডিয়ান সাথে না যায় বলোতো ? তুমি গেলেনা ভালো কথা আমাকে কি যেতে দেওয়া যেতো না ? আমি গেলে কি এমন হতো ?
ইসমাইল উঠে রুমে চলে আসে কিছু না বলে । লাবিবাও রুমে যেতে নিলে সাবিনা টেনে এনে টেবিলে বসায় । সকালেও ভালোকরে খায়নি । এখন খেতেই হবে ।
এর পরের পরিক্ষা গুলোতে ইসমাইল সব কাজ ফেলে লাবিবাকে নিয়ে গেছে আবার পরিক্ষা শেষ হলে নিয়ে এসেছে । একা ছাড়েনি লাবিবাকে ।পরিক্ষা কেমন হয়েছে জিজ্জাসা করলে লাবিবা শুধু ভালো বলে।
পরিক্ষা শেষে রেজাল্ট এর দিন চলে আসে । এগারোটার পর থেকেই ইসমাইল মুক্তার ফোনে কল দিচ্ছে । সময় যেনো আর কাটে না । টেবিলে বসে ডায়েরি নিয়ে লিখছে লাবিবা ।
” আমি যদি ভালো রেজাল্ট করি তাহলে আপনার গুন । আর যদি খারাপ রেজাল্ট করি তাহলে আপনার দোষ । সারাবছর বাদরামি করেছি । কিছুই পড়িনি অন্য স্যারের কাছে । সব প্রথমবার আপনার কাছেই শিখেছি । আপনাকে নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছা করেনা । আপনি বড়ো স্বার্থপর । ”
ডায়রি বন্ধ করে লাবিবা মনে মনে কাদতে থাকে । এক রেজাল্ট ভালো না হলে ইসমাইলের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবেনা । আর দুই রেজাল্ট ভালো হোক বা না হক তানভীর ভালুপাসেনা ।
মুক্তা সাথে কথা বলেই ইসমাইল জোরে হাসতে হাসতে সাবিনাকে ডাকে । – সাবিনা কোথায় তুমি ? আমার মেয়ে এ প্লাস পেয়েছে । ভাই ভাবি বিনা আমার মেয়ে এ প্লাস পেয়েছে । বেলাল শুনা মাত্রই ছুটে মিস্টির দোকানে । সাবিনা রান্নাঘর থেকে বের হতে হতে বলে – আহা… । আমার মেয়ে প্লাস পেয়েছে । মেয়ের পিছে আমি শ্রম দিয়েছি ।
– আমার মেয়ে প্লাস পেয়েছে । আমিও কম পরিশ্রম করিনি । এই নিয়ে
নিজের রুম থেকে লাবিবা শুনে কেদে ফেলে । টিচার ভালো হলে ছাত্রীও ভালো হয় । আমার টিচার স্বার্থপর ।

বিকাল দিকে খান বাড়ি থেকে সোহানা মমতা আর তানিয়া আসে মিস্টি হাতে । লাবিবাকে ড্রয়িং রুমে ডাকে । লাবিবা এগিযে গেলে সোহানা পাশে বসায় । সখিনা সাবিনা কিচেনে ব্যস্ত অতিথি আপ্যায়নে । সোহানা লাবিবাকে যা যা জিজ্জাসা করছে শুধু তার তার উত্তর দিচ্ছে । যে মেয়েটা একটুতেই খুশিতে লাফালাফি শুরু করে আর আজ এতো ভালো রেজাল্ট করেছে কিন্তু তার মুখে হাসি নেই । দুষ্টু পুতুলের মধ্যে উচ্ছলতা নুইয়ে গেছে । সোহানার ঠিক মনে হয় না ব্যপারটা । লাবিবাকে নিয়ে রুমে চলে আসে। মমতা কিচেনে চলে গেছে সাবিনাকে হেল্প করতে। খাটে বসিয়ে থুতনি ধরে মুখ উপুড় করে তুলে ধরে কিছূক্ষন তাকিয়ে থাকে । পরেই মুচকি হেসে বলে – লাবিবা …এমন অবস্থা করে রেখেছো কেনো মুখটার ? কি হয়েছে মা ?
– কিছুনা শাশুমা ।
– কিছুতো একটা হয়েছেই । মিস ইউ স্যার ভুরিভুরি ??
লাবিবা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে । সোহানার চোখ দুটো চক চক করে উঠে । এতো নিষ্পাপ একটা মেয়ে ছেলের বউ হবে ভেবেই জল চলে এসেছে । আদর করে কপালে চুমু দিতে গেলে লাবিবা তাড়াতাড়ি করে উঠে পড়ে ।
– লাবি মা .. কি হলো ?
– অন্যের জিনিসে চুমু দিতে নেই ।
-মানে ?
– এখানে শুধু আব্বু আর স্যার চুমু দিবে । আর কেউ না ।
সোহানা ঠোট চেপে হাসতে হাসতে শেষ । নিশ্চয় এটা তানভীর বলে গেছে । ছেলেটা একদম তার বাবার মতো হয়েছে 🙈।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই যখন চলে যাবে তখন তানিয়া হুট করে রুমে এসে লাবিবার উড়নার নিচে একটা ফোন ডুকিয়ে দেয় । লাবিবা চমকে উঠলেই তানিয়া ঠোটের সামনে এসে বলে – চুপ..। এটা লুকিয়ে রাখো । কেউ যেনো না দেখে । এগারোটা সময় সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ভাইয়া কল দিবে । আমি কাল এসে ফোন নিয়ে যাবো ।
তানিয়া চলে গেলে লাবিবা বুকে হাত দিয়ে হাপায় । পাজি মেয়ে । একদম ভাইয়ের মতো করে ।
সাড়ে এগারোটার দিকে তানভীর ভিডিও কল দেয় । বারান্দায় বসে লাবিবা নিচ দিক হয়ে একের পর এক চোখের পানি ফেলছে ।
– দুষ্টু পুতুল… একবার চোখ তুলে তাকাও আমার দিকে।
– আপনাকে দেখলে আমার ভালো লাগে না । আপনি আরো সুন্দর হয়ে গেছেন । আমার শুধু দেখতেই ইচ্ছা করে ।
– তো দেখো ।
– আমি সরাসরি দেখবো ..আমার আপনাকে ছুতে ইচ্ছা করে । আমাকে এখনো কেনো আপনার কাছে নিয়ে যাচ্ছেন না । আমি আপনার কাছে যাবো 😭।
তানভীর এই কান্না আর নিতে পারছে না । নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে।
– দুষ্টু পুতুল আস্তে । সবাই তোমার কান্না শুনে জেগে যাবে ।
– আমি আপনার কাছে যাবো😭
– দুষ্টু পুতুল ..তোমার জন্য অনেকগুলো চকলেট পাঠিয়েছি আমি । তুমি দেখেছো ?
– আমি আপনার কাছে যাবো
-দুষ্টু পুতুল তুমি কতো ভালো রেজাল্ট করেছো ..তুমি_
– আমি আপনার কাছে যাবো
– দুষ্টু পুতুল তুমি টিয়া নিবে টিয়া ?
– আমি আপনার কাছে যাবো 😭
– ঐ মেয়ে ঐ তুই কি আমাকে থাকতে দিবি না এখানে ? একটু শান্তি কি দিবি না আমায়? তুই কি চাস এখন আমি বিডি চলে যাই ? আমার ক্যারিয়ার সব নষ্ট হয়ে যাক ? 😠
– আমাকে নিয়ে গেলেই তো হয়।
এবার তানভীর সত্যি সত্যি কেদে ফেলে । লাবিবা কান্নার শব্দে ফোনের দিকে মুখ তুলে তাকায় । অবাক নয়নে চোখ পিট পিট করে দেখতে থাকে ।
তানভীর চোখ মুছে বলে – ভালো থেকো আমার পুতুল বউ।
_________________
বসার রুমে যেতেই লাবিবা শুনতে পায় আনিস আর ইসমাইল কথা বলছে ।
আনিস – এখানে আর ভর্তি করাবোনা । আখির কাছে পাঠিয়ে দিবো । রাজীব বার বার বলছে ভালো রেজাল্ট করেছে এখানে নিয়ে চলে আসুন ।
ইসমাইল – আমার মেয়ের জানু টাকে হারাবে তাহলে ।
আনিস – দুজনে একসাথে থাকলেই তো মাথায় দুষ্টুমি খেলে‌ । আলাদা হলে আর দুষ্টুমি মাথায় ঘুরবেনা ।
ইসমাইল – যা ভালো বুঝো ।

নুপুরকে বিদায় দিতে এসেছে লাবিবা । দুপুরের ট্রেনে ঢাকা যাবে । যাওয়ার সময় স্টেশনে বসেই লাবি নুপুর অনেকক্ষন জড়িয়ে ধরে কান্না করে । ট্রেনে উঠার সময় পাশেই গভীর চোখে মুইনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নুপুর । লাবিবা বাসার দিকে ফিরে । রাস্তা দিয়ে না এসে বড় পুকুর দিয়ে আসে । পূকুরের উপর টং এ বসে চোখের জল ফেলতে থাকে । মুইন এসে বসে। পাশ ফিরে মুইনকে দেখে চোখ মুছে বলে
– মুইন ভাই .. ভালুপাসার মানুষ গুলো স্বার্থপর । চাইলেই থেকে যেতে পারতো । মিস ইউ জানু নুপুরি ভুরি ভুরি ।
– আমিও।
– আমিও কি ?
– মিস ইউ জানু নুপুরি ভুরি ভুরি ।

To be continue ___
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_২৮

🍁
লাবিবার মনের মতো ফ্রেন্ড আর হয়ে ওঠে নি নুপুরের পর । মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয় এই আর কি । বছরে দুই ঈদে দেখা হয় । একসাথে আর হেলে দুলে ঘুরে বেড়ানো হয়না । স্কুল জীবন অনেক আগেই শেষ । কলেজ জীবন শেষ করে সে ভার্সিটি স্টুডেন্ট। থাকার জন্য হোস্টেলকে বেছে নিয়েছে । সেকেন্ড ইয়ারের পরিক্ষা দিয়েই হোস্টেলে উঠেছে । হোস্টেলে উঠার পর শারমিনের সাথে মনের মিল পেয়েছে । মেয়ের নিরাপত্তার জন্য ইসমাইল ভার্সিটির হোস্টেলই চুজ করেছে । কিন্তু তার চিন্তার শেষ নেই । মেয়ে কখন কি করে তার ঠিক ঠিকানা নেই । আশে পাশের আত্মীয়দের সহ বলে রেখেছে লাবিবাকে দেখে রাখার জন্য । বাড়িতে এসেছে লাবিবা । সাথে করে কয়েকটা ড্রেস নিয়ে যাবে । গুছিয়ে রাখতে কাবার্ড খুলে। কিউট মিউট টিউট গাউন গুলো দেখেই ফিদা। একেকটাতে একটা করে ফ্লাইং কিস দিচ্ছে আর ব্যাগে তুলছে । কাবার্ড এর এক কোনা থেকে একটা থ্রি পিচ বের হয় । লাবিবা হাতে তুলে নেয় । থ্রি পিচ বলা ভুল হবে । দু পিচ উইথ ওয়ান পিস। তার শাশুমা দিয়েছিলো তাকে এই টু পিচ টা আর ওয়ান পিচ মানে ওড়নাটা দিয়েছিলো …….। স্বার্থপর মানুষের কথা না বলাই ভালো। জে এস সি রেজাল্টের দিন স্বার্থপর স্যার টার সাথে শেষ বারের মতো কথা হয়েছিলো । স্বার্থপর না হলে এরপর একদিনো কথা বললোনা কেন ? কে রাখে কার খোজ ? আমিই বা কে যে আমার কথা মনে রাখবে ? নিচের কাবার্ড খুলে জুতা নিতে গিয়েই চোখে পড়ে প্যাকেট করা পিংক টেডি টা । ডলফিনটা দিয়েছিলো । স্বার্থ পর । জুতা গুলো টান দিতেই বেরিয়ে পড়ে অনেকগুলো চকলেট বক্স। সে বাড়ির মানুষ তেমন আর খোজ রাখে না । শাশুমাটা মাঝে মাঝে খোজ নেয় । এতো খুজ নিয়ে কি হবে ? আপনিতো আর সত্যি সত্যি এলিজার শাশুমা নন। আপনার বিলেতের প্রিন্স ছেলের বিলাতি বধুর শাশুমা আপনি । শুধু শুধু আব্বু নাম রেখেছিলো এলিজা ।
—– রানী এলিজাবেথ আমি কি আমার বিলেতের প্রিন্স ভাইয়ের বিলাতি বধুর রুমে ডুকিতে পারি ??
—– আসুন মহোদয়া ..নিশ্চয় চকলেট নিয়ে এসেছেন আপনার বিলেতের প্রিন্স ভাইয়ের পাঠানো । শোন তানিয়া তোর চকলেট নিয়ে তুই চলে যা । কয়েকদিন পর পর আমাকে যেগুলো দেস সেগুলো বাচ্চাদের দিয়ে দিয়ে হাপিয়ে যাই আমি । বাকি আরো অনেকগুলো কাবার্ডে পরে আছে ।
তানিয়া কোন হেলদুল না দেখিয়ে কাবার্ডে এসে চকলেট গুলো রেখে দেয় । আগের চকলেট গুলোর এক্সপায়ার ডেট দেখে নেয় ।
—– লাবিপু..আগের গুলোর মেয়াদ আর দু বছর আছে । এখনের গুলো আরো চার বছর আছে । রেখে দাও । জানিতো খাবে না । না খেলে তোমার কাবার্ড ই খাক।
—– তোর বিলেতের ভাইয়ের কি খবর ?
—— ভাইয়া বলেছে ভাইয়ার কোন খবর তোমাকে আর না বলতে । কারন তুমি পড়াশোনা করো না আজকাল । সেকেন্ড ইয়ারে ইমপ্রুভ খেয়েছো ।
—- তোকে বুঝি এই খবর নাঈম দিয়েছে ? আমিতো দেই নি ।
তানিয়া একটু লজ্জা পায় ।
—-লাবিপু তুমি বেশ রেগে রেগে কথা বলছো । আমি তোমাকে চিনতেই পারছিনা । হটাৎ করে এমন করছো কেনো তুমি ? ভাইয়াকে নিয়ে এতো কেনো চিন্তা তোমার ?
—- তোর ভাইয়া কবে আসবে ? পুতুল বউকেও নিয়ে আসবেতো ? আমার খুব দেখতে ইচ্ছা করে স্যারের সাথে পুতুল বউকে কেমন মানিয়েছে । আমি দোয়া করে দিবো এত্তোগুলা তাদের জন্য ।
লাবিবা খাটের কোনে এসে হাটু ভাজ করে মুখ লুকায় । তানিয়া সিউর লাবিবা এখন কাদছে । মুখ তুলে ভাঙা গলায় বলে – কেউ ভালুপাসেনা ।
তানিয়া বেরিয়ে আসে কিছু না বলে । গাড়িতে বসতেই নাঈমের কল ।
—- আমার জানুটাকি আমাকে মিস করছিলো ?
—-তোমার জানু এত্তোখন তোমার প্রান প্রিয় বোনের মতো বান্ধুপির কাছে ছিলো ।
—-ওহ তাই নাকি ? তো বিলাতি বধু কি বলে ? চকলেট নিয়েছে?
— রেখে এসেছি । ভাইয়ার খবর দেয়নি । এতোবার ওকেই বিলাতি বধু ডাকি তবুও বোঝে না । 😂
—তোমার ই তো দোষ । বলেছো কেনো ভাইয়া বিয়ে করেছে ? পুতুলের মতো বউ । ভাইয়ার খবর দেওয়া উচিত ছিলো ।
—ভাইয়াই বলবে । আমি গাড়িতে । রাখছি । বাই।
_____________
হোস্টেলে এসেই দেখে শারমিন গেইটে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে । লাবিবা সাইড ব্যাগ ইসমাইলের হাতে দিয়ে এক দৌড়ে জড়িয়ে ধরে শারমিনকে
— দোস্ত….কত দিন পর দেখা । আয় বুকাবুকি করি ।
গেইটের সামনেই পাবলিক প্লেসে এমন করা লাবিবার পক্ষেই সম্ভব। ইসমাইল আর কিছু বলেনা । ব্যাগ পত্র টাকা গুছিয়ে হাতে দিয়ে চলে আসে ।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে দু বান্ধুবী মিলে বারান্দায় গিয়ে বসে । চারদিনে অনেক কথা জমে আছে । রাত একটা পর্যন্ত এই আড্ডা চলে। সাথে ক্লাসমেট ও কয়েকজন জয়েন করে ।

কলেজে যাওয়ার সময় হেলতে দুলতে রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশ ..ওপাশ থেকে এপাশ করে হাটছে তারা । আর বাহারি গান তো আছেই —

🎶🎶 রিকশা চলে রাস্তা দিয়ে
আমি রিকশায় উঠি না
রিকশা মামা রিকশা নিয়া চইলা যায়🎶

🎶🎶ও মোর আটো মামারে ..
কুন্দুরে..
তুমি কেনো বন পাড়ার ভেনওয়ালা হইলানা🎶
ভার্সিটি ঢুকতেই জবা মিলি দৌড়ে আসে । মিলি এসে জড়িয়ে ধরে কান্না কান্না শুরু করে দেয় । জবাও ভাড় মুখ করে আছে । লাবিবা মুখ তুলে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে – মুলা তোর কি হয়ছে ? চোখে সাগরের উতালপাতাল কেনো ?
মিলি কাদতে কাদতে হেচকি তুলতে তুলতে বলে
– দোস্ত..আমারে সুমন খাইয়া দিছে 😭😭
শারমিন লাবিবা- কিহহহহ!!!!!
– হ । আমার কি হপ্পে😭😭
লাবিবা শারমিন ঘাসের উপর মাথায় দু হাত চেপে বসে পড়ে । জবাও বসে পড়ে – তুই আমাদের রানী । আমাদের এলিজাবেথ । এখন তুই এর উপযুক্ত শাস্তি দে ঐ পোলাক । ব্রেকাপ করতে চায় ।
লাবিবা চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছে । মিলির দিক তাকিয়ে বলে – দোস্ত তুই কি খাওয়ার জিনিস ? তোরে কেমনে কেমনে খাইলো ? তোর কই কই খাইলো ?
মিলির কান্না থামিয়ে বলে – আমার বারো হাজার টাকা খাইয়া দিছে । এখন ব্রেকাপ করতে চায় ।
শারমিন জবার মাথা ঘুরে গেছে । পায়ে এক লাথি দিয়ে মিলিকে চিৎ পটাং করে শারমিন চিল্লিয়ে উঠে – শালী কুত্তি এতোখনে বলতেছিস টাকা খাইছে ? আর আমরা কতো কি ভেবে চিন্তায় এখনি কিডনি পচাইয়া ফেলতাম।😠
লাবিবা গিয়ে মিলিকে তুলে বলে – মুলা কাদিস না । সুমন তোরে খাইছে । এখন আমরা সবাই মিলে সুমনরে খামু । ফলো মি । 🚶‍♀🚶‍♀
রেস্টুরেন্টে বসে আছে মিলি জবা লাবিবা শারমিন সুমন । শালীদের গদগদানিতে সুমন আকাশে ভাসছে । জবা কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলে – ভাইয়া….শালীকাদের জন্য অর্ডার না করে বসে আছেন কেনো ? দিননা অর্ডার । এভাবে না খাইয়ে বসিয়ে রাখছেন । পরে কিন্তু আমরা ইনভাইট করে মজার মজার ডিস বানিয়ে খাওয়াবনা ।
সুমন শালীদের গুতা গুতি মিস্টি হাসি খেয়ে খেয়ে অর্ডার দেয় । মেনু কার্ডে বেশী প্রাইজের খাবার গুলো বেছে বেছে অর্ডার করা হয় । বড় টেবিলে কোন মতে কষ্ট করে স্থান নিয়ে আছে ডিস গুলো । ওয়েটারের দাত গুলো কেলানো । হবেইতো । এতো খাবার আজ পর্যন্ত কেউ অর্ডার করেছে কিনা ডাউবট আছে । সুমনকে টেবিলের দিক তাকাতেই দিচ্ছে না কেউ । তুলে তুলে খাইয়েও দিচ্ছে । লাস্টে দেখে যে কেউ এতো খেতে পারে না । শারমিন ওয়েটারকে দিয়ে প্যাকেট করায় সব । ব্যাগে ভরে নিয়ে বিলটা সুমনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে আসে । সুমন বিল দেখে চক্ষু চড়ক গাছ । বারো হাজার টাকা বিল আসছে । এক টাকা কম ও না বেশিও না । এখন এতো টাকা কই পাবো । বন্ধুদের ফোনের উপর ফোন করে কিন্তু কেউ দিতে রাজি না । ওয়েটার ম্যানেজার কানের উপরে বিল দিন দিন করে পাগল করে দিয়েছে । শেষ মেষ উপায় না পেয়ে কাপা হাতে বাবার কাছে ফোন দেয় ।
—-হ্যালো আব্বা😭😭
—-কি হয়ছে বাপ। কান্দস কেন ? কোনো সমস্যা ?
—- আমাকে বারো হাজার টাকা দেন আব্বা । এইটা না পাইলে আমি আর বাচমুনা ।
—- কেন আব্বা ? তুই কি এক্সিডেন্ট করছিস ? আমার কসম লাগে সত্য করে বল কি হয়ছে । আমার একমাত্র পোলা তুই । তোর কিছু হয়লে আমি শেষ।
—- আব্বা সত্য কথা বলতে বললেন কসম দিলেন যেহেতু তাহলে তো আর মিথ্যা বলতে পারবোনা। আব্বা শালীরা বারো হাজার টাকার খাবার গিলছে 😭
— কিহহ?? তুই বিয়ে করছিস আমারে না জানাইয়া। এখন আবার শালীদের খাওয়ানোর জন্য টাকাও চাইছিস ? তোরে ত্যায্য করলাম আমি । তোর মতো পোলা লাগবোনা আমার । সুমনের মাওও তুমি এখন নাই পোলার মাও হইলা গো 😭
– আব্বা আব্বা ..।
________________
গত পরশু প্রিন্সিপাল স্যারের ট্রান্সফার হয়েছে । আজ নতুন প্রিন্সিপাল এন্ট্রি নিতে যাচ্ছে ভার্সিটিতে। রমরমা পরিবেশ । সব সাজানো গোছানো । বড় বড় লোকের ভিড়। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে উৎসব লেগে গেছে । অবশ্য কয়েকদিন পর ই উৎসব হবে পহেলা ফাল্গুনের । যে যার মতো নতুন জামা আর সেজেগুজে আসছে । নতুন প্রিন্সিপালের আগমনের অধীর অপেক্ষারত সবাই ফুল হাতে। গোলাপের পাপড়ির থালা হাতে দাড়িয়ে আছে লাবিবা । তার এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে লাল পাপড়ি গুলো কালো কালো রং ধারন করছে বার বার । চোখ ঢলে আবার দেখে লাল । আবার কালো লাগে । নাহ আর তাকিয়ে থাকা যাবে না পাপড়ির দিকে । চারিদিক শোরগোল পড়ে গেলো প্রন্সিপাল
ড. তানভীর খান ইজ নাউ হেয়ার । নাম শুনে চমকে তাকায় লাবিবা । ডিপ ডিপ করা বুকে হাতুড়ি পেটানো আওয়াজ হতে থাকে । চোখ সহ পুরো শরীর যেনো পুড়ে ছানাবড়া হতে থাকে । একেকটা পা ফেলার সাথে সাথে একধাপ একধাপ করে শরীর নিস্তেজ হতে থাকে । এতো দিনের দেখার তৃষ্ণা কমার বদলে চারগুন বেড়ে যায় । অভিমানীনী হৃদয় আর এক মুহূর্ত দাড়িয়ে থাকতে দেয় না। পা পেছোতে থাকে একটু একটু করে । হাতের ফুলের পাপড়ি গুলো এখন কড়া কালো রংয়ের দেখা যাচ্ছে । মাথা ঘুরিয়ে পেছন ফিরে গন্তব্যহীন ভাবে নিস্তেজ দেহ নিয়ে দৌড়ে বের হয়ে আসে ।

To be continue___

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_২৯

🍁
ইয়াং প্রিন্সিপাল দেখে সব মেয়েই ক্রাসিত। বয় ফ্রেন্ডকে নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিয়ে এখন প্রিন্সিপালকে নিয়ে লেগেছে। ড. তানভীর খান নাম শুনেই সবাই ফিদা । স্টাইশিস ইয়াং ড.তানভীর খান হার্ডথ্রোক লেডি কিলার লুক উইথ কিউট ফেইস এন্ড সিক্স প্যাক বডি। সেভেন ইয়ার লন্ডনে থেকে পুরো ইনভাইরনমেন্ট চেঞ্জ। কথায় কথায় ইংলিশের ফুলঝুরি ফুটে । ভার্সিটি কমিটি , চ্যায়ারম্যান, প্রফেসরস অল গাই ড. তানভীর খানের বিহেভিয়ার এ সেটিসফাইড। কলেজের ভিপি বাবুর উপর যে মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়তো তারা এখন প্রন্সিপালের উপর মনে মনে ঝাপিয়ে পড়েছে । ইকোনোমিক্স ডিপার্টমেন্টে স্ট্যাটিসটিক ক্লাস নিবেন ড. তানভীর খান। দুদিন ভার্সিটি আসার পর ও একি অবস্থা। ক্লাসে ঢুকতেই সব স্টুডেন্ট দাড়িয়ে ” আসসালু আলাইকুম স্যার । ” বলে হা করে তাকিয়ে থাকে । পার্পেল কালার ফুল স্লিভ শার্ট ইন করা স্পাইক করা চুল চোখে পাওয়ারি চিকন ফ্রেমের চশমা উপরে ব্লাক লেদার জ্যাকেট সব মিলিয়ে চোখ ফেরানো দায় । ডেস্কের কাছে গিয়ে সকলকে একবার দেখে নিয়ে সকলের উদ্দ্যেশে বলে
—– হ্যালো মাই অল বিউটিফুল এন্ড লাভিং স্টুডেন্টস । হাউ আর ইউ ?
সবাই একত্রে
—– আলমাদুলিল্লাহ স্যার । এন্ড ইউ ?
—– আই এম সো গুড । ইউ আর অলরেডি নো মি । এগেইন, আই গিভিং মাই আইডেন্টিটি । আই এম দ্যা নিউ প্রিন্সিপাল অফ ইউর ভার্সিটি । মাই নেইম ইজ তানভীর খান । সন অফ এমপি ফিরোজ খান । আই হেভ এ ডক্টরেট ফ্রম ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজ, ইউকে। আই এম ইন চার্জ অফ টেকিং ইউর স্ট্যাটিসটিকস ক্লাস । দিস ইজ দ্যা ফাস্ট ইনাগুরেশন অফ দ্যা ডিপার্টমেন্ট অফ ইকোনোমিক্স এট দিজ ইউনিভার্সিটি । নাউ আই ওয়ান্ট টু স্টার্ট ইউর ক্লাস । অল মাই স্টুডেন্টস লেটস স্টার্ট।গিভ মি এ বুক প্লিজ।

ক্লাসের পরিবেশ একদম থমথমে । সবাই এক মনে তানভীরের লেকচার শুনে যাচ্ছে হা করে । মেয়েরা হা করে প্রিন্সিপালের কথা গিলছে সাথে চোখ দিয়ে প্রিন্সিপালের রুপ ও গিলছে । আর ছেলেরা একবার প্রিন্সিপালের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার মেয়েদের দিকে । মনে মনে ভাবছে মেয়েগুলো এতো ছেসরা কেন ? আল্লাহ কেনো এই বান্দর মার্কা চেহেরা দিয়ে পাঠালে ? উপর থেকে যেন আওয়াজ আসে চুপ করে থাক ..তুই তো বান্দর থেকেই মানুষ হয়েছিস । মিলি জবা তো হার্ড ধরে আছে । তাদের রানী এলিজাবেথ এর আত্মা উড়ে যাওয়া কথাটার সত্যতা প্রমান পেয়েছে । এখন মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি আত্মা উড়ে যাবে । ক্লাস শেষে বের হবার সময় মিলি স্যার বলে ডাক দিয়ে দৌড়েই স্যারের পিছু আসে। পিছু পিছু সব গুলো মেয়েই হাজির না জানি মিলি কি বলবে ।
মিলি সুন্দর একটা হাসি উপহার দিয়ে ন্যাকামো করে বলে
— স্যাররর ক্যান আই আস্ক এ প্রশ্ন ?
— কে শিখিয়েছে ?
— জি স্যার ?
—ব্যাংরেজি ।
—ওহ সরি স্যার …ফ্রেন্ড এর সাথে বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে গেছে । মাথা নিচু করে ।
— আই এম নট ইউর ফ্রেন্ড। মাইন্ড ইট । ইউ ক্যান গো ।
তানভীর চলে আসে । জবা দৌড়ে এসে বলে
— কি বললো স্যার ? জিজ্জাসা করেছিলি তো ?
জবাব না দিয়ে জবার উপর হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে — দোস্ত আমিতো শেষষ। কি এটিটিউট মাইরি । মে তো দিওয়ানা হগায়া । হায়য়য়য়।
জবা রেগে মেগে এক ধাক্কায় নিজের উপর থেকে তুলে দেয় ।
— শালী তুই জিজ্জাসাই করতে পারলি না । তোরে দিয়া কিচ্ছু হয়বো না । এলিজা….দোস্ত মিস ইউ ভুরি ভুরি । কই তুই ?

পুকুরে পা ডুবিয়ে বসে আছে লাবিবা তানিয়া নাঈম। পাড়ে গুড়ো হওয়া মাটির নুড়ি একটা একটা করে পানিতে ঢিল দিচ্ছে । পানি থেকে পা তুলে পাড়ে রেখে তানিয়ার কোলে মাথা রাখে নাঈম। তানিয়া মুচকি হেসে মাথায় হাত রাখে নাঈমের । আস্তে আস্তে চুল গুলোতে হাত নাড়াতে থাকে । লাবিবা এদের দেখে কিছুক্ষন চুপ চাপ। ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলে
—আমি কি তোদের ভাবি লাগি ? আমার সামনে চুটিয়ে প্রেম করছিস লজ্জা করে না ?
নাঈম হেসে বলে
—এক কাজ কর আমার সমন্ধি ভাইকে বিয়ে করে নে তাহলেই ভাবি হবি আর লজ্জাও পেতে হবে না ।
—তোর বুড়ো সমন্ধিকে আমি বিয়ে করবো কেনো ? তার কি বউ নেই ? তার নাকি বিলাতি বধু আছে 😒 । আর স্যার সব সময় স্যার ই হয় ।
—তাহলে কাদিস কেনো স্যারের জন্য ?
লাবিবা উঠে গিয়ে দূরে গিয়ে পুকুরের অন্য পাড়ে বসে । এখন সে একটু কাদবে । তার ভীষন কান্না পাচ্ছে । স্যার এসেছে অনেক দিন তাহলে । আমি কিছুই জানলাম না । আমাকে বলে নি কেউ । আমাকে কেনো বলবে ? কেউ ভালুপাসে না😭। একটা বার খোজ ও নেয় না । বিলাতি বধু আছে তো । আর কি চাই ?চোখ থেকে টুপটাপ বৃষ্টি পড়তে থাকে ।

নাঈম হাসতে হাসতে শেষ । সেই হাসি মুগ্ধ নয়নে দেখতে দেখতে তানিয়া বলে
—তো ডাক্তার সাহেব আপনি যাবেন কবে ? আপনার কলেজ কি এখনো খুলেনি ?
— বউ রেখে যেতে ইচ্ছে করেনা । কি করবো বলো ?
— হা তাইতো । যাবেন কেনো বলুন ? আপনি বউকে দেখার জন্য কলেজ যাচ্ছেন না । আরেকজন হাজবেন্ড কে দেখবেনা বলে অভিমান করে কলেজ যাচ্ছেনা । ভালো খুব ভালো ।
—আরে রাগো কেন বলোতো ? পরশু খুলবে চলে যাবো।আচ্ছা একটা কথা বুঝলাম না । ভাইয়া ইউকে থাকতো তাকে বিলেতের প্রিন্স বলা সাঝে কিন্তু লাবুকে কেনো বিলাতি বধু বলো ?
—ওয়েট দেখাচ্ছি ।
লাবিবার বাগ টা নিয়ে চেইন খুলে একটা ক্যান বের করে নাঈমের হাতে দেয় ।
—এইটা তো বিলাতি গুড়ো দুধ । বাচ্চারা খায় । তার জন্য বিলাতি বধু😂
—হুম তাই। আগে হরলিক্স খেতো চেটে চেটে । এখন হরলিক্স খাওয়া বাদ দিয়ে এইটা খায় চেটে চেটে😂।
লাবিবা জোরে জোরে পা ফেলে এসে ক্যানটা কেড়ে নিয়ে বলে —হাসবিনা একদম । গেলাম আমি ।
—আরে লাবিবা শোন, স্যার বলেছে তোকে দুই নাম্বার বউ করবে তাও তুই কাদিস না ।
লাবিবা একবার পেছন দিক তাকিয়ে রাগ দেখিয়ে আবার চলে যায় ।
_____________________
লাবিবার বাসার সামনে এসে দাড়ি দাড় করিয়ে তানিয়াকে ফোন দেয় তানভীর । তানিয়া ফোন ধরেই বলে
— ভাইয়া পৌছে গেছো ? শোন তোমার পুতুল বউ এর সাথে সব মিটমাট করে নিবে । একদম সোজা । তুমি জাস্ট একটু জড়িয়ে ধরে বলবে তুমিই আমার পুতুল বউ । অভিমান সব হুড় হুড় করে দূরে চলে যাবে । আবার রুপ দেখে পাগল হয়ে সবার সামনেই এমন করো না । লাবিপু কিন্তু অনেক সুন্দর হয়ে গেছে ।
তানভীর সিটে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বুঝে নেয় । রুপে তো পাগল হবোই মাই ডিয়ার সিস্টার । তোর ভাবীকে যে এক্ষুনি চাই আমার । কিন্তু পাচ্ছিনা তো ।
এক্ষুনি যে সম্ভব ও না ।
— হ্যা। দেখেছিলাম কলেজে একটু খানি ।
—কিহ ?? আর আমিযে তোমায় এতো এতো পিক দিলাম সেগুলি ?
—পিক দেখা আর সরাসরি দেখা রাতদিন ভেদাভেদ । তোর ভাবি শেষ পর্যন্ত আমাকে তার বাসায় আসতে বাধ্য করলো ।
—তাইতো দেখছি । অল দ্যা বেস্ট।
ফোন রেখে তানভীর গাড়ি থেকে নামে । গেইটে আসতেই দেখে গেইট খুলা । ভিতরে ঢুকে একটা ছেলেকে দেখে বলে —এইযে ভাই , কে তুমি ?
— আমি রতন। চেয়্যারম্যান চাচার সাথে সাথে থাকি।
— ও আচ্ছা । ভাই বাইরে গাড়িতে কয়েকটা প্যাকেট আছে । একটু নিয়ে আসবে প্লিজ ?
রতন মাথা নাড়িয়ে গাড়ির উদ্দেশে যায়। বাসার ভিতরে ঢুকে দেখে ড্রয়িং রুমে কেউ নেই । সরাসরি লাবিবার রুমে চলে যায় । লাবিবা হাতে গুড়ো দুধ নিয়ে চেটে চেটে খাচ্ছিলো । সামনে কাউকে দেখে মাথা তুলে তাকায় লাবিবা। তানভীরকে দেখে চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে যায় । তানভীর পকেটে হাত রেখে চোখ কুচকে তাকিয়ে আছে ।দু ঝুটি করা চুল সাথে বড় বড় চোখ গাল ঠোটে লেগে থাকা গুড়ো দুধে মাখামাখি পুরো একটা বিড়ালের মতো লাগছে । লাবিবা এদিক ওদিক দুবার চোখ ঘুরিয়ে কপালে স্যালুট করার মতো হাত দিয়ে বলে
— আসসালামুয়ালাইকুম স্যার ? কেমন আছেন স্যার ? শরীর ভালোতো স্যার ? কি মনে করে আসলেন স্যার ? গাড়ি নাকি পায়ে হেটে আসলেন স্যার ? কি কি নিয়ে এসেছেন স্যার ? একা একাই এসেছেন স্যার ? বিলাতি বধুকে আনেননি স্যার ? কার কাছে এসেছেন স্যার ? আব্বুর কাছে এসেছেন স্যার ?
একটানা এতোগুলো প্রশ্ন করে উত্তরের অপেক্ষায় তানভীরের দিক তাকিয়ে আছে লাবিবা। তানভীরের ইচ্ছা করছে থাটিয়ে একটা চড় দিতে । পাজি মেয়ে.. বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এসেই ছাড়লো । পকেট থেকে হাত বের করে হাত টেনে এনে জিহবা ছোয়ালো গুড়ো দুধে । টেস্ট ভালোই । হাত ছেড়ে দিয়ে বললো
—এখন কি বলবো আম্মুনিকা গুড়ো দুধ খাওয়াকা বাচ্চিকা??
লাবিবা উল্টাপাল্টা মাথা ঝাকিয়ে উড়না নিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় । তানভীর ড্রয়িং রুমে এসে দেখে ইসমাইল চলে এসেছে । সালাম দিয়ে কথা বলতে থাকে । লাবিবা রুম থেকে বেরিয়ে সাবিনার পিছু পিছু থাকে সারাটাক্ষন । অনেক বার তানভীর চেষ্টা করে কিন্তু লাবিবা ছাবিনার আচল ছাড়ে না । খাওয়ার সময় ও ছাড়ে না । লাবিবাকে পাশে ডাকলেও না বুঝার ভান ধরে অন্যদিকে চলে যায় । তানভীরের রাগ হতে থাকে । দুপুরে এসেছে এখন সন্ধ্যা । আর থাকতে পারছে না । এখানে থাকলে নিশ্চিত সব রাগ বেড়িয়ে যাবে । বিদায় নিয়ে উঠি বলে চলে যেতে নিয়ে দু পা এগিয়ে আবার ঘুরে এসে বলে
— কাকি দুষ্টু পুতুল কোথায় ? ওকে বলে যাই চলে যাচ্ছি ।
— রুমেই আছে । ডেকে দিচ্ছি ।
সাবিনা ডাকার আগেই তানভীর দুষ্টু পুতুল দুষ্টু পুতুল বলে ডাকতে ডাকতে রুমে চলে আসে । দরজা আটকিয়ে লাবিবার দিকে আসতে থাকে ।লাবিবা বসে ছিলো উঠে দাড়িয়ে পড়ে ভয়ে । তানভীর এসে জোরে কাধ ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রেগে বলে
—দূরে দূরে থাকা হচ্ছে তাইনা ? এতোবার ডাকছি তবুও । এতোদিন কান্নাকাটি করা হতো আমার কাছে যাওয়ার জন্য আর এখন দুরে দুরে থাকা হচ্ছে না ?😠
অভিমানি দুটো চোখ নির্ভিগ্নে তাকিয়ে আছে অপর দুটি চোখ পানে ভরা যমুনার পানির মতো টলমল করছে চোখ দুটো ।
—তো কি করবো ?
—একটু কাদবে ? কাদো ।
চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। গাল বেয়ে আর নিচে পড়তে পারে না হাতের তালুতে লুফে নেয় তানভীর ।
– আমি আপনার কাছে আর যেতে চাইবো না ।
– দূরেও তো সরে যাচ্ছো না ।
লাবিবা চোখ তুলে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে তানভীরের দিকে । পরক্ষনেই সরে যেতে নিলে তানভীর বুকের সাথে চেপে ধরে । লাবিবার নিশ্বব্দে কান্না এখন শশ্বব্দে বেরিয়ে আসে । বুকের মাঝে মুখ গুজে কান্নার সাথে সমস্ত কষ্ট অভিমানের জলাঞ্জলি দিতে থাকে । তানভীরের চোখেও আজ পানি । এভাবে সাজাজীবন বুকের মাঝে ধরে রাখতে চায় তার পুতুল বউ টাকে । দু হাতে তানভীরের শার্ট আকড়ে ধরে । তানভীর লাবিবার কপালে অনেকক্ষন ঠোট ছুইয়ে রাখে । ছাবিনার ডাক শুনে জোরে শব্দে একটা চুমু খেয়ে ছেড়ে দেয় ।

To be continue ____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here