এখানে আকাশটা ভালোবাসার পর্ব ২৩

#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ২৩
.
মোবাইলের পাওয়ার বাটন অন করেই বড়সড় ধাক্কা খেল ঈশান।
তার ওয়ালপেপারে একটা মেয়ের ছবি।
কে এই মেয়েটা!
ভালভাবে তাকাতে ছবির দিকে তাকাতে চোখ আটকে গেল ঈশানের।
বেশ সুন্দরী, যতটা না সুন্দরী তার থেকে বেশি মায়াবি। কেমন একটা ঘোর লাগানো মায়া মায়া চোখ।
চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
তবে ঈশান একটা বিষয় খেয়াল করল, love at first sight অর্থাৎ প্রথম দেখাতেই ক্রাশ, প্রেম বা ভাললাগা যাই বলা হোক না কেন সেটা নেই মেয়েটার মাঝে।
তবে খেয়াল করলেই সৌন্দর্য্য গুলো চোখে পড়ে, এর মাঝে ডুবে থাকা যায়। বেশ সাবলীল ভঙ্গি তবুও মনে হয় কোথায় যেন একটা আলাদা বিশেষত আছে যা তাকে আলাদা করে রেখেছে অন্য সবার থেকে।
ঈশান জানেনা নিজের অজান্তেই নওশির মাঝে ডুবে গিয়েছে সে।
“এই ভাইয়া কি দেখছিস রে!”
“মা…মানে… এই মেয়েটার ছবি আমার ফোনের ওয়ালপেপারে আসল কি করে???”
“তোর ফোন তুই জানিস… ন্যাকা তাই না! দাঁড়া মাকে বলছি…”
“এই না না না শোন না এমন করিস না, আমি সত্যি চিনি না”
এবার হেসে ফেলল ঈতিশা।
“তার মানে এটা তোর কাজ?”
ঈশান কান টেনে ধরল ঈতিশার।
“লাগছে তো, ছাড়…”
“আগে বল..”
“আরে ওটা তো হবু বউ…”
“হবু বউ মানে?”
“আরে নওশি, বাবার বন্ধুর মেয়ে…”
বিস্মিত চোখ নিয়ে ঈশান আরেক পলক তাকায় ফোনের দিকে।
ঈতিশা ভালভাবেই খেয়াল করে সেটা।
সুযোগ পেয়ে নওশির কথা যা মায়ের থেকে শুনেছিল সব বলতে থাকে।
“ওরে বাবা, তা এত ভাল মেয়ে আমাকে পছন্দ করবে তো রে!”
“বাব্বাহ! ও পছন্দ করবে কিনা তা নিয়ে এত ভাবনা কেন তোর!” হাসিতে গড়িয়ে পড়ে ঈতিশা।
“আরে আমি তো কথার কথা বলছি” একটু কপট গাম্ভীর্য দেখাতে গিয়ে ব্যর্থ হয় ঈশান।
“আমার ভাই বলে কথা, পছন্দ করবে না মানে কি!”
“আরে ধূর… আমি এখন বিয়েই করব না”
“হুম বিয়ে তো করবি না, পরের বাড়ির আমানত দিয়ে কাজ করাবি” হাসি চেপে বলে ঈতিশা।
“মানে?” ঈতিশার কথার মাথামুন্ডু কিচ্ছু ঢুকলো না ঈশানের মাথায়।
“মানে নিজের বউকে এনে কাজ করা, আমি আর কোনো কাজ করতে পারব না”
কপট রাগ দেখালো ঈতিশা।
এতক্ষণে ঈতিশার কথা বুঝতে পারলো ঈশান।
“হুম এই কথা! দাঁড়াও…. মাকে এক্ষুণি বলব যার বাড়ির আমানত তাকে যেন দিয়ে দেয়..মা……..”
“এই ভাইয়া না….. বলিস না প্লিইইইইজ”
“না বলব…”
“না… তুই যদি বলিস সবাইকে বলে দেব তুই নওশির কথা আমার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে শুনেছিস!”
“তুই যে যেচে নিজেই বললি…!” রাগ রাগ চোখে অবাক হয়ে তাকায় ঈশান।
“কইইইইই” দুষ্টুমি খেলে যায় ঈতিশার চোখেমুখে।
“তোকে তো… ” বলে ঈশান ধরতে যায় বোনকে। কিন্তু তার আগেই ঈতিশা দৌড় দেয়।
ভাইবোনদের খুঁনসুটির এই সময়গুলো যদি ধরে রাখা যেত! এই খুঁনসুটি গুলো পরবর্তী জীবনে আর সেভাবে উপভোগ করা যায় না।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্ক গুলো একটি হলো ভাইবোনের সম্পর্ক। ঈতিশার সাথে খুঁনসুটি করতে গিয়ে কথা গুলো মনে হলো ঈশানের।
“আম্মু ভাইয়া…”
“এই এই কি হলো তোদের..” হাসতে লাগলেন মারিয়া।
“কি হলো তোদের?”
মারিয়া ঠেকাতে লাগলেন হাত দিয়ে…
ছোটাছুটিতে মাঝে মাঝে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের মতো করে ছেলে মেয়ে দুটো।
বড় মেয়ে ঈশানির বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। ওর দুটো ছেলে আছে।
ব্যাংকে চাকরি করে ঈশানির হাসব্যান্ড।
বেশ সুখে আছে ঈশানি।
সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে যায় ওরা।
ঈতিশার বিয়ে হয়ে গেলে বাড়িটা একেবারে ফাঁকা হয়ে যাবে। এমনটা চান না মারিয়া। তাই ছেলের বউ আনবেন আগে তারপর মেয়ের বিয়ে দেবেন বলে ঠিক করেছেন।
বড় মেয়েটা ছোট ভাইবোন দুটোকে ভীষণ ভালবাসত। তবে মারামারি খুঁনসুটি এত করত না। আর এরা যত মারামারি করবে বাচ্চাদের মতো, আবার একে অন্যকে ছাড়া থাকতেও পারবে না।
“আম্মু ভাইয়ার না নওশিকে পছন্দ করে ফেলেছে”
“দাঁড়া তোকে…!”
“তবে তুই কেন ওভাবে দেখছিলি নওশিকে?” দূর থেকেই হাসতে হাসতে বলে ঈতিশা।
“আম্মু ওকে নিষেধ করো” বোনের সাথে আর তর্কে যাওয়ার চেষ্টা করে না ঈশান মায়ের সামনে কি না কি সত্যিমিথ্যে মিলিয়ে বলে দেবে তার ঠিক নেই!
“আচ্ছা নে থাম তোরা” হাসি চাপতে চাপতে উত্তর দিলেন মারিয়া।
.
“বেশ তাই কর যেটা আমি বলি, দেখা করাটা রিস্ক”
মেসেজটা সেন্ড করে সায়ান মায়ের রুমে গিয়ে দাঁড়ালো৷ চমকে সায়ানের দিকে তাকালেন জাহরা।
একি হাল হয়েছে তার ছেলের!
এ ছেলেকে তো তিনি চিনেন না।
গত কয়েকদিন ছেলের মুখের দিকে তাকানোর সাহস হয়নি তার।
চেয়েও পারেননি। নওশিই সব করছে।
একবার নওশিকে দিয়ে রিদিমাকে আনার কথা বলেছিলেন,
“ওর নাম যেন এবাড়িতে আর না করা হয়” প্রচন্ড কড়া স্বরে বলেছিল সায়ান।
“এমনকিছু কি হয়েছে যার জন্য তুই ভাবির উপর বিশ্বাস একেবারেই হারিয়েছিস??”
“হুম” নওশির প্রশ্নে শুকনো মুখে জবাব দেয় সায়ান।
সেদিন ধীরে ধীরে রুম থেকে চলে গিয়েছিল নওশি।
মায়ের কাছে গিয়ে সব খুলে বলল সে।
জাহরা কোনো উত্তর দেননি সেদিন।
সায়ানের আজ মায়ের কাছে থাকতে খুব ইচ্ছে করছে।
“মা মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেবে?”
বুকটা ফেটে যাচ্ছিল জাহরার। অন্য সময় হলে তিনি খুশি হন।
ছেলেমেয়েরা এখনো মায়ের আদরের আঁচলে থাকতে চান ভেবে ভাল লাগত তার।
কিন্তু আজ!
আজ তার ছেলেও এক বাচ্চার বাবা। কিন্তু কেন এসব হচ্ছে! উত্তর পান না জাহরা।
“মা নওশির বিয়ের কথা হচ্ছে?”
“হুম”
“দেখেশুনে বিয়ে দিয়ে দাও”
“নওশিকে দেখতে আসবে দুএক দিন পরে, তোর বাবা বলছিল।”
“নওশির পছন্দ তো? ওর পছন্দ না হলে কিছু করো, আমার ছোট হয়েও অনেক কিছু বুঝে যা আমি বুঝিনা”
“হুম আমাদের পছন্দে ওর দ্বিমত নেই।”
“ছেলেটাকে দেখেছে নওশি?”
“এইদিন আসলে দেখবে”
“মানে কি! বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে কথা হচ্ছে, নিশ্চয়ই বিয়েটা হবে বলেই কথাবার্তা এগোচ্ছে। তাহলে নওশির মতামত এমন খাপছাড়া কেন!”
“জানিনা, ওকে জিজ্ঞাসা করতে ও বলল আমাদের মতামতে ওর আপত্তি নেই”
“আমি নওশির সাথে এটা নিয়ে কথা বলব… আর মা….”
সায়ান আরো প্রশ্ন করতে যাবে এমন সময় মায়া ঘুম থেকে উঠে কেঁদে উঠল।
নওশি তাড়াতাড়ি এসে ওকে কোলে নিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পরই চুপ করে মায়া।
নওশি মায়াকে বুকে করে ভাবে এই মায়াকে ছাড়া সে থাকবে কি করে!
মায়ার মা চলে যাওয়ার পর থেকে এই মেয়েকে কোলে কাছে রাখে সবসময়। আগে থাকত এখন আরো বেশি।
কি সুন্দর করে… “পুপিইইই” (ফুপি) বলে আধো বোলে ডাকতে চেষ্টা করে।
এই মেয়ে ছেড়ে মায়ার মা থাকে কি করে! এই প্রশ্নের সদুত্তর খুঁজে পায়নি নওশি।
মায়া যখন বড় হবে, যখন সে জানবে তার মা তাকে এভাবে ফেলে চলে গিয়েছিল? তখন কেমন হবে মেয়েটার মনের অবস্থা!
কি করে সহ্য করবে মেয়েটা!
আজ হোক কাল হোক মেয়েটা জানবেই তার মায়ের কথা।
নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে ভাবি এভাবে শাস্তি না দিলেও পারত।
চোখ দুটো ভিজে যায় নওশির।
“চকেট খাবি মা?” প্রশ্ন করে নওশি…
মাথা নাড়ে মায়া।
মেয়েটা বেশ দ্রুতই কথা বলতে শিখেছে।
দুই বছরের মেয়ে হিসেবে গ্রোথ খুব ভালো মায়ার।
.
“তুমি বাবা হতে চলেছ!”
“জয় তুমি বাবা হবে”
“জানো আমি না মা হতে যাচ্ছি…”
“আরেকটা অতিথি আসছে”
রুমে ঢুকেই নিশিকার একই কথা বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলার ভঙ্গি দেখে হাসি পেয়ে গেল জয়ের।
কিন্তু মাথার ভিতর একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে সে বাবা হবে।
“সত্যি??????” চিৎকার করে উঠে জয়।
“এই তুমি কখন এলে?”
বোকা বোকা ভঙ্গিতে তাকায় নিশিকা।
“নিশিকা সত্যি আমি বাবা হবো!”
জয়ের চোখে মুখে আনন্দের জোয়ার দেখে নিশিকার ভীষণ খুশি লাগলো।
জয়ের হাত দুটো চেপে ধরে বলল,
“সত্যি!”
জয়ের চোখে পানি চলে এলো। এ আনন্দের কান্না।
এই অনুভূতি গোটা কয়েক শব্দে বর্ণনা করা যাবে না।
আজ সে দেশে ফেরার জন্য সব আয়োজন করে এসেছিল। টিকিট তিনটা নিশিকার হাতে দিল।
“সত্যি আমরা দেশে যাচ্ছি?” নিশিকার চোখ মুখে বিস্ময়।
“সত্যি” নিশিকার নিজের কাছে টেনে নিয়ে উত্তর দেয় জয়।
“কাউকে বলব না, আবার সারপ্রাইজড করব সবাইকে।”
“ওকে” মুচকি হেসে উত্তর দেয় জয়।
জয় নিশিকা বা রোশনি কেউই বাসার এই পরিস্থিতি জানেনা। জানাতে দেননি জাহরা।
ওদের টেনশনে ফেলে রেখে লাভ নেই যা হওয়ার তা হবেই।
প্রতিদিনই ফোন দেয় নিশিকারা। সবার সাথেই কথা হয় ওদের।
ভাবিকে চেয়েছিল কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছিল নওশি।
এখন সবকিছু বেশ শক্ত হাতে সামলাচ্ছে নওশি। মেয়েটা চলে গেলে যে কি হবে!
.
“আরিফ কি করছ???”
“এই তো এয়ারপোর্টে বসে আছি” রিদিমার কাছে মিথ্যে কথা বলে আরিফ।
আরিফ দেশে ফিরেছে আরো দুইদিন আগেই।
“ও আচ্ছা, আমরা বিয়ে করছি কবে?”
“আরে পাগলী এত ভয় পাচ্ছো কেন!
মিষ্টি সুরে বলে আরিফ
“ভয় পাচ্ছি না, আমার তোমাকে ছেড়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না।”
“আরে আমি আছি তো” রাগে আরিফের গা জ্বলে যায়। তবে রিদিমা সত্যি কথাই বলেছে যে আরিফ কে ছেড়ে থাকতে পারছে না।
আসলে বারবার মিথ্যের পর সত্যিটাকেও মিথ্যের খাতায় লেখা হয়।
রিদিমা বারবার মিথ্যে বলে এসেছে তার সত্যিটাকে কেউ মানবে কেন!
আরিফের সাথে কথা বলে বেশ ভাল লাগছে রিদিমার।
আজ বেশ কয়েকদিন পর অফিসে যাবে রিদিমা।
রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যাল দেওয়াতে থেমে আছে তার অফিসের গাড়ি।
বাইরে তাকাতেই চমকে গেল রিদিমা।
রিকশায় বসে আছে অনিকের বাবা রাব্বি, কোলে অনিক আর পাশে একটা মেয়ে। মেয়েটাকে চিনতে পারল না৷ নিশ্চয়ই রাব্বির দ্বিতীয় বউ।
অনিক তো খুব সুন্দর হয়ে গেছে।
ছেলেটার কত বড় হয়ে গেছে। সাড়ে ছয় বছর বয়স মনে হয়।
রিদিমা খেয়াল করল অনিকের এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুল ঠিক করে দিচ্ছে মেয়েটা।
বাব্বাহ মেয়েটা এত আদর করছে! ও তো অনিকের সৎ মা! অবাক হয়ে গেল রিদিমা।
রিদিমা যতদূর জানে গাড়ি থাকার কথা রাব্বির, রিদিমা চলে আসার অনেক পরে কিনেছিল। তবে রিকশায় কেন!
হয়তো শখ হয়েছে।
এর ওর কাছে শুনেছে রাব্বি বেশ ভাল আছে এখন।
গাড়ি ছেড়ে দিলো।
রিদিমার ইচ্ছে করছিল গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ছেলেটাকে একটু কোলে নিতে।
কিন্তু তা তো সম্ভব না।
তাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পিছনে ফিরলে হবেনা।
নিজের মনকে বোঝায় রিদিমা।
অফিসের কাজ এতদিন বাড়িতে বসেই করেছে আর যাকে যা বলার ফোনেই বলেছে কিন্তু এবার আর না গেলেই নয়।
অফিসে নিজের রুমে গিয়ে মায়ার জায়গাটা দেখতেই বুকটা ধ্বক করে উঠল রিদিমার।
মন থেকে জোর করে সরিয়ে দেয় মায়ার কথা।
‘কিছু পেতে গেলে কিছু হারাতে হয়’ নিজের মনকে প্রবোধ দেয় সে।
কিন্তু রিদিমা জানেনা সে হীরে ফেলে দিয়ে কাচ খুঁজে বেড়াচ্ছে।
জীবনে এক একটা সময় আসে যখন নিজের প্রাপ্তিটুকু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়, বেশি পাওয়ার আশা করতে গেলে যা প্রাপ্তি তাও ছেড়ে চলে যায়।
রিদিমার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
দেখা যাক, যে আলোর আশায় রিদিমা ঘুরছে সেই আলো তাকে কতটুকু আলোকিত করে।
.
“রায়ান তোকে আজকাল বড্ড চুপচাপ দেখায়, পরীক্ষা তো শেষ এত কি ভাবছিস তুই?”
রায়ান সানজানাকে কিছুই জানায়নি ইচ্ছে করেই।
কিন্তু খুব খারাপ লাগছে তার। আসার পরিবেশটা কেমন যেন হয়ে গেছে।
একটা মাত্র মেয়ে তাদের সুখের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে এটা ভাবতেই অবাক লাগছে রায়ানের।
ধীর কন্ঠে খুব শান্ত ভাবে সানজানাকে খুলে বলে রায়ান।
স্তম্ভিত হয়ে যায় সানজানা!
একি বলছে রায়ান। এও কি সম্ভব!
সানজানা বড়লোক বাবার আদুরে মেয়ে হতে পারে কিন্তু অন্যায় শেখেনি।
মায়ার জন্য খুব খারাপ লাগছিল সেই সাথে নওশির শক্ত হাতে সবাইকে ম্যানেজ করার কথা শুনে শ্রদ্ধায় মন ভরে যায় তার।
“সানজানা ভাবি কিন্তু আমার ভাইয়ের পছন্দ ছিল, বাবা মা মেনে নিয়েছিল কিন্তু আজ দেখ আমাদের পরিবারের হাসিমুখটাই নষ্ট হয়ে গেছে। মায়ার দিকে তাকাতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। নওশির ভাবিকে পছন্দ ছিল না৷ আজ দেখি নওশির কথাই ঠিক!”
“আসলেই অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে নওশি, বেশ শক্ত মেয়ে!”
“হুম, দেখ সানজু ভাইয়ার পছন্দে এই হাল, আমার পছন্দে জানিনা বাবা মা কতটা বিশ্বাস করবে”
কেঁপে উঠল সানজানা।
সেটা লক্ষ্য করে রায়ান বলে,
“আরে পাগলী কথা টা তো শেষ করতে দে! তুই প্লিজ আমাদের সংসারের হাসি কখনো মুছে দিবি না! জানি তুই ভাল মেয়ে। তবুও বলছি, কিছু মনে করিস না!”
আহত স্বরে কথা গুলো বলে রায়ান।
“আমি তোর অবস্থাটা বুঝতে পারছি রায়ান। আমার উপর আস্থা রাখতে পারিস। ইনশাআল্লাহ”
“আমি জানি সানজু! জানিস একসময় আমি সবচেয়ে বেশি হাসতাম বাড়িতে। ভার্সিটিতে হয়তো কম কথা বলি কিন্তু আমাদের বাসার প্রত্যেকটা মানুষ খুব হাসিখুশি, তুই না মিশলে বুঝতে পারবি না। নওশি কে তো তুই দেখেছিস,
জানিস আমার বাবা ভাবিকে বড়মা বলে ডাকত, ভাইয়া ভাবির বিজনেসে কত সাহায্য করেছে, ভাবি এবরশন করতে চেয়েছিল, আমাদের পরিবারের জন্য পারেনি।”
রায়ানের কথা গুলো শুনে খুব খারাপ লাগে সানজানার।
আবার রায়ানের পরিবারের কথা শুনে ভালোও লাগে।
“হুম মন খারাপ করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“তাই যেন হয়। নওশিকে দেখতে আসবে দুই এক দিনের মাঝেই”
“ঈশান নামের সেই তোর বাবার বন্ধুর ছেলে?”
“হুম”
“তাহলে নওশির সাথে একটু কথা বলতে হয়”
“বলিস, নওশি খুশি হবে। বেচারার উপর খুব ধকল যাচ্ছে। বাবা কিছুটা কাটিয়ে উঠলেও মার মন ভালো করা যায় না সবসময়”
“আরে নিজের হাতে গড়া সংসার ভাঙতে দেখলে কে সহ্য করতে পারে বল! সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস আল্লাহর রহমতে!”
“আল্লাহ যেন তাই করেন।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে রায়ান।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here