এখানে আকাশটা ভালোবাসার পর্ব ২৫

#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ২৫
.
দিন সাতেক পরেই নওশির বিয়ে।
বেশ কিছুদিন কেটে গেছে এরই মাঝে।
আরিফ আর রিদিমার সম্পর্ক বেশ ভালই যাচ্ছে।
সায়ান রিদিমার ডিভোর্স হয়ে গেছে।
সায়ান কাজটা বেশ দ্রুত করে নিয়েছে তৎপরতার সাথে। রিদিমার সাথে কোনো বন্ধনেই থাকতে চায় না সায়ান।
তাই যে ভালবাসা বাড়িয়ে লাভ নেই সেই ভালবাসাকে দূরে ঠেলতে শিখতে হয়। আইনত মায়ার এখন রিদিমার কাছে থাকার কথা।
তবে সায়ান মায়াকে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল, সেই অনুযায়ী আবেদন করেছিল।
কিন্তু বিচারক অবাক হয়ে এই প্রথম লক্ষ্য করছেন কোনো মা তার সন্তানকে নিজের কাছে রাখার ব্যাপারে বলছে,
“মায়া সায়ানের সন্তান, তাই সায়ান নিজের কাছে রাখতে চাইলে রাখুক, আমার এতে কোনো আপত্তি নেই”
রিদিমা আপত্তি করলেই মায়াকে রিদিমার কাছেই রাখার হতো কিন্তু রিদিমা আপত্তি করেনি।
সায়ান এটা জানতো যে রিদিমা মায়াকে চাইবে না।
তাই জেনেবুঝেই সে মায়ার অভিভাবকত্ব চেয়েছিল।
রিদিমার বাবা মাও মায়াকে দাবি করেননি।
কারণ তারা জানতেন মায়া সায়ানের কাছেই বেশি ভাল থাকবে।
রিদিমার বাবা মুখ নিচু করে সায়ান আর সায়ানের বাবা ভাইদের সামনে থেকে চলে এসেছিলেন।
রিদিমার বাবা ভেবেছিলেন একবার মেয়ের হয়ে ক্ষমা চাইবেন, কিন্তু শক্তিতে কুলায়নি!
সেদিনের বাবার মুখ রিদিমার আড়ালে নিচু হয়নি, কিন্তু রিদিমা কোনো গুরুত্ব দেয়নি। অন্ধ ছিল রিদিমা!
হিতাহিতজ্ঞান শূন্য!
‘হায়রে মায়া! তুই এখনো বুঝিসনি… ডিভোর্স এর সাথে সাথে তোর মা তোকেই আলাদা করে দিয়েছে।
আমরা বড় অপরাধী হয়ে গেলাম তোর কাছে, তোর চলার পথটা তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের ছিল কিন্তু আমরা তা পারলাম না।
তোর কাছে আমার ব্যর্থতা। তোর জন্য যে পৃথিবী আমি গড়েছি তার আলো আজ অস্তগামী, ক্ষমা করিস’
বাসায় ফিরে মেয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে এগুলোই ভাবছিল সায়ান।
আলতো করে মেয়ের কপালে একটা চুমু দেয় সায়ান।
সামান্য নড়ে উঠল মায়া।
এ যেন বাবার আদরেরই প্রত্যুত্তর।
আর ঠিক বিপরীতে,
রিদিমা এখন আস্তে আস্তে আরিফের মাঝেই নিজের পৃথিবী তৈরি করে নিয়েছে। আরিফের সহযোগিতায় বিজনেস এ এখন রিদিমা বেশ ভাল পজিশনে, ঠিক যেখানে সে উঠতে চেয়েছিল।
খুব হ্যাপি থাকে রিদিমা আজকাল। আরিফকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সে।
আরিফ সব ভাল কিন্তু
তবে শুধু বিয়ের কথা বললে আরিফ একটু আমতা আমতা করে। কেন বিষয়টা বুঝতে পারেনা রিদিমা।
তবে রিদিমা খেয়াল করেছে আরিফ বেশ মুখে ভালবাসি বললেও কখনো কাছাকাছি আসে না।
কেন কে জানে!
“আরিফ, আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি”
রিদিমার চোখের দিকে তাকিয়ে আরিফ খুব ভালভাবে বুঝতে পারছিল রিদিমা মিথ্যে বলছে না।
মনে মনে খুব খুশি হলো আরিফ।
“আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি রিদিমা”
“আমরা বিয়ে করছি কবে?”
“আরে বাবা এত তাড়াহুড়ো করার কি আছে! আমি কি হারিয়ে গেছি ম্যাম!”
“না তবুও, তোমাকে আমার করে পেতে চাই আমি… আমি সত্যিই ভালবাসি তোমাকে আমার কখনো এমন অনুভূতি হয়নি কারোর জন্য”
অবাক হয়ে আরিফ দেখল রিদিমার কাতর চোখ।
“আরে লক্ষ্মীটি এত চিন্তা কেন করছ!”
“হুম” গাঢ় স্বরে উত্তর দিলো রিদিমা।
আরিফ আর কিছু বলল না এ বিষয়ে।
.
ঈশানের সাথে বেশ কিছু সময় কথা হলো।
মোবাইলটা রেখে জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে আছে নওশি।
দৃষ্টি শূন্যে…
ঈশানকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না নওশি।
ঈশান এমন এমন কথা বলে যেন ঈশান নওশিকে কত্ত ভালবাসে।
আবার কিছু কিছু সময় এমন অচেনা আচরণ করে যেন ওর কথা বলার ইচ্ছে/সময় নেই কিন্তু নওশি জোর করে কথা বলছে।
এমন নয় যে নওশি সারাক্ষণ কথা বলতে চায়। কিন্তু নওশি খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছে তার আর ঈশানের কথা বলার বিষয়টা পুরোপুরি ঈশানের ইচ্ছের উপর নির্ভর করে।
এটা নিয়ে একদিন বলতে গেলে ঈশান উত্তর দেয়, “আরে তুমি ইজি থাকো, এত কিছু ভেবো না”
জোর করেই ভাবনা গুলোকে তাড়িয়ে দিয়েছিল সে।
নওশির মেসেজ সবসময় রিপ্লাই দেয় না ঈশান। নওশি অনুযোগ করলে খুব স্বাভাবিকভাবে হেসে উড়িয়ে দেয় কিছু খোঁড়া যুক্তি দিয়ে। এটা খুব কষ্ট দেয় নওশিকে।
আর প্রশ্ন করেনি নওশি।
শেষে যদি অনধিকার চর্চা হয়ে দাঁড়ায়!
আবার যখন সুন্দর করে কথা বলে খুব ভাল লাগে নওশির। কারণ তখন ঈশান একেবারে আপন করে নেয়। নওশি রাগ করে থাকতে পারে না।
তবে ছেলে হিসেবে ঈশানকে খুব পছন্দ হয়েছে নওশির। হ্যাংলামো নেই, বাজে কথা বলে না।
আপাতদৃষ্টিতে ভাল।
বাকিটা কপালের উপর ছেড়ে দিয়েছে।
ঈশান জানে নওশি তাকে কতটা গুরুত্ব দেয় কিন্তু সে এড়িয়ে যায়।
এর কারণ সে জানেনা৷ মেয়েদের ব্যাপারে ইন্টারেস্ট কম ঈশানের।
জীবনের একটা সময় মেয়েদের সাথে খুব মিশেছে সে, তবে সেটা ফোনালাপ আর চ্যাটিং এর মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল।
ঈশানের ধারণা সব মেয়েই সমান। গতানুগতিক বিষয়গুলোর বাইরেও যে অনেক ভাল মেয়ে থাকতে পারে এটা ঈশানের বিশ্বাসে কুলায় না।
সবচেয়ে বড় ঈশান বিশ্বাস করার চেষ্টা করেনি।
হুম ভাল মেয়ে নওশি, হাজারে একটা মেলে।
বিয়ে হলে তারা সুখেই থাকবে।
তবুও সেভাবে গুরুত্ব দেয় না ঈশান।
হয়তো বিয়ের পরে ঠিক হয়ে যাবে।
.
জয় নিশিকা, রোশনি এসেছে আজ।
নিশিকা আর রোশনি এসেই নওশিকে নিয়ে পড়েছে।
ভীষণ খেপাচ্ছে তাকে। রোশনির খুব খারাপ লাগছে মনে মনে নওশি চলে যাবে এটা মানতে পারছে না মনে মনে।
“মায়া মামণি……” ডাক দেয় নিশিকা।
“ঘুমাচ্ছে” ছোট্ট করে উত্তর দেয় জাহরা।
“ভাবি কই? অফিসে?”
জাহরা কোনো উত্তর দিলেন না।
“মা ভাবি কই? ভাইয়া কই?”
চোখ দুটো ছলছল করে উঠল জাহরার। জয় ও বেশ অবাক হয়ে গেল।
নওশি এসে বলল,
“আপু তুই এদিকে আয় আমি বলছি।”
বসার ঘরে বসে জয় নিশিকা আর রোশনির সাথে কথাগুলো বলছিল নওশি।
প্রচন্ড রেগে গেল রোশনি আর নিশিকা।
জয় কোনো কথা বলতে পারছিল না।
তার বারবার মনে হচ্ছে সে কিভাবে সায়ানের মুখটা দেখবে!…
মায়ার ভবিষ্যৎ থেকে মা শব্দটা তুলে দিতে সায়ানের কতটা কষ্ট হয়েছে তা কারোর অগোচরে থাকল না।
এমন সময় মায়া কেঁদে উঠল, সবাই দৌড়ে গেল।
মায়া হঠাৎ কারোর কোলেই যেতে চাইল না।
নিশিকা রোশনি জয়ের সাথে মায়া পরিচিত নয়।
নওশি কোলে নিতেই চুপ করল সে। কিন্তু হঠাৎই বলে উঠল,
“ফুপি মা যাব…”
বলেই কান্না শুরু করল। এত গুলো মুখের মাঝে হয়তো ছোট্ট মায়া তার মায়ের মুখটা খুঁজে ফিরছিল। মায়ার গ্রোথ ভাল হওয়ায় বেশ তাড়াতাড়িই বুঝতে শিখেছে।
আজ মায়ার কান্না কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না।
“মা যাব, মা যাব করছে”
নওশি ঠিক বুঝতে পারছে না কি করবে।
না চাইতেও ও ফোন দিলো রিদিমাকে।
প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেয় রিদিমা।
বারবার রিদিমা ফোন ডিস্কানেক্ট করায় মোবাইল টাই ছুঁড়ে ফেলে দিল নওশি।
সাধারণত নওশি রাগে না, এই ধরনের রাগ তো নয়ই।
জয় এটা দেখে মায়া নিয়ে বাইরে গেল। যদি কিছুটা শান্ত হয় মায়া।
জয় যখন মায়াকে নিয়ে ফিরল তখন সাথে নিয়ে আসল মায়ার হাসিমুখ, একগাদা চকলেট আর খেলনা।
সায়ান সব শুনে শক্ত মুখে বসে রইল।
আর সহ্য করতে পারে না সে!
শুধু নওশির বিয়ের অপেক্ষা মাত্র।
রুমে এসে আরিফকে মেসেজ করে,
“অনেক ধন্যবাদ তোকে!”
“আমি চাইলেও এত উদার হতে পারতাম না”
হেসে ফেলে সায়ান। “তাই নাকি?”
“সত্যিই”
“না গেলে হয়না সায়ান?”
“না” ক্লান্ত স্বরে উত্তর দেয় সায়ান।
“আমি আসলেই লাকি আর রিদিমা ও লাকি”
আরিফের কথায় জোরে হেসে ফেলল সায়ান।
“কেন বলেছিস বুঝেছি, জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি… নীরব থাকার চেয়ে বড় প্রতিশোধ আর নেই”
“মানে?”
“তোকে যা বলেছি তাই কর”
বলে ফোন রেখে দিলো সায়ান।
সায়ানের ফোন রেখে আরিফ ফোন দিতেই পিছনে তাকাতেই আরিফ দেখল রিদিমা তার পিছনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে!
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here