গল্পটা_আমারই পর্ব : ৮

0
323

#গল্পটা_আমারই

পর্ব : ৮
(সুরমা)

কি রকম অদ্ভুত এক শিহরণ। অর্ণবের স্পর্শটা আমার শরীর নয়, মনও ছুঁয়ে গেলো। প্রতিটা রক্তবিন্দু জাগ্রত হয়ে গেছে একটা মানুষের স্পর্শে। কারো স্পর্শ যে এতোটা পাওয়ারফুল হয় আমার জানা ছিল না। আমি বেশ কিছুক্ষণ অর্ণবের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু মনকে শান্ত করতে পারছিলাম না। হার্টবিটটা দ্রুত দৌঁড়াচ্ছিল। শরীরও কাঁপছিল।

প্রায় ১০মিনিট পর অর্ণব আমার কাছে আসে। আমি অর্ণবকে দেখে অন্যদিকে ফিরে তাকাই। ওর দিকে তাকাতে লজ্জা লাগছিল। অর্ণব আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,,,,,,

– আই য়্যাম সরি মীরা। আমি বুঝতে পারি নি। অর্ণবের মুখে সরি কথাটা শোনে আমি অর্ণবের দিকে ফিরে তাকাই। অর্ণব কেমন অসহায় ভঙ্গীতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওও বড় ধরনের কোনো অন্যায় করে ফেলেছে।

ওর অনুসূচনা হচ্ছিল। সেটা আমি ভালই বুঝতে পারছিলাম। অর্ণবের মুখের রেখা গুলো বদলে গিয়েছিল। এই মুহূর্তে আমার অল্প কোনো কথায় সে মারাত্মকভাবে অপমানিত হবে। তাই আমি এই মুহূর্তে তাকে কিছু বলি নি।

অর্ণবের থেকে আমার চলে আসার পেছনে মূল কারণ ছিল অনুভূতি। আমিতো ওর স্পর্শে হারিয়ে যাচ্ছিললাম। ওও আমাকে স্পর্শ করেছে সেটা যে ঠিক না সেই মুহূর্তে আমার মাথায় এটা আসে নি। বরং ওর স্পর্শে আমি সুখ খোঁজে পেয়েছিলাম। আমি মাথা নিচু করে বললাম,,,,,

-ইটস ওকে। সেদিনের মতো আর ঘুরাঘুরি হলো না। অর্ণব আমাকে মেসে পৌঁছে দিয়ে তারপর নিজের হলএ যায়। ভালই চলছিল আমাদের প্রেম কাহিনী। দুষ্টু মিষ্টি সম্পর্ক। তবে আমি পড়াশোনা থেকে অনেকটা পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। সারাক্ষণ মাথায় অর্ণব ঘুরতো। অর্ণবকে রেখে আমি যতই বই নিয়ে বসে থাকতাম পড়াশোনা মাথার উপর দিয়ে যেতো।

অর্ণবের সাথে কথা বলতে গেলেই অর্ণব আমাকে পড়াশোনার ব্যাপারে উৎসাহ দিতো। ওর কথা গুলো আমি মন দিয়ে শোনলেও ওর উপদেশগুলো মানতে পারতাম না। ওর অনুপস্থিততে ওর স্মৃতি গুলো আমাকে ঘিরে রাখতো।

অর্ণব আমাকে নাম ধরে ডাকে। অন্যদের মতো ময়না, টিয়া, বাবু, বেবি এসব বলে না। অর্ণব এগুলো পছন্দও করে না। তবে মাঝে মাঝে আমাকে লক্ষ্মীটি বলে।

অর্ণবের থেকে নতুন নাম শোনতে আমার বেশ লাগে। মনে হয় পৃথিবীর সেরা গিফটা পেয়েছি। ওর কাছে ছোটকাট বায়না করতেও ভালোলাগে। ওও আমার নাম ধরে ডাকলেও আমার ভাল লাগে। অন্যরা যখন আমাকে মীরা বলে ডাকে আমি এতটা আপ্লুত হই না। কিন্তু অর্ণব আমার নামটা নিলে মনে হয় আমি ধন্য। আমার নামটা স্বার্থক। আমার নামটাও জানি অদ্ভুতভাবে বলে।

একটা মানুষ কিভাবে এতটা মনে চেপে বসতে পারে অর্ণব আমার জীবনে না আসলে আমি বুঝতে পারতাম না।

ওর সাথে রিলেশন একটা বছর কেটে গেছিল। কিভাবে একটা বছর শেষ হলো আমি বুঝতে পারি নি। এর মাঝে অর্ণবের সাথে আমি অনেক প্রি হয়ে গেছি। এখন অনেক পাগলামিও করি। অর্ণবও সেগুলো মেনে নেয়। রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে অর্ণব নিজের হাতে আমায় খাইয়ে দেয়।

অর্ণবের সাথে রিলেশন হওয়ার পর আমি বাসায় বেশি যেতাম না। অর্ণবও তেমন যায় না নিজের এলাকায়। তবে একদিন অর্ণব আমাকে ১২ টার দিকে কল করে। আমি তখন ক্যাম্পাসে বসে আছি। এই সময় অর্ণব অনেক বিজি থাকে
তাই কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। আমি অর্ণবের ফোনটা পেয়েই রিসিভ করি।

আমাদের মধ্যে রিলেশন হওয়ার পর থেকে এমন কখনও হয়নি অর্ণব ফোন করেছে আর আমি রিসিভ করতে পারিনি। বরং মোবাইলটা আমি নিজের থেকে দূরে রাখতাম না। অর্ণব আমাকে কল করবে এই ভেবে ফোনটা সারাক্ষণ নিজের কাছেই রাখতাম।

অর্ণব বলে,,,,
-মীরা, তুমি কোথায় আছো?
-ক্যাম্পাসে আছি। তুমি কোথায়?

-আমি চারুকলা ভবনে। তোমার এখন ক্লাস আছে?
-না, মাত্র ক্লাস করে বের হলাম।
-তাহলে একটু আসো আমি এখানে বসলাম।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এক মুহূর্তও লেইট করলাম না। একটা রিকশা নিয়ে চলে গেলাম চারুকলায়। চারুকলার চিকেন চপ আমার খুব প্রিয়। খুব ভাল্লাগে। তবে সকাল বেলায় তেমন পাওয়া যায় না। চারটার পর এবেলেবেল পাওয়া যায়।

আমি চারুকলার গেইটের সামনে গিয়ে রিকশা থেকে নামলাম। অর্ণব গেইটেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখে অর্ণব রিকশার কাছে চলে আসে। অর্ণবের হাতে টোংগা। চিকেন চপের টোংগার মতো। অর্ণব এসেই আমার হাতে টোংগা ধরিয়ে দেয়। আমি টোংগা হাতে নিয়ে বলি,,,,,,

-এটায় কি আছে?
-তোমার ফেভারিট চিকেন চপ। আমি বেশ খুশি হয়ে বললাম,,,,
-ওয়াও,, এখন পাওয়া গেছে?
-হুম,। অনেক্ষণ আগে কিনেছি। হয়তো এখন ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। আমি টোংগাটা অর্ণবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,,,,,

-এই নাও। ধরো। মামাকে রিকশা ভাড়াটা দিই আগে। কিন্তু অর্ণব টোংগাটা ধরলো না। সে প্যান্টের পকেট থেকে নিজের ওয়ালেট বের করে বললো,,,,,

-আমার বউয়ের আসার রিকশা ভাড়াটা দেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে। অর্ণবের কথায় আমি অবাক হয়ে গেছিলাম। এই প্রথমবার অর্ণব আমাকে বউ বলেছে। আমি হা করে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল আমি স্বপ্ন দেখছি। অর্ণব কখনও এত ইমোশনাল কথা বলেনি এর আগে। অর্ণব রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছিল। তখনও আমি ওর দিকে তাকিয়েই ছিলাম। অর্ণব নিজের ওয়ালেট পকেটে রাখতে রাখতে বলে,,,,,,

-কি হলো? এভাবে এতক্ষণ ধরে কি দেখছো? অর্ণবের কথা শোনে আমি চোখ নামিয়ে ফেলি। অর্ণব বলে,,,,

-চলো ভেতরে গিয়ে বসি। আমি অর্ণবের পেছন পেছন গেলাম। একটা গাছের নিচে দুজনে পাশাপাশি বসলাম। অর্ণবের বলা কথাটা বার বার আমার কানে লাগছিল। খুশিতে আমার চোখ ছলছল করছিল। অর্ণব আমাকে বউ বলেছল। এর চেয়ে সুখের আর কি হতে পারে। অর্ণব আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,

-হ্যালো ম্যাডাম, কি এতো দেখছো বলতো।
-তোমাকে
-আমাকে? কেন আগে দেখনি??
-দেখেছি। তবে অর্ণবকে। আজ দেখছি আমার জামাইকে। আমি কি থেকে কি বললাম নিজেও জানি না। তবে বলার পর থেকে আমার লজ্জা লাগছে। আমি তাড়াতাড়ি মাথা নিচু করে ফেলি।

আমি অলরেডি হাতে চিকেন চপ নিয়ে বসে আছি। অর্ণব আমার হাত টেনে নিজের মুখের দিকে নিয়ে আমার হাত থেকে চিকেন চপ খেয়ে ফেলে। অর্ণবের কাজে আমি বেশ অবাক হচ্ছিলাম। আজকে অর্ণবকে অন্য রকম লাগছিল। অর্ণব বলে,,,,

-আহারে আমার লাজুক লতা বউ।, এর আগে কখনও তোমাকে এতটা কিউট লাগেনি। লজ্জা পেয়ে একদম লজ্জাবতী হয়ে গেছে। ম্যাডাম, তোমার জন্য একটা সুখবর আছে। আমি অর্ণবের কথা শোনে অবাক হয়ে বললাম,,,,,,
-কি সুখবর?

-আম্মু তোমাকে দেখতে চাইছে। অর্ণবের কথা শোনে আমি এতটা অবাক হয়েছিলাম বলার মতো না। আমি আমতা আমতা করে বললাম,,,,,,

-দেখতে চাইছে কেন? আমার কেমন নার্ভাস ফিল হচ্ছিল। অর্ণব আমার কথা শোনে বলে,,,,
-ঘাবড়ে যাচ্ছো কেন? আম্মু বলেছে আমি যেন তাঁর ছেলের বউকে খুব শীঘ্র বাসায় নিয়ে যাই। আর দুদিনের মধ্যেই নিয়ে যাই। তিনি দেখবেন।

-আমি তোমার বাসায় যাবো?
-হুম, যাবে। আর কালেই যাবে। অর্ণবের কথা শোনে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছিলাম। খুব ইচ্ছে ছিল অর্ণবের মতো রত্ন যে মা পেটে ধরলছিল একবার সেই মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করি। একবার সেই মাকে মা বলে ডাকি। তাহলে হয়তো আমি পূর্ণতা পেতাম।

চলবে———

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here