গল্পটা_আমারই পর্ব : ৭

#গল্পটা_আমারই

পর্ব : ৭
(সুরমা)

সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল আমার আর অর্ণবের ভালবাসা নামক নতুন সূর্যের সূচনা। অর্ণব যে খুব ভাল ছেলে সেটা তার ভালবাসা প্রমাণ দিয়েছিল আমাকে। আসলে রিলেশন করার সময় ঠিক একটা আবেগ কাজ করে। তাকে পেতে হবে। তার মতো হয়তো আর কাউকে পাবো না। আমারও সেম। তবে পাওয়ার পর আমার খারাপ লাগছে না। স্বর্গ সুখের মতই লাগছে।

ভালই চলছিল আমাদের প্রেম কাহিনী। দেখা করা। এক সাথে কিছুটা সময় কাটানো। আর দিন রাত কথা বলা। দিনের বেলায় অর্ণবের তেমন একটা সময় হতো না। তবুও আমি ওকে কল করতাম। ব্যস্ততার মধ্যে শুধু জিজ্ঞেস করতাম,,,

– খেয়েছেন? ওওও হ্যাঁ না উত্তর দিয়ে আমাকেও জিজ্ঞেস করতো। এর বেশি কথা বলার সময় ছিল না। এরকম করেও দিনে চার পাঁচবার কথা হতো। আমি একটু বেশিই ওকে পেতে চাইতাম। তবে ওও আমাকে আমার মতো করে সময় দিতে পারতো না। তবে তার মতো করে সর্বোচ্চ সময় আমাকে দিতো। এই বিষয়ে ওর উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই।

আমাদের রিলেশনের পরও আমি অর্ণবকে আপনি করে বলতাম। আমার ভালো লাগতো না অর্ণবকে আপনি করে বলতে। আমার ইচ্ছে করতো তুমি করে বলি। বাট, অর্ণব কখনও বলেনি তুমি আমাকে তুমি করে বলো। এই একটা বিষয়ের জন্য মাঝে মাঝেই আমি অর্ণবের উপর প্রচুর রাগ করি। কিন্তু অর্ণব সেটা বুঝতেও পারে না।

একদিন অর্ণব আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিল। আমাদের বের হওয়া মানে হাঁটাহাঁটি শুধু। অর্ণব কোনো প্লেসেই বসে না। তবে খাওয়াদাওয়া হয়। ওও চেষ্টা করে আমার পছন্দেরর জিনিস গুলো খাওয়াতে। বাট, এটা সব সময় পসিবল হয় না।

ওও মাত্র একটা টিউশনি করায়। এইটার টাকা দিয়ে নিজেও চলে নিজের মাকেও হেল্প করে। তার উপর আমি। অর্ণব একদিন আমাকে নিয়ে রয়েল ক্যাস্টেলে বসে। আমার ফেভারিট ফাইডরাইস অর্ডার করে। তখন আমি অর্ণবকে বলি,,,,,

– আমরা যদি চারদিন বাহিরে খাই তাহলে আপনি দুই দিনের বিল দিবেন বাকি দুদিনের বিল আমি দিবো। আমি ওকে টাকা দিতে চাইলে অর্ণবের পার্সোনালিটিতে লাগতো। তাই এভাবে অফার করি। যাতে ওর মনে না হয় আমি তাকে টাকা দিচ্ছি। আমার কথা শোনে অর্ণব বলেছিল,,,,

– তাহলে তুমি আমার সাথে বাইরে বের হইয়ো না। যে দুইদিন আমি বিল পে করবো সে দুইদিন আসবো বাকি দুদিন তুমি একা এসে খেয়ে যেয়ো। আমি থাকতে যদি তোমার বিলব পে করতে হয় তাহলে বাহিরে না আসাই ভালো। আমি বুঝতে পেরেছিলাম অর্ণব কষ্ট পেয়েছে। তবে ওকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি কিছু বলি নি। আমি বলেছিলাম যাতে কোনো ভাবে ওকে একটু হেল্প করা যায়। নর্মালি বললে ওওও হেল্প নিবে না। এর পর থেকে কখনও এটা নিয়ে আর কথা বলি নি।

হাঁটতে হাঁটতে আমার একটা নদীর কাছাকাছি আসি। অর্ণব আমাকে নিয়ে নদীর পাড়ে বসে। এই প্রথম এতো সুন্দর নিরিবিলি একটা জায়গায় দুজন বসলাম। নদীটা বেশ সুন্দর। তবে লোকজন তেমন নেই। তাই আমি অর্ণবের বাহু জড়িয়ে ধরে অর্ণবের কাধে মাথা রেখে বসলাম। অর্ণব আমাকে বাদামের কোষা ছাড়িয়ে দিচ্ছে আর আমি খাচ্ছি। দুজনেই চুপচাপ। আমি বললাম,,,,

– আমি আপনাকে তুমি করে বলি? আমার আপনি বলতে ভালোলাগে না। কেমন পর পর মনে হয়। আমার কথা শোনে অর্ণব অবাক হয়ে আমাকে দেখেছিল। তারপর আবার বাদামের কোষা ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,,,,

– আমি কিন্তু তোমার থেকে বয়সে অনেকদিনের বড়। অর্ণবের কথায় আমি মাথা তুলে অর্ণবের দিকে তাকালাম। অর্ণব বললো,,,,,,

– এমন ভাবে কি দেখছো? ভুল কিছু বলেছি?
– বড় তো কি হয়েছে? বড়দের কি তুমি করে বলা যায় না নাকি।

– না। বড়দের সম্মান দেখিয়ে আপনি করে বলতে হয়।
– আপনি তো আমার বয়ফ্রেন্ড। আপনাকে তো তুমি বলাই যায়। বয়ফ্রেন্ড হাসবেন্ড যতই বড় হোক বয়সে বাহ্যিক ভাবে তারা ম্যাচিউর।

– না, ম্যাচিউর হলেও তুমি করে বলা যাবে না। বয়ফ্রেন্ড তো কি হয়েছে? বড় মানেই বড়। অর্ণবের কথা শোনে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হলো। আমি মনে মনে বললাম,, আনরোমান্টিক পোলা একটা। বড় হয়েছিস তো ছোটদের সাথে প্রেম করতে আসিস কেন? কি সুন্দর করে বলছে আমাকে তুমি করে বলা যাবে না। মনে মনে এও ভাবলাম, তাহলে তো আমি ওকে নাম ধরেও ডাকতে পারবো না। অর্ণব এটাতো এলাউ করবে না।

ইশ, তন্বী আপু কি সুন্দর করে বলে, তহিদ। শোনতে বেশ লাগে। নামটার মধ্যেও একটা আদর থাকে। ভালবাসা থাকে। আমি এ কার সাথে রিলেশন করছি? মনটা এতো খারাপ হলো বলে বুঝাতে পারবো না। ভেবেছিলাম আমি বলবো, অর্ণব। কথায় কথায় ওর নাম ধরে ডাকবো। একটা ইনোসেন্ট ভাব থাকবে।

ওর নামটা ধরে ডাকার সময় নামের সাথে কিছুটা আদরও বের হয়ে আসবে। না হলো না এই কুত্তার জন্য। আমার খুব ইচ্ছে করছে ওকে বকা দেই। কিন্তু বকা দিলে উপায় নেই। বেটার ইগোতে লাগবে। অর্ণব আরো কিছু বাদামের কোষা ছাড়িয়ে বললো,,,,

– হা করো। আমি অর্ণবকে একবার দেখে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। এহ আসছে ভালবাসা দেখাতে। আমাকে তুমি করে ডাকার অনুমতি দেয়না সে আবার ভালবাসা দেখায়। অন্যদের বয়ফ্রেন্ড নিজে থেকে বলে, প্লীজ, তুমি করে বলনা। তুমি করে না বললে কথা বলবো না। আর আমি নিজে থেকে বললাম তাও আমাকে রিজেক্ট করে দিলো। আমি কিছুটা অভিমান নিয়ে বললাম,,,,,

– আমি খাবনা।
– কেন খাবে না। একটু আগেই তো বললে বাদাম খাবে।
– না এখন আর খাবো না। আপনি খান।
– রাগ করলে নাকি? এদিকে তাকাও দেখি। অর্ণব আমার থুতনি ধরে তার দিকে ফিরাতে নিলে আমি তার হাত সরিয়ে ফেলি। অর্ণব বলে,,,,,,,

– বাপরে, পিচ্ছিটার দেখি রাগও আছে। আমি অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

– আমি পিচ্ছি না। আমি বড়। আপনি আমাকে পিচ্ছি বলবেন নাতো। আমার কথা শোনে অর্ণব চোখ ছোট ছোট করে গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

– তুমি বড়?
– হুম,
– তোমাকে যদি বড় বলা হয় তাহলে তো আমাকে বুড়ো বলা হবে।
– আপনি বুড়োই।

– বুড়ো হলে আমার চুল তো এখনও পাকে নি। দেখো। অর্ণব আমার দিকে মাথা এগিয়ে দিলে আমি অর্ণবের চুলে ধরে কয়েকটা টান দিয়ে বলি,,,,
– আপনি একটা বাদর। অর্ণব বলে,,,,,

– কি করছো। চুলতো সব ছিঁড়ে ফেলবে। তখন লোকে তোমাকেই মন্দ বলবে। প্রেমতো করেছিস একটা বুইড়ার সাথে তাও আবার মাথায় চুল নেই। আমি অর্ণবকে ছেড়ে দিলাম। অর্ণব চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলে,,,,

– বাপরে, কি ঝগড়ুটে মেয়েরে বাবা। এখনি আমাকে মারছে। বিয়ের পরে না জানি কি করে। আমি চোখ গোল গোল করে অর্ণবের দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছু বললাম না। আমি গাল দুটো ফুলিয়ে বসা থেকে উঠতে নিলে অর্ণব আমার হাত ধরে টান দেয়। আমি অর্ণবের কোলে গিয়ে বসে পড়ি। অর্ণবও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আমার কানের কাছে অর্ণব মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,,,,,

– কোথায় যাচ্ছো? অর্ণবের ঠোঁটগুলো হালকা আমার কানের সাথে লাগতেই আমি কেঁপে উঠি। কি অদ্ভুত শিহরণ। আমার শরীর শীতল হয়ে গেছিল। বুকের ভেতরে হার্টবিট হাতুড়ির মতো পিটাচ্ছিল। অর্ণব হয়তো সেই শব্দটা শোনতেও পাচ্ছিল। এর আগে কখনও কোনো পুরুষের ছোঁয়া পাইনি। আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিল না। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম। অর্ণব নিজের নাকটা আমার কানে হালকা ঘষা দিয়ে বলে,,,,,,,

– ভালবেসে তুমি আমাকে যে নামেই ডাকো তাতেই আমি খুশি। জাস্ট কোনো কারণে তুই বলনা। তুই শব্দটা শোনলে আমার রাগ লাগে। অর্ণব কি করছিল ওওওর খেয়াল নেই। তবে আমি ওর কথা শোনছিলাম না। আমিতো ওর স্পর্শেই অর্ধেক মরে গেছিলাম। শরীর অসাড় হয়ে গেছিল। আমি অর্ণবের হাত চেপে ধরলে অর্ণব আমার হাতের দিকে খেয়াল করে। আমার হাত কাঁপছিল। অর্ণব আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

– কি হলো মীরা? তুমি এত কাঁপছো কেন? অর্ণব খেয়াল করে দেখলো শুধু আমার হাত না। আমার শরীরও কাঁপছিল। অর্ণব কিছু বলার আগে আমিই কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললাম,,,,,

– আমাকে ছাড়ুন প্লীজ। আমি বলতে দেরি হলো। অর্ণবের ছাড়তে দেরি হলো না। অর্ণব নিজের হাত সরিয়ে নিলে আমি অর্ণবের কোল থেকে উঠে দৌঁড়ে অনেকটা দূরে চলে আসলাম। একটা গাছের সাথে নিজের পিঠ ঠেকিয়ে হাঁপাতে লাগলাম।

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here