গল্পটা_আমারই পর্ব : ৬

#গল্পটা_আমারই

পর্ব : ৬
(সুরমা)

অর্ণব বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে আমাকে দেখছিল। অর্ণবের চাহনিটা দেখে ভয়ে আমার কলিজা ঠাণ্ডা হয়ে গেছিল। তখন আমি মাথা নিচু করে ফেলি। তন্বী আপু বলে,,,,,

– কিরে কিছু বল। এভাবে চুপ করে আছিস কেন? অন্বী আপুর কথা শোনে অর্ণব একটু পিছিয়ে গিয়ে অন্য দিকে ফিরে তাকায়। আমরা সবাই অবাক হয়ে গেছিলাম। কিছুক্ষণ পর আবার আমার কাছে ফিরে এসে বলে,,,,,,

– তুমি জানো একটু আগে তুমি আমাকে কি বলেছো? অর্ণবের কথা শোনে আমি বোকা হয়ে গেছিলাম। অর্ণব এভাবে বলছে কেন? আমার চোখের কোণায় জল। আমি জানতাম অর্ণব আমাকে একসেপ্ট করবে না। আমি জলভরা চোখে অর্ণবের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। অর্ণব আবার বলে,,,,,

– মুখ দিয়ে বললেই ভালবাসা হয়ে যায়? জানো ভালবাসা কাকে বলে? তুমি আমার সম্পর্কে কতটুকু জান?? আমার কান্না আসছিল। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু কিছু বলছিলাম না। তন্বী আপু বলে,,,,
– অর্ণব, তুই এসব কি বলছিস? মীরা তোকে ভালবাসে। সে অন্যায় কিছুতো করেনি। তাহলে তুই এভাবে রেগে রেগে কথা বলছিস কেন?

– ভালবাসে, ভালবাসা কি জানে? যা বলছে সব আবেগে। এই আবেগ বেশিক্ষণ কাজে লাগবে না। অর্ণবের কথা শোনে আমার চোখ থেকে বৃষ্টির মতো পানি পড়ছিল। এত কষ্ট লাগছিল বলে বুঝাতে পারবো না। দমটা নিতেও কষ্ট লাগছিল।আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,,,

– আমি সত্যি আপনাকে ভালবাসি। অর্ণব কিছুটা আমার দিকে এগিয়ে এসে বলে,,,,,,

– এখনও তো শরীর থেকে ছেলেমানুষি গন্ধটাও যায় নি। ভালবাসার কি বুঝ এই বয়সে? হুম, কি বুঝ?? আজকে যেটাকে ভালবাসা বলছো কাল যখন এই আবেগটা কাজ করবে না তখন দেখবে ভালবাসি বলেও কোনো শব্দ খুঁজে পাবে না।

ভালবাসা বললেই হয়না। আমাকে তোমার ভাল লেগেছে। বাট এটা নট ভালবাসা। এটা জাস্ট ভালোলাগা। কি অদ্ভুত বিষয়। একটা মানুষ বারবার বলছিল আমি ভালবাসি। কিন্তু অন্যজন সেটা বুঝতে পারছিল না। আমার সারাটা পৃথিবী যেন থেমে গিয়েছিল। এত কষ্ট আগে কখনও পাইনি। তন্বী আপু আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,,,,

– মীরা, তুই কাঁদিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। অর্ণব তুই কিন্তু রীতিমত ওকে অপমান করছি। তোর মীরাকে পছন্দ না এটা বললেই তো পারিস। এতো কথা শোনাচ্ছিস কেন? তাছাড়া মীরা ছোট হলেও ও যথেষ্ট ম্যাচিউরিটি সম্পন্ন। ওও কিন্তু অবুঝ না।

একটা মেয়ে তোকে এতটা ভালবাসে আর তুই তাকে একের পর এক অপমান করেই যাচ্ছিস। তুই নিজেও তো বলেছিস মীরাকে তোর ভালো লাগে। আর এখন যখন মীরা তোকে ভালবাসে শুনলি তখন তুই অবহেলা করছিস?

আসলে মানুষ কোনো ভাল জিনিস খুব সহজে পেয়ে যায় তখন সেটার মর্যাদা দিতে পারে না। অর্ণবের চোখ ছোট হলো। অর্ণব আমার হাত ধরে টান দিয়ে তার দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বললো,,,,,

– এই মেয়ে, আমার চোখের দিকে তাকাও। আমি অর্ণবের দিকে তাকালাম না।অর্ণব আবার আমাকে তাকাতে বললে আমি এক পলক অর্ণবকে দেখে চোখ নিচে নামিয়ে ফেললাম। অর্ণব দেখলো আমার চোখ ভর্তি জল। অর্ণব নিজের হাত দিয়ে নিজের মাথার চুল টানলো। আমি দাঁড়িয়ে থেকে নিরবে কাঁদলাম।

– এই মেয়ে, এতো কাঁদছো কেন? তোমাকে নিয়ে আমি কি করবো বলোতো?? তোমার জন্যতো আমি বিপদে পড়লাম। আর কাঁদছো তুমি?? অর্ণবের কথায় এবার আমার আরো কান্না পেলো।

অর্ণব এমন কেন?? ওও এটা বলতে পারলো? আমার জন্য ওও বিপদে পড়েছে? আমি মাথা নিচু করে কাঁদতেই লাগলাম। ইচ্ছে করছে মরে যাই। এমন একটা কথা শোনার আগে আমার মরণ হলে ভালো হতো।

– আবার কাঁদছো? আমার দিকে তাকাও। আমার দিকে তাকাতে বলছি। আমি অর্ণবের দিকে চোখ তুলে তাকালাম। অর্ণব এবার শান্ত হয়েই বললো,,,

– যখন দেখবে আমি অন্য ছেলেদের মতো তোমাকে দামি দামি গিফট দিতে পারছি না। অন্য একটা বয়ফ্রেন্ডের মতো তোমাকে নিয়ে ফাইভস্টারে খাওয়াতে পারছি না। ঘুরতে পারছি না।

তখন তোমার কেমন লাগবে? আমি জানি আমি গরীব, অন্যদের মতো আমার এতকিছু গিফট করার মতো ক্ষমতা থাকবে না। তখন খারাপ লাগবে না তোমার? অভিযোগ করবে না? বলবে না ভুল করেছিলে? এমনকি আমি তোমাকে সময়ও দিতে পারবো না। সবার মতো দিন রাত তোমার সাথে কথাও বলতে পারবো না। আমার মা গ্রামে থাকে। হয়তো এই শহরে তোমাকে রাখার মতো যোগ্যতা আমার কখনও হবে না। তখন পারবে গ্রামে গিয়ে থাকতে?? অনর্ণবের কথা শোনে আমি বললাম,,,,

– আমি মানিয়ে নিতে পারবো। আমার কোনো কিছু লাগবে না। আমার কোনো গিফট চাইনা। কোনো রেস্টুরেন্টও যেতে হবে না। কখনও যদি ইচ্ছে হয় বাহির থেকে ফোসকা খাওয়ালেই আমি অনেক খুশি হবো। সপ্তাহে একদিন একটু কথা বললেই হবে। আমি সব কিছু মানিয়ে নিবো।

– মানিয়ে নিবো বলা যত সহজ মেনে নেওয়া তত কঠিন। তখন আর আবেগ কাজ করবে না। তখন বাস্তবতার সম্মুখীন হবে প্রতিটা পদে পদে। তখন যে পানিটা চোখ থেকে পড়বে সেটা হবে কষ্টের অশ্রু। তোমাকে বুঝানোর সাধ্য আমার নেই। আমি আর কিছু বললাম না। আমি জানি আমার কথা কাজ হবে না। তাই নিরবে চলে আসছিলাম। তন্বী আপু আমার সামনে এসে বললো,,,

– কোথায় যাচ্ছিস এখন? আমি তন্বী আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। বুক ফেটে কান্না আসছে। আমি এতটা কষ্ট সহ্য করতে পারছিলাম না।আমার কেবল মনে হচ্ছিল আমি ব্যর্থ। ব্যর্থ আমার সব কিছু। বেঁচে থাকাটাও। আমি তন্বী আপুকে বললাম,,,,,
– আপু, আমাকে কেউ বুঝবে না। কেউ না। আমি তন্বী আপুকে ছেড়ে দিয়ে নিজের চোখ মুছে বললাম,,
– আপু আমি মেসে গেলাম। আপনারা আসুন। আমি আসতে নিলে অর্ণব আমাকে পিছন থেকে ডাক দেয়। আমি দাঁড়িয়ে অর্ণবের দিকে তাকালে অর্ণব বলে,,,,

– ফুলটা দিয়ে যাও। আমি অবাক হলাম। এতটাই অবাক হলাম যে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম। আমি একবার অর্ণবের দিকে একবার ফুলটার দিকে তাকাচ্ছিলাম। অর্ণব আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত থেকে ফুলটা নিয়ে বলে,,,,,,

– কাউকে কিছু দিলে সেটা নিতে হয়না জানোনা? তাছাড়া ফুলটা দিয়ে আমাকে প্রপোজ করেছো। ফুলটা তো এখন আমার। আমি একবার অর্ণব আর একবার তন্বী আপুকে দেখছিলাম। অর্ণব মুখে হাসি এনে বলে,,,,,,

– এটা এখন আমার। আমার ভালবাসার প্রতীক। অর্ণবের কথা শোনে আমি এবার টাস্কি খেয়ে গেলাম। আমি নিজের কানকে বিলিভ করতে পারছিলাম না। তহিদ ভাইয়া বলে,,,,,,

– হলো? এবার তো সবাই খুশি? আমি সত্যি খুব খুশি হয়েছিলাম। এতটা খুশি বলে বুঝাতে পারলাম না। খুশিতেও আমার হার্টএটাক্ট করার মতো অবস্থা। অর্ণব, অর্ণব আমাকে একসেপ্ট করেছে। অর্ণব সত্যি সত্যি আমাকে ভালবাসে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সুখ এটা। আবেগের বশে আমি অর্ণবকে জড়িয়ে ধরি।শক্ত করে জড়িয়ে ধরী। এতটা শক্ত করে যে আমি, ওকে ছাড়লেই হয়তো হারিয়ে যাবে।

চলবে——-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here