গল্পটা_আমারই পর্ব : ৯

#গল্পটা_আমারই

পর্ব : ৯
(সুরমা)

অর্ণবের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ। ট্রেনে যাবো। তাই রাতের বেলায় আমি ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখেছি। এর আগে কখনও আমি ট্রেনে উঠিনি। তাই আনন্দটা বেশি ছিল। এই আনন্দে রাতে আমার ঘুমও হয়নি। অর্ণব বলেছে সকাল ৭টায় বের হতে।

সকাল ৮.৩০ টার ট্রেনে আমরা সিলেট যাবো। ওখান থেকে নাকি বাসে করে যেতে হবে সুনামগঞ্জ । আমার খুব ভালো লাগছিল। আমি বেশ কয়েকটা থ্রি পিছ নিয়েছি।

গ্রামের বাড়ি। তাই মার্জিত পোষাক গুলো নিলাম। এম্নিতেও আমি সব সময় মার্জিত ড্রেস পরি। তবুও গ্রামের লোকজন যাতে কিছু বলতে না পারে সেরকমভাবে থাকতে হবে। আজ আমি সাদা ড্রেস পরেছি।

সাদা রঙ আমার ভালো লাগে। অর্ণবকে ফোন করে বলেছি ও যেন সাদা শার্ট পরে আজ। আজ দুজন সেইম কালার পরবো।

কাপল ড্রেস গুলো আমার ভালো লাগে। আমি তো ডিসাইট করে রেখেছি। বিয়ের পর আমরা সব কিছু সেইম পরবো। এখন এটা সম্ভব হয়না।

তবে এ পর্যন্ত আমি অর্ণবকে যতগুলো শার্ট গিফট করেছি সব গুলো কাপল। ওর ড্রেসের সাথে আমার ড্রেসের মিল আছে। অর্ণব আমার অনেক আবদার পূরণ করেছে। অর্ণবের যতটুকু সামর্থ্য আছে ওও সবটুকু দিয়ে আমাকে খুশি করার চেষ্টা করে।

তবে ওর থেকে আমার চাওয়া বলতে, শুধু ওর ভালোবাসা চাই। সারাক্ষণ ওকে ঘিরে থাকতে চাই। ওর সাথে প্রতিটা সেকেন্ড কথা বলতে চাই। ওর নিঃশ্বাসের সাথে চলতে চাই।

অর্ণবকে প্রতিটা সেকেন্ড আমি ফিল করতাম। ওকে ছাড়া আমার দম বন্ধ লাগতো। আমি আগে কখনও বাসায় রান্না করিনি। মেসে গিয়েও করিনি। তবে অর্ণবের সাথে রিলেশনে যাওয়ার পর থেকে রান্না শিখেছি। সেটাও অর্ণবের জন্যই।

অর্ণব ঘরের রান্না খুব পছন্দ করে। আমি প্রতি সপ্তাহে অর্ণবের জন্য ভালমন্দ রান্না করে নিয়ে যেতাম। আর ওওও সেগুলো মজা করে খেতো। কখনও তো লবণ দেই নি। কখনও মরিচ বেশি। তবে ওর খাওয়া দেখে আমার লোভ লাগতো।

একদিন অর্ণবের জন্য একটা ডিম টমেটো দিয়ে ভাজি করে নিয়ে গেলাম। সাথে অল্প ভাত। অর্ণবের সাথে আজিমপুর পুকুরপাড়ে বসলাম। ওও আমার রান্না করা ভাত আর ডিম ভাজিটা এতো মজা করে খাচ্ছিল যে ওর খাওয়া দেখে আমার খিদে লেগে গেছিল। আমি তখনেই মেস থেকে খেয়ে বের হয়েছিলাম। তবুও অর্ণবকে বললাম,,,,,

-আমিও ভাত খাবো। কথাটা বলে আমি আমার মুখটা কাঁচুমাচু করে ফেললাম। অর্ণব আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

-তুমি খেয়ে আসনি??
-খেয়েছি। কিন্তু এখন খেতে ইচ্ছে করছে। তুমি আমায় খাইয়ে দাওনা
-এখন খেতে হবে না আর। একটু পরে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে খাওয়াবো।

-কিন্তু আমার যে তোমার থেকে খেতে ইচ্ছে করছে। অর্ণব কিছুতেই আমাকে খেতে দিবে না। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে করছিল অর্ণবের খাবারটাই খেতে। তাই জোর করে অর্ণবের থেকে এক লোকমা খেলাম। খাবারটা মুখে দিতেই আমার বমি চলে আসছিল।

মনে হয় ঘরে যা লবণ ছিল সবটা আমি ডিম ভাজিতেই দিয়ে দিয়েছি। সাথে ঝাল। আমি মুখ থেকে খাবারটা নিচে ফেলে দিয়ে ডগডগ করে পানি খেলাম। আমার চোখ দিয়ে পানি চলে এলো। এতো বাজে একটা খাবার অর্ণব কতো মজা করেই খেলো।

এই জন্য অর্ণব আমাকে খেতে মানা করেছিল। নাহলেতো একবার হলেও বলতো, হা করো আমি খাইয়ে দেই। আমি অর্ণবের হাত থেকে খাবারের বক্সটা কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলাম। অর্ণব আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,,,,

-একি, খাবারটা ফেলে দিলে কেন??? আমি কেঁদে দিয়ে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরলাম। ওকে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে কাঁদতে লাগলাম। অর্ণব আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,

-আরে পাগলি, কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে? অর্ণব অনেক সময়ই আমাকে আদর করে তুই বলে। আমার অবশ্য খারাপ লাগে না। আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,,,,

-তুমি এতো বিশ্রী একটা খাবার কেমনে খাচ্ছো?? অর্ণব আমাকে নিজের বুক থেকে তুলে আমার চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বলে,,,,

-বিশ্রী বলছো কেন? আমার কাছে কিন্তু খারাপ লাগে নি। বেশ ভালো লেগেছে। হলএ তো এর থেকেও জঘন্য খাবার খাই। তাছাড়া এই রান্নায় আমার লক্ষ্মী বউটার ছোঁয়া আছে। এই খাবারটা তো খারাপ হতেই পারে না। আমি শুধু অর্ণবকেই দেখছিলাম। ওর মুখের থেকে আমার চোখ সরছিল না। একটা মানুষ কতটা ভালবাসে আমায়। আমি ধন্য। আমি স্বার্থক। আমি বললাম,,,,,

-তুমি আমাকে এতটা ভালবাসো?
-কেন বাসবো না? তুমি কি আমাকে কম ভালবাসো? আমি আবার অর্ণবকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর বললাম,,,,,,

-আমি জীবনে কিছু চাইনা। শুধু তুমি পাশে থেকো। তাহলেই আমি হেপি। সেদিনেই মনে মনে ঠিক করেছিলাম। আর কিছু পারি আর না পারি। রান্নাটা শিখতেই হবে। আমি ইউটিউব দেখে দেখে সব রকম রান্না শিখলাম। অর্ণবের সাথে দেখা করতে গেলেই ওর জন্য খাবার নিয়ে যেতাম। ওও খেতো আমার রান্নাকরা খাবার আর আমাকে খাওয়াতো আমার প্রিয় ফাস্টফুড।

আমার খাবার পেয়ে ওওও এতো খুশি হতো মনে হতো ওও অনেক কিছু পেয়েছে। মাঝে মাঝে ওর রুমমেটদের জন্যও রান্না করে দিয়ে দিতাম।

আমি রেডি হচ্ছি এমন সময় অর্ণব কল করে। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই অর্ণব বলে,,,,
-তুমি রেডি হয়েছো?
-এইতো হচ্ছি।
-আচ্ছা রেডি হয়ে গেইটের সামনে আসো। আমি ছাউনিচকে বসে আছি। আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে নামলাম।

অর্ণবের সাথে যতদিন দেখা করেছি ততদিন আমিই আগে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। অর্ণব এসে দেখতো আমি দাঁড়িয়ে আছি। দরকার হলে আমি আধঘণ্টা আগে চলে যেতাম। এবার অর্ণব আগে চলে আসছে।

আমি গেইটের সামনে গিয়ে দেখি অর্ণব বসে আছে। ওও আমার কথা মতো সাদা শার্ট পরেছে। ওকে আজকে যা লাগছে, ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলি,,,,

“লাভ ইউ” কিন্তু এটা রাস্তা।অর্ণব পছন্দ করবে না। আমাকে দেখে অর্ণব এগিয়ে এসে আমার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বলে,,,,,,

– এতো বড় ব্যাগ কেন? কি নিয়েছো এতে?
– কাপড়চোপড়।
– এতো?
– এতো কোথায় নিলাম? প্রথমবার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি, একটা পরিপাটিরও তো ব্যাপার আছে। তাছাড়া ব্যাগে জায়গা হলে আরো কয়েকটা নিতাম। আমার কথা শোনে অর্ণব বলে,,,,,,

– আমি তোমাকে চিনি মীরা। তুমি মোটেও এতো সাজগোজ করার মতো মেয়ে না। ব্যাগে অন্য কিছু আছে। কি আছে বলো।

– আন্টির জন্য শাড়ি নিয়েছি দুটো। আর কিছু বিস্কুট, একটা জায়নামাজ। আমার কথা শোনে অর্ণব অবাক হয়ে বলে,,,,

– এতো কিছু কেন নিলে?
– আমি আমার মায়ের জন্য নিচ্ছি তোমার কি? অর্ণব আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকালে আমি বলি,,,,,,
– আমাকে এতো না দেখে চলো তো। লেইট হয়ে যাবে। আমি অর্ণবের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাই।

চলবে———-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here