চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ২০

0
656

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ২০

🍂🍂🍂

শুভ্রতার মৃত্যুর আজ ২ দিন। নুর তার বাবা মাকে পর দিনই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। সে চাইছে না বাড়ির মানুষ দেখুক তাদের বন্ধুমহলে আজ কেমন ফাটল ধরেছে। নুর, তিলোত্তমা, উপমা, রুপা আর রিদিতা শুভ্রতার বাড়িতেই থাকছে। অরণ্য এই দুইদিনে একবারের জন্যও নিজ কক্ষ থেকে বের হয়নি। অরণ্যের মা বাবাও তাদের বাড়িতে চলে গেছেন। ছেলের শোকে কাতর চন্দ্রের মা অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়েছেন। এ বাড়িতেই আছেন তারা। থেকে থেকেই চন্দ্র আর শুভ্রতার নাম ডেকে কেঁদে উঠেন। তার কান্নায় সবাই মুখ লুকিয়ে কাদে। এই কয়েকদিনে নুরের সাথে কথা বলেনি কেউ। উপমা আর রিদিতাই প্রয়োজনে টুকটাক কথা বলছে। বাকিরা সব একদম চুপ। যেনো মৌন ব্রত পালন করছে। বিকেলে ২ পারা কুরআন পড়েই ছাদে চলে এলো নুর। ভালো লাগছে না কিছুই। দম বন্ধ হয়ে আসছে। ছাদে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো নুর। হঠাৎই কাধে কারো হাতের স্পর্শে ঘুরে তাকালো। খাবার ভর্তি প্লেট হাতে অচেনা এক মেয়ে দাড়ানো। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা, চুল গুলো পিঠ অব্দি, গালদুটোতে লালচে ভাব ছড়িয়ে। একদম চোখ ধাঁধানো সুন্দর। ঠিক যেনো জলজ্যান্ত পুতুল একটা। নুর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো মেয়েটির দিকে। মেয়েটি প্লেটটা এক পাশে রেখে নুরের মতই বসলো। মাথা হেলিয়ে নুরকে বললো,

~এই সময় এখানে কি করছেন নুর আপু?

~তুমি আমাকে চেনো?

মেয়েটি মাথা ঝাঁকালো।

~আমি তরী। অর্ণবের হবু বউ। শুভ্রতা ভাবী আর তিলোত্তমা ভাবীর ফুপু শাশুড়ির মেয়ে। শুভ্রতা ভাবী বলেছিল আমাকে আপনার কথা।

নুর অবাক হলো,

~তিলো বিয়ে করেছে? কাকে?

তরী তৎক্ষণাৎ জবাব দিলো,

মাহতাব ভাইয়াকে। এক বছরের বেশি হবে। দেড় বছর চলছে হয়তো।

তরী আবারো বললো,

~বাড়ির কেউ ঠিক মত কথা বলছে না দেখে মন খারাপ?

নুর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির করলো।

~সবাই আমার প্রতি রাগ। কেউ কথা বলে না। তোমার হবু বরও তো রাগ। আচ্ছা! আমার প্রতি তোমার রাগ নেই?

তরী অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো। বললো,

~ছিল। এখন নেই। শুভ্রতা ভাবী মানা করেছেন শুধু আমাকে না, সবাইকে। কেউ যেনো আপনার প্রতি রাগ না হয়। সবার হয়তো রাগ কমতে একটু সময় লাগবে। তবে সব ঠিক হয়ে যাবে।

~এই কথা শুভি তোমাকে বলেছে?

তরী মাথা ঝাঁকালো। নুর জানতে চাইলো,

~তোমার সময় লাগবে না?

তরী জবাব দিতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিলো। মলিন হেসে বললো,

~লেগেছে। যেদিন প্রথম আপু আপনার প্রতি রাগ না করতে বলেছে আমি তখন থেকে চেষ্টা চালিয়েছি আমি যেনো আপনার প্রতি রেগে না যাই। আপনি আসার পরও আমার দুদিন সময় লাগলো নিজের রাগকে আয়ত্তে আনতে। তাই তো কাছে আসিনি।

তরীর নিঃসংকোচ জবাবে নুর হাসলো। তরীর দিকে ঘুরে বসে বললো,

~আর কি কি বলেছে শুভি?

তরী তার পাশ থেকে খাবারের প্লেটটা নুরের হাতে দিয়ে বললো,

~খাবার শেষ করুন আগে। তারপর বলবো।

নুর কিছু না বুঝে তাকাতেই তরী আবারো বললো,

~শুভ্রতা ভাবীর শিখিয়ে দেওয়া ট্রিক এটা। তিনি চলে গেছেন শুনে আপনার দুঃখে নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে তাই এই বাড়িতে এলেই আপনার খেয়াল রাখার দায়িত্ব দিয়েছেন আমাদের। নিজের অযত্ন করতে মানা করেছেন। বাকি কথা পরে বলবো। আগে খেয়ে নিন।

শুভ্রতার কথা শুনে নুর খাবারটা খেলো। খাবার শেষে হাত ধুতে ধুতে বললো,

~এবার তো বলো!

~দু এক দিনের মধ্যেই তিলোত্তমা ভাবীও আপনার সাথে কথা বলা শুরু করবে। তার একটু বেশীও সময় লাগতে পারে। ভাবী বলেছেন আপনাকে মন খারাপ না করতে।

তরী ওড়নার আড়াল থেকে একটা ডায়েরি বের করে নুরের হাতে দিলো। নুর চিনতে পারলো এটা শুভ্রতার ডায়েরি। তরী বললো,

শুভ্রতা ভাবী বলেছিল আপনি এলে যেনো আপনাকে এটা দেই। পড়ার পর এটা তিলোত্তমা ভাবীর কাছে ফিরিয়ে দিতেও বলেছে।

নুর ডায়েরীটা নিয়ে তাতে হাত বুলালো। শুভ্রতা সব সময় একটা ডায়েরী নিজের সাথে ক্যারি করতো। ডায়েরি লেখার অভ্যাস ছিলো তার। খুব আগলে রাখতো। কেউ ছুঁলে ভীষণ রেগে যেতো। নুরের চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু ডায়েরির ওপর পড়তেই সে তা দ্রুত মুছে দিলো। হটাৎ একটা প্রশ্ন মাথায় আসতেই নড়েচড়ে বসলো সে।

~তরী?
~হুঁ?
~আমার কিছু জানার ছিল।
~কি?
~এসেছি পর থেকে এক বারও শুভ্রতার মা বাবাকে দেখলাম না। কোথায় তারা?

তরী কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো নুরের দিকে। লম্বা এক শ্বাস নিয়ে বললো,

~আমার মনে হয় আপনার সব প্রশ্নের জবাব আপনি এই ডায়েরিতেই পাবেন।

তরী চলে গেলো নিচে। নুর ডায়েরি হাতে তখনও ছাদে দাঁড়িয়ে রইলো। মাগরিবের আজান দিতেই নেমে এলো সে। নামতেই দেখা মিললো অরণ্যের। মাথার চুল উস্কোখুস্কো, চোখের নিচে কালো দাগ, গায়ের জামাটাও কুচকে আছে, গাল ভর্তি দাড়ি। নুরকে দেখে অরণ্যও কিছুক্ষণ তার চোখের দিকে তাকিয়ে স্থিরভাবে দাড়িয়ে রইলো। তারপর হন হন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। নুর তার যাওয়া দেখে তপ্ত শ্বাস ফেলে ঘরে ফিরে এলো। মাগরিবের নামাজ পড়েই শুভ্রতার ডায়েরি নিয়ে বসলো। হয়তো সত্যিই তার প্রশ্নের সব জবাব এই ডায়েরিতেই পাওয়া যাবে। ডায়েরি খুলতেই প্রথম তিন পাতায় কিছুই লেখা দেখলো না সে। তারপর পৃষ্ঠা উল্টাতেই একটা শুকনো ফুলের মালা পেলো সে। মালাটা হাতে নিতেই মনে পড়লো এই মালাটা লাস্ট যেদিন ঘুরতে গিয়েছিল সেদিন কেনা হয়েছিল ওদের। নুরের চোখের সামনেই যেনো ভেসে উঠলো সেদিনের স্মৃতি….

🍂 ফ্ল্যাশব্যাক 🍂

~দোস্ত দেখ কি সুন্দর বেলী ফুল! আমাকে কিনে দে। (নুর)

শুভ্রতা ঠোঁট বাঁকালো। চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললো,
~আমাকে কি আম্বানির দূরসম্পর্কের আত্মীয় মনে হয় নাকি যে তুই বললেই আমি তোরে ফুল কিনে দেবো।

নুর বিরক্ত হয়ে ফুলের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শুভ্রতার দিকে তাকালো।

~এমন কিপটামি করছিস কেনো? কিনে দে না! (রিদিতা)
~এহ! তোর এতো বড় দিল হলে তুই কিনে দে। (শুভ্রতা)
~ঝগড়া বাদ দে। আমি কিনে নিয়ে আসছি। (তিলোত্তমা)
~একদম না। দাড়া এদিকে। (শুভ্রতা)

তিলোত্তমা দাড়ালো। ভ্রু কুঁচকে নুর বললো,

~নিজেও কিনে দিবি না আবার অন্যকেও কিনে দিতে দিবি না। হারামী!

~কে বললো কিনে দেবো না? আমি দিচ্ছি কিন্তু আমাকে কে কিনে দেবে? (শুভ্রতা)
~সবার জন্য কিনতে পারলে নিজের জন্য ১০ টাকা খরচ করে কিনতে পারবি না? সিরিয়াসলি! (রুপা)

~আমি কখন বললাম আমি সবাইকে কিনে দিচ্ছি? আমি তো বলছি যে আমি নুরকে কিনে দেবো। নুর বন্ধুমহলের মধ্যে একজনকে কিনে দেবে। সে আবার আরেকজনকে কিনে দিবে। এভাবে ৬ জনেরই গিফট্ পাওয়া হবে। আর মাত্র একজনের টাকা খরচ হবে না। (শুভ্রতা)

~জোস আইডিয়া তো! চল কিনি গিয়ে।(রিদিতা)

🍂বর্তমান 🍂

সেদিন শুভ্রতা নুরকে, শুভ্রতাকে তিলোত্তমা, তিলোত্তমাকে উপমা, উপমাকে রিদিতা, রিদিতাকে রূপা, রুপাকে নুর ফুল কিনে দিয়েছিল। ফুল কেনার পর শুভ্রতার এমন আইডিয়া নিয়ে অনেক হাসাহাসি করেছিলো ওরা। সেদিনের কথা মনে পড়তেই নুর খিলখিল করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই চোখের কোনে পানি জমলো। নুর ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। কি এক অটুট সম্পর্ক ছিল তাদের। এখন কেমন ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে। আগে আলাদা থাকলেও একে ওপরের মধ্যে টান ছিল অনেক। আজ তো একই বাড়িতে। অথচ কেউ কারো দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। নুর চোখের পানি মুছে ডায়েরি পড়তে শুরু করলো। প্রথম পেজে গুটিগুটি অক্ষরে লেখা,

“প্রিয় মালাটা শুকিয়ে গেছে। অস্থায়ী সময়ও মেলেছে ডানা। স্মৃতির বাক্সতে অবলোকন করতেই অঘোষ কণ্ঠে কেউ যেনো আর্তনাদ করে উঠলো, ‘কবে শেষ হবে এই অননুমেয় চিত্তদাহ?’।”

পাতা উল্টাতেই শুভ্রতার আরো কিছু লেখা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। শুভ্রতার মাধ্যমেই নুর যেনো আবারো ডুব দিলো সেই অতীতে। পার্থক্য একটাই। আজ শুভ্রতার দৃষ্টি থেকে সব দেখা হবে, জানা হবে…

🍂আড়াই বছর আগে🍂

নতুন বছরের প্রথম সকাল। চারদিকে এখনও শীতের প্রকোপ বেশ। শুভ্রতা গায়ের কম্বলটা আরেকটু ভালো ভাবে জড়িয়ে নিলো। রোদের আলো চোখে মুখে পড়তেই ঘুমের মধ্যেই তার মুখভঙ্গির পরিবর্তন হলো। রেনুকে এই নিয়ে বেশ কয়েকবার বলেছে সে। সকাল সকাল উঠেই যেনো তার ঘরের জানালার সব পর্দা সরানোর জন্য হামলে না পড়ে। কিন্তু রেনু শুনলে তো! এবার রোদ সরে গিয়ে চোখের মুখে কারো ছায়া পড়তেই শুভ্রতা মুচকি হাসলো। সে জানে মানুষটা কে হতে পারে। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো সামনে শুভ্রতার মা উমা হাসি মুখে দাড়িয়ে আছেন। সকাল সকাল মায়ের হাসি মুখটা দেখতেই শুভ্রতার মনে এক প্রশান্তির বন্যা বয়ে গেলো। উঠে বসতেই তার মা উমা বললো,

“হ্যাপি নিউ ইয়ার, মামনি”

শুভ্রতা দু হাত ছড়িয়ে বাচ্চাদের মত মাকে কাছে ডাকলো। মা কাছে আসতেই মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“শুভ নববর্ষ আম্মু”

মেয়ের কথায় উমা হাসলো। মা ইংরেজিতে উইশ করলেও সে করলো বাংলায়। আবার তিনি বাংলায় বললে সে বলতো ইংরেজিতে। এমন করে যে এই মেয়ে কি মজা পায় বুঝেন না তিনি। শুভ্রতা মাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো অনেকক্ষণ। হঠাৎই রেনু এসে দুলতে দুলতে বললো,

~আপামনি! আজও আসছে…

বলেই লজ্জামিশ্রিত এক হাসি দিয়ে যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই দুলতে দুলতে চলে গেলো। শুভ্রতা ফ্যাল ফ্যাল করে তার যাওয়া দেখলো। শুভ্রতা গাল ফুলিয়ে মায়ের দিকে চেয়ে বললো,
~দেখো! দেখো! এমন ভাবে বললো যেনো তার বর এসেছে।

উমা মুচকি হেসে মেয়ের মাথায় হাত রাখতেই মায়ের দিকে গাল ফুলিয়ে একবার তাকালো। উঠে বিড়বিড় করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেলো। শুভ্রতা যেতেই তিনি বললেন,
রেনুর বর না এলেও তোর বর হয়তো তোর কাছে চলে আসছে।

শুভ্রতা হুট করেই দরজা হালকা খুলে মাথা বের করে বললো,
ভাবনা এখানেই সীমাবদ্ধ রাখো আম্মু। তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না। কেউ নিয়ে যেতে এলে ঠেং ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দেবো জেনে রাখো।

উমা বিরক্ত হলেন। এই মেয়ে বিয়ের কথা শুনলেই এমন করে। এতো দূর থেকেও বিড়বিড় করা কথা শুনে কি করে এই মেয়ে!
___________________________________

নিচে নেমে নাস্তা না করেই ড্রয়িং রুমের সোফায় গিয়ে বসলো শুভ্রতা। ঠোঁট কামড়ে সামনে থাকা পার্সেলটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। প্রতি মাসের ১ তারিখে একটা পার্সেল তার কাছে আসে। কে পাঠায় তা অজানা। ইতিমধ্যে বাড়ির সবাই ধরেই নিয়েছে এই প্রেরকই হবে শুভ্রতার ভবিষ্যৎ বর। শুভ্রতা আড়চোখে পাশে দাড়িয়ে থাকা রেনুর দিকে তাকালো যে এখনও লজ্জারাঙা হাসি দিয়ে ওড়নার কোন আঙ্গুলে পেচাচ্ছে আর দুলছে। শুভ্রতা কপাল চাপড়ালো। প্রথম এমন উপহার এসেছিল শুভ্রতার ১৮ তম জন্মদিনে। এর পর থেকে প্রতি মাসের ১ তারিখে তার জন্য একটা করে উপহার আসেই। জন্মদিনের উইশ জানিয়ে চিরকুটও দেয়। মানুষ বছরে একবার জন্মদিন পালন করে আর এই লোক প্রতি মাসেই তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। প্রতিবার যা ই গিফট্ করুক না কেনো, গিফটের সাথে একটা শাড়ি থাকবেই। শুভ্রতার জানতে ইচ্ছে করে এই লোকের কি শাড়ির ফ্যাক্টরি আছে নাকি এই লোকের টাকা বেশি? শুভ্রতার চিন্তার মাঝেই রেনু শুভ্রতাকে তাড়া দিয়ে বললো বক্স খুলতে। এই মেয়ের এক মাত্র এই গিফটের প্রতি আগ্রহ আসে কোথা থেকে? অন্য কেউ কখনো গিফট্ দিলে তো জানতেও চায় না যে কে দিলো আর কি দিলো। শুভ্রতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বক্সটা নিয়ে বসলো। খুলতেই দেখতে পেলো বিভিন্ন কালারের কয়েক ডজন চুড়ি, বেলী ফুলের মালা, লাল পাইরের সাদা শাড়ি, আলতা, টিপ, পায়ের নুপুর আর সাথে একটা খামে চিরকুট। শাড়ি টা বেশ পছন্দ হলো শুভ্রতার। এ পর্যন্ত পাঠানো সব শাড়ির মধ্যে এটাই সব থেকে বেশি পছন্দ হলো তার। রেনু তো মুগ্ধ হয়ে চেঁচিয়ে শুভ্রতার মা কে ডাকলো। রেনুর চিৎকারে উমা দৌড়ে এলেন রান্নাঘর থেকে। হাতে খুন্তি। রেনুর চিৎকার করায় শুভ্রতা ঘার ঘুরিয়ে মাকে এভাবে তেড়ে আসতে দেখে ধপাস করে সোফা থেকে মাটিতে পড়ে গেলো। পর মুহুর্তেই ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। শুভ্রতার এভাবে পড়ে যাওয়ায় তাদের কোনো হেলদোল নেই। উমা ব্যস্ত রেনুর সাথে বসে শুভ্রতার জন্য আসা উপহার দেখতে। এই দুই পাগলের খপ্পরে পড়ে বছরের প্রথম দিনই সকাল সকাল এভাবে পড়লো। নির্ঘাত সারা বছর এভাবে ধুপধাপ পড়তে পড়তেই চলে যাবে! শুভ্রতা চোখ মুখ কুচকে কোমর ডলতে ডলতে উঠে দাঁড়ালো। উমা শুভ্রতার দিকে চেয়ে বললো,
হ্যাঁ রে! যে ছেলেটা তোকে মাসে মাসে গিফট্ পাঠায় তাকে একবার বাড়ি নিয়ে আসিস না। আমাদেরও তো দেখতে মন চায় তাকে যে তোকে এতো ভালোবাসে।

শুভ্রতা রেগে মায়ের দিকে চেয়ে রইলো। এমনেই পড়ে ব্যাথা পেয়েছে সেদিকে তাড়া পাত্তাই দিলো না। আবার বলছে ওই ছেলেকে বাড়িতে আনতে। এই ছেলে কে তাই তো শুভ্রতা জানে না। শুভ্রতা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
~তুমি ভালো মত জানো আমি এই ছেলেকে চিনি না তাও কেনো তুমি প্রতিবার গিফট এলে একই কথা বলো?

~খালাম্মা আমার মনে হয় আপামনি কইতে লজ্জা পাইতাছে।

শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে ওদের ফিসফিসানি দেখলো,

~অদ্ভুত তো! আমি সত্যিই জানি না এই লোক কে। জানলে তোমাদের বলতাম না কেনো? আর লুকিয়ে প্রেম করলে কি এভাবে বাড়িতে গিফট্ আসতো?

শুভ্রতার কথা ওরা চুপটি করে ইশারায় কিছু বলাবলি করলো। তারপর শুভ্রতার দিকে চেয়ে দুজনেই বিজ্ঞদের মতো মাথা নেড়ে বললো,

~ঠিক বলেছিস শুভ্রতা। শুন ওই ছেলের খবর পেলে অবশ্যই আমাকে জানাবি। আমি ওই ছেলের মায়ের সাথে বিয়ের কথা বলবো।

~তুমি বিয়ে করে নিলে বাবার কি হবে? ডোন্ট টেল মি তুমি ওই ছেলের জন্য বাবাকে ছেড়ে যাবে।

শুভ্রতার কথায় হেসে উঠলো রেনু। হাহা করে হাসতে হাসতে বললো,

~খালাম্মা বলে আবার বিয়া করবো…

বলেই আবার হেসে উঠলো। উমার মুখভঙ্গির পরিবর্তন ঘটলো। ধমকে উঠে বললেন,

~ফাজিলের দল! সকাল সকাল ফাইজলামি হচ্ছে! যা ঘরে যা!

শুভ্রতা দ্রুত সব কিছু পুনরায় বক্সে নিয়ে ঘরে দৌড় লাগালো। রেনু তো উমার ধমকে উঠার সাথে সাথেই পরাগ পার। ওদের এমন দৌড় দেখে উমা কপাল চাপড়ালেন। ছেলেটার কাজে সে বুঝতে পেরেছেন ছেলেটা শুভ্রতাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু এই ছেলে ধরা দিলে তবেই না সে কথা বলতে পারবে!
~~~
চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here