চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ১৯

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ১৯

🍂🍂🍂

বৃষ্টি পড়ছে ঝমঝমিয়ে। দুপুরের সময় হলেও আকাশে সূর্যের আলোর রেশ মাত্র নেই। আকাশে জমেছে কালো মেঘ। চারদিক অন্ধকার, ঠিক যেনো সন্ধ্যা। ঘড়ি না দেখলে বুঝার উপায় নেই যে এখন সকাল ১১ টা বাজে। বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সাথে তাল মিলিয়ে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। মৃত্যুশোকে কাতর সকলেই। কেউ বিলাপ করে কাদছে কেউ বা নিঃশব্দে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে মানুষটা বেচেঁ থাকতে এদের মধ্যে হাতে গুনা দুই কি তিনজন মানুষ বাদে কেউ বছরে একবারও মানুষটার খবর নেওয়ার চেষ্টা করেনি। অথচ এখন চিৎকার করে কান্নার নামে পরিবেশ দূষণ করছে। তিলোত্তমার থমথমে মুখে সকলের মুখের দিকে একবার চোখ বুলালো। শুভ্রতার দিকে চেয়ে তাচ্ছিল্য হাসলো। বিড়বিড় করে বললো,

মানুষ কত অভিনয় করতে পারে তাই না রে শুভি। এতো বছরে যাদের ছায়াটাকেও চোখের দেখা দেখতে পেলি না আজ তারা সবাই এসে বাড়িতে জড়ো হয়েছে এক সাথে। এরা কি আদৌ তোর আপন ছিল? আমার সন্দেহ হয়।

তিলোত্তমার চোখের কোণে অশ্রু জমা হলেও তা কোনোমতে আটকালো সে। তার কান্নায় যদি শুভ্রতা কষ্ট পায়? আচ্ছা শুভ্রতা কি তার কথা শুনছে? তাকে কি শুভ্রতা দেখছে? শুভ্রতা তো বলেছিলো সে দুর থেকে দেখবে। তিলোত্তমা এবার শুভ্রতার পাশের খাটিয়াটির দিকে তাকালো। লাশের পাশে চন্দ্রের মা মাহতাবকে জড়িয়ে ধরে আর্তনাদ করে কান্না করছেন। মাহতাব স্থির চোখে ভাইয়ের লাশের দিকে চেয়ে আছে। মাকে কি শান্তনা দিবে? তার নিজেরই বুক চিরে কান্না আসছে। এই দিনটার কথা সে ভাবনায়ও আনতে চাইতো না কখনো। সে ভেবেছিলো তার ভাইটা অতি দুঃখে হয়তো পাথর হয়ে যাবে কিংবা মানসিক ভারসাম্য হারাবে। কিন্তু এই কি হলো? ভাই নিজেও চলে গেলো তার প্রেয়সীর হাত ধরে। দূরেই বাবা দাড়িয়ে আছে। থমথমে মুখ তার। বেশির ভাগ সময়ই হাসতো না। সারাজীবন মিলিয়েও বাবাকে অতোটা হাসতে দেখেনি মাহতাব যতটা গত এক বছরে হেসেছে। আজ বাবাও কাদঁছে। কপাল চাপড়ে কাদঁছে। হায় হুতাশ করছে। আদরের বউমা চলে গেলো সাথে তার ছেলেটিও এভাবে চলে গেলো। এমন অসহনীয় কষ্ট ভোগ তাকেই কেনো করতে হলো? বিধাতা এত নিষ্ঠুর কেনো হলো তার সাথে? মা বাবার দিকে চেয়ে মাহতাব কাদলো না। ছেলেদের তো কাদতে নেই। সে কাদলে মা বাবা আরো ভেঙে পড়বে। সেও কাদবে। কাদবে তবে তার প্রেয়সী কাছে বসে একান্তে। যেনো মা বাবা না দেখে তার কান্না। তারা যেনো মাহতাবকে দেখে মনে একটু জোর পায়।
___________________________________

জ্ঞান ফিরতেই নুর উঠে বসলো। চার দিকে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলো সে শুভ্রতার মা বাবার ঘরে। গায়ে তার কালো একটা থ্রি পিস। হয়তো মা পড়িয়েছে। এটা শুভ্রতার জামা, নুর জানে। শুভ্রতার কথা মনে আসতেই বুক মোচড় দিয়ে কান্না আসলো। বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে যেতে চাইলো শুভ্রতার কাছে। বিছানা থেকে পা নামাতেই ঘরে প্রবেশ করলো রেনু। নুর শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। রেনু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

~কিছুক্ষণের মধ্যেই শুভ্রতা আপামনি আর দুলাভাইয়ের লাশ নিয়ে যাবে। শেষ দেখার জন্য আপনাকে নিচে নিয়া যাইতে কইছে আপনার আম্মায়।

নুর চুপ রইলো। ডাকলো রেনুকে। রেনু ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে নিয়েও নুরের ডাকে দাড়ালো। নুর ধরা গলায় বললো,

শুভ্রতা কি সত্যিই মারা গেছে রেনু আপা?

রেনু মাথা ঝাকাতেই নুর ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। রেনুও কাদঁছে। নুর আবারো জিজ্ঞেস করলো,

আরেক লাশ যাকে তুমি একটু আগে দুলাভাই বলে সম্বোধন করলে সে কে?

~আহনাফ দুলাভাই।

রেনুর জবাবে নুর মাথা তুলে তাকালো। অস্ফুট স্বরে বললো,
আহনাফ ভাইয়া?

~আপামনি লাশ কোলে নিয়া অনেক কানছে ভাইয়ে। কানতে কানতে আপামনির লাশ জড়ায় ধইরাই প্রাণ ত্যাগ করছে তিনি। মাহতাব ভাই ওনারা হাসপাতালে নিয়া গেছিলো তাও। জানতে পারলো স্ট্রোক করছে।

রেনুর কথায় নুরের কান্নার বেগ বৃদ্ধি পেলো। ঘর জুড়ে প্রতিফলিত হতে লাগলো নুরের কান্নার আওয়াজ। রেনু নুরের কাছে এগিয়ে গেলো। নুরের পায়ের কাছে বসে বললো,
শুভ্রতা আপা অনেক কান্না করতো আপনার জন্য। আমি দেখতাম। অনেকবার আপনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। মৃত্যুর আগেও। আপনি একটা বার ফোন ধরলেন না কেন আপামনি? রাগ অভিমান কি এতই বেশি ছিল যে আমার শুভ্রতা আপামনিরে মরার আগেও এত কষ্ট পাওয়া লাগলো?

নুর রেনুর হাত মুঠোতে পুড়ে কাদতে কাদতে মাথা নাড়ালো। হিচকি তুলে কাদতে কাদতে বললো,
~আমি সরি রেনু আপা। আমি রাগে না বরং লজ্জায় আপনাদের সামনে আসিনি কখনো। কোন মুখে আসতাম আমি?

রেনু ভ্রু কুচকে এলো,
~মানে?

~আমি জানতাম শুভ্রতা আর অরণ্য মামাতো ফুপাতো ভাই বোন। এমন কি ওরা একে ওপরকে আপন ভাই বোন মানতো। সেদিন শুভ্রতার সাথে দেখা করতে আসার আগেই আমি অরণ্যের সাথে দেখা করেছিলাম। অরণ্য আমাকে সব বলেছে। আমার মধ্যে রাগ, ঘৃনা এতই জন্মেছিল যে আমি তাদের কথা বিশ্বাস করিনি। রাগের মাথায় শুভ্রতার কাছে এসে অনেক বাজে ব্যবহার করে ছিলাম। পরে যখন জানতে পারলাম ওরা সত্যিই ভাই বোন তখন লজ্জায় আর কারো সামনে আসতে পারিনি। আমাকে মাফ করে দাও রেনু আপা।

রেনু অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে চাইলো। ঘৃনা ছিটকে দূরে সরে দাড়ালো নুরের থেকে। তার কারণেই শুভ্রতা সব পেয়েও মৃত্যুর আগে আফসোসে ভুগলো। যার জন্য আফসোস করলো আজ শুনছে দোষী নাকি নুর নিজেই। শুভ্রতার কোনো দোষ নেই। রেনু উঠে দাড়ালো। চোখের পানি মুছে দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকালো নুরের দিকে। থমথমে গলায় বললো,

নিচে যেতে বলেছে নিচে আসুন। শুভ্রতা আপাকে তো আর চিরদিন আপনার অপেক্ষায় রেখে দেওয়া যাবে না।

নুর শব্দ করে কেঁদে উঠলো। রেনু হন হন করে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। এই মেয়ের জন্য আর কখনোই মন নরম হবে না তার। কখনোই না।
_____________________________________

বৃষ্টি কিছুটা কমে এসেছে। মাথার ছাউনিটা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তিলোত্তমার আদেশে। বকুল গাছের ফুল ঝরে পড়ছে শুভ্রতা আর চন্দ্রের খাটিয়ায়। নুর দরজায় দাড়িয়ে দেখলো সে দৃশ্য। ফুলের তীব্র ঘ্রাণ আর আগরবাতির ঘ্রাণে তৈরি হচ্ছে এক অন্য রকম পরিবেশ। নুরের মনে পড়লো শুভ্রতার শেষ পোস্টটার কথা,

“আমার বিদায় বেলায় আকাশটা হোক মেঘাচ্ছন্ন। চারদিকে গুমোট পরিবেশ, থেমে থেমেই বৃষ্টি পড়ুক ঝমঝমিয়ে। প্রিয় মানুষগুলো ছুটে আসুক আমার বাড়িতে। বৃষ্টির ফোঁটা আমার কাফনে পড়তেই বিচলিত হয়ে আমাকে ঢাকার চেষ্টা করুক স্বজনেরা। কেউ কেউ ছুটে আসবে দীর্ঘ সময়ের মনোমালিন্য ভুলে। তীব্র আফসোসে তখন বুক ভার হয়ে আসবে, মনের মাঝে দলা পাকাবে হাজারো না বলা কথা। পাশাপাশি বসে আর কখনো আলাপ করা হবে না নিজ নিজ মনে জমিয়ে রাখা সকল অভিযোগ নিয়ে। তীব্র আফসোসে তার মনটাও কেঁদে উঠুক। আমার উঠানে লাগানো ফুল গাছটাও ঝড়ো বাতাসে ফুল ঝরিয়ে আমাকে বিদায় জানাক। আগরবাতি আর ফুলের ঘ্রাণে তৈরি হোক অতি বিষন্ন এক পরিবেশ। প্রিয় বান্ধবীটার গাল গড়িয়ে পড়া অশ্রুকণাগুলো বৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে যাক অতি সন্তপর্নে। প্রতিবারের মতো হাত বাড়িয়ে চোখের পানি মুছে না দেওয়ায় কাছের মানুষটাও একটু অভিমান করুক। সারাজীবন সাথে না থাকতে পারার আক্ষেপ নিয়ে আমিও বলে উঠি “ভালো থেকো প্রিয়, নিজের যত্ন নিও”।”
~শুভ্রতা

নুরের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো,

~শুভি রে! তোর সব কথা মিলে গেলো। আফসোসে আমার বুক ভার হয়ে আসছে। কি করলে এর থেকে মুক্তি পাবো আমি? কি করলে এই আফসোস কমবে আমার?

নুর তার মায়ের কাছে আবদার করলো,
মা তিলোকে বলো না সে যেনো আমাকে শুভির কাছে যেতে দেয়।

নিতা মেয়ের হাতের থেকে নিজের হাত ছাড়ালেন। মুখ ফিরিয়ে নিতেই নুর ধীরে ধীরে তিলোত্তমার দিকে এগিয়ে গেলো। তিলোত্তমা দাড়িয়ে আছে শুভ্রতার থেকে কয়েক কদম দূরে। সে বুঝলো তিলোত্তমা না চাইলে তার ছায়াও শুভ্রতার পাশে ঘেঁষতে দিবে না কেউ। নুর তিলোত্তমার চোখের দিকে চেয়ে রইলো নিবিড় দৃষ্টিতে। নুর তিলোত্তমার সামনে গিয়ে হাঁটু গেরে বসতেই সে ভ্রু কুচকালো। নুর তিলোত্তমার ডান হাত নিজের কপালে চেপে ধরলো। কাতর কণ্ঠে বললো,
আমি জানি আমি ভুল করেছি। আমাকে কি মাফ করা যায় না? আমাকে একটাবার শুভির কাছে যেতে দে তিলো। আজকে ওর পা ছুঁয়ে ওর কাছে মাফ না চাইতে পারলে আমি তীব্র আফসোসে মারা যাবো। প্লীজ তিলো আমাকে একবার শুভির কাছে যেতে দে।

তিলোত্তমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো শুভ্রতার সেদিনের করা আর্তনাদ করে কান্না। সেদিন তো শুভ্রতাও ঠিক এমনিই নুরের হাত ধরে বলেছিল সে যেনো না যায়। নুর কি থেমেছিল? সবটা জানার পরও শুভ্রতাকে দোষারোপ করে চলে গিয়েছিল। সে জানে শুভ্রতা নুরকে বহু আগেই মাফ করে দিয়েছে। যেদিন এসব সমস্যার আসল কারণ জানতে পেরেছে সেদিনই মাফ করে দিয়েছে সে। তিলোত্তমা রুপার দিকে তাকালো। সে এখনও শুভ্রতার পায়ের কাছে বসে আছে। তিলোত্তমা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। সে নুরকে অনুমতি দিলো শুভ্রতার কাছে যাওয়ার। অনুমতি পেতেই নুর শুভ্রতার লাশের পাশে গেলো। আলতো হাতে শুভ্রতার গাল স্পর্শ করলো। শরীরটা ঠান্ডা হয়ে আছে তার। নুর ফুপিয়ে উঠলো। কান্নাভেজা গলায় বলে উঠলো,

~এই শুভি! দেখ! চেয়ে দেখ না আমি এসেছি।

~সবসময়ের মতো নিজের কথায়ই অটল থাকবি? দেখ না! এই যে আজ আমি এসেছি। তুই না চাইতি সব ভুল বুঝাবুঝি ঠিক করতে? তবে উঠ! আমি এসেছি তো! আমার সাথে কথা বলবি না? এই শুভি?

নুর শুভ্রতার নিথর লাশটাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাদতে লাগলো।

~মাফ করে দে শুভি… আমি তোর যোগ্য বান্ধবী হতে পারিনি।

উপমা, রিদিতা আর শ্রেয়া নুরকে শান্তনা দিচ্ছে। আবার ক্ষণে ক্ষণে নিজেরাও হাউমাউ করে কাদছে। সন্তানদের এমন দশা দেখে নুর ওদের মা বাবাও কাদঁছেন। শুভ্রতা এক প্রকার সকলের মনেই রাজত্ব করতো। অকারণেই তো নুর ওরা বলতো না “শুভি? তুই সবার মায়ের মন জয় করিস কিভাবে?”। তারা যেনো আজ নিজেরই আদরের এক সন্তান হারালো।

দূরে দাঁড়িয়ে তিলোত্তমা অশ্রুসিক্ত চোখে দেখে গেলো সেই দৃশ্য। এই চিত্তের দহন সে সহ্য করতে পারছে না। তার প্রিয় বান্ধবীটা আকাশ সমান কষ্ট নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো। সে কিছুই করতে পারেনি। কষ্টের কারণটা যখন নুর নিজেই তবে এই কষ্ট সহ্য করা অসম্ভব। এতো এতো আফসোস নিয়ে কি করে বাঁচবে নুর? দম বন্ধ হয়ে আসবে না তার?

চন্দ্রের মায়ের মতো আরেকজনও শুভ্রতার আর চন্দ্রের খাটিয়ার পা এর কাছে বসে বিলাপ করে কাদছেন। অরণ্যের মা অর্থাৎ শুভ্রতার মামী। অরণ্যের কোনো বোন না থাকায় অনিকা বেগম সর্বদাই শুভ্রতাকে নিজের আপন মেয়ের মতো দেখেছেন। মায়ের যাওয়ার পর তার স্থানটা যদি অনিকা চাইতো তবে হাসতে হাসতেই দিয়ে দিতো শুভ্রতা। সে যেনো মামী নয়, তার আরেক বান্ধবী। মেয়ের মৃত্যুতে তার হৃদয় যেনো ছারখার হয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকবার জ্ঞান হারিয়েছেন তিনি। হুশ ফিরতেই আবারো আর্তনাদ আর বিলাপ করে কান্না শুরু। মাহতাব এর মতো অরণ্যও মাকে বুকে জড়িয়ে চুপটি করে বসে আছে। এক পাশে ছোটবেলার প্রিয় বন্ধু আর অন্য দিকে বোন শুভ্রতা। কথায় আছে ‘অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর’, অরণ্যের আজ ঠিক একই দশা। ওদের মৃত্যুতে তিলোত্তমা দু এক ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দিলেও কাদেনি অরণ্য। চুপ করে চন্দ্রের লাশের মুখের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেছে সারাটাক্ষণ।
____________________________________

লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় আসতেই সকলের কান্নার বেগ বাড়লো কয়েক গুণ। বৃষ্টির মাত্রা আগের থেকেও বেড়ে গিয়েছে। নুর পাগলের মত চিৎকার করে কাদঁছে। রিদিতা আর উপমাও এবার আর নুরকে শান্তনা দিচ্ছে না। তারাও নুরের মতোই চিৎকার করে কাদছে। কিছু মেয়েরা তাদের জোর করে আটকে রেখেছে। রুপা আগের জায়গায়ই বসে চুপ করে চেয়ে আছে ওদের যাওয়ার দিকে।

~কই নিয়ে যাচ্ছেন ওকে? শুভি!

~ছাড়ুন আমাকে, আমি শুভির কাছে যাবো। ছাড়ুন আমাকে!

~ও একা অন্ধকারে থাকতে পারবে না। নামান ওকে! নিয়ে যাবেন না প্লিজ!!!

বান্ধবীদের গগন বিদারী চিৎকার যেনো সকলের হৃদয় ভেদ করে যাচ্ছে। রেনু তিলোত্তমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে। তিলোত্তমার চোখ দিয়েও অবিরতভাবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। যা বৃষ্টির পানির সাথে মিশে গাল বেয়ে পড়ছে। ঝাপসা দৃষ্টিতে শুভ্রতা আর চন্দ্রের খাটিয়ার দিকে চেয়ে থেকে বললো,

~এই দুনিয়ায় তো সম্ভব হলো না। ওই দুনিয়ায় অন্তত ভালো থাকিস তোরা। আল্লাহ্ তোদের জান্নাত নসিব করুক। চির বিদায়।

🍂🍂🍂

শুভ্রতার মায়ের ঘরে বসে আছে নুর, উপমা, রিদিতা, রূপা আর শ্রেয়া। নুর নিজের মায়ের কোলে মাথা দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদঁছে। উপমা আর রিদিতা চুপ করে বসে আছে। রুপা নিশ্চুপ হয়ে নুরের দিকে চেয়ে আছে। তার একটা ভুলের জন্য আজ এতো কিছু। শুভ্রতা না মরে সে নিজে কেনো মরলো না? অরণ্য ফিরে এসে সেই যে দরজায় খিল দিয়ে বসেছে এখনও বের হয়নি। চন্দ্রের আর অরণ্যের মাও নিচের এক রুমে বসে কাদছে। তিলোত্তমা কথায় জানা নেই। রুপা এসে নুরের সামনে বসলো। নত তার চাহনী। সে নুরের পা ছুতেই নুর উঠে বসলো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো রুপার দিকে। রুপা হটাৎই তার পা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। অজানা এক কারণে মাফ চাইতে লাগলো।
_____________________________________

তিলোত্তমার কাধে মাথা রেখে কেঁদেই যাচ্ছে মাহতাব। এমন দিন সে কস্মিনকালেও ভাবেনি। এই অসহ্যকর যন্ত্রণা আর নিতে পারছে না সে। তিলোত্তমাও নিঃশব্দে কাদতে কাদতে মাহতাবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। শুরু থেকে শেষ অব্দি তারাই ছিলো শুভ্রতা আর চন্দ্রের সাথে। আজ এভাবে এদের শেষ দেখে বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। নিচ থেকে কারো চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনতেই ভ্রু কুঁচকে এলো তিলোত্তমার। মাহতাবও মাথা তুলে তাকালো তার দিকে। চিল্লাচিল্লির আওয়াজ যেনো ক্রমশই বাড়ছে। নুরের গলার আওয়াজ। “আবার কি শুরু করেছে এই মেয়ে?” ভেবেই উঠে দাড়ালো তিলোত্তমা আর মাহতাব। নিচে আসতেই চমকিত দৃষ্টিতে তাকালো তারা। রুপা নুরের পা ধরে বার বার ক্ষমা চাইছে আর নুর পা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর এই ক্ষমা চাওয়ার কারণ জানতে চাইছে। রুপা কিছুতেই ছাড়ছে না। অদ্ভুত বিষয় হলো কেউ রুপাকে সরাচ্ছেও না। সবাই শান্ত দৃষ্টিতে রুপার কার্যকলাপ দেখে চলেছে। নুর বিরক্ত হয়ে উপমাকে ধমক দিয়ে বললো,

~হা করে চেয়ে আছিস কেনো? রুপ কে সরা!

উপমা নড়লো না। আগের মতই কপাল কুঁচকে চেয়ে রইলো রুপার দিকে। রিদিতাও ঠিক তাই ই করলো। নুর করুন কণ্ঠে তিলোত্তমাকেও রিকোয়েস্ট করলো সে যেনো রুপাকে সরায়। কিন্তু না! তিলোত্তমা আগের জায়গা থেকে এক চুলও নড়লো না। নিজ জায়গায় থম মেরে দাড়িয়েই রইলো। শুভ্রতা চলে গেছে মানে তার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই। এখন যা হচ্ছে হোক। এর শেষ অব্দি দেখতে চায় সে।
~~~
চলবে~

(অরণ্য আর শুভ্রতার কি সম্পর্ক তা জানা সত্যেও নুর শুভ্রতার সাথে এমন ব্যবহার করলো কেনো? আর রুপা মাফ চাইছে কেনো? গেস করুন তো! গঠন মূলক কমেন্টস করেন না কেনো? উৎসাহ না পেলে লেখার মন মানসিকতা বিন্দু মাত্র থাকে না। এই জন্যই গল্প দেরি করে দেই 🙃 পরের পর্বের জন্য টুকুস করে কয়েকটা কমেন্টস করে ফেলুন তো! কিপটামি করবেন না। বাই দ্যা বুড়িগঙ্গা, হ্যাপি রিডিং~)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here