চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ১৮

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ১৮

🍂বর্তমান 🍂

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় তেমন গাড়িও নেই। চারদিক কেমন গুমোট হয়ে আছে। দীর্ঘ দুই বছর পর এই শহরে আসা। এই শহর যেমন তাকে অনেক কিছু দিয়েছে তেমনি ছিনিয়েও নিয়েছে। ফিরে যাওয়ার সময় শুধু মুঠো ভর্তি স্মৃতিই নিয়ে যেতে পেরেছে সে। যার কিছুটা ছিল মিষ্ঠতায় ভরপুর আবার কিছুটা ছিল ভয়ানক বিষাক্ত। গাড়িটা ঢাকায় প্রবেশ করেছে অনেকক্ষণ হলো। মামার বাড়ির রাস্তার দিকে যেতে না দেখে ভ্রু কুচকালো নুর। রাস্তার দিকে চেয়ে রইলো নিবিড় দৃষ্টিতে। অতীত মনে করে তার মন এখন বিষন্ন। কোথায় যাচ্ছে তা জিজ্ঞেস করার ইচ্ছা শক্তিটুকুও এখন আর তার মধ্যে নেই। যেখানে যাচ্ছে যাক, গেলেই তো দেখতে পাবে। শহরটা মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো। দুই বছরে যেনো কিছুই পরিবর্তন হয়নি। আবার আনমনেই ভেবে উঠলো, হয়েছে তো! কিছু সম্পর্কের পরিবর্তন। শাহবাগে এসে জ্যামে পড়তেই নুরের নাকে ভেসে এলো ফুলের সুবাস। এক সারিতে অনেকগুলো ফুলের দোকান। এক ধ্যানে সেদিকে চেয়ে রইলো। ফুল কিনতে মন চাইলেও কিনতে গেলো না। কিছু দূর আসতেই আবারো জ্যামে পড়লো। নুর মৃদু হাসলো। ঢাকা শহর, জ্যামের শহর। এতো বছর পর আসতে না আসতেই আবারো জ্যামে আটকে বসে আছে। নুরের নজর একটা বাচ্চা মেয়ের দিকে পড়তেই সে তাকে ডাক দিলো। মেয়েটার হাতে বকুল ফুলের মালা। ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ফুল বিক্রি করছে। নুরের ডাকে মেয়েটা দৌড়ে এলো তার গাড়ির কাছে। ঠোঁট জুড়ে তার মন ভুলানো হাসি। মেয়েটা নুরের কাছে আসতেই নুর তার হাতে থাকা ফুল গুলোর দিকে ইশারা করে বললো,
~দাম কত?
~১৫ টাকা।

নুর মেয়েটার দিকে একবার তাকালো। ফুলগুলো ডান হাত দিয়ে ছুঁয়ে বললো,
~১০ টাকা করে দিবে? তবে দুটো নিবো।

মেয়েটা জবাব দিতে একটু সময় নিলো। তারপর হাসি দিয়ে বললো,
~আচ্ছা নেন।

নুর হাসলো। দুটো মালা নিয়ে ১০০ টাকার নোট মেয়েটার হাতে দিলো। মেয়েটা হাসি মুখেই ইনিয়ে বিনিয়ে বললো,
~আপা এত সকালে তো ১০০ টাকা ভাঙতি নাই। আপনার কাছে ভাঙতি ২০ টাকা নাই?

~ভাঙতি লাগবে না। তুমি রেখে দাও।

মেয়েটার চোখ চকচক করে উঠলো। হয়তো আশা করেনি এমন কিছু। নুর নিজের ছাতাটাও মেয়েটাকে দিলো। মেয়েটা নিতে চাইলো না। নুর বললো,
~একটু আগে আপা বললে না? ভেবে নাও এটা বড় আপা ভালোবেসে দিয়েছে।

মেয়েটা হাসতেই নুর মেয়েটার চোখের দিকে তাকালো। কি মায়া এই চোখে। কিন্তু কপাল! মেয়েটার এই টুকু বয়সেই পেটের ক্ষুধা মিটাতে কাজ করা লাগছে। জ্যাম ছাড়তেই গাড়ি চলতে শুরু করলো। নুর জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখলো মেয়েটা খুশি হয়ে লাফাতে লাফাতে তার থেকেও ছোট একটা ছেলেকে ছাতা আর টাকাটা দেখাচ্ছে। কিছু একটা বলেই আবার নুরের গাড়ির দিকে আঙুল তাক করে দেখাচ্ছে। নুর মুচকি হেসে ঠিক হয়ে বসলো। হাতে থাকা মালাটা নাকের সামনে ধরতেই মিষ্টি একটা ঘ্রাণ তার মন ছুঁয়ে গেলো।

~বকুল ফুলের মালা? শুভ্রতা আপুর খুব প্রিয় ছিল তাই না?

নীরার কথা কর্ণপাত হতেই সে ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালো। নীরা ঘুমুঘুমু চোখে তার দিকেই চেয়ে আছে। নুর নীরার প্রশ্নের জবাব দিলো না। সিটে গা এলিয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে রইলো আনমনে।
_________________________________

গাড়িটা কার্জন হলের সামনে দিয়ে ক্রস করতেই নুর সোজা হয়ে বসলো। ছলছল চোখ দুটো স্থির করলো রাস্তার দিকে। শেষবার তো এখানেই ঘুরতে এসেছিলো ওরা। এই এলাকাটা সম্পূর্ণ পরিচিত তাদের। এখানেই তো প্রায়শ ঘুরতে আসা হতো ওদের। নুর ঠোঁট চেপে দেখতে লাগলো। তার মনে হলো এখনি বুঝি শুভ্রতারা “ঝাড়বাতি, ঝাড়বাতি” বলে চিল্লাফাল্লা করে উঠবে। নুরের কানে যেনো শুভ্রতার কণ্ঠের সেই ডাকটা এখনও বাজছে। সে জানালা দিয়ে মাথা বের করে তাকালো। সত্যিই কি ডাকছে কিনা দেখতে। কিন্তু না, সে হতাশ হলো। ঠোঁট কামড়ে এদিক ওদিক চেয়ে কান্না আটকালো। তবুও এক ফোঁটা অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লোই। গাড়ি যতই এগোচ্ছে ততই তার কান্না পাচ্ছে। কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই এলাকায়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে রাস্তায় হাঁটা। অরণ্যের সাথে রাস্তা পার হওয়ার সময় একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে রাখা। ভাবতেই নুরের বুকটা হুহু করে উঠলো। হৃদয়টা আরো দুমড়ে মুচড়ে উঠলো যখন দেখলো গাড়িটা শুভ্রতার বাড়ির এলাকায় ঢুকেছে। নুর অবিশ্বাস্য চোখে বাবার দিকে তাকালো। কিন্তু বাবা তার দিকে তাকালো না। গাড়িটা শুভ্রতার বাড়ির গলিতে ঢুকতেই তার হৃদয় যেনো থমকে গেলো। সে দেখলো শুভ্রতার বাড়ির সামনে অনেক মানুষের ভিড়। দূর থেকে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। নুরের হার্ট দ্রুত বেগে বিট করতে লাগলো। শুভ্রতার বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই সে জড়োসড়ো হয়ে বসলো। নিভে যাওয়া কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
~এখানে কেনো এলে? তাও এত সকালে? কি হয়েছে?

কেউ জবাব দিলো না। মা, বোন, বাবা সবাই নামলেও সে নামলো না। নুরুজ্জামান নুরের পাশের দরজা খুললে সে আরো ভেতর দিকে চেপে বসলো। মাথা নেড়ে বুঝালো সে যাবে না। নুরুজ্জামান হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,
~বাইরে আয় মা।

নুর ঠোঁট কামড়ে ভীতু নয়নে বাবার দিকে তাকালো। মাথা নেড়ে বললো,
আমি যাবো না বাবা। আমার মন বলছে ভেতরে গেলেই খারাপ কিছু সহ্য করতে হবে। আমি যাবো না।

নুরের মন যেনো চিৎকার করে তাকে বলছে ভেতরে যাস না নুর। ভেতরে গেলে এমন কিছু তোর জানা হবে যা তোর সহ্য হবে না। তুই কষ্ট পাবি, যাস না। নুর মায়ের দিকে তাকালো,

~মা চলো বাড়ি ফিরে যাই। আমি যাবো না।

নিতা মেয়ের দিকে তাকালেন তার চোখেও পানি। শাড়ির আঁচলে মুখ গুজে হুহু করে কেঁদে উঠলো। নীরাও কাদঁছে। বাবার চোখেও পানি চিকচিক করছে। নুর বুঝলো কিছু একটা হয়েছে যার জন্য সকলের চোখে পানি। নুরের বাবা শীতল, গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
গাড়ি থেকে বের হও নুর। চলো আমাদের সাথে।

নুর সাহস করে এগিয়ে এসে বাবার হাতটা শক্ত করে ধরলো। গাড়ি থেকে বের হয়ে দাড়াতেই বাবা ছাতাটা নুরের মাথার ওপর ধরে এক সাথে পা বাড়ালো। ভিড় ঠেলে বাড়ির ভেতরে যেতেই নুরের পা থেমে গেলো। হাত পা শির শির করে উঠলো অজানা ভয়ে। সামনেই একটা খাটিয়ায় কারো লাশ রাখা। তার পাশেই চুপ করে বসে আছে কয়েকজন মেয়ে। চারদিকে মানুষে ভরপুর। নুর লাশটির ওপর নজর স্থির রেখে এগিয়ে গেলো খাটিয়ার পাশে। কার লাশ এটা? শুভ্রতার বাবা বা মায়ের? শুভ্রতা কোথায়? না জানি তার মনের ওপর দিয়ে কি যাচ্ছে। আরেকটু এগিয়ে যেতেই দেখলো পাশে বসে থাকা মেয়েগুলোকে। উপমা, রিদিতা আর শ্রেয়া দাড়িয়ে আছে লাশটির থেকে কয়েক কদমের দূরত্বে। লাশের মাথার পাশে বসে আছে তিলোত্তমা। যার অশ্রুসিক্ত নেত্রজোড়া স্থির রয়েছে লাশের দিকে। আর রুপা! সে লাশের পা এর কাছে বসে কি যেনো বিড়বিড় করছে। নুরকে দেখতেই রিদিতা আর উপমা নুরের কাছে আসলো। নুরকে জড়িয়ে ধরে হিচকি তুলে কান্না করতে লাগলো। নুর নিঃসংকোচে জিজ্ঞেস করলো,
~কার লাশ এটা?

নুরের প্রশ্নে রিদিতা আর উপমার কান্নার তেজ বাড়লো। নুর আবারো জিজ্ঞেস করলো,
~কার লাশ এটা? বলছিস না কেনো? আর শুভ্রতা কোথায়?

কারো জবাব না শুনতে পেয়ে নুর এবার রেগে গেলো। জোর করে ওদের দুজনকে নিজের কাছে থেকে দূরে সরালো। ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,
~কি জিজ্ঞেস করছি আমি! কার লাশ এটা?

রিদিতা এগিয়ে এলো তার কাছে। কান্নাভেজা গলায় জবাব দিলো,

~শুভির

নুরের মনে হলো কেউ যেনো তার হৃদয়ে ভোঁতা ছুরির দ্বারা পরপর লাগাতার আঘাত করছে। নুর নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না। সে মনে হয় ভুল শুনলো। আবারো প্রশ্ন করলো,

~কা..কার লাশ?

~শুভ্রতার…

উপমার জবাবে গর্জে উঠলো নুর। ঠাটিয়ে এক চর লাগালো উপমার বাম গালে। সে কিছু বললো না শুধু কেঁদেই চলেছে। নুর রিদিতা আর উপমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তিলোত্তমার পাশে বসে তিলোত্তমাকে তার দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করতে করতে ব্যস্ত কণ্ঠে বললো,

~তিলো? দেখ! দেখ না উপ আর রিদি কি সব আজগুবি কথা বলছে? তুই ওদের কিছু বলছিস না কেনো?

~কিরে? কিছু বলছিস না কেনো তুই?

ক্রোধে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলো নুর। তিলোত্তমা নিজের কাধ থেকে নুরের হাত সরালো। লাশের মুখ থেকে কাপড় সরাতেই বজ্রাহত দৃষ্টিতে তাকালো নুর। প্রিয় বান্ধবীর স্নিগ্ধ মুখখানা তার চোখের সামনে ভেসে উঠতেই সে হুড়মুড়িয়ে পিছিয়ে গেলো। কাদায় মেখে গেলো তার জামা-কাপড়। শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো শুভ্রতার মুখপানে। সে কি স্বপ্ন দেখছে? তবে ঘুম থেকে উঠছে না কেনো সে? এত ভয়ানক স্বপ্ন সে দেখতে চায় না। নুর খিল খিল করে হেসে উঠলো। তার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকালো উপস্থিত সকলে। নুর উঠে দাড়ালো। রিদিতা আর উপমার দিকে চেয়ে বললো,
~প্র্যাঙ্ক করছিস তাই না? এতদিন রেগে কথা বলছিলাম না বলে প্র্যাঙ্ক করছিস? আমি আর রাগ করে থাকবো না। তোরা শুভ্রতাকে বল উঠতে।

কেউ কোনো শব্দ করলো না। নিঃশব্দে কাদছে সবাই। নুর শুভ্রতার দিকে চেয়ে বললো,
শুভি? এই দেখ আমি, আমি এসেছি। তুই না বলেছিলি নীরাকে একদিন তোর বাড়িতে আনতে? দেখ আজ নীরাও এসেছে। শুভি ওঠ না!

নুর শুভ্রতাকে ছুঁতে চাইলে তিলোত্তমা ওর হাত ধরে আটকালো। নুর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই তিলোত্তমা বললো,
শুভ্রতার ইচ্ছা ছিল তুই যেনো এখানে আসিস। ওকে শেষ বারের মতো দেখিস। কিন্তু ওকে ছুঁয়ে কথা বলার অধিকার আমি তোকে দিচ্ছি না। দূরে গিয়ে দাড়া।

নুর ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো। দুহাতে তিলোত্তমার দু গাল ধরে হেসে বললো,
~আমার প্রতি এখনও রাগ তুই? এই দেখ কানে ধরছি আর কখনও এমন করবো না।

নুর শুভ্রতার লাশের দিকে চেয়ে বললো,
শুভি? দেখ না তিলোত্তমাও আমার প্রতি রাগ। তুই একটু উঠে বলনা যে তুই আর রেগে নেই। উঠ না!!!

শুভ্রতা উঠলো না। বৃষ্টির পানি তার গায়ে যেনো না পড়ে তাই উপরে একটা ছাউনী দিয়ে রাখা। নুর দেখলো রেনু বকুল গাছের কাছে দাড়িয়ে কান্না করছে। সে রেনুর কাছে গেলো। রেনুর দু হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
রেনু আপা শুভ্রতাকে বলো আমি এসেছি। ও যেনো ওর নাটক বন্ধ করে। আমি আর রেগে নেই।

রেনু শব্দ করে কেঁদে উঠলো। রিদিতা এসে নুরের কাধ ঝাকিয়ে বললো,

বুঝতে পারছিস না কেনো তুই? শুভি আর আমাদের মধ্যে নেই। সে চলে গেছে…

নুর ঝামটা তিন কদম পিছিয়ে দাড়ালো। অশ্রুসিক্ত চোখে মায়ের দিকে তাকালো। তিনি মাথা নেড়ে হ্যা বলতেই নুর অবিশ্বাস্য চোখে মায়ের দিকে চেয়ে রইলো। তার মনে হচ্ছে আজ তার মাও তাকে মিথ্যা বলছে। নুর ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো। নুরের কানে শুভ্রতার সেদিনের কাতর হয়ে বলা কথা আর নিজের বলা কথাগুলোই যেনো বাজতে লাগলো,

~তোরা যাস না নুর। প্লীজ নুর আমি একা হয়ে যাবো। তুই তো জানিস তোদের শুভি একা থাকতে পারে না। আমি আর কিছুদিন একা থাকলে মরে যাবো নুর। প্লীজ যাস না।

~মরে যাক। এসব আমার দেখার বিষয় না। চিটার, বাটপার মরে গেলেও আফসোস নেই।

শুভ্রতা কি তবে সেই অভিমান বুকে পুষেই চলে গেলো? যাকে সে সব সময় নিজের চোখের সামনে হাসি খুশি ভাবে ঘুরতে দেখেছে আজ তাকেই নিথর লাশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখতে তার কলিজাটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কিছুই ভাবতে পারছে না সে। চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে এলো। চোখ বুজে আসতে লাগলো তার। জ্ঞান হারানোর আগে শুধু দেখলো মাহতাবের কোলে আরেকটা লাশ। কার লাশ এটা? অরণ্যের? তার ঠিক পাশেই আর্তনাদ করে কাদছে এক মা। চন্দ্রের মা…….
~~~
চলবে~

(এই যা! শুভ্রতা মরে* গেল! এখন কি হবে? কেনো মর*লো? আচ্ছা! শুভ্রতা নায়িকা নাকি নুর? আরেকটা লাশ* কার ছিলো?😁 গল্পটা আজ ছোট করে দিলাম। কেউ আবার রাগ করবেন না। হ্যাপি রিডিং~)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here