চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ২৭

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ২৭

🍂🍂🍂

শাড়ি পড়ে এক কোনায় দাড়িয়ে আছে শুভ্রতা। কিছুটা দূরে তার মা আর চন্দ্রের মা খোশ গল্পে মশগুল। এত বছর পর প্রিয় বান্ধবীর সাথে দেখা করতে পেরে তাদের খুশি সীমাহীন। শুভ্রতা ভাবছে তার বন্ধুমহলের কথা। সময় আর পরিস্থিতির চাপে পড়ে হয়তো তারাও একদিন আলাদা হয়ে যাবে। দীর্ঘ কয়েক বছর পর দেখা হলে হয়তো তারাও এভাবেই বসে আড্ডা দিবে। তারাও হয়তো অতীত নিয়ে গল্প করতে মশগুল হবে। শুভ্রতার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। প্রিয় বান্ধবীদের থেকে দূরে যাওয়ার কথা ভাবলেই তার হৃদয় হাহাকার করে উঠে। হটাৎ আঁচলে টান পড়তেই শুভ্রতা মাথা নিচু করে তাকালো। একটা বাচ্চা মেয়ে তার আঁচল টেনে দাড়িয়ে আছে। বয়স তার আনুমানিক পাঁচ কি ছয়। শুভ্রতা বাচ্চাটার নরম গালে আঙুল ছোঁয়ালো। বাচ্চাটা দেখতে বেশ সুন্দর। চোখগুলো বড় বড়, মাথার চুল পিঠ পর্যন্ত, গোল ফ্রক পড়া। একটা চিরকুট তার দিকে এগিয়ে দিতেই শুভ্রতা তার হাতের দিকে তাকালো। ছোট হাতের মাঝে হলদে খাম। এমন খামের সাথে সে পরিচিত। প্রতিমাসে এমন চিরকুট তার বাড়িতে আসে। বাচ্চাটা আধো আধো কণ্ঠে বলল,

~ভাইয়া দিয়েছে।

শুভ্রতা এদিক সেদিক চোখ বুলালো। নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
~কোন ভাইয়া?

মেয়েটা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার দিকে। মেয়েটার চাহনি দেখে মনে হলো সে যেনো পরীক্ষায় সিলেবাসের বাইরে কোনো প্রশ্ন করে বসেছে যার উত্তর তার কাছে নেই। শুভ্রতা তার থেকে চিরকুটটা নিতেই মেয়েটাও দৌড়ে চলে গেলো। এত মানুষের সমাগমে এই টুকুন বাচ্চা মেয়েকে খুঁজতে গেলে সে নির্ঘাত শহীদ হয়ে যাবে। সে উঠে দাঁড়াতেই উমা ডাকলো তাকে। শুভ্রতা মেয়েটার যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে উমার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

~এইযে আমার মেয়ে শুভ্রতা। এ বছর অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।

চিত্রা শুভ্রতাকে টেনে নিজের কাছে বসালো। মুখে তার বিস্তর হাসি। শুভ্রতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে বললো,

~ওকে তো আমি চিনি। আমার মাহতাবের রক্তের বোন।

উমা মেয়ের দিকে তাকালেন। প্রশ্ন করলেন,

~রক্তের বোন মানে?

চিত্রা হেসে রক্তদানের কথা জানালেন উমাকে। মেয়ের কাজে উমা বেশ খুশি। সে জানতো শুভ্রতা রক্তদান করেছে তবে কাকে করেছে জানতো না। চিত্রা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। শুভ্রতার হাত এখনও তার হাতের মাঝে। হাসি হাসি মুখে বললেন,

~চল তোদের আমার স্বামী আর সন্তানদের সাথে দেখা করিয়ে আনি।
~আ… আন্টি! আমি তো মাহতাব ভাইয়া, রাত্রি আপু আর চন্দ্র ভাইয়ার সাথে অনেক আগেই একবার দেখা করেছি। আমি আর কি পরিচিত হবো? আপনি আম্মুকে নিয়ে যান। আমি এখানেই বসি?

চিত্রা মানলেন না। টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,

~আহনাফ আর মাহতাবের সাথে দেখা করেছিস। আমার বরের সাথে দেখা করিস নি এখনো। চল তো।

শুভ্রতা আর উপায় না পেয়ে তার সাথে পা বাড়ালো। চিত্রা এক হাতে উমা আর অন্য হাতে শুভ্রতার হাত ধরে হাঁটছে। সোজা স্বামী আর সন্তানের সামনে গিয়েই থামলেন। চন্দ্র, মাহতাব, আশহাব আর তার অ্যাসিস্ট্যান্ট ওমর দাড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কিছু নিয়ে আলোচনা করছিলেন। শুভ্রতারা ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তারা কথা বন্ধ করে ওদের দিকে তাকালেন। বাবা, ছেলে তিনজনের মুখখানা থমথমে, গম্ভীর। শুভ্রতার মনে হলো তারা যেনো কোনো অনুষ্ঠানে নয় বরং কোনো রাজনীতি রিলেটেড মিটিং এ আছে। চিত্রা হেসে বললেন,

~এই দেখুন কারা এসেছে! আমার বেস্ট ফ্রেন্ড যার কথা আপনাকে বলেছিলাম। উমা আর ওর মেয়ে শুভ্রতা। আমার বিয়েতে নিশ্চয়ই দেখেছিলেন উমাকে?

আশহাব মাথা দুলালেন। উমা হেসে সালাম দিলেন, শুভ্রতাও সালাম দিলো। আশহাবও সালামের জবাব দিলেন তবে হাসলেন না। চন্দ্র আর মাহতাবও সালাম দিল। এরই মাঝে শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে আশহাবের দিকে চেয়ে রইল। চিত্রা শুভ্রতার এমন করে তাকানো তে বললেন,

~কি রে শুভ্রতা? এমন করে তাকাচ্ছিস কেনো? কিছু বলবি?

শুভ্রতা বিজ্ঞদের মত মাথা ঝাকিয়ে বললো,

~আংকেল কি হাসেন না? হাসলে তো কেউ দাঁত খুলে নিয়ে যাবে না। তবে হাসেন না কেনো?

আশহাব অবাক চোখে তাকালেন। পাশ থেকেই আশহাবের অ্যাসিস্ট্যান্ট ওমর শুভ্রতাকে বাধা দিয়ে বললেন,

~কি বলছেন কি? কার সামনে কিভাবে কথা বলছেন? ভুলে যাবেন না স্যার এই শহরের এমপি।

শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকালো। কোমড়ে হাত ঠেকিয়ে গাল ফুলিয়ে বললো,

~এমপি হবে শহরের। আমার জন্য উনি আমার মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড অর্থাৎ চিত্রা আন্টির একমাত্র বর, আমার আংকেল। আংকেলের সাথে কথা বলতে গেলে ভাবা লাগবে কেনো? তাছাড়া ঠোঁটে মুচকি হাসি রাখা সুন্নত।

আশহাব সহ সকলেই আরেক দফা অবাক হলো। যার সামনে মানুষ কথা বলতে বেশ কয়েকবার ভাবে আর এই মেয়ে নির্ভয়ে কি সব বলছে। ওমর আবার কিছু বলতে নিতেই আশহাব তাকে চুপ করিয়ে দিলেন। শুভ্রতার দাড়ানো দেখে আশহাবের অসম্ভব হাসি পাচ্ছে। এক পর্যায়ে ফিক করে হেসেও দিলেন। শুভ্রতা গাল ফুলিয়ে, কোমরে হাত ঠেকিয়ে পা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতার এমন ভঙ্গিতে সকলের হাসি পেলেও মাহতাব ওরা সকলেই অবাকই হলো বেশি। আশহাব খুব কম হাসেন। রাজনীতিতে থাকতে থাকতে লোকটা যেনো হাসতেই ভুলে গেছে। সব সময় মুখখানা গম্ভীর রাখেন। স্বাভাবিকভাবে কথা বললেও মনে হয় রেগে আছেন। অন্যদিকে চন্দ্র বাবার হাসিতে অবাক না হয়ে ঠোঁট চেপে হাসছে। এমন কিছু হবে এ যেনো আগের থেকেই তার জানা ছিল। আশহাব শুভ্রতার মাথায় হাত রেখে বললেন,

~আসলে কি বলো তো মা, তোমার মত কেউ শাসন করে বলেনি তাই হাসি না। এখন থেকে থেকে ঠিকই হাসার চেষ্টা করবো।

শুভ্রতা হেঁসে মাথা কাত করে বললো “আচ্ছা”।
________________________________

~হেই তুমি শুভ্রতা না? আমি রাজন।

অপরিচিত কারো কণ্ঠ কর্ণপাত হতেই শুভ্রতা মাথা তুলে তাকালো। হেংলা পাতলা একটা ছেলে, গায়ে কালো রঙের পাঞ্জাবি, চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা। শুভ্রতার মনে হলো একটা ফুঁ দিলেই ছেলেটা উড়ে যাবে। একবার ফুঁ দিয়ে দেখবে কি? যদি সত্যিই উড়ে যায়? শুভ্রতাকে চুপ করে থাকতে দেখে ছেলেটা আবারো বললো,

~আমাকে চিনতে পারোনি? তোমার স্কুলে ৩ ব্যাচ সিনিয়র ছিলাম। স্কুলের অনুষ্ঠানে একবার গান গেয়েছিলে তুমি। তখন থেকেই তোমাকে চিনি। গানের গলা খুব সুন্দর তোমার।

শুভ্রতা জোরপূর্বক হাসলো। বিনয়ী সুরে জানালো,
~ধন্যবাদ।

রাজনও হাসলো। শুভ্রতার পাশের চেয়ারে বসে কথা বলতে শুরু করলো।

~তো কার পক্ষে তুমি?
~কন্যা। আপনি?
~বরের কাজিন আমি। আসবো না ভাবছিলাম। বাবা জোর করে নিয়ে এসেছে। এতক্ষণ বোরিং লাগছিল। এখন মনে হচ্ছে এসে ভালোই হলো। কাছের কারো সাথে দেখা।

বলেই অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়লো রাজন। শুভ্রতা আবারো জোরপূর্বক হাসলো। এখানে হাসার কি আছে জানে না সে। তবে সামনের মানুষটা এতো ইন্টারেস্ট নিয়ে কথা বলছে, হাসছে তাতে সে না হাসলে খারাপ দেখায়। হটাৎই চন্দ্র ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। পেছন পেছন অরণ্য, মাহতাব, আহাদও এলো। এভাবে সামনে এসে দাড়ানোতে শুভ্রতা আর রাজন দুজনেই হকচকিয়ে গেলো। দুই পক্ষের কেউই কথা বলছে না। একদিকে চন্দ্র, মাহতাব, অরণ্য আর আহাদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রাজনের দিকে চেয়ে আছে। আর অন্যদিকে শুভ্রতা আর রাজন কিছু বুঝতে না পেরে হা করে চেয়ে আছে। মৌনতা ভেঙে শুভ্রতাই প্রশ্ন করলো,

~এভাবে সামনে এসে সং এর মত দাড়িয়ে আছেন কেনো আপনারা?

অরণ্য পাল্টা প্রশ্ন করলো,
~ও কে? তুই কি ওকে চিনিস?
~হ্যা। আমার সি…(শুভ্রতা)
~শুভ্রতা আমার স্কুল লাইফের ক্রাশ। আর এখন আমরা বন্ধু।

রাজন এর কথায় শুভ্রতা যেনো বোকা বনে গেলো। রাগী দৃষ্টিতে রাজনের দিকে তাকালো। অন্যদিকে মাহতাব শুকনো ঢোক গিলে ভাইয়ের দিকে তাকালো। শান্ত করার জন্য চন্দ্রের কাধে হাত রাখতেই ঝামটা মেরে হাত সরিয়ে দিলো। রাগে গজগজ করতে করতে শুভ্রতার হাত ধরে বললো,

~চলো।
~কোথায়? (শুভ্রতা)

শুভ্রতা হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই চন্দ্র শুভ্রতাকে কানে ধীর কণ্ঠে বললো,

~চুপচাপ আমার সাথে চলো শুভ্রতা। রাগ উঠাবে না। মেজাজ খারাপ হলে এখানেই সবার সামনে অধর ছুঁয়ে দিবো বলছি।

শুভ্রতা বিস্মিত চোখে চন্দ্রের দিকে তাকালো। চন্দ্রের কণ্ঠে রাগ দেখা দিচ্ছে। তবে কিসের জন্য এত রাগ সে? চন্দ্র শুভ্রতার আঙ্গুলের ভাঁজে নিজের আঙ্গুল চেপে তাকে সাথে নিয়ে যেতে লাগলো। অবাকতার বশে শুভ্রতার চোখ জোড়া যেনো এখনি কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। পেছন থেকে অরণ্য ওরা শুধু দেখেই গেলো। মাহতাব হতাশার শ্বাস ছাড়লো। ভাই তার ক্ষেপেছে আজ। তাকে শান্ত একান্ত শুভ্রতাই করতে পারবে। চন্দ্র সিঁড়ি মাড়িয়ে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে। শুভ্রতা ওপর থেকে মা কে দেখলো। পার্টির সবাই নিজ নিজ ভাবে মশগুল। এদিকে কারোই ধ্যান নেই। শুভ্রতা পুনরায় হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও ছাড়লো না চন্দ্র। দোতলার একটা ঘরে এনে তবেই হাত ছাড়লো। হটাৎ এভাবে ঘরে এনে ছুড়ে মারায় শুভ্রতা পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। এভাবে ছুড়ে মারায় শুভ্রতা ভীষণ রেগে যায়। ঘুরে দেখে চন্দ্র বুকে দু হাত গুজে বন্ধ দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।

~কি সমস্যা? এভাবে টেনে আনলেন কেনো?
~এতো হেসে হেসে কি কথা বলছিলে তোমরা?

চন্দ্রর শীতল কণ্ঠ। মনে মনে ভয় পেলেও তা প্রকাশ করলো না শুভ্রতা। কণ্ঠে তেজ বজায় রেখে বললো,

~আমি কার সাথে কি কথা বলেছি তা আপনাকে কেনো বলবো?
~রাজনের সাথে কি সম্পর্ক তোমার?
~যে সম্পর্কই থাকুক না কেনো তাতে আপনার কি? দরজা ছাড়ুন। যেতে দিন।

শুভ্রতা এগিয়ে চন্দ্রকে সরতে বললে চন্দ্রের রাগ যেনো দ্বিগুণ বেড়ে যায়। শক্ত হাতে শুভ্রতার ঘাড় টেনে নিজের মুখোমুখি এনে বললো,

~আমি থাকতেও অন্য ছেলের সাথে কি এতো কথা তোমার? আর ওই ছেলের সাথে এতো খিলখিলিয়ে হাসছিলে কেনো হ্যা? আমার সাথে তো কখনো মুচকি হেসেও কথা বলো না।

শুভ্রতা অবাক চোখে তাকালো চন্দ্রের দিকে। তার কণ্ঠে অভিমান স্পষ্ট। কোন অধিকারে অভিমান করছে সে? কিসের জন্য? চন্দ্রের ঘন নিশ্বাস শুভ্রতার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। শুভ্রতা এক হাতে চন্দ্রের হাত সরানোর চেষ্টা করলো আর অন্য হাতে চন্দ্রকে ধাক্কা দিতে লাগলো। কিন্তু চন্দ্র পিছিয়ে না গিয়ে উল্টো তার কোমড় জড়িয়ে আরো কাছে টেনে নিলো।

~আমার দীর্ঘ আট বছরের ভালোবাসা কোনো মতেই আমি হারাতে পারবো না শুভ্রতা। তুমি আমার। একান্তই আমার। অন্য কোনো ছেলে তোমার দিকে তাকালে আমার পুড়ে।

ঘাড় থেকে হাত সরিয়ে শুভ্রতার হাতটা নিজের বুকের বাম পাশে চেপে ধরে করুন কণ্ঠে বলে,

~এইযে দেখো! এইখানটায় খুব পুড়ছে চন্দ্রাবতী।

শুভ্রতা অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে। বাকহারা হয়ে শুনছে চন্দ্রের কথা। চন্দ্রের চোখে তাকে হারানোর ভয় দেখতে পাচ্ছে সে। কই এতো দিনে একবারের জন্যও তো দেখলো না। তবে আজ? আজ কি হচ্ছে তার? শুভ্রতা ভীতু কণ্ঠে বললো,

~ছাড়ুন আমাকে চন্দ্র। আমার মনে হচ্ছে আপনার মাথা ঠিক নেই। কি বলছেন নিজেও জানেন না।

চন্দ্র ছাড়লো না। শুভ্রতাকে পরম স্নেহে জড়িয়ে ধরলো। অস্থির কণ্ঠে বললো,

~আমি একদম স্বজ্ঞানে আছি শুভ্রতা। তুমি প্লীজ আমি ব্যতীত অন্যকাউকে নিজের মনে জায়গা দিবে না। ওটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি।

শুভ্রতা সটান হয়ে দাড়িয়ে রইলো। চন্দ্রের সাথে পারবে না সে। মনে মনে ঠিক করলো এখান থেকে একবার ছাড়া পেলে আর জীবনে তার সামনে আসবে না শুভ্রতা। চন্দ্র ফের বললো,

~শাড়িতে তোমায় খুব সুন্দর লাগে শুভ্রতা। সেদিন যে আমার দেওয়া শাড়ি পড়ে হাসপাতালে গিয়েছিলে। ইশ! এত মোহনীয় লাগছিলো তোমাকে আমি বলে বুঝাতে পারবো না। মন চাইছিলো তখনই তোমাকে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে আসি। এরপর সামনে বসিয়ে মন ভরে দেখি তোমায়।

চন্দ্রের কথায় শুভ্রতা তড়িৎ বেগে তার বুক থেকে মাথা তুলে তাকালো। অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে,

~তার মানে এতদিন ওইসব শাড়ি, চিরকুট, গিফটস্ সব আপনি পাঠিয়েছেন?

চন্দ্র ঠোঁট কামড়ে হেসে দ্রুত মাথা ঝাঁকালো। শুভ্রতা আনমনে প্রশ্ন করলো,

~কেনো?
~বউকে দিবো না তো কাকে দিবো?
~আমি আপনার বউ না।

প্রত্যুত্তরে চন্দ্র কিছু বললো না। এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে আছে চন্দ্রের দিকে। ভেবেছিলো প্রেরণকারীকে পেলে আচ্ছা মতো পেটাবে। তবে চন্দ্রই সে ব্যক্তি জেনে তার হাত পা অবশ হয়ে আসছে। এই লোককে পেটানো দূরে থাক, একে ধমক দেওয়াও তার জন্য দিবাস্বপ্ন। চন্দ্র শুভ্রতাকে ছাড়তেই শুভ্রতা কয়েক হাত দুরত্ব নিয়ে বিছানায় কোনোমতে বসে পড়লো। তাকে জোরে জোরে শ্বাস নিতে দেখে চন্দ্র হাসলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুলে হাত চালিয়ে বললো,

~মানুষের মার খাওয়ার এতো ইচ্ছা হয় কেনো বলোতো? ওরা কি আর কাউকে পায় না? তোমার সাথেই কেনো কথা বলতে হবে? তোমার প্রতিই কেনো ক্রাশ খেতে হবে এদের? এত সুন্দর হতে কে বলেছিলো তোমায়?

শুভ্রতা আড়চোখে তাকালো চন্দ্রের দিকে। তার চাহনী দেখে চন্দ্র ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,

~এই পর্যন্ত কতগুলো ছেলেকে পিটিয়েছি তোমার জন্য। চারদিন আগেও ওই রাস্তার ছেলেগুলোকে মেরেছি।

একটু থেমে বললো,

~তাদের প্রত্যেকের যৌনাঙ্গ কেটে দিয়েছি। এখন শুধু তুমি কেনো তারা আর কোনো মেয়ের দিকেই বাজে দৃষ্টিতে তাকাতে পারবে না।

চন্দ্রের মুখে পৈচাশিক হাসি। শুভ্রতার অন্তর আত্মা কেপে উঠলো। ভয় পেয়ে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো। ঠিক এই কারণেই সে কোনো রাজনীতি রিলেটেড মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় না। ধীর পায়ে চন্দ্রের কাছে এসে প্রশ্ন করে,

~আপনি এতো ভয়ংকর শাস্তি দিয়েছেন?
~না হলে কি করতাম? ছেড়ে দিতাম? এতো সহজ নাকি? তোমার দিকে, আমার কলিজার দিকে হাত বাড়িয়েছে। মাফ করে দিতাম নাকি!
~পুলিশের কাছে দিলেই তো পারতেন। আপনার বাবা তো এমপি। আর আপনারই আইনের প্রতি ভরসা নেই?

চন্দ্র শুভ্রতার দিকে ঘুরে একদম মুখোমুখি দাড়ালো। দৃষ্টি স্থির করলো প্রেয়সীর ভীতু চোখ জোড়ায়। বললো,

~সব ক্ষেত্রে পুলিশের পিছু ছুটি না আমি। কিছু ক্ষেত্রে নিজের শাস্তি নিজেরই দেওয়া লাগে। একমাত্র তোমার ক্ষেত্রেই আমি শাস্তি নিজ হাতে দেই। বাকি সব পুলিশের কাছেই যায়।
~আপনি এর আগেও কাউকে মেরেছেন?
~মারিনি। তবে পিটিয়েছি। ওই জানোয়ার গুলোকেও প্রাণে মারি*নি। শুধু একটু শাস্তি দিয়েছি। আমার হাসপাতালেই আছে।

শুভ্রতার মুখে ফু দিয়ে বললো,
~আজও পেটাবো একজনকে। রাজনকে।

চন্দ্র দরজার কাছে যেতে নিতেই শুভ্রতা চন্দ্রের হাত টেনে ধরলো। চন্দ্র বেশ অবাক হলেও তার থেকে বেশি খুশি হলো। এই প্রথম তার প্রেয়সী নিজ থেকেই তার হাত ধরেছে। চন্দ্র এক ধ্যানে চেয়ে রইলো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা আমতা আমতা করে প্রশ্ন করলো,

~রাজনকে কেনো মারবেন?
~কারণ ও তোমার ওপর ক্রাশড। আর তোমার পাশে বসে কথা বলছিল।
~কথা বললেই তাকে মারতে হবে? সে তো আমাকে খারাপ কিছু বলেও নি। তবে মারবেন কেনো?

চন্দ্র শুভ্রতার সামনের চুলগুলো কানের পিছন আলতো হাতে গুঁজে দিয়ে বললো,

~কথা বললেও সমস্যা ছিল না। সে তোমাকে বন্ধু নয় অন্য নজরে দেখে। তোমাকে পছন্দ করে। তাই তার কপালে মা*র লিখা হয়ে গেছে।
~আপনি না ডাক্তার? মানুষকে বাঁচানোর কাজ আপনার। আপনি তো দেখছি উল্টো মানুষকে মে*রে রোগী বানান। এতো ভয়ংকর কেনো আপনি?

~তোমার জন্য আমি যে কারো কাছে ভয়ংকর মানুষের রূপ নিতে পারি শুভ্রতা। তোমাকে নিজের কাছে রাখার জন্য, আগলে রাখার জন্য আমি যেকোনো কিছু করতে পারি। এতে রক্ষক থেকে ভক্ষক এ রূপ নিতে হলেও আমার আফসোস নেই।

মুচকি হাসতেই শুভ্রতা ফট করে চন্দ্রের হাত ছেড়ে দিলো। কিন্তু সে হাত ছেড়ে দিলেও চন্দ্র ছাড়লো না। আরেকটু শক্ত করে তার হাত ধরে কাতর কণ্ঠে বললো,
~তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে শুভ্রতা। তুমি প্লীজ আমার হয়ে যাও।

শুভ্রতা দ্রুত চন্দ্রের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। দরজার কাছে এসে দরজা খুলতেই পেছন থেকে চন্দ্রের ব্যাকুল কণ্ঠ,

~শুভ্রতা! চলো না বিয়ে করে নেই। তোমাকে ছাড়া থাকাটা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে উঠছে। দম বন্ধ লাগে।

কি নিঃসংকোচ আবদার। শুভ্রতার একবার মন চাইলো পেছন ফিরে চন্দ্রের মলিন মুখখানা দেখতে। কিন্তু চন্দ্র কি ভাববে? শুভ্রতা পেছন ফিরে তাকালো না। এক দৌড়ে মায়ের কাছে এসে বসলো। বাড়ি যাওয়ার আগ পর্যন্ত এখান থেকে চুল পরিমান নড়বে না সে।
~~~
চলবে~
(গল্পটা কেমন লাগছে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। কমেন্ট না করলে বুঝবো কি করে আমার লেখা ভালো হচ্ছে নাকি না। আপনাদের কমেন্টসই আমাকে লেখার উৎসাহ দেয়। হ্যাপি রিডিং~)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here