চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ৩৬

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৩৬

🍂🍂🍂

শুভ্রতার মন আজ ফুরফুরে। গত রাতে ঘুমের ওষুধও খায়নি। রাত ভর জেগে ছিল। লেখা শেষ হতেই কাগজ গুলো ভাঁজ করে কয়েকটা খামে ভরলো। ফ্রেশ হয়ে মুখ মুছতে গেলেই দেখলো তার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। ব্যাপারটা বেশ স্বাভাবিকভাবেই নিলো সে। ইদানিং হুটহাট নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। তার মতে এটা ওষুধের সাইড ইফেক্ট। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই খেয়াল করলো দরজার বাইরে কারো ছায়া। সে হাসলো। রেনু ইদানিং তাকে বেশ ভয় পায়। হুটহাট ঘরে আসা মেয়েটাও এখন ভুলক্রমেও দোতলায় উঠে না। এলেও বিদ্যুতের গতিতে আসা যাওয়া করে যেনো শুভ্রতা টের না পায়। শুভ্রতা ডাকলো,

~ঘরে এসো রেনু আপা।

শুভ্রতার ডাকে রেনু কেঁপে উঠলো। কতদিন পর এভাবে স্বাভাবিক গলায় ডাকছে তাকে। শুভ্রতা আবার ডাকলো,

~কি হলো? দাড়িয়ে আছো কেনো? এসো!

রেনু তৎক্ষণাৎ ঘরে প্রবেশ করলো। শুভ্রতা চেয়ারে বসা। রেনুকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকে ইশারায় খাটে বসতে বললো। রেনু শুকনো ঢোক গিলে খাটে গিয়ে বসলো। নজর বুলিয়ে রেনুকে দেখলো। ঠোঁটে টানলো বিস্তর হাসি। রেনু আগের থেকে কিছুটা শুকিয়ে গেছে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।

~কেমন আছো রেনু আপা?
~ভা…ভালো।

শুভ্রতা ফের হাসলো। রেনু বুঝতে পারছে না শুভ্রতার হাসির কারণ। শুভ্রতা প্রশ্ন করলো,

~আমাকে ভয় পাচ্ছো রেনু আপা?

রেনু মাথা হ্যাসূচক ঝাঁকাতে গিয়েই দ্রুত না বুঝালো। শুভ্রতা খিলখিল করে হেসে উঠলো। রেনু অবাক চিত্তে চেয়ে রইলো শুভ্রতার হাসি মাখা মুখের দিকে। মেয়েটা আজ এতো হাসছে কেনো? গতকালের ট্রমার জন্য পাগল টাগল হয়ে গেছে নাকি? শুভ্রতা চেয়ার ছেড়ে এসে বসলো তার পাশে।

~আমাকে ভয় পেও না রেনু আপা। মায়ের পর তুমিই একজন যাকে আমি তুমি বলে ডাকি। তুমিও যদি ভয় পাও তবে আর কে থাকবে বলো?

রেনু কিছুটা অনুতাপ বোধ করলো। ঠিকই তো। মেয়েটা এত বছরে কখনোই তার সাথে বাজে ব্যবহার করেনি। সবসময় সম্মান আর ভালোবাসা দিয়েছে। মায়ের মৃত্যুতে সে নাহয় একটু অন্যরকম হয়ে গিয়েছিল। তাই বলে কি তার উচিত ছিল এভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া? রেনুকে চিন্তায় মগ্ন দেখে শুভ্রতা কাঁধ দিয়ে হালকা ধাক্কা দিলো। রেনু হকচকিয়ে উঠতেই শুভ্রতা এবার শব্দ করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে মুখ সম্পূর্ণ লাল হয়ে গেছে, চোখের কোণেও একটু পানি জমা হয়েছে। হাসতে হাসতে পেট চেপে শুয়ে পড়লো বিছানায়। শুভ্রতা অনেকটা সময় নিলো নিজেকে শান্ত করতে। হাসি থামিয়ে সিলিংয়ের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করলো। হাসি হাসি মুখটা নিমিষেই গম্ভীর হয়ে উঠলো,

~এই বাড়িটা আমার মনের খুব কাছের। আমি চাই আমি না থাকলেও সবকিছু এমনি থাকুক। সুন্দর, হাসি-তামাশায় ভরপুর। দুঃখ যেনো এই বাড়ির ধারে কাছেও না আসে।

রেনু প্রশ্নসুচক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। শুভ্রতার কথার আগা মাথা যে সে কিছুই বুঝছে না তা তার চাহনিতে স্পষ্ট। শুভ্রতা সেদিকে পরোয়া করলো না। নিজের মতো করে বলতে লাগলো,

~আমি চাই এই বাড়িটা এতিম খানা আর বৃদ্ধা আশ্রমে রূপ নিক। ছোটরা মা বাবার অভাব বোধ করবে না আর বড়দেরও সন্তানের অভাব অতোটা কাঁদিয়ে তুলবে না। সবাই হাসি খুশি থাকবে। আর এই এতিমখানাটা সামলাবে কে জানো?

রেনু মাথা নাড়াতেই শুভ্রতা ফট করে উঠে বসলো। মৃদু স্বরে বলল,

~তুমি আর আমার বন্ধুমহল।
~আমি?
~হ্যা তুমি। তোমাকে যতটুকু পড়ালেখা শিখিয়েছি! নিজের মতো করে চলার জন্য এইটুকু যথেষ্ট। কখনো কোথাও আঁটকে গেলে তিলো তোমাকে সাহায্য করবে।
~আপনে কই যাইবেন?

শুভ্রতা মুচকি হাসলো। সারা ঘরে চোখ বুলিয়ে বলল,

~থাকবো এখানেই কোথাও।
~আপনে থাকতে আমার সামলানো লাগবো কেন? আপনে আছেন না!

শুভ্রতা দৃঢ় দৃষ্টিতে চাইলো।

~আমি না থাকলেও তুমি এই কাজ সম্পূর্ণ করবে। আমার অবর্তমানে এই বাড়ি তোমার আর আমার বন্ধুমহলের থাকবে। কেউ এতে বাঁধা দিতে আসবেনা।

রেনু আবারো প্রশ্ন করলো,
~আপনে কই যাইবেন?

শুভ্রতা আলমারির দিকে পা বাড়ালো। আগের জবাবটাই দিলো,

~থাকবো এখানেই কোথাও।

আলমারি থেকে মায়ের দেওয়া শুভ্র রঙের শাড়িটা বের করে তাতে হাত বুলিয়ে বললো,

~আরেকটা কথা রেনু আপা। এই ঘরটা চিরদিন আমারই থাকবে। এখানের সব কিছু একই রকম থাকবে। আর আমার পরে…
~আপনের পরে?
~তিলোর মেয়ের।
~মাইয়াই হইবো আপনে কেমনে জানেন? পোলা ও তো ওইতে পারে।
~মেয়েই হবে।

কথাটা বেশ জোর দিয়ে বললো শুভ্রতা। সে যেনো বললোই না। মনে প্রাণে বিশ্বাসও করে। রেনু আর কথা বাড়ালো না। শুভ্রতা রেনুর সামনে চেয়ার টেনে বসলো।

~আমার একটা কথা রাখবে রেনু আপা। নিজেকে কখনো একা বা অসহায় মনে করবে না। দুনিয়া নরম মনের মানুষকে আরো দাবিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। তুমি কাউকে কখনো সফল হতে দিবে না। মাথা উচু করে বাঁচবে। কথা দাও…

রেনুর অবাক চাহনী। শুভ্রতা আবারো বললো,

~কথা দাও না রেনু আপা।

রেনু কথা দিলো। শুভ্রতা যেনো প্রসন্ন হলো।

~তুমি খুব ভালো মানুষ রেনু আপা। আমি নিজেকে ভাগ্যবতি মনে করি তোমাকে নিজের বড় বোন হিসেবে পেয়ে। আমি চাইবো তুমি আগের মত সেই চঞ্চল মানুষটা হয়ে যাও। আমাকে ভয় পেয় না। আমি আর এমন করবো না।

রেনুর চোখ টলমল করে উঠলো। শুভ্রতা শাড়িটা এগিয়ে দিয়ে বললো,

~আজ অনেকদিন পর একটু বাহিরে বের হবো। শাড়িটা পড়তে সাহায্য করবে না?

রেনু মাথা ঝাঁকালো। এতদিন পর শুভ্রতা বাড়ির বাহিরে পা রাখবে ভাবতেই আনন্দ লাগলো তার কাছে।
______________________________________

ঘুমের মধ্যে পাশ ফিরতেই শুভ্রতাকে শাড়ি পরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো চন্দ্র। শুভ্রতা হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে। চন্দ্র যেনো স্বপ্ন দেখছে। হাত বাড়িয়ে শুভ্রতার গাল ছুঁতে নিতেই শুভ্রতা চন্দ্রের পেটে চিমটি কাটলো। চন্দ্র আর্তনাদ করে উঠলো,

~আল্লাহ গো!

শুভ্রতা খিলখিল করে হেসে উঠলো। চন্দ্র মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখলো তাকে। শুভ্রতা চন্দ্রের হাত জড়িয়ে বসে আহ্লাদী স্বরে বললো,

~অনেকদিন পর আজ বাড়ি থেকে বেড়িয়েছি জানেন! বের হতেই রোদের আলো আমার দুচোখে বিধছিলো। কি যে এক অবস্থা! অনেকক্ষণ বাহিরে দাড়িয়ে থাকার পর স্বাভাবিক হয়েছে। শুনুন, আপনি আজকে হাসপাতালে যাবেন না প্লীজ। আমার সাথে ঘুরবেন।

চন্দ্র অবাক চিত্তে শুভ্রতার গাল স্পর্শ করলো।

~শুভ্রতা তুমি সত্যি?

গলা ধরে আসছে চন্দ্রের। এতদিন পর প্রেয়সী স্বাভাবিক আচরণ করছে। কি সুন্দর আগের মতোই কথা বলছে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলো চন্দ্র। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো শুভ্রতাকে। গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। শুভ্রতা আলতো হাতে চন্দ্রের পিঠে হাত বুলাচ্ছে।

~আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন না চন্দ্র? বেশি সময় নেই আমার কাছে।
~কেনো? কোথায় যাবে?

ভ্রু কুঁচকালো চন্দ্র। শুভ্রতা ঘড়ির দিকে চেয়ে বলল,
~তিলোর সাথেও দেখা করতে যাবো।

চন্দ্র কথা বাড়ালো না। একটু অপেক্ষা করতে বলে শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি, পায়জামা নিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।
_______________________________________

~আপনার বাইক নেই?
~আছে। কিন্তু…
~আমার অসুবিধে হবে না বসতে। আপনি নিয়ে আসুন।
~আর ইউ সিওর?

শুভ্রতা চোখ গরম করে তাকাতেই চন্দ্র শান্ত করার ভঙ্গিতে বললো,
~আনছি, আনছি। বি কুল।

চন্দ্র যেতেই চিত্রা এসে শুভ্রতার পাশে দাঁড়ালো।

~আপনার ছেলেকে নিয়ে আজ খুব ঘুরবো। আজকের জন্য তার সময়টুকু আমার। এর পর ফেরত দিয়ে যাবো।

চিত্রা হাসি হাসি চোখে তাকালেন। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

~সব সময় এমনি হাসি খুশি থাক মা।
_____________________________________

~কোথায় যাবে বলো।
~আপনার ইচ্ছা।

বলেই চন্দ্রের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বসে রইলো শুভ্রতা। ৩০-৪৫ মিনিট পরে একটা জায়গায় এসে বাইক থামালো চন্দ্র। জায়গাটা বাঁধের মত। দুই পাশে স্বচ্ছ পানি। মাঝে গাছগাছালি দিয়ে সাজানো প্রশস্থ রাস্তা। বাইক থেকে নেমেই শুভ্রতা জোরে জোরে শ্বাস নিলো। দুই পাশেই দীঘি হওয়ায় এখানে বাতাস অনেক। শুভ্রতার জায়গাটা বেশ মনে ধরলো। চন্দ্রের স্থির দৃষ্টি শুভ্রতার হাসিমাখা মুখের দিকে। শুভ্রতা চন্দ্রের সামনে এসে তার অগোছালো চুলগুলো নেড়ে আরেকটু অগোছালো করে দিলো। চন্দ্র চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলো।

~জায়গাটা খুব সুন্দর।
~তোমার পছন্দ হয়েছে?

শুভ্রতা জবাবে একটা হাসি দিলো। চন্দ্র সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করলো,
~আজ এত হাসিখুশি যে?
~কেনো হাসি মুখে আমাকে ভালো লাগে না?
~আমার কাছে তখন তোমাকে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরী নারী মনে হয়।

শুভ্রতা বাইকে উঠে বসলো। স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো চন্দ্রের দিকে। এই চোখ যেনো তাকে কিছু বলতে চায়।

~এভাবে চেয়ে আছো কেনো?

শুভ্রতা দৃষ্টি সরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো।

~আমাকে কতটুকু ভালোবাসেন চন্দ্র?

চন্দ্র ভ্রু কুঁচকে রইলো। ভালোবাসা পরিমাণ কি মাপা যায়?

~এইটা আবার কি ধরনের প্রশ্ন?
~কখনো যদি শুনেন আমি আপনার থেকে দূরে চলে গেছি। একদম ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কি করবেন?
~তুমি কি আমার হৃদয় জ্বালাতে নিয়ে এসেছো শুভ্রতা? তুমি ভালো করে জানো তুমি ছাড়া আমি অপূর্ণ। তবে বারবার কেনো এমন কথা বলো?

শুভ্রতা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। যেনো সে কোনো মজার জোক শুনেছে।

~কদিন আমাকে হারানোর শোকে কাঁদবেন? ১ দিন? ২ দিন? ১ বছর? বেশি হলে ২ বছর। এরপর? সবাই আপনাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে আর আপনিও ধীরে ধীরে আমাকে ভুলে যাবেন।
~তোমার এমন কেনো মনে হয় শুভ্রতা?

শুভ্রতা জবাব দিলো না। বাইক থেকে নেমে দাড়ালো। তাড়া দিয়ে বললো,
~চলুন যাই। এক জায়গায় বসে থাকলেই তো হবে না। আরো অনেক জায়গায় ঘুরতে হবে। আমার কাছে সময় বেশি নেই বলেছি তো!

চন্দ্রর অভিমান হলো। তা বুঝতে পেরেও না বুঝার মতো করে থাকলো শুভ্রতা। মাঝে মাঝে অভিমান না ভাঙানোই ভালো।

আরো কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করলো সে। অবশেষে রমনার গেটে শুভ্রতাকে পৌঁছে দিতে আসলো। তিলোত্তমা ভেতরেই অপেক্ষা করছে। শুভ্রতাকে নামিয়ে দিয়ে চন্দ্র যেতে নিতেই শুভ্রতা বাঁধা দিলো। চন্দ্র অভিমানী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। শুভ্রতা আলতো হাতে চন্দ্রের চুল গুছিয়ে দিয়ে বললো,

~কাউকে বিদায় দেওয়ার সময় অভিমান করতে নেই চন্দ্র। এতে আফসোস থেকে যায়।

চন্দ্রের কপালে বরাবরের মতই সুক্ষ্ণ ভাঁজ পড়লো। শুভ্রতা নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,

~একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিন না চন্দ্র।

চন্দ্র অপেক্ষা করলো না। শুভ্রতার মাথায় হাত রাখলো।

~তুমি যেখানেই যাও না কেনো একটা কথা মনে রেখো শুভ্রতা তুমি আমার আর আমি একান্তই তোমার। তুমি যদি কখনো হারিয়ে যাও আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শুধু তোমার অপেক্ষা করবো। আমি কথা দিচ্ছি। আর আহনাফ চন্দ্র কখনো নিজের কথার খেলাপ করে না।
~আমি চাই আমি হারিয়ে গেলে যেনো আপনি একটা সুন্দর সংসার করেন। সুন্দর একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করবেন।
~উফফ! এই মেয়ে তুমি যাও তো! অযথা মেজাজ খারাপ করছো।

শুভ্রতা নিঃশব্দে হাসলো। চন্দ্রের গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

~যাচ্ছি। নিজের খেয়াল রাখবেন।

চন্দ্র শুভ্রতার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললো,

~যাও। আমি অপেক্ষায় থাকবো তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য।

শুভ্রতা আর ফিরে তাকালো না। তাকালে হয়তো দেখতে পেতো শুভ্রতার অশ্রুসিক্ত চোখ জোড়া।
________________________________________

~বাড়িতে যেতে না দিয়ে এখানে ডাকলি কেনো?

শুভ্রতা আঁচল দিয়ে তিলোত্তমার কপালের ঘাম মুছে দিতে দিতে বলল,

~অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়েছি?

তিলোত্তমা হ্যা বোধকে মাথা ঝাঁকালো। এরপর আবার না তে মাথা ঝাঁকালো। দুজনে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলো।

~তিলো, নুরের সাথে কথা হয়েছে?
~না।

শুভ্রতা দম ছাড়লো। তিলোত্তমা আশ্বাস দিয়ে বললো,

~ও নিজের ভুল বুঝতে পারলে এমনিই চলে আসবে দেখিস।

শুভ্রতা প্রত্যুত্তর করলো না। তার বলতে ইচ্ছে করলো,

~সে আর ফিরবে না তিলো। কারণ এবার আমি তার চোখে অভিমান দেখিনি। দেখেছি ঘোর অবিশ্বাস।
________________________________________

অবিরত চন্দ্র আর অরণ্যকে কল দিয়ে যাচ্ছে তিলোত্তমা আর রেনু। রাত ১২ টা বাজতে চললো শুভ্রতা এখনও বাড়ি ফিরেনি। ঘরে পেয়েছে শুভ্রতার রেখে যাওয়া চিঠি। যা দেখে তাদের চিন্তা বেড়েছে আরো কয়েকগুণ। অন্যদিকে অরণ্য আর চন্দ্র এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে আছে।

~এয়ারপোর্টে নিয়ে এলি কেনো? কে আসবে? (চন্দ্র)
~এলেই দেখতে পাবি। (অরণ্য)

চন্দ্র এবার বিরক্ত হলো। ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলল,

~শালা! কতক্ষন ধরে এখানে দাড় করিয়ে রেখেছিস! ফোনটাও গাড়িতে রেখে এসেছি ভুলে। যেতেও দিচ্ছিস না এক্ষুনি চলে আসবে বলে। গত কয় ঘণ্টা ধরে দাড়িয়ে আছি? তোর এক্ষুনি শেষ হলো না।
~আরে ইয়ার দাড়া না! এক্ষনি চলে আসবে। ওইতো! চলে এসেছে… এই অর্ণব! এই যে এইদিকে!

চন্দ্র এদিক সেদিক তাকালো। এত মানুষের মধ্যে কাকে ডাকছে ঠিক ঠাহর করতে পারছে না। অন্যদিকে অরণ্য লাফিয়ে লাফিয়ে দেখেই যাচ্ছে।
_________________________________________

~কষ্ট হচ্ছে?
মায়ের কণ্ঠে শুভ্রতা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। পাশেই উমা দাড়িয়ে। শুভ্রতা মাথা ঝাঁকালো। মুখে বললো,
~খুব।
~আর কত এভাবে একা থাকবি শুভ্রতা? আমাকে ছাড়া থাকতে তো তোর কষ্ট হচ্ছে।
~আমাকে একা রেখে কেনো গেলে আম্মু? নিয়ে গেলে না কেনো?

উমা হাসলো। জবাব দিলো না। পা বাড়ালো রাস্তার দিকে। ঠিক মাঝখানটায় গিয়ে দাঁড়ালো। দু হাত বাড়িয়ে ডেকে বললো,

~আমার কাছে চলে যায়। আর কষ্ট হবে না। আমরা ওপারে এক সাথেই থাকবো।

শুভ্রতা উঠে দাঁড়ালো। পা বাড়ালো উমার দিকে। হাইওয়েতে গাড়ি চলছে ফুল স্পীডে। বেপরোয়া ভাবে রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছে শুভ্রতা। উমা তাকে ডেকেই চলেছে। সেও মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় মায়ের কাছে এগিয়ে যাচ্ছে মায়ের সামনে গিয়ে মাকে ছুঁতেই সে হাওয়া হয়ে গেলো। বুঝতে পারলো সে এতক্ষণ তার মাকে হ্যালুসিনেট করছিল। সে এখন দাড়িয়ে আছে হাইওয়ের ঠিক মাঝখানে। রাস্তার একপাশ থেকে ভেসে আসছে কিছু পরিচিত গলার আওয়াজ,

~শুভ্রতা! শুভ্রতা সরে দাঁড়া। শুভ্রতা ট্রাক আসছে। শুভ্রতা!

শুভ্রতা ঘুরে সেদিকে তাকালো। চন্দ্র আর অরণ্য দাড়িয়ে। পাশেই আরেকটা পরিচিত মুখ। তাকে দেখতেই শুভ্রতা হাসলো। তখনই ট্রাকের ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়লো শুভ্রতা। গগন বিদারী চিৎকার দিয়ে উঠলো চন্দ্র। রক্তে মাখামাখি হয়ে রাস্তায় পড়ে রইলো শুভ্রতা। ঝাপসা চোখে দেখতে পেলো অরণ্য, চন্দ্র আর অর্ণব তার দিকেই দৌড়ে আসছে। চোখ বন্ধ করার আগে শুধু শুনতে পেলো চন্দ্রের কাতর কণ্ঠ। শুভ্রতা বহু কষ্ট করেও চোখ খুলে রাখতে পারলো না। বন্ধ হয়ে এলো তার চোখের পাতা।
~~~
চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here